Are you sure?

তুলনামূলক ধর্মতত্ব »  বিবিধ

১৩ পর্ব://কোরআন অনুযায়ী পৌল মিথ্যাবাদীদের একজন

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম 

খ্রিস্টান বনাম মুসলিম সংলাপ:

বিষয়:-যীশু তথা ঈসা আঃ কতৃক বিঘোষিত সাহায্যকারী কে? পবিত্র আত্মা নাকি শেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাঃ?

আলোচনা:পৌল মিথ্যাবাদীদের একজন

\__________________________________/

পৌল দাবী করলেন যে:-"আমার প্রভু নিজেই আমার নিকট সুখবর প্রকাশ করেছেন "(প্রচলিত ইঞ্জিল শরিফ,গালাতীয় ১:১২)।

 

কিন্তু সমগ্র বিশ্বজগতের প্রভু বলেছেন:তিনি মিথ্যাবাদীদের একজন।সর্বশক্তিমান ঈশ্বর মহান আল্লাহ্ সুবহান ওয়াতা'আলা পবিত্র কোরআন মাজীদে এরশাদ করেছেন সূরা আস ছাফ্‌ফাত (الصّافات), আয়াত: ১৫১-১৫২ এ ইরশাদ করেছেন:-

 

أَلَآ إِنَّهُم مِّنْ إِفْكِهِمْ لَيَقُولُونَ وَلَدَ ٱللَّهُ وَإِنَّهُمْ لَكَٰذِبُونَ

 

অর্থঃ জেনে রাখো, তারা [খ্রিস্টানরা] মনগড়া উক্তি করে যে,আল্লাহ সন্তান জন্ম দিয়েছেন। নিশ্চয় তারা "মিথ্যাবাদী"(কোরআন ৩৭:১৫১-১৫২)

 

পৌল কি জন্য মিথ্যা কথা বলতেন?খোদার গৌরব বাড়াতে চাইতেন। পৌল বলেছেন:-"আমার মিথ্যা কথা বলবার দরুন আরো ভালোভাবে প্রকাশ পায় যে, খোদা সত্যবাদী। এতে যখন খোদা গৌরব লাভ করেন ,তখন পাপী বলে আমাকে দোষী করা হয় কেন?"(রোমীয় ৩:৭)।

 

-"ঈসা-ই খোদার পুত্র "-পৌলের একথা ডাহা মিথ্যা।মহান আল্লাহ্ সুবহান ওয়া তাআলা তাঁর প্রিয় নবী ও রাসূল মুহাম্মদ সাঃ এর মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন যে:-

 

"قُلۡ ہُوَ  اللّٰہُ  اَحَدٌ  ۚ﴿۱﴾

বলঃ তিনিই আল্লাহ, একক/অদ্বিতীয়।

 

اَللّٰہُ  الصَّمَدُ ۚ﴿۲﴾

আল্লাহ কারও মুখাপেক্ষী নন।

 

لَمۡ  یَلِدۡ ۬ۙ  وَ  لَمۡ  یُوۡلَدۡ ۙ﴿۳﴾

তাঁর কোন সন্তান নেই এবং তিনিও কারও সন্তান নন,

 

وَ  لَمۡ  یَکُنۡ  لَّہٗ   کُفُوًا  اَحَدٌ ٪﴿۴﴾

এবং তাঁর সমতুল্য কেহই নেই।

(পবিত্র আল কোরআন,সূরা ইখলাস, ১১২:১-৪)।

 

যাবতীয় বিষয় বিচার বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে,পরবর্তীকালে খ্রিস্টান পন্ডিতগণ পৌলের মহৎ ইমেজ তৈরি করে মিথ্যাচার করছে। প্রকৃতপক্ষে পৌল যীশুর প্রেরিত [নবী] ছিলেন না। তিনি যীশুর সম্বন্ধে মিথ্যা বর্ণনা দিয়েছে।আসলে পৌল ছিলেন ঈসা,মুসা আঃ এর একজন সমালোচক। 

 

খ)ধার্মিকতার সম্বন্ধে:

\________________/

পৌল বলেছেন:-"একজন মানুষ [যীশু তথা ঈসা আঃ এর] এর বাধ্যতার মধ্য দিয়ে অনেকেই নির্দোষ/ধার্মিক বলে গ্রহণ করা হবে। " (রোমীয় ৫:১৯) ।"

পৌল বলেছেন:-"খোদাবন্দ যীশু তথা ঈসা আঃ এর উপর আনুন,তাহলে পাপ থেকে উদ্ধার পাবেন। "(প্রেরিত ১৬:৩১)।পৌল আরো বলেছেন:-"কারণ,তুমি যদি "মুখে" যীশুকে প্রভু বলে স্বীকার করো এবং "অন্তরে" বিশ্বাস কর যে,খোদা তাঁকে মৃতগণের মধ্য থেকে জীবিত করেন,তবে তুমি পাপ থেকে উদ্ধার পাবে।"(রোমীয় ১০:৯)।

 

আমি জিজ্ঞেস করি-যদি পাপ থেকে উদ্ধার পাওয়া অর্থাৎ বেহেশত পাওয়া যদি এতই সহজ হতো তাহলে দোযখ সৃষ্টি করার কী কোন প্রয়োজন ছিল?প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাঃ এ রকম "ধার্মিকতার সম্বন্ধে "-খ্রিস্টান জগতকে-" দোষী সাব্যস্ত "-করেছেন। যীশু তথা ঈসা আঃ কে প্রভু বলা যাবে না। তিনি কোরআনের মাধ্যমে ঘোষণা করে দিলেন যে :-"

 

১)مَا الۡمَسِیۡحُ ابۡنُ مَرۡیَمَ  اِلَّا رَسُوۡلٌ ۚ قَدۡ خَلَتۡ مِنۡ قَبۡلِہِ الرُّسُلُ ؕ وَ اُمُّہٗ صِدِّیۡقَۃٌ ؕ کَانَا یَاۡکُلٰنِ الطَّعَامَ ؕ اُنۡظُرۡ کَیۡفَ نُبَیِّنُ لَہُمُ الۡاٰیٰتِ ثُمَّ انۡظُرۡ اَنّٰی یُؤۡفَکُوۡنَ ﴿۷۵﴾

 

মারইয়াম পুত্র ঈসা মাসীহ কেবল একজন রাসূল। তার পূর্বে অনেক রাসূল বিগত হয়েছে এবং তার মা ছিল অতি সত্যবাদী। তারা উভয়ে খাবার খেত। দেখ, কীভাবে আমি [আল্লাহ্]তাদের জন্য আয়াতসমূহ বর্ণনা করছি। অতঃপর দেখ, কীভাবে তাদেরকে সত্যবিমুখ করা হচ্ছে।"(কোরআন ৫:৭৫)।

 

(গ)বিচারের সম্বন্ধে:

\_______________/

খ্রিস্টধর্ম মতে নেক (ভালো) কাজের দ্বারা নয়,বরং যীশুর মৃত্যুতে বিশ্বাসের দ্বারা  বিচার করা হবে। যেমন:পৌল বলেছেন:-"মুসার শরিয়ত পালন করার জন্য খোদা মানুষকে নির্দোষ বলে গ্রহণ করেন না বরং ঈসার উপর ঈমান আনবার জন্যই তা করেন "(গালাতীয় ২:১৬,১৭,২১)।

 

এরকম" বিচারের সম্বন্ধে" সত্যের আত্মা মুহাম্মদ সাঃ "খ্রিস্টান "জগৎকে "দোষী সাব্যস্ত করেছেন।  "এরকম বিচার খন্ডন করেছেন।ইসলামের আকিদা:-"শুধু অন্তরে বিশ্বাস করলে চলবে না, অন্তরে বিশ্বাস করা,মুখে স্বীকার করা এবং তা কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে। "নবী মুহাম্মদ সাঃ এসে কোরআনের মাধ্যমে ঘোষণা করে দিলেন যে:-১)সূরা আল কাহফ (الكهف), আয়াত: ১০৭

 

إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّٰلِحَٰتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنَّٰتُ ٱلْفِرْدَوْسِ نُزُلًا

 

অর্থঃ যারা [অন্তরে] বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদের অভ্যর্থনার জন্যে আছে জান্নাতুল ফেরদাউস।"(কোরআন ১৮:১০৭)।

 

২)"আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন তদনুযায়ী যারা "বিচার করে না " তারাই কাফের,জালেম ও ফাসেক।"(পবিত্র আল কোরআন ৫:৪৪,৪৫,৪৭)।

 

অর্থাৎ বিশ্বাসের সাথে সাথে কর্মের মাধ্যমেও তা প্রকাশ করতে হবে। 

৩) মহান আল্লাহ্ এরশাদ করেছেন:সূরা আন নাহল (النّحل), আয়াত: ৯০

 

إِنَّ ٱللَّهَ يَأْمُرُ بِٱلْعَدْلِ وَٱلْإِحْسَٰنِ وَإِيتَآئِ ذِى ٱلْقُرْبَىٰ وَيَنْهَىٰ عَنِ ٱلْفَحْشَآءِ وَٱلْمُنكَرِ وَٱلْبَغْىِ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ

 

অর্থঃ আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্নীয়-স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ এবং অবাধ্যতা করতে বারণ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা স্মরণ রাখ।"(কোরআন ১৬:৯০)।

 

এসকল প্রমাণ থেকে জোর দিয়ে বলা যায় যে,মুহাম্মদ সাঃ বাস্তবে এ বিশ্বকে সকল পাপ থেকে মুক্ত করে দিয়েছেন কোরআনের আয়াত ঘোষণা করে জানিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে। তাঁর ন্যায় পরায়নতা সম্পর্কে হযরত উমর রাঃ বলেছেন:-

"আমি শুনলাম নবী মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন," আমার প্রশংসায় তোমরা বাড়াবাড়ি করিও না যেমন করেছিল খ্রিস্টানরা মারিয়ামের পুত্র ঈসার বেলায়। কারণ আমি শুধুমাত্র একজন গোলাম (আল্লাহ্ এর আদেশ-নিষেধ মান্যকারী)।"

 

আর এখানে যীশু বলেছেন:-"তিনি (শান্তিদাতা) পাপময় জগৎকে পুনর্গঠন করবেন ,ন্যায় ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা করবেন। "

 

মুহাম্মদ সাঃ নিজের জীবনে উদাহরণ সৃষ্টি করে দেখিয়ে গেছেন যে,"তাঁর চেয়ে বড় ইনসানা (ন্যায় বিচার) ও অনুবর্তী আর কেউ নয়।এমন কী এক্ষেত্রে কোন সিদ্ধান্ত তাঁর নিজের স্বার্থ কিংবা তাঁর নিকট বা প্রিয়জনদের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তিনি পিছপা হতেন না। তিনি ধনী-গরীব,উঁচু-নিচু,আপন-পর কারো প্রতি বিশেষ আনুকূল্য দেখাতেন না ।সবসময়ই সাম্য ও ইনসাফের সাথে সকল মামলার ফয়সালা করতেন। একদা উঁচু বংশীয় (কুরাইশ) এক মহিলা চুরির দায়ে অভিযুক্ত হলেন।মামলা ফয়সালার জন্য নবী মুহাম্মদ সাঃ এর নিকট আনা হলো।কিছু লোক কুরাইশ বংশের সম্মান রক্ষার্থে তাকে শাস্তি থেকে বাঁচানোর চেষ্টা শুরু করলো।সুপারিশ করলো,ঐ মহিলা কে শাস্তি না দেওয়ার জন্য। পবিত্র নবী মুহাম্মদ সাঃ তখন বললেন:-

 

"বনী ইস্রায়েল এই কারণে ধ্বংস হয়েছে।তারা গরিবের বেলায় আইন প্রয়োগ করেছে আর ধনীদের ছেড়ে দিয়েছে।যাঁর হাতে আমার জীবন আমি তাঁর নামে হলফ করছি যে,এমনকি যদি আমার কণ্যা-ফাতিমাও এ ধরণের অপরাধ করত আমি তাঁর হাত কেটে দিতাম। "(সহীহ বুখারি,কিতাবুল হুদুদ,অধ্যায়-১২,১৩)।

 

মুহাম্মদ সাঃ কঠোরভাবে আল্লাহ্ এর হুকুম মেনে চলতেন। তিনি ইনসাফের জন্য এত খ্যাতি অর্জন করেছিলেন যে,তাঁর জাত শত্রু ও দুশমন-ইয়াহুদিরাও তাদের মামলা তাঁর দরবারে পেশ করতো। তিনি ইয়াহুদি আইনে সেই মামলাগুলোর রায় দিতেন। (সহীহ বুখারি,তাফসীর অধ্যায়,"কুল ফা'তু বিত তাওরাতি পরিচ্ছেদ)।

 

নবী মুহাম্মদ সাঃ ধর্ম,গোত্র,গায়ের রঙ নির্বিশেষে সাম্য ও ইনসাফের নিরিখে সকল মামলার ফয়সালা করতেন।তিনি তাঁর সাহাবীদেরকেও ন্যায় পরায়ন হওয়ার হুকুম করেছিলেন। আবু সাঈদ খুদরী রাঃ বলেন,আল্লাহ্ এর রাসূল সাঃ বলেছেন:-

 

"সকল মানুষের পুনরুত্থানের দিনে(হাশরের) আল্লাহ্ এর ঘনিষ্ঠতম ও প্রিয়তম ব্যক্তি হবেন ন্যায় পরায়ন শাসক। আর আল্লাহ্ এর দৃষ্টিতে সবচেয়ে নিকৃষ্ট হবে যে ব্যক্তি দুরাচার।তাকে আল্লাহ্ এর নিকট থেকে দূরে রাখা হবে। "