Are you sure?

তুলনামূলক ধর্মতত্ব »  বিবিধ

শিশুরা কী জন্মগত পাপী?না vs হ্যাঁ?পূর্ববর্তী নবীগণ +যীশু vs পৌল?কাকে মানবেন?পূর্ববর্তী নবীগণ +যীশু না পৌলকে?

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম 

খ্রিস্টান বনাম মুসলিম সংলাপ:

বিষয়:শিশুরা কী জন্মগত পাপী?না vs হ্যাঁ?পূর্ববর্তী নবীগণ +যীশু vs পৌল?কাকে মানবেন?পূর্ববর্তী নবীগণ +যীশু না পৌলকে?

\________________________________/

আসুন আমরা তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের মাধ্যমে অর্থাৎ পবিত্র আল কোরআন মাজীদ এবং বাইবেল থেকেই যথার্থ রেফারেন্স সহ উদ্ধৃতি দিয়ে যুক্তি প্রমাণ উপস্থাপন করে দেখি "শিশুরা কী আদম আঃ এর পাপের জন্য জন্মগত পাপী কিনা?প্রথমে কোরআন থেকে দেখি যাতে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর মহান আল্লাহ্ সুবহানু ওয়াতা'আলা বলেছেন সূরা বনী-ইসরাঈল (الإسرا), আয়াত: ১৫

 

مَّنِ ٱهْتَدَىٰ فَإِنَّمَا يَهْتَدِى لِنَفْسِهِۦ وَمَن ضَلَّ فَإِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَا وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّىٰ نَبْعَثَ رَسُولًا

 

অর্থঃ যে কেউ সৎপথে চলে, তারা নিজের মঙ্গলের জন্যেই সৎ পথে চলে। আর যে পথভ্রষ্ট হয়, তারা নিজের অমঙ্গলের জন্যেই পথ ভ্রষ্ট হয়। কেউ অপরের পাপের বোঝা বহন করবে না।কোন রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত আমি কাউকেই শাস্তি দান করি না।"

 

কেউ অপরের পাপের বোঝা বহন করবে না।"(পবিত্র কোরআন ১৭:১৫; ৩৫:১৮; ৩৯:৭) [কোরআনের অন্যত্র এই একই বিষয়ে ইঙ্গিত করা হয়েছে পবিত্র আল কোরআন ৪১:৪৬;  ৪৫:১৫;  ৩০:৪৪;  ৬:১০৪;  ৩৯:৪১; এভাবে কোরআনের বহু জায়গায় বলা হয়েছে কেউই জন্মগত পাপী নয় বরং নিজের পাপের জন্য সে দায়ী কিন্তু অন্যরা নয়)।(আর মহান আল্লাহ্ সুবহানু ওয়াতা'আলা হযরত আদম আঃ এর পাপ ক্ষমা করে দিয়েছলেন,পবিত্র কোরআন ২:৩৭)

 

আর সর্বশ্রেষ্ঠ ঐশীগ্রন্থ পবিত্র আল কোরআন তো বলেই দিয়েছে কেউই অপরের পাপের বোঝা বহন করে না।আর কেউ যদি কারো পাপের বোঝা বহন করতে না পারে তাহলে আদম আঃ এর জন্য সবাই পাপী হবে এই প্রশ্নই আসে না।

 

বাইবেলের মধ্যে নবীগণ বলেছেন:কেউ কারো পাপের বোঝা বহন করবে না।"(দ্বিতীয় বিবরণ ২৪:১৬; যিহিষ্কেল ১৮:২০; যিরমিয় ৩১:২৯-৩০)।

 

বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান আদম আঃ থেকে ঈসা আঃ পর্যন্ত সকল নবীগণ শিক্ষা দিয়েছেন যে :-

 

এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ বিশ্বাস ও ব্যক্তিগত সৎকর্ম (শরিয়ত পালন করা) মুক্তি পাওয়ার ভিত্তি,কেউ কারো পাপের বোঝা বহন করবে না (দ্বিতীয় বিবরণ ২৪:১৬ এবং যিহিষ্কেল ১৮:২০)।

 

কিন্তু পৌল এসে শিক্ষা দিল:যীশু সকলের পাপের বোঝা বহন করবেন।"তিনি [যীশু খ্রিস্ট] ক্রুশকাষ্ঠে প্রাণ দিয়ে খ্রিস্টানদের সমস্ত পাপের প্রায়শ্চিত্ত করে গিয়েছেন।কারণ,আদমের পাপে সবাই পাপী "(রোমীয়  ৫:৮, ১২-১৯)।

 

এখানে পৌল বলতে চেয়েছেন সকলেই আদমের পাপের কারণে জন্মগত পাপী হওয়ায় যীশু খ্রিস্ট তাঁর ক্রুশবিদ্ধ মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করেছেন।  

 

যীশু তথা ঈসা আঃ এর শিক্ষা প্রাথমিক ও অপরিপক্ক। তাঁর শিক্ষা প্রাইমারীর আর পৌলের শিক্ষা  হাইস্কুলের। অবশ্যই ত্রিত্ববাদীদের জন্য মসীহের শিক্ষাকে অপরিপক্ক বলা ছাড়া উপায়ই নেই।তাদের ধর্মের একটি আকীদাও মসিহের শিক্ষার মধ্যে সুস্পষ্ট নেই।কাজেই তাকে অপূর্ণ এবং পৌলকে পূর্ণ বলা ছাড়া উপায় নেই তাদের।মানবতাবিরোধী এ মতবাদকে  প্রতিষ্ঠা করতে পৌল দাবী করলেন যে,"মানুষ জন্মগত ভাবে পাপী"-এবং যীশুর মাধ্যমেই মানুষ মুক্তি পায়। এ বিশ্বাসের মূল বিষয় নিন্মরুপ :-

 

"আদম নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণ করে মহাপাপ করেন। এজন্য কিয়ামত পর্যন্ত সকল আদম সন্তানের শাস্তি ও অনন্ত মৃত্যু পাওনা হয়। "পিতার অপরাধে সকল সন্তানের নরক গমনের "-এ "দয়াময় "  ব্যবস্থায় দয়াময় স্রস্টা অত্যন্ত ব্যথিত হয়ে পড়েন। বিনা রক্তপাতে ক্ষমা করতে অক্ষম হয়ে তিনি নিজের পুত্রকে কুরবানী করার সিদ্ধান্ত নেন। কারণ পাপের জন্য পাপী নিজের বা পাপীর সন্তানগণ রক্তপাত করলে হবে না। বরং নিরপরাধ নিষ্পাপ কাউকে ধরে কুরবানী দিতে হবে। এজন্য স্রস্টা নিজের আপন পুত্রকে কুরবানী হিসেবে পৃথিবীতে পাঠান।তিনি ক্রুশে মরে অভিশপ্ত হয়ে তিনদিন নরক যন্ত্রণা ভোগ করেন এবং শয়তানের হাত থেকে নরকের চাবি কেড়ে নিয়ে মানুষদেরকে চিরতরে মুক্তি করে দেন। এখন মানুষ যত পাপই করুক না কেন যীশুর ঈশ্বরত্বে ও কুরবানীতে বিশ্বাস  করলেই নরক থেকে চিরমুক্তি। " পৌলের ভাষায়:-"...একটা পাপের মধ্যে দিয়ে যেমন সমস্ত মানুষকেই আযাব পাবার যোগ্য বলে ধরা হয়েছে,তেমনি একটা নায্যকাজের মধ্যে দিয়ে  সমস্ত মানুষকেই নির্দোষ বলে গ্রহণ করবার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।...যেমন একজন মানুষের [হযরত আদম আঃ] অবাধ্যতার মধ্যে দিয়ে  অনেকেই পাপী হয়েছিল ,তেমনি একজন মানুষের [হযরত ঈসা আঃ] বাধ্যতার মধ্যে দিয়ে অনেকেই নির্দোষ বলে গ্রহণ করা হবে"। (ইঞ্জিল শরিফ,রোমীয় ৫/১৮-১৯)।..."রক্তপাত না হলে পাপের ক্ষমা হয় না।"(ঐ,ইব্রীয় :৯/২২) ।পুনশ্চ:(রোমীয় ৪/২৫,  ১৬;  ১০/৯; গালাতীয় ৩/১০-১৩; ইফিষীয় ১/৭;   ১ করিন্থীয়  ১৫/২১-২২)।

 

চিন্তা করুন সর্বশক্তিমান মহান ঈশ্বর আল্লাহ্ সুবহানু ওয়াতা'আলা একের অপরাধে অন্যকে শাস্তি দিবেন?পাপী ক্ষমা চাইলেও ক্ষমা করতে পারবেন না !পাপী বা তার সন্তানগণ কাফ্ফারা বা কোরবানি দিলে হবে না বরং পাপীর অপরাধে আরেকজন নিষ্পাপ কে কোরবানি দিতে বাধ্য (নাঊযুবিল্লাহ মিনযালিক)।এজন্য একজন খ্রিস্টান লেখক লিখেছেন যা শাইখ আহমেদ দিদাদ তাঁর বইতে উদ্ধৃতি টেনেছেন :-

 

"কোন নাস্তিক জংলি উপজাতিও এরুপ উদ্ভট বিশ্বাস পোষণ করে না যে,মানুষ জন্মগত ভাবে পাপের কলঙ্ক নিয়ে জন্মগ্রহণ করে এবং এ কলঙ্ক যার জন্য সে নিজে দায়ী নয়,তার জন্য কাফ্ফারা বা কোরবানি দিতে হবে এবং এ রহস্যময় অভিশাপকে অকার্যকর করতে সকল কিছুর মহান স্রস্টা নিজের একমাত্র ঔরসজাত সন্তানকে কোরবানি দিতে বাধ্য হলেন।"(Ahmed Deedat :The Choice ,Volume 2,page 165)

 

প্রচলিত ইঞ্জিলের যীশু তথা ঈসা আঃ মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য গ্রেফতারের আগের রাতে মাটিতে মাথা ঠুকে কেঁদেছিলেন ও প্রার্থনা করেছিলেন। মৃত্যুর সময় তিনি চিৎকার করে বলেছিলেন :-

"এল্লাই,এল্লাই,লামা শবাক্তানী। "যার অনুবাদ :প্রভু ...প্রভু!আবার আমায় কেন ত্যাগ করছো?"(মার্ক ১৫:৩৪; মথি ২৭:৪৬)।

 

(যীশু অভিশপ্ত লাঞ্ছিত অপমানজনক মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রার্থনা করেছিলেন, মথি ২৬:৩৬-৪৬)।

 

অপরাধীর মুক্তির জন্য একজন অনিচ্ছুক নিরাপরাধীকে জোর করে হত্যা করতে হবে। আর এই হত্যা নাকি সবার পাপ মুক্তির জন্য।কিন্তু পাঠক বন্ধুগণ পৌলীয় ধর্মের ঈশ্বরের মহানুভবতা দেখুন ও লক্ষ্য করুন ।শাস্তির ক্ষেত্রে অকৃপণ ও মহানুভব হলেও মুক্তির ক্ষেত্রে কৃপণ (নাঊযুবিল্লাহ মিনযালিক)। আদমের পাপের কারণে শাস্তি পেতে কোন মানুষের কোন বিশ্বাস বা স্বীকারোক্তির প্রয়োজন নেই। ফ্রি শাস্তি!তবে যীশুর ত্যাগের কারণে মুক্তিটা ফ্রি নয়!বরং বিশ্বাস ও স্বীকারোক্তি লাগবে।পৌল ও তাঁর অনুসারীরা দাবি করলেন যে,ঈসা আঃ পাপীর পাপ বহন করবেন; কাজেই তাঁর আত্মত্যাগে বিশ্বাস করলেই মুক্তি সুনিশ্চিত। পক্ষান্তরে আমরা দেখলাম যে,ঈসা মাসীহ বললেন:-"ইমান ও শরিয়ত পালন না করলে শত বিশ্বাসেও মুক্তি মিলবে না। তিনি কোন পাপই বহন করবেন না। ঈসা আঃ আরো বলেন:-"যে কেউ কোন স্ত্রী লোকের দিকে কুনজরে তাকায়,সে তখনই মনে মনে তার [স্ত্রী লোক] সাথে ব্যভিচার করলো। তোমার ডান চোখ যদি তোমাকে পাপ করায় ,তবে তা উপড়ে ফেলে দাও। তোমার সমস্ত দেহ আগুনে পুড়বার চেয়ে বরং তার একটা অংশ নষ্ট হওয়া  তোমার পক্ষে ভালো ।(ইঞ্জিল শরীফ,মথি ৫/২৮-২৯)।

 

এখানে যীশু সুস্পষ্টভাবে বলেছেন যে, চক্ষু না তুললে পুরো দেহ জাহান্নামে পুড়বে। তিনি যদি পরনারীর প্রতি দৃষ্টিপাতের পাপও বহন করতে না পারেন তাহলে কোন্ পাপ বহন করবেন? খৃস্টান প্রচারক হয়ত বলবেন যে, তিনি মানুষদেরকে বুঝানোর জন্য এ সব কথা বলেছেন, মূলত তিনি সকল পাপ বহন করবেন; এভাবেই তারা তাদের প্রতারণার প্রচারণা করতে যীশুকে মিথ্যাবাদী, ভীরু বা মুনাফিক রুপে চিত্রাঙ্কন করেন। প্রকৃত সত্য হলো, তিনি কোনো পাপীর পাপই বহন করবেন না। 

 

যাই হোক পৌলের এসব উদ্ভট আকিদাগুলো ভিত্তিহীন অসত্য।

ক)একের পাপে অন্যের শাস্তি ও একের ত্যাগে অন্যের মুক্তি এবং 

খ)রক্তপাত ছাড়া পাপ মুক্তি হয় না।

 

এ উদ্ভট আকিদাগুলো অসত্যের কারণ কিতাবুল মুকাদ্দাসের বিধানে বলা হয়েছে :-

 

29. সেই দিনের লোকেরা আর কেউ বলবে না,"বাবারা টক আঙ্গুর খেয়েছেন, কিন্তু সন্তানদের দাঁত টকে গেছে।"

30. কারণ প্রত্যেকে নিজের পাপের জন্যই মরবে; যে টক আঙ্গুর খাবে তারই দাঁত টকে যাবে।"(যিরমিয় ৩১:২৯-৩০)

 

এখানে (যিরমিয় ৩১:২৯-৩০) পদে উপমার মাধ্যমে বর্ণনা করে বোঝানো হয়েছে যে -:বাবারা টক আঙুর খেলে সেই টকের স্বাদ কেবলমাত্র বাবারাই পাবে কিন্তু তার সন্তানেরা সেই টকের স্বাদ পাবে না।অর্থাৎ এটা থেকেই প্রমাণ হয় যে যারা পাপ করবে সেই পাপের জন্য তারা নিজেরাই দায়ী হবে কিন্তু অন্যরা সেই পাপের দায়ী হবে না অর্থাৎ একের জন্য আরেকজন পাপী হবে না।আর প্রত্যেকেই নিজের পাপের জন্য মরবে।কিন্তু কেউই অন্যের পাপের জন্য পাপী হবে না।আর এইজন্য উপমার মাধ্যমে বলা হয়েছে:-"যে টক খাবে তারই দাঁত টকে যাবে।"

 

আবার অন্যত্র বলা হয়েছে:-"যে প্রাণী পাপ করে, সেই মরবে"(যিহিস্কেল ১৮:৪;  দ্বিতীয় বিবরণ ২৪:১৬;  ২ রাজাবলি ১৪:৬;  ২ বংশাবলি ২৫:৪)।

 

বাইবেলের আরেক জায়গায় সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে :-

 

"16. সন্তানের জন্য বাবার (পিতা-মাতা) কিংবা বাবার (পিতা-মাতা) জন্য সন্তানের প্রাণদণ্ড করা যাবে না; প্রত্যেকে নিজেদের পাপের জন্যেই প্রাণদণ্ড ভোগ করবে।"(দ্বিতীয় বিবরণ ২৪:১৬)[অনুরূপ বর্ণনা ২ রাজাবলি ১৪:৬;  ২ বংশাবলি ২৫:৪ তেও বলা হয়েছে )।

 

এখানেও সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে পিতার অপরাধের (পাপের) জন্য সন্তানের এবং সন্তানের অপরাধের (পাপের) জন্য পিতার প্রাণদণ্ড যাবে না অর্থাৎ একের জন্য আরেকজনের প্রাণ যাবে না (কেউই কারো পাপের বোঝা বহন করবে না)।সবাই নিজের পাপের জন্য প্রাণদণ্ড ভোগ করবে। 

 

 বাইবেলের অন্যত্র বলা হয়েছে:-

19. কিন্তু তোমার বলছ, “সেই ছেলে কেন বাবার অপরাধ বহন করে না?” সেই ছেলে তো ন্যায় ও ধার্মিকতার আচরণ করেছে এবং আমার বিধি সব রক্ষা করেছে, সে সব পালন করেছে; সে অবশ্য বাঁচবে।

20. যে কেউ পাপ করে, সে মরবে; বাবার অপরাধ ছেলে বহন করবে না ও ছেলের অপরাধ বাবা বহন করবে না; ধার্মিকের ধার্মিকতা তার ওপরে আসবে ও দুষ্টের দুষ্টতা তার ওপরে আসবে।

21. কিন্তু দুষ্ট লোক যদি নিজের করা সমস্ত পাপ থেকে ফেরে ও আমার নিয়ম সব পালন করে এবং ন্যায় ও ধার্মিকতার আচরণ করে, তবে সে অবশ্য বাঁচবে; সে মরবে না।

22. তার আগে করা সব অধর্ম তার বলে মনে করবে না; সে যে ধার্মিকতার আচরণ করেছে, তাতে বাঁচবে।

23. “দুষ্টদের মৃত্যুতে কি আমি খুব আনন্দিত হই?” এটা প্রভু সদাপ্রভু বলেন; “বরং সে নিজের পথ থেকে ফিরে বাঁচে।"(যিহিস্কেল ১৮:১৯-২৩)

 

এখানে উপরোল্লিখিত উপযুক্ত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে প্রমান হয় যে (ক)একের পাপে অন্যের শাস্তি ও একের ত্যাগে অন্যের মুক্তির দাবি 100% মিথ্যা এবং সদাপ্রভু সর্বশক্তিমান ঈশ্বর মহান আল্লাহ্ সুবহানু ওয়াতা'আলার নামে বে-ইনসাফির মিথ্যা অপবাদ ও (খ)পাপীর মুক্তির জন্য কাফ্ফারা বা রক্তপাত নিষ্প্রয়োজন;তওবা ও যথার্থ ধর্ম পালনই যথেষ্ট আর এটাই তো মহান আল্লাহর ইনসাফ,দয়া ও মমতার প্রকাশ।

এভাবে বাইবেলে সদাপ্রভু মহান ঈশ্বর আল্লাহ্ সুবহানু ওয়াতা'আলা বারংবার বলেছেন যে,পাপীর মুক্তির জন্য তিনি কাফ্ফারা বা রক্তপণ বা বলিদান চান না বরং পাপীর ইমান,তওবা ও নেক/সৎ কর্ম চান:-কারণ আমি বিশ্বস্ততা চাই, বলিদান নয় ;এবং বলি দানের চেয়ে ঈশ্বর চান যেন তাঁকে সবাই ভালো ভাবে জানতে পারে।(হোসেয় ৬:৬।মথি ৯:১৩ ; ও ১২:৭)

 

এছাড়া নিউ টেস্টামেন্টে বলা হয়েছে যে,মহান আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস ,সকল মনপ্রাণ দিয়ে তাঁকে ভালবাসা এবং প্রতিবেশীকে নিজের মত ভালবাসা সকল কাফ্ফারা তথা বলিদান (রক্তপণ) এর চেয়ে অধিক শক্তিশালী এবং এরুপ বিশ্বাস ও কর্ম থাকলেই সে জান্নাতী" (মার্ক ১২:৩২-৩৪)।

 

এছাড়া যীশু বলেছেন:-

31. মানুষদের সব পাপ ও নিন্দার ক্ষমা হবে, কিন্তু পবিত্র আত্মার নিন্দার ক্ষমা হবে না।"

32. আর যে কেউ মনুষ্যপুত্রের (যীশুর) বিরুদ্ধে কোন কথা বলে, সে ক্ষমা পাবে; কিন্তু যে কেউ পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে কথা বলে, সে ক্ষমা পাবে না, এইকালেও নয়, পরকালেও নয়।"(মথি ১২:৩১-৩২)

 

সাধু পৌলের কথা সত্য হলে অবশ্যই বলতে হবে যীশুর কথা মিথ্যা। কারণ যীশু বলেছেন পাপ ক্ষমার জন্য অন্য কোন বিষয় ধাতব্য নয়,শুধু পাপের বড়ত্ব ও ভয়ঙ্কর-ই বিবেচ্য; এজন্য পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে অপরাধ শুধু ওহীর নামে জালিয়াতি ,কোন সত্য নবীর প্রতি অবিশ্বাস বা শিরক,কুফরীর পাপ ক্ষমা করা হবে না,কিন্তু অন্যান্য পাপ ক্ষমা করা হবে। এর বিপরীতে সাধু পল বলেছেন:-"পাপের গভীরতা বা বড়ত্ব কোন বিষয় নয় বরং কাফ্ফারা তত্ত্বে পাপীর বিশ্বাসই বিবেচ্য।কাফ্ফারা ছাড়া কোন পাপই ক্ষমা করা হবে না। আর যীশুর রক্তে কাফ্ফারা তত্বে বিশ্বাস করলে পবিত্র আত্মার নিন্দাসহ সকল পাপই ক্ষমা হবে। 

 

এছাড়া প্রচলিত ইঞ্জিলে উল্লেখ করা হয়েছে যে কিছু লোকে যীশুর কাছে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের দোআর জন্য নিয়ে আসাতে শিষ্যরা তাদের ধমক দেওয়ায় যীশু রেগে যান এবং শিশুদের তাঁর কাছে আসতে বলেন যার বর্ণনা নিম্নরুপ:-

 

13. তখন কতগুলি শিশুকে তাঁর কাছে আনা হল,যেন তিনি তাদের উপরে তাঁর হাত রাখেন ও প্রার্থনা করেন,তাতে শিষ্যেরা তাদের ধমক দিতে লাগলেন।

14. কিন্তু যীশু বললেন,“শিশুদের আমার কাছে আসতে দাও,বারণ করো না, কারণ স্বর্গরাজ্য এই রকম লোকেদেরই।”

15. পরে তিনি তাদের উপরে হাত রাখলেন এবং সেখান থেকে চলে গেলেন "(মথি ১৯:১৩-১৪)।[এই একই বর্ণনা রয়েছে মার্ক ১০:১৩-১৬;  লুক ১৮:১৫-১৭)

 

(নোট:এখানে "তিনি তাদের উপরে হাত রাখলেন"-বলতে শিশুদের মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ তথা দোআ করার কথা বোঝানো হয়েছে।এটা সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে মার্কের ১০:১৬ পদে)

 

উক্ত উদ্ধৃতি দ্বয়ে দেখা যাচ্ছে যে যীশু বলেছেন,"এদের মতো লোকদের জন্যই তো স্বর্গরাজ্য (মথি ১৯:১৪) অর্থাৎ স্বর্গে যেতে হলে নিশ্চয়ই তাকে নিষ্পাপ হতে হবে। আর নিষ্পাপ না হলে স্বর্গে যাওয়া যায় না।আর স্বর্গে যেতে হলে শিশুদের মতো নিষ্পাপ হতে হবে যার জন্য যীশু বলেছেন,এদের মতো লোকদের অর্থাৎ নিষ্পাপ শিশুদের জন্যই তো স্বর্গরাজ্য৷’(মথি ১৯:১৪)

 

আর এই একই কথা (মার্ক ১০:১৪-১৫)-তেও আছে:-

 

14. যখন যীশু তা দেখে রেগে গেলেন, আর শিষ্যদের কে বললেন, শিশুদের আমার কাছে আসতে দাও, বারণ করো না; কারণ ঈশ্বরের রাজ্য এই রকম লোকদেরই।

15. আমি তোমাদের সত্য বলছি,"যে কেউ শিশুর মতো হয়ে ঈশ্বরের রাজ্য গ্রহণ না করে, তবে সে কখনই ঈশ্বরের রাজ্যে (বেহেশতে) প্রবেশ করতে পারবে না" (মার্ক ১০:১৪-১৫)।

 

এখানেও দেখেন,যীশু বলেছেন :"এদের মত (শিশুর মত) লোকদের জন্যই তো ঈশ্বরের রাজ্য অর্থাৎ নিষ্পাপ লোকদের জন্যই ঈশ্বরের রাজ্য (স্বর্গ)।স্বর্গে একমাত্র নিষ্পাপ ব্যক্তিরাই যেতে পারবে যার কারণে যীশু শিশুদের কথা বলেছেন। কারণ শিশুরাই নিষ্পাপ মানুষ)।আমি

তোমাদের সত্যি বলছি,কেউ যদি ছোট ছেলে-মেয়েদের মন নিয়ে অর্থাৎ নিষ্পাপ শিশুদের মন নিয়ে ঈশ্বরের রাজ্য গ্রহণ না করে, তবে সে কোনমতেই সেখানে তথা স্বর্গরাজ্যে (বেহেশত/জান্নাতে) প্রবেশ করতে পারবে না" (মার্ক ১০:১৪-১৫)।

 

দেখেন ছোট-ছোট ছেলে মেয়ে অর্থাৎ শিশুরা যে নিষ্পাপ তা যীশুর কথার মাধ্যমেই স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।এখন কথা হলো যদি শিশুরা নিষ্পাপ হয়,তাহলে বলতে হবে শিশুরা আদমের পাপ মাথায় নিয়ে জন্মায়নি অর্থাৎ আদমের কারণে শিশুরা পাপী নয়।আর শিশুরা যদি আদমের পাপ মাথায় নিয়ে জন্ম নিত তাহলে শিশুরা আর নিষ্পাপ থাকত না। ফলে যীশুও বলতেন না,শিশুর মত নিষ্পাপ লোকদের জন্যই স্বর্গরাজ্য। অর্থাৎ যীশুর উক্ত কথার মাধ্যমেই বোঝা যায় যে শিশুরা আদমের পাপ মাথায় নিয়ে জন্মায় নাই অর্থাৎ তারা আদমের পাপে,পাপী নয় বরং নিষ্পাপ। 

 

অপরদিকে পৌল মহাশয়ের বাণী শুনুন।উনি আবার যীশুর বক্তব্যের বিপরীত বক্তব্য দিয়েছে।

আদম সন্তানের পাপের কারণে যীশু আমাদের জন্য মরলেন।কারণ,আদমের পাপে সবাই পাপী।"( রোমীয় ৫:১২-১৯)

 

এখানে দেখা যাচ্ছে যে ,আদমের পাপে সবাই পাপী বলতে জন্মগত ভাবে সবাই পাপী অর্থাৎ কোন শিশুরাও নিষ্পাপ নয়।কিন্তু উপরোল্লিখিত যীশুর বক্তব্যে দেখা যায় শিশুরা নিষ্পাপ অর্থাৎ আদমের কারণে শিশুরা পাপী নয়।"

 

এখন দেখা যায়,অধিকাংশ খ্রিস্টানরা মানে/বলে: সবাই আদমের পাপে পাপী অর্থাৎ জন্মগত ভাবে পাপী।আর জন্মগত পাপী মানে কোন শিশুও নিষ্পাপ নয়।তাহলে দেখা যাচ্ছে যে খ্রিস্টানদের কথা মত, যীশুর বক্তব্য সমর্থন করে না তারা কিন্তু পৌলের বক্তব্য কে সমর্থন করেছে।আর এখানে দুটি অপশন দেখা যায় 

 

১)সকল নবীগণ:শিশুরা নিষ্পাপ (খ্রিস্টানরা সমর্থন করে না)

২)যীশু:শিশুরা নিষ্পাপ (খ্রিস্টানরা সমর্থন করে না)

৩)পৌল:শিশুরা পাপী (খ্রিস্টানরা সমর্থন করে)

 

এখন কথা হলো:খ্রিস্টানরা তাদের প্রাণ প্রিয় যীশুর বক্তব্য কে সমর্থন না করে কেন পৌলের বক্তব্য কে সমর্থন করেছে?আর তাদের কাছে কে সত্য,যীশু না পৌল?-কারণ এখানে দুইজনের বক্তব্য পরস্পর বিরোধী অর্থাৎ বিপরীত। 

 

খ্রিস্টানরা কাকে মানবেন?

১)যীশু খ্রিস্টকে?

২)সাধু পৌল কে?

 

(নোট:ঈসায়ী আকিদায় আদিপাপ বলতে কিছুই নেই। কোন মানুষই পাপ নিয়ে জন্মায় না বরং নিষ্পাপ হয়ে জন্মগ্রহণ করে।তবে হ্যাঁ মানুষ বড় হয়ে পাপ করে যা মানুষের সহজাত একটা বৈশিষ্ট্য।তাই কাজেই মানুষ বড় হয়ে করা পাপগুলো (একনিষ্ঠ তওবার মাধ্যমে) বর্জন করে শিশুদের মতো হতে পারে তবেই সে স্বর্গীয় রাজ্য তথা জান্নাতে যাবে।পক্ষান্তরে পৌলীয় ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী প্রত্যেক মানুষেরই আদিপাপ নিয়ে জন্মায়।শুধু পিতা-পুত্র,পবিত্র আত্মা বিশ্বাসের মাধ্যমে মুক্তি পায়।এ বিশ্বাস ছাড়া পাপ বর্জন করে শিশুদের মতো হলেও কোন লাভ নেই।আর এ বিশ্বাস থাকলে পাপ করলেও তেমন অসুবিধা নেই।