Are you sure?

বিজ্ঞান »  ইসলাম ও বিজ্ঞান

পর্ব ৭//: সূর্য ঘুরার সম্পর্কে পবিত্র আল কোরআন কী বলে?

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম 

কোরআনে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি পর্ব:৭

আলোচনা:-"সূর্য ঘুরার সম্পর্কে পবিত্র আল কোরআন কী বলে?

\________________________________/

সুদীর্ঘকাল ব্যাপী ইউরোপীয় দার্শনিক ও বিজ্ঞানীগণ বিশ্বাস করতেন যে,মহাবিশ্বের কেন্দ্রে পৃথিবী স্থির -নিশ্চল অবস্থায় বিদ্যমান রয়েছে এবং সূর্যসহ অন্যান্য সকল বস্তু এর চারদিকে ঘুরছে।পাশ্চাত্য জগতে মহাবিশ্বের এই ভূ-কেন্দ্রিক মতবাদ খ্রিস্টীয়পূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে ঠিক টলেমির (Ptolemy) সময় থেকে ব্যাপকহারে প্রচলিত ছিল। ১৫১২ খ্রিস্টাব্দে নিকোলাস কোপারনিকাস (Nicholas copernicus) গ্রহের গতি সম্পর্কীয় সূর্য কেন্দ্রীক তত্ত্ব প্রদান করেন।এ তত্ত্ব দাবি করে যে ,সৌরজগতের কেন্দ্রে সূর্য গতিহীন অবস্থায় আছে।আর একে কেন্দ্র করে গ্রহগুলো এর চারিদিকে ঘূর্ণায়মান অবস্থায় রয়েছে। 

 

১৬০৯ খ্রিস্টাব্দে জার্মান বিজ্ঞানী ইউহান্নাস কেপলার (Yohannus Keppler) "অ্যাস্ট্রোনোমিয়া নোভা" (Astronomia Nova) নামে একটি লেখা প্রকাশ করেন।তিনি এই লেখার উপসংহারে এই কথা প্রকাশ করেন যে,সূর্যের চারিদিকে গ্রহগুলো উপবৃত্তাকার কক্ষপথে শুধু ঘুরছে না বরং অনিয়মিত বেগে তারা তাদের নিজেদের অক্ষের চারিদিকেও ঘুরছে।এ জ্ঞানের আলোকে ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের পক্ষে পর্যায়ক্রমে রাত দিনের আগমনসহ সৌরজগতের বহু কিছুরই কার্যসাধন পদ্ধতির সঠিক ব্যাখ্যা প্রদান সম্ভব হয়।এসব আবিষ্কারের পর ,মনে করা হতো যে সূর্য স্থির রয়েছে।পৃথিবীর ন্যায় সে তার অক্ষের চারিদিকে ঘুরে না।আর এক সময়ই ইউহান্নাস কেপলারের এই তথ্য তার সমসাময়িক কালেও অপ্রমানিত ছিল বিধায় সে যুগের মানুষের কাছে এসব ছিল গ্রহণযোগ্য সত্য তথ্য বলে বিবেচিত। যদিও বর্তমান আধুনিক বিজ্ঞান এই তথ্য কে ভুল প্রমাণ করেছে আর আমাদের সত্য জানিয়ে দিয়েছে।কেননা বিজ্ঞানের স্বভাব ক্রমেই উন্নতির দিকে অগ্রসর হওয়া।আর সূর্যের পরিভ্রমণ সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে সূরা আল আম্বিয়া (الأنبياء), আয়াত: ৩৩

 

وَهُوَ ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلَّيْلَ وَٱلنَّهَارَ وَٱلشَّمْسَ وَٱلْقَمَرَ كُلٌّ فِى فَلَكٍ يَسْبَحُونَ

 

অর্থঃ তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র। সকলেই (মহাকাশীয় বস্তু) আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।"

 

আয়াতের মূল ভাবার্থ/মর্মার্থ:(سبح) অর্থ সাঁতার কাটা, অর্থাৎ একজন সাঁতারু যেমন পানিতে সাঁতার কাটে তেমনি চন্দ্র, সূর্য প্রত্যেকটিই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করছে। কেউ কারো কক্ষপথ অতিক্রম করে যায় না। সুতরাং এসব সৃষ্টির মাঝে রয়েছে চিন্তাশীলদের জন্য শিক্ষা। যারা আল্লাহ তা‘আলার এসব সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করবে তারা আল্লাহ তা‘আলাকে সহজেই চিনতে পারবে।

 

(বিঃদ্রঃ এই আয়াতের গভীরতা আরো বুঝতে চাইলে তাফসীরে আহসানুল বয়ান,তাফসীরে আবু বকর যাকারিয়া,তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ এবং তাফসীরে ইবনে কাসীর পড়ুন।তাহলে আরো অনেক নিদর্শন সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পারবেন ইনশাআললাহ)

 

উপরোক্ত আয়াতে যে আরবি শব্দ "ইয়াসবাহুন"-ব্যবহৃত হয়েছে (سبح) "সাবাহা"-শব্দ থেকে উদ্ভূত। এটা গতিশীল বস্তুর গতির ধরণ বুঝায়।যদি আপনি ভূ-পৃষ্ঠে মানুষের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেন,তখন এটা বুঝাবে না যে তিনি গড়াচ্ছেন বরং বুঝাবে যে,তিনি হাঁটছেন বা দৌড়াচ্ছেন।যদি আপনি পানিতে এ শব্দ ব্যবহার করেন তখন এটা বুঝাবে না যে,তিনি ভাসছেন বরং এটাই বুঝাবে যে,তিনি সাঁতার কাটছেন।

 

একই সাথে বলা যায় "ইয়াসবাহ"-শব্দটি যদি আপনি মহাকাশীয় বস্তু যেমন সূর্যের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেন,তখন এটা বুঝাবে না যে,সে কেবলমাত্র মহাকাশে উড়ছে বরং এটাও বুঝাবে যে,এটা চক্রাকারে আবর্তন করছে যেমন ভাবে এটা মহাকাশে ভ্রমণ করে থাকে।স্কুলের অধিকাংশ পাঠ্যপুস্তক বিজ্ঞান বইতে এ সত্য সন্নিবেশিত করা হয়েছে যে,সূর্য তার নিজ অক্ষের চারিদিকে ঘুরে।"নিজ অক্ষের চারিদিকে সূর্যের এই যে আবর্তন "-এটা প্রমাণ করা যায় এমন এক যন্ত্রের সাহায্যে যা প্রক্ষিপ্ত করে টেবিলের উপর সূর্যের প্রতিকৃতি ,অন্ধ না হলে যে কোন ব্যক্তি সূর্যের এই প্রতিকৃতি পরীক্ষা করতে পারেন।এটা দেখা গেছে যে সূর্যের বিভিন্ন অবস্থান স্থান আছে যা প্রতি ২৫ দিনে একটি পূর্ণ বৃত্তাকার ঘূর্ণন সম্পূর্ণ করে অর্থাৎ নিজ অক্ষের চারিদিকে প্রদিক্ষণ করতে সূর্যের সময় লাগে প্রায় ২৫ দিন।

 

প্রকৃতপক্ষে মহাকাশে সূর্য মোটামুটি প্রতি সেকেন্ডে ১৫০ মাইল বেগে ভ্রমণ করে এবং আমাদের ছায়াপথ (Milky way Galaxy) এর কেন্দ্রের চারিদিকে একবার সম্পূর্ণ প্রদিক্ষণ করতে সূর্যের সময় লাগে ২০ কোটি বছর প্রায়। মহিমান্বিত ঐশীগ্রন্থ পবিত্র আল কোরআনে বলা হয়েছে সূরা ইয়াসীন (يس), আয়াত: ৪০

 

لَا ٱلشَّمْسُ يَنۢبَغِى لَهَآ أَن تُدْرِكَ ٱلْقَمَرَ وَلَا ٱلَّيْلُ سَابِقُ ٱلنَّهَارِ وَكُلٌّ فِى فَلَكٍ يَسْبَحُونَ

 

অর্থঃ সূর্য নাগাল পেতে পারে না চন্দ্রের এবং রাত্রি অগ্রে চলে না দিনের।প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।"

 

এ আয়াত এমন এক প্রয়োজনীয় সঠিক তথ্য উল্লেখ করেছে যা মাত্র সম্প্রতি আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে। সেগুলো হলো সূর্য ও চন্দ্রের পৃথক কক্ষপথের অস্তিত্ব,মহাকাশে নিজস্ব গতিতে তাদের ভ্রমণ। সূর্য সৌরজগতকে নিয়ে যে "নির্দিষ্ট স্থান "-অভিমুখে গমন করছে সে স্থানটিকে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সুনির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত করছে।এ স্থানের নাম দেওয়া হয়েছে "সৌর চুড়া/প্যানেল" (Solar Apex)।বস্তুত সৌরজগত মহাকাশের যে বিন্দুর দিকে ধাবিত হচ্ছে তা হারকিউলসের তারামণ্ডলে (Alpha lyrae) অবস্থিত যার সঠিক অবস্থান দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। 

 

পৃথিবীর চারিদিকে প্রদিক্ষণ করতে চাঁদ যে সময় নেয় সেই একই সময়ে চাঁদ তার নিজ অক্ষের চারিদিকে ঘুরে থাকে।একবার সম্পূর্ণ ঘুরে আসতে চাঁদের সময় লাগে সাড়ে উনত্রিশ (২৯.৫) দিন।মহিমান্বিত পবিত্র আল কোরআনের এই আয়াতগুলোর বৈজ্ঞানিক নির্ভুলতা দেখে যে কেউই অবাক না হয়ে পারবেন না। তাহলে আমাদের কী ভেবে দেখা উচিত নয় এই প্রশ্নটি:কোরআনে ধারণকৃত এই জ্ঞানের উৎস কার?