Are you sure?

বিজ্ঞান »  ইসলাম ও বিজ্ঞান

পর্ব ৯//: পানি চক্রের সম্পর্কে কোরআনের বাণী

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম 

ভুগোল সম্পর্কে পবিত্র আল কোরআনের বাণী 

কোরআনে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি পর্ব:০৯

আলোচনা:-"পানি চক্রের সম্পর্কে কোরআনের বাণী

\_______________________________/

বার্নার্ড পালিসি (Bernard Palissy) হলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি ১৫৮০ খ্রিস্টাব্দে পানি চক্রের বর্তমান কালের ধারণা বর্ণনা করেছিলেন। তিনি বর্ণনা করেছিলেন সমুদ্র থেকে পানি কিভাবে বাষ্পীভূত হয় এবং পরে শীতল হয়ে মেঘে পরিণত হয়।এই মেঘমালা দূরবর্তী স্থানে গমন করে উপরে উঠে,পরে ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টির আকারে পতিত হয়। এই পানি নদী-নালা,খাল-বিল,হ্রদে জমা হয় এবং প্রবাহিত হয়ে একটি নিরবচ্ছিন্ন চক্রে পুনরায় মহাসাগরে ফিরে আসে।

 

খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে মিলিটাসের থ্যালেস (Thales of Miletus) বিশ্বাস করতেন যে,সাগরের উপরিভাগে ছিটানো পানির সূক্ষ্ম পানি কণাগুলোকে বাতাস সংগ্রহ করে বয়ে নিয়ে যায় দূরবর্তী স্থানে বৃষ্টিরুপে ফেলার জন্য।আদিকালের মানুষ ভূ-গর্ভস্থ পানির উৎস সম্পর্কে জানত না। তারা মনে করতো মহাসাগরের পানিকে বাতাস বিভিন্ন মহাদেশের অভ্যন্তরে প্রবলভাবে ঠেলে দেয়।তারা আরো বিশ্বাস করত যে,এ পানি ফিরে আসে কোন গোপন পথ দিয়ে অথবা অতল গহ্বর দিয়ে। এই পথটি মহাসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত এবং প্লেটোর সময় থেকে টার্টাদাস (Tartarus) বলা হতো।এমনকি ১৮ শতাব্দীর বিখ্যাত চিন্তাবিদ ডেসকার্টেস (Descartes) এ অভিমতই পোষণ করতেন। ১৯ শতাব্দী পর্যন্ত অ্যারিস্টটল (Aristotle) এর তত্ত্ব বহুল প্রচলিত ছিল।এই তত্ত্বানুযায়ী পাহাড়ের বিশাল বিশাল ঠান্ডা গুহায় পানি ঘনীভূত এবং ভূগর্ভে অনেক হ্রদ সৃষ্টি হয়। এই হ্রদগুলো ঝর্ণাগুলোকে পানি সরবরাহ করে।আজ আমরা জানতে পেরেছি যে,মাটির ফাটল দিয়ে বৃষ্টির পানি চুয়ে অভ্যন্তরে প্রবেশ করার কারণে এরুপ অবস্থার সৃষ্টি হয়ে থাকে।মহিমান্বিত পবিত্র আল কোরআন মাজীদে পানি চক্রের বর্ণনা নিম্নের আয়াতগুলোতে পাওয়া যায় সূরা আয্‌-যুমার (الزّمر), আয়াত: ২১

 

أَلَمْ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ أَنزَلَ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءً فَسَلَكَهُۥ يَنَٰبِيعَ فِى ٱلْأَرْضِ ثُمَّ يُخْرِجُ بِهِۦ زَرْعًا مُّخْتَلِفًا أَلْوَٰنُهُۥ ثُمَّ يَهِيجُ فَتَرَىٰهُ مُصْفَرًّا ثُمَّ يَجْعَلُهُۥ حُطَٰمًا إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَذِكْرَىٰ لِأُو۟لِى ٱلْأَلْبَٰبِ

 

অর্থঃ তুমি কি দেখনি যে, আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন। অতঃপর তিনি তা যমীনের ঝর্ণাসমূহে প্রবাহিত করেন, এরপর তার দ্বারা বিভিন্ন রঙের ফসল উৎপন্ন করেন, অতঃপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তোমরা তা পীতবর্ণ দেখতে পাও। এরপর আল্লাহ তাকে খড়-কুটায় পরিণত করে দেন। নিশ্চয় এতে বুদ্ধিমানদের জন্যে উপদেশ রয়েছে।

 

(আল্লাহ্ অন্যত্রেও এই একই বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন:-"তুমি কী লক্ষ্য করোনি?আল্লাহ্ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন অতঃপর তা দিয়ে বিভিন্ন রকমের ফলমূল উৎপন্ন করেন....(সূরা ফাতির ৩৫:২৭)।

 

পবিত্র কোরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে (৩০:২৪) সূরা আর রুম (الرّوم), আয়াত: ২৪

 

وَمِنْ ءَايَٰتِهِۦ يُرِيكُمُ ٱلْبَرْقَ خَوْفًا وَطَمَعًا وَيُنَزِّلُ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءً فَيُحْىِۦ بِهِ ٱلْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَآ إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَءَايَٰتٍ لِّقَوْمٍ يَعْقِلُونَ

 

অর্থঃ এবং তাঁর আরো নিদর্শনাবলীর মধ্যে তিনি তোমাদেরকে প্রদর্শন করান বিদ্যুৎ, ভীতি ও আশা সঞ্চারকরুপে এবং আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর তা দ্বারা ভূমির মৃত্যুর পর ওকে পুনরুজ্জীবিত করেন। নিশ্চয় এতে বুদ্ধিমান লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।"

 

পবিত্র কোরআন মাজীদের অন্যত্রে বলা হয়েছে (২৩:১৮) সূরা আল মু'মিনূন (المؤمنون), আয়াত: ১৮

 

وَأَنزَلْنَا مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءًۢ بِقَدَرٍ فَأَسْكَنَّٰهُ فِى ٱلْأَرْضِ وَإِنَّا عَلَىٰ ذَهَابٍۭ بِهِۦ لَقَٰدِرُونَ

 

অর্থঃ আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে থাকি পরিমাণ মত অতঃপর আমি তা জমিনে সংরক্ষণ করি এবং আমি তা অপসারিত  করতেও সক্ষম।"

 

আজ থেকে ১৪০০+ বছর পূর্বে বিশ্বের কোন পুস্তকে পানি চক্রের এমন নির্ভুল বর্ণনা দেয়নি। সুতরাং জ্ঞানীরা অল্পতেই বিশ্বাস করতে সক্ষম এটা নিশ্চয়ই কোন সর্বশক্তিমান স্রস্টার বাণী ব্যতীত কারো নয়।