Are you sure?

বিজ্ঞান »  ইসলাম ও বিজ্ঞান

পর্ব ১১//: ভূ-তত্ত্ববিদ্যা:পর্বতগুলো তাবুর পেরেকের মত!

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম 

কোরআনে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি পর্ব সিরিজ:১১

বিষয়:-ভূ-তত্ত্ববিদ্যা:পর্বতগুলো তাবুর পেরেকের মত!

\___________________________________/

ভূ-তত্ত্ব বিজ্ঞানে ভাঁজকরণ প্রতিভাসটি অধুনা আবিষ্কৃত সত্য। ভাঁজকরণ প্রক্রিয়া পর্বতমালা বা শ্রেণীগঠনের জন্য দায়ী। ভূ-পৃষ্ঠের কঠিন আহরণটি (Lithosphere) যার উপরে আমরা বাস করি ,সেটা একটা কঠিন খোসার মতো,পক্ষান্তরে এর গভীর স্তরগুলো গরম এবং গ্যাসীয় ও তরল (fluid)।তাই এগুলো যে কোন রকম জীবের জীবন ধারণের জন্য অনুপযোগী। এটাও আমরা জানি যে,পর্বতের দৃঢ় ও সুস্থিত অবস্থা ভাঁজকরণ ঘটনার সাথে গভীরভাবে জড়িত। কারণ ভূ-পৃষ্ঠে যে ভাঁজগুলো ছিল ,সেই ভাঁজগুলোই স্তর সমূহকে যোগান দিয়েছিল মজবুত ভিত্তি।আর এই স্তর সমূহ পর্বতগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। 

 

[নোট:স্তরীভূত শিলার ঊর্ধ্বমুখী বা নিম্নমুখী গমনের ফলে সৃষ্ট অবস্থাকে ভাঁজ বলে।এই ভাঁজ পাললিক শিলায় অধিক হলেও আগ্নেয় শিলা বা রূপান্তরিত শিলার অনেক ভাঁজ পৃথিবীতে দেখা যায়। আকৃতিতে ভাঁজ কয়েক কিলোমিটার থেকে কয়েক শত কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া ভাঁজ পর্বত সম্পর্কে জানতে চাইলে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর "ভূগোল"-নামক বইটি পড়তে পারেন পর্বত অধ্যায়ে]

 

ভূতত্ত্ববিদগণ আমাদের কে বলেন যে,পৃথিবীর ব্যাসার্ধও প্রায় ৩৭৫০ মাইল বা ৬০৩৫ কিলোমিটার এবং পৃথিবীর উপরিভাগের কঠিন আবরণ যার উপরে আমরা বাস করি এটা খুবই পাতলা এর পুরুত্ব ১ থেকে ৩ মাইলের মধ্যে।যেহেতু কঠিন আবরণটি পাতলা,তাই এর কম্পনের সম্ভবনাটা বেশি।পর্বতগুলো কিলক বা তাবুর পেরেকের মত কাজ করে ও ভূ-পৃষ্ঠের এই কঠিন আবরণটিকে ধরে রাখে এবং তাকে দেয় সুস্থিতি।আর মহিমান্বিত ঐশীগ্রন্থ পবিত্র আল কোরআন মাজীদে হুবহু এরুপ বর্ণনা করা হয়েছে সূরা আন নাবা (النّبا), আয়াত: ৬-৭ নং আয়াতে মহান আল্লাহ্ বলেছেন:-

 

أَلَمْ نَجْعَلِ ٱلْأَرْضَ مِهَٰدًاوَٱلْجِبَالَ أَوْتَادًا

 

অর্থঃ আমি কি ভূমিকে বিস্তীর্ণ বিছানাস্বরুপবং পর্বতসমূহকে কীলক রুপে নির্মাণ করিনি

 

এখানে (আওতাদান) أَوْتَادًا শব্দটি وتد (ওয়াতাদুন)এর বহুবচন যার অর্থ হল "পেরেক" অর্থাৎ পাহাড়কে তিনি পেরেকস্বরূপ সৃষ্টি করেছেন যাতে জমিন নড়াচড়া করতে না পারে।কেননা পৃথিবী নড়াচড়া করলে বসবাস করা সম্ভব হতো না।আর ব্যবহারিক অর্থে "আওতাদ"-শব্দটির অর্থ খুঁটি বা কিলক (পেরেক)[ঐগুলোর মত যা ব্যবহার করা হয় তাঁবু খাটাতে] (তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ)।(প্রকাশ থাকে যে, ভূগর্ভে কীলক বা পেরেকের মতই পর্বতমালার মূল বা শিকড় গাড়া আছে; যা ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা থেকে প্রায় ১০ থেকে ১৫ গুণ বেশী দীর্ঘ! -সম্পাদক (পবিত্র কোরআন ৭৮:৭ নং আয়াতের তাফসীরে আহসানুল বয়ান দ্রষ্টব্য)।মূলত এগুলো হলো তাত্ত্বিক ভাঁজসমূহের (Geological folds) এর গভীর ভিত্তি।

 

"পৃথিবী" (Earth)" নামক একটি বই যা বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বুনিয়াদি reference পাঠ্যপুস্তক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।পুস্তিকাটির অন্যতম লেখক ছিলেন ড.ফ্রাঙ্কপ্রেস (Dr.Frank Press) যিনি ছিলেন ১২ বছর ধরে আমেরিকার বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির প্রেসিডেন্ট এবং তিনি ছিলেন আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার (Jemmy Carter) এর বিজ্ঞান উপদেষ্টা।এই পুস্তকে তিনি চিত্র ও উপমা সহকারে বর্ণনা করেছেন যে পর্বত কীলকাকৃতির; পর্বত নিজেই পুরোটার একটি ক্ষুদ্রাংশ যার মূল মাটির গভীরে সুদৃঢ়ভাবে প্রোথিত।ড.ফ্রাঙ্ক প্রেসের মতে পর্বতসমূহ ভূ-পৃষ্ঠের কঠিন আবরণটিকে স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। পৃথিবীর কম্পনরোধে পর্বতসমূহের কার্যক্রম সম্পর্কে পবিত্র আল কোরআন মাজীদে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে সূরা আল আম্বিয়া (الأنبياء), আয়াত: ৩১ এ বলা হয়েছে:-

 

وَجَعَلْنَا فِى ٱلْأَرْضِ رَوَٰسِىَ أَن تَمِيدَ بِهِمْ وَجَعَلْنَا فِيهَا فِجَاجًا سُبُلًا لَّعَلَّهُمْ يَهْتَدُونَ

 

অর্থঃ এবং আমি পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছি সুদৃঢ় পর্বত যাতে পৃথিবী তাদেরকে নিয়ে আন্দোলিত না হয় (এদিক-ওদিক ঢলে না পড়ে) এবং তাতে করে দিয়েছি প্রশস্ত পথ যাতে তারা গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে। "

 

অনুরুপ বর্ণনা পবিত্র আল কোরআনের ১৬ নং সূরা আন নাহলের ১৫ নং আয়াত এবং ৩১ নং সূরা লুকমানের ১০ নং আয়াতে বলা হয়েছে। তাই দেখা যায় পর্বতসমূহের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য মহিমান্বিত ঐশীগ্রন্থ পবিত্র আল কোরআন মাজীদে যা বর্ণনা করা হয়েছে তা ভূ-তত্ত্ব বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক আবিষ্কারের সাথে পুরোপুরিই সামঞ্জস্যপূর্ণ।