Are you sure?

বিজ্ঞান »  ইসলাম ও বিজ্ঞান

পর্ব ১৩//: সমুদ্র বিদ্যা:সুপেয়,লবণাক্ত ,মিষ্টি এবং খর পানির মধ্যে পর্দা বা অন্তরাল

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম 

বিষয়:কোরআনে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি পর্ব সিরিজ:১৩

আলোচনা:-সমুদ্র বিদ্যা:সুপেয়,লবণাক্ত ,মিষ্টি এবং খর পানির মধ্যে পর্দা বা অন্তরাল:

\__________________________________/

সর্বশক্তিমান রব মহান আল্লাহ্ সুবহানু ওয়াতাআলা মহিমান্বিত ঐশীগ্রন্থ পবিত্র আল কোরআন মাজীদে সূরা আর রাহমান (الرّحْمن), আয়াত: ১৯

 

مَرَجَ ٱلْبَحْرَيْنِ يَلْتَقِيَانِبَيْنَهُمَا بَرْزَخٌ لَّا يَبْغِيَانِ

 

অর্থঃ তিনি পাশাপাশি দুই দরিয়া (সমুদ্র কে) প্রবাহিত করেছেন,যারা পরস্পর মিলিত হয়।কিন্তু উভয়ের মাঝখানে রয়েছে এক অন্তরাল, যা ওরা অতিক্রম করে না।"

 

এখানে আরবি শব্দ " بَرْزَخٌ (বারজাখ)" এর অর্থ হলো অন্তরাল,পর্দা,আড়াল বা প্রাচীর।"অন্তরাল,পর্দা,আড়াল বা প্রাচীর বলতে সাধারণত আমরা যা বুঝে থাকি সেটা এরুপ কোন স্বাভাবিক বাহ্য পর্দা বা প্রাচীর বা অন্তরাল নয়।

 

ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন :-" مرج (মারাজ)"-এর অর্থ ارسل বা প্রবাহিত করেনالْبَحْرَيْنِ দু সমুদ্র বলতে মিষ্টি পানি ও লোনা পানিবিশিষ্ট। ইবনু জায়েদ বলেন- يَلْتَقِيٰنِ অর্থাৎ দুটি সমুদ্র পাশাপাশি প্রবাহিত হয় কিন্তু একটি অন্যটির সাথে সংমিশ্রণ হতে বাধা দেয় কারণ উভয়ের মাঝে রয়েছে বিশাল অন্তরায়।"(পবিত্র কোরআন ৫৫:২০ এর তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ দ্রষ্টব্য)

 

তবে হ্যাঁ,আরবিতে মারাজা (مرج) শব্দের অর্থ করলে বোঝায় :-"দুটি বস্তুর পরস্পর মিলিত হয়ে মিশ্রিত হয়ে যাওয়া।"

 

কোরআনের প্রাচীন ভাষ্যকারগণ দুটি সমুদ্রের পানির জন্য দুটি বিপরীতমুখী অর্থ অর্থাৎ দুটির পানির ধারা পরস্পর মিলিত হয় এবং মিশে যায় অথচ একই সময়ে তাদের উভয়ের মধ্যে রয়েছে "অন্তরাল বা পর্দা "-এর ব্যাখ্যা প্রদানে সক্ষম হন না।

 

আধুনিক বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে যে, যেখানে দুটি ভিন্ন সমুদ্র এসে একত্রিত/মিলিত হয় সেখানে উভয়ের মধ্যে একটি প্রতিবন্ধক বা অন্তরায় থাকে। এ অন্তরায় দুটি সমুদ্রকে বিভক্ত করে, ফলে প্রত্যেক সমুদ্রের নিজস্ব তাপমাত্রা, লবণাক্ততা এবং ঘনত্ব অক্ষুণ্ণ থাকে।সাগর বিদ্যার বিশারদগণ বর্তমানে এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রদানের ক্ষেত্রে উত্তম অবস্থানে রয়েছেন।দুটি সাগরের মধ্যে রয়েছে ঢালু অদৃশ্য পানির পর্দা যার মধ্যে দিয়ে পানি এক সাগর হতে অপর সাগরে যায়।কিন্তু যখন এক সমুদ্র থেকে পানি অন্য সমুদ্রে প্রবেশ করে তখন সে তার নিজস্ব পানির বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলে এবং অন্য পানির সাথে মিশে সমসত্ব দ্রবণে পরিণত হয়।আর এভাবে দুই ধরণের পানির মধ্যে পরিবর্তনমূলক একীভূতকারী প্রতিবন্ধক হিসেবে এ অন্তরায় কাজ করে।"(তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ ২৫:৫৩ আয়াত দ্রষ্টব্য)।

 

[নোট:উক্ত তথ্য Principals of Oceanography ,Davis ,pp.92-93 দ্রষ্টব্য]

 

এই বৈজ্ঞানিক ঘটনা বা প্রতিভাস যা কোরআনে উল্লেখিত হয়েছে ড.উইলিয়াম হে (Dr William Hay) যিনি একজন বহুল পরিচিত সমুদ্র বিজ্ঞানী এবং আমেরিকা যুক্তরাজ্যের কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ববিষয়ক বিজ্ঞানের অধ্যাপক।তিনি পবিত্র কোরআনে উল্লেখিত এই বৈজ্ঞানিক ঘটনাগুলোকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।এরুপ ঘটনা পবিত্র কোরআনে উল্লেখিত রয়েছে সূরা আন নম্‌ল (النّمل), আয়াত: ৬১

 

أَمَّن جَعَلَ ٱلْأَرْضَ قَرَارًا وَجَعَلَ خِلَٰلَهَآ أَنْهَٰرًا وَجَعَلَ لَهَا رَوَٰسِىَ وَجَعَلَ بَيْنَ ٱلْبَحْرَيْنِ حَاجِزًا أَءِلَٰهٌ مَّعَ ٱللَّهِ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ

 

অর্থঃ......এবং তিনি দুই সমুদ্রের মাঝখানে অন্তরায় রেখেছেন...।"

 

এই প্রতিভাস বা ঘটনা (অন্তরাল বা পর্দা সৃষ্টির ঘটনা) পৃথিবীর বহু স্থানেই ঘটে।ভূমধ্যসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরের মিলন স্থলে জিব্রাল্টার প্রণালীতে বিরাজমান বিভাজকসহ অনেক পর্দা বা অন্তরায় বহু স্থানেই দেখা যায়।একটি সাদা অন্তরাল বা পর্দা পরিষ্কারভাবে দেখা যায় Cape Point এ, Cape Peninsula তে এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় যেখানে আটলান্টিক মহাসাগর ভারত মহাসাগরে মিলিত হয়েছে।কিন্তু যখন পবিত্র কোরআন সুপেয় পানি ও লবণাক্ত পানির মধ্যে অন্তরাল/বিভাজক সম্পর্কে বলে তখন এই অন্তরাল সহ "একটি নিবৃত্তিকরণ পর্দা বা দুর্ভেদ্য অন্তরালের "-উপস্থিতিত কথা উল্লেখ করেছে।সর্বশক্তিমান স্রস্টা মহান আল্লাহ্ সুবহানু ওয়াতা'আলা পবিত্র কোরআন মাজীদে এরশাদ করেছেন সূরা আল ফুরকান (الفرقان), আয়াত: ৫৩

 

وَهُوَ ٱلَّذِى مَرَجَ ٱلْبَحْرَيْنِ هَٰذَا عَذْبٌ فُرَاتٌ وَهَٰذَا مِلْحٌ أُجَاجٌ وَجَعَلَ بَيْنَهُمَا بَرْزَخًا وَحِجْرًا مَّحْجُورًا

 

অর্থঃ তিনিই দুই সমুদ্রকে সমান্তরালে প্রবাহিত করেছেন।এর একটি মিষ্টি, সুপেয় এবং অপরটি লবণাক্ত, খর; তিনি উভয়ের মধ্যে রেখে দিয়েছেন একটি পর্দা /দুর্ভেদ্য অন্তরাল যা এক অনতিক্রম্য ব্যবধান (যা এ দুটোকে মিশতে দেয় না)।

 

আধুনিক বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে যে,"মোহনা সমূহে যেখানে সুপেয়,(মিষ্টি) পানি এবং লবণাক্ত (খর) পানি মিলিত হয়,এখানকার অবস্থাটা দুটি লবণাক্ত পানির সাগর যেখানে মিলিত হয় ,সেখানকার অবস্থা হতে কিছু ভিন্ন প্রকৃতির হয়ে থাকে।মোহনা সমূহে যা মিঠা বা সুপেয় পানিকে লবণাক্ত পানি হতে আলাদা করে সেটা আবিষ্কৃত হয়েছে।সেটা হলো Pycnocline Zone বা অঞ্চল যার চিহ্নিত ঘনত্ব ধারাবাহিকহীন ভাবে দুটি স্তরকে আলাদা করে থাকে।এই পর্দা বা অন্তরালটির (বিভাজন অঞ্চলের) এমন লবণাক্ততা যা সুপেয় পানি ও লবণাক্ত পানি, এই উভয় প্রকার পানির লবণাক্ততা হতে আলাদা।নীল নদ প্রবাহিত হয়ে ভূমধ্যসাগরের যেখানে পড়েছে মিশরের সেই স্থানসহ অন্যান্য অনেক স্থানে এই বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে থাকে।

 

এখন চিন্তা করুন পবিত্র কোরআন মাজীদ আল্লাহ্ ব্যতীত কোন মানুষের পক্ষে রচনা করা সম্ভব কী?নিশ্চয়ই নয়.....!

 

http://www.islamtomorrow.com/quran/miracles/quran_seas_rivers.asp