Are you sure?

বিজ্ঞান »  ইসলাম ও বিজ্ঞান

পর্ব ১৪//: সমুদ্র বিদ্যা:মহাসাগরের গভীরে অন্ধকার সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের বাণী

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম 

বিষয়:কোরআনে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি পর্ব সিরিজ-১৪

আলোচনা:-সমুদ্র বিদ্যা:মহাসাগরের গভীরে অন্ধকার সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের বাণী 

\_________________________________/

সামুদ্রিক ভূ-তত্ত্ববিদ্যায় বিশ্ববিখ্যাত বিশেষজ্ঞ এবং জেদ্দার বাদশাহ আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দুর্গারাওকে কোরআনের নিম্নলিখিত আয়াতের উপর মতামত চাওয়া হয় যাতে বলা হয়েছে সূরা আন নূর (النّور), আয়াত: ৪০

 

أَوْ كَظُلُمَٰتٍ فِى بَحْرٍ لُّجِّىٍّ يَغْشَىٰهُ مَوْجٌ مِّن فَوْقِهِۦ مَوْجٌ مِّن فَوْقِهِۦ سَحَابٌ ظُلُمَٰتٌۢ بَعْضُهَا فَوْقَ بَعْضٍ إِذَآ أَخْرَجَ يَدَهُۥ لَمْ يَكَدْ يَرَىٰهَا وَمَن لَّمْ يَجْعَلِ ٱللَّهُ لَهُۥ نُورًا فَمَا لَهُۥ مِن نُّورٍ

 

অর্থঃ অথবা (কাফিরদের অবস্থা) বিশাল গভীর সমুদ্রে গভীর অন্ধকারের ন্যায়, যাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে ঢেউয়ের উপরে ঢেউ, তার উপরে মেঘ, একের পর এক অন্ধকারের স্তর, কেউ হাত বের করলে সে তা একেবারেই দেখতে পায় না। আল্লাহ যাকে আলো দান করেন না, তার জন্য কোন আলো নেই।"  [অনুবাদক: তাইসিরুল কোরআন]

 

"Or [they are] like darknesses within an unfathomable sea which is covered by waves, upon which are waves, over which are clouds - darknesses, some of them upon others. When one puts out his hand [therein], he can hardly see it. And he to whom Allah has not granted light - for him there is no light.  [Translator: Sahih International]

 

অধ্যাপক রাও বলেন যে,বিজ্ঞানীরা কেবলমাত্র আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে মহাসাগরের গভীরে যে অন্ধকার বিরাজ করছে এ বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন।কোনরুপ সাহায্য ছাড়া মানুষ পানির নিচে ২০ থেকে ৩০ মিটার অধিক গভীরে ডুব দিতে সক্ষম নয় এবং মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২০০ মিটার অধিক গভীরে মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। কোরআনের এই আয়াতটি সকল সাগরের কথাও উল্লেখ করে না।কারণ প্রতিটি সাগর অন্ধকার স্তরে স্তরে পুঞ্জীভূত করে রাখে না। এ আয়াতটা বিশেষভাবে বিশালাকার গভীর সাগর বা মহাসাগরের কথাই উল্লেখ করেছে।যেহেতু কোরআন বলেছে:-"বিশাল গভীর সমুদ্রে গভীর অন্ধকার।"গভীর মহাসাগরে এই স্তরে স্তরে ২ টি কারণে অন্ধকার সৃষ্টি হয়ে থাকে।সেগুলো হলো:

 

ক)আলোক রশ্মি সাতটি রঙের সমন্বয়ে গঠিত। এ সাতটি রঙ হলো বেগুনি,নীল,আকাশী/আসমানী,সবুজ,হলুদ,কমলা এবং লাল (বেনীআসহকলা)।আলোক রশ্মি যখন পানিতে আবর্তিত হয় তখন প্রতিসরণ সংঘটিত হয়ে থাকে।পানির উপরিভাগের ১০ হতে ১৫ মিটার গভীরে পানি লাল রঙকে শোষণ করে। তাই একজন ডুবুরি যদি ২৫ মিটার গভীরে যান এবং আঘাত প্রাপ্ত হন তাহলে তিনি তার রক্তের লাল রঙ কে দেখতে সক্ষম হবে না।কারণ লাল রঙ এই গভীরতায় পৌঁছাতে পারে না। অনুরুপভাবে কমলা রঙ ৩০ থেকে ৫০ মিটার ,হলুদ ৫০ থেকে ১০০ মিটার,সবুজ ১০০-২০০ মিটার,নীল ২০০ মিটার ছাড়িয়ে যায় এবং সর্বশেষ আসমানী ও বেগুনি ২০০ মিটার অধিক গভীর পানিতে শোষিত হয়।এক স্তরের পর অন্য স্তরে ক্রমাগত ভাবে রঙ সমূহের অন্তর্ধান মহাসাগর ক্রমবর্ধমান হারে অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে থাকে। ১০০০ মিটার গভীরের নিচে পরিপূর্ণ অন্ধকার বিরাজ করে। 

 

খ)সূর্যের রশ্মি মেঘমালার দ্বারা শোষিত হয় যাতে আলোকরশ্মি গুলো বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে।ফলে মেঘমালার নিচে সৃষ্টি হয় এক অন্ধকার স্তর।এটাই হলো অন্ধকারের প্রথম স্তর।আবার যখন আলোক রশি সমূহ মহাসাগরের পৃষ্ঠদেশে পৌছায় তখন এগুলো ঢেউয়ের উপরিতল কতৃক প্রতিফলিত হয়,ফলে ঢেউয়ের উপরিতল দীপ্তিময় চক চকে হয়ে উঠে।সুতরাং তরঙ্গগুলোই আলোককে প্রতিফলিত করে এবং অন্ধকার সৃষ্টি করে।অপ্রতিফলিত রশ্মিগুলো পানি ভেদ করে সমুদ্রের গভীরে পৌঁছে।সুতরাং মহাসাগর দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে যায়। একটি তার পৃষ্ঠদেশ বা উপরিভাগ যা আলো ও তাপ দ্বারা চিহ্নিত করা যায়। অন্যটি গভীর অঞ্চল যা চিহ্নিত করা যায় অন্ধকার দ্বারা। পৃষ্ঠদেশ বা উপরিভাগ আবার মহাসাগরের গভীর অঞ্চল হতে পৃথক হয়েছে গভীর তরঙ্গমালার দ্বারা।

 

সাগর ও মহাসাগরের গভীর অঞ্চলের পানিকে ঢেকে রেখেছে অভ্যন্তরীণ তরঙ্গমালা।কারণ গভীর অংশের পানির ঘনত্ব তার উপরিভাগের পানির ঘনত্ব হতে অধিক।

 

অভ্যন্তরীণ তরঙ্গমালার নিচ থেকেই অন্ধকার শুরু হয়।এমনকি মাছেরাও সাগর মহাসাগরের গভীর অঞ্চল দেখতে পায় না। তাদের একমাত্র আলোর উৎস হলো তাদের নিজেদের দেহের আলো।

 

আল কোরআন এটা যথার্থ ভাবেই বর্ণনা করেছে যে:-"এক বিশাল গভীর সমুদ্রের মধ্যে অন্ধকার,উপরে একটি তরঙ্গ ছেয়ে আছে ,তার উপর আরো একটি তরঙ্গ। "

 

অন্য কথায় এই তরঙ্গমালার উপর রয়েছে বিভিন্ন প্রকার তরঙ্গ অর্থাৎ ঐ তরঙ্গগুলো যা দেখা যায় মহাসাগরের পৃষ্ঠদেশে বা উপরিভাগে। কোরআনের আয়াতটা আরো বলে:-"শীর্ষদেশে রয়েছে ঘন কালো মেঘমালা ,একের উপরে এক গভীর অন্ধকার।"

 

যেমন বর্ণনা করা হয়েছে ,এই মেঘমালা একটার উপর আর একটা আড়াল বা পর্দা হিসেবে রয়েছে এবং বিভিন্ন স্তরে আলোর রঙ শোষণ করে অতিরিক্ত অন্ধকার সৃষ্টি করে। 

 

অধ্যাপক দুর্গারাও তার বক্তব্যের পরিসমাপ্তি টানেন একথা বলে যে:-"১৪০০ বছর পূর্বে একজন স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে এসব বিস্ময়কর ঘটনা সমূহের এরুপ সুবিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। সুতরাং এ জাতীয় তথ্য অবশ্যই কোন অতিপ্রাকৃতিক উৎস থেকেই এসেছে। "

 

সোর্স/রেফারেন্স:

1)পবিত্র কোরআন ২৪:৪০

2)Oceanography ,Gross, P.242,244 Also see introductory oceanography ,Thurman,PP:300-301.

3)Oceans , Older & Pernetta, P:27