বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
বিষয়: পবিত্র কোরআনের ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যতা সিরিজ
আলোচনা: "মহান আল্লাহর প্রতিশ্রুতি পূরণ" [সূরা আন নূর, ৫৫ আয়াত]
\___________________________________/
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু প্রিয় ভাই ও বোনেরা। আশা করি অবশ্যই সবাই মহান আল্লাহ্ সুবহানু ওয়াতা'আলার অশেষ রহমত ও দয়ায় ভালো এবং সুস্থ আছেন। আজ আমরা পবিত্র কোরআনের ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যতা-২ পর্ব আলোচনা করব ইনশাআললাহ। মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ সুবহানু ওয়াতা'আলা পবিত্র কোরআনের ২৪ নং সূরা আন নূর (النّور), আয়াত: ৫৫ তে এরশাদ করেছেন:-
وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ مِنكُمْ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّٰلِحَٰتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِى ٱلْأَرْضِ كَمَا ٱسْتَخْلَفَ ٱلَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ ٱلَّذِى ٱرْتَضَىٰ لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُم مِّنۢ بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا يَعْبُدُونَنِى لَا يُشْرِكُونَ بِى شَيْـًٔا وَمَن كَفَرَ بَعْدَ ذَٰلِكَ فَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْفَٰسِقُونَ
অর্থঃ তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, তিনি তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব দান করবেনই, যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব দান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য সুদৃঢ় করবেন তাদের দীনকে যা তিনি তাদের জন্য মনোনীত করেছেন এবং তাদের ভয় ভীতির পরিবর্তে তাদেরকে অবশ্যই নিরাপত্তা দান করবেন; তারা আমার ইবাদাত করবে, আমার সাথে কোন শরীক করবেনা, অতঃপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে তারা তো সত্যত্যাগী।" [অনুবাদক: মুজিবুর রহমান]
উক্ত আয়াতের বিস্তারিত তাফসীর পড়তে ক্লিক করুন:
Published by: Bangladesh Hadith Academy
https://www.hadithbd.com/quran/email/?id=2846
আয়াত নাযিলের প্রেক্ষাপট:
উবাই ইবনে কা'ব রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এবং তার সাথীরা যখন মদীনায় তাশরীফ আনলেন এবং আনসারগণ তাদেরকে আশ্রয় দিলেন, তখন সমস্ত আরব এক বাক্যে তাদের শক্রতে পরিণত হলো। সাহাবাগণ তখন রাতদিন অস্ত্ৰ নিয়ে থাকতেন। তখন তারা বললোঃ আমরা কি কখনো এমনভাবে বাঁচতে পারবো যে, আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় না করে সন্তুষ্ট চিত্তে ঘুমাতে পারবো? তখন এ আয়াত নাযিল হয়” [ত্ববারানী, মুজামুল আওসাত ৭/১১৯, হাদীস ৭০২৯, হাকীম- মুস্তাদরাকঃ ২/৪০১, দ্বিয়া আল-মাকদেসীঃ মুখতারাহঃ ১১৪৫]
এ আয়াতে মহান আল্লাহ্ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে তিনটি বিষয়ের ওয়াদা দিয়েছেন।
i) আপনার উম্মতকে যমীনের বুকে খলীফা ও শাসনকর্তা করা হবে,
ii) আল্লাহ্র মনোনীত দীন ইসলামকে প্রবল করা হবে এবং
iii) মুসলিমদেরকে এমন শক্তি ও শৌর্যবীর্য দান করা হবে যে, তাদের অন্তরে শক্রর কোনো ভয়ভীতি থাকবে না।"
মহান আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর এই ওয়াদা পূর্ণ করেছেন খুবই অল্প সময়ের মধ্যে। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পূণ্যময় আমলে মক্কা, খাইবার, বাহরাইন, সমগ্র আরব উপদ্বীপ ও সমগ্ৰ ইয়ামান তারই হাতে বিজিত হয় এবং তিনি হিজরের অগ্নিপূজারী ও শাম (বর্তমান সিরিয়া) দেশের কতিপয় অঞ্চল থেকে জিযিয়া কর আদায় করেন। রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস মিসর ও আলেকজান্দ্ৰিয়ার সম্রাট মুকাউকিস, আম্মান ও আবিসিনিয়ার সম্রাট নাজ্জাসী প্রমুখ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে উপঢৌকন প্রেরণ করেন ও তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন। বাদশাহ নাজ্জাশী পরে ইসলাম গ্রহণ করার কারণে ইথিওপিয়াও ইসলামের ছায়াতলে চলে আসে।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ওফাতের পর আবু বকর সিদ্দীক রাঃ খলীফা হন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ওফাতের পর যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত মাথাচাড়া দিয়ে উঠে, তিনি তা খতম করেন এবং পারস্য, সিরিয়া ও মিসর অভিমুখে সৈন্যাভিযান প্রেরণ করেন এবং তার সময়ে এই বিজয়, ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা, ও নিরাপত্তার অবয়ব বৃদ্ধি পেতে থাকে। বসরা ও দামেস্ক তারই আমলে বিজিত হয় এবং অন্যান্য দেশেরও কতক অংশ করতলগত হয়। আবু বকর সিদ্দীকের ওফাতের সময় নিকটবর্তী হলে আল্লাহ্ তা‘আলা তার অন্তরে উমর ইবনুল খাত্তাবকে পরবর্তী খলীফা নিযুক্ত করার ইলহাম করেন। উমার ইবনুল খাত্তাব খলীফা নিযুক্ত হয়ে শাসনব্যবস্থা এমনভাবে সুবিন্যস্ত করলেন যে, নবীগণের পর পৃথিবী এমন সুন্দর ও সুশৃংখল শাসন ব্যবস্থা আর প্রত্যক্ষ করেনি। তার আমলে সিরিয়া পুরোপুরি বিজিত হয়। এমনিভাবে মিসর ও পারস্যের অধিকাংশ এলাকা তার করতলগত হয়। তার হাতে কায়সার ও কিসরা সমূলে নিশ্চিহ্ন হয়। এরপর উসমান ইবন আফফান রাঃ খেলাফত কালে ইসলামী বিজয়ের পরিধি পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। পাশ্চাত্য দেশসমূহ, আন্দালুস ও সাইপ্রাস পর্যন্ত, দূরপ্রাচ্য চীন ভূখণ্ড পর্যন্ত এবং ইরাক, খোরাসান ও আহওয়ায ইত্যাদি সব তার আমলেই মুসলিমদের অধিকারভুক্ত হয়"[দেখুন-কুরতুবী] ।এভাবে মাত্র ত্রিশ বছরের মধ্যে মুসলিমগণ তৎকালীন পরিচিত বিশ্বের প্রাণকেন্দ্র পায় পুরোটাই অধিকার করেন।
সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:-“আমাকে সমগ্ৰ ভূখণ্ডের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্ত একত্রিত করে দেখানো হয়েছে” [সহীহ মুসলিম ২৮৮৯]।
মহান আল্লাহ্ তা‘আলা এই প্রতিশ্রুতি উসমান ইবন আফফান রাঃ এর আমলেই পূর্ণ করে দেন। অন্য এক হাদীসে বলা হয়েছে: “খেলাফত আমার পরে ত্রিশ বছর থাকবে” [আবু দাউদ ৪৬৪৬, তিরমিযী ২২২৬, আহমাদ ৫/২২১]
আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ইন্তেকালের পরে ইসলামের প্রধান চারজন খলিফারা ৬৩২ – ৬৬১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অর্থাৎ ৩০ বছর পর্যন্ত খেলাফত পরিচালনা করেছিল। এই খিলাফত সর্বোচ্চ সীমায় উপনীত হওয়ার পর এটি সমগ্র আরব উপদ্বীপ, লেভান্ট থেকে উত্তর ককেসাস, পশ্চিমে মিসর থেকে বর্তমান তিউনিসিয়া ও পূর্বে ইরানীয় মালভূমি থেকে মধ্য এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত।
এভাবে মহান আল্লাহর মনোনীত জীবন ব্যবস্থা এ সকল দেশের সকল দ্বীনের উপরে বিজয় লাভ করে। ফলে মুসলিমগণ নিরাপদে ভয়-ভীতি থেকে মুক্ত থাকে এবং মহান আল্লাহর ইবাদত করতে পারেন। আলী রাঃ এর সময়ে নতুন বিজয় সাধিত না হলেও তাঁর যুগে মুসলিম মিল্লাতের প্রতিষ্ঠা ও উন্নতির ধারা অব্যাহত থাকে।
সুতরাং এটা নিঃসন্দিগ্ধ ভাবে বলা যায় যে,"এই পবিত্র কোরআন হলো মহান আল্লাহর বাণী এবং রাসূল (ﷺ) একজন সত্য নবী।
মূল টেক্সট: তাফসীরে আবু বকর যাকারিয়া
Published by: King Fahd Complex, Madina, Saudi Arabia
https://quranenc.com/en/browse/bengali_zakaria/24/55
নোট: অনলাইন সোর্স:
i) সম্পূর্ণ পবিত্র কোরআনের অর্থ, বাংলা, ইংরেজি, আরবি সহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ, তাফসীর লিংক (আবু বকর যাকারিয়া হাফিঃ) পড়ুন।
Published by: King Fahd Complex, Madina, Saudi Arabia
https://quranenc.com/en/browse/bengali_zakaria/48/1
ii) বাংলাদেশ হাদিস অ্যাকাডেমির "কোরআনের তাফসীর লিংক)
https://hadithbd.com/quran/