#তোমার_চোখের_জল
#সত্য_ঘটনা_অবলম্বনে_লিখিত
--ঈশান! এই ঈশান ঘুম থেকে কখন উঠবি? কাজে যাবিনা নাকি? দেরি হয়ে যাচ্ছে তো,
--- হুম উঠছি দাড়াও,কয়টা বাজে একটু দেখোতো মা,
-- পাগলের মতো কথা বলছিস কেনো? আমি কি ঘড়ির টাইম দেখতে জানি নাকি!!
মোবাইলের আলোতে চোখ খুলতে সমস্যা হচ্ছিলো,অনেক কষ্টে দেখতে পেলাম- সকাল সারে আটটা বাজে,
--এইরে তারাতারি কাজে যেতে হবে,দোকানে অনেক কাজ পরে আছে,মা কিছু খেতে দাও,
এই বলে তারাতারি পুকুরে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে নিলাম,
-- ধর, নে--চা আর বিস্কিট আছে খেয়ে নে,যাওয়ার সময় একাদশীর প্রসাদ খেয়ে যাবি কিন্তু মনে করে?(#টিকা১)
-- আজকে একাদশী? আগে বলনি কেনো? প্রসাদ কোথায় রেখেছো? পাচ্ছিনা তো,
-- পুজোর ঘরে গিয়ে দেখ ওখানে রাখা আছে,
পুজোর ঘর থেকে প্রসাদ খেয়ে প্রতিদিনের মতো আজও কাজে চলে এলাম,
--কিরে! দোকানে এতো কাজ পরে আছে, আর তুই এতো দেরি করে আসলি কেনো?(আমার বস)
-- না আসলে ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হয়ে গেলো তো তাই,
সমস্যা নেই আজকেই সব কাজ হয়ে যাবে, কাল পরশু ডেলিভারিও দিতে পারবেন,
-- আচ্ছা ঠিক আছে,তাড়াহুড়ো করতে হবেনা,সুন্দর করে করলেই হবে,
এখন মনোযোগ দিয়ে কাজ কর আমি একটু ঘরে বাজার করে দিয়ে আসি,
---আচ্ছা ঠিক আছে,আপনি যান,আমি আছি,
২/রাতে কাজ শেষ করে ঘরে ফেরার পথে কিছু বাজার করে নিলাম,ঘরে মা আর বোন ছাড়া আর কেউ নেই,অনেক দিন হলো মুরগির গোস্ত খাইনি, কিন্তু সমস্যা টা অন্য জায়গায়,
আম্মু মুরগির গোস্ত খেতে চায়না,তাই একা একা খেতেও ভালো লাগেনা,
অনেক ভেবেচিন্তে শেষমেশ একটা মুরগি নিয়েই ফেললাম,ভাইবোনে দুজনে খাবো,আর আম্মুর জন্য কিছু মাছ কিনে নিলাম,
--- কিরে এতোকিছু বাজার করলি কেনো? মুরগি আবার মাছ? (আম্মু)
--- এমনি খেতে মন চাইলো তাই,দেরি না করে রান্না করে ফেলো,নয়তো ফ্রিজে রেখে দাও,পরে রান্না করিও,
---মুরগির গোস্ত দিয়ে বিরিয়ানি আমার অনেক প্রিয় খাবার,
অনেকদিন হলো খাওয়া হয়না,আম্মু বিরিয়ানি তেমন ভালো রান্না করতে পারেনা, তাই সংকোচে আম্মুকে বিরিয়ানী রান্নার কথা বলতেও পারিনা,
শুধু আম্মুকে কষ্ট দিয়ে কি লাভ? যদি ভালো না হয় তাহলে তো আম্মু মন খারাপ করবে,
৩/সকালে আম্মু ঘুম থেকে ডেকে দিলো,শীতকালের দিন কম্বলের নিচ থেকে বেরুতেই ইচ্ছে করেনা,আম্মু বলল--
আচ্ছা ঈশান! তুই তো বিরিয়ানী খেতে পছন্দ করিস, তোর জন্য বিরিয়ানী রান্না করবো?
-- না করিও না,তোমার কষ্ট হবে,তাছাড়া তুমিতো তেমন ভালো পারোনা,শুধু শুধু কষ্ট করতে হবেনা,
--- আরেহ না! পারবো তুই দেখিস,তুই শুধু আমাকে কিছু বাজার করে দে,আমি কাল রান্না করে খাওয়াবো,
আর হ্যাঁ, এখন তো শীতকাল, অনেকদিন হলো ভাপা পিঠা খাওয়া হয়না,প্রায় ৫-৬ বছর হয়ে গেলো,ঘরে ভাপা পিঠা বানাইনি,
এক কাজ কর, তুই গিয়ে চাউল গুলো পাউডার করিয়ে নিয়ে আয়,আর কিছু বাজারও করে আনিস,কাল তোর জন্য পিঠা আর বিরিয়ানী দুটোই বানাবো,
--- আচ্ছা ঠিক আছে করে দেবো,এখন কাজে যাচ্ছি,রাতে বাজার নিয়ে আসবো,
রাতে আসার পথে আম্মু যা যা বলেছিলো ঠিক সবগুলো বাজার থেকে নিয়ে আসলাম,আম্মু কাল অনেকদিন পর পিঠা বানাবে,আহা! কতদিন খাইনা,
খুব ভোরে উঠেই আম্মু পিঠা বানাতে চলে গেলো,কিন্তু অনেকদিন পিঠা না বানানোর কারনে ভালোভাবে পিঠাগুলো হচ্ছিলোনা, পিঠাগুলো ভেঙে যাচ্ছিলো,আর শক্ত শক্ত খেতেও ভালো লাগছিলোনা,
আম্মুর মনটাই খারাপ হয়ে গেলো অনেকদিন পর ছেলের জন্য পিঠা বানাতে এসেছে, কিন্তু এখন দেখছে পিঠা হচ্ছেই না,খুব খারাপ লাগলো,কিছু কিছু পিঠা আবার ভালো হচ্ছিলো,
---ঘুম থেকে উঠে হাত মুখ পরিস্কার করে পিঠা খেতে গেলাম,কিন্তু পিঠাগুলো দেখেই মন খারাপ হয়ে গেলো,
-- মা! তুমিতো আগে অনেক ভালো পিঠা বানাতে পারতে,এখন কি হয়েছে তোমার? কোন পিঠাই ভালো হয়না কেনো??
-- আম্মুর খুব মন খারাপ কিছু বলতে পারছেনা,খুব কষ্ট পাচ্ছে আম্মু ভিতরে ভিতরে,
জানিনারে বাবা! কি হয়েছে,আগে মানুষ পিঠা খেয়ে সুনাম করতো এখন তো পিঠা বানাতেই পারছিনা,কি জানি কি হলো?
এইগুলো অনেক ভালো আছে, তুই এখান থেকে কয়েকটা খেয়ে দেখ,
--- ভালো ভালো দেখে কয়েকটা পিঠা খেলাম,ওতোটাও খারাপ হয়নি খেতে,
শুধু সুন্দরের কথা বাদ দিলেই সব কিছু ঠিকঠাক,
কয়েকটা পিঠা খেয়েই কাজে চলে এলাম,আসার সময় আমার বস এর জন্যও কয়েকটা নিয়ে এলাম,উনিও খেলো,
দুপুরে আম্মু বিরিয়ানী রান্না করবে,
আহ!! অনেক দিন পর বিরিয়ানি খাওয়া হবে,কতদিন বিরিয়ানি খাইনা,আজ কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া হবে,
দুপুরে দ্রুত কাজ শেষ করে বাড়িতে চলে এলাম,বিরিয়ানি বলে কথা,দেরি যে আর তর সয়না,
বাড়িতে এসে গোসল করে ফ্রেস হয়ে খেতে বসলাম,
আম্মু প্লেটে করে খাবার নিয়ে এলো,আহ! গরম-গরম,ধূমায়িত বিরিয়ানি উপস্থিত,দেখেই মুখে জল চলে এলো,
বিরিয়ানিগুলো হাতে ধরে দেখলাম,কিছুটা চাউল থেকে গেছে,ভালোভাবে সিদ্ধ হয়নি,মুখে দিতেই পারছিনা,যতটা স্বাদ পাওয়ার কথা ছিলো ততোটা পেলাম না,খুব খারাপ লাগলো,অনেক দিন পর বিরিয়ানি খাচ্ছি তাও এবার এই রকম অবস্থা,মনটা খারাপ হয়ে গেলো,না পারছি কিছু বলতে,না পারছি খেতে,
আম্মুকে কিছু না বললেও সেদিন আম্মু আমার মুখের অবস্থা দেখে বুঝে ফেলেছেন যে বিরিয়ানিটা আমার মোটেও পছন্দ হয়নি,আম্মুও খুব কষ্ট পেলেন,হাজার হোক অনেক দিন পর ছেলের পছন্দের খাবার রান্না করেছে,
তাও যদি খেতে ভালো না হয়,তাহলে তো সবারই খারাপ লাগার কথা,আম্মু অনেক কষ্ট পেয়েছিলো সেদিন,আর বলছিলো - আগে যদি কিছু করতাম সব ঠিকঠাক হতো,কিন্তু এখন কেনো হয়না বুঝতে পারছিনা,সেদিন আম্মু অনেক কান্ন করেছিলো,সারাদিন মুখটা কালো করে রেখেছিলো,ছেলের পছন্দের খাবার রান্না করতে গিয়ে এমন হবে, আম্মু এইটা কল্পনাই করতে পারেননি,আম্মুর সেদিনের মুখটা আমার চোখে সামনে আজও ভেসে ওঠে,যখনই আম্মুর সেই চেহারা আমার চোখে সামনে ভেসে উঠে,তখন খুব খারাপ লাগে,কতইনা ভালো ছিলো আমার আম্মু,আম্মুর সেদিন আঁচলে মুখ লুকিয়ে কাদার দৃশ্য আজও আমাকে কষ্ট দেয়,
যাক সেদিন অনেক কষ্টে বিরিয়ানিগুলো খাওয়া শেষ করেছিলাম,ঘটনাটা আজ থেকে চার বছর আগের,আজ অনেক দিন পর ঘটনাটা মনে পরলো তাই লিখে ফেললাম,সেদিন আম্মুর রান্না করা খাবারে আমি দোষ খুজেছি বলে আম্মু অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন,মুখ লুকিয়ে কেদেছেন,কেউ যখন এভাবে রান্না করা জিনিসের দোষ খুজে তখন সবারই সেটা খারাপ লাগে,আর ব্যক্তির দোষ ধরার কারনে রাধুনিও অনেক কষ্ট পায়,যেটা শুধুমাত্র রাধুনিই বুঝতে পারে,
কিন্তু একজন মানুষ হয়ে অন্য একজন মানুষকে খাবারে সামান্য কমবেশী হওয়ার কারনে কেনো কষ্ট দিবে? যেই মানুষটা এতো কষ্ট করে তার জন্য রান্না করলো, এখন দিনশেষে তার রান্নার দোষ খুজে তাকেই কষ্ট দেওয়া হচ্ছে? মানুষকে এভাবে কষ্ট দেওয়া তো কখনোই ঠিক হতে পারেনা,
শুনতে খারাপ লাগলেও বলতে হচ্ছে যে হিন্দুধর্মে খাবারের দোষ ধরে অন্যকে কষ্ট দিতে নিষেধ করেনা,যার কারনে কেউ বিষয়টা বুঝতে চায়না,কোথাও দাওয়াতে গিয়েছে তো একটু কমবেশী হলে খাবারের বদনামী করার শেষ থাকেনা,যেটা খুবই খারাপ মানসিকতার পরিচয়,
বিপরীতে ইসলাম কি বলে? প্রশ্ন আসতে পারে,হ্যাঁ সেই কথাতেই আসছি,সহীহ বুখারীর একটা হাদীসে বর্নিত হয়েছে-
⚫সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৪০৯
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
محمد بن كثير أخبرنا سفيان عن الأعمش عن أبي حازم عن أبي هريرة قال ما عاب النبي صلى الله عليه وسلم طعاما قط إن اشتهاه“ أكله“ وإن كرهه“ تركه.
আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, নবী(ﷺ) কখনো কোন খাবারের দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করেননি। ভালো লাগলে তিনি খেতেন এবং খারাপ লাগলে রেখে দিতেন।
আমাদের সবার শিক্ষক নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)তার জীবনে কখনোই খাবারের দোষ ত্রুটি প্রকাশ করেননি,ভালো লাগলে খেয়েছেন,এবং ভালো না লাগলে রেখে দিয়েছেন,নবী মুহাম্মদ(ﷺ) এর জীবনীতে আমাদের জন্য শিক্ষার উপকরণ রয়েছে,তিনি যেমন কখনো খাবারের দোষ ত্রুটি খোজেননি,আবার দোষ ত্রুটি খোজার শিক্ষাও দেননি,যাতে করে কেউ কষ্ট না পায়,
কেউ যখন কষ্ট করে কিছু রান্না করার পর তার রান্না করা খাবারে দোষ খোজা হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই মানুষটি কষ্ট পাবে,তাই মানুষ যাতে এই কষ্ট না পায় সেজন্য ইসলাম মানুষকে উত্তম আদর্শ শিক্ষা দিয়েছে,খাবারের দোষ ধরতে নিষেধ করেছে,যাতে কেউই কষ্ট না পায়,আহা ইসলাম কতইনা সুন্দর, যেখানে অন্যান্য ধর্মের এই বিষয়ে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই,সেখানে ইসলাম এই সামান্য বিষয় নিয়েও অনেক সুন্দর সমাধান দিয়েছে,
আলহামদুলিল্লাহ ইসলাম কতইনা সুন্দর,
যদি নবীজির এই শিক্ষাটা আজ থেকে চার বছর আগে আমার মধ্যে থাকতো তাহলে হয়তো সেদিন আম্মুকে ওভাবে কষ্ট পেতে হতোনা,মুখ লুকিয়ে কাদঁতে হতোনা,হায় তখন কেনো আমার মধ্যে এই শিক্ষাটা ছিলোনা? কেনো আমি সেদিন এই শিক্ষার আলো পাইনি,যদি পেতাম তাহলে তো আম্মুকে ওভাবে কষ্ট দিতে পারতাম না!!
টিকা১-- আগে নিয়মিত একাদশীর উপবাস থাকতাম,এইটা হিন্দুদের মাসিক উপবাস,