বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
৪র্থ পর্ব
বিষয়: পবিত্র কোরআনের ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যতা সিরিজ
আলোচনা: "ইসলাম সকল বাতিলের উপর বিজয়ী দ্বীন"[সূরা আস-সাফ (الصّفّ), আয়াত: ৯]
\_________________________________/
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতাহু প্রিয় ভাই ও বোনেরা। আশা করি অবশ্যই সবাই মহান আল্লাহ্ সুবহানু ওয়াতা'আলার অশেষ রহমত ও দয়ায় ভালো এবং সুস্থ আছেন। আজকে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি ইনশাআললাহ। আর এটা হলো "পবিত্র কোরআন যে মহান আল্লাহর বাণী" তার সততার সমর্থনে আমরা এর ভেতরের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো একত্রিত করে সত্যান্বেষী পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করছি। কারণ অনেক মুসলিমরাই হয়তো এসব জানেন না। তাই আমাদের উচিত নিজে সত্যকে প্রচার করি এবং অন্যকেও জানানোর সুযোগ দিয়ে তাদেরকে উৎসাহিত করি ইনশাআললাহ। যাই হোক আর কথা বৃদ্ধি করব না। মূল আলোচনায় আসা যাক!
মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ সুবহানু ওয়াতা'আলা পবিত্র কোরআন মাজীদের ৬১ নং সূরা আস-সাফ (الصّفّ), আয়াত: ৯
هُوَ ٱلَّذِىٓ أَرْسَلَ رَسُولَهُۥ بِٱلْهُدَىٰ وَدِينِ ٱلْحَقِّ لِيُظْهِرَهُۥ عَلَى ٱلدِّينِ كُلِّهِۦ وَلَوْ كَرِهَ ٱلْمُشْرِكُونَ
অর্থঃ তিনিই তাঁর রাসূলকে প্রেরণ করেছেন হিদায়াত এবং সত্য দীনসহ সকল দীনের উপর ওকে শ্রেষ্ঠত্ব দানের জন্য, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে" [অনুবাদক: মুজিবুর রহমান]
"It is He who sent His Messenger with guidance and the religion of truth to manifest it over all religion, although those who associate others with Allah dislike it." [Translator:Sahih International]
(নোট: এই একই কথা বলা হয়েছে পবিত্র কোরআনের ৯ নং সূরা আত তাওবার ৩৩ ও ৪৮ নং সূরা ফাতহের ২৮ নং আয়াতে। এই সম্পর্কে বাইবেলের মধ্যেও ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে।)
আর মহান আল্লাহ্ সুবহানু ওয়াতা'আলার এই কথাও বাস্তবে পরিণত হয়েছে, আলহামদুলিললাহ। আর এই পৃথিবীতে একমাত্র ইসলাম-ই হলো বাস্তবতা মূলক ধর্ম এবং মানবজীবনের সকল দিক নির্দেশনা এতে রয়েছে। এতে আরো রয়েছে মানবজাতির জন্য সকল প্রকার সুস্পষ্ট হারাম-হালাল, তাওহিদ তথা একত্ববাদ এবং সকল মৌলিক বিষয়ে যথার্থ দলিল প্রমাণ সহ মহান আল্লাহর নিকট থেকে আগত পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। এতে অন্যান্য বিকৃত/বাতিল ধর্মের মতো কোন অস্পষ্ট বা বক্রতা নেই। অন্যান্য ধর্মে যেমন ঈশ্বরের একত্ববাদ সহ বহু ঈশ্বরবাদের সংমিশ্রণ রয়েছে, মূর্তি পূজা করা সহ অনেক অসংগতি রয়েছে, যা ইসলামে নেই। এছাড়া একমাত্র ইসলাম ই হলো মানবজাতির জন্য পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা এবং এতে রয়েছে মানবতার পরিপূর্ণ সমাধান, যা কিনা অন্যান্য বাতিল ধর্মে খুঁজেই পাওয়া দুষ্কর। আর ইসলাম এসকল দিক থেকে যথার্থ দলিল প্রমাণের ভিত্তিতে সকলের উপরে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করে বিজয়ীর আসনে রয়েছে আলহামদুলিললাহ। আর ইসলামের শ্রেষ্ঠত্বের সবচেয়ে বড় দিক হলো এই আধুনিক যুগেও ইসলামের নীতিমালা গুলো আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে অটোমেটিক্যালি তাল মিলিয়ে চলছে যা কিনা অন্যান্য ধর্মগুলো এভাবে চলতে ব্যর্থ হয়েছে। আর এসব কারণেই হয়ত বাতিল ধর্মের অনুসারীরা ইসলাম কে অপছন্দ করে। আল্লাহ্ সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
আর বাইবেলের মধ্যেও এ বিষয়ে পূর্ব থেকেই ভবিষ্যদ্বাণী করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যেখানে যীশু [হযরত ঈসা আঃ] ভবিষ্যদ্বাণী করে জানিয়ে দিয়েছিলেন:-
43. এই জন্য আমি তোমাদিগকে কহিতেছি, তোমাদের [ইহুদিদের] নিকট হইতে ঈশ্বরের রাজ্য কাড়িয়া লওয়া যাইবে, এবং এমন এক জাতিকে দেওয়া হইবে, যে জাতি তাহার ফল দিবে।
44. আর এই প্রস্তরের উপরে যে পড়িবে, সে ভগ্ন হইবে; কিন্তু এই প্রস্তর যাহার উপরে পড়িবে, তাহাকে চূরমার করিয়া ফেলিবে।"
মথি 21:42-44 ROVU; অনলাইন সোর্স থেকে পড়ুন:
https://bible.com/bible/1791/mat.21.42-44.ROVU
[এছাড়া যাবুর তথা গীতসংহিতা১১৮:২২-২৩; এবং যিরমিয় ৩১:৩৬ দ্রষ্টব্য।]
নোট: এখানে যীশু বলে দিয়েছেন ইস্রায়েল জাতির কাছ থেকে খোদার রাজ্য তথা নবুয়তী ধারা কেড়ে নেওয়া হবে এবং তা অন্য জাতির উপরে অর্পিত হবে। আর সেটা হলো ইসমাইল জাতি তথা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর উম্মতেরা [মুসলিমগণ]।
এতে সন্দেহের কোনই অবকাশ নেই যে,উপরোল্লিখিত ভবিষ্যদ্বাণীতে অগ্রাহ্য করা "প্রস্তর/পাথরখানা"-ছিলেন আব্রাহাম [হযরত ইব্রাহিম আঃ] এর জ্যেষ্ঠ পুত্র হযরত ইসমাইল আঃ।
যাই হোক এই অনাদৃত ও অগ্রাহ্য করা "পাথরখানার"-বংশেই আবির্ভাব হলেন প্রতিশ্রুতি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)
নবুয়তের দায়িত্ব আল্লাহ্ বনি ইসরাইলদের উপরে ন্যস্ত করেছিলেন কিন্তু ইস্রায়েল বংশধরগণ তার মর্যাদা বুঝল না। তাই কাজেই সূক্ষ্মদর্শী ও ন্যায় বিচারক সর্বশক্তিমান ঈশ্বর মহান আল্লাহ্ সুবহানু ওয়াতা'আলা বনি ইসরাইলের নিকট থেকে তাঁর রাজ্য (নবুয়তের ধারা) কেড়ে নিলেন এবং বনি-ইসমাইলের উপরে ন্যস্ত করলেন। আর বনি-ইসমাইল ই হলো আরব জাতি বা তা থেকে উৎপন্ন ফল বিশেষ। কাজেই ইসমাইলী বংশধারায় নবুয়তের সূচনা ঘটার সাথে সাথে ইসরাইলী বংশধারায় নবুয়তের সমাপ্তি ঘটে।"
আর এভাবেই যীশু তথা ঈসা আঃ এর ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে পূর্ণ হলো। অগ্রাহ্য করা"পাথরখানা"- অর্থাৎ ইসমাইল আঃ এর বংশেই সর্বশক্তিমান ঈশ্বর মহান আল্লাহ্ তা'আলা রাসূল (ﷺ) কে "ভিত্তি প্রস্তর "-স্বরুপ ই কিয়ামত পর্যন্ত বিশ্বজাতির নবী করে পাঠালেন। আর তিনি হলেন সকল নবীদের প্রধান। অগ্রাহ্য করা "পাথর" ইসমাইল আঃ এর বংশধর মুহাম্মদ সাঃ ই মহান স্রস্টার রাজ্য (ইমারত) এর কোণের প্রধান ভিত্তি প্রস্তর হয়ে কিয়ামত পর্যন্ত বিরাজ করছেন।
১)"যে সেই পাথরের উপর পড়বে,সে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে"-এই কথার অর্থ হলো:-"মক্কায় কাফের, মুশরিক, পৌত্তলিক এবং আরব উপদ্বীপের ইয়াহুদি-খ্রিস্টানগণ সকলেই এই "পাথরের উপর পড়ে"-সমূলে "ভেঙ্গে টুকরো টুকরো "হয়ে গেল।"
২)"সেই পাথর যার উপর পড়বে ,তাকে চুরমার করে ফেলবে"- সেই "পাথরের" [ইসমাইল আঃ এর] বংশধর রাসূল (ﷺ) এর সাহাবাগণ রোম, পারস্য সহ প্রভৃতি দেশের সম্রাটদিগকে "চুরমার করে ফেলল।" তাদের প্রশংসায় মহান আল্লাহ্ যেমন বলেছেন সূরা আস-সাফ (الصّفّ), আয়াত: ৯ ; যা উপরেও উল্লেখ করা হয়েছে
هُوَ ٱلَّذِىٓ أَرْسَلَ رَسُولَهُۥ بِٱلْهُدَىٰ وَدِينِ ٱلْحَقِّ لِيُظْهِرَهُۥ عَلَى ٱلدِّينِ كُلِّهِۦ وَلَوْ كَرِهَ ٱلْمُشْرِكُونَ
অর্থঃ তিনিই তাঁর রাসূলকে প্রেরণ করেছেন হিদায়াত এবং সত্য দীনসহ সকল দীনের উপর ওকে শ্রেষ্ঠত্ব দানের জন্য, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে" [অনুবাদক: মুজিবুর রহমান]
২)মহান আল্লাহ্ সুবহানু ওয়াতা'আলা আরো এরশাদ করেছেন সূরা আল ফাত্হ (الفتح), আয়াত: ২৯
مُّحَمَّدٌ رَّسُولُ ٱللَّهِ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥٓ أَشِدَّآءُ عَلَى ٱلْكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيْنَهُمْ تَرَىٰهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِّنَ ٱللَّهِ وَرِضْوَٰنًا سِيمَاهُمْ فِى وُجُوهِهِم مِّنْ أَثَرِ ٱلسُّجُودِ ذَٰلِكَ مَثَلُهُمْ فِى ٱلتَّوْرَىٰةِ وَمَثَلُهُمْ فِى ٱلْإِنجِيلِ كَزَرْعٍ أَخْرَجَ شَطْـَٔهُۥ فَـَٔازَرَهُۥ فَٱسْتَغْلَظَ فَٱسْتَوَىٰ عَلَىٰ سُوقِهِۦ يُعْجِبُ ٱلزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ ٱلْكُفَّارَ وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّٰلِحَٰتِ مِنْهُم مَّغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًۢا
অর্থঃ মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল এবং তার সাথে যারা আছে তারা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর; পরস্পরের প্রতি সদয়, তুমি তাদেরকে রুকূকারী, সিজদাকারী অবস্থায় দেখতে পাবে। তারা আল্লাহর করুণা ও সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করছে। তাদের আলামত হচ্ছে, তাদের চেহারায় সিজদার চিহ্ন থাকে। এটাই তাওরাতে তাদের দৃষ্টান্ত। আর ইনজীলে তাদের দৃষ্টান্ত হলো একটি চারাগাছের মত, যে তার কঁচিপাতা উদগত করেছে ও শক্ত করেছে, অতঃপর তা পুষ্ট হয়েছে ও স্বীয় কান্ডের উপর মজবুতভাবে দাঁড়িয়েছে, যা চাষীকে আনন্দ দেয়। যাতে তিনি তাদের দ্বারা কাফিরদেরকে ক্রোধান্বিত করতে পারেন। তাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের জন্য ক্ষমা ও মহাপ্রতিদানের ওয়াদা করেছেন।" [অনুবাদক: আল-বায়ান]
নোট:
i) সম্পূর্ণ পবিত্র কোরআনের অর্থ, বাংলা, ইংরেজি, আরবি সহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ, তাফসীর লিংক (আবু বকর যাকারিয়া হাফিঃ) পড়ুন।
Published by: King Fahd Complex, Madina, Saudi Arabia
https://quranenc.com/en/browse/bengali_zakaria/48/1
ii) বাংলাদেশ হাদিস অ্যাকাডেমির "কোরআনের তাফসীর লিংক)
https://hadithbd.com/quran/