বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
৫ম পর্ব
বিষয়: পবিত্র কোরআনের ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যতা সিরিজ।
আলোচনা: "মুসলিমদের বিজয়ীর ঘোষণা ও আল্লাহর প্রতিশ্রুতি রক্ষা" [সূরা আল ফাত্হ (الفتح), আয়াত: ১৮-২০]
\_________________________/
সর্বশক্তিমান স্রস্টা মহান আল্লাহ সুবহানু ওয়াতা আলা পবিত্র কোরআন মাজীদের ৪৮ নং সূরা আল ফাত্হ (الفتح), আয়াত: ১৮-২০ এ এরশাদ করেছেন:-
لَّقَدْ رَضِىَ ٱللَّهُ عَنِ ٱلْمُؤْمِنِينَ إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ ٱلشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِى قُلُوبِهِمْ فَأَنزَلَ ٱلسَّكِينَةَ عَلَيْهِمْ وَأَثَٰبَهُمْ فَتْحًا قَرِيبًاوَمَغَانِمَ كَثِيرَةً يَأْخُذُونَهَا وَكَانَ ٱللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمًاوَعَدَكُمُ ٱللَّهُ مَغَانِمَ كَثِيرَةً تَأْخُذُونَهَا فَعَجَّلَ لَكُمْ هَٰذِهِۦ وَكَفَّ أَيْدِىَ ٱلنَّاسِ عَنكُما وَلِتَكُونَ ءَايَةً لِّلْمُؤْمِنِينَ وَيَهْدِيَكُمْ صِرَٰطًا مُّسْتَقِيمًا
অর্থঃ মু’মিনরা যখন বৃক্ষতলে তোমার নিকট বাইআত গ্রহণ করল তখন আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন, তাদের অন্তরে যা ছিল তা তিনি অবগত ছিলেন; তাদেরকে তিনি দান করলেন প্রশান্তি এবং তাদেরকে পুরস্কার দিলেন আসন্ন বিজয়। এবং বিপুল পরিমাণ যুদ্ধ লদ্ধ সম্পদ যা তারা হস্তগত করবে; আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আল্লাহ তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যুদ্ধে লভ্য বিপুল সম্পদের যার অধিকারী হবে তোমরা। তিনি ইহা তোমাদের জন্য ত্বরান্বিত করেছিলেন এবং তিনি তোমাদের হতে মানুষের হস্ত নিবারিত করেছেন যেন তোমরা কৃতজ্ঞ হও এবং এটা মু’মিনদের জন্য এক নিদর্শন এবং আল্লাহ তোমাদেরকে পরিচালিত করেন সরল পথে।" [অনুবাদক: মুজিবুর রহমান]
"Certainly was Allah pleased with the believers when they pledged allegiance to you, [O Muhammad], under the tree, and He knew what was in their hearts, so He sent down tranquillity upon them and rewarded them with an imminent conquest. And much war booty which they will take. And ever is Allah Exalted in Might and Wise. Allah has promised you much booty that you will take [in the future] and has hastened for you this [victory] and withheld the hands of people from you - that it may be a sign for the believers and [that] He may guide you to a straight path." [Translator: Sahih International]
উক্ত আয়াতের সম্পূর্ণ তাফসীর পড়তে ক্লিক করুন:
https://hadithbd.com/quran/tafsir/?pageNum_tafsirquran=1&totalRows_tafsirquran=29&sura=48
এখানে হুদাইবিয়া নামক স্থানে সাহাবায়ে কিরামের কাছে যে বাই’আত নেওয়া হয়েছিল এখানে তা উল্লেখ করা হচ্ছে। বাইয়াতে রিযওয়ানে যাঁরা অংশগ্রহণ করেছিলেন, এখানে তাঁদের প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্ট হওয়ার এবং তাঁদের পাকা ও খাঁটি মু’মিন হওয়ার সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা হুদাইবিয়ায় এক গাছের নীচে শপথ গ্রহণ করেছিলেন যে, তাঁরা মক্কার কুরাইশদের সাথে লড়বেন এবং পলায়নের পথ অবলম্বন করবেন না। অর্থাৎ, তাঁদের অন্তরে যে সত্যতা ও নির্মলতার আবেগ ছিল, সে ব্যাপারেও আল্লাহ অবগত আছেন। তাঁরা ছিলেন নিরস্ত্র।
যুদ্ধের নিয়তে যেহেতু তাঁরা যাননি, তাই সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণে যুদ্ধাস্ত্র ছিল না। তা সত্ত্বেও যখন নবী করীম (ﷺ) উসমান (রাঃ)-এর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য জিহাদের বাইয়াত গ্রহণ করেন, তখন সামান্য পরিমাণও কোন দ্বিধা না করে সকলেই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলেন। আর এখানে মহান আল্লাহ্ তখন তাঁদের অন্তর থেকে মৃত্যুর আশঙ্কা দূর করে দিলেন এবং তার পরিবর্তে ধৈর্য ও প্রশান্তি অবতীর্ণ করলেন এবং সেই সাথে তাঁদেরকে যুদ্ধে বিজয় দানের সুসংবাদ প্রদান করলেন। যার ফলে তাঁদের মধ্যে যুদ্ধ করার প্রবল উৎসাহ সৃষ্টি হল। এখানে "আসন্ন বিজয়" বলতে খায়বারের বিজয়কে বোঝানো হয়েছে। আর এ বিজয় হলো ঐ বিজয় যা হুদাইবিয়া প্রান্তরে করা হয়েছিল।
এই যুদ্ধে কেবলমাত্র হুদাইবিয়ায় অংশগ্রহণকারী সাহাবীগণ অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং তাঁরা মহান আল্লাহর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী খায়বারের যুদ্ধে বিজয় লাভ করেন। আর এই যুদ্ধে মুসলিমগণ বহু যুদ্ধ লভ্য সম্পদ লাভ করেছিলেন। অতঃপর অল্পদিনের মধ্যে মক্কাও বিজিত হয়, এরপর অন্যান্য দুর্গ ও অঞ্চল বিজিত হতে থাকে।(আর রাহিকুল মাকতুম "খায়বারের যুদ্ধ দ্রষ্টব্য ")
এবং মুসলমানরা ঐ মর্যাদা, সাহায্য, বিজয়, সফলতা এবং উচ্চাসন লাভ করেন যা দেখে সারা বিশ্ব বিস্ময়াবিভূত, স্তম্ভিত এবং হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে। এ জন্যেই আল্লাহ্ পাক বলেন:-
وَمَغَانِمَ كَثِيرَةً يَأْخُذُونَهَا وَكَانَ ٱللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمًا
"আল্লাহ তাদেরকে বিপুল পরিমাণ যুদ্ধলব্ধ সম্পদ দান করবেন, যা তারা হস্তগত করবে। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।"
আর মহান আল্লাহ্ সুবহানু ওয়াতা'আলাও তাঁর এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন। কেননা মুসলিমরা যুদ্ধে বিজিত হবার পরে বহু যুদ্ধ লভ্য সম্পদ লাভ করেছিলেন যা ছিল অতুলনীয়। মুজাহিদ রহঃ বলেছেন:-"আজ পর্যন্ত মুসলিমগণ যত যুদ্ধ লভ্য সম্পদ লাভ করেছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত যত পাবে সব এতে শামিল করা হয়েছে।" বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইবনু কাসীর রহঃ বলেছেন:-"فَعَجَّلَ لَكُمْ هَذِهِ" অর্থাৎ "এটা তিনি তোমাদের জন্য তরান্বিত করেছেন’' অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা খায়বার বিজয় করে দিয়ে বিপুল পরিমাণ যুদ্ধ লভ্য সম্পদ দান করলেন।
"আর তিনি মানুষের হাত তোমাদের (উপর প্রসারিত করা) থেকে বিরত রেখেছেন’'
অর্থাৎ তোমাদেরকে শত্রুদের অনিষ্ট থেকে হিফাযত করেছেন। যে অনিষ্ট করার জন্য তারা মনে মনে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার পরিকল্পনা করেছিল। এরা হল উআইনা বিন হিচন আল ফাযারী, আউফ বিন মালেক ও তাদের সাথে আরও যারা খায়বারের ইয়াহূদীদের সাহায্য করার জন্য এসেছিল। কিন্তু আল্লাহ তাদের অন্তরে ভয় সৃষ্টি করে দেন ফলে তারা তাদেরকে সহযোগিতা করেনি।
وَلِتَكُوْن" اٰيَةً لِّلْمُؤْمِنِيْنَ
'‘যাতে মুমিনদের জন্য এটা নিদর্শন হয়ে থাকে’'
অর্থাৎ খায়বারের যুদ্ধ লভ্য বিপুল পরিমাণ সম্পদ মুসলিমদের দান করলেন নিদর্শন স্বরূপ যে,"আল্লাহ তা‘আলা যে সুসংবাদ দেন তা অবশ্যই সত্য, তিনি যে প্রতিশ্রুতি দেন তা সত্য এবং প্রতিদান দেবেন তাও সত্য।"(তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ ৪৮:২০ আয়াত দ্রষ্টব্য)।
আর এভাবেই পবিত্র কোরআনের ভবিষ্যদ্বাণী সব-ই যথার্থ ভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে।
নোট: এখানে "আসন্ন বিজয়" বলতে খায়বারের বিজয় লাভ করেছেন মুসলিমগণ, যার প্রতিশ্রুতি আল্লাহ্ দিয়েছিলেন। প্রথম "বিপুল পরিমাণ যুদ্ধে লভ্য সম্পদ" হিসেবে খায়বার, ও (পারস্য উপসাগরের তীরবর্তী) হিজর অঞ্চলের যুদ্ধ লভ্য সম্পদ লাভ করেছিলেন তাঁরা। দ্বিতীয় পর্যায়ে,"পরবর্তীতে অর্থাৎ পুনরুথ্থান দিবসে তাঁরা মহান আল্লাহর অগণিত সম্পদ লাভ করবেন। পরবর্তী প্রতিশ্রুতিতে আল্লাহ্ যে,"বিপুল পরিমাণ যুদ্ধ লভ্য সম্পদের" প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, মুসলিমগণ আরবের হাওয়াযিন গোত্র এবং পরে পারস্য ও রোমের বিজয়ের মাধ্যমে তা লাভ করেন।
:
i) সম্পূর্ণ পবিত্র কোরআনের অর্থ, বাংলা, ইংরেজি, আরবি সহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ, তাফসীর লিংক (আবু বকর যাকারিয়া হাফিঃ) পড়ুন।
Published by: King Fahd Complex, Madina, Saudi Arabia
https://quranenc.com/en/browse/bengali_zakaria/48/1
ii) বাংলাদেশ হাদিস অ্যাকাডেমির "কোরআনের তাফসীর লিংক)
https://hadithbd.com/quran/