অভিযোগঃ
হাদিসে আজওয়া খেঁজুর খেয়ে বিষ পান করলে বিষ ক্রিয়া হবে না এমন বক্তব্য রয়েছে। ( আমি এমন কোনো হাদিস পাই নি। ) তাই বিশ্বাসী মুসলিমদের আজওয়া খেঁজুর খেয়ে হাদিসের বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণ করা উচিত। হাদিস: সাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি যে ব্যক্তি সকালে আজওয়া খুরমা খেয়ে নিবে, তাকে সেদিন কোনো বিষ বা যাদু ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারী, চিকিৎসা অধ্যায়, ৫৩৬৪)। প্রতিদিন খেতে হবে এমন হাদিসও রয়েছে। ইসলামবিরোধী ব্যাখ্যা: যেহেতু সকালে আজওয়া খেঁজুর খেলে বিষ কাজ করে না, মুমিনদের উচিত আজওয়া খেঁজুর খেয়ে বিষ পান করে দেখিয়ে হাদিসের সত্যতা প্রমাণ করা।
জবাবঃ
প্রথমত, হাদিসে কোথাও বিষপান করলে বিষ ক্রিয়া হবে না এমন বক্তব্য নেই। আমরা এখানে কিছু প্রশ্ন রাখতে পারি যে,
- আজওয়া কী? হাদিসটি কাদের জন্য প্রযোজ্য? এবং তৎকালীন মুসলিমরা হাদিসটি থেকে কী বুঝেছে?
- বিষ কী? হাদিসে বর্ণিত বিষ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
- বিষ খেয়েই কী হাদিসটিকে সত্য প্রমাণ করতে হবে?
- প্রকৃতপক্ষে আজওয়া কী বিষের কার্যকারিতা নষ্ট করে?
উক্ত চারটি প্রশ্নের উত্তর পেলেই আমরা হাদিসটি সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে পারব। হাদিসটিকে কিছু মুসলিম দুর্বল বা জাল বানানোর চেষ্টা করেছে। এটা নিন্দনীয়। হাদিসটি বুখারী শরিফের এবং হাদিসটি সহীহ। তবে হাদিস শাস্ত্রের একটি মূলনীতি রয়েছে যে, হাদিস বর্ণনার চেইন যদি শক্তিশালীও হয় কিন্তু হাদিসের বক্তব্য যদি বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় তবে হাদিসটি বাতিল বলে গণ্য হবে। সুতরাং উপরিক্তো হাদিস যদি সহীহও হত এবং তা যদি বাস্তবতার সাথে সাংঘর্ষিক হত, তবে তা বাতিল বলে গণ্য হত।
Al-Sakhawi Fath al-Mugeet এ কথাটিই বলেছেন,
Every hadith you find against intellect or (find it) contradicting (well-established) principles, rest assured that it is fabricated. Therefore, you do not need to consider it i.e. do not take into account its narrators and do not look into their criticism.
বিষ খেলেও কোনো ক্ষতি হবে না এটা বাস্তবতা বিরোধী বক্তব্য ।
তবুও হাদিসের ইমামরা কেন হাদিসটিকে লিপিবদ্ধ করল? কারণ আমাদের ইসলাম বিদ্বেষী ভাইরা হাদিসের যে মর্মার্থ করছে তা ভুল। এবং তৎকালীন আরবদের কেউই হাদিস পড়ে এটা বুঝেন নি যে, বিষ (External Toxin) খেলেও কোনো বিষ ক্রিয়া হবে না। আর আজওয়া খেঁজুরের Detoxification ক্ষমতা সম্পর্কে কেবল রসূল ﷺ বলেন নি বরং আজওয়া খেঁজুর হচ্ছে আরবদের ট্যাডিশনাল হার্বাল চিকিৎসা।
৬০০০ হাজার বছর ধরে মধ্যএশিয়াতে খেঁজুরের চাষ হচ্ছে। তৎকালীন আরবরা আজওয়া খেঁজুরের গুণাগুণ জানত, কিন্তু কেউই হাদিসের এই মর্মার্থ করে নি যে, আজওয়া খেঁজুর খেয়ে বিষ পান করলেও বিষ কাজ করবে না। তারা জানত এটা Internal Toxin যা শরীরে উৎপত্তি হয়ে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে তার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক ভূমিকা পালন করে। এবং রসূল ﷺ সেটাই বলেছেন। এটা নিয়ে পরবর্তীতে বিস্তারিত আলোচনায় আসছি। আরবদের তৎকালীন কোনো কাফেররা তো এটা বলে নি যে, ওহে, অমুক। শুনলাম আব্দুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ নাকি বলেছে প্রতিদিন সাতটি আজওয়া খেলে, বিষ খেলেও কোনো ক্ষতি হবে না? তো তুমি কী আজ আজওয়া খেয়েছ? যদি খেয়ে থাক, তবে এই নাও বিষ এবং বিষ খেয়ে প্রমাণ কর যে, আব্দুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ সত্য বলেছে? এমন কোনো ঘটনা কী ঘটেছে? ঘটে নি। ইসলাম বিদ্বেষী ভাইরা হাদিস থেকে যে নিগূঢ় তথ্য উৎঘাটন করেছে তা তৎকালীন আরবরা কেন কাজে লাগায় নি?
এটা করলেই তো মুহাম্মদ (ﷺ) কে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করা হয়ে যেত! কিন্তু তারা এমন কিছু বলেন নি কারণ তারা জানত হাদিসের মর্মার্থ এমন নয়। এমনকি রসূল ﷺ কী কখনো বিষপান রোগীকে বলেছেন যে, তুমি আজওয়া খাও, বিষক্রিয়া নষ্ট হয়ে যাবে। বা আরব সমাজে কেউ কি হাদিসের রেফারেন্স দিয়ে এটা বলেছেন যে, আজওয়া খেয়ে বিষপান করলেও বিষ কাজ করবে না? ইসলাম বিদ্বেষী ভাইদের কাছে প্রশ্নের উত্তর চাইছি।
সুতরাং, বলাবাহুল্য যে, ইসলাম বিদ্বেষীরা হাদিসটির যে মর্মার্থ করেছে তা ভুল। এখন আমাদের জানতে হবে যে, হাদিসটির সঠিক মর্মার্থ কী?
হাসান রাঃ হতে বর্ণিত যে,
রাসূল ﷺ অল্প কথা বলতেন, কিন্তু তা হত ব্যাপক অর্থ বহুল হত। (তিরমিযী)
আজওয়া খেঁজুরের এই হাদিসটিও ব্যাপক অর্থপূর্ণ এবং এর মধ্যে লুকিয়ে আছে মেডিক্যাল সায়েন্সের কিছু নিগূঢ় তথ্য যা বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যাপক উন্নতি সাধন করতে পারে। যেহেতু রসূল (ﷺ) এর অল্প কথায় অধিক তাৎপর্য থাকত, তাই এটা স্বাভাবিক যে, সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ ভালো করে গবেষণা না করলে হাদিসটির রহস্য উৎঘাটন করতে পারবে না। এবং ভুল ব্যাখ্যা করবে। আজওয়া খেঁজুর নিয়ে প্রচুর রিসার্চ হয়েছে এবং আমি বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত রিসার্চ পেপারের তথ্য নিয়েই আলোচনা করব।
1. আজওয়া খেঁজুর কী এবং কাদের জন্য প্রযোজ্য? তৎকালীন আরবরা হাদিসটি থেকে কী বুঝেছে?
আজওয়া অন্যান্য সাধারণ খেঁজুরের মত নয়, এটা মদিনার সবচে' উন্নতমানের খেঁজুর এবং অনেক বেশি মিষ্টি। খেঁজুরে রয়েছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি, সিলিনিয়াম, কপার, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং খেঁজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কার্বহাইড্রেট যা আমাদের তাৎক্ষণিক শক্তি জোগায়। পবিত্র কুরআনেও একই কথা বলা হয়েছে: সূরা মারইয়াম:(২৫-২৬) - আর তুমি নিজের দিকে খেজুর গাছের কান্ডে নাড়া দাও, তা থেকে তোমার উপর সুপক্ক খেজুর পতিত হবে। যখন আহার কর, পান কর এবং চক্ষু শীতল কর।
এবার, আমরা আজওয়া সম্পর্কিত বাকি হাদিসগুলো দেখি:
অন্যান্য হাদিসে প্রতিদিন এবং সকালে খেঁজুর দিয়ে নাস্তা করার কথা কথা বলা হয়েছে। এবং তা আপনার শরীরে টক্সিনে বিরুদ্ধে কাজ করার শক্তি জোগাবে এবং রসূল ﷺ এর বক্তব্য অনুযায়ী এটা সকালে খেলে সবচে' ভালো কাজ করে। এখানে Injected বা বাইরের বিষ বোঝানো হয় নি, বরং শরীরে যে টক্সিন তৈরী করে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে তার কথা বলা হয়েছে। নিচের হাদিসগুলো দেখলে বিষয়টি বুঝতে পারবেন:
আয়েশা( রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেন, আজওয়া খেঁজুর রোগ নিরাময়কারী এবং প্রাতঃকালীন প্রতিষেধক। (সহীহ মুসলিম) উপরিক্তো হাদিস দ্বারা বিষ ক্ষতি করতে পারবে না কথাটি বোঝানো গিয়ে রসূল (ﷺ) খেঁজুরের রোগ নিরাময়কারী গুণাগুণ বুঝিয়েছেন। এবং আপনি অন্যান্য হাদিস দেখলে বোঝা যায় যে, আজওয়া খেঁজুরের সর্বোচ্চ বেনিফিট পাওয়া যায় যদি এটা রোযা অবস্থায় খালি পেটে সকালে খাওয়া যায়। এবং সাহাবীরা এটাই বুঝেছেন, যেমন Bacterial toxins মারাত্নক হার্টের অসুখ তৈরী করতে পারে। একদিন সাহাবী সাদ (রাঃ) এরও এমন হার্টের সমস্যা হয় এবং রসূল (ﷺ) তাকে আজওয়া খেঁজুর খাওয়ার পরামর্শ দেন। . (আবু দাউদ ৩৮৩৫) ইসহাক ইবন ইসমাইল (রহঃ) - - -সা'আদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একবার আমি পীড়িত হলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে দেখার জন্য আসেন। এ সময় তিনি তাঁর হাত আমার বুকের উপর রাখলে আমি তাঁর শৈত্যতা আমার হৃদয়ে অনুভব করি । এরপর তিনি বলেনঃ তুমি হার্টের রুগী । কাজেই তুমি ছাকীফ গোত্রের অধিবাসী হারিছা ইবন কালদার নিকট যাও। কেননা, সে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক । আর সে যেন মদীনার আজওয়া খেজুরের সাতটা খেজুর নিয়ে, তা বীচিসহ চূর্ণ করে তোমার জন্য তা দিয়ে সাতটি বড়ি তৈরী করে দেয়। এতে বোঝা যায়, বিষ বলতে রাসূল (ﷺ) Internal toxin বুঝিয়েছেন। কারণ আজওয়া খেঁজুর যদি External Toxin এর জন্য হত, তাহলে রাসূল (ﷺ) হার্টের রোগের জন্য কেন আজওয়া নেওয়ার কথা বললেন? আজওয়া খেঁজুর Internal toxin উপর ইফেক্টিভ বলেই তো তিনি হার্টের অসুখের জন্য আজওয়া নিতে বললেন, তাই নয় কি? ব্যাকটেরিয়াল টক্সিন থেকে হার্ট ডিজিজ সৃষ্টি হতে পারে, কোলেস্টরল নিজেই একপ্রকার টক্সিন এবং এটাও অনেক হার্টের রোগ সৃষ্টি করে এবং তার চিকিৎসা হিসেবে আজওয়া খেঁজুর দেওয়া যেতে পারে। উক্ত হাদিস থেকে কী এটা বোঝা যাচ্ছে না যে, রাসূল (ﷺ) বিষ বলতে External toxin নয় বরং Internal Toxin কে বুঝিয়েছেন এবং বিভিন্ন রিসার্চে তা প্রমাণও হয়েছে যে, খেঁজুরে Detoxification ক্ষমতা রয়েছে। রসূল ﷺ হাদিসে Internal Toxin এর কথা বুঝিয়েছেন তার জন্য অারো অনেক প্রমাণ দেওয়া যায়। যেমন একটি Toxic Liver কে Detoxification করার জন্য আজওয়া খেঁজুর ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ আজওয়ার Detoxification ক্ষমতা রয়েছে তা প্রমাণিত। এবং লিভার ডিজিজের জন্য আজওয়া বেশ উপকারী। . আলী (রাঃ) বলেন, “যে প্রতিদিন সাতটি খেঁজুর খায়, এটা তার পেটের রোগ গুলোকে মেরে ফেলে। (Kanzul Ummal, Hadith 28472) .
তাহলে এটা স্পষ্ট যে, হাদিসে বাইরের টক্সিন বা External টক্সিনের কথা হচ্ছে না। বরং দেহের অভ্যন্তরের টক্সিন যা আমাদের দেহে রোগ সৃষ্টি করে, সেগুলোর প্রতি প্রতিরক্ষামূলক ভূমিকা পালন করে।
2. বিষ কী? হাদিসে বর্ণিত বিষ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
ইসলাম বিদ্বেষীদের সাথে হাদিসটি নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে তারা বারবারই External Toxin এর কথা বলেছে। যা একটি ভুল ব্যাখ্যা। টক্সিন কী যদি আমরা সঠিক ভাবে না বুঝি তাহলে হাদিসটির মর্মার্থ আমরা উদ্ধার করতে পারব না। তারা টক্সিন বলতে বোতলে পাওয়া যায় বিষাক্ত তরলকেই মনে করে। কিন্তু আমাদের মানবদেহ যে একটা আশ্চর্যের জায়গা তারা মনে হয় তা জানে না। এটা নিজেই বিষাক্ত হয়, আবার নিজেই প্রতিরোধ করে। আমাদের শরীর অবিরত টক্সিন উৎপন্ন করে। আমাদের শরীরে অনবরত শক্তি বার্ন করে টিস্যু পুনর্নিমাণ, মৃত কোষের প্রতিস্থাপন করার জন্য এবং এটা করতে গিয়ে শরীর ভালো পরিমাণে Internal Toxin তৈরী করে। যেহেতু আমাদের শরীর অনবরত টক্সিন তৈরী করে, তাই এটা তা চিহ্নিত করার জন্য কোনো বিরতি পায় না। এবং এটা তখনই মারাত্নক আকার ধারণ করে যখন এগুলো স্তূপীত হয় এবং আশেপাশের সেল এবং অঙ্গকে ডেমেজ করে। তাই আমাদের বডির Detoxification এর প্রয়োজন হয়। ইন্টারনেট সার্চ দিয়ে এমন অনেক খাবার পাবেন যেগুলো Detoxification এ সাহায্য করে। আর আমাদের নবী (ﷺ) এর প্রস্তাব হচ্ছে সকালে সাতটা আজওয়া খেঁজুর খাও, এটা তোমার শরীরকে detoxify করে বিষ থেকে রক্ষা করবে। আলহামদুলিল্লাহ। রিসার্চ এটাও মেনেই নিয়েছে। কিন্তু ইসলাম বিদ্বেষীরা বার বার External toxin এর কথা বলে হাদিসের মূল ব্যাখ্যাকে অন্যদিকে ধাবিত করার চেষ্টা করছে। হাদিসে কোথাও বলা হয় নি যে, বিষ খেলে বিষ ক্রিয়া হবে না। হাদিসে বলা হয়েছে, আজওয়া খেঁজুর খেলে Internal toxin থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। সুতরাং বিষ খেয়ে হাদিসের সত্যতা প্রমাণ করার প্রশ্নই আসে না।
3. বিষ খেয়েই কী হাদিসটিকে সত্য প্রমাণ করতে হবে?
আমরা প্রমাণ করেছি, হাদিসে বাইরে থেকে ইনজেক্ট করা কোনো External toxin নয়, বরং শরীররের অভ্যন্তরে যে Internal toxin উৎপন্ন হয়, তার প্রতিষেধক হিসেবে আজওয়া খেঁজুরের কথা বলা হয়েছে। বাইরে থেকে কোনো বিষ পান করলে বিষ পানকারী মারা যাবে। আজওয়া খেলেও। আর আমাদের ইসলাম বিদ্বেষী ভাইরা তো সেচ্ছায় বিষ পান করার কথা বলেছেন। বিষ পান করে প্রমাণ করতে হবে যে, আজওয়া তার কাজ দেখাচ্ছে! এ দাবি করাটাও বোকামি। আমাদের ইসলাম বিদ্বেষী ভাইয়েরা হয়ত ভুলে যাচ্ছেন যে, সেচ্ছায় বিষ খেলে সেটা আর ঈমানী পরিক্ষা থাকবে না, বরং সেটাকে বলা হবে আত্মহত্যা। এই ঈমানী পরিক্ষা দিয়ে জান্নাত না পাওয়া গেলেও জাহান্নাম নিশ্চিত পাওয়া যাবে। আত্মহত্যা মহাপাপ। এবং বলাবাহুল্য যে, আজওয়া খেঁজুরের মত আধ্যাত্মিক খাবার আপনাকে আত্মহত্যা থেকে বাঁচাবে না। বিসমিল্লাহ বলে ব্যভিচার করে আল্লাহর রহমত আশা যেমন বোকামি, তেমনি বিষ খেয়ে আজওয়া খেঁজুরের মত আধ্যাত্মিক খাবার আপনাকে বিষ ক্রিয়ামুক্ত করবে এটা আশা করাও বোকামি। তাই উক্ত হাদিসে যদি External বিষের কথাও থাকত, তাহলেও ইসলাম বিদ্বেষীরা আমাদের কাছে বিষ খেয়ে পরীক্ষা দেওয়ার দাবি জানাতে পারে না। কারণ আত্মহত্যার মত মহাপাপে আজওয়ার মত বেহেশতি ফল তার কাজ করবে না এটাই স্বাভাবিক।
4. প্রকৃতপক্ষে আজওয়া কী বিষের কার্যকারিতা নষ্ট করে?
খেঁজুর যে টক্সিনের প্রতি নিবারক ভূমিকা পালন করে তা বেশকিছু জার্নালে রিসার্চ পেপার প্রকাশিত হয়েছে। আমি সেগুলোর সার-সংক্ষেপ প্রকাশ করছি: Antioxidant Activity: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হল একটি মলিকিউল যা অক্সিডাইজেশনে বাধা প্রদান করে। অক্সিডাইজেশন হল এক প্রকার রাসায়নিক বিক্রিয়া যা ফ্রি রেডিক্যাল তৈরী করে সেল ড্যামেজ করে। অক্সিডেন্ট stress এর কারণে toxic effect সৃষ্টি হতে পারে। যা হাদিসের বক্তব্যের সাথে পুরোপুরি মিলে যায়। কারণ খেঁজুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন C,A,E আছে। ডিএনএ তে অক্সিডেটিভ ড্যামেজের কারণে ক্যান্সার, হার্ট ফেইলারসহ নানা রোগ হতে পারে। এবং রিসার্চে খেঁজুরের এন্টিক্যান্সার কার্যক্রমও লক্ষ্য করা গেছে।সুতরাং খেঁজুরের এন্টিঅক্সিডেন্ট কার্যক্রম ক্যান্সার এর মত কঠিন রোগ নিয়াময়ে এক নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে। Hepaprotective Activity: Ochratoxin A (OTA) Aspergillus and Penicillum genera থেকে প্রস্তুতকৃত একটি মাকোটক্সিন। এটি বহুল ব্যবহৃত দূষক। এটা টক্সিন ইফেক্ট প্রদর্শন করে। এটা hepatoxicity প্রণোদিত করে। যা Liver toxicity সৃষ্টি করি। এবং রিসার্চে দেখা গেছে আজওয়া খেঁজুরের hepatoxicity কমানোর ক্ষমতা রয়েছে। এটা hepatoxicity বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষণের ভূমিকা পালন করে। আলী (রাঃ) বলেন, “যে প্রতিদিন সাতটি খেঁজুর খাই, এটা তার পেটের রোগ গুলোকে মেরে ফেলে। (Kanzul Ummal, Hadith 28472)। এর রয়েছে Nephroprotective activity, Neuroprotective activity, Gastrointestinal protective activity, Anti-diabetic activity যা হাদিসের সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ। জার্নালগুলোর রিসার্চ পেপারগুলো দেখলে Internal Toxic এর উপর আজওয়া খেঁজুরের অসাধারণ প্রতিরক্ষণ ভূমিকা সম্পর্কে জানতে পারবেন। যা হাদিসের সত্যতার প্রমাণ। আলহামদুলিল্লাহ। . আল্লাহ্ ইসলাম বিদ্বেষীদের মিথ্যাচার ও অপব্যাখ্যা থেকে ঈমানদারদের হেফাজত করুন,আমিন!
তথ্যসূত্র:
1. Bacterial toxins cause deadly heart disease-Science daily
2. World Journal of Dairy & Food Sciences 9 (2): 308-316, 2014: Nutritional Value, Cytotoxicity, Anti-Carcinogenic and Beverage Evaluation of Roasted Date Pits
3. Ahmed MB, Hasona NaS, Selemain HAH (2008) Protective effects of extract from dates (Phoenix Dactylifera L.) and ascorbic acid on thioacetamide-induced hepatotoxicity in rats. Iran J Pharm Res 7: 193-201
4. 280-289. 28.Al-Qarawi AA, Abdel-Rahman H, Mousa HM, Ali BH, El-Mougy SA (2008) Nephroprotective action of Phoenix dactylifera in gentamicin induced nephrotoxicity. Pharm Biol 46: 227–230
5. Zangiabadi N, Asadi-Shekaari M, Sheibani V, Jafari M, Shabani M, et al. (2011) Date fruit extract is a neuroprotective agent in diabetic peripheral neuropathy in streptozotocin-induced diabetic rats: a multimodal analysis. Oxid Med Cell Longev 2011: 976948 6. Al-Qarawi AA, Abdel-RH, Ali BH, Mousa HM, El-Mougy SA (2005) The ameliorative effect of dates (Phoenix dactylifera L.) on ethanol-induced gastric ulcer in rats. J Ethnopharmacol 98: 313-317
7. Mard SA, Jalalvand K, Jafarinejad M, Balochi H, Naseri MKG (2010) Evaluation of the antidiabetic and antilipaemic activities of the hydroalcoholic extract of Phoenix dactylifera palm leaves and its fractions in alloxan-Induced diabetic rats. Malays J Med Sci 17: 4-13 8.https://nutraceuticals.imedpub.com/date-palm-phoenix-dactylifera-protection-and-remedy-food.pdf
লিখেছেন: নয়ন চৌধুরী