Are you sure?

দর্শন »  নাস্তিক্যবাদ

আল্লাহ দয়ালু হলে মানুষ না খেয়ে মরে কেন?

প্রশ্নঃ- আল্লাহ দয়ালু হলে মানুষ না খেয়ে মরে কেন?

 

জবাব:

এই প্রশ্নটি ইদানিং অনেক মুসলমান ভাইকে বিভ্রান্ত করছে। আল্লাহ আমাদের খাবারের ব্যাবস্থা করে রেখেছেন বিভিন্ন প্রানী ও উদ্ভিদ তৈরি করে। সেগুলো আমাকেই সংগ্রহ করে খেতে হবে। যত বড় ধার্মিক লোক হোক না কেন সে যদি ঘরে বসে জপ করে “আল্লাহ, খাবার দাও”, এতে সে কিন্তু খাবার পাবে না। তাকে যে কোনভাবে নিজের খাবার জোগাড় করেই খেতে হবে।  হাদিস শরিফে এসেছে,

‘যদি তোমরা আল্লাহ তায়ালার ওপর সঠিক ও যথাযথভাবে ভরসা কর, তাহলে তিনি তোমাদের পাখির মতো জীবিকা দান করবেন, ক্ষুধার্ত অবস্থায় সবাই বের হয়ে পেট ভরে বাসায় ফিরবে।’ (আহমদ, তিরমিজি)।

 

তাহলে কি ভরসা করে বসে থাকব আর আল্লাহ খাবার দিবেন?

 

হজরত ওমর (রা.) বলেন,

তোমাদের কেউ যেন জীবিকার সন্ধান না করে বসে বসে এ কথা না বলে, হে আল্লাহ আমাকে রিজিক দাও; কারণ তোমরা জান, আকাশ কখনও স্বর্ণ বর্ষণ করে না। সূরা নুহের ১০ থেকে ১২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও, নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল। (তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলে) তিনি তোমাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, আর তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগবাগিচা দেবেন আর দেবেন নদীনালা।’ (সম্ভাব্য ভাবার্থ সূরা নুহ : ১০-১২)।

 

হাদিসে এসেছে,

যে ব্যক্তি অধিক পরিমাণে এসতেগফার পড়বে, আল্লাহ তায়ালা তাকে সব দুশ্চিন্তা ও সংকটাপন্ন অবস্থা থেকে মুক্ত করে দেবেন এবং ধারণাতীতভাবে তাকে জীবিকা দান করবেন। (আবু দাউদ)।

 

অর্থাৎ মানুষ যখন আল্লাহর নির্দেশ অনুসরণ করে প্রচেষ্টা করবে তখন আল্লাহ সাহায্য করবেন! পাখির কথাই ধরা যাক। তার খাবার মজুদের গুদাম নেই। সকালে ক্ষুধা পেটে বের হয়; বিকাল বেলা কিন্তু ভরা পেটেই ঘরে ফেরে।

 

রিজিক কখন বাড়িয়ে দেয়া হবে? 

যারা আল্লাহর দেওয়া রিজিক থেকে আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাদের প্রতিদান দেবেন আল্লাহপাক। 

‘বল, আমার প্রতিপালক তার বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা তার রিজিক বর্ধিত করেন অথবা ওটা সীমিত করেন। তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে তিনি তার প্রতিদান দেবেন। তিনি শ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা।’ (সম্ভাব্য ভাবার্থ সূরা সাবা : ৩৬)। 

 

খাবার কি আমাদের জন্য যথেষ্ট?

 

অনাহারের জন্য মানুষ নিজেই দায়ী! আল্লাহ বলেন-

“মানুষ যে চেষ্টা সাধনা করে তা ছাড়া তার আর কিছুই প্রাপ্য নেই।”(সম্ভাব্য ভাবার্থ সূরা নজম-৩৯)

সারা দুনিয়াতে অগণিত প্রানী রয়েছে। তাদের সবার জন্যই খাবার যথেষ্ট। খাবার যথেষ্ট কিনা এই সমস্যা একমাত্র মানুষের মাঝে দেখা যায়। দুনিয়াতে কোন বন্য প্রানী খাবারের অভাবে মারা যায় না। কোন প্রানী যদি মুক্ত থাকে তবে ঠিকই সে তার খাবার খুঁজে নেয়। একমাত্র মানুষ খাবারের অভাবে মারা যায়। কোথাও দেখা যায় খাবার এর প্রাচুর্য। কোথাও দেখা যায় মানুষ অনাহারে রয়েছে। এর দুটি কারন-

  💠১. একজন মানুষ আরো হাজার মানুষের খাবার আটকে রাখে। জঙ্গলে একটি বাঘ  হরিন শিকার করে।  তার যতটুকু লাগে সেটুকু খেয়ে বাকিটুকু রেখে চলে যায়। এর পরে শেয়াল এসে যতটুকু লাগে খায়, বাকিটা রেখে চলে যায়। এর পরে শকুন এসে খায়। এর পরে পোকা মাকড় খায়। অবশেষে হরিনের কঙ্কাল পড়ে থাকে। সেটা খাওয়ারও পোকা রয়েছে। লক্ষ্য করুন, যে যার খাবার খেয়ে বাকীটা রেখে চলে যায়। মানুষের মধ্যে এই পদ্ধতি নেই। মানুষ আরো হাজার লোকের খাবার মজুত করে, অর্থাৎ আটকে রাখে । সারা দুনিয়ার ৯০% সম্পদ রয়েছে মাত্র ১০% মানুষের হাতে। আল্লাহ সবার জন্য খাবার ঠিকই দিয়ে রেখেছেন, কিন্তু একজন মানুষ অন্য হাজার জনের খাবার আটকে রেখে তাদেরকে অনাহারে রাখে। 

  💠২. মানুষকে একটি নির্দিষ্ট সীমানার (দেশ) মধ্যে আটকে রাখা হয়। জঙ্গলে দেখা যায় কোথাও খাবারের অভাব হলে পশুরা সেই স্থানে চলে যেতে পারে যেখানে খাবারের প্রাচুর্যতা আছে| মানুষের ক্ষেত্রে এই বিষয়টা অনেক জটিল। আমরা দেশ বানিয়ে রেখেছি। এভাবে দেশ বানিয়ে আমরা আসলে মানুষকে নির্দিষ্ট স্থানের মধ্যে আটকে রাখছি। কাজেই যে দেশে খাবারের অভাব রয়েছে সেই দেশের মানুষেরা ইচ্ছেমতন খাবারের প্রাচুর্যের দেশে যেতে পারছে না। ফলে অনাহারে অর্ধাহারে থাকছে ।

 

মানুষ খাদ্যের অভাবে কষ্ট পায় কেন?

আল্লাহ বলেন,

‘এমন কে আছে যে তোমাদের রিজিক দান করবে, যদি তিনি রিজিক বন্ধ করে দেন? বস্তুত তারা অবাধ্যতা ও সত্যবিমুখতায় অবিচল রয়েছে।’

(সম্ভাব্য ভভাবার্থ সুরা মুলক : ২১)। 

 

অর্থাৎ মানুষের অবাধ্যতায় আল্লাহ অসন্তুষ্ট হয়ে রিজিক বন্ধ বা সংকুচিত করে দেন! মনেরাখতে হবে আল্লাহ যদি কারও রিজিক বন্ধ করে দেন, তবে তা চালু করার শক্তি কারও নেই। সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট প্রতিয়মান হয় যে মানুষের অনাহারে থাকার  একমাত্র কারন মানুষের অবাধ্যতা, সীমালঙ্গন । যেদিন মানুষ আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে চলা শুরো করবে সেদিন থেকে অচিন্তনীয় উৎস থেকে মানুষ খাবার লাভ করবে যে প্রতিশ্রুতি মহান রব আমাদের দিয়েছেন ।

 

আল্লাহ আমাদের সত্য উপলব্ধি করার তওফিক দান করুন,আমিন! ”

🏵️কৃতজ্ঞতা : মূল লেখক নয়ন চৌধুরী ।