Are you sure?

দর্শন »  নাস্তিক্যবাদ

ইসলাম কী সত্যিই অমুসলিমদেরকে কোন অধিকার দেয় না?

নাস্তিক ও ইসলাম-বিদ্বেশীদের একটি অভিযোগ এই যে, ইসলাম অমুসলিমদেরকে কোন অধিকার দেয় না। তাদের বিরুদ্ধে জয়ী হওয়ার পর তাদেরকে দেশ থেকে বের করে দেয়। ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমদের কোন অধিকার নেই। এ অভিযোগটি কতটুকু সত্য?      

এ অভিযোগের জবাব : এটা তাদের নিছক অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছু নয়। ইসলাম অমুসলিমদের অধিকার ১৪০০ বৎসর আগেই নিশ্চিত করেছে। ইসলামি রাষ্ট্র অমুসলিমদের জান-মালের নিরাপত্তাসহ যাবতীয় প্রায় সব অধিকারই দিয়েছে। 

ইসলামি রাষ্ট্রের পরিচয় 

ইসলামি রাষ্ট্র সার্বভৌম আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত বিধি-বিধানের ভিত্তিতে পরিচালিত একটি জনকল্যাণমূলক আদর্শ রাষ্ট্র। কোন রাষ্ট্রকে ইসলামী রাষ্ট্র হতে হলে রাষ্ট্রের সকল দিক ও বিভাগে আল্লাহর বিধান কার্যকর করতে হবে। এখানে সরকারের স্বেচ্ছাচারিতার কোন সুযোগ নেই। আল-কুরআন ও হাদিসই ইসলামী রাষ্ট্রের মৌলিক আইন ও সংবিধান। অন্যান্য আইন আল-কুরআন ও হাদিসের ভিত্তিতেই তৈরি হয়। রাষ্ট্রপ্রধান রাষ্ট্রের প্রশাসন পরিচালনার জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এককভাবে গ্রহণ করার অধিকারীও নন। রাষ্ট্রপ্রধানকে দেশবাসীর প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিবর্গ বা মজলিসে শূরার পরামর্শক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধান উদ্দেশ্য হলো সামাজিক ন্যায় ও সুবিচার (Social Justice) প্রতিষ্ঠা করা। এখানে সকল মানুষই মানুষ হিসেবে একই রূপ সামাজিক মর্যাদার অধিকারী। মহান আল্লাহ বলেন, 

لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَأَنْزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيزَانَ لِيَقُومَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ ۖ 

আমি আমার রসূলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছি এবং তাঁদের সাথে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও ন্যায়নীতি, যাতে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে। [1]

এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা যুগে-যুগে নবী-রাসূলগণের প্রেরণ ও কিতাবসমূহের অবতারণের যে উদ্দেশ্য ব্যক্ত করেছেন তা হলো সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা। এ সুবিচার যেমন রাষ্ট্রের মুসলিম নাগরিকদের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করতে হবে, তেমনি অমুসলিম নাগরিকদের বেলায়ও সুবিচারের বিধান লঙ্ঘন করা যাবে না। এ প্রসঙ্গে অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, 

لَا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ لَمْ يُقَاتِلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَلَمْ يُخْرِجُوكُمْ مِنْ دِيَارِكُمْ أَنْ تَبَرُّوهُمْ وَتُقْسِطُوا إِلَيْهِمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ

আর দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফ-কারীদেরকে ভালবাসেন। [2]

এ আয়াতে যেসব অমুসলিম মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তাদেরকে দেশ থেকে বিতাড়নে অংশ গ্রহণ করেনি তাদের সাথে সদ্বব্যবহার ও সুবিচার করার নির্দেশ দেয়া হয়। 

অমুসলিমদের শ্রেণীভেদ 

একটি ইসলামি রাষ্ট্রে দেশের বাইরের ও ভেতরের অমুসলিমদেরকে ৪টি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। যথাক্রমে সেগুলো হলো:-

  • (ক) আহলুয যিম্মাহ (যিম্মী)। 
  • (খ) মু'আহাদ। 
  • (গ) মুস্তা'মান। 
  • (ঘ) হারবী।

আহলুয যিম্মাহ (যিম্মী) 

যিম্মীরা হলো ইসলামি রাষ্ট্রের স্থায়ী অমুসলিম নাগরিক। মুসলিমদের মতো তারাও ইসলামি রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের মতো অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে। ইসলামি রাষ্ট্রে তাদের জান-মাল-ইযযাত-আব্রুর মতোই মূলবান ও পবিত্র বিবেচিত হয়। ইসলামী রাষ্ট্র শুধু কাগজে-কলমেই তাদের অধিকার দেয় না; বরং সে রাষ্ট্র নিজের ঈমান ও দীনের আলোকে কার্যত তা বাস্তবায়ন করতে বাধ্য। এ ক্ষেত্রে আদৌ এ কথা বিবেচনায় আনা যাবে না যে, অমুসলিম রাষ্ট্রগুলো তাদের মুসলিম অধিবাসীদেরকে কাগজে-কলমেই বা কী কী অধিকার দিচ্ছে, আর বাস্তবেই বা কী দিচ্ছে। উল্লেখ্য অনেকেই "যিম্মী" শব্দটিকে গালি মনে করে। আবার কোন-কোন ইসলাম-বিরোধী একে শুদ্রের সমার্থক শব্দ বলেও প্রচার করে। এ রূপ ধারণার কোন ভিত্তিই নেই। এটা শব্দটির প্রকৃত অর্থ সম্পর্কে অজ্ঞতা কিংবা ইসলামের শত্রুদের দীর্ঘকাল ব্যাপী অপ্রপচারের ফল। আরবী ভাষায় 'যিম্মাহ' শব্দটি দায়িত্বভার, সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও অধিকার প্রভৃতি অর্থে ব্যবহৃত হয়। ইসলামের পার্থিব আইন-কানুন মেনে নেয়া এবং জিযিয়া আদায় করার শর্তে  ইসলামী রাষ্ট্র অমুসলিম নাগরিকদের জান-মাল ইযযাত-আব্রুর নিরাপত্তার দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করে বলে তাদেরকে আহলুয যিম্মাহ বা যিম্মী বলা হয়। ইসলামী রাষ্ট্র এ দায়িত্ব শুধু নিজের পক্ষ থেকে গ্রহণ করে তা নয়; বরং আল্লাহ ও রাসূলের পক্ষ থেকে গ্রহণ করে। এ দায়িত্বের গুরুত্ব এতো বেশী যে, ইসলামী রাষ্ট্রের আইনসভা তাদের শরী'আত সম্মত অধিকারসমূহ ছিনিয়ে নেয়ার আদৌ কোন অধিকার রাখে না। আহলুয বা যিম্মাহ সম্পর্কে রাসূল (সা:) বলেন, 

حَدَّثَنَا قَيْسُ بْنُ حَفْصٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَاحِدِ، حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ عَمْرٍو، حَدَّثَنَا مُجَاهِدٌ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو ـ رضى الله عنهما ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ مَنْ قَتَلَ مُعَاهَدًا لَمْ يَرَحْ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ، وَإِنَّ رِيحَهَا تُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ أَرْبَعِينَ عَامًا ‏"‏‏.‏

আব্দুল্লাহ ইব্‌নু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত:

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন জিম্মীকে কতল করে, সে জান্নাতের ঘ্রাণ পাবে না। যদিও জান্নাতের ঘ্রাণ চল্লিশ বছরের দূরত্ব হতে পাওয়া যাবে।’ [3]

এ হাদিস থেকে জানা যায় যে, ইসলামী রাষ্ট্রের সরকারই কেবল নিজের পক্ষ থেকে অমুসলিম নাগরিকদের অধিকার রক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করে, তা নয়; বরং আল্লাহ ও রাসূলের পক্ষ থেকেও এ দায়িত্ব গ্রহণ করে। 

যিম্মী প্রসঙ্গে রাসূল (সা:)-এর আরেকটি হাদিস -

مَنْ ظَلَمَ ذِمَّيًا فَأنَّا خَصْمُهُ يَوْمَ الْقِيَامةِ

"যে ব্যক্তি কোন যিম্মীর প্রতি অবিচার করলো, তার বিরুদ্ধে কিয়ামতের দিন (আল্লাহর দরবারে) আমি নিজেই ফরিয়াদী হবো। [4]

● মু'আহাদ 

মু'আহাদ অর্থ চুক্তিবদ্ধ। মু'আহাদরা হলো দারুল হারবের চুক্তিবদ্ধ অমুসলিম। দারুল হারব বলতে এমন অমুসলিম রাষ্ট্রকে বুঝানো হয়, যার সাথে ইসলামি রাষ্ট্রের সাময়িক বা স্থায়ীভাবে কোন রূপ শান্তি চুক্তি সম্পাদিত হয়নি এবং যেখানে প্রকাশ্যে অনৈসলামী বিধিবিধান চালু রয়েছে। [5] সাময়িকভাবে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে আবদ্ধ অমুসলিমদেরকে আহলুল 'আহদ' বা মু'আহাদূন বলা হয়। মু'আহাদের সাথে চুক্তি অনুুযায়ী আচরণ করা ওয়াজিব, যে পর্যন্ত তারা চুক্তির শর্ত মেনে চলবে, তাদের সাথে চুক্তি হয়ে যাবার পর তা পালন করতে গিয়ে সামান্য পরিমাণও হেরফের করা যাবে না। উভয় পক্ষের অবস্থান, শক্তি ক্ষমতায় যতই পরিবর্তন এসে যাক না কেন। ইসলাম এটাকে হারাম মনে করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

ۖفَمَا اسْتَقَامُوا لَكُمْ فَاسْتَقِيمُوا لَهُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِينَ

অতএব, যে পর্যন্ত তারা তোমাদের জন্যে সরল থাকে, তোমরাও তাদের জন্য সরল থাক। নিঃসন্দেহের আল্লাহ সাবধানীদের পছন্দ করেন। [6]

মহানবী (সা:) বলেছেন, 

ক্বাইস ইবনু ‘আব্বাদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত:

মহানবী (সা:) বলেছেন, চুক্তিবদ্ধ অমুসলিম নাগরিককেও চুক্তি বলবৎ থাকাকালে হত্যা করা যাবে না[7]

এ হাদিস থেকে জানা যায় যে, চুক্তিবদ্ধ অমুসলিমদের সাথে চুক্তিপত্রে যেসব শর্ত নির্ধারিত হবে, তাতে কোন ধরনের হেরফের করা যাবে না। তাদের সাথে চুক্তি করার পর চুক্তিতে যেসব শর্ত উল্লেখ থাকবে, সেগুলো অক্ষরে-অক্ষরে পালন করতে হবে। 

● মুস্তা'মান 

মুস্তা'মান অর্থ নিরাপত্তা আশ্রিত। মুস্তা'মান হলো যে অমুসলিম সাময়িকভাবে রাষ্ট্রপ্রধান কিংবা কোন মুসলিম নাগরিকের নিরাপত্তায় 'ইসলামী রাষ্ট্রে প্রবেশ করে। যিম্মী আর মুস্তা'মানের মধ্যে পার্থক্য হলো- যিম্মী হলো ইসলামী রাষ্ট্রের স্থায়ী অমুসলিম নাগরিক আর আর মুস্তা'মান হলো ইসলামী রাষ্ট্রে সাময়িক সুবিধাপ্রাপ্ত অমুসলিম শ্রেণী। [8] মুস্তা'মান ৪ প্রকারের হতে পারে। যথাক্রমে- 

  • দারুল হারবের দূত বা বাহক।
  • ব্যবসায়ী। 
  • আশ্রয়প্রার্থী। 
  • দর্শনার্থী, পর্যটক এবং অন্য যে কোন প্রয়োজনে প্রবেশকারী। 

ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধান কিংবা তার প্রতিনিধি রাষ্ট্রের কল্যাণ ও প্রয়োজন বিবেচনা করে যে কোন অমুসলিমকে ইসলামী রাষ্ট্রে প্রবেশ করার এবং সাময়িকভাবে কিছু দিন অবস্থান করার অনুমতি দিতে পারেন। তা ছাড়া ইসলামী রাষ্ট্রের যেকোন মুসলিম নাগরিকও যে কোন অমুসলিমকে সাময়িক নিরাপত্তা ও আশ্রয় দান করতে পারবে। রাষ্ট্রপ্রধান রাষ্ট্রের স্বার্থের একান্ত পরিপন্থী মনে না করলে তার সে নিরাপত্তা ও আশ্রয় প্রদানকে বলবৎ রাখবেন। 

উম্মু হানী বিনতে আবূ তালিব (রা:) থেকে বণিত: তিনি বলেন, মাক্কাহ বিজয়ের বছর আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গেলাম। হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমার সহোদর ভাই ‘আলী (রাঃ) হুবাইরার অমুক পুত্রকে হত্যা করার সংকল্প করেছে, আর আমি তাকে আশ্রয় দিয়েছি। তখন আল্লাহর রসূল (সা:) বললেন, হে উম্মু হানী! তুমি যাকে আশ্রয় দিয়েছো, আমিও তাকে আশ্রয় দিয়েছি। [9]

তদুপুরি রাসূল (সা:) বলেন, 

আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত: রাসূল (সা:) হতে বর্ণিত, মুসলমান কর্তৃক নিরাপত্তা দানের অধিকার সকলের ক্ষেত্রে সমান। তাই যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দেয়া নিরাপত্তাকে লঙ্ঘন করবে, তার প্রতি আল্লাহ্‌র অভিসম্পাত এবং সকল ফেরেশতা ও মানুষের। [10]

ইসলামী রাষ্ট্র যিম্মীদের মতো মুস্তা'মানের নিরাপত্তার রক্ষারও সার্বিক দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করবে। ইসলামী রাষ্ট্রের কোন নাগরিকের জন্য মুস্তা'মানের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, তাকে হত্যা করা কিংবা তার জান-মাল-ইযযাত-আব্রুর প্রতি কোন রূপ হামলা করা জায়িয নেই।[11] মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, 

وَإِنْ أَحَدٌ مِنَ الْمُشْرِكِينَ اسْتَجَارَكَ فَأَجِرْهُ حَتَّىٰ يَسْمَعَ كَلَامَ اللَّهِ ثُمَّ أَبْلِغْهُ مَأْمَنَهُ ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لَا يَعْلَمُونَ

আর মুশরিকদের কেউ যদি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে তাকে আশ্রয় দেবে, যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পায়, অতঃপর তাকে তার নিরাপদ স্থানে পৌছে দেবে। এটি এজন্যে যে এরা জ্ঞান রাখে না। [12]

এ মর্মে আরেকটি হাদিস,

مَنْ أَمنَ رَجُكفَقَتلَهُ وَجَبَتْ لَهُ النَّارُ، وَإِنْ الْمَقْتُولُ كَافِراً

"যে ব্যক্তি কোন লোককে নিরাপত্তা দান করার পর হত্যা করলো, জাহান্নাম তার জন্য অবধারিত হয়ে গেল, যদিও নিহয় ব্যক্তি অমুসলিম হয়। [13]

● হারবী 

হারবী হলো দারুল হারবের অমুসলিম নাগরিক। উপর্যুক্ত তিন শ্রেণীর বাইরে যে সকল অমুসলিম রয়েছে তাদেরকে হারবী (ইসলামী রাষ্ট্রের শত্রু) রূপে গণ্য করা হয়। [14] তাদেত জান-মাল-ইযযাত-আব্রু রক্ষা করার দায়িত্ব ইসলামী রাষ্ট্রের ওপর বর্তাবে না। কোন হারবীর ইসলামী রাষ্ট্রে প্রবেশ করতে হলে রাষ্ট্রপ্রধান কিংবা প্রতিনিধির অনুমতি নিয়েই প্রবেশ করতে হবে। অনুমতি ছাড়া কোন হারবী ইসলামী রাষ্ট্রে অনুপ্রবেশ করলে তাকে দারুল হারবের গুপ্তচর বা লুটেরা বলে ধরে নেয়া হবে। রাষ্ট্রপ্রধান দেশ ও জনগণের সার্থে যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন। এবার আসি ইসলাম বিরোধীদের প্রশ্নের জবাবে। 

ইসলামী রাষ্ট্র কী অমুসলিমদর অধিকার দেয় না?

এটা তাদের না জানা ও অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছু নয়। ইসলাম অমুসলিমদেরকে তাদের প্রাপ্য অধিকার দিয়েছে। মুসলিমরা যখন কোন দেশ জয় করেছে তখন সে দেশের অধিবাসীদের সাথে বিভিন্ন চুক্তি করেছে। সেই চুক্তিতে অমুসলিমদের অধিকার নিশ্চিত করা হয়। রাষ্ট্রপ্রধান যখন অমুসলিমদের সাথে চুক্তি করে তখন সেই চুক্তি মুসলিমদেরকে মানতেই হয়। চুক্তিতে একজন অমুসলিমের অধিকার, তার নিরাপত্তা এগুলো নিশ্চিত করা হয়। রাষ্ট্রের সাথে চুক্তিবদ্ধ কোন অমুসলিমকে হত্যা করা ভয়াবহ কাজ; ইসলাম এমন কাজ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। আল্লাহর রাসূল (সা:) বলেছেন, 

আব্দুল্লাহ ইব্‌নু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত:

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন জিম্মীকে কতল করে, সে জান্নাতের ঘ্রাণ পাবে না। যদিও জান্নাতের ঘ্রাণ চল্লিশ বছরের দূরত্ব হতে পাওয়া যাবে।’[15]

এই হাদিস স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, রাষ্ট্রের সাথে চুক্তিবদ্ধ কোন স্থায়ী অমুসলিমকে বিনা কারণে হত্যা করা কঠোরভাবে ইসলামে নিষিদ্ধ। হয়তো প্রশ্ন তুলতে পারেন যে, রাষ্ট্রের সাথে চুক্তিবদ্ধ অমুসলিমরা নিরাপদ। কিন্তু অনৈসলামিক রাষ্ট্র থেকে যদি কোন অমুসলিম ইসলামী রাষ্ট্রে আসে তবে তার নিরাপত্তার কী হবে?  আলহামদুলিল্লাহ ইসলাম তাদেরকেও অধিকার ও নিরাপত্তা দিয়েছে। অমুসলিম কেউ যদি ইসলামী রাষ্ট্রে কারো কাছে আসে তবে ইসলামী রাষ্ট্রের সেই ব্যক্তি ঐ অমুসলিমকে নিরাপত্তা ও আশ্রয় দেবে। ইসলামী রাষ্ট্রের কোন মুসলিম কোন অমুসলিমকে নিরাপত্তা ও আশ্রয় দেয়ার পর কোন মুসলিম সেই অমুসলিমের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। এ ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল (সা:) বলেন, 

আলী (রাঃ) বলেন: রাসূল (রা:) হতে বর্ণিত, মুসলমান কর্তৃক নিরাপত্তা দানের অধিকার সকলের ক্ষেত্রে সমান। তাই যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দেয়া নিরাপত্তাকে লঙ্ঘন করবে, তার প্রতি আল্লাহ্‌র অভিসম্পাত এবং সকল ফেরেশতা ও মানুষের। [16]

ইসলামী রাষ্ট্রে স্থায়ী অমুসলিম নাগরিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার চুক্তি এবং জিজিয়ার মাধ্যমে অনেক আগেই নিশ্চিত করা হয়েছে। 

ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিম শত্রুরা কেন বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে পারে না? 

ইসলাম কেন! কোন ধর্মের মানুষই চাইবে না নিজেদের শত্রুরা তাদের রাষ্ট্রে প্রকাশ্যে ঘুরে-বেড়াক। তাই ইসলামী রাষ্ট্রে কোন অমুসলিম শত্রু ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান বা প্রতিনিধির অনুমতি ব্যতীত দেশে প্রবেশ করতে পারবে না। রাষ্ট্রে আসতে চাইলে রাষ্ট্রপ্রধানের অনুমতি চাইবে, অত:পর রাষ্ট্রপ্রধান অনুমতি দিলে অমুসলিম শত্রু রাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবে। যেসব অমুসলিমরা রাষ্ট্রের শত্রু নয় তারা যে কোন সময়ই রাষ্ট্রের যে কারো কাছে যেতে পারবে। তবে কোন অমুসলিমের কাছে গেলে অবশ্যই সেই অমুসলিমের সাথে রাষ্ট্রের চুক্তি থাকতে হবে। মানে সেই অমুসলিমকে যিম্মী হতে হবে। যদি আপনি ইসলামের ইতিহাস দেখেন তবে দেখতে পাবেন যে, ইহুদীরা খুবই শান্তিতে ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাস করেছে। ইসলাম তাদের সব ধরনের অধিকার ও নিরাপত্তা দিয়েছিলো।  

অমুসলিম নাগরিকদের অধিকারসমূহ:-

অমুসলিমরা ইসলামী রাষ্ট্রের নাগরিক। ইসলামী রাষ্ট্রের স্বাধনীতা ও আনুগত্য মেনে নেয়ার পর তাদের মৌলিক নাগরিক অধিকারসমূহ সুনিশ্চিত করা ইসলামী রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও🥺 কর্তব্য। ইসলামী রাষ্ট্রে মুসলিম নাগরিকরা যেসকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে অমুসলিম নাগরিকরাও একই অধিকার ভোগ করবে সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া। ইসলামী আইনতত্ত্ববিদগণের ভাষায় - "মুসলিমদের জন্য (রাষ্ট্রে) যে রূপ অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, তাদের জন্যও ঠিক একই রূপ অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা থাকবে। উপরন্তু, মুসলিমরা যে রূপ শাস্তি ও দণ্ডের সম্মুখীন হবে, তারাও অনুরূপ শাস্তি ও দণ্ডের সম্মুখীন হবে। [17] দুনিয়ার কোন ব্যবস্থায় এ জাতীয় সমান-অধিকারের বাস্তব নজীর নেই। মুসলিমদের সিরিয়া বিজয়ের পনের বছর পর একজন নাস্তুরী প্রাদী মন্তব্য করেছিলেন, "এই আরব জাতি, যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা রাজ্য প্রদান করেছেন, যারা আমাদের মালিক হয়ে গেছে, তারা কখনো খ্রিস্টান ধর্মের প্রতি বিরূপ আচরণ করেনি; বরং আমাদের ধর্মের হিফাজত করেছে, আমাদের পাদ্রী ও মহাপুরুষগণের সম্মান করেন এবং আমাদের গীর্জা ও উপাসনালয়ের জন্য আর্থিক সাহায্য প্রদান করেন। [18] নিম্নে তাদের অধিকারসমূহ উল্লেখ করা হলো: জান-মাল-ইযযাত-আব্রুর নিরাপত্তা 

ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমের জান-মাল-ইযযাত-আব্রু মুসলিমের জান-মাল ও ইযযাত-আব্রুর মতোই পবিত্র। অন্যায়ভাবে কোন অমুসলিমের জান কিংবা মাল অথবা ইযযাতের ওপর আঘাত হানা নিষিদ্ধ। [19] কোন মুসলিম যদি কোন অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করে, কিংবা তার সম্পদ নষ্ট করে ইযযাতের ওপর হস্তক্ষেপ করে, তা হলে একজন মুসলিমের সাথে এরূপ আচরণ করা হলে তার যে ধরনের শাস্তি ও দণ্ড হতো তাকে ঠিক তেমনি শাস্তি ও দণ্ড দেয়া হবে। অতএব কোনো মুসলিম যদি কোনো অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করে, তাহলে একজন মুসলিম নাগরিককে হত্যা করলে যেমন তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হবে ঠিক তেমনি মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে। 

ইসলামী ইতিহাসে অমুসলিম হত্যার বিচার 

হযরত আলী (রা:)-এর আমলে জনৈক মুসলিম একজন অমুসলিমের হত্যার দায়ে গ্রেফতার হয়। যথারীতি দোষী সাবস্ত্য হওয়ার পর আলী (রা:) মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেন। এ সময় নিহত ব্যক্তির ভাই এসে বললো, "আমি ক্ষমা করে দিয়েছি।" কিন্তু আলী (রা:) সন্তুষ্ট না বললেন, "ওরা বোধ হয় তোমাকে ভয় দেখিয়েছে।" সে বললো, "না, আমি রক্তপণ পেয়েছি এবং আমি বুঝতে পেরেছি যে, ওকে হত্যা করলে আমার ভাই ফিরে আসবে না।" তখন আলী (রা:) খুনীকে ছেড়ে দিলেন এবং বললেন,- "তারা (অমুসলিম) জিযইয়া দিতে সম্মত হয়েছে এই শর্তে যে, তাদের ধন-সম্পদ ও জীবন আমাদের ধন-সম্পদ ও জীবনের মতোই সমমর্যাদা সম্পন্ন হবে। [20]

অমুসলিম হত্যায় রাসূল (সা:)-এর বিচার -

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আমলে জনৈক মুসলিম এক অমুসলিমকে হত্যা করলে তিনি খুনীকে মৃত্যুদন্ড দেন। তিনি বলেন- أنَا أحَقَّ مَنْ .وَفَى بِزِمَّتِهِ- "যে অমুসলিম নাগরিক তার চুক্তি রক্ষা করবে, তার রক্তের বদলা নেয়ার দায়িত্ব আমারই। [21]

খলিফা ওমর (রা:)-এর বিচার-

হযরত ওমর  (রা:)-এর আমলে বাকর ইবন ওয়া'ইল গোত্রের এক ব্যক্তি জনৈক হীরাবাসী অমুসলিমকে হত্যা করে। ওমর (রা:) নিহত অমুসলিমের খুনীকে তার উত্তরাধিকারীদের হাতে সমর্পনের নির্দেশ দেন। অত:পর তাকে উত্তরাধিকারীদের হাতে সমর্পন করা হলে তারা তাকে হত্যা করে। [22]

ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিম হত্যার বিচার প্রসঙ্গে আশা করি; ইসলাম বিরোধীরা উত্তর পেয়েছেন। একটি ইসলামী রাষ্ট্রে একজন নিরীহ অমুসলিমকে বিনা কারণে হত্যা করলে খুনিকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।  

অমুসলিমদের সাথে সদ্ভাব প্রতিষ্ঠার নির্দেশ 

রাসূল (সা:) বিভিন্ন হাদিসে মুসলিমদেরকে অমুসলিমদের সাথে সদ্ভাব প্রতিষ্ঠার ও সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। এ মর্মে হাদিস 

আসমা বিনতে আবূ বক্‌র (রাঃ) থেকে বর্ণিত:

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে আমার আম্মা মুশরিক অবস্থায় আমার নিকট এলেন। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ফাতওয়া চেয়ে বললাম, তিনি আমার প্রতি খুবই আকৃষ্ট, এমতাবস্থায় আমি কি তার সঙ্গে সদাচরণ করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তুমি তোমার মায়ের সঙ্গে সদাচরণ কর। [23]

এ মর্মে আরো হাদিস- 

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত:

ইবনে আব্বাস (রাঃ) ইবনুয যুবাইর (রাঃ)-কে অবহিত করে বলেন, আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি তার প্রতিবেশীকে অভুক্ত রেখে তৃপ্তি সহকারে আহার করে সে মুমিন নয়। [24]

আমর ইবনে মুআয আল-আশহালী (র) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বলেছেনঃ হে মুমিন নারীগণ! তোমাদের মধ্যকার কোন নারী যেন তার প্রতিবেশীকে যৎসামান্য দান করাকেও তুচ্ছ মনে না করে, যদিও তা রান্না করা বকরীর বাহুর সামান্য গোশতও হয়। [25]

এই হাদিস গুলো অধ্যায়ন করলে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, ইসলাম প্রতিবেশীদের যত্ন নিতে উৎসাহ প্রদান করে সে  মুসলিম হোক বা অমুসলিম।

অমুসলিমদের অধিকার সংরক্ষণে মুসলিম শাসকগণের ভূমিকা 

হযরত আবু বকর (রা:) অমুসলিমদের অধিকার রক্ষার ব্যাপারে খুব বেশী সচেতন ছিলেন। একবার তিনি জানতে পারেন, ইয়ামামার গর্ভনর মুহাজির ইবনু আবী উমাইয়্যাহ মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণ্য প্রচারণা চালানোর অভিযোগে জনৈকা অমুসলিম মহিলার হাত কর্তন করেছে এবং দাঁত উপড়ে ফেলেছেন। তখন আবু বকর (রা:) তাকে ভর্ৎসনা করে পত্র লিখেন, 

أمَّا بَعْدُ فٕانَّهُ بَلغَنِىْ أنَّكَ قَطَعْتَ ىَرَ امْرَأةٍ فِيْ أنْ تَغَنَّتْ بِهِجَاء الْمُسْلِمِيْنَ وَنَزَعَتْ ثَنِيَّتَهَا فَإنْ كَانَتْ مِمَّنْ تَرَّعِيْ الإسْلَامَ فَأدَبٌ وَتَقْرِمَةٌ دُوْنَ الَمُثْلةِ وَإنْ كَاَنَتْ ذِمَّيَةً فَلَعَمْرِيْ لَمَا صَفَحْتُ عَنْهُ مِنَ الثَّرْكِ إعْظَمُ. 

আমার কাছে খবর পৌছেছে, মুসলিমদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনার কারণে তুমি এক মহিলার হাত কর্তন করেছ ও দাঁত উপড়ে ফেলেছ। এ কাজ মোটেই ঠিক হয়নি। কারণ সে দলভুক্ত হলে তাকে সতর্কীকরণই যথেষ্ট ছিল। আর যিম্মীগণ তো শিরকে লিপ্ত হয়ে স্বয়ং আল্লাহর বিরুদ্ধাচারণ করছে। তবু আমরা তাদের এ রাষ্ট্রে বাস করতে দিয়েছি। এমতাবস্থায় মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রচারণা ভয়ানক কোন অপরাধ নয়। সর্বশেষ তিনি এটাও লিখেন যে, " তোমার এই অন্যায় যেহেতু প্রথম, তাই এবারের মতো মার্জনা করা হলো। নতুবা এর জন্য তোমাকে কঠোর সাজা ভোগ করতে হতো। [26] হযরত ওমর (রা:) তার গভর্ণরদেরকে অমুসলিম নাগরিকদের অঙ্গিকার পূরণ করতে, তাদেরকে রক্ষার জন্য লড়াই করতে এবং তাদের ওপর সাধ্যের বাইরে কিছু না চাপাতে নির্দেশ দেন। [27] জেরুজালেম যখন খলীফা ওমর (রা:)-এর কাছে আত্মসমর্পণ করে, তখন এ বিজিত নগরীর অধিবাসীদের ধর্ম ও সম্পদ তাদের হাতেই ছিলো এবং তাদের উপাসনার স্বাধীনতাও অক্ষুণ্ন ছিলো। খ্রিস্টানদের এবং তাদের প্রধান যাজক ও তার অনুসারীদের বসবাসের জন্য নগরের একটি এলাকা ছেড়ে দেয়া হলো। বিজয়ী মুসলিমরা এ পবিত্র নগরীতে তাদের তীর্থ যাত্রার অধিকার খর্ব তো করলোই না বরং; উৎসাহিত করলো। ৪৬০ বছর পর জেরুজালেম ইউরোপের খ্রিস্টীয় শাসকদের অধীনে ধর্মযোদ্ধাদের মাধ্যমে খ্রিষ্ট শাসনে চলে গেলে প্রাচ্যের খ্রিস্টানরা সদাশয় খলীফাদের শাসনের অবসানে অনুশোচনাই করেছিল। গ্রীস থেকে ওক্সাস পর্যন্ত বিশ্বাস ভূখণ্ডের অধিবাসী পার্সীরা তাদের আবহমান কালের ধর্ম বিশ্বাস ছেড়ে মুসলিমদের ধর্ম গ্রহণ করেছিল। ইসলামের দীর্ঘ ইতিহাসে কোথাও কোন অমুসলিমকে নিজ ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করার জন্য জোর করা হয়েছে- এ ধরনের কোন নজীর নেই।  টমাস আর্নল্ড বলেছেন, 'অমুসলিমদেরকে জোরপূর্বক ইসলাম গ্রহণ করাবার কোন প্রচেষ্টা কিংবা খ্রিস্টানধর্ম নির্মূল করবার উদ্দেশ্যে কোন নির্যাতনের কথা আমি শুনিনি। [28] ঐতিহাসিক ফিনলে বলেন, যেখানে আরবরা কোন খ্রিস্টান দেশ জয় করেছে সব ক্ষেত্রে ইতিহাস প্রমাণ করে যে, বিজিত দেশের জনগণ ইসলামের দ্রুত প্রসারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। দু:খজনক যে, অধিকাংশ খ্রিস্টান সরকারের শাসন-ব্যবস্থা আরবদের চেয়ে দুর্বিষহ ছিলো। সিরিয়ার জনগণ মুহাম্মদের অনুসারীদের স্বাগত জানালো। মিশরীয় আফ্রিকান খ্রিস্টান বার্বাররা তো মুসলিমদের আফ্রিকা বিজয়ে অংশগ্রহণই করেছিল। কনস্টান্টিনোপল সরকারের বিরুদ্ধে এ দেশগুলোর তীব্র ঘৃণার জন্য তারা মুসলিম শাসনকে বরণ করে নিল। [29]  

 অমুসলিমদের ধর্মীয় অধিকার 

উমাইয়্যাহ শাসক ওয়ালীদ ইবন আবদিল মালিক দামেস্কের ইউহান্না গীর্জা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে মসজিদের অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছিলেন। হযরত উমর ইবন আবদিল আযীয (রহ:) ক্ষমতায় এলে খ্রিস্টানরা এ ব্যাপারে অভিযোগ দায়েল করে। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে লিখে পাঠালেন, মসজিদেত যেটুকু অংশ গীর্জার জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে, তা ভেঙে খ্রিস্টানদের হাতে সোর্পদ করে দাও। [30] ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমরা নিজেদের এলাকায় ও পরিমণ্ডলে স্ব স্ব ধর্ম-কর্ম প্রকাশ্যে ঢাকঢোল পিটিয়ে পালন করতে পারবে। তবে একান্ত মুসলিম জনপদের ভিতরে প্রকাশ্যে ধর্ম-কর্ম পালন করতে দেয়া থেকে তাদেরকে বাধা দেয়া অসঙ্গত নয়। তবে মুসলিম জনপদের অভ্যন্তরে অমুসলিমদের প্রাচীন উপাসনালয় থাকলে তার অভ্যন্তরে তারা সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে পারবে। ইসলামী সরকার তাতে কোন রূপ হস্তক্ষেপ করবে না। [31] হযরত উসামাহ (রা:)-এর নেতৃত্বে সিরিয়া অভিমুখে অভিযান প্রেরণের সময় তার প্রতি খলিফা আবু বকর (রা:)-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ হিদায়াত ছিলো এই যে, 

وَسَوْفَ تَمُرَّوْنَ بِإقْوَامٍ قَدْ فَرَغُوْا إنْفُسَهْمْ فِيْ الصَّوَامِعِ فَدَعَوهُمْ وَمَا فَرَغُوْا إنْفُسَهُمْ. 

"যাত্রাপথে তোমাদের সাথে এ রূপ অনেক লোকের সাক্ষাৎ হবে, যারা তাদের জীবনকে উপাসনালয়ের মধ্যে উৎসর্গ করে দিয়েছে। তাদেরকে তোমরা তাদের অবস্থার ওপর ছেড়ে দিবে। [32] অমুসলিমদেরকে তাদের বিবেকের বিরুদ্ধে কোন চিন্তা অবলম্বনে বাধ্য করা যাবে না। দেশের প্রচলিত আইনের বিরোধী নয় এমন যেকোন কাজ তারা আপন বিবেকের দাবি অনুসারে করতে পারবে। এ কারণে অমুসলিমকে ইসলাম গ্রহণ করার জন্য কোন রূপ চাপ সৃষ্টি করা যাবে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, 

لَا إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ

দ্বীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি বা বাধ্য-বাধকতা নেই। [33] অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা রাসূল (সা:)-কে উদ্দেশ্য করে বলেন,  

أَفَأَنْتَ تُكْرِهُ النَّاسَ حَتَّىٰ يَكُونُوا مُؤْمِنِينَ

তুমি কি মানুষের উপর জবরদস্তী করবে ঈমান আনার জন্য? [34] অর্থাৎ জোর করে কাউকে মু'মিন বানানো তোমার কাজ নয়। লোকদের নিকট আল্লাহর বাণী পৌছে দেয়াই হলো তোমার কাজ। তবে কেউ ইসলামের সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করলে ভিন্ন কথা। ঠিক এ কারণেই মুসলিমরা অসংখ্য শহর-দেশ বিজয় করার পরেও কখনো কাউকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলমান হতে জোরাজারি বা যুলুম করেনি। নাস্তিক ও ইসলাম-বিদ্বেশীদের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মুসলিমরা কখনো কাউকে জোর করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করাইনি। তারা কেবল বিজয়ী শহর গুলোতে ইসলাম প্রচার করেছে। ইসলামের সৌন্দর্য দেখে অমুসলিমরা ইসলাম গ্রহণ করেছে। ইমাম আবূ ইউসুফ (রাহ:) 'আব্বাসীয় খলীফা হারূনুর রশীদকে অসিয়ত করেন, "অমুসলিম নাগরিকদের সাথে সদয় আচরণ করবেন, তাদের খোঁজ-খবর নেবেন, যাতে তারা কোন রূপ অন্যায়-অবিচারের সম্মুখীন না হয়, কষ্টে না পড়ে যায়, সাধ্যের বাইরে তাদের ওপর যেন কোন বোঝা চাপানো না হয় এবং অন্যায়ভাবে তাদের কোন সম্পদ যেন গ্রহণ না করা হয়। [35] মুসলিমরা যেসব কাজকে পাপ ও অপরাধ মনে করে, অমুসলিমরা এ ধরনের কোন কাজকে বৈধ রূপে জানলে (যেমন- মদ সেবন, শূকর পালন, ক্রয়-বিক্রয় ও তার গোস্ত ভক্ষণ, ক্রুশ বহন প্রভৃতি) তা করতে বাধা দেয়া যাবে না, যদি না তারা তা প্রকাশ্যে মুসলিমদের মধ্যে সম্পাদনা করে। [36] অমুসলিমরা তাদের জনপদের মধ্যে পুরাতন উপসনালয়গুলোর সংরক্ষণ ও সংস্কারের পাশাপাশি নতুন উপসনালয়ও তৈরি করতে পারবে। একান্ত মুসলিম জনপদের অভ্যন্তরে নতুন ভাবে অমুসলিমদের উপাসনালয় তৈরি করতে দেয়া যাবে না। তবে সেখানে প্রাচীন উপসনালয় থাকলে, তাতে হস্তক্ষেপ করা যাবে না। যদি তা ভেঙে যায়, একই জায়গায় তা পুনঃনির্মাণের অধিকার তাদের রয়েছে। [37] একান্ত মুসলিম জনপদ নয়- এ ধরনের এলাকায় অমুসলিমরা নতুন উপসনালায় তৈরি করতে পারবে। তবে মুসলিমদের হাতে যেসব নগরীর পত্তন হয়েছে (যেমন- বাগদাদ, কূফা, বসরা, ওয়ারিস, প্রভৃতি), সেখানে অমুসলিমদেরকে নতুনভাবে কোন উপসনালয় তৈরি করতে অনুমতি দেয়া হবে না। আগের গুলোই ব্যবহার করতে হবে। ভেঙে গেলে সংস্কার করতে হবে। মুসলিমদের বিজিত এলাকাগুলোতে যেসব জায়গায় মুসলিমরা অধিক পরিমাণে বাস করে সেখানে উপসনালয় তৈরি করা যাবে না। খলিফা ওমর (রা:)-এর আমলে যত দেশ বিজিত হয়েছে তার কোথাও কোন উপসনালয় ভেঙে ফেলা হয়নি বা তাতে কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করা হয়নি। খলিফা আবূ বকর (রা:) এর আমলে হীরাবাসীদের সাথে সম্পাদিত চুক্তিতে এ কথা উল্লেখ করা হয় যে "তাদের গির্জাগুলো ধব্বংস করা হবে না। প্রয়োজনের সময় শত্রুর আক্রমণ থেকে আত্মারক্ষার জন্য তারা যেসব ইমারতে আশ্রয় নেয় সেগুলো ধব্বংস করা হবে না। তাদের উৎসবের সময় ক্রুশ বের করার ওপরও কোন বিধিবিধান আরোপ করা হবে না। [38] হযরত উমর ইবনু আবদিল আযীয (রহ) আঞ্চলিক গভর্ণরদেরকে এ মর্মে নির্দেশ দান করেছিলেন যে, 

إلَّا يَهْدِمُوْا بيْعَةً وَلَا كَنِيْسَةً وَلَا بَيْتَ نَار .

"তারা যেন কোন উপাসনালয়, গীর্জা ও অগ্নিকুণ্ড ধব্বংস না করে। " [39] 

অমুসলিমদের জায়গা-জমীর নিরাপত্তা 

একজন অমুসলিম একদিন খলীফা উমার ইবন 'আবদীল আজীয (রহ)-এর দরবারে আপীল করে যে, 'আব্বাস ইবনু ওয়ালীদ অন্যায়ভাবে তার ভূমি দখল করে রেখেছে। খলীফা আব্বাসকে ডেকে জিজ্ঞেস করেন: "এ অমুসলিম ব্যক্তি দাবীর ব্যাপারে তোমার বক্তব্য কী? আব্বাস জবাব দিলো, " আমার পিতা ওয়ালীদ এ ভূমি আমার জায়গাদারীতে অর্পণ করেছেন। " এ কথা শুনে অমুসলিম ব্যক্তিটি বলল, "আমীরুল মুমিনীন! আপনি আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী ফায়সালা করুন।" খলীফা বললেন, "আব্বাস! আল্লাহ কিতাব অমুসলিমদের ভূমি জবর দখল করে তাতে কাউকে জায়গাদারী দেয়া যায় না।" আব্বাস বললো, "আপনার কথা সত্য; কিন্তু আমার নিকট খলীফা ওয়ালীদের প্রমাণপত্র রয়েছে। আপনার পূর্বের একজন খলীফার ফরমান রদ করার অধিকার কী আপনার আছে? খলীফা জবাব দিলেন, 

نَعمْ، كِتَابُ اللَّهِ أنْ يُتَّبع مِنْ كِتَابِ الْوَلِيْد، قُمْ فَارْدُدْ عَلَيْهِ ضَيْعَتَهُ

" ওয়ালীদের প্রমাণপত্রের চাইতে আল্লাহর কিতাব অনেক ঊর্ধ্বে। এ ভূমি এ অমুসলিমকে ফেরত দাও।" [40] 

জিয্ইয়া (নিরাপত্তা কর) 

ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমদের নিরাপদে বসবাস এবং জান-মাল ও ইযযাত-আব্রুর নিরাপত্তা লাভের বিনিময় হিসেবে তাদের ওপর আরোপিত নিদিষ্ট পরিমাণ সম্পদকে 'জিযইয়া' বলা হয়। এ কর কেবল যুদ্ধ করতে সক্ষম লোকদের থেকে দেশ রক্ষার দায়িত্ব থেকে তাদেরকে মুক্তি দানের বিনিময় হিসেবে প্রতি বছর আদায় করা হবে। অতএব যারা যুদ্ধ করতে সক্ষম নয় বা যুদ্ধে কোন রূপ অংশ গ্রহণ করে না যেমন- শিশু-কিশোর, নারী, পাগল, দাস-দাসী, প্রতিবন্ধী, উপসনালয়ের সেবক, সন্যাসী, ভিক্ষু, অতি বয়োবৃদ্ধ এবং বছরের বেশীরভাগ সময় যাদের রোগে কেটে যায় এমন লোকদের জিযইয়া দিতে হবে না। [41] অধিকন্তু যদি ইসলামী সরকার তাদের জান-মাল ইযযাতের নিরাপত্তা দিতে না পারে তাহলে তাদের থেকে কোন রূপ জিযইয়া আদায় করা হবে না। বর্ণিত আছে, ইয়ামূকের যুদ্ধে যখন রোমানরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিশাল সেনাবাহিনীর সমাবেশ ঘটালো তখন মুসলিমরা সিরিয়ার সকল বিজিত এলাকা পরিত্যাগ করে একটি কেন্দে নিজেদের শক্তি কেন্দীভূত করতে বাধ্য হলো, তখন হযরত আবূ 'উবায়দাহ (রা:) নিজের অধিনিস্থ সেনাপতিদের নির্দেশ দিলেন, তোমরা যেসব জিযইয়া ও খারাজ অমুসলিমদের নিকট হতে আদায় করেছিলে তা তাদের ফিরিয়ে দাও এবং বলো যে, "এখন আমরা তোমাদের রক্ষা করতে অক্ষম, তাই যে অর্থ তোমাদের রক্ষা করার বিনিময়ে আদায় করেছিলাম তা ফেরত দিচ্ছি।" এ নির্দেশ মুতাবিক সকল সেনাপতি আদায় করা অর্থ ফেরত দিলেন। [42] জিযইয়ার পরিমাণ অমুসলিমদের আর্থিক অবস্থা দেখে নির্ধারণ করা হয়। যারা স্বচ্ছল তাদের কাছ থেকে বেশী, যারা মধ্যবিত্ত তাদের কাছ থেকে কম, যারা একদম গরীব তাদের কাছ থেকে আরো কম। যার টাকা দেয়ার সামর্থ্য নেই এবং অন্যের দান-দক্ষিণার ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে, তার জিযইয়া ক্ষমা করা দেয়া হবে। যে সব অমুসলিম নাগরিক দ্রারিদের শিকার ও পরের ওপর নির্ভর করে, তাদের জিযইয়া তো মাফ হবেই, উপরন্তু তারা তাদের জন্য বাইতুল মাল থেকে নিয়মিত সাহায্যও বরাদ্দ দেয়া হবে। [43] খলিফা আবু বকর (রা:)-এর আমলে হীরাবাসীদের সাথে সম্পাদিত চুক্তিপত্রে এ কথাও উল্লেখ ছিলো যে, "যদি কোন অমুসলিম বৃদ্ধ অকর্মণ্য হয়ে পড়ে, অথবা কোন বিপদে পতিত হয় অথবা কোন সম্পদশালী এমন ভাবে দরিদ্র হয়ে পড়ে যে, তার গোত্রের লোকেরা তাকে সাহায্য করতে থাকে এমতাবস্তায় তাকে জিযইয়া থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে। উপরন্তু মুসলিমদের বাইতুল মাল থেকে তার ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা হবে, যতদিন সে মদীনায় বা ইসলামী রাষ্ট্রের অধীনে বসবাস করবে। [44] বর্ণিত আছে যে, উমর (রা:) জনৈক বৃদ্ধ লোককে ভিক্ষা করতে দেখে তার কারণ জিজ্ঞেস করলে সে বলল, 'কী আর করবো, জিযইয়া দেয়ার জন্য ভিক্ষে করছি।" এ কথা শুনে তিনি তৎক্ষনাৎ তার জিযইয়া মাফ করে দিলেন এবং তার ভরণ পোষণের জন্য মাসিক বৃত্তি নির্ধারণ করে দিলেন। তিনি বাইতুল মালের কর্মকর্তাকে লিখলেন,

 فَواللَّهِ مَا إنْصَفْنَا إنْ إكَلْنَا شَبِسْتَهُ، تأثُمَّ نَخْزلُهُ عِنْد الَهَرَمِ

"আল্লাহর কসম! এটা কখনো ইনসাফ নয় যে, আমরা যৌবনে তার দ্বারা উপকৃত হবো। আর বার্ধক্যে তাকে অপমান করবো। [45]

কোন অমুসলিম নাগরিক মারা গেলে তার কাছে পাপ্য বকেয়া তার পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে আদায় করা হবে না এবং উত্তরাধিকারীদের ওপরও এর দায়ভার চাপানো হবে না। অনুরূপভাবে কেউ ইসলাম গ্রহণ করলে তার জিযইয়া মাফ হয়ে যাবে। [46] উল্লেখ্য যে, জিযইয়ার নাম শুনতেই অমুসলিমদের মনে যে আতংক জন্মে, তা কেবল ইসলামের শত্রুদের দীর্ঘকাল ব্যাপী অপ্রপচারের ফল। অন্যথায় এ আতংকের কোন ভিত্তি নেই। জিযইয়া মূলত ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমরা যে নিরাপদ ও সুরক্ষিত জীবন যাপনের সুযোগ পায় তারই বিনিময়। ইতঃপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কেবল সক্ষম ও প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষদের কাছ থেকে জিযইয়া নেয়া হয়। এটাকে যদি ইসলাম গ্রহণ না করার জরিমান বলা হয়, তা হলে যাকাতকে কী বলা হবে? যাকাত তো সক্ষম পুরুষই নয়; বরং নারীর কাছ থেকেও আদায় করা হয়। যাকাত কী তবে ইসলাম গ্রহণের জরিমানা? আশা করি জিযইয়া নিয়ে ইসলাম-বিরোধীদের প্রশ্নের জবাব দিতে পেরেছি। 

অমুসলিম হত্যা

حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ عُيَيْنَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي بَكْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ مَنْ قَتَلَ مُعَاهِدًا فِي غَيْرِ كُنْهِهِ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ ‏"‏ ‏.‏

আবু বাকরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত:

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যাক্তি আকারণে কোন চুক্তিবদ্ধ ব্যাক্তিকে হত্যা করবে, তার জন্য আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিবেন। [47] 

 অমুসলিম গবেষক ও চিন্তাবিদের মতামত

  1. ঐতিহাসিক টমাস আর্নল্ড বলেন, খ্রিস্টানরা মুসলিম সমাজে ধর্মীয় স্বাধীনতার মত জীবন ও ধন-সম্পদের পূর্ণ নিরাপত্তার ভোগ করতো। বিশেষ করে খিলাফাতের প্রাথমিক সময়ে তারা শহরগুলোতে সুখ- সাচ্ছান্দ্যপূর্ণ জীবন যাপন করতো। তিনি আরো বলেন, "আমরা যখন প্রাথমিক যুগে খ্রিস্টান প্রজাদের প্রতি মুসলিম সরকারের এমন বিস্ময়কর ন্যায়বিচার ও ধর্মীয় উদারতা দেখতে পাই, তখন দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তরবারির জোরে ইসলামের প্রচার ও প্রসার সম্পর্কে যে প্রচারণা চালানো হয় তা আদৌ বিশ্বাস ও ভ্রুক্ষেপ করার যোগ্য না। [48]
  2. প্রখ্যাত জার্মান লেখিকা হঙ্গ বলেন, আরবরা বিজিত জাতিগুলোকে ইসলাম গ্রহণ করতে চাপ দেয়নি। অথচ যেসব খ্রিষ্টান, যরথুস্ত্রী ও ইহুদিরা ইসলাম পূর্বকালে জঘন্যতর ও ঘৃণ্যতর ধর্মীয় গোড়ামী ও সংকীর্ণতার নিগড়ে আবদ্ধ ছিলো, ইসলাম তাদের সকলকে কোন বাধা-বিঘ্ন ছাড়াই তাদের নিজ নিজ ধর্ম-কর্ম পালনের স্বাধীনতা দান করে। অধিকন্তু মুসলিমরা তাদের উপাসনালয় গীর্জা ও আশ্রমগুলোর কোনরূপ ক্ষতি সাধন করেনি। [49]
  3. প্রাচ্যবিদ বারটোল্ড বলেন, মুসলিম শাসনমলের সময় খ্রিস্টানদের অবস্থা ছিল সর্বোত্তম। মুসলিমরা ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মানবিক মূল্যবোধ ও উদারতার নীতি মেনে চলত। [50]
  4. পাচ্যবিদ ডিওর‍্যান্ট বলেন, " অমুসলিম খ্রিস্টান, যরস্ত্রী, ইহুদী ও সাবীরা উমাইয়্যাহ খিলাপতের সময় যে ধরনের স্বাধীনতা ও অধিকার ভোগ করতো, যার নজীর সে সময়ে আমরা খ্রিস্টান রাজ্যগুলোতে দেখতে পাইনি। [51]
  5. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা লেখক মি. ড্রেপার বলেন, "খালীফাদের শাসনমলে খ্রিস্টান ও ইহুদি পণ্ডিতদের শুধু মুখে-মুখেই সম্মান করা হয়নি; তাদেরকে বড় বড় পদে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে এবং বড় বড় সরকারী দায়িত্ব অপর্ণ করা হয়েছে। [52]
  6. আধুনিক কালের খ্যাতনামা লেখক এ্যান্ডু পিটারসন বলেন, " ইসলামের নাম কঠোরতা প্রদর্শনের কোন স্থান প্রকৃত ইসলামে তো নেই বরং; তা শান্তির পতাকাবী ইসলামের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। [53] 
  7. গুস্তাব লা বন বলেন, "প্রকৃত পক্ষে 'আরবদের মত দয়ালু ও মহানুভব বিজেতা জাতি এবং তাদের ধর্মের মতো উদার প্রকৃতির কোন ধর্ম সম্পর্কে পৃথিবীবাসী অবহিত নয়। [54]

ইসলাম অমুসলিমদের সকল অধিকার নিশ্চিত করেছে। সকল ধরনের নাগরিক অধিকার দিয়েছে। মৌলিক সব অধিকার দিয়েছে। একজন নাগরিক যতটুকু অধিকার পাবে ঠিক; ততটুকু অধিকারই অমুসলিমদেরকে দেয়া হয়েছে। ইসলাম কখনো কারো অধিকার নষ্ট করে না। তাই নাস্তিকদের অভিযোগের যে কোন ভিত্তি নেই তা সহজেই বুঝা যায়। মুসলিমরা যখনই কোন রাষ্ট্র বিজয় করেছে (ইতিহাস প্রমাণ করে) মুসলমানরা কখনো অমুসলিমদরকে যুলম-নির্যাতন করেনি বা দেশ থেকে উচ্ছেদ করেনি। ইসলাম-বিদ্বেশীদের অভিযোগ সম্পূর্ণ মনগড়া ও ভিত্তিহীন। মুসলিমরা কখনো হিন্দুদের মতো কারো সাথে বর্ণবাদ আচরণ করেনি। ইসলাম শান্তির ধর্ম। একটি শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র ও সমাজ গড়তে ইসলামী রাষ্ট্রের কোন বিকল্প নেই। ইসলাম মুসলিম-অমুসলিম রাষ্ট্রের সকল মানুষকে তাদের অধিকার দিয়েছে। ইসলাম অনুযায়ী রাসূল (সা:) অমুসলিম কেন! যেকারো অধিকারই ছিনিয়ে নিতে নিষেধ করেছেন। ইসলাম সকলের অধিকার নিশ্চিত করেছে অনেক আগেই।

 

➪Reference :

  • [1] (সূরা: আল হাদীদ, আয়াত: ২৫)।
  • [2] (সূরা: আল মুমতাহিনা, আয়াত: ৮)
  • [3] সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩১৬৬।   
  • [4] মা' আরিফুতস সাহাবাহ, (বাবুল 'আইন), হাদিস নং ৩৬০০। 
  • [5] (আল-মাওসূ'আতুল ফিকহিয়্যাহ, খ.২০, পৃ. ২১৭)।
  • [6] (সূরা: আত তাওবাহ, আয়াত: ৭)। 
  •  [7] সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৫৩০। 
  • [8]  (আল-মাওসূ'আতুল ফিকহিয়্যাহ, খ.৩, পৃ. ১৬১; খ.৭ পৃ. ১০৫)। 
  •  [9] সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩১৭১। 
  • [10] সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৮৭০।
  • [11] ইবনু 'আবিদীন, রাদ্দুর মুহতার, খ.১৬, পৃ.৮১।
  • [12] (সূরাঃ আত তাওবাহ, আয়াতঃ ৬)।
  • [13] তারাবানী, আল-মু'জামুল কাবীর, হাদিস নং: ১৬৪৯৪।
  • [14] ইবনুল ইমাম, ফাতহুল কাদীর, খ.৫, পৃ.১৯৫, আল-কাসানী, বাদা'ই, খ.৭, পৃ.১০০। 
  • [15] সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩১৬৬। 
  • [16] সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৮৭০।
  • [17] আল-কাসানী, বাদা'ই খ.৭, পৃ.২৮৮; আন-নাবাবী, আল-মাজমূ' শারহুল মুহাযযাব, খ.১১, পৃ. ৩০৬। 
  • [18] হাবীবুল্লাহ, ড  হুযুরে আকরাম কী সিয়াসী যিন্দেগী, পৃ. ২৮১।  
  • [19] আল-মাওয়ার্দী, আল-আহকামুস সুলতানানিয়্যাহ, পৃ. ১৮৩।
  • [20]  ইবনু 'আবীদিন, রাদ্দুর মুহতার, খ.৩, পৃ.১৬৮; ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী, খ.৯. পৃ.২৭০। 
  • [21] ইবনু আবী শায়বাহ, আল-মুছান্নাফ, হাদিস নং: ২৭৪৬০; আল-বাইয়াকী, আস-সুনানুল কুবরা, হাদিস নং: ১৫৬৯৯। 
  • [22] ইবনু আবী শায়বাহ, আল-মুছান্নাফ, হাদিস নং: ২৭৪৭০; আল-বাইয়াকী, আস-সুনানুল কুবরা, হাদিস নং: ১৫৭০৬। 
  • [23] সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৬২০।  
  • [24] আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং ১১১। 
  • [25] আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং ১২১।
  • [26] তাবারী, তারীখুল উমাম ওয়াল মুলূক, খ.২, পৃ.৫৫০।  
  • [27] বুখারী হাদিস নং: ১৩৯২। 
  • [28] আর্নল্ড, (অনু: আদ-দা'ওয়াতুল ইলাল ইসলাম), পৃ.৯৯। 
  • [29] নাজির প্রাগুক্ত, পৃ.১৯৮ (Finlay এর History of the Byzantine Empire) গ্রন্থ থেকে সংগ্রহীত। 
  • [30] আল-বালযূরী, ফুতুহুল বুলদান, খ.৯, পৃ.২১৩।  
  • [31] আল-কাসানী, বাদা,'ই খ.৭, পৃ.১১৩। 
  • [32] তাবারী, তারীখুল উমাম ওয়াল মুলূক, খ.২, পৃ.৪৬৩। 
  • [33] (সূরা: আল বাকারা, আয়াত: ২৫৬)।
  • [34] (সূরা: ইউনুস, আয়াত: ৯৯)।
  • [35] আবূ ইউসুফ, কিতাবুল খারাজ, পৃ.৭১। 
  • [36] আল-কাসানী, বাদা,'ই খ.৭, পৃ.১১৩। 
  • [37] আল-কাসানী, বাদা,'ই খ.৭, পৃ.১১৪। 
  • [38] আল-কাসানী, বাদা,'ই খ.৭, পৃ.১১৪। 
  • [39] আবূ ইউসুফ, কিতাবুল খারাজ, পৃ.১৪৪। 
  • [40] ইবনু কাসীর, আল-বিদায়াতু ওয়ান নিহায়াতু খ.৯ পৃ.২১৩। 
  • [41] ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী, খ.৯ পৃ.২৭০। 
  • [42] আবূ ইউসুফ, কিতাবুল খারাজ, পৃ.১১১।
  • [43] ইবনু কুদামাহ, আল-মাগনী, খ.৯ পৃ. ২৭২।
  • [44] আবূ ইউসুফ, কিতাবুল খারাজ, পৃ.১৪৪। 
  • [45] আবূ ইউসুফ, কিতাবুল খারাজ, পৃ.৭২। 
  • [46] আল-মুগনী, খ.৯ পৃ.২৭৩। 
  • [47] সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২৭৬০।
  • [48] আর্নল্ড, প্রাগুক্ত, পৃ.৮১। 
  • [49] হঙ্গ, শামসুল আরব তাছাতা'উ 'আলাল গারব, পৃ.৩৬৪। 
  • [50] তাওফীক সুলতান, তারীখু আহলিয যিম্মাহ ফিল 'ইরাক, পৃ.১৪০ (বারটোল্ড আল-হাদারাতুল ইসলামিয়্যাহ (পৃ.১৯) থেকে সংগ্রহীত। 
  • [51] ডিওর‍্যান্ট, কিসসাতুল হাদারাহ, খ.১৩ পৃ.১৩০।
  • [52[ নাজির, প্রাগুত, পৃ.২১০। 
  • [53] ফিগুলি, লা সুকূতা বা'দাল ইয়াওমি, পৃ.৯১।
  • [54] Le Bon, Dr. Gustave, La, Civilisation des Arabesque, (অনু: হাদারাতুল আরব)৷ পৃ.৭২০।

মূল ড. আহমদ আলী স্যারের বই থেকে।