ইসলাম-বিদ্বেশী ও অনেক নাস্তিকরাই নবী মুহাম্মদ (ﷺ)-এর নবুওয়াতের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেন। অভিযোগ উপস্থাপন করেন তিনি কী আদৌ নবী ছিলেন? কুরআনের সূরাগুলো মনে হয় তিনিই লিখেছেন?
এ অভিযোগের জবাব-
মহানবী (ﷺ)-এর নবুওয়াতের অন্যতম প্রমাণ হলো সূরা লাহাব। তিনি যে আল্লাহর নবী ও রাসূল ছিলেন এটা প্রমাণ করার জন্য সূরা লাহাব-ই যথেষ্ট। পুরো সূরাটির অনুবাদ নিচে দেয়া হলো:
সূরা লাহাব -
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَتَبَّ{1} مَا أَغْنَىٰ عَنْهُ مَالُهُ وَمَا كَسَبَ{2} سَيَصْلَىٰ نَارًا ذَاتَ لَهَبٍ{3} وَامْرَأَتُهُ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ {4} فِي جِيدِهَا حَبْلٌ مِنْ مَسَدٍ {5} আবু লাহাবের হস্তদ্বয় ধ্বংস হোক এবং ধ্বংস হোক সে নিজে, কোন কাজে আসেনি তার ধন-সম্পদ ও যা সে উপার্জন করেছে। সত্বরই সে প্রবেশ করবে লেলিহান অগ্নিতে এবং তার স্ত্রীও-যে ইন্ধন বহন করে, তার গলদেশে খর্জুরের রশি নিয়ে। [1]
উক্ত সূরাতে আবু লাহাবকে সরাসরি জাহান্নামী বলা হয়েছে। সূরাটিতে ভবিষ্যতবাণী করা হয়েছে যে, আবু লাহাব জাহান্নামে যাবে এবং তার স্ত্রীও। সূরা লাহাব নাযিল হয় ৬১৬ বা ৬১৭ খ্রিস্টাব্দে। এই সূরা নাযিলের সাত কিংবা আট বছর পর আবু লাহাব মৃত্যু বরণ করে। [2] মহান আল্লাহ এই সূরা নাযিলের মাধ্যমে পরিষ্কার-ভাবে নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে জানিয়ে দিয়েছেন যে, আবু লাহাব কখনোই ইসলাম গ্রহণ করবে না। সে কাফের অবস্থায়ই মারা যাবে। হলোও তাই, সূরা লাহাব নাযিলের সাত বা আট বছর পর আবু লাহাব মারা যায়।
নবুওয়াতের সত্যতা
ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রুদের মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য শত্রু ছিলেন আবু সুফিয়ান এবং আবু লাহাব। পরবর্তীতে একদম শেষ দিকে আবু সুফিয়ান (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেন। কিন্তু আবু লাহাব সে কাফের অবস্থায় মারা যায়। মহানবী (সা.) যদি সত্যিই নবী না হতেন, তবে তিনি কী করে জানলেন যে, আবু লাহাব কাফের অবস্থায়-ই মারা যাবে? উল্লেখ্য যে, আবু লাহাব ছিলেন নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আপন চাচা। তার পিতার আপন ভাই। হয়তো কোন ইসলাম-বিদ্বেশী বলবে, নবী মুহাম্মদ সূরা লাহাব রচনা করেছেন এবং কোনভাবে সেটা মিলে গিয়েছে! এর উত্তরে আমি বলবো যে, প্রথমত এই ভবিষ্যতবাণীটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কেননা, এই সূরা নাযিলের সাত বা আট বছর পর আবু লাহাব মারা যায়। আবু লাহাব ছিলেন নবী মুহাম্মদ (সা.) এর আপন চাচা। এটাও তো হতে তো পারতো যে, সূরা লাহাব নাযিলের পর আবু লাহাব মারা যাওয়া আগে সে ইসলাম গ্রহণ করে ফেলতে পারতো। তখন ভবিষ্যতবাণী মিথ্যা প্রমাণ হয়ে যেতে পারতো। কিন্তু এমন কিছুই হয়নি। সে কাফের অবস্থায়ই মারা যায়। নবী মুহাম্মদ (সা.) যদি সত্যি নবী না হতেন তবে তিনি কী করে এতো বড় একটি ভবিষ্যতবাণীর ঝুঁকি নিলেন? যদি আবু লাহাব সূরা লাহাব নাযিলের পর ইসলাম গ্রহণ করে ফেলতো; তখন প্রমাণ হয়ে যেতো যে, নবী মুহাম্মদ (সা.) সত্যিই নবী নন তিনি ভন্ড। কিন্তু সূরা লাহাব নাযিল হওয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা সরাসরি বলেছে দিয়েছেন যে, আবু লাহাবের ইসলাম গ্রহণ করার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই। সে ইসলাম গ্রহণ করবেই না। হলোও তাই সে ইসলাম গ্রহণ করেনি। ইসলামের প্রতি সে তার শত্রুতার উপর অটল থাকে। যদি নবী মুহাম্মদ (সা.) সত্যিই নবী না হতেন তবে তিনি কেন বাকি শত্রুদের রেখে কেবল আবু লাহাবকেই জাহান্নামের সংবাদ দিলেন তাও আবার সূরা নাযিলের মাধ্যমে? আবু সুফিয়ান (রা.) তিনি ইসলাম গ্রহণ করার আগে ইসলামের শত্রুদের মধ্যে ছিলেন অন্যতম। আবু সুফিয়ান (রা.) মুসলিম হওয়ার আগে ইসলাম গ্রহণকারীদের ওপর অমানবিক নিষ্ঠুর অত্যাচার-নির্যাতন করেছিলেন। তিনি মুসলিম বাহিনীদের সাথে যুদ্ধ পর্যন্ত করেছেন। কই! আবু সুফিয়ানের ইসলাম গ্রহণ করার আগে তার নামে তো কোন সূরা নাযিল হয়নি? অর্থাৎ এতেই প্রমাণ হয়, নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুওয়াতের সত্যতা। আবু লাহাবকে সূরা নাযিলের মাধ্যমে বলেই দেয়া হয়েছিলো যে, সে কখনোই ইসলাম গ্রহণ করবে না। যদি আমরা নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে আবু সুফিয়ান (রা.) এর বিষয়টি দেখি তবে, আমরা দেখতে পাবো যে, আবু সুফিয়ান ইসলাম গ্রহণের আগে আবু লাহাবের চেয়েও বেশী নবী মুহাম্মদ (সা.) ও মুসলিমদের কষ্ট দিয়েছে। যদি নবী মুহাম্মদ (সা.) সত্যিই নবী না হতেন তাহলে অবশ্যই তিনি আবু সুফিয়ানের নামেও কোন সূরা রচনা করতেন। কারণ আবু সুফিয়ান যে ইসলাম গ্রহণ করবে তা কেউ ভাবতেও পারেনি। কিন্তু তিনি (সা.) এমন কিছুই করেননি। আবু সুফিয়ান (রা.) শেষদিকে এসে ইসলাম গ্রহণ করেন। যদি নবী মুহাম্মদ (সা.) সত্যি আল্লাহর নবী না হতেন তবে অবশ্যই তিনি আবু সুফিয়ানের অত্যাচার-নির্যাতনের কারণে তার বিরুদ্ধেও সূরা রচনা করতে পারতেন এবং তাকে ভয় দেখানোর জন্য বলতে পারতেন যে, তুমি জাহান্নামে যাবে। কিন্তু তিনি এমন কিছুই বলেননি। এতেই প্রমাণ হয় যে, তিনি আল্লাহর প্রেরিত নবী। আল্লাহ তাআলাই সূরা নাযিল করেন।
১ম পয়েন্ট
● যদি নবী মুহাম্মদ (সা.) সত্যিই আল্লাহর নবী না হতেন, তবে তিনি কেন এতো বড় একটি ভবিষ্যতবাণীর ঝুঁকি নিলেন? যদি আবু লাহাব সূরা লাহাব নাযিলের পর ইসলাম গ্রহণ করে ফেলতেন তখন নি:সন্দেহে লোকে ভাবতো যে, মুহাম্মদ (সা.) মিথ্যা ভবিষ্যতবাণী করেন। লোকেরা তখন বলতো যে, তিনি বলেছেন আবু লাহাব ইসলাম গ্রহণ না করে জাহান্নামে যাবেন। অথচ সে ইসলাম গ্রহণ করেছে! তখনই তিনি মিথ্যা নবী প্রমাণিত হয়ে যেতেন। যদি নবী মুহাম্মদ (সা.) সত্যিই আল্লাহর নবী না হতেন তবে তিনি কেন এতো বড় ধরনের একটি ঝুঁকি নিতে যাবেন? সূরা লাহাব নাযিলের সাত বা আট বছর পর আবু লাহাব মারা যায়। নবী মুহাম্মদ (সা.) কেন এতো বড় ধরনের একটি ঝুঁকি নিতে যাবেন যদি তিনি নবী না হন?
২য় পয়েন্ট
যাদের ইসলাম নিয়ে নূন্যতম জ্ঞান আছে তারা খুব ভালো করেই জানেন যে, আবু সুফিয়ান (রা.) ইসলাম গ্রহণ করার আগে তিনি নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে এবং মুসলিমদেরকে কী পরিমাণ কষ্ট দিয়েছেন। অথচ শেষ দিকে সবাইকে অবাক করে আবু সুফিয়ান (রা.) ইসলাম গ্রহণ করে ফেলেন। যদি নবী মুহাম্মদ (সা.) যদি সত্যিই নবী না হতেন, তবে তিনি কেন আবু লাহাবের মতো করে আবু সুফিয়ানের নামে কোন সূরা রচনা করেননি? ইসলামের প্রতি আবু লাহাবের থেকে কোন অংশে আবু সুফিয়ানের শত্রুতা কম ছিলো না। অথচ আবু সুফিয়ান (রা.)-এর নামে কোন সূরা নাযিল হয়নি তখন। এতেই প্রমাণ হয় যে নবী (সা.) আল্লাহর নবী। যদি তিনি নবী না হতেন, তিনি চাইলেই আবু সুফিয়ানের নামেও সূরা রচনা করে বলতে পারতেন আবু লাহাবের মতো করে যে, আবু সুফিয়ান জাহান্নামী সে ইসলাম গ্রহণ করবে না কখনোই ইত্যাদি। কিন্তু তিনি (সা.) এমন কিছুই বলেননি বা ভবিষ্যতবাণী করেননি। আপনি যদি আবু সুফিয়ানের বিষয়টি একটু গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন, তবে সহজেই বুঝতে পারবেন আবু সুফিয়ান (রা.) এর ইসলাম গ্রহণ ছিলো সবার জন্য অকল্পনীয় সপ্ন। যদি নবী (সা.) সত্যিই আল্লাহর নবী না হতেন তবে আবু লাহাবের পাশাপাশি আবু সুফিয়ানকেও জাহান্নামী ভবিষ্যতবাণী করতে পারতেন। আবু সুফিয়ান (রা.)-এর বিষয়তি আরও বেশী ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ মুহাম্মদ (সা.) যদি সত্যি নবী না হতেন, তখন তিনি যদি আবু সুফিয়ানকেও আবু লাহাবের মতো জাহান্নামী বলতেন তখন তিনি যে নবী নন তা প্রমাণ হয়ে যেত। কারণ আবু সুফিয়ান (রা.) শেষ দিকে ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণের আগে যদি নবী (সা.) আবু সুফিয়ানকে জাহান্নামী বলতেন তখন লোকেরা বলতো, নবী মুহাম্মদ (সা.) আবু সুফিয়ানকে জাহান্নামী বলেছেন ইসলাম গ্রহণ না করার কারণে। অথচ আবু সুফিয়ান ইসলাম গ্রহণ করেছে। আলহামদুলিল্লাহ এমন কিছুই নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেননি। এতেই প্রমাণ হয় তিনি আল্লাহর নবী। তার নবুওয়াত সত্য।
𝙍𝙚𝙛𝙚𝙧𝙚𝙣𝙘𝙚:
- [1] (সূরা: লাহাব আয়াত: ১-৫)।
- [2] বদর যুদ্ধ ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে হয়। এই যুদ্ধের সাত দিন পর আবু লাহাব মারা যায়। আবু লাহাবের মৃত্যুর সাত কিংবা আট বছর আগে সূরা লাহাব নাযিল হয়। অর্থাৎ সূরা লাহাব ৬১৬ কিংবা ৬১৭ খ্রিস্টাব্দে নাযিল হয়। মহান আল্লাহ ভালো জানেন।