Are you sure?

তুলনামূলক ধর্মতত্ব »  বিবিধ

পর্ব ২//: [2] নং বৈশিষ্ট্য:-"এই সাহায্যকারী হবেন পূর্বের সাহায্যকারীদের মতোই একজন"

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম 

২য় পর্ব

খ্রিস্টান বনাম মুসলিম সংলাপ।

বিষয়: যীশুর বর্ণিত ভবিষ্যদ্বাণীর সঠিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। 

আলোচনা:- যীশুর বর্ণিত "উক্ত সাহায্যকারী বা ভবিষ্যত পথ নির্দেশক"  হওয়ার যোগ্য কে? খ্রিস্টানদের পবিত্র আত্মা নাকি বিশ্বনবী  মুহাম্মদ (ﷺ)

কৃতজ্ঞতান্তে: প্রিয় মুহাম্মদ আব্দুল হাই 

লেখক: Boniamin Khan 

\_______________________________/

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু প্রিয় ভাই ও বোনেরা। আশা করি অবশ্যই সবাই মহান আল্লাহ্ সুবহানু ওয়াতা'আলার অসীম রহমত ও দয়ায় ভালো এবং সুস্থ আছেন। আজকে আমরা আলোচনা করব মহাত্মা ঈসা আঃ এর বর্ণিত উক্ত ভবিষ্যদ্বাণীর সঠিক এবং যৌক্তিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ নিয়ে, যা একমাত্র যোহনের গসপেলে রয়েছে। তিনি আসলে কার সম্পর্কে বলেছিলেন , খ্রিস্টানদের পবিত্র আত্মা নাকি বিশ্বজগতের রহমতের নবী মুহাম্মদ (ﷺ) এর সম্পর্কে? আমরা মুসলিমরা কেবলমাত্র মহাত্মা ঈসা আঃ এর কথার যৌক্তিক এবং সঠিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ই তুলে ধরছি কেবলমাত্র, কিন্তু সমালোচনা করার জন্য নয়। আর যদি কোন ভুল বলে থাকি তাহলে অবশ্যই ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়ে খন্ডন করে দিতে পারেন ইনশাআল্লাহ। তাহলে আর ভুমিকা না টেনে মূল প্রসঙ্গে যাওয়া যাক ইনশাআল্লাহু তাআ'লা। 

 

বাইবেলে যীশু তথা ঈসা আঃ কতৃক বর্ণিত মানবজাতির এই ভবিষ্যৎ পথ নির্দেশক কে? মুসলিমগণ বিশ্বাস করেন, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) আর খ্রিস্টানগণ দাবি করেন পাক রুহ । খ্রিস্টান ভাই ও বোনেরা আসুন আমরা বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখি -কার দ্বারা যীশুর বর্ণিত এসব বৈশিষ্ট্য/শর্তগুলো পূরণ হয়েছে। মুহাম্মদ (ﷺ) এর দ্বারা নাকি পাক-রুহের দ্বারা।

 

**আমাদের ব্যাখ্যা গুলো ভালো করে লক্ষ্য করবেন**

[২] নং বৈশিষ্ট্য:

"এই সাহায্যকারী হবেন পূর্বের সাহায্যকারীদে মতোই একজন"

\______________________________/

পূর্বের "সাহায্যকারী"গণ ছিলেন রক্ত মাংসের দেহ বিশিষ্ট মানুষ। যেমন: মুসা, দাউদ, সুলাইমান আঃ প্রমুখ নবীগণ তাঁর অর্থাৎ মহাত্মা ঈসা আঃ এর আগেই আগমন করেছিলেন পৃথিবীতে। ঈসা আঃ নিজেই ছিলেন একজন Παράκλητον (উচ্চারণ:Paraklētonan)। ইংরেজি advocate যার অর্থ  "সাহায্যকারী, সহায়, প্যারাক্লীতস (Paracletos)পক্ষ সমর্থনকারী অর্থাৎ উকিল (১ ইউহান্না/যোহন ২:১)। আরো দেখুন ইউহান্না (১৪:১৬)। 

 

[নোট: যীশু নিজেই ছিলেন একজন সহায় আবার তাঁর পূর্বের নবীগণ ও ছিলেন সাহায্যকারী। আবার তাঁর পরের জন ও একজন সাহায্যকারী। এই জন্য তিনি বলেছেন:-"আমি পিতার [সদাপ্রভু ঈশ্বরের] নিকটে নিবেদন করব যেন তিনি আর একজন সহায় কে প্রেরণ করেন তোমাদের কাছে" (যোহন ১৪:১৬)। প্রসঙ্গত ঈসা আঃ তাঁর শিষ্যদের সাথে গ্রিক ভাষায় কথা বলতেন না। বরং হিব্রু বা অ্যারামায়িক ভাষায় কথা বলেছেন। ঈসা আঃ এর ভাষায় তিনি এখানে কী বলেছিলেন তা জানার কোন উপায় নেই। কারণ প্রথম কয়েক শতাব্দীর কোন প্রাচীন গ্রিক পান্ডুলিপিও সংরক্ষিত নেই। প্রচলিত গ্রিক অনুবাদে Paracletos শব্দটি ব্যবহৃত। এর অর্থ সহায়/সাহায্যকারী, সুপারিশকারী, কারো সাহায্যে আবেদনকৃত ব্যক্তি, দয়ালু বন্ধু ইত্যাদি। গবেষকগণ মনে করেন যে, প্রচলিত গ্রিক Paracletos শব্দটি অন্য গ্রিক শব্দ Periclytos থেকে গৃহীত যার অর্থ "প্রশংসিত ব্যক্তি।" Periclytos (প্রশংসিত) ইচ্ছাকৃত অথবা অনিচ্ছাকৃতভাবে বিকৃতির মাধ্যমে Paracletos (এডভোকেট) রুপ ধারণ করে। তবে প্রশংসিত বা এডভোকেট উভয় অর্থেই এই ভবিষ্যদ্বাণীটি কেবলমাত্র মুহাম্মদ (ﷺ) এর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এ বিষয়ে বাইবেলের বিভিন্ন বক্তব্য প্রমাণ করে যে, পবিত্র আত্মা কে এডভোকেট, সহায়তা, পরামর্শক বলা ভিত্তিহীন। --ইযহারুল হক বই থেকে সংগৃহীত মুহাম্মদ (ﷺ বিষয়ক অষ্টাদশ ভবিষ্যদ্বাণী) ]

 

তবে যাইহোক, ঈসা আঃ এর বর্ণিত এই আগত ব্যক্তি প্রকৃতই ছিলেন একজন (Comforter) শান্তনাদানকারী, সাহায্যকারী। ইতিহাস বলে যীশুর পরে একমাত্র হযরত মুহাম্মদ সাঃ ই নবী হয়েছিলেন। সুতরাং পূর্বোল্লিখিত আরেকজন "সাহায্যকারী " ও "শান্তিদাতা" হলেন নবী মুহাম্মদ সাঃ। ঐতিহাসিক ভাবে জ্ঞাত যে ঈসা আঃ এর পরে দুনিয়াতে মুহাম্মদ (ﷺ) ছাড়া আর কোন নবীর আগমন হয়নি। আর তিনি হলেন ঈসা আঃ কতৃক বর্ণিত শান্তি দাতা (Comforter), ঈসা আঃ এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে সেই সহায় যখন দুনিয়াতে আসলেন ,তখন মহান আল্লাহ্ তা'আলা তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন সূরা আল আম্বিয়া (الأنبياء), আয়াত: ১০৭ তে 

 

 وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنٰکَ اِلَّا رَحۡمَۃً لِّلۡعٰلَمِیۡنَ

 

অর্থঃ আমি তো তোমাকে বিশ্ব জগতের প্রতি শুধু রহমত রূপেই প্রেরণ করেছি।" [অনুবাদক: মুজিবুর রহমান]

 

উক্ত আয়াতের তাফসীর পড়তে ক্লিক করুন:

https://www.hadithbd.com/quran/link/?id=2590

 

আর হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন:-“আমি তো আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত রহমত”। [ত্বাবরানী, মুজামুল আওসাতঃ ৩০০৫, আস-সাগীরঃ ১/১৬৮, নং ২৬৪, মুস্তাদরাক হাকিমঃ ১/৯১ নং ১০০, মুসনাদে শিহাবঃ ১১৬০, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৫/৬৯, ৩০৫, মারফু' সনদে আর সুন্নান দারমী, হাদীস নং ১৫ মুরসাল সহীহ সনদে]

 

আবার তিনি বলেছেন:-"‘‘আমি রহমতের মূর্তপ্রতীক হয়ে আল্লাহর পক্ষ হতে বিশ্বজগতের জন্য একটি উপহার।’’ (সহীহুল জামে ২৩৪৫ নং)

 

মহান আল্লাহ্ মুহাম্মদ (ﷺ) এর প্রশংসায় আরো বলেছেন:-"সূরা আল ইমরান (آل عمران) আয়াত: ১৫৯

 

فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ ٱللَّهِ لِنتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنتَ فَظًّا غَلِيظَ ٱلْقَلْبِ لَٱنفَضُّوا۟ مِنْ حَوْلِكَ فَٱعْفُ عَنْهُمْ وَٱسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِى ٱلْأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى ٱللَّهِ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلْمُتَوَكِّلِينَ

 

অর্থঃ অতএব আল্লাহর অনুগ্রহ এই যে, তুমি তাদের প্রতি কোমল চিত্ত; এবং তুমি যদি কর্কশভাষী, কঠোর হৃদয় হতে তাহলে নিশ্চয়ই তারা তোমার সংসর্গ হতে অন্তর্হিত হত। অতএব তুমি তাদেরকে ক্ষমা কর ও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং কার্য সম্বন্ধে তাদের সাথে পরামর্শ কর; অতঃপর তুমি যখন সংকল্প কর তখন আল্লাহর প্রতি নির্ভর কর; এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর উপর ভরসাকারীগণকে ভালবাসেন।" [অনুবাদক: মুজিবুর রহমান]

 

উক্ত আয়াতের তাফসীর পড়তে ক্লিক করুন:

https://www.hadithbd.com/quran/link/?id=452