দাসপ্রথা নিয়ে প্রাচীনকাল থেকেই চলছে বিতর্ক । এই সামাজিক ব্যাধি নিয়ে বিতর্কের কূল-কিনারা পাওয়া বেশ মুশকিল। তবে পূর্বের প্রাচ্যবিদ আর বর্তমানে খ্রিস্টান মিশনারী, নাস্তিক-মুক্তমনা, আর কমিউনিস্টদের ইসলামকে আঘাত করার অন্যতম এক হাতিয়ার হলো দাসপ্রথা ও ইসলামের সম্পর্ক।
তারা তাদের কথার মাধ্যমে সন্দেহের বীজ বুনে দিতে চায় যাতে ইসলাম সম্পর্কে সন্দিহান করা যায়। এর ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছে প্রাচ্যবিদদের (Orientalist) দ্বারা যারা রাসুলুল্লাহর(ﷺ) ও ইসলামী ব্যাক্তিত্বদের জীবনী ও ইতিহাস লেখার নামে তাঁদের বিরুদ্ধে অতীব সুকৌশলে বিষ ঢুকিয়ে দিয়েছে ।
J.J. Pool, William Muir ও তাদের সমমনা এসব কুখ্যাতদের নাম এইক্ষেত্রে অগ্রগন্য। তাদের যোগ্য উত্তরসূরী খ্রিস্টান মিশনারী আর নাস্তিক-মুক্তমনা এবং সামন্তবাদী কমিউনিস্ট, যাদের ইসলামকে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে আঘাত করার জন্যে খুব বিখ্যাত চাল হলো ‘ইসলামে দাসপ্রথা’। এদের অভিযোগ গুলোর জবাব দেয়ার পূর্বে দাসপ্রথার ইতিহাসটা অতি সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক।
প্রাচীন রোম আর গ্রীসে তৎকালীন প্রচলিত দাস প্রথার জঘন্যতম পাশবিকতার বর্ণনা দেওয়া আসলেই কঠিন। তারা সারাবছরই ধন-সম্পদের লোভে যুদ্ধে লেগে থাকতো, আর যুদ্ধে জয়ী হলে নারী-পুরুষ সবাইকে দাস বানিয়ে পশুর মতো খাটাতো আর নারীদেরকে পন্যের মতো ব্যবহার করা হতো । তাদের জীবনের অন্যতম অনুষঙ্গ ছিলো দাসী নারীদের নিয়ে যথেচ্ছা ব্যবহার।
দাসরা তাদের প্রভুর উপরে সামগ্রিকভাবে নির্ভর করত পিতার মতোই । এমনকি কোনো কোনো প্রভু তাদের দাসদের নিজেদের বাস্তবিক সন্তান বলেই পরিচয় দিত যাকে গ্রীক ভাষায় পাই আর ল্যাটিন ভাষায় পুয়ের বলা হতো [১] । দাসদের সাক্ষ্য গ্রহন ও করা হতো না। সাক্ষ্য-প্রমান সংগ্রহ করার জন্য তাদের উপর ভয়াবহ অত্যাচার নিপীড়ন ও চলত। তাদেরকে কখনো কখনো ছেড়ে দেওয়া হতো হিংস্র মাছ ভর্তি চৌবাচ্চায় সামান্য কাচের দামী পানপাত্র ভেঙ্গে ফেলার অপরাধে [৩] । কখনো কখনো দাসদের বা যুদ্ধবন্দীদেরকে রোমান দর্শকদেরকে আনন্দ দানের জন্য ভয়ানক হিংস্র প্রাণির সাথে বা মারাত্মক অপরাধীদের সাথে লড়তে বাধ্য করা হতো যাদেরকে গ্ল্যাডিয়েটর বলা হতো [৩] । দুর্ভিক্ষের দিনে গ্ল্যাডিয়েটরদের নগর থেকে বিতাড়িত করা হতো খাবার বাচানোর জন্যে। এককথায় দাসদের কোনো প্রকার মানবিক অধিকার বলতে কিছু ছিলো না। তাদের উপর অমানবিক ও পাশবিক অত্যাচারের ফিরিস্তি অনেক বড় যা বর্ণনা করা এখানে উদ্দেশ্য নয়।
মূল আলোচনায় প্রবেশ করা যাক। ইসলাম কেন দাসপ্রথাকে সমর্থন করে বা এই ধরনের হাজারো প্রশ্নের আগে চলুন একটু ঘুরে আসি ইসলামের প্রাথমিক যুগে। সেই সময়ে দাসপ্রথার কী অবস্থা ছিলো???
সেই সময়ে কয়েক উপায়ে দাস বানানো যেত:
(১) ঋণগ্রস্থ ব্যক্তি যদি সঠিক সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হত তাহলে তাকে দাস বানানো হতো;
(২) অভাবের তাড়নায় বাবা মা সন্তানদের ভরনপোষনের জন্য ধনীদের কাছে দিলে ক্রয়কারীরা তাকে দাস করে রাখত নিজেদের কাছে;
(৩) যেহেতু অবকাঠামোগত তেমন সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান ছিলো না তাই অর্থনৈতিক কারনে সমাজের অনগ্রসর ব্যক্তিরা নিজেদেরকে সমাজের অর্থনৈতিক দিক থেকে অগ্রসর ব্যক্তিদের পৃষ্ঠপোষকতায় নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে দাস হয়ে যেত;
(৪) ছিনতাই বা অপহরনের মাধ্যমে কাউকে বন্দী করে দাস বানানো;
(৫) অভিজাত শ্রেণির লোকদের সাথে অসদ্ব্যবহার করার জন্যে কাউকে দাস বানানো;
(৬) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারন যুদ্ধ-বিগ্রহ। আরবে গোত্রভিত্তিক যুদ্ধ সবসময় লেগেই থাকত। এই সময়ে যুদ্ধের কারনে বিজিত জাতির নারী-পুরুষকে অনিবার্যভাবে দাস হয়ে যেতে হতো। মূলত যুদ্ধই প্রাচীনকাল থেকে দাস হওয়ার মূল কারন বলে বিবেচিত হয়ে থাকে হোক তা গ্রীক, রোমান, আরবীয় বা ভারতীয় সমাজ।
ইসলামের প্রাথমিক যুগে দাস-দাসী রাখা বা থাকা অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার ছিলো বলা যেতে পারে সেই সময়কার সভ্যতার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলো । এটি এমন এক ব্যাপার ছিলো যা কেউই অপছন্দ করতো না বা একে পরিবর্তনের চিন্তাও করত না। অর্থাৎ সেই সময়ে তা হয়ে পড়েছিলো একেবারে অস্থি-মজ্জাগত বিষয় যাকে একেবারে উচ্ছেদ করা সম্ভব ছিলো না।
অনেকে অভিযোগ করেন যে কেন ইসলাম দাসপ্রথাকে একেবারে গোড়া থেকেই উচ্ছেদ করে দেয়নি যেখানে মদ খাওয়াকে ধীরে ধীরে হারাম করা হয়েছে দাসপ্রথাকে কেন একেবারে হারাম করে দেওয়া হয়নি???
এর জবাবে বলা যেতে পারে , সেই সময়ে আরবের লোকেরা ছিলো মদের জন্য পাগল প্রায়। তবে মদ যতটা তাদের সংস্কৃতির অংশ ছিলো তার তুলনায় দাস ব্যবস্থার প্রভাব ও প্রসার ছিলো আরো অনেক বেশি সূদুরপ্রসারী । অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ইত্যাদি নানাদিক থেকেই সে সময়ে দাস প্রথার প্রভাব বিদ্যমান ছিলো তাই ইসলাম দাসব্যাস্থাকে একেবারে উৎখাত না করে বরং কিছু অভূতপূর্ব বাস্তবমুখী কায়দায় এই সমস্যা সমাধানের দ্বার উন্মুক্ত করে দেয় । কখনো দাসদের মুক্ত করার জন্য উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে, কখনো কখনো বিশেষ ক্ষেত্রে দাস মুক্তি আবশ্যক করে দেয়া হয়েছে । একই সাথে দাস বানানের(Enslaving) সকল পথকে বন্ধ করে দিয়ে শুধুমাত্র একটি উপায়কে প্রয়োজনের তাগিদে উন্মুক্ত রখা হয়েছ , যা পরে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ । তার আগে ইসলাম কি কি উপায়ে দাসমুক্তির ব্যবস্থা করেছে তা আলোচনা করা হবে।
ইসলামে দাসমুক্তির উপায়:
ইসলাম এমন একটি জীবনব্যবস্থা যা বিশ্বজগতের এক এবং একচ্ছত্র অধিপতি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার নিকট নিজেকে আত্মসমর্পণ করা।
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
وَحَدَّثَنِي زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي، هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لاَ يَقُولَنَّ أَحَدُكُمْ عَبْدِي . فَكُلُّكُمْ عَبِيدُ اللَّهِ وَلَكِنْ لِيَقُلْ فَتَاىَ . وَلاَ يَقُلِ الْعَبْدُ رَبِّي . وَلَكِنْ لِيَقُلْ سَيِّدِي
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অবশ্যই তোমাদের কেউ যেন ‘আমার দাস’ না বলে। কারণ, তোমাদের প্রত্যেকেই আল্লাহর দাস ও বান্দা। সে বলবে ‘আমার অধিনস্ত’। আর কোন ‘আব্দ যেন তার মনিবকে আমার ‘রব্ব’ না বলে বরং বলবে আমার সাইয়্যিদ (অভিভাবক বা নেতা)।
গ্রন্থ: সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন হাদীস নম্বর: ৫৬৭৯, ইসলামিক সেন্টার হাদীস নম্বর: ৫৭১০)
প্রতিটি মানুষই আল্লাহ'র দাস বা গোলাম যিনি তার দাসের স্রষ্টা, পালনকর্তা। যিনি তার দাসকে ভালোবাসেন নিজের গর্ভেধারন করা মায়ের থেকেও বেশি । ইসলামের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হলো প্রতিটি মানুষ হোক সে ধনী বা গরীব, বড় বা ছোট, স্বাধীন বা দাস যে পর্যায়েরই হোক না কেন সকলকে সকল প্রকার মানসিক দাসত্ব থেকে মুক্ত করে এক আল্লাহর দাসত্বমনা করতে পারা। সকল প্রকার গোলামির পিঞ্জর থেকে বের করে এনে তাওহীদ ও ইসলামের ছায়াতলে এনে আল্লাহর দাস হিসেবে নিজেকে চিনতে পারাই দাসত্ব থেকে মুক্তির প্রথম উপায়। হয়তো শারীরিক দাসত্ব থেকে মুক্তির জন্য আব্রাহাম লিংকন চুক্তি করেছিলো তবে সত্যিকারের দাসত্ব থেকে মুক্তি মিলেনি। তবে ইসলাম প্রথমেই যেই জিনিসের শিক্ষা দিলো সকলেই আল্লাহর বান্দা কারো উপর কারো কোনো প্রকার শ্রেষ্ঠত্ব নেই শুধুমাত্র ঈমান ও তাকওয়া ছাড়া [সুরা হুজুরাত ৪৯:১৩, সুরা নিসা ৪:১ ]।
এই এক শিক্ষায় মানুষকে এতদিনের দাসত্বের শক্ত খাচা থেকে মুক্তি দিলো। তাই তো নিগ্রো সম্মানিত সাহাবী বিলাল ইবন রাবাহ (রা:) ও ইসলামের তাওহীদের দাওয়াত পেয়ে হয়ে গেলেন মুক্ত । পৃথিবীর কোনো শক্তিই তাকে আর আল্লাহর দাস হতে বাধা দিতে পারেনি। মরুভূমির উত্তপ্ত বালুতে চিত করে শুইয়ে বুকে পাথর রেখে দিলেও কখনো আহাদ!! আহাদ!! বলতে ভুল হয়নি কেননা ইসলাম তাকে সত্যিকারে মুক্তির স্বাদ আস্বাদন করিয়েছে এখন আর তিনি আল্লাহ ছাড়া কারো গোলাম নন। এই বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ কেননা ভেজাল মুক্তমনারা কখনোই সত্যিকার মুক্তমনের স্বাদ আস্বাদন করতে সক্ষম নয়।
তবে ইসলাম শুধুমাত্র এতটুকু করেই ক্ষান্ত হয়নি। ইসলাম দাসদের মুক্ত করার ব্যাপারে কিছু যুগান্তকারী পদ্ধতিও বাতলে দিয়েছেন।
সেগুলো নিম্নরুপঃ
(১) ইতক বা স্বেচ্ছায় মুক্তিদান;
(২) গুনাহের কাফফারা;
(৩) মুকাতাবাহ
(৪) সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা
ইতক বা স্বেচ্ছায় মুক্তিদান:
কোন মনিব যদি চান সরাসরি স্বেচ্ছায় দাস-দাসীকে মুক্তি দিতে পারেন। কুরআন ও সুন্নাহয় এর অনেক ফযীলতের কথা বর্নিত হয়েছে। আল্লাহ সৎকর্মের উল্লেখের সময় মুক্তিকামী ক্রীতদাসের জন্য ব্যয় করাকে উল্লেখ করেছেন (সূরা বাকারাহ ২:১৭৬)।
এছাড়াও আল্লাহ দাস মুক্তিকে অন্যতম সৎ কর্ম বলেছেন (সূরা বালাদ ৯০:১২-১৩) ।
হাদীসে এসেছে,
باب مَا جَاءَ فِي الْعِتْقِ وَفَضْلِهِ وَقَوْلِهِ تَعَالَى: {فَكُّ رَقَبَةٍ أَوْ إِطْعَامٌ فِي يَوْمٍ ذِي مَسْغَبَةٍ يَتِيمًا ذَا مَقْرَبَةٍ} حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ يُونُسَ، حَدَّثَنَا عَاصِمُ بْنُ مُحَمَّدٍ، قَالَ حَدَّثَنِي وَاقِدُ بْنُ مُحَمَّدٍ، قَالَ حَدَّثَنِي سَعِيدٌ ابْنُ مَرْجَانَةَ، صَاحِبُ عَلِيِّ بْنِ حُسَيْنٍ قَالَ لِي أَبُو هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " أَيُّمَا رَجُلٍ أَعْتَقَ امْرَأً مُسْلِمًا اسْتَنْقَذَ اللَّهُ بِكُلِّ عُضْوٍ مِنْهُ عُضْوًا مِنْهُ مِنَ النَّارِ ". قَالَ سَعِيدٌ ابْنُ مَرْجَانَةَ فَانْطَلَقْتُ إِلَى عَلِيِّ بْنِ حُسَيْنٍ فَعَمَدَ عَلِيُّ بْنُ حُسَيْنٍ ـ رضى الله عنهما ـ إِلَى عَبْدٍ لَهُ قَدْ أَعْطَاهُ بِهِ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ جَعْفَرٍ عَشَرَةَ آلاَفِ دِرْهَمٍ ـ أَوْ أَلْفَ دِينَارٍ ـ
فَأَعْتَقَهُ
আহমদ ইবনু ইউনুস (রহ:) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী(ﷺ) বলেছেন, কেউ কোন মুসলিম গোলাম আযাদ করলে আল্লাহ সেই গোলামের প্রত্যেক অঙ্গের বিনিময়ে তার একেকটি অঙ্গ (জাহান্নামের) আগুন থেকে মুক্ত করবেন। সাঈদ ইবনু মারজানা (রা:) বলেন, এ হাদীসটি আমি আলী ইবনু হুসায়নের খিদমতে পেশ করলাম। তখন আলী ইবনু হুসায়ন (রা:) তার এক গোলামের কাছে উঠে গেলেন যার বিনিময়ে আবদুল্লাহ ইবনু জা’ফার (রা:) তাকে দশ হাজার দিরহাম কিংবা এক হাজার দ্বীনার দিতে চেয়েছিলেন এবং তিনি তাকে আযাদ করে দিলেন।
গ্রন্থ: সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়: ৪১/ গোলাম আযাদ করা (كتاب العتق), হাদিস নম্বর: ২৩৫১
এছাড়াও স্বেচ্ছায় দাসমুক্তি বা ইতকের অনেক ফযীলত রয়েছে। এই কারনেই রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ও তার সাহাবারা এই ক্ষেত্রে অগ্রগন্য হয়ে অসংখ্য দাসকে মুক্তি দিয়েছিলেন। রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনেক দাসকে ইতক দিয়েছিলেন। যেমন আবু বাকর(রা:), যিনি বেশ ধনী ছিলেন তিনিও দাসমুক্তির জন্যে অনেক অর্থ ব্যয় করেছেন, অনান্য সাহাবী (রা:) অসংখ্য দাস মুক্ত করেছেন । ইতিহাসে এমন নজীর দ্বিতীয়টি নেই যে স্বেচ্ছায় কেউ এতো পরিমানে দাস মুক্ত করেছে। এর একমাত্র কারন আল্লাহর আনুগত্য ও তার জান্নাত লাভের খালিস ইচ্ছা আর কিছুই নয়।
গুনাহের কাফফারাহ:
ইসলামে কিছু গুনাহের জন্য দাসমুক্তির ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন:
(ক) কোনো মুমিনকে ভুলবশত হত্যা করে ফেললে (সূরা নিসা ৪:৯২)
(খ) ইচ্ছাকৃত ভাবে আল্লাহর নামে কৃত শপথ ভঙ্গ করে ফেলা (সূরা মায়িদাহ ৫ঃ৮৯)
(গ) যিহারের কাফফারা হিসেবে ।[৪]
(ঘ) রোযার সময় ভুলবশত স্ত্রী মিলন করে ফেললে [৫]
মুকাতাবাহ বা লিখিত চুক্তি:
মুকাতাবাহ বলতে এমন চুক্তিকে বোঝায় যার দ্বারা দাস নিজেই নির্দিষ্ট অর্থ পরিশোধের শর্তে তার মুক্তির জন্য তার মনিবের সাথে এমন চুক্তিতে আবদ্ধ হয় যাতে মনিব ও দাস উভয়েই ঐক্যমতে পৌছায়। শায়খ মুহাম্মাদ ইবন ইবরাহীম আত তুওয়াইজিরী(রাহি) বলেন, “এটি হচ্ছে দাস দাসীর পক্ষ থেকে মনিবকে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে আজাদ করার নাম”[৬]
আল্লাহ বলেন, “তোমাদের অধিকারভুক্ত যারা চুক্তিবদ্ধ হতে চায় তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হও যদি তাতে কল্যান থাকে” (সূরা নূর ২৮:৩২) ইসলাম মুকাতাবাহকে সহজ করে দিয়েছে ।
যেহেতু,
১. যাকাতের একটি খাত ইসলাম নির্ধারন করেছে দাসমুক্তি। (সূরা তাওবা ৯ঃ৬০);
২. গোলামের জন্য এই ছাড় আছে যে সে মনিবকে কিস্তিতে অর্থ পরিশোধ করবে;[৭]
৩. মনিবের কর্তব্য হলো দাসকে অর্থ পরিশোধের ব্যাপারে সহায়তা করা;
৪. দাস চুক্তি মোতাবেক অর্থ পরিশোধ করে দিলে সঙ্গে সঙ্গে সে মুক্তি লাভ করবে;
ইসলামী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়:
ইসলামী সরকার যাকাতের খাত থেকে দাসমুক্তিতে ব্যবহার করতে পারে যেমনটা পূর্বে বর্ণনা হয়েছে। আর মুকাতাবাহ চুক্তি সম্পাদন করার পরে দাসের এই নিয়ে মোটেও চিন্তা করা লাগত না যে তার মনিব এই কারনে তার উপরে অত্যাচার করতে পারে কেননা ইসলামী সরকার তখন তার পৃষ্ঠপোষক হয়ে যান। এমনকি সরকার চাইলে বাড়তি অর্থ দিয়ে দাস ক্রয় করে তা মুক্ত করে দিতে পারে।
ইসলাম দাস বানানোর প্রায় সকল রাস্তাকে(একটি বাদে) বন্ধ করে দিলেও মুক্তির অভিনব পদ্ধতি দিয়েছে যা সম্পূর্ণ বাস্তবভিত্তিক। এমন সব উপায়ের সন্ধান দিয়েছে যার ধারে কাছে কোনো তথাকথিত আধুনিক রাষ্ট্র ভাবতেও পারেনি। যেখানে কমুনিস্ট আর সোশালিস্টরা সবকিছুকেই অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে ভাবতে চায় সেখানে ইসলাম দাস ও স্বাধীন সকলকেই সত্যিকার মানসিক ও বাহ্যিক অর্থেও মুক্তির পথের দিশা দেয়। যেখানে আমেরিকার মতো রাষ্ট্র একের পর এক দাস বিদ্রোহে জর্জরিত হয়ে দাস মুক্তির পথ অন্বেষণ করে তখন ইসলাম কালোত্তীর্ণ সমাধান ১৪০০ বছর আগেই দিয়ে গেছে।
[চলবে ইনশাআল্লাহ] ……………………………………………
তথ্যসূত্র:
[১] রেদওয়ানুর রহমান, দাস বিদ্রোহ ও স্পার্টাকাস(২০১৫), পৃ-১৪
[২]প্রাপ্তগু, পৃ-১৬ ।
[৩] http://www.ancient.eu/gladiator/ ।
[৪] যিহার হলো স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে বলা যে তুমি আমার মায়ের পিঠের মতো হারাম যদি স্বামী তার স্ত্রীকে এই কথা বলে তবে তাকে তার সাথে যৌনসম্পর্ক করা বৈধ নয় যতক্ষণ না সে দাসকে মুক্ত করে বা দুই মাস ধরে উপবাস করে বা ৬০ জন গরীব লোককে খাওয়ানো হয় ।[ সূরা আল মুজাদিলা ৫৮:১-৪]
[৫] সহীহ বুখারী (ইসলামিট ফাউন্ডেশন) অধ্যায়ঃ ২৩/ সাওম বা রোজা (كتاب الصوم) হাদিস নম্বরঃ ১৮১৩ ।
[৬] কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ইসলামী ফিকহ, ২/৪৪৬ ।
[৭] গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ) অধ্যায়ঃ ৪২/ মুকাতাব (كتاب المكاتب) হাদিস নম্বরঃ ২৩৯৩ ।
লেখক: হোসাইন শাকিল ।