(ড্যান গিবসন ও নেবুদার মাঝে কথোপকথন)
ড্যান গিবসন : মুসলিমদের কিবলা বা নামাজ পড়ার দিক মক্কা নয় বরং জর্ডানের পেট্রা নগরী।আমার ডকুমেন্টারিতে তার প্রমাণ দেখিয়েছি।মুসলিমরা সম্পূর্ণ ভুল দিকে মুখ করে এতদিন নামাজ পড়ে আসছে,হজ্ব করে আসছে।
নেবুদা : এ দাবি নতুন নয়।অতীতে খ্রিস্টানরাও আমাদের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াতে দাবি করে বেড়াতো যে মুসলিমদের আসল কিবলা হলো জেরুজালেম। মক্কা নয়। এখন তারাই আবার আপনাকে দিয়ে পরোক্ষভাবে দাবি করিয়েছে যে আসল কিবলা পেট্রা।আপনার নির্মিত ডকুমেন্টারিটি অনেক খ্রিস্টান মিশনারী,পাদ্রী ও ডিবেটর ফলাওভাবে প্রচার করে বেড়াচ্ছে। তাদের এই অতি উৎসাহ এটারই ইঙ্গিত দেয়।
ড্যান গিবসন : কে কাকে দিয়ে দাবি করাচ্ছে সেটা মূল বিষয় নয়,মূল বিষয় হলো পেট্রাই মুসলিমদের আসল কিবলা এবং এর স্বপক্ষে অনেক প্রমাণও রয়েছে। প্রমাণই আসল।
নেবুদা : আপনি কোনো ডক্টরেট ডিগ্রীধারী স্কলার নন।সুতরাং,আপনার রিসার্চ কতটা গ্রহণযোগ্য,তা পাবলিক ভালোই বোঝে।আপনার ডকুমেন্টারির খন্ডন অনেক অমুসলিম ডক্টরেট ডিগ্রীধারী স্কলাররাই করেছেন।যেমনঃ ড. ডেভিড এ কিং।মুসলিমদের কষ্ট করে করতে হয় নি।
আপনি ডকুমেন্টারিতে উল্লেখ করেছেন, ‘মসজিদ’ (مسجد) মানে জমায়েতস্থল। মসজিদের মানে নাকি ইসলামপূর্ব যুগে ‘জমায়েত’ বা ‘সমাবেশস্থল’ ছিল, ইসলাম-পরবর্তী যুগে নাকি এর মানে হয়েছে ‘ইবাদতখানা’! আমার প্রশ্ন হচ্ছে—এমন উদ্ভট তথ্য কোত্থেকে পেয়েছেন? ‘سَجَدَ’ ক্রিয়াপদের বিশেষ্য ‘মসজিদ’ (مسجد) এর শাব্দিক অর্থ সিজদা করার স্থান।ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় সলাত (নামাজ) আদায় করার স্থানকে মসজিদ বলে। শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালিহ আল উসাইমিন(র.) তাঁর মসজিদ ও নামাজঘর-সংক্রান্ত এক ফতোয়ায় বলেছেন : “সুনির্দিষ্ট অর্থে মসজিদ হচ্ছে একটি স্থান যেদিকে স্থায়ীভাবে সলাতের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে এবং স্থায়ীভাবে বণ্টন করা হয়েছে, হোক সেটি পাথর, কাদা বা সিমেন্টে বানানো অথবা তা দ্বারা না বানানো।..." অর্থাৎ মসজিদ হওয়ার জন্য শুধু ভূমি হলেও চলবে।দালান থাকা জরুরি নয়।
মসজিদ মানে মোটেও ‘সমাবেশস্থল’ না। মসজিদগুলোতে মানুষের সমাবেশ দেখে আন্দাজের ভিত্তিতে এমন ‘বিশেষজ্ঞ’ মত দিয়েছেন আপনি।মসজিদুল হারামের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলতে গিয়ে মসজিদ শব্দের অর্থই ঠিকভাবে বলতে পারলেন না।কাজেই এমন ‘বিশেষজ্ঞ’ থেকে জ্ঞান নেবার আগে ২ বার ভাবা উচিত।মুসলিমদের কিবলা নিঃসন্দেহে মক্কা।এ নিয়ে সংশয়ের বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই।
ড্যান গিবসন : ডেভিড কিং এর কথা বাদ দাও।তোমার আর আমার মাঝে আলোচনা হোক।মুসলিমদের কিবলা বা নামাজ পড়ার দিক মক্কা নয় বরং জর্ডানের পেট্রা নগরী।
নেবুদা : পেট্রাই যদি মুসলিমদের আসল কিবলা হতো,তাহলে তো ইসলামিক শাস্ত্রগুলো যেমন- কুরআন,হাদিস,সীরাত,তাফসির,ফিকাহ ইত্যাদিতে অন্তত পেট্রার কোনো কথা থাকতো।কিন্তু কোথাও পেট্রার বিন্দুমাত্র নামগন্ধও নেই!সব জায়গায়ই শুধু মক্কা লেখা।পেট্রা মুসলিমদের কিবলা,অথচ ইসলামিক শাস্ত্রেই পেট্রা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত?ব্যাপারটা হাস্যকর হয়ে গেলো না?
ড্যান গিবসন : পবিত্র নগরীর আসল নাম ছিলো বাক্কা।আব্বাসী খিলাফতকালে আল কুরআন থেকে ‘বাক্কার’ নাম মুছে দেওয়া হয়েছে এবং ‘বাক্কা’কে ‘মাক্কা’ করে দেওয়া হয়েছে।আর হাদিস, তাফসির,সীরাত,ফিকাহ সবগুলোই আব্বাসীদের যুগের।তাই এগুলোতেও পেট্রা বা বাক্কার নাম বদলে মাক্কা নাম জুড়ে দেয়া হয়েছে।বাক্কা অর্থ কান্না করা (Weeping)।পেট্রায় অনেকগুলো ভূমিকম্প হয়েছে যার ফলে জানমালের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।তাই পেট্রাকে বাক্কা নামে ডাকা হতো।
নেবুদা : তাহলে কুরআন ৩:৯৬ এ বাক্কা নামটা রয়ে গেলো কি করে?সেটা কেনো মুছে দেওয়া হলো না?প্রকৃতপক্ষে, একমাত্র অজমূর্খ বাদে কেউই এমন উদ্ভট অভিযোগ তুলতে পারে না যে কুরআন বিকৃত করেছে আব্বাসীরা।ইসলামের একদম প্রাথমিক যুগ থেকেই আল কুরআন মূলত একটি মুখস্থ কিতাব। মুখস্থের দ্বারা এটি সংরক্ষণ করা হয়েছে। সাহাবায়ে কিরাম(রা.) গণের একটা বিশাল অংশ ছিলেন হাফেজ, তাঁদের সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্থ ছিল। সাহাবীদের (রা.) যুগ থেকেই এই সংস্কৃতি চলে আসছে, আজও পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ কুরআনের হাফেজ আছেন। কোনোকালে যদি কেউ কুরআনের ২-১টি শব্দ বদলে দেয়, তাহলে সহজেই কুরআনের হাফেজরা তা ধরে ফেলবেন। কখনোই লিখিত কপিতে একটি-দুটি শব্দ পরিবর্তন করে আল কুরআন বিকৃত করা সম্ভব না। হোক তা আব্বাসী খিলাফতকালে, হোক তা একবিংশ শতাব্দীতে। বাক্কা হচ্ছে মাক্কারই প্রাচীন নাম।আরবি ভাষার সবচেয়ে বড় ডিকশনারি লিসান আল আরবের রচয়িতা ইবনে মুনজিরের মতে বাক্কা অর্থ জনসমাগম।মাক্কায় হজ্বের কারণে জনসমাগম ঘটতো বিধায় এ অঞ্চলকে বাক্কা বলা হতো।কান্না করার আরবি হলো "ইয়াবকি (يَبْكِي)"। বাক্কা নয়।আর আপনি নিজের বইতেই লিখেছেন :
On 9 July 551, a devastating earthquake reduced most of what remained of Petra to heaps of rubble. It was never rebuilt, and soon the bishops departed and all records came to an end. This earthquake also destroyed many of the towns in the Negev. Many of these were never rebuilt." Gibson D. (2002), pp. 240-241.[1]
অর্থাৎ,"৯ জুলাই ৫৫১ খ্রিষ্টাব্দে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে পেট্রা নগরী ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় এবং একে আর নতুন করে নির্মাণ করা হয়নি। বিশপরা নগর ত্যাগ করেন এবং সকল নথিপত্র শেষ হয়ে যায়।" রাসুলুল্লাহর(ﷺ) জন্ম হয় ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে।আপনার নিজেরই ওয়েবসাইট ও বইয়ের তথ্য অনুযায়ী রাসুলুল্লাহর(ﷺ) জন্মের মাত্র ১৯ বছর আগে পেট্রা নগরী ধ্বংস প্রাপ্ত হয় এবং সে অবস্থাতেই থেকে যায়। এ থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হলো রাসুলুল্লাহ(ﷺ) কোনো ক্রমেই পেট্রায় জন্মগ্রহণ করেননি। কেননা সেটা তো তখন বিধ্বস্ত ও পরিত্যাক্ত এক নগরী ছিল।এছাড়াও রাসুলুল্লাহর(ﷺ) জন্মস্থান কোনো খ্রিষ্টান অধ্যুষিত অঞ্চল ছিল না।আপনি নিজেই উল্লেখ করেছেন যে, পেট্রা নগরী থেকে খ্রিষ্টান বিশপরা চলে গিয়েছিলো। আব্বাসী খেলাফতেরও আগেকার কুরআনের পান্ডুলিপি ও স্ক্রলগুলোতে কুরআন ৪৮:২৪ এ "মাক্কা" শব্দটাই আছে।বাক্কা নয়।কুরআনের যেসকল প্রাচীন স্ক্রলে মক্কার নাম পাওয়া গেছে সেগুলো হলো:-
★ Codex Arabe 331, folio 40 v, radiocarbon dated between 652 and 765 CE
★ Codex Is. 1615 I, folio 47v, radiocarbon dated to 591-643 CE.
★ Codex Ṣanʿāʾ DAM 01–29.1, folio 29a, radiocarbon dated between 633 and 665 CE.
কুরআনের উক্ত প্রাচীন কোডেক্সসমূহ মক্কার পক্ষে অনেক বড় ঐতিহাসিক বা প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ। আব্বাসী খেলাফতের আগেও যে মক্কা ছিলো,তা এর দ্বারা প্রমাণিত হয়। এই একটি প্রমাণই আপনার পুরো দাবিকে নস্যাৎ করতে যথেষ্ট।
আর হাদিস,তাফসির,সীরাত,ফিকাহর সবগুলোই আব্বাসী আমলে লিখিত নয়। হাদিসের কিতাব মুয়াত্তা ইমাম মালিক ও হানাফি মাজহাবের কিতাবগুলো আব্বাসী আমলেরও আগেকার।তাছাড়াও আব্বাসী আমলের হাদিসগুলোর চেইন অফ ন্যারেশন বা সনদ সরাসরি রাসুল(স.) অবধি যায়।কেউ হুট করে কোনো কথা বলেনি। হাদিস সংকলক ইমামগণের সাথে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর খুব একটা ভালো সম্পর্ক ছিলো না। ব্যক্তিগত আক্রোশের জেরে তো বুখারার বাদশাহ ইমাম বুখারীকে দেশত্যাগে বাধ্য পর্যন্ত করেছিলেন।তাছাড়া হাদিস সংকলকগণের চরিত্রে কোনো কালো দাগ ছিলো না।এটা তখনকার সমাজেও স্বীকৃত ছিলো।তাই রাজা-বাদশাহর দালালি করে হাদিসের ইমামগণের উপর "বাক্কা" বা পেট্রা পালটে মক্কার নাম জুড়ে দেয়ার অভিযোগ নিঃসন্দেহে মিথ্যা। তাই হাদিস নিয়ে প্রশ্ন তোলা নিতান্তই হাস্যকর।আব্বাসী আমলের আগেকার সীরাতগ্রন্থও রয়েছে--সীরাতে রাসুলুল্লাহ,ইবনে ইসহাক(রহ) কতৃক রচিত।সুতরাং,কুরআন,হাদিস,সীরাত,তাফসির,ফিকাহের মাধ্যমে বাক্কা পালটে মাক্কা করার অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন।আল্লাহ যে আয়াতে বাক্কা শব্দ অবতীর্ণ করেছেন,সেখানে বাক্কাই আছে।যে আয়াতে মাক্কা শব্দ অবতীর্ণ করেছেন, সেখানে মাক্কাই আছে। পেট্রার নাম কোনোকালে বাক্কা ছিলো এর পক্ষে বিন্দুমাত্র কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই।পেট্রার নাম বাক্কা ছিলো এটা কেবল আপনার ব্যক্তিগত ধারণা।তাছাড়া খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেলও পেট্রা ও বাক্কাকে আলাদা করেছে।বাক্কা দ্বারা এমন একটি অঞ্চলকে বোঝানো হয়েছে বাইবেলে,যেখানে তীর্থযাত্রা হতো দাউদের আমলে।এটি নিশ্চিতভাবেই মাক্কা।কেননা মক্কা বাদে পেট্রায় কিংবা পৃথিবীর অন্য কোনো জায়গায় দাউদের আমলে একত্ববাদী জাতির কোনোপ্রকার তীর্থযাত্রা হতো না।
ড্যান গিবসন : কিন্তু প্রাচীনকালের কোনো মানচিত্রেই মক্কার উল্লেখ নেই। বর্তমান মক্কা যদি প্রাচীনকালে এতটাই বিখ্যাত হয়ে থাকতো,তাহলে প্রাচীন কোনো মানচিত্রে মক্কার উল্লেখ নেই কেনো?মক্কা সম্পর্কে পার্শ্ববর্তী দেশের লোকজন কিছু জানতো না কেনো?এটাই প্রমাণ করে প্রাচীনকালে বা মুহাম্মাদের যুগেও মক্কার কোনো অস্তিত্ব ছিলো না।ওটা ছিলো জনমানবহীন এক পাথুরে মরুভূমি।তাই মুহাম্মাদ অন্য কোথাও জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মক্কায় নয়।
নেবুদা : মক্কা মূলত একটা শহর ছিলো।কোনো দেশ নয়।শহরের নাম সাধারণত উল্লেখ থাকে না,যেমন বেশ কিছু প্রাচীন মানচিত্রে জেরুজালেমের নাম উল্লেখ নেই,জেরুজালেম এত প্রাচীন নগরী হওয়া সত্ত্বেও।গ্রীক ও রোমান ভূগোলবিদগণ ওই অঞ্চলকে ফিলিস্তিন বা জুডিয়া নামে অভিহিত করে গেছেন।
মক্কার প্রাচীন নাম ছিল ‘বাক্কা’ এবং ইহুদি-খ্রিষ্টানদের গ্রন্থ থেকে শুরু করে বহু সূত্র দ্বারা ইসলাম-পূর্ব যুগ থেকেই মক্কার অস্তিত্ব প্রমাণ করা যায়।[2] মক্কা প্রাক-ইসলামিক যুগ থেকেই একটি বিখ্যাত অঞ্চল ছিলো।খ্রিষ্টপূর্ব যুগের স্বনামধন্য গ্রীক গণিতজ্ঞ ইরাটোস্থিনিস (276 BC-194 BC) স্বীয় মানচিত্রে মক্কা ভুখন্ডে "Minai" নামক জনপদের উল্লেখ করেছেন, [3] যা মূলত মক্কা অঞ্চলকে নিয়ে গঠিত "Ma'in" রাজত্বকেই নির্দেশ করে।এর থেকে বোঝা যায় শুধু মক্কা ভূখন্ডেই বিশাল এক জনপদ ছিলো যীশু খ্রিষ্টেরও জন্মের আগে থেকেই।গোটা আরবের কথা না হয় বাদই দিলাম।এছাড়া আরেকজন বিখ্যাত ভূগোলবিদ ও গণিতজ্ঞ ক্লাওডিয়াস টলেমি (100 AD-170 AD) স্বীয় মানচিত্রে মক্কাকে "মাকোরবা" নামে উল্লেখ করেছেন [4] এবং মক্কা ভূখন্ডে বিভিন্ন জনপদ দেখা যাচ্ছে।উপরোক্ত সবগুলো মানচিত্রই পৃথিবীর প্রাচীন মানচিত্রগুলোর তালিকায় রয়েছে এমনকি টপ ৫ প্রাচীন মানচিত্রের মধ্যেও রয়েছে অনেকগুলো।
আবার মুহাম্মাদ(স) এর সমসাময়িক যুগের একজন আর্মেনিয়ান দার্শনিক Anania Shirakatsi (610 AD - 685 AD) লিখেছেন :
"It (Arabia) has five small districts near Egypt,Tackastan, the Munuchiatis Gulf by the Red Sea, and Pharanitis, where the town of Pharan [is located], which I think the Arabs call Mecca."
অর্থ :- মিশর,তাকাস্তান,লোহিত সাগরের তীরে মুনুচিয়াটিস উপসাগর এবং পারাণাইটিস, যেখানে পারাণ শহর [অবস্থিত]।শহরটিকে আমি মনে করি আরবরা মক্কা বলে।এগুলোর নিকটে এটির (আরবের) পাঁচটি ছোট জেলা রয়েছে।.........[5]
আপনি এমনই এক 'বিশেষজ্ঞ' যে পৃথিবীর কোনো প্রাচীন মানচিত্রেই মক্কা খুঁজে পান নি।প্রাচীন গ্রীক ও রোমানদের অঙ্কিত মানচিত্রে মক্কার উল্লেখই প্রমাণ করে যে মক্কা একটি বিখ্যাত অঞ্চল ছিলো।ডকুমেন্টারিতে ১৫০০-১৮০০ সালের মধ্যে অঙ্কিত আধুনিক মানচিত্র দেখিয়ে আপনি দাবি করেছেন পৃথিবীর কোনো প্রাচীন মানচিত্রেই নাকি মক্কা নেই! অথচ সেই মানচিত্রগুলোতেও বিভিন্ন ভাষায় মক্কার নাম দেখা যায়।আপনার এহেন অসাধু কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে আর কলেবর বৃদ্ধি করলাম না।
ড্যান গিবসন : বুঝলাম।কিন্তু ইসলামিক ধর্মশাস্ত্রে মক্কার যে বিবরণ দেয়া হয়েছে,তা মক্কার সাথে মিলে না।বরং পেট্রার সাথে মিলে।কুরআন,হাদিস,সীরাতে বলা হয়েছে মক্কা হলো শস্য শ্যামলা একটি নগরী [6]।অথচ বর্তমান মক্কায় রুক্ষ পাথুরে পরিবেশ ছাড়া আর কিছুই নেই।আমি ও আমার টিম মক্কায় গিয়ে মাটি পরীক্ষা করে দেখেছি যে সেখানে প্রাচীনকালে গাছপালা ঘেরা নগরের কোনো অস্তিত্ব ছিলো না।সহিহ বুখারীতে দেখা যায় মুহাম্মাদের সাহাবি বন্দিদশায় আঙ্গুর পর্যন্ত খাচ্ছে ![7] মক্কায় কি আঙ্গুর হতো?
নেবুদা : বাহ! এতদিন যারা বলতো 'মোহাম্মদের আল্লাহ কেনো মরুভূমি ছাড়া অন্য কিছু চিনতো না?'এখন তারাই আবার বলছে মুহাম্মাদ(স) এর জন্মস্থান কোনো শস্য শ্যামলা স্থানে!!কুরআনের সেই আয়াতগুলোতে ঘাস,খেজুর,ডুমুর,যয়তুন,আঙ্গুর ইত্যাদির বিবরণ দেয়া হয়েছে দেখেই তারা এটা ভেবে বসে আছে যে রাসুল(স) এর জন্মস্থান কোনো শস্য শ্যামলা অঞ্চলে।আল্লাহ সারা বিশ্বের প্রভু।তিনি কখনো শস্য শ্যামলের বর্ণনা দিবেন,কখনো মরুভূমির বর্ণনা দিবেন,কখনো পাথুরে পাহাড়ের বর্ণনা দিবেন,কখনো সমুদ্রের বর্ণনা দিবেন,এটাই স্বাভাবিক।সিরাত গ্রন্থগুলোতে রাসুলুল্লাহর(ﷺ) যুগে মরুময় মক্কার অজস্র বিবরণ আছে।কুরআন হাদিসেও মরুভূমির অসংখ্য বর্ণনা আছে।এই সকল বিবরণকে পাশ কাটিয়ে ইসলামের পবিত্র নগরী ছিল গাছপালায় ভরা একটি শহর— এই দাবি নিতান্তই হাস্যকর।তাছাড়া মক্কার চেয়ে পেট্রা দুইগুণ বেশি মরুভূমি।মক্কার মাটি কালচে রঙের।আর পেট্রার মাটি এতটাই মরুভূমি, যে তা গাঢ় ধূসর বর্ণের।একদম ধুলোর মতো।মক্কায় কিছু প্রাকৃতিক জলাধার রয়েছে।জমজম কূপও ছিলো।তাছাড়া মক্কার পূর্বদিকের সীমান্তে অবস্থিত পাহাড়গুলো যথেষ্ট সবুজে পরিপূর্ণ। আপনি দাবি করেছেন যে,আপনি ও আপনার টিম মক্কায় গিয়ে মাটি পরীক্ষা করে দেখেছেন,এটা একটা ডাহা মিথ্যা কথা।মক্কায় অমুসলিম প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।তবুও ধরে নিলাম,মক্কায় কোনো গাছপালা ছিলো না।কিন্তু মক্কার পাশেই অবস্থিত তায়েফ।তায়েফ গাছপালায় ভরা একটি শস্য শ্যামলা অঞ্চল।মাক্কার খাদ্যের প্রধান যোগানদাতা ছিলো এই তায়েফ।তায়েফ থেকে মাক্কার দূরত্ব ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের দূরত্বের মতো খুবই ছোট।আর আঙ্গুর খাওয়ার সেই ঘটনায় খুবাইব(রা.) আঙুর খাচ্ছিলেন। এটা দেখিয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, মক্কায় নাকি আঙুর হয় না। এ থেকে নাকি প্রমাণ হয়, তিনি পেট্রায় ছিলেন! তার এই অপযুক্তির জবাবে যা বলব,মাক্কায় প্রধানত কোনো ফলেরই চাষ হতো না।মক্কা একটি ব্যবসাপ্রধান অঞ্চল ছিলো।মাক্কার খাদ্যের প্রধান যোগানদাতা ছিলো তায়েফ।তায়েফে আঙ্গুর চাষ হতো।এছাড়া মক্কাবাসী সিরিয়ায়ও বাণিজ্য করতে যেতো।সেখান থেকেও আঙ্গুর আমদানি করে আনতে পারে।আঙ্গুর তো বাংলাদেশি ফলও না।তাই বলে কি বাংলাদেশের মানুষ কখনো আঙ্গুর খেতে পারবে না?তারচেয়েও বড় কথা এই ঘটনাটি ছিলো একটি অলৌকিক ঘটনা।আল্লাহ তায়ালা অলৌকিকভাবে সাহাবির কাছে আঙ্গুর পাঠিয়েছিলেন।এটি কোনো সাধারণ ঘটনা নয়।তাঁকে বন্দী করা হয়েছিল, ভয়াবহ অত্যাচার করা হয়েছিল এবং তিনি সে অবস্থাতেও আল্লাহ ও রাসুল(ﷺ) এর আনুগত্য থেকে এক চুল নড়েননি। আল্লাহ এ কারামতের দ্বারা তাঁকে সম্মানিত করেছিলেন।
ড্যান গিবসন : প্রাকৃতিক পরিবেশের কথা বাদ দিলাম।মক্কার হেরাগুহা প্রকৃত হেরাগুহা নয়।কারণ তা মক্কা শহরের দিকে মুখ করে নেই।পেট্রায় পাথর খোদাই করা দেবদেবীর প্রতীকে ভরা একটি জায়গা পাওয়া গেছে,যা রাস্তার ধারে অবস্থিত। সম্ভবত এই জায়গায় বসেই অল্পবয়সী মুহাম্মাদ ধ্যান করতেন।
নেবুদা : যিনি ছোটবেলা থেকেই মূর্তিকে ঘৃণা করতেন [8], প্রকৃত ইশ্বরের খোঁজ করতেন,তিনিই নাকি ধ্যান করবেন দেবদেবীর প্রতীকে ভরা এক জায়গায়!নিতান্তই হাস্যকর দাবি।ধ্যান করবার জন্য গুহায় যাবার মূল উদ্দেশ্যে হচ্ছে, অখণ্ড মনোযোগ ধরে রাখা। আলো, কোলাহল এসব জিনিস এ মূল উদ্দেশ্যকেই ব্যাহত করে। যেই ব্যক্তিটি সমাজ-সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গুহায় ধ্যান করতে যাচ্ছেন, তার কখনো গুহার মধ্য থেকে থেকে নিজ শহরের দিকে তাকিয়ে থাকবার অভিপ্রায় থাকে না। তিনি এমন গুহা বেছে নেবেন যাতে তিনি সমাজ-সংসার থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্নতা লাভ করতে পারবেন। আপন স্রষ্টার প্রতি মনোনিবেশ করতে পারবেন। কোনো গুহার বাইরের মুখটি যদি লোকালয়ের দিকে মুখ করে থাকে, তাহলে এ উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। মক্কার হেরা গুহাটির ভৌগোলিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এর বাইরের দিকটি সরাসরি মক্কার দিকে মুখ করে নেই। কিন্তু গুহা থেকে বের হলে সহজেই মক্কা ও মসজিদুল হারাম দেখতে পাওয়া যায়। অর্থাৎ ধ্যান করবার জন্য সর্বাধিক উপযোগী একটি গুহা ছিল সেটি।এর থেকে বোঝা যায় মক্কার হেরাগুহাই প্রকৃত হেরাগুহা।আর মুহাম্মাদ(স) ধ্যানের সময় মোটেও অল্পবয়সী ছিলেন না।তাঁর বয়স ছিলো ৩৫-৪০ এর কাছাকাছি। তাঁকে অল্পবয়সী ছেলে বলায় আপনার অজ্ঞতাটাই প্রকাশ পেয়েছে।
ড্যান গিবসন : ইসলামি ইতিহাসগ্রন্থ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে,উমাইয়াদের সাথে আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর(রা.) এর যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে কিবলাকে পেট্রা থেকে মক্কার দিকে সরিয়ে নেওয়া হয়।পেট্রায় দুশারার মন্দির পাওয়া গেছে।সেটি প্রকৃত কাবাঘর হতে পারে।
নেবুদা : এই অসম্ভব দাবিকে রদ করবার জন্য একটা হাদিসই যথেষ্ট।
আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ(ﷺ) এর নিকট জিজ্ঞাসা করলাম, হাতিমের দেয়াল কি বাইতুল্লাহর [আল্লাহর ঘর, কা’বা] অন্তর্ভুক্ত? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলাম, তবে তারা কেন এটাকে বাইতুল্লাহর অন্তর্ভুক্ত করেনি? তিনি বললেন, তোমার সম্প্রদায়ের [কুরাঈশ] নিকট পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না। আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম, এর দরজা উঁচুতে স্থাপিত হওয়ার কারণ কী? তিনি বললেন, তাও তোমার সম্প্রদায়ের কাণ্ড, যাতে তাদের কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি তাতে প্রবেশাধিকার পায় এবং অবাঞ্ছিত ব্যক্তি প্রবেশ করতে না পারে। তোমার সম্প্রদায়ের জাহিলিয়াত পরিত্যাগের যুগ নিকটতম না হলে এবং আমার যদি এই আশঙ্কা না হতো যে, তাদের অন্তর পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে—তাহলে আমি অবশ্যই (হাতিমের) দেয়াল বাইতুল্লাহর অন্তর্ভুক্ত করা এবং কা’বার দরজা জমিনের সমতলে স্থাপন করার বিষয়ে বিবেচনা করতাম।[9]যেখানে ফিতনা হবার আশঙ্কায় স্বয়ং আল্লাহর রাসুল(ﷺ) কা’বার গঠন পরিবর্তন করেননি, সেখানে তাঁর ওফাতের কিছুকাল পরে একেবারে পুরো কা’বাকেই মানুষ আরেক শহরে নিয়ে গেল আর সবাই সেটা মেনেও নিল?!!! এটা একেবারেই অবাস্তব একটা চিন্তা। প্রকৃতপক্ষে আব্দুলাহ ইবন যুবাইর(রা.) যদি আসলেই অন্যত্র কিবলা সরিয়ে নিতেন (নাউযুবিল্লাহ), তাহলে ১ জন লোকও সেখানে হজ করতে আসত না। ডকুমেন্টারিতে তারিখ আত তাবারী থেকে সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর(রা.) কর্তৃক কা’বা ভাঙার কাহিনি বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছেন আপনি।অসাবধানতাবশত আগুন লেগে কা'বা ঘর পুড়ে গিয়েছিল। এটা ছিল ইয়াযিদ ইবন মু'আবিয়ার রাজত্বের শেষ কাল এবং তখন ইবন যুবাইরকে(রা.) মক্কায় অবরোধ করে রাখা হয়েছিল। এই সময় মক্কার খলীফা আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর(রা.) তাঁর খালা আয়িশা সিদ্দিকার(রা.) কাছে যে হাদিসটি শুনেছিলেন [একটু আগে যেটি উল্লেখ করা হয়েছে] তারই পরিপ্রেক্ষিতে রাসুলুল্লাহর(ﷺ) মনের কথা অনুযায়ী বাইতুল্লাহকে ভেঙে ইব্রাহিমের(আ.) ভিত্তির ওপর নির্মাণ করেন। 'হাতীমকে ভিতরে নিয়ে নেন। পূর্ব ও পশ্চিমে দুটি দরজা রাখেন। একটি ভেতরে আসার জন্য, অপরটি বেরিয়ে যাওয়ার জন্য। দরজা দু’টি মাটির সমান করে রাখেন। তাঁর শাসনামল পর্যন্ত কা’বা এরূপই থাকে।
সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, “আতা(র.) বলেছেন, ইয়াযিদ ইবন মু'আবিয়ার যুগে যখন সিরিয়াবাসী কা'বা ঘরের ওপর আক্রমণ করে এবং যা হবার তা হয়ে যায়, সেই সময় আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর(রা.) বাইতুল্লাহকে এরূপ অবস্থাতেই রেখে দেন, যেন হজের মৌসুমে জনগণ একত্র হয়ে সবকিছু স্বচক্ষে দেখে। এরপরে আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর(রা.) জনগণের সঙ্গে পরামর্শ করেন এবং জানতে চান, কা’বা ঘরকে সম্পূর্ণ ভেঙে কি নতুনভাবে নির্মাণ করব, নাকি ভাঙ্গা যা আছে তাকেই মেরামত করব? ইবন আব্বাস(রা.) বলেন, “এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই, আপনি কা'বা ঘরকে সেইভাবে পুনর্নির্মাণ করুন, মক্কার লোকেরা মুসলিম হতে শুরু করার সময় কা’বা ঘর যে অবস্থায় ছিল। কা'বা ঘরের পাথরটিও ওই অবস্থায় রেখে দিন, রাসুলের(ﷺ) নবুয়তের সময় ওটা যে অবস্থায় ছিল এবং লোকেরা ইসলামে দীক্ষিত হচ্ছিল।’ আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর(রা.) বলেন, “আপনাদের কারও ঘর যদি আগুনে পুড়ে যায়, তাহলে নিশ্চয়ই সে তা পুনর্নির্মাণ না করা পর্যন্ত সন্তুষ্ট থাকবেন না। তাহলে মহাসম্মানিত প্রভুর ঘর সম্পর্কে এরূপ মত পেশ করেন কেন? আচ্ছা তিন দিন পর্যন্ত আমি ইস্তিখারা করব, তার পরে যা বুঝব তা-ই করব।” তিন দিন পরে তাঁর মত এই হলো যে, অবশিষ্ট দেয়ালও ভেঙে দেওয়া হবে এবং সম্পূর্ণ নতুনভাবে নির্মাণ করা হবে। সুতরাং তিনি এই নির্দেশ দিয়ে দেন।[10]
এই হচ্ছে আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইরের(রা.) কর্তৃক কা’বা ভাঙা ও পুনর্নির্মাণের প্রকৃত ইতিহাস। এর উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহ ও রাসুল(ﷺ) এর আনুগত্য এর সাথে মোটেও মক্কা থেকে পেট্রাতে কা’বা স্থানান্তরের কোনো ব্যাপার ছিল না (নাউযুবিল্লাহ)। সহীহ মুসলিম ও ইবন কাসিরের উপরের বিবরণটি থেকে এটা স্পষ্ট যে, তিনি মোটেও অন্য কোন স্থানে কা’বাকে সরাননি বরং আগের স্থানেই তা পুণঃনির্মাণ করেছিলেন। আর আপনি দুশারার মন্দিরকে কাবার সাথে মেলানোর চেষ্টা করেছেন অথচ কোনো ইতিহাস-গ্রন্থে এমন বিবরণ নেই যে, রাসুল(ﷺ) এর কুরাঈশ বংশের মানুষেরা দুশারার মন্দিরকে কেন্দ্র করে উপাসনা-কর্ম করত। বরং তারা কা’বার প্রভু আল্লাহর উপাসনা করত, সেই সাথে কিছু কাল্পনিক দেবদেবীর উপাসনাও করতো [11]।কা’বাকে কেউ কোনোকালে দুশারার মন্দির বলে উল্লেখ করেনি।তাছাড়া দুশারার মন্দির তথা পেট্রায় কোনো তীর্থযাত্র হতো বলে প্রমাণ নেই।পেট্রা ছিলো একটি বাণিজ্যিক নগরী।
ড্যান গিবসন : মক্কা যদি প্রাচীন শহরই হয়ে থাকে,তাহলে এই শহরে কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বা ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়নি কেনো যদিও এই নগরে অসংখ্য বড় বড় বিল্ডিং তৈরি করতে গিয়ে মাটি খোড়াখুড়ি হয়েছে?
নেবুদা : মূল উত্তর হলো মক্কার মাটির নিচে মাটি নেই,বরং মক্কার মাটি নিচে হলো গলিত লাভা জমাট বেধে তৈরি হওয়া পাথর।জমাট স্লেটের নিচে কোনোকিছু যেতে পারে না।তাই মক্কার মাটির নিচে কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নেই।তবে মাটির উপরে অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে।যেমন:- "দারব যুবাইদা" সড়ক।এটি ইরাক থেকে মক্কা পর্যন্ত একটি প্রাচীন যাত্রাপথ।ইসলামপূর্ব যুগে সড়কটির নাম ছিলো "দারব আল হিরা"। সড়কটি পারস্য থেকে মক্কায় বাণিজ্য করতে ও ভ্রমণে ব্যবহৃত হতো।ইউনেস্কো কতৃকও এটি স্বীকৃত [12]।পরবর্তীতে আব্বাসী শাসনামলে সড়কটি সংস্কার করা হয় এবং "দারব যুবাইদা" নামকরণ হয়। আব্বাসী শাসনামলে সড়কটি ইরাক থেকে মক্কায় হজ্বের যাত্রাপথ হিসেবে ব্যবহৃত হতো।সম্পূর্ণ সড়কজুড়ে অসংখ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে এবং ভবিষ্যতে আরো পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।মক্কার নিকটস্থ তায়েফে মসজিদুল হারাম,কাবা সম্পর্কিত অনেক শিলালিপি পাওয়া গেছে।এগুলো প্রমাণ করে বর্তমান মক্কাই আসল মক্কা।তাছাড়া পেট্রার ভাষা ছিলো এরামায়িক।কিন্তু উক্ত শিলালিপিগুলো আরবিতে।রাসুল(স),খুলাফায়ে রাশেদীন ও উমাইয়া খলিফাগণের আমলের কুরআনের অনেক স্ক্রল ও পান্ডুলিপি পাওয়া গেছে।সেগুলো সবই আরবিতে লেখা।এর থেকে প্রমাণিত হয়,রাসুল(স) পেট্রায় জন্মগ্রহণ করেন নি।আরবদেশের আরবিভাষী অঞ্চল মক্কায় জন্মগ্রহণ করেছেন।
আপনি বলেছেন,মক্কায় কোনো প্রাচীন শহরের ধ্বংস পাওয়া যায় নি।মক্কায় কোনো প্রাচীন শহরের ধ্বংসাবশেষ আশা করাটাই হলো বোকামি।কারণ মক্কা কোনোদিন বিজাতি কতৃক দখল হয়নি কিংবা যুদ্ধ বিগ্রহের ফলে মক্কা কখনো ধ্বংসপ্রাপ্তও হয়নি।প্রাক-ইসলামিক যুগ থেকে এই শহরটির নগরায়ন অবিরতভাবে (Continuously) বর্তমান অবধি চলমান আছে। তাই কোনো প্রাচীন শহরের ধ্বংসাবশেষ এখানে পাওয়া যায় নি।মক্কায় যে এগুলো ছাড়া অন্য কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া যায়নি,তা নয়।মক্কায় আরো অনেক প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া গিয়েছিলো।১৯৮০ সালে মসজিদুল হারাম এলাকা খনন করতে গিয়ে একটি বিশাল বাড়ি আবিষ্কৃত হয় মাটির নিচ থেকে।ধারণা করা হয় যে সেটি ছিলো রাসুল(স)এর প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজা(রা) এর বাড়ি।সেখানে অনেকগুলো ঘর ছিলো,যেখানে রাসুল(স)এর ২ পুত্র এবং ফাতিমা(রা)সহ আরো ২ কন্যা জন্মগ্রহণ করেন।
তবে তৎকালীন ওহাবীরা তা ধ্বংস করে দেয় এবং তার উপর হাজিদের টয়লেট নির্মাণ করে। নাউজুবিল্লাহ। মক্কা ও মদিনার অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানই ওহাবীরা 'বিদআত ধ্বংসের মিশন' এর নামে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। এভাবে ওহাবীরা মক্কাকে প্রায় ঐতিহ্যশূন্য করে দিয়েছে।ওহাবীগণ কতৃক মক্কা ও মদিনার যেসব প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ধ্বংস হয়েছে সেগুলোর মোটামুটিরকম একটি তালিকা হলো:-
Mosques
(1) The Mosque of al-Manaratain.
(2) Mosque and tomb of Sayyid Imam al-Uraidhi ibn Ja‘far al-Sadiq, destroyed by dynamite on August 13, 2002.
(3) Four mosques at the site of the Battle of the Trench in Medina.
(4) The Mosque of Abu Rasheed.
(5) Salman al-Farsi Mosque, in MedPetra
(6) Raj'at ash-Shams Mosque, in Medina.
Cemeteries and tombs
(7) Jannat al-Baqi in Medina, leveled.
(8) Jannat al-Mu'alla, the ancient cemetery at Mecca.
(9) Grave of Hamida al-Barbariyya, the mother of Imam Musa al-Kadhim.
(10) Tombs of Hamza and other casualties of the Battle of Uhud were demolished at Mount Uhud.
(11) Tomb of Eve in Jeddah, sealed with concrete in 1975.
(12) Grave of the father of Muhammad.
Historical religious sites
(13) The house of Mawlid,Mecca,where Muhammad is believed to have been born in 570. Originally turned into a library, it now lies under a rundown building which was built 70 years ago as a compromise after Wahhabi clerics called for it to be demolished.
(14) The house of Khadija,Mecca, Muhammad's first wife. Muslims believe he received some of the first revelations there. It was also where his children Zainab bint Muhammad, Ruqayyah bint Muhammad, Umm Kulthum bint Muhammad, Fatimah, Qasim and Abd-Allah ibn Muhammad were born.
(15) A Hilton hotel stands on the site of the house of Islam's first caliph, Abu Bakr.
(16) House of Muhammed in Medina, where he lived after the migration from Mecca.
(17) Dar Al-Arqam, the first Islamic school where Muhammad taught.It now lies under the extension of the Masjid Al-Haram of Mecca.
(18) Qubbat’ al-Thanaya, the burial site of Muhammed's incisor that was broken in the Battle of Uhud.
(19) Mashrubat Umm Ibrahim, built to mark the location of the house where Muhammad's son, Ibrahim, was born to Mariah.
(20) Dome which served as a canopy over the Well of Zamzam.
(21) Bayt al-Ahzan of Sayyida Fatima, in Medina.(22) House of Imam Ja'far al-Sadiq, in Medina.
(23) Mahhalla complex of Banu Hashim, in Mecca (24) House of Ali where Hasan and Husayn were born. [13]
মক্কা-মদিনার এরকম ২৪ টি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ধ্বংস করেছে ওহাবীরা।তাই "মক্কায় কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন কখনই পাওয়া যায়নি"-- এই দাবি নিতান্তই হাস্যকর।মূলত ওহাবীরা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলো ধ্বংস করেছে আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়েই আপনি দাবি করেছেন যে মক্কায় কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নেই।তাই প্রাচীনকালে বা মুহাম্মাদ(স)এর আমলে মক্কার কোনো অস্তিত্ব ছিলো না।কিন্তু আপনার দাবি সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হলো।
ড্যান গিবসন : সেই পবিত্র নগরীর নাম ছিল ‘সকল নগরীর মাতা’। বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল বলে পবিত্র নগরীর এই নাম দেওয়া হয়েছে এবং এ থেকে প্রমাণ হয় যে,নগরীটি ছিল পেট্রা। কারণ মক্কায় কোনো বাণিজ্য হতো না।এটি বাণিজ্যিক যাত্রাপথের সম্পূর্ণ বাইরে অবস্থিত।
নেবুদা : আল কুরআনে মক্কা নগরীকে বলা হয়েছে أُمَّ اٱلقُرَىٰ যার মানে হচ্ছে জনপদসমূহের মাতা বা নগরসমূহের মাতা [14] কিন্তু আল কুরআনে কেন এই নাম দেওয়া হয়েছে? ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুয়ায়ী মক্কা থেকে পৃথিবী সৃষ্টির সূচনা হয়েছে এবং এ কারণেই মক্কার এই নাম দেওয়া হয়েছে। তাফসির গ্রন্থসমূহে এটাই উল্লেখ আছে [15]।ইসলামের পবিত্র নগরীর এই নামের ব্যাপারে সম্পূর্ণ বানোয়াট একটি তথ্য উপস্থাপন করেছেন আপনি। ‘সকল নগরীর মাতা’ হবার সাথে বাণিজ্যিক কেন্দ্র হবার কোনো সম্পর্ক নেই।তাছাড়া দারব যুবাইদার মাধ্যমে যে পারস্য থেকে বণিকরা মক্কায় বাণিজ্য করতে আসতো,তা ইতোমধ্যেই আপনি দেখেছেন।মক্কা যে খুব বড় কোনো বাণিজ্যিক কেন্দ্র ছিলো,এমন বিবরণ কুরআন,হাদিস,সীরাতেও পাওয়া যায় না।বরং মক্কার লোকেরাই দূর দেশে বাণিজ্য করতে যেতো।
ড্যান গিবসন : (এবার ব্রহ্মাস্ত্রটা ছাড়ি)। প্রাচীন মসজিদগুলো মক্কার দিকে নয়, বরং পেট্রার দিকে মুখ করে আছে। মসজিদগুলো মক্কার দিক থেকে কিছুটা অন্য দিকে ঘুরে আছে।
নেবুদা : এ সম্পর্কে প্রথমেই যেটি বলব—প্রাচীনকালে তো নয়ই,এমনকি আধুনিককালেও একদম মেপে মেপে ডিগ্রি ঠিক রেখে হুবহু ডিরেকশনে মক্কার দিকে মুখ করে মসজিদ নির্মাণ করা হয় না। এমনটা করা সম্ভব নয়, জরুরিও নয়।চীন,জেরুজালেম থেকে মক্কা ও পেট্রা একই দিকে অবস্থিত।চীন থেকে মক্কা ও পেট্রা উভয়ই পশ্চিম দিকে।জেরুজালেম থেকে পেট্রা ও মক্কা উভয়ই দক্ষিণ দিকে।এটারই সুযোগের সদ ব্যবহার করেছেন আপনি।মাত্র চুল পরিমাণ কাবা থেকে সরলেই সেই মসজিদকে পেট্রামুখী বলে দাবি করেছেন।আগেকার দিনে কি গুগল ম্যাপ ছিলো যে তারা এতদূরের অঞ্চল থেকে একদম স্ট্রেইট এক চুলও এদিক ওদিক নয় এভাবে মসজিদ বানাবে?বর্তমান যুগেও তো দিক ঠিক রেখে আন্দাজের ভিত্তিতেই মসজিদ বানানো হয়।বাংলাদেশ থেকে পেট্রা ও মক্কা উভয়ই পশ্চিম দিকে।বাংলাদেশের মসজিদগুলো পশ্চিমদিকে মুখ করে বানানো।বাংলাদেশের কোনো মসজিদ যদি কাবার দেয়াল থেকে চুল পরিমাণও একটু অন্যদিকে থাকে(দিক পশ্চিমই),তাহলে কি আপনি দাবি করতে পারেন যে বাংলাদেশের এই মসজিদগুলো পেট্রাকে কিবলা হিসেবে মানে?ব্যাপারটা পুরোই হাস্যকর হবে।সকল প্রাচীন মসজিদেরই মূল দিক(পূর্ব/পশ্চিম/উত্তর/দক্ষিণ) ঠিকই আছে। ডকুমেন্টারিতে স্যাটালাইট চিত্রের দ্বারা বিভিন্ন প্রাচীন মসজিদের কিবলার দিক দেখানোর চেষ্টা করেছেন আপনি। ভালো করে লক্ষ করলে বোঝা যায় যে, মসজিদের সামনের দেয়ালের সাথে লম্বভাবে নয়, বরং লম্ব থেকে ৫-৬ ডিগ্রি বাঁকিয়ে রেখা টেনে আপনি কিবলার দিক হিসাব করেছেন। নমুনা স্বরূপ ডকুমেন্টারি থেকে জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদ এবং চীনের গুয়ায়ংজুর মসজিদ।পৃথিবী ৩৯৬৩ মাইল (৬৩৭৮ কিলোমিটার) ব্যাসার্ধের একটি বিশাল গোলক।এই সুবিশাল গোলকে ১ ডিগ্রী বাঁকিয়ে রেখা টানলেও সেটি বিশাল দূরত্বে গিয়ে মিশবে।তাছাড়াও আমি গুগল ম্যাপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে দেখলাম আপনার দেখানো সকল প্রাচীন মসজিদই মোটামুটি মক্কার দিকে মুখ করে আছে।পেট্রার দিকে নয়।
ড্যান গিবসন : (চুপ করে আছে)।
নেবুদা : পেট্রাকে মক্কা ধরলে ইতিহাসের অনেক বিষয়ই অমীমাংসিত থেকে যায়।যেমন: পেট্রাকে মক্কা ধরলে বদরের যুদ্ধের কোনো অস্তিত্ব থাকে না,তাবুক যুদ্ধের কোনো অস্তিত্ব থাকে না,তায়েফে গমনের কোনো অস্তিত্ব থাকে না,মক্কা বিজয়ের কোনো অস্তিত্ব থাকে না,রাসুল(স) এর বংশের কোনো অস্তিত্ব থাকে না,খুলাফায়ে রাশেদীনের কোনো অস্তিত্ব থাকে না,আরবি কুরআনের কোনো অস্তিত্ব থাকে না,এছাড়া মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে আরো যত যুদ্ধ হয়েছে,কোনোটারই অস্তিত্ব থাকে না।অথচ ওগুলোর পক্ষে অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া গেছে।মক্কাকে রাসুল(স)এর জন্মভূমি ধরলে সকল ইতিহাস সুন্দরভাবে মিলে যায়।
ড্যান গিবসন : (কপালে চিন্তা ও অসহায়ত্বের ছাপ। অতঃপর প্রস্থান)
রেফারেন্স :-
- [1] Nabataea_ The Fall of Petra
- [2] Psalms(গীতসংহিতা): 84/4-6
- [3] Eratosthenes -- New World Encyclopedia https://www.google.com/url?sa=t&source=web&rct=j&url=https://www.newworldencyclopedia.org/entry/Eratosthenes&ved=2ahUKEwjnnvWMm_nwAhVbdCsKHQA9CTkQFjAAegQIAxAC&usg=AOvVaw0CshXc_FTQAyq_5zyi3pe6&cshid=1622645953588
- [4] “Mecca before Islam_ 2) Macoraba – Ian D. Morris” http://www.iandavidmorris.com/mecca-before-islam-2.../
- [5] Robert, H. Hewsen (1992). The Geography of Ananias of Sirak The Long and the Short Recensions. Wiesbaden. p. 71.
- [6] সূরা আনআম ৬:৯৯,সূরা নাহল ১৬:১০।
- [7] বিস্তারিত দেখুন: ইবন হিশাম, ২য় খণ্ড, ১৬৯-১৭৯ পৃষ্ঠা; যাদুল মা‘আদ, ২য় খণ্ড ১৯৯ পৃষ্ঠা; সহীহ বুখারী, ২য় খণ্ড, ৫৬৮-৫৬৯, ৫৮৫ পৃষ্ঠা; আর রাহিকুল মাখতুম ৩৩৩-৩৩৫ পৃষ্ঠা।
- [8] সীরাতুল মুস্তফা(সা.) - ইদরিস কান্ধলভী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১০৭-১০৯ দ্রষ্টব্য।
- [9] সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ৩১১৯৷
- [10] তাফসির ইবন কাসির, ১ম খণ্ড (হুসাইন আল মাদানী প্রকাশনী) সূরা বাকারাহর ১২৬-১২৮ নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ৩৭৯-৩৮০৷
- [11] সীরাতুন নবী(সা.)-ইবন হিশাম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ) ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯৮-১০৬
- [12] Darb Zubayda -- UNESCO https://whc.unesco.org/en/tentativelists/6025/
- [13] এ ব্যাপারে রেফারেন্সসহ দেখা যেতে পারে--https://en.wikipedia.org/.../Destruction_of_early_Islamic...
- [14] সূরা আনআম, ৬:৯২।
- [15] সূরা আন’আমের ৯২ নং আয়াতের তাফসির—বাগাভী, ফাতহুল কাদির, কুরআনুল কারীম বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসির ১ম খণ্ড (ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া), পৃষ্ঠা ৬৬৯।