Are you sure?

বিবিধ »  বিবিধ

নবুওয়াতের সত্যতা: ইহুদিদের সাথে মুহাম্মদ (ﷺ) এর "মুবাহালা"

মুহাবালা ( المباهلة) এর শাব্দিক অর্থ: পারস্পারিক অভিশাপ দেয়া।

মুবাহালা কী? 

মুবাহালা হলো, সহজ কথায়, যখন দু’জন ব্যক্তি পরস্পর বিরোধী দাবী করে, এবং নিজের বক্তব্যকেই সঠিক ও অপরের বক্তব্যকে মিথ্যা সাব্যস্থ করে; তখন তারা প্রকাশ্যে আল্লাহ’র গযব কামনা করে এই বলে যে, আমাদের মধ্যে যে মিথ্যাবাদী তার উপরে যেন আল্লাহর গযব নাযিল হয়। এমনকি নিজে মিথ্যা বলে থাকলে তার উপরও।

কুরআনে মুবাহালার নির্দেশ -

মহান আল্লাহ কুরআনে বলেন,

ওরা বলে, ইহুদী অথবা খ্রীস্টান ব্যতীত কেউ জান্নাতে যাবে না। এটা ওদের মনের বাসনা। বলে দিন, তোমরা সত্যবাদী হলে, প্রমাণ উপস্থিত কর।[¹] বলুন হে ইহুদীগণ, যদি তোমরা দাবী কর যে, তোমরাই আল্লাহর বন্ধু-অন্য কোন মানব নয়, তবে তোমরা মৃত্যু কামনা কর যদি তোমরা সত্যবাদী হও।[²] বলে দিন (ইহুদিদের), যদি আখেরাতের বাসস্থান আল্লাহর কাছে একমাত্র তোমাদের জন্যই বরাদ্দ হয়ে থাকে-অন্য লোকদের বাদ দিয়ে, তবে মৃত্যু কামনা কর, যদি সত্যবাদী হয়ে থাক।[³] আপনি (ইহুদিদেরকে) জীবনের প্রতি সবার চাইতে, এমনকি মুশরিকদের চাইতেও অধিক লোভী দেখবেন। তাদের প্রত্যেকে কামনা করে, যেন হাজার বছর আয়ু পায়। অথচ এরূপ আয়ু প্রাপ্তি তাদেরকে শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারবে না। আল্লাহ দেখেন যা কিছু তারা করে।[⁴] ইহুদী ও খ্রীষ্টানরা বলে, আমরা আল্লাহর সন্তান ও তাঁর প্রিয়জন। আপনি বলুন, তবে তিনি তোমাদেরকে পাপের বিনিময়ে কেন শাস্তি দান করবেন? বরং তোমারও অন্যান্য সৃষ্ট মানবের অন্তর্ভুক্ত সাধারণ মানুষ। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি প্রদান করেন। নভোমন্ডল, ভুমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে, তাতে আল্লাহরই আধিপত্য রয়েছে এবং তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে।[⁵]

 

তাফসীর -

এই আয়াতে মৃত্যু কামনার নির্দেশ দিয়ে কে সত্যবাদী আর কে মিথ্যাবাদী তা নির্ণয়ের জন্য ইয়াহুদীদের সাথে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া হলো। ‘আবদুল্লাহ ইবনে ‘আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ সব ইয়াহুদীদেরকে বলেন, ‘তোমরা যদি সত্যবাদী হও তাহলে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় এসো, আমরা ও তোমরা মিলিত হয়ে মহান আল্লাহ্‌র নিকট প্রার্থনা করি যে, তিনি যেন আমাদের দুই দলের মধ্যে যারা মিথ্যাবাদী তাদেরকে ধ্বংস করেন। কিন্তু তখনই ভবিষ্যদ্বাণী হয় যে, তারা কখনো এতে সম্মত হবে না। আর হলোও তাই। তারা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় এলো না। কারণ তারা অন্তরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ও কুর’আন মাজীদকে সত্য বলে জানতো। যদি তারা এ ঘোষণা অনুযায়ী মুকাবিলায় আসতো তাহলে তারা সবাই ধ্বংস হয়ে যেতো এবং দুনিয়ার বুকে একটি ইয়াহুদীও অবশিষ্ট থাকতো না।[⁶]

ইবনে ‘আব্বাস (রা.) বলেন যে, ইয়াহুদীরা যদি মৃত্যু কামনা করতো তাহলে তারা সবাই মারা যেতো। (হাদীসটি সহীহ। তাফসীরে ‘আব্দুর রাজ্জাক) ইবনে জারীর (রহ.) স্বীয় তাফসীরে উল্লেখ করে বলেন যে, আমাদের নিকট সংবাদ পৌছে যে,

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: "لو أن اليهود تمنوا الموت لماتوا. ولرأوا مقاعدهم من النار. ولو خرج الذين يُباهلون رسول الله صلى الله عليه وسلم لرجعوا لا يجدون أهلا ولا مالا". 

ইয়াহুদীরা যদি মৃত্যু কামনা করতো তাহলে তারা সবাই মারা যেতো। আর তারা জাহান্নামে নিজেদের স্থান দেখতে পেতো। আর মুবাহালাকারীরা যদি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মুবাহালার উদ্দেশ্যে বের হতো তাহলে তারা ফিরো এসে কোন আত্মীয়-স্বজন ও সম্পদ পেতো না।[⁷]

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে অর্থাৎ ইয়াহুদীদেরকে বলেন, ‘এসো এর ফয়সালা আমরা এভাবে করি যে, আমরা দু’টি দলে মাঠে বেরিয়ে যাই। তারপর আমরা মহান আল্লাহ্‌র নিকট প্রার্থনা জানাই যে, তিনি যেন আমাদের মধ্যকার মিথ্যাবাদী দলকে ধ্বংস করে দেন।’ কিন্তু ইয়াহুদী দলটির নিজেদের মিথ্যাবাদীতা সম্পর্কে পূর্ণ বিশ্বাস ছিলো বলে তারা এর জন্য প্রস্তুত হলো না। সুতরাং তাদের মিথ্যা প্রকাশ পেয়ে গেলো। অনুরূপভাবে নাজরানের খ্রিষ্টানরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আগমন করে বহু তর্ক বিতর্কের পর তাদেরকেও "মুবাহালা" করতে বলা হয়।

যেমন মহান আল্লাহ বলেন,  فَمَنْ حَآجَّكَ فِیْهِ مِنْۢ بَعْدِ مَا جَآءَكَ مِنَ الْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ اَبْنَآءَنَا وَ اَبْنَآءَكُمْ وَ نِسَآءَنَا وَ نِسَآءَكُمْ وَ اَنْفُسَنَا وَ اَنْفُسَكُمْ١۫ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَلْ لَّعْنَتَ اللّٰهِ عَلَى الْكٰذِبِیْنَ–

তোমার নিকট জ্ঞান আসার পর যে ব্যক্তি তোমার সাথে ‘ঈসার সম্বন্ধে বিতর্ক করবে তাকে বলো, ‘এসো, আমাদের পুত্রদের এবং তোমাদের পুত্রদের আর আমাদের নারীদের এবং তোমাদের নারীদের এবং আমাদের নিজেদের এবং তোমাদের নিজেদের আহ্বান করি। তারপর আমরা বিনীত প্রার্থনা করি আর মিথ্যুকদের প্রতি মহান আল্লাহ্‌র অভিসম্পাত বর্ষণ করি।[⁸]

কিন্তু কাফেররা পরস্পর বলতে থাকে, ‘মহান আল্লাহ্‌র শপথ!’ এ নবীর সাথে কখনো "মুবাহালা করো না, নতুবা এখনই ধ্বংস হয়ে যাবে।’ সুতরাং তারা মুবাহালা হতে বিরত হয় এবং জিজিয়া কর দিতে রাজি হয়ে সন্ধি করে নেয়।

 শিক্ষণীয় বিষয়:

  • ১. মুহাম্মদ ﷺ আসার পর ইয়াহূদীদের ধর্ম বাতিল। একমাত্র ইসলাম ধর্মই সঠিক যা ইয়াহূদীদেরকে মুবাহালার দিকে আহ্বান করে আরও সুস্পষ্ট হয়ে গেল।
  • ২. বাতিল পন্থীরা যদি হকের বিরুদ্ধে মুবাহালা করতে চায় তাহলে ইসলামে তা অনুমতি রয়েছে।

 

রেফারেন্স:

  • [1] সূরা: আল বাকারা, আয়াত: ১১১।
  •  [2] সূরা: আল জুমুআহ, আয়াত: ৬।
  •  [3] সূরা: আল বাকারা, আয়াত: ৯৪)।
  •  [4] সূরা: আল বাকারা, আয়াত: ৯৬। 
  • [5] সূরা: আল মায়িদাহ, আয়াত: ১৮।
  • [6] তাফসীর ইবনে আবী হাতিম ১/২৪৮।
  •  [7] তাফসীর ইবনে কাসির। 
  •  [8] সূরা আল ‘ইমরান, আয়াত: ৬১।