Are you sure?

বিবিধ »  বিবিধ

শাফায়াত নিয়ে খ্রিস্টান মিশনারীদের অপ্রপচারের জবাব

খ্রিস্টান মিশনারীরা মুসলিমদের কাছে গিয়ে বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুপারিশ করবেন না। ঈসা (আ.) সুপারিশ করবেন। ঈসা(আ.) সুপারিশ করবেন এটা খ্রিস্টানরা নিজেরাই বিশ্বাস করে না। তারা শুধু নিজেদের দলে ভেড়ানোর জন‍্য, রাসূল (সা.) এর উপর থেকে ভক্তি উঠানোর জন‍্য তারা মুসলিমদের কাছে গিয়ে এ কথা বলে। তারা দলিল পেশ করে সূরা মায়িদাহ ১১৮ নং আয়াত। তারা বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম শাফায়াত করবেন, এটি কুরআনে কোথাও নেই। কি ভয়ংঙ্কর মিথ‍্যা কথা। তাদের এটি জানা উচিত যে ইসলামে মূল দলিল হলো দুটি:-

  • ১) কুরআন।
  • ২) হাদিস। 

আমরা কুরআন থেকেও দলিল পেশ করবো রাসূল (সা.) সুপারিশ করবেন এব‌ং হাদিস থেকেও এ সম্পর্কিত দলিল পেশ করবো। এখন তারা বলতে পারে হাদিস থেকে দলিল কেনো? হাদিস তো আসমানি কিতাব নই। আমরা বলবো হাদিস হলো কুরআন এর ব‍্যাখ‍্যা স্বরূপ। মহান আল্লাহ বলেন,

(তাদের প্রেরণ করেছি) স্পষ্ট প্রমাণাদি ও কিতাবসমূহ এবং তোমার প্রতি নাযিল করেছি কুরআন, যাতে তুমি মানুষের জন্য ব‍্যাখ‍্যা (স্পষ্ট) করে দিতে পার, যা তাদের প্রতি নাযিল হয়েছে। আর যাতে তারা চিন্তা করে।[1]

এই আয়াত নিয়ে যদি গভীর ভাবে ভাবেন তাহলে বুঝা যায় মহান আল্লাহ কুরআন অবর্তীন করাকে সম্বন্ধিত করেছেন নিজের দিকে এবং তা ব‍্যাখ‍্যা করে দেওয়া রাসূলের দিকে। আর এই ব‍্যাখাটিই হাদিসে লিপিবদ্ধ।

মহান আল্লাহ বলেন,

আর তোমার প্রতি নাযিল করা হয়েছে কিতাব ও হিকমাহ এবং তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন যা তুমি জানতে না। আর তোমার উপর আল্লাহর অনুগ্ৰহ রয়েছে মহান।[2]

মহান আল্লাহ বলেন,

রাসূল তোমাদের যা দেই তা তোমরা গ্ৰহন করো।[3]

অতএব কুরআন মাজিদের ব‍্যাখ‍্যা রাসূল (সা:) করে গিয়েছেন এটা হাদিসে লিপিবদ্ধ। তাই কুরআন মাজিদের পাশাপাশি হাদিসও আমাদের দলিল। হাদিস সরাসরি আল্লাহর ওহি। কুরআন ওহিয়ে মাতলু যা তিলওয়াত করা হয়। কিন্তু হাদিস হলো অহিয়ে গায়ের মাতলু যা তেলওয়াত করা হয় না।

যেমন মহান আল্লাহ বলেন,

তোমাদের সংগী পথভ্রষ্ট হননি এবং বিপথগামীও হননি। এবং প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না। কোরআন ওহী, যা প্রত্যাদেশ হয়।[4]

অতএব কুরআনের পাশাপাশি হাদিস ও আমাদের অকাট‍্য দলিল। তারা সূরা মায়িদাহ ১১৮ নং আয়াত দেখিয়ে বলে ঈসা (আ.) সুপারিশ করবেন। চলুন দেখি এই আয়াতে কি বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,

اِنۡ تُعَذِّبۡہُمۡ فَاِنَّہُمۡ عِبَادُکَ ۚ وَ اِنۡ تَغۡفِرۡ لَہُمۡ فَاِنَّکَ اَنۡتَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ ﴿۱۱۸– যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি প্রদান করেন তবে তারা আপনারই বান্দা, আর তাদেরকে যদি ক্ষমা করেন, তবে নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’[5]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: নিশ্চয় কেয়ামতের দিন তোমাদেরকে একত্রিত করা হবে এবং কিছুসংখ্যক লোককে পাকড়াও করে বাম দিকে অর্থাৎ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি বলবঃ আমার উম্মত! তখন আমাকে বলা হবে, আপনি জানেন না আপনার পরে তারা কি সব নতুন পদ্ধতির প্রচলন করেছে। তখন আমি বলবঃ যেমন নেক বান্দা বলেছেন, “এবং যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি ছিলাম তাদের কাজকর্মের সাক্ষী, কিন্তু যখন আপনি আমাকে তুলে নিলেন তখন আপনিই তো ছিলেন তাদের কাজকর্মের তত্ত্বাবধায়ক এবং আপনিই সব বিষয়ে সাক্ষী। আপনি যদি তাদেরকে শাস্তি দেন তবে তারাতো আপনারই বান্দা, আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করেন তবে আপনি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।" [বুখারী: ৪৬২৬]

অর্থাৎ আপনি বান্দাদের প্রতি যুলুম ও অন্যায় কঠোরতা করতে পারেন না। তাই তাদেরকে শাস্তি দিলে তা ন্যায়বিচার ও বিজ্ঞতা-ভিত্তিকই হবে। আর যদি ক্ষমা করে দেন, তবে এ ক্ষমাও অক্ষমতাপ্রসূত হবে না। কেননা, আপনি মহাপরাক্রান্ত ও প্রবল। তাই কোন অপরাধী আপনার শক্তির নাগালের বাইরে যেতে পারবে না। তাদের শাস্তির ব্যাপারে আপনার ক্ষমতাই চুড়ান্ত। মোটকথা, অপরাধীদের ব্যাপারে আপনি যে রায়ই দেবেন, তাই সম্পূর্ণ বিজ্ঞজনোচিত ও সক্ষমতাসুলভ হবে। ঈসা আলাইহিস সালাম হাশরের ময়দানে এসব কথা বলবেন। যাতে নাসারাদেরকে সৃষ্টিকুলের সামনে কঠোরভাবে ধমকি দেয়া উদ্দেশ্য।এই আয়াতে কোথাও কি আপনারা পেলেন,যে ঈসা (আঃ) সুপারিশ করবেন? ঈসা (আ.) সুপারিশ করবেন না। এখানে বলা হয়েছে যদি আপনি তাদেরকে ক্ষমা করেন। ঈসা (আ.) এখানে বলেনি আমি তাদের ক্ষমা করার ব‍্যাবস্থা করবো। এখানে ক্ষমা করার বিষয় আল্লাহর কাছে। ঈসা (আ.) ক্ষমা করতে পারবে না। আর এখানে সুপারিশ কথাটিই নেই। এই আয়াত দিয়ে কখনও প্রমান হয় না ঈসা (আ.) সুপারিশ করবেন।

মহান আল্লাহ বলেন, لَقَدۡ کَفَرَ الَّذِیۡنَ قَالُوۡۤا اِنَّ اللّٰہَ ہُوَ الۡمَسِیۡحُ ابۡنُ مَرۡیَمَ ؕ وَ قَالَ الۡمَسِیۡحُ یٰبَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ اعۡبُدُوا اللّٰہَ رَبِّیۡ وَ رَبَّکُمۡ ؕ اِنَّہٗ مَنۡ یُّشۡرِکۡ بِاللّٰہِ فَقَدۡ حَرَّمَ اللّٰہُ عَلَیۡہِ الۡجَنَّۃَ وَ مَاۡوٰىہُ النَّارُ ؕ وَ مَا لِلظّٰلِمِیۡنَ مِنۡ اَنۡصَارٍ ﴿۷۲– অবশ্যই তারা কুফরী করেছে, যারা বলেছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ হচ্ছেন মারইয়াম পুত্র মাসীহ’। আর মাসীহ বলেছে, ‘হে বনী ইসরাঈল, তোমরা আমার রব ও তোমাদের রব আল্লাহর ইবাদাত কর’। নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা আগুন। আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই।[6]

তারা বলে কুরআনে কোথাও নেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুপারিশ করবেন। কি ভয়ংঙ্কর মিথ‍্যা।

মহান আল্লাহ বলেন, 

“যখন তারা নিজেদের প্রতি যুলুম করে তখন তারা যখন তারা নিজেদের প্রতি যুলুম করে তখন তারা আপনার কাছে আসলে ও আল্লাহ্‌র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে এবং রাসুলও তাদের জন্য ক্ষমা চাইলে তারা অবশ্যই আল্লাহকে পরম ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালুরূপে পাবে।”[7]

কাজেই দুনিয়াতে যে কোনো পাপী যদি ক্ষমাপ্রার্থনার চেতনা-সহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শাফাআাত প্রার্থনা করে এবং তিনি শাফা‘আত করেন তবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন। আর আখেরাতে তার সুপারিশের বিষয়টি বহু হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। অসংখ‍্য হাদিস দ্বারা প্রমানীত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুপারিশ করবেন। নিচে কিছু উল্লেখ করলাম।

  • ১) জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমাকে এমন পাঁচটি বিষয় প্রদান করা হয়েছে, যা আমার পূর্বে কোন নবীকে দেয়া হয়নি। (১) আমাকে এমন প্রভাব দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে যা একমাসের দূরত্ব পর্যন্ত অনুভূত হয়। (২) সমস্ত যমীন আমার জন্যে সালাত আদায়ের স্থান ও পবিত্রতা অর্জনের উপায় করা হয়েছে। কাজেই আমার উম্মতের যে কেউ যেখানে সালাতের ওয়াক্ত হয় (সেখানেই) যেন সালাত আদায় করে নেয়। (৩) আমার জন্য গনীমত হালাল করা হয়েছে। (৪) অন্যান্য নবী নিজেদের বিশেষ গোত্রের প্রতি প্রেরিত হতেন আর আমাকে সকল মানবের প্রতি প্রেরণ করা হয়েছে। (৫) আমাকে সার্বজনীন সুপারিশের অধিকার প্রদান করা হয়েছে।[8]
  • ২) আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: একদা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – কে প্রশ্ন করা হলঃ হে আল্লাহর রসূল! কিয়ামতের দিন আপনার সুপারিশ লাভের ব্যাপারে কে সবচেয়ে অধিক সৌভাগ্যবান হবে? আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আবূ হুরায়রা ! আমি মনে করেছিলাম, এ বিষয়ে তোমার পূর্বে আমাকে আর কেউ জিজ্ঞেস করবে না। কেননা আমি দেখেছি হাদীসের প্রতি তোমার বিশেষ লোভ রয়েছে। কিয়ামতের দিন আমার শাফা’আত লাভে সবচেয়ে সৌভাগ্যবান হবে সেই ব্যাক্তি যে একনিষ্ঠচিত্তে (لآ إِلَهَلا إله إلا الله) (আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই) বলে।[9]

3) আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: প্রত্যেক নবীর এমন একটি দু’আ রয়েছে, যা (আল্লাহ্‌র নিকট) গৃহীত হয় আর নবী সে দু’আ করে থাকেন। আমার ইচ্ছা, আমি আমার সে দু’আর অধিকার আখিরাতে আমার উম্মাতের শাফায়াতের জন্য মুলতবি রাখি।[10]

৪) এই হাদিসটি অনেক লম্বা। আমি মেইন পয়েন্টগুলো উল্লেখ করছি।

আনাস ইবনু মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, আনাস ইবনু মালিক (রা.) হতে বর্ণিত। নবী (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: ঈমানদারদেরকে ক্বিয়ামাতের দিন আবদ্ধ করে রাখা হবে। অবশেষে তারা অস্থির হয়ে যাবে এবং বলবে, আমরা যদি আমাদের রবের নিকট কারো দ্বারা শাফায়াত করাই যিনি আমাদের স্বস্তি দান করেন। তারপর তারা আদাম (আ.) -এর কাছে এসে বলবে, আপনিই তো সে আদম, যিনি মনুষ্য জাতির পিতা, স্বয়ং আল্লাহ্ আপন হাত দিয়ে আপনাকে সৃষ্টি করেছেন। আপনাকে বসবাসের সুযোগ দিয়েছেন তাঁর জান্নাতে, ফেরেশতাদের দিয়ে আপনাকে সাজদাহ করিয়েছেন এবং আপনাকে সব জিনিসের নাম শিক্ষা দিয়েছেন। আমাদের এ জায়গা থেকে মুক্তি লাভের জন্য আপনার সেই রবের কাছে শাফাআত করুন। তখন আদাম (আ.) বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের জন্য নই। তিনি বলবেন, বরং তোমরা নূহ (আ.) -এর কাছে যাও। তারপর তারা নূহ (আ.) -এর কাছে এলে তিনি তাদেরকে বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের জন্য নই। তিনি বলবেন বরং তোমরা রাহমানের একনিষ্ট বন্ধু ইবরাহীমের কাছে যাও। তখন ইবরাহীম (আ.) বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের জন্য নই। তিনি বলবেন, তোমরা বরং মূসা (আ.) -এর কাছে যাও তিনি আল্লাহ্‌র এমন এক বান্দা যাঁকে আল্লাহ্ তাওরাত দিয়েছিলেন, তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন এবং গোপন কথাবার্তার মাধ্যমে তাঁকে নৈকট্য দান করেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সবাই তখন মূসা (আ.) -এর কাছে আসবে। তিনিও বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের জন্য নই। তিনি বলবেন, তোমরা বরং ‘ঈসা (আ.) -এর কাছে যাও। যিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তারা সবাই তখন ‘ঈসা (আ.) -এর কাছে আসবে। ‘ঈসা (আ.) বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের জন্য নই। তিনি বলবেন, তোমরা বরং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে যাও। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তখন তারা আমার কাছে আসবে। আমি তখন আমার রবের কাছে তাঁর নিকট হাযির হবার অনুমতি চাইব। আমাকে তাঁর কাছে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হবে। তাঁর দর্শন লাভের সঙ্গে সঙ্গে আমি সিজদায় পড়ে যাবো। তিনি আমাকে সে হালতে যতক্ষণ চাইবেন রাখবেন। অতঃপর আল্লাহ্‌ বলবেন, মুহাম্মাদ! মাথা ওঠান; বলুন, আপনার কথা শোনা হবে, শাফাআত করুন, কবূল করা হবে, চান, আপনাকে দেয়া হবে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তখন আমি আমার মাথা ওঠাবো। তারপর আমি আমার প্রতিপালকের এমন স্তব ও স্তুতি করবো যা তিনি আমাকে শিখিয়ে দেবেন। অতঃপর আমি সুপারিশ করবো, তবে আমার জন্য একটা সীমা নির্দিষ্ট করে দেয়া হবে। ‘আমি বের হয়ে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবো। অতএব এ হাদিসগুলো থেকে একদম ক্লিয়ার ঈসা (আ.) সুপারিশ করতে পারবেন না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুপারিশ করবেন।[11]

বাইবেল থেকে প্রমান ঈসা মসীহ সুপারিশ করার ক্ষমতা নেই:-

বাইবেলে উল্লেখ আছে,

  • (১) যারা আমাকে ‘প্রভু প্রভু’ বলে তারা প্রত্যেকে যে বেহেশতী রাজ্যে ঢুকতে পারবে তা নয়। কিন্তু আমার বেহেশতী পিতার ইচ্ছা যে পালন করে সে-ই ঢুকতে পারবে। সেই দিন অনেকে আমাকে বলবে, ‘প্রভু প্রভু, তোমার নামে কি আমরা নবী হিসাবে কথা বলি নি? তোমার নামে কি ভূত ছাড়াই নি? তোমার নামে কি অনেক অলৌকিক কাজ করি নি? তখন আমি সোজাসুজিই তাদের বলব ‘আমি তোমাদের চিনি না। দুষ্টের দল! আমার কাছ থেকে তোমরা দূর হও।’[12]
  • (২) তাঁর দু শিষ্যের মা তাঁর কাছে দাবি করেন যে, তার দুই ছেলে যেন তাঁর রাজ্যে তাঁর দুপাশে বসার অধিকার পায়। তিনি উত্তরে বলেন যে, তাঁর পাশে বসানোর ক্ষমতাও তাঁর নেই; বরং সকল ক্ষমতা আল্লাহর তিনি যাকে বসাবেন সেই বসবে: “যাহাদের জন্য আমার পিতা কর্তৃক স্থান প্রস্তুত করা হইয়াছে, তাহাদের ভিন্ন আর কাহাকেও আমার দক্ষিণ পার্শ্বে ও বাম পার্শ্বে বসিতে দিতে আমার অধিকার নাই।”[13]

এখানে স্বয়ং তার দুইজন শিষ‍্যের মা তার কাছে দাবি করলো, যে আমার দুই ছেলে যেন তার রাজ‍্যের দুইপাশে বসার অধিকার পাই। কিন্ত যিশু এখানে পরিস্কার জানিয়ে দিলেন। যে ঈশ্বরের কাছে সুপারিশ করে বসানোর ক্ষমতা আমার নেই।ঈশ্বর যাকে বসাবেন সেই বসবে। এভাবে প্রচলিত ইঞ্জিল বা বাইবেল প্রমাণ করে যে, কারো জন্য কোনো সুপারিশ, দো‘আ বা শাফা‘আত করার অধিকার যিশু বা ঈসা মাসীহের নেই।

শাফায়াত বিষয়ে ইসলামি আকিদা:-

শাফায়াত কাকে বলে? তা কত প্রকার ও কি কি?

উত্তর: শাফা‘আত শব্দটির আভিধানিক অর্থ মিলিয়ে নেওয়া, নিজের সাথে একত্রিত করে নেওয়া। শরী‘আতের পরিভাষায় কল্যাণ লাভ অথবা অকল্যাণ প্রতিহত করার আশায় অপরের জন্য মধ্যস্থতা করাকে শাফা‘আত বলে। শাফা‘আত দু’প্রকার। যথা:

প্রথমত: শরী‘আত সম্মত শাফা‘আত। কুরআন ও সুন্নাহয় এ প্রকার শাফা‘আতের বর্ণনা এসেছে। তাওহীদপন্থীগণ এ ধরণের শাফা‘আতের হকদার হবে।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন,

«مَنْ أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَقَدْ ظَنَنْتُ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ أَنْ لَا يَسْأَلُنِي عَنْ هَذَا الْحَدِيثِ أَحَدٌ أَوَّلُ مِنْكَ لِمَا رَأَيْتُ مِنْ حِرْصِكَ عَلَى الْحَدِيثِ أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ خَالِصًا مِنْ قَلْبِهِ أَوْ نَفْسِهِ– “কিয়ামতের দিন কোন ব্যক্তি আপনার শাফা‘আতের বেশি হকদার হবে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবু হুরায়রা! তোমার হাদীস শেখার আগ্রহ দেখে আমার ধারণা ছিল যে, তোমার পূর্বে এ বিষয় সম্পর্কে কেউ জিজ্ঞাসা করবে না। যে ব্যক্তি অন্তর থেকে ইখলাসের সাথে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন সে ব্যক্তি আমার শাফা‘আতের সবচেয়ে বেশি হকদার হবে।[14]

এ প্রকার শাফা‘আতের জন্য ৩টি শর্ত রয়েছে–

  1. শাফা‘আতকারীর ওপর আল্লাহর সন্তুষ্টি থাকা।
  2. যার জন্য সুপারিশ করা হবে, তার উপরও আল্লাহর সন্তুষ্টি থাকা।
  3. শাফা‘আতকারীর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে শাফা‘আত করার অনুমতি থাকা।

আল্লাহ তা‘আলা এ শর্তগুলো কুরআন মজীদে উল্লেখ করেছেন।

আল্লাহ বলেন, وَكَم مِّن مَّلَكٖ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ لَا تُغۡنِي شَفَٰعَتُهُمۡ شَيۡ‍ًٔا إِلَّا مِنۢ بَعۡدِ أَن يَأۡذَنَ ٱللَّهُ لِمَن يَشَآءُ وَيَرۡضَىٰٓ﴾ [النجم: ٢٦]– “আকাশে অনেক ফিরিশতা রয়েছেন, যাদের কোনো সুপারিশ ফলপ্রসু হয় না। কিন্তু আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা ও যাকে পছন্দ করেন এবং যাকে শাফা‘আত করার অনুমতি দেন তার কথা ভিন্ন।”[15]

আল্লাহ বলেন, ﴿مَن ذَا ٱلَّذِي يَشۡفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذۡنِهِۦۚ﴾ [البقرة: ٢٥٥] –“কে এমন আছে যে, সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া?”[16]

আল্লাহ বলেন, يَوۡمَئِذٖ لَّا تَنفَعُ ٱلشَّفَٰعَةُ إِلَّا مَنۡ أَذِنَ لَهُ ٱلرَّحۡمَٰنُ وَرَضِيَ لَهُۥ قَوۡلٗا﴾ [طه: ١٠٩]– “দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন এবং যার কথায় সন্তুষ্ট হবেন সে ছাড়া কারও সুপারিশ সেদিন কোনো উপকারে আসবে না।”[17]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন ,﴿وَلَا يَشۡفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ٱرۡتَضَىٰ﴾ [الانبياء: ٢٨]– “তারা শুধু তাদের জন্যে সুপারিশ করবেন, যাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট।”[18]

সুতরাং শাফা‘আত পাওয়ার জন্য উপরোক্ত তিনটি শর্ত থাকা আবশ্যক। এ শাফা‘আত আবার দু’প্রকার

১) সাধারণ শাফা‘আত: সাধারণ শাফা‘আতের অর্থ হলো, সৎ বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা এবং যার জন্য ইচ্ছা আল্লাহ শাফা‘আত করার অনুমতি দিবেন। এ ধরণের শাফা‘আত আল্লাহর অনুমতি পেয়ে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, অন্যান্য নবী-রাসূল, সত্যবাদীগণ, শহীদগণ এবং নেককারগণ করবেন। তাঁরা পাপী মুমিনদেরেকে জাহান্নামের আগুন থেকে বের করে আনার ব্যাপারে সুপারিশ করবেন।

২) বিশেষ ও নির্দিষ্ট সুপারিশ: এ ধরণের শাফা‘আত নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য নির্দিষ্ট। এ শাফা‘আতের মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো হাশরের মাঠের শাফা‘আত। হাশরের মাঠে মানুষ যখন বিপদে পড়ে যাবে এবং অসহনীয় আযাবে গ্রেপ্তার হবে, তখন তারা একজন সুপারিশকারী খুঁজে ফিরবে। যাতে করে তারা এ ভীষণ সংকট থেকে রেহাই পেতে পারে। প্রথমে তারা আদম আলাইহিস সালামের কাছে গমণ করবে। অতঃপর পর্যায়ক্রমে নূহ, ইবরাহীম, মূসা, ঈসা আলাইহিমুস সালামের কাছে যাবে। তারা কেউ সুপারিশ করতে সাহস করবেন না। অবশেষে তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসবে। তিনি মানুষকে এ বিপদজনক অবস্থা থেকে মুক্ত করার জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবেন। আল্লাহ তাঁর দো‘আ এবং শাফা‘আত কবূল করবেন। এটিই হলো সুমহান মর্যাদা, যা আল্লাহ তাকে দান করেছেন। আল্লাহ বলেন,

﴿وَمِنَ ٱلَّيۡلِ فَتَهَجَّدۡ بِهِۦ نَافِلَةٗ لَّكَ عَسَىٰٓ أَن يَبۡعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامٗا مَّحۡمُودٗا﴾ [الاسراء: ٧٩]– “আপনি রাত্রির কিছু অংশ জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদাতে মশগুল থাকুন। এটা আপনার জন্য অতিরিক্ত (নফল ইবাদাত)। আপনার রব অচিরেই আপনাকে সুমহান মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করবেন।”[19]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সমস্ত সুপারিশ করবেন, তার মধ্যে জান্নাতবাসীদের জন্য জান্নাতে প্রবেশ করানোর সুপারিশ অন্যতম। জান্নাতবাসীগণ যখন পুলসিরাত পার হবে, তখন জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে একটি সেতুর উপরে আটকানো হবে। সেখানে তাদের পারস্পরিক যুলুম-নির্যাতনের প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। নির্যাতন থেকে পবিত্র করার পর জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুপারিশক্রমে জান্নাতের দরজা খোলা হবে।

দ্বিতীয়ত: শরী‘আত বিরোধী শাফা‘আত: এধরণের শাফা‘আত কোনো কাজে আসবে না। মুশরিকরা আল্লাহর নিকটে তাদের বাতিল মা‘বূদদের কাছ থেকে এধরণের শাফা‘আতের আশা করে থাকে। অথচ এ শাফা‘আত তাদের কোনো কাজে আসবে না।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَمَا تَنفَعُهُمۡ شَفَٰعَةُ ٱلشَّٰفِعِينَ [المدثر: ٤٨]– “কোনো সুপারিশকারীর সুপারিশ তাদের উপকারে আসবে না।”কারণ, আল্লাহ তা‘আলা মুশরিকদের শির্কের ওপর সন্তুষ্ট নন। তাদের জন্য শাফা‘আতের অনুমতি দেওয়াও সম্ভব নয়। আল্লাহ যার উপর সন্তুষ্ট হবেন, কেবল তার জন্যই সুপারিশ বৈধ। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য ফাসাদ ও কুফুরী পছন্দ করেন না।[20]

মুশরিকরা কী যুক্তিতে মূর্তি পূজা করত তা উল্লেখ করে আল্লাহ বলেন,﴿ هَٰٓؤُلَآءِ شُفَعَٰٓؤُنَا عِندَ ٱللَّهِ﴾ [يونس: ١٨]– “এরা আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে।”[21]

সুতরাং মুশরিকরা তাদের বানোয়াট মূর্তিদের উপাসনা করার পিছনে যুক্তি ছিল যে, মূর্তিরা তাদের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে। এটা তাদের মূর্খতার পরিচয়। কারণ, তারা এমন জিনিসের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের চেষ্টা করে, যা তাদেরকে আল্লাহ থেকে আরো দূরে সরিয়ে দেয়।

 

 

রেফারেন্স:

  • [১] আল-কুরআন,নাহল ১৬:১৪৪।
  • [২] আল-কুরআন,নিসা ৪:১১৩।
  • [৩]আল-কুরআন,হাশর ৫৯:৭।
  • [৪] আল-কুরআন, নাজম ৫৩: ২-৪। 
  • [৫] তাফসীর আবু বকর জাকারিয়া,সূরা মায়িদাহ ১১৮ নং আয়াতের তাফসির দ্রষ্টব‍্য।
  • [৬] আল-কুরআন,মায়িদাহ ৫:৭২।
  • [৭] আল-কুরআন,নিসা ৪:৬৪।
  • [৮] সহীহ বুখারী,হাদিস নং: ৪৩৮।
  • [৯] সহীহ বুখারী,হাদিস নং: ৯৯।
  • [১০] সহীহ বুখার,হাদিস নং: ৬৩০৪।
  • [১১] সহীহ বুখারী,হাদিস নং: ৭৪৪০
  • [১২] বাইবেল, মথি (Matthew) ৭: ১৫-১৩।
  • [১৩] বাইবেল, মথি (Matthew) ২০: ২০-২৩।
  • [১৪] ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম-শাইখ মুহাম্মদ বিন-সালিহ আল-উসাইমিন (রাহ.); পৃষ্ঠা ১৬২-১৬৫,প্রশ্ন; শাফায়াত কাকে বলে? তা কত প্রকার ও কি কি?
  • [১৫] আল-কুরআন, নাজম ৫৩:২৬।
  • [১৬] আল-কুরআন,বাকারাহ ২:২৫৫।
  • [১৭] আল-কুরআন, ত্ব-হা ২০: ১০৯।
  • [১৮] আল- কুরআন,আম্বিয়া ২১: ২৮।
  • [১৯] আল- কুরআন,বনী ইসরাঈল ১৭: ৭৯।
  • [২০] আল- কুরআন,মুদ্দাসসির ৭৪: ৪৮।
  • [২১] আল- কুরআন,ইউনুস ১০: ১৮।