অভিযোগ: অনেক অমুসলিম ভাই ও বোনেরা প্রশ্ন করেন যে, "সৃষ্টিকর্তাকে আপনারা (মুসলিমরা) আল্লাহ্ বলে ডাকেন অথচ গড অথবা ঈশ্বর বলেন না কেন?
জবাব: তো এর জবাবে বলব, প্রথমত সর্বশেষ ঐশীগ্রন্থ পবিত্র আল কোরআন মাজীদের দৃষ্টিতে মহান আল্লাহ্ সুবাহানাহু ওয়াতাআ'লার প্রকৃত পরিচয় মাত্র চারটি বাক্যে ১১২ নং সূরা আল-ইখলাসের (الإخلاص), আয়াত ১-৪ এ বলা হয়েছে।
১] قُلۡ هُوَ اللّٰهُ اَحَدٌ –
বলঃ তিনিই আল্লাহ, এক ও অদ্বিতীয়।
২] اَللّٰهُ الصَّمَدُ –
আল্লাহ কারও মুখাপেক্ষী নন।
৩] لَمۡ یَلِدۡ ۬ۙ وَ لَمۡ یُوۡلَدۡ –
তাঁর কোন সন্তান নেই এবং তিনিও কারও সন্তান নন,
৪] وَ لَمۡ یَکُنۡ لَّهٗ کُفُوًا اَحَدٌ –
এবং তাঁর সমতুল্য কেহই নেই।" [অনুবাদক: মুজিবুর রহমান]
সূরা ইখলাসের বিস্তারিত তাফসীর পড়ুন
দ্বিতীয়ত, মহান আল্লাহ্ সুবহানু ওয়াতা'আলার নামের ব্যাপারে কোরআন ও সহীহ হাদিসে কী বলা হয়েছে? যারা কোরআন ও সহীহ হাদিসের সামান্য জ্ঞান রাখে তারাও জানেন যে, কোরআন-হাদিসে মহান আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নাম বর্ণিত হয়েছে। আর মহান আল্লাহ্ আমাদের কে সেসকল নাম ধরে তাঁকে ডাকার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন পবিত্র কোরআনের ৭ নং সূরা আল আরাফ (الأعراف), আয়াত: ১৮০-তে এরশাদ করা হয়েছে:-
وَلِلَّهِ ٱلْأَسْمَآءُ ٱلْحُسْنَىٰ فَٱدْعُوهُ بِهَا وَذَرُوا۟ ٱلَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِىٓ أَسْمَٰٓئِهِۦ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ –
আর আল্লাহর জন্য সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে, সুতরাং তোমরা তাঁকে সেই সব নামেই ডাকবে, আর তাদেরকে বর্জন কর যারা তাঁর নাম বিকৃত করে, সত্ত্বরই তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের প্রতিফল দেয়া হবে।" [অনুবাদক: মুজিবুর রহমান]
এছাড়া আরো বলা হয়েছে পবিত্র কোরআনের ১৭ নং সূরা বনী-ইসরাঈল (الإسرا), আয়াত ১১০ এ বলা হয়েছে:-
قُلِ ٱدْعُوا۟ ٱللَّهَ أَوِ ٱدْعُوا۟ ٱلرَّحْمَٰنَ أَيًّا مَّا تَدْعُوا۟ فَلَهُ ٱلْأَسْمَآءُ ٱلْحُسْنَىٰ وَلَا تَجْهَرْ بِصَلَاتِكَ وَلَا تُخَافِتْ بِهَا وَٱبْتَغِ بَيْنَ ذَٰلِكَ سَبِيلًاবলঃ তোমরা ‘আল্লাহ’ নামে আহবান কর অথবা ‘রহমান’ নামে আহবান কর, তোমরা যে নামেই আহবান কর না কেন, সব সুন্দর নামই তো তাঁর! তোমরা সালাতে তোমাদের স্বর উচু করনা এবং অতিশয় ক্ষীণও করনা; এই দুই এর মধ্য পন্থা অবলম্বন কর।" [অনুবাদক: মুজিবুর রহমান]
অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ সুবহানু ওয়াতা'আলার সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে যা পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন সূরায় আলোকপাত করা হয়েছে।" [পবিত্র কোরআন, সূরা হাশরের ২৪ নং আয়াত; সূরা ত্বা-হার ৮ নং আয়াত] "মহান আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে।" কিন্তু এসব নাম যেন কোনরুপ মনের উপর ছবি না আনে। তবে নাম হতে হবে সুন্দর।
[নোট:] মহান আল্লাহ্ সুবহানু ওয়াতা'আলাকে সে সকল সুন্দর নামে ডাকা যাবে যেগুলো স্বয়ং তাঁর নিজের দেওয়া নাম অর্থাৎ যেসব সুন্দর নামগুলো মহান আল্লাহ্ নিজেই নিজের জন্য নির্ধারণ করেছেন; (মুসনাদে আহমদ, হা/৩৭০৪, সিলসিলা সহীহাহ, আলবানী)।
সুতরাং আমাদের কর্তব্য হল, মহান আল্লাহ তাআলা নিজে যে সকল নাম নিজের জন্য পছন্দ করেছেন সেসব নামে তাঁকে আহ্বান করা উচিত। আর এমন নাম ধরে ডাকা উচিৎ নয়, যা তিনি নিজের জন্য নির্ধারণ করেননি বা যেগুলো কোরআন-সুন্নায় বর্ণিত হয় নি।
● গডকে "আল্লাহ্" বলার কারণ:
মুসলিমরা সৃষ্টিকর্তাকে খোদা বলার পরিবর্তে "আল্লাহ্" বলে ডাকে। "গড" ইংরেজি শব্দ। খাঁটি আরবি শব্দ হলো "আল্লাহ্" যা সর্বোত্তম রবের সত্তাগত নাম। আর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ নাম হচ্ছে "আল্লাহ্"। আর পৃথিবীর প্রধানতম ধর্মীয় গ্রন্থের ভেতর আল্লাহ্ শব্দের মজুদ রয়েছে। এখন আমরা মুসলিমরা কেন আরবিতে "আল্লাহ্" বলে ডাকি? কেন ইংরেজিতে "God/গড" বা বাংলায় "ঈশ্বর" বলে ডাকি না? আসলে এর কারণটা হচ্ছে আমরা অন্য সব নাম আর শব্দগুলো কে বিকৃত করতে পারি। ইংরেজি "গড" শব্দের রূপান্তর ঘটতে পারে। যেমন: ইংরেজি God এর সাথে "s" যুক্ত করলে Gods অর্থাৎ বহু বচন হবে। আপনি আল্লাহর সাথে "s" যুক্ত করতে পারেন না। কারণ মহান আল্লাহর বহু বচন নেই। তাঁর বিপরীতে কেউই নেই। তাঁর সমকক্ষ কোন কিছুই নেই। আবার আমরা মুসলিমরা বাংলায় আল্লাহ্ কে "ঈশ্বর" বলে ডাকতে পারি না এবং কী ডাকাও যাবে না। কারণ কী? কারণ হলো এই শব্দের বহু বচন আছে। "ঈশ্বর'' শব্দটি পুরুষ লিঙ্গ। এ শব্দের স্ত্রী লিঙ্গ হচ্ছে ''ঈশ্বরী''। আবার ''ভগবান'' শব্দটি পুরুষ লিঙ্গ। এ শব্দের স্ত্রী লিঙ্গ হচ্ছে ''ভগবতী'।" ''গড'' শব্দটি পুরুষ লিঙ্গ। এ শব্দের স্ত্রী লিঙ্গ হচ্ছে ''গডেস''।
অথচ মহান আল্লাহর কোন বহু বচন নেই। পবিত্র কোরআনের ১১২ নং সূরা ইখলাসের মধ্যে বলা হয়েছে, "বলঃ তিনিই আল্লাহ, একক/অদ্বিতীয়।" যদি আপনি ess যুক্ত করেন তাহলে Godess অর্থাৎ নারী গড হবে। মহান আল্লাহর নারী পুরুষ বলতে কিছুই নেই। তাঁর কোন লিঙ্গভেদ নেই। কেননা তিনি একক সত্ত্বা। আপনি যদি বড় হাতের G দিয়ে God লিখেন তাহলে এটা হবে সত্যিকার আর যদি ছোট হাতের g দিয়ে god লিখেন তাহলে এর অর্থ বোঝাবে নকল গড। ইসলামে একটজনই সত্য আল্লাহ্ আছে; অন্য কোন মিথ্যা আল্লাহ্ নেই। যদি আপনি god এর সাথে father যুক্ত করেন তাহলে হবে godfather. সে আমার গডফাদার!!! আপনি মহান আল্লাহর সাথে "আব্বা" কিংবা "ফাদার" যুক্ত করতে পারেন না বা যুক্ত করার সুযোগই নেই। যদি আপনি god এর সাথে mother যুক্ত করেন তাহলে হবে godmother. আপনি আল্লাহর সাথে "মাদার" বা আম্মি আল্লাহ্" বলার অবকাশ নেই। ইসলামে "আম্মি আল্লাহ্" বলতে কিছুই নেই। যদি আপনি গড এর পূর্বে টিন যুক্ত করেন তাহলে হবে টিনগড "বাতিল গড"। আর ইসলামে "টিন আল্লাহ্" বলতে কিছুই নেই। মহান আল্লাহ্ খাঁটি এবং একক অর্থাৎ অদ্বিতীয় সত্ত্বা, যার সমকক্ষ দ্বিতীয় কেউই নেই। আপনি আল্লাহ্ কে যে কোন সুন্দর নামে ডাকতে পারেন তবে তা হতে হবে তাঁর নিজের দেওয়া নাম।
[নোট: মহান আল্লাহর কোন স্ত্রী, সন্তান, সঙ্গী/সাথী নেই" (পবিত্র কোরআন ২:১১৬; ৪:১৭১; ৫:১৮; ৬:১০০,১০১; ৯:৩০;৩১; ১৬:৫৭; ১৭:৪০,১১১; ১৮:৪; ১৯:৩৫, ৮৮, ৯১, ৯২; ২১:২৬; ২৩:৯১; ২৫:২; ৩৭:১৪৯, ১৫২,১৫৩; ৩৯:৪; ৪৩:৮১; ৫২:৩৯; ৭২:৩) ইত্যাদি আয়াতে বলা হয়েছে]
ভগবান: ভগবান এর স্ত্রী লিঙ্গ ভগবতী। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের পুরুষ দেবতাকে ভগবান আর স্ত্রী দেবতাকে ভগবতী বলে বলে। আর দেব-দেবী কোন ঈশ্বর নয় (সনাতন ধর্ম অনুযায়ী)। আর ইসলামে এসব বাতিল। আবার الله ''আল্লাহ'' শব্দটি পুরুষ লিঙ্গও বুঝায় না, স্ত্রী লিঙ্গও বুঝায় না। আল্লাহ পুরুষও নন এবং স্ত্রীও নন। এছাড়া এই শব্দটির বিপরীত শব্দ নেই ও সমার্থক শব্দও নেই। ''আল্লাহ'' শব্দের কোনো ভাষান্তর বা অনুবাদ হয় না। এ শব্দটি দ্বারা বহু অর্থ বুঝায় যা আল্লাহ শব্দটি ভিন্ন অন্য কোন একক শব্দ দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। ''আল্লাহ'' শব্দের ''আল'' বলতে বুঝায় একমাত্র (the/only one) আর ''ইলাহ'' বলতে যা বুঝায় তার একটি অর্থ হলো ''সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী''। তাই আল্লাহ শব্দের কোনো বিকল্প নেই। অর্থাৎ إِنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ/নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সকল কিছুর উপরে ক্ষমতাবান। এছাড়া দেখবেন মানুষের নামের সাথে ঈশ্বর শব্দ যুক্ত হয়। যেমন: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ঈশ্বরী প্রসাদ সাহা (ঐতিহাসিকবীদ) ইত্যাদি। জায়গার নামের সাথে ঈশ্বর শব্দ যুক্ত হয়। যেমন: ঈশ্বরদী। অথচ কোন মানুষের নাম "আল্লাহ্" রাখা যায় না। কারণ কী? কারণ এটি মহান সৃষ্টিকর্তার প্রকৃত সত্ত্বাগত নাম। এই নামে কারো নাম রাখা জায়েজ নয় বরং তা হারাম। কেননা এই নামটি একমাত্র সর্বোত্তম রবের জন্য খাস। এছাড়া মহান আল্লাহ্ সুবহানু ওয়াতা'আলাকে গড অথবা ঈশ্বর বলে আহ্বান করাটা শির্কের পর্যায়ে চলে যায়। কারণ গড, ঈশ্বর শব্দের স্ত্রী লিঙ্গ, বহু বচন, সমার্থক শব্দ, বিপরীত শব্দ রয়েছে। অপরদিকে আল্লাহর স্ত্রী, সন্তান বা অন্য কোন সঙ্গী নেই বরং তিনি এসকল কিছু থেকে বহু ঊর্ধ্বে এবং তিনি অতি পবিত্র মহাসত্ত্বা। আর আপনি যদি আল্লাহ্ কে গড অথবা ঈশ্বর বলে ডাকেন তাহলে আপনি তাঁর সাথে অংশীদার স্থাপন করলেন অর্থাৎ আপনি পক্ষান্তরে আল্লাহর স্ত্রী আছে বলে সাবস্ত্য করে শিরক করে ফেললেন, যা কিনা জঘন্য কাজ। আর মহান আল্লাহ্ আসমান জমিন পর্যন্ত সমস্ত পাপ ক্ষমা করলেও শিরকের গুনাহ কখনোই ক্ষমা করবেন না। "[পবিত্র কোরআন ৪:৪৮; ৫:৭২; ৬:১০০ ইত্যাদি]
এই কারণে আমরা মুসলিমরা মহান সৃষ্টিকর্তাকে ঈশ্বর, গড না বলে বরং তাঁর সত্তাগত নামেই ডাকি আল্লাহ্ বলে। আর এটাই সর্বোত্তম।
কৃতজ্ঞতায়: ড.জাকির নায়েক স্যার।