বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
খ্রিস্টান বনাম মুসলিম সংলাপ
বিষয়: যীশু তথা ঈসা আঃ কতৃক বিঘোষিত সাহায্যকারী কে পবিত্র আত্মা, নাকি শেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ ﷺ?
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতাহু প্রিয় ভাই ও বোনেরা। আশা করি অবশ্যই সবাই মহান আল্লাহ্ সুবাহানাহু ওয়াতা'আলার অশেষ রহমত ও করুণায় ভালো এবং সুস্থ আছেন। আজকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ে ধারাবাহিক পর্ব আকারে বাইবেল থেকেই নবী মুহাম্মদ ﷺ এর সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী গুলোর যথার্থ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ যুক্তি প্রমাণ উপস্থাপন করব ইনশাআল্লাহুতাআলা। যেন অবশ্যই সবাই সত্য কে জানতে বুঝতে পারেন। এবং আমরা এও প্রমাণ করে দেখাব যে কোরআন যে বলেছে পূর্ববর্তী কিতাবের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল নবী মুহাম্মদ ﷺ এর আগমনের সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে তা বিস্তারিত তুলে ধরব + খ্রিস্টান ধর্মের প্রকৃত অবস্থা কেমন তা সত্য সন্ধানী পাঠক বৃন্দের নিকট জানাব। যাই হোক এটা একটা অতীত গুরুত্বপূর্ণ ধারাবাহিক সিরিজ। ইনশাআল্লাহু তাআলা সবাই আমাদের সাথে থাকুন এবং সত্য জেনে অপরকে জানতে সহায়তা করুন ইনশাআললাহ। এই সিরিজগুলো নিয়মিত পর্ব আকারে পোস্ট করা হবে। যাই হোক মূল আলোচনাতে চলে আসি।
প্রত্যেক ব্যক্তিরই অধিকার আছে নিজ ধর্ম প্রচার করার কিন্তু অন্যদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অধিকার কারো নেই। নিজের ধর্মবিশ্বাস গোপন করে প্রতারণা করা আপত্তিকর। সকল সম্প্রদায়ের ন্যায় ইহুদি-খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেক ভালো মানুষ রয়েছেন, পবিত্র কোরআনে তাদের প্রশংসা করা হয়েছে (পবিত্র কোরআন ২:৯৬; ৩:৭৫,১১০,১১৩-১১৪,১৯৯; ৪:১৬২; ৫:৬৬,৮২; ৭:১৫৯,১৬৮ সহ ইত্যাদি আয়াত দ্রষ্টব্য)। কিন্তু খ্রিষ্ট ধর্মের প্রাণপুরুষ পৌল মিথ্যার মাধ্যমে ধর্মপ্রচার পূণ্যকর্ম বলে প্রচার করেছেন। তিনি বলেছেন:
7. আমার মিথ্যা কথা বলবার দরুন আরো ভালোভাবে প্রকাশ পায় যে,খোদা সত্যবাদী। এতে যখন খোদা গৌরব লাভ করেন তখন পাপী বলে আমাকে দোষী করা হয় কেন?"(রোমীয় ৩:৭)।
এজন্য মিথ্যাচার অনেক খ্রিস্টান প্রচারকের মূলনীতিতে পরিণত হয়েছে। তিনটি মিথ্যা দাবীর উপরে খ্রিস্টীয় প্রচারণার ভিত্তি:
(১) বাইবেলকে "প্রকৃত তাওরাত-ইঞ্জিল" বলে দাবি করা;
(২) খ্রিস্ট ধর্মকে বিশ্ব ধর্ম বলে দাবি করা এবং
(৩) প্রচলিত খ্রিস্ট ধর্মকে ঈসা মসিহের প্রকৃত ধর্ম বলে দাবি করা।
অথচ বাইবেলই এ তিনটি দাবি মিথ্যা বলে নিশ্চিত ভাবে প্রমাণ করে। বাইবেলই প্রমাণ করে যে,তাতে অগণিত মিথ্যা ও সাংঘর্ষিক তথ্য বিদ্যমান। ইঞ্জিল প্রমাণ করে যে, ঈসা মাসীহ কেবলমাত্র ইস্রায়েল বংশের হারানো মেষপালের জন্য প্রেরিত ছিলেন (মথি ১০:৫-৬; মার্ক ৪:১১-১২)। ঈসা আঃ নিজে অন্য অন্যান্য জাতির নবী না হওয়ার কারণে তাদেরকে এড়িয়ে চলতেন (মথি ১৫:২৪,২৬)। (মথি ২৮:১৯-২০)-এ সমস্ত জাতিকে শিক্ষা দেয়ার যে নির্দেশ বোঝানো হয়েছে তাতে ইস্রায়েল জাতির ১২ টি গোষ্ঠীর সকলকেই নির্দিষ্ট করে বোঝানো হয়েছে,(প্রমাণ স্বরুপ দেখুন: (The New American Standard Bible,R..S Version)। আর মার্ক (১৬:১৫) ইঞ্জিলের পুরানো পাণ্ডুলিপিতে নেই, পরবর্তীকালে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ প্রমাণ হলো যে ইস্রায়েল বংশীয় ছাড়া অন্য কেউ তাঁর ধর্ম দ্বারা মুক্তি পাবে না। সম্ভব বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠিত মিথ্যা হলো সাধু পৌলের বানানো ধর্মকে "ঈসায়ী ধর্ম বা খ্রিস্ট ধর্ম " নামকরণ। খ্রিস্ট ধর্মের সাথে প্রচলিত ইঞ্জিলের মধ্যে বিদ্যমান ঈসা মসিহের কথা ও কর্মের সাথে কোন মিল নেই। পৌলের উদ্ভাবিত ঈসায়ী ধর্মের মূল ভিত্তি :
(১) যীশুর ঈশ্বরত্ব
(২) ত্রিত্ববাদ
(৩) পুত্রত্ব
(৪) আদমের পাপে সকল মানুষের জাহান্নামী হওয়া
(৫) তওবা সত্ত্বেও মানুষের ক্ষমা করায় আল্লাহর অক্ষমতা (নাঊযুবিল্লাহ মিনযালিক; আস্তাগফিরুল্লাহ)
(৬) মানুষের মুক্তির জন্য ঈশ্বরের নিজ পুত্রকে কুরবানী করতে বাধ্য হওয়া
(৭) যীশুর ক্রুশে মরে অভিশপ্ত হওয়া
(৮) যীশুর নরকভোগ করা
(৯) শরিয়তের বিধিবিধান বাতিল হওয়া।
...প্রচলিত ইঞ্জিলের মধ্যে এসকল বিষয়ে ঈসা মসিহের কোন সুস্পষ্ট বক্তব্য নেই বরং এগুলোর বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট বক্তব্য অনেক। ঈসা আঃ বলে গেছেন : নবুয়্যত ইসরায়েলি বংশধারা থেকে ইসমাইলী বংশধারায় স্থানান্তর হবে অর্থাৎ খোদার রাজ্য ইয়াহুদিদের হাতছাড়া হয়ে আরবদের হাতে চলে যাবে। এক নজরে যীশু তথা ঈসা আঃ এর পরে আগত- "আর একজন সহায়/সাহায্যকারী "- কে? মুহাম্মদ ﷺ নাকি পাক-রুহ? এখানে সবাই পাঠক বন্ধুরা মনোযোগ সহকারে খেয়াল করুন এবং বুঝেন:
(ক) (প্রচলিত) ইঞ্জিল শরিফ, ৪র্থ খন্ড, ইউহান্না/যোহন (১৪:১৫-১৭) তে যীশু তথা ঈসা আঃ ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছেন:
15. তোমরা যদি আমাকে মহব্বত কর ,তবে আমার সমস্ত হুকুম মেনে চলবে।
16. আমি পিতার নিকট প্রার্থনা করব এবং তিনি তোমাদের কাছে আর একজন সাহায্যকারী (ἄλλον Παράκλητον--allon Paraklēton/another helper) প্রেরণ করবেন। তিনি তোমাদের কাছে চিরকাল থাকবেন। সেই সাহায্যকারীই সত্যের আত্মা [Spirit of Truth] ..।
17. দুনিয়া তাঁকে গ্রহণ করতে পারে না এবং তাঁকে জানেও না। তোমরা কিন্তু তাঁকে জানো, কারণ তিনি তোমাদের সঙ্গে থাকবেন, আর তিনি তোমাদের অন্তরে বাস করবেন. (তিনি মুহাম্মদ ﷺ নন).........।"
অনলাইন সোর্স থেকে পড়ুন:
(খ) ইউহান্না ১৪:২৫-২৬ এ ঈসা আঃ বলেছেন
25. তোমাদের সংগে থাকতে থাকতেই এ সমস্ত কথা আমি তোমাদের বলছি।
26. সেই সাহায্যকারী অর্থাৎ পাকরূহ (পবিত্র আত্মা) যাকে পিতা আমার নামে পাঠিয়ে দিবেন। তিনিই সমস্ত বিষয় তোমাদের শিক্ষা দিবেন। আর আমি তোমাদের যা কিছু বলেছি সেই সমস্ত তোমাদের মনে করিয়ে দিবেন।"
অনলাইন সোর্স থেকে পড়ুন:
(গ) ইউহান্না (১৫:২৬) ঈসা আঃ আরো বলেছেন:
26. সেই সাহায্যকারীকে আমি পিতার নিকট থেকে তোমাদের নিকট পাঠিয়ে দিব, তিনি যখন আসবেন তখন তিনিই 'আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দিবেন'।ইনিই সত্যের রুহ (Spirit of Truth).
অনলাইন সোর্স থেকে পড়ুন:
(ঘ) ইউহান্না (১৬:৭-৮) ঈসা আঃ আরো বলেছেন:-
7. তথাপি আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, আমার যাওয়া তোমাদের পক্ষে ভাল, কারণ আমি না গেলে, সেই সহায় তোমাদের নিকটে আসিবেন না; কিন্তু আমি যদি যাই, তবে তোমাদের নিকটে তাঁহাকে পাঠাইয়া দিব।
8. আর তিনি আসিয়া পাপের সম্বন্ধে, ধার্মিকতার সম্বন্ধে ও বিচারের সম্বন্ধে, জগৎকে দোষী করিবেন।
অনলাইন সোর্স থেকে পড়ুন:
(ঙ) যোহন (১৬:১২) ঈসা আঃ আরো বলেছেন:-
12. তোমাদিগকে বলিবার আমার আরও অনেক কথা আছে, কিন্তু তোমরা এখন সেই সকল সহ্য করিতে পার না।"
অনলাইন সোর্স থেকে পড়ুন:
(চ) যোহন (১৬:১৩) ঈসা আঃ আরো বলেছেন:-
13. পরন্তু তিনি সত্যের আত্মা, যখন আসিবেন, তখন পথ দেখাইয়া তোমাদিগকে সমস্ত সত্যে লইয়া যাইবেন; কারণ তিনি আপনা হইতে কিছু বলিবেন না, কিন্তু যাহা যাহা শুনেন, তাহাই বলিবেন, এবং আগামী ঘটনাও তোমাদিগকে জানাইবেন।
14. তিনি আমাকে মহিমান্বিত করিবেন...!
অনলাইন সোর্স থেকে পড়ুন:
https://bible.com/bible/1791/jhn.16.13.ROVU
ইঞ্জিল (?) এর উপরোল্লিখিত ৬ টি উদ্ধৃতিতে "সেই সাহায্যকারীর" মধ্যে কমপক্ষে ১৪ টি বৈশিষ্ট্য/শর্ত/গুণগুলো অবশ্যই বিদ্যমান থাকতে হবে। এখন এসব বৈশিষ্ট্য কার মধ্যে রয়েছে বিশ্ব মানবতার দূত হযরত মুহাম্মদ ﷺ নাকি ত্রিত্ববাদী খ্রিস্টানদের দাবিকৃত পবিত্র আত্মা? মুসলিমদের দাবি অনুযায়ী অবশ্যই এসকল বৈশিষ্ট্য একমাত্র নবী মুহাম্মদ ﷺ এর দ্বারা পরিপূর্ণ হয়েছে। কিন্তু ত্রিত্ববাদী খ্রিস্টানদের দাবি অনুযায়ী এসকল বৈশিষ্ট্য কী পবিত্র আত্মা দ্বারা পরিপূর্ণ হয়েছে কী? পাঠক আপনার কী মনে হয় উপরোল্লিখিত উদ্ধৃতিগুলোতে যেসব বৈশিষ্ট্যের কথা যীশু জানান দিয়েছেন তা কার দ্বারা পরিপূর্ণ হতে পারে? তাহলে আজ না হয় একবার ভেবেই দেখুন?
আজ এই পর্যন্তই।
আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে কবুল করুন এবং এই সত্য পথে মৃত্যু পর্যন্ত দৃঢ় অবিচল থাকার মতো তাওফিক দান করুন। আমীন