জবাব:- জাতির পিতা ইব্রাহিম আঃ এর সময় থেকে খৎনা করার প্রথা চলে আসছে। নবী ইব্রাহিম আঃ সর্বপ্রথম সুন্নতে খৎনা করেন।
وَإِذِ ابْتَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ رَبُّهُ بِكَلِمَاتٍ فَأَتَمَّهُنَّ ۖ قَالَ إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا ۖ قَالَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِي ۖ قَالَ لَا يَنَالُ عَهْدِي الظَّالِمِينَ
যখন ইব্রাহীমকে তাঁর পালনকর্তা কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা করলেন, অতঃপর তিনি তা পূর্ণ করে দিলেন, তখন পালনকর্তা বললেন, আমি তোমাকে মানবজাতির নেতা করব। তিনি বললেন, আমার বংশধর থেকেও! তিনি বললেন আমার অঙ্গীকার অত্যাচারীদের পর্যন্ত পৌঁছাবে না।(সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ১২৪)
◉ তাফসীরকারীরা ব্যাখ্যা করেছেন যে, এসব পরীক্ষার মধ্যে সুন্নতে খৎনা ছিল একটি।
وَجَاهِدُوا فِي اللَّهِ حَقَّ جِهَادِهِ ۚ هُوَ اجْتَبَاكُمْ وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ ۚ مِلَّةَ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ ۚ هُوَ سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمِينَ مِنْ قَبْلُ وَفِي هَٰذَا لِيَكُونَ الرَّسُولُ شَهِيدًا عَلَيْكُمْ وَتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ ۚ فَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَاعْتَصِمُوا بِاللَّهِ هُوَ مَوْلَاكُمْ ۖ فَنِعْمَ الْمَوْلَىٰ وَنِعْمَ النَّصِيرُ
তোমরা আল্লাহর জন্যে শ্রম স্বীকার কর যেভাবে শ্রম স্বীকার করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে পছন্দ করেছেন এবং ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা রাখেননি। তোমরা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের ধর্মে কায়েম থাক। তিনিই তোমাদের নাম মুসলমান রেখেছেন পূর্বেও এবং এই কোরআনেও, যাতে রসূল তোমাদের জন্যে সাক্ষ্যদাতা এবং তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমন্ডলির জন্যে। সুতরাং তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে শক্তভাবে ধারণ কর। তিনিই তোমাদের মালিক। অতএব তিনি কত উত্তম মালিক এবং কত উত্তম সাহায্যকারী।(সূরাঃ হাজ্জ্ব, আয়াতঃ ৭৮)
◉ খ্রিস্টানরা দাবী করে ইব্রাহিম (আ:) মুসলিম নন। কিন্তু কুরআন অনুযায়ী তিনি মুসলিম। আমরা মূলত তার ধর্মে কায়েম আছি। যেহেতু আমরা তার ধর্মে কায়েম আছি, সুতরাং অবশ্যই তিনি যেহেতু নিজে খতনা করেছেন তাই আমাদেরও খতনা করতে হবে।
ইব্রাহিম আঃ খতনা করেছিলেন ৮০ বছর বয়সে প্রমান দেখুন নিচে:-
১২৫৬। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ইবরাহীম (আঃ) আশি বছরোর্দ্ধ বয়সে খতনা করেন। তিনি কাদূম নামক স্থানে খতনা করেন। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, ‘কাদুম’ একটি জায়গার নাম।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) [হাদিসটি চেক করুন]
হাদিসের কোথাও কী খৎনা করতে বলা হয়েছে?
ইসলামে খৎনাকে "ফিতরাত"(Fitra) বলা হয়েছে।
حَدَّثَنَا عَلِيٌّ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، قَالَ الزُّهْرِيُّ حَدَّثَنَا عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، رِوَايَةً " الْفِطْرَةُ خَمْسٌ ـ أَوْ خَمْسٌ مِنَ الْفِطْرَةِ ـ الْخِتَانُ، وَالاِسْتِحْدَادُ، وَنَتْفُ الإِبْطِ، وَتَقْلِيمُ الأَظْفَارِ، وَقَصُّ الشَّارِبِ ".
৫৮৮৯.আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত:
তিনি বলেছেনঃ ফিতরাত (অর্থাৎ মানুষের জন্মগত স্বভাব) পাঁচটি: খৎন্না করা, ক্ষুর ব্যবহার করা (নাভীর নিম্নে), বগলের পশম উপড়ে ফেলা, নখ কাটা ও গোঁফ খাটো করা। [৭] [৫৮৯১, ২৬৯৭; মুসলিম ২/১৬, হাঃ ২৫৭, আহমাদ ৭১৪২] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৪৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৩৫৭)
ফুটনোটঃ [৭] গোঁফ ছোট করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে এগুলো মুখের ভিতর এসে না পড়ে। গোঁফ বেশী দীর্ঘ হলে নাকের এবং বাইরের ময়লা মিশে মুখের ভিতরে ঢোকে। পানি পান করার সময় এবং আহারের সময় গোঁফে আটকানো নাকের ও বাইরের রোগজীবানু ও ময়লাগুলো মুখের ভিতরে প্রবেশ করে নানাবিধ রোগ সৃষ্টি করতে পারে। তাই ইসলামে গোঁফ লম্বা করে রাখা নিষিদ্ধ। কেননা এটা স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতার বিরোধীও বটে। যথাসময়ে গোঁফ কাটা, গুপ্তস্থানের ক্ষৌরকার্য্য করা, বগলের চুল ছেঁড়া ও নখ কাটা উচিত। ৪০ রাত বা দিন যেন অতিক্রম না করে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়াও উচিত। কারণ রসূল এগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার নির্ধারণ করতে গিয়ে বলেছেনঃ ৪০ রাত বা দিন যেন অতিক্রান্ত না হয় (মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ্ ও আহমাদ)
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৮৮৯
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস। [হাদিসটি চেক করুন]
এ সম্পর্কিত আরও হাদিস দেখুন :-
৬২৯৭. আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষের স্বভাবগত বিষয় হলো পাঁচটিঃ খাতনা করা, নাভির নীচের পশম কামানো, বগলের পশম উপড়ে ফেলা, গোঁফ ছাঁটা এবং (অতিরিক্ত) নখ কাটা। [৫৮৮৯] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৪৭)
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬২৯৭
হাদিসের মানঃ সহিহ(Sahih) [হাদিসটি চেক করুন]
◉ সুতরাং হাদিস অনুযায়ী এটা সুস্পষ্ট যে , ইসলামে খতনা করতে বলা হয়েছে। আমাদের জাতির পিতা ইব্রাহিম (আ:) নিজেও খৎন্না করেছেন। নবী মুহাম্মদ (সা:) নিজেও খতনা করেছেন যদি আপনি সীরাত পড়েন তবে এই তথ্য পেয়ে যাবেন।
হ্যাঁ! তবে ইসলামে খতনা করা ফরজ নই। এটি সুন্নত এবং কিছু আলেমদের মতে এটি ওয়াজিব। যেহেতু নবী-রাসূলরা এটি পালন করেছেন তাই আমরা তাদের অনুসারী হয়ে খতনা করে থাকি।
খতনা কী কেবল ইসলামেই? অন্যান্য ধর্ম কী বলে?
ইহুদি ধর্ম ও খ্রিস্টান ধর্মে খতনা করতে কঠোর-ভাবে বলা হয়েছে।
যিশু নিজে জন্মের ৮ম দিনে খতনা করেছে, রেফারেন্স দেখুন :-
(খ্রিস্টানধর্ম)
On the eighth day, when it was time to circumcise the child, he was named Jesus, the name the angel had given him before he was conceived." (Luke 2:21)
বাংলা অনুবাদ :-
21. এর আট দিন পরে খতনা করার সময়ে শিশুটির নাম রাখা হল যীশু৷ তাঁর মাতৃগর্ভে আসার আগেই স্বর্গদূত এই নাম রেখেছিলেন৷ (লুক 2:21)
(ইহুদি ধর্ম)
[10]This is my covenant, which ye shall keep, between me and you and thy seed after thee; Every man child among you shall be circumcised. (Genesis 17:10)
বাংলা অনুবাদ
10. এটাই চুক্তি যা তুমি মেনে চলবে| তোমার ও আমার মধ্যে এটাই হল চুক্তি| তোমার উত্তরপুরুষগণের জন্যেও এটাই চুক্তি| যত পুত্র সন্তান হবে প্রত্যেককে খতনা করতে হবে| (আদিপুস্তক 17:10)
References
- Kids health: male infant, The Children’s Hospital at Westmead.
- Circumcision of infant , Royal Australasian College of Physicians.
- Circumcision: A parents' guide to routine circumcision of male infants and , 2011, Royal Australian College of Physicians.
- Guidelines – Performing circumcision on infant , Urological Society of Australia and New Zealand.
- Guidelines for male circumcision in the Victorian public hospital system – information for health, 2011, Department of Health and Human Services.
- , 2016, familydoctor.org, American Academy of Family Physicians, USA.
- , 2013, healthychildren.org, American Academy of Pediatrics.
- Circumcision , 2018, Mayo Clinic, Mayo Foundation for Medical Education and Research, USA.
- , 2017, MedlinePlus, US National Library of Medicine.