Are you sure?

কুরআন »  বিবিধ

ইসলামে ডাকাতি ও লুটতরাজের কঠোর শাস্তি

بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما

 

ডাকাতি কী?

যারা ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট,নদ-নদী ও মরুভূমিতে নিরস্ত্র নিরীহ মানুষের উপর হামলা করে বা প্রকাশ্যে মানুষের ধন-সম্পদ ছিনিয়ে নিয়ে যায়, তাদেরকে ডাকাত বলে। কুরআনের পরিভাষায় তাদেরকে মুহারিব বলা হয়।

 

 

ইসলামে ডাকাতি ও লুটতরাজের নিষিদ্ধতা

 

ইমরান ইবনুল হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি ছিনতাই ও লুটতরাজ করে, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।

- তিরমিযী ১১২৩; মিশকাত ২৯৪৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৯৩৭

 

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি লুট করে কিছু আত্মসাৎ করে , সে আমাদের দলভুক্ত নয়।

সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৩৩৩৫

 

‘আদী ইবনু সাবিত (রহঃ)-এর নানা ‘আবদুল্লাহ্‌ ইবনু ইয়াযীদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লুটতরাজ করতে এবং জীবকে বিকলাঙ্গ করতে নিষেধ করেছেন।

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৪৭৪

 

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লুটতরাজ ও অঙ্গহানি করতে নিষেধ করেছেন।

(আধুনিক প্রকাশনী- ৫১১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫০০৭)

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৫১৬

 

রাসূল (সাঃ) লোকদের বাইয়াত গ্রহণ করতেন এই শর্তে, যে তারা ডাকাতি করবে না।

কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমূহ (রহঃ) ... উভয়ে উবাদাহ ইবনু সামিত (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি সেসব নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ছিলাম, যারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বাই’আত নিয়েছিলেন। আমরা শপথ নিলাম যে, আমরা আল্লাহর সাথে কোন কিছু শারীক করবো না, ব্যভিচার করবো না, চুরি করবো না, কাউকে হত্যা করবো না- যেগুলো (যাদেরকে হত্যা করতে) আল্লাহ নিষিদ্ধ করেছেন। কিন্তু ন্যায়সঙ্গতভাবে (অর্থাৎ- কিসাস তথা অবৈধ হত্যার পরিবর্তে বা মুরতাদ হলে বা বিয়ের পর যিনা করলে হত্যা করবে)। আর ডাকাতি করবো না ও কোন প্রকার নিষিদ্ধ কর্মও করবো না। যদি আমরা ঐরূপ কার্যাবলী না করে চলতে পারি তবে আমাদের জান্নাত মিলবে। আর যদি আমরা উল্লিখিত অপরাধের কোনটিতে লিপ্ত হই, তবে এর ফায়সালা আল্লাহর কাছেই। ইবনু রুমহ বলেন, এর ফায়সালা মহান আল্লাহর কাছেই।

 

দেখুনঃ সহিহ মুসলিম (হাদিস একাডেমী ৪৩৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৩১৫, ইসলামিক সেন্টার ৪৩১৬), সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৮৯৩( আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬০৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৬১১)

 

কোনো মুমিন ডাকাতি করতে পারে না…

আবূ হুরায়রা (রা) সূত্রে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেনঃ যখন কোন ব্যভিচারী ব্যভিচার করে, তখন সে মুমিন অবস্থায় ব্যভিচার করে  না, যখন চোর চুরি করে, তখন সে মুমিন অবস্থায় চুরি করে না, যখন কোন মদ্যপায়ী মদ পান করে, তখন সে মুমিন অবস্থায় মদপান করে না, আর যখন কোন ডাকাত লোক চক্ষুর সামনে ডাকাতি করে, তখনও সে মুমিন অবস্থায় ডাকাতি করে না।

সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৪৮৭০

 

রাসূলুল্লাহ নিজের সম্পদ রক্ষাকে জিহাদ ঘোষণা দিয়েছেন, সেটা রক্ষা করতে গিয়ে মৃত্যুকে শহিদের মর্যাদা দিয়েছেন,

কাবূস ইব্‌ন আবুল মুখারিক (রহঃ) তাঁর পিতা হতে থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললো, যদি কেউ আমার মাল লুট করতে আসে, তখন আমি কি করবো? তিনি বললেনঃ তুমি তাকে আল্লাহ্‌র নামে উপদেশ দাও। সে ব্যক্তি বললো, যদি সে উপদেশ গ্রহণ না করে? তিনি বললেনঃ তবে তুমি তোমার অন্যান্য মুসলিম পড়শীর সাহায্য গ্রহণ কর। সে বললোঃ যদি ঐরূপ কোন মুসলিম প্রতিবেশী আমার না থাকে? তিনি বললেনঃ তবে তুমি শাসকের আশ্রয় গ্রহণ করবে। সে বললোঃ যদি শাসকও দূরে থাকে? তিনি বললেনঃ তবে তুমি তোমার মাল রক্ষার্থে জিহাদ করবে; যাতে তুমি শহীদ হয়ে যাও কিংবা তোমার সম্পদ রক্ষায় সক্ষম হও।

- সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৪০৮১

হাদিসের মান: হাসান সহিহ

 

তিনি অপরের সম্পদ রক্ষায় মৃত্যুবরণ করাকেও শহীদী মৃত্যু আখ্যায়িত করেছেন,

ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যাক্তি অপর ব্যাক্তির ধন-সম্পদ লুট করতে চাইলে সে তাতে বাধা দিতে গিয়ে তার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে নিহত হলে শহীদ গণ্য হয়।

 

বুখারী ২৪৮০, মুসলিম ১৪২, তিরমিযি ১৪১৮, ১৪১৯, ১২২০, ১৪২১, আবু দাউদ ৪৭৭১, ৪৭৭২, আহমাদ ৫৯১, ১৬০১, ১৬৩১, ১৬৫৫, ২৭৭৫, ৬৪৮৬, ৬৭৭৭, ৬৭৮৪, ৬৭৯০, ৬৮৭৪, ৬৮৮৩, ৬৯১৭, ৬৯৭৫, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ২৫৮১

 

খাদ্যের ঘাটতি হলেও শত্রু এলাকায় লুটপাট হারাম, মৃত জন্তুর মতোই হারাম। সাহাবীরা অজ্ঞতাবশত খাদ্যের অভাবে লুট করলে তিনি সুস্পষ্ট করে দেন।

গ্রন্থঃ সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ৯/ জিহাদ (كتاب الجهاد)
হাদিস নম্বরঃ ২৭০৫
১৩৮. শত্রু এলাকায় খাদ্য ঘাটটি হলেও তা লুটপাট করা নিষেধ
২৭০৫। ‘আসিম ইবনু কুলাইব (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি একজন আনসারীর নিকট থেকে বর্ণনা করেন যে, আনসার লোকটি বললেন, একদা ‘আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে এক সফরে বের হই। লোকেরা ভীষণ খাদ্যকষ্টের শিকার হলো। ইতোমধ্যে কিছু সংখ্যক বকরী তাদের হস্তগত হয়। কিন্তু বণ্টনের পূর্বেই তারা সেগুলো লুণ্ঠন করে নেয়। আমাদের হাঁড়িগুলোতে গোশত টগবগ করে ফুটছিল। এমন সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ধনুকে ভর দিয়ে এখানে উপস্থিত হলেন এবং ধনুক দিয়ে গোশতের হাঁড়ি উল্টিয়ে ফেলে দিয়ে তা বালির সাথে মিশিয়ে দিলেন। তিনি বললেনঃ এই লুটের মাল মৃত জন্তুর চেয়ে কিছু কম নয় অথবা বলেছেনঃ মৃত জন্তু এই লুটের মালের চেয়ে কিছু কম নয়।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=60073

সমার্থক হাদিসঃ

সা‘লাবাহ ইবনুল হাকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা শক্রপক্ষের মেষপালের নাগাল পেয়ে তা লুট করলাম। অতঃপর আমরা সেগুলোর গোশত পাতিলে করে রান্না করছিলাম। এমতাবস্থায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাতিলগুলো অতিক্রমকালে (সেগুলো উল্টে) ফেলে দেয়ার নির্দেশ দিলে তা উল্টে ফেলে দেয়া হলো। অতঃপর তিনি বলেনঃ লুটতরাজ করা হালাল নয়।

সিলসিলা সহীহাহ ১৬৭৩, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৯৩৮

 

শাস্তি

ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদল লোক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উট লুট করে নিয়ে যায়, ইসলাম ধর্মত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে যায় এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর একজন ঈমানদার রাখালকে হত্যা করে। অতঃপর তিনি তাদের পিছনে লোক পাঠান! তাদের ধরে নিয়ে আসা হলে তিনি তাদের হাত-পা কেটে দেন এবং চোখ উপড়ে ফেলেন। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, এদের সম্পর্কে ‘মুহারাবার’ আয়াত (৫:৩৩) নাযিল হয়। হাজ্জাজ যখন আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে এদের সম্পর্কে প্রশ্ন করেন, তখন তিনি এদের সম্পর্কিত হাদীসটি বর্ণনা করেন।

সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৩৬৯

 

আসুন দেখে নিই সেই আয়াতটি,

"যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং যমীনে ফাসাদ করে বেড়ায়, তাদের আযাব কেবল এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে কিংবা বিপরীত দিক থেকে তাদের হাত ও পা কেটে ফেলা হবে অথবা তাদেরকে দেশ থেকে বের করে দেয়া হবে। এটি তাদের জন্য দুনিয়ায় লাঞ্ছনা এবং তাদের জন্য আখিরাতে রয়েছে মহাআযাব।" - কুরআন, সূরা মায়িদাহ ৩৩

 

ইসলামে ডাকাতির ৪ ধরনের শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যথা:

 

১. হত্যা ২. শূলবিদ্ধকরণ ৩. হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেওয়া ৪. নির্বাসিত করা।

 

উল্লিখিত আয়াত ও হাদিসেগুলোর আলোকে ফুকাহায়েকেরাম বলেন, ডাকাতের অপরাধ অনুপাতে যে কোনো একটি শাস্তি প্রয়োগ করতে হবে। যে ডাকাত শুধু হত্যা করে ধন-সম্পদ না নেয়, তাকে হত্যা করা হবে। যে শুধু ধন-সম্পদ অপহরণ করে কিন্তু কাউকে হত্যা করে না, তাকে হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা হবে। যে হত্যাও করে আবার ধন-সম্পদও নিয়ে যায়, তাকে শূলে চড়িয়ে হত্যা করা হবে। আর যে শুধু মানুষকে ভয় দেখায়, হত্যা বা ধন-সম্পদ নিয়ে যায় না, তাকে নির্বাসিত করা হবে।

 

আল মুগনি ১০/৩০৩,৩০৪

 

 

আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।

 

পুনশ্চঃ ডাকাতি নিষিদ্ধ যেই দ্বীনে, সেই দ্বীনের রাসূলকেই ডাকাত বলে একদল অজ্ঞ।