Are you sure?

কুরআন »  বিবিধ

পর্ব: ১] কোরআনে ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যতা: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর স্বপ্নের সত্যতা"[সূরা ফাতহ ২৭]

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
বিষয়: পবিত্র কোরআনের ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যতা।

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু প্রিয় ভাই ও বোনেরা। আশা করি অবশ্যই সবাই মহান আল্লাহ্ সুবাহানাহু ওয়াতা'আলার অশেষ রহমত ও দয়ায় ভালো এবং সুস্থ আছেন। আজকে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা সিরিজ নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি ইনশাআল্লাহু তাআলা। আর এটা হলো "পবিত্র কোরআন মাজীদ যে মহান আল্লাহর বাণী অর্থাৎ এটি যে পবিত্র ঐশীগ্রন্থ" তার সততার সমর্থনে আমরা এর ভেতরের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো কে একত্রিত করে সত্যান্বেষী পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করছি মাত্র। আমাদের অনেক অমুসলিম ভাই ও বোনেরা রয়েছেন যারা কিনা পবিত্র কোরআন যে একটা ঐশীগ্রন্থ তা বিশ্বাস করতে চান না। তারা অনলাইন থেকে সংশয়বাদীদের লেখা পড়ে ইসলাম সম্পর্কে ভুল বুঝে অপপ্রচারে লিপ্ত হন। তাই তাদের জন্য + সাধারণ মুসলিমদের জন্য এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। পবিত্র কোরআন আসলেই আসমানি কিতাব কিনা এটা আমরাও নির্ণয় করতে পারি এই আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে। আর সেটা হলো এর ভেতরের বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট আয়াতের সাথে আধুনিক বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত সত্য গুলোর সঙ্গে তুলনা করে মিলিয়ে দেখা, এর ভেতরের করা ভবিষ্যদ্বাণীগুলো বাস্তবে কতটুকু ফলেছে আর কতটুকু ফলে নাই, কোন অংশ মিথ্যায় পরিণত হয়েছে কিনা তা ইতিহাস থেকেই যাচাই বাছাই করে বাস্তবতার আলোকে নির্ণয় করে দেখা। আর এটাই হলো আমাদের জন্য সহজ একটা পদ্ধতি। কাজেই আমরাও সেটাই করে দেখাব ইনশাআল্লাহু তাআলা। এর মাধ্যমে মুসলিম অমুসলিমদের জন্য দুটো উপকার হবে।

i) যারা মুসলিম তাদের ইমান আরো দৃঢ় এবং মজবুত হবে;
ii) আর যারা অমুসলিম তাদের কাছে কোরআনের সত্য বাণী প্রকাশিত হবে এবং ইসলাম গ্রহণে উদ্বুদ্ধ হবে।

সর্বোপরি সত্যান্বেষী ব্যক্তি তার সত্য পথ খুঁজে পাবেন ইনশাআল্লাহু তাআলা।

মহামহিমান্বিত ঐশীগ্রন্থ পবিত্র আল কোরআন মাজীদ সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ সুবাহানাহু ওয়াতা'আলার বাণী। আর এর ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যতা সমূহ এটার ১০০% নিশ্চয়তা প্রদান করে। কেননা পবিত্র কোরআন মাজীদে বহু আগাম খবর দেওয়া হয়েছে , যেগুলো পরবর্তীকালে ঠিক সংবাদ অনুযায়ীই সংঘটিত হয়েছিল। এ সকল আগাম খবরের মধ্যে রয়েছে:-

ক) পবিত্র কোরআনের ৪৮ নং সূরা আল ফাত্‌হ (الفتح), আয়াত: ২৭

 ٱلْحَرَامَ إِن شَآءَ ٱللَّهُ ءَامِنِينَ مُحَلِّقِينَ رُءُوسَكُمْ وَمُقَصِّرِينَ لَا تَخَافُونَ فَعَلِمَ مَا لَمْ تَعْلَمُوا۟ فَجَعَلَ مِن دُونِ ذَٰلِكَ فَتْحًا قَرِيبًا
অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর রাসূলের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করেছেন, আল্লাহর ইচ্ছায় তোমরা অবশ্যই মাসজিদুল হারামে প্রবেশ করবে নিরাপদে - কেহ কেহ মাথা মুন্ডন করবে, কেহ কেহ কেশ কর্তন করবে; তোমাদের কোন ভয় থাকবেনা। আল্লাহ জানেন, তোমরা যা জাননা। এটা ছাড়াও তিনি তোমাদের দিয়েছেন এক সদ্য বিজয়।" [অনুবাদক:মুজিবুর রহমান] (এটা ছিল পবিত্র কোরআনের একটি ভবিষ্যদ্বাণী)

উক্ত আয়াতের তাফসীর পড়তে ক্লিক করুন:

https://hadithbd.com/quran/email/?id=4610

 

আরব উপদ্বীপের অবস্থা যখন অনেকাংশে মুসলিমদের অনুকূলে আসে, তখন ইসলামী দাওয়াতে কার্যকারিতা ও বৃহত্তম বিজয়ের বিভিন্ন নিদর্শন আস্তে আস্তে প্রকাশ লাভ করতে থাকে। অমুসলিম কাফের মুশরিকরা ছয় বছর যাবৎ মসজিদুল হারামের দরজা মুসলিমদের জন্য বন্ধ করে রেখেছিল। এই সন্ধির পর মসজিদুল হারামে মুসলিমদের ইবাদত বন্দীগীর ইতিবাচক দাবি পূরণের সূচনা শুরু হলো।

ষষ্ঠ হিজরির যিলকাদ মাসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-স্বপ্ন দেখলেন:-"তিনি সাহাবায়ে কেরামসহ মক্কায় নিৰ্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে প্রবেশ করছেন এবং ইহরামের কাজ সমাপ্ত করে কেউ কেউ নিয়মানুযায়ী মাথা মুণ্ডন করেছেন, কেউ কেউ চুল কাটিয়েছেন এবং তিনি বায়তুল্লাহ প্রবেশ করেছেন ও বায়তুল্লাহর চাবি তার হস্তগত হয়েছে।" (আর-রাহিকুল মাখতূম: হুদাইবিয়ার সন্ধি, ফাতহুম মুবীন বা মহাবিজয়; এছাড়া আরো পড়তে পারেন "সিরাতুন নবী" লেখক: ড.আলী মুহাম্মদ আস সাল্লাবী -মিশর) [বিস্তারিত পড়তে উক্ত সূরার ১ নং আয়াতের তাফসীরে আহসানুল বয়ান, তাফসীরে আবু বকর যাকারিয়া, তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ, তাফসীরে ইবনে কাসীর এবং ফি-যিলাযিল কোরআন পড়তে পারেন ইনশাআল্লাহ্]

সূরা আল ফাত্হ এর ১ নং আয়াতের তাফসীর পড়তে ক্লিক করুন:
https://hadithbd.com/quran/error/?id=4584

এটা উল্লেখিত সূরায় বর্ণিত ঘটনার একটি অংশ। নবী-রাসূলগণের স্বপ্ন ওহী হয়ে থাকে। তাই স্বপ্নটি যে বাস্তবরূপ লাভ করবে, তা নিশ্চিত ছিল। কিন্তু স্বপ্নে এই ঘটনার কোনো সন, তারিখ বা মাস নির্দিষ্ট করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে স্বপ্নটি মক্কা বিজয়ের সময় প্রতিফলিত হওয়ার সময় ছিল। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-যখন সাহাবায়ে কেরামকে স্বপ্নের বৃত্তান্ত শুনালেন, তখন তারা সবাই পরম আগ্রহের সাথে মক্কা যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন। সাহাবায়ে কেরামের প্রস্তুতি দেখে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও ইচ্ছা করে ফেললেন। কেননা স্বপ্নে কোনো বিশেষ সাল অথবা মাস নির্দিষ্ট ছিল না। কাজেই এই মুহূর্তেই উদ্দেশ্য সিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল। কিন্তু মক্কার কাফেররা তাঁকে মক্কা প্রবেশে বাধাগ্রস্ত দেওয়ায় ফিরে আসলে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-আমাদের বললেন,"আমরা ওমরা করব।" কিন্তু আমরা তো ওমরা করতে পারলাম না। সেই মতে সিদ্দিকে আকবর (রাঃ) প্ৰথমেই উমর (রাঃ)-এর জওয়াবে বলেছিলেনঃ আপনার সন্দেহ করা উচিত নয়, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর স্বপ্ন কোনো সময় ও বছর নির্দিষ্ট ছিল না। এখন না হলে পরে হবে"(বুখারী: ২৫২৯)।

এ কথা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) শোনার পর বললেন:-"আমি কী তোমাদের বলেছি এ বছর-ই ওমরা করব?" সকলেই বলল, না। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের বললেন,"অচিরেই তোমরা মক্কা গিয়ে ওমরা আদায় করতে পারবে"(সহীহ বুখারি ৩১৮১)।

যাইহোক অতঃপর তারা ফিরে আসার পূর্বে এই শর্তে সন্ধি করতে সম্মত হয় যে, এ বছর তিনি মদীনায় ফিরে যাবেন এবং পরবর্তী বছর তিনি উমরা করতে আসবেন। আর এই হুদাইবিয়া সন্ধিতে প্রায় ১৪০০ জন সাহাবী অংশগ্রহণ করেছিলেন। সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে অনেকেই বিশেষত উমর রাঃ এ ধরনের সন্ধি করতে অসম্মত ছিলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এই সন্ধিকে পরিণামে মুসলিমদের জন্যে সাফল্যের উপায় মনে করে গ্রহণ করে নেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন ওমরার এহরাম খুলে হুদাইবিয়া থেকে ফেরত রওয়ানা হলেন, তখন পথিমধ্যে এই পূর্ণ সূরা অবতীর্ণ হয়। এতে বলা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর স্বপ্ন সত্য এবং অবশ্যই বাস্তবরূপ লাভ করবে। কিন্তু তার সময় এখনও হয়নি। পরে দুবছর পর যখন মক্কা বিজয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হন তখন সাহাবীদের সংখ্যা ছিল দশ হাজার। আর এরুপ সময় এই স্বপ্ন বাস্তবরূপ লাভ করে। এই সন্ধি প্রকৃতপক্ষে মক্কা বিজয়ের কারণে হয়েছিল। তাই একে প্রকাশ্য বিজয় বলে ব্যক্ত করা হয়েছে। বিনা রক্তপাতে মুসলিমগণ মক্কা বিজয় করেন। আর মহান আল্লাহ্ এই সম্পর্কে সূরা আল ফাত্‌হ (الفتح), আয়াত ১ এ বলেছেন :

اِنَّا فَتَحۡنَا لَکَ فَتۡحًا مُّبِیۡنًا

অর্থঃ নিশ্চয়ই আমি তোমাকে দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়।" [অনুবাদক:মুজিবুর রহমান]

আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ ও অপর কয়েকজন সাহাবী বলেন, তোমরা মক্কা বিজয়কে বিজয় বলে থাক; কিন্তু আমরা হুদাইবিয়ার সন্ধিকেই বিজয় মনে করি।

জাবের রাঃ বলেন:-"আমি হুদাইবিয়ার সন্ধিকে বিজয় মনে করি। বারা ইবন আযেব বলেন, তোমরা মক্কা বিজয়কেই বিজয় মনে কর এবং নিঃসন্দেহ তা বিজয়; কিন্তু আমরা হুদাইবিয়ার ঘটনার বাইয়াতে রিদওয়ানকেই আসল বিজয় মনে করি। এতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একটি বৃক্ষের নীচে উপস্থিত চৌদ্দশত সাহাবীর কাছ থেকে জেহাদের শপথ নিয়েছিলেন" (সহীহ বুখারী ৪২৮, ৪১৫০; মুসলিম ৭৯৪; ইবনে জারীর ২৬/৯৪)।

পরিশেষে পরের বছর হুদাইবিয়ায় পূর্বোল্লেখিত সন্ধি সুসম্পন্ন হয় মুসলিমগণ অতি নিরাপত্তার সাথে বিনা রক্তপাতে মসজিদুল হারামে প্রবেশ করেন ও উমরাহ আদায় করেন এবং আল্লাহ তাঁর নবীর স্বপ্নকে সত্য করে দেখান। আর পবিত্র কোরআনের আগাম বাণীও অর্থাৎ ভবিষ্যদ্বাণী সত্যে পরিণত হয়।

উক্ত ঘটনা পড়তে চাইলে এই লিঙ্কেও ক্লিক করতে পারেন: https://quranenc.com/en/browse/bengali_zakaria/48/1

আর এ থেকেই প্রমাণিত হয় যে,"পবিত্র কোরআন মাজীদ হলো মহান স্রস্টার বাণী এবং রাসূল (ﷺ) ছিলেন একজন সত্য নবী। আল্লাহ্ আমাদের সবাই কে সহজ সরল পথে পরিচালনা কর। (আমীন)