কুরআনে বৃক্ষের কথা
"আর তিনিই আসমান থেকে বর্ষণ করেছেন বৃষ্টি। অতঃপর আমি এ দ্বারা উৎপন্ন করেছি সব জাতের উদ্ভিদ। অতঃপর আমি তা থেকে বের করেছি সবুজ ডাল-পালা। আমি তা থেকে বের করি ঘন সন্নিবিষ্ট শস্যদানা। আর খেজুর বৃক্ষের মাথি থেকে (বের করি) ঝুলন্ত থোকা। আর (উৎপন্ন করি) আঙ্গুরের বাগান এবং সাদৃশ্যপূর্ণ ও সাদৃশ্যহীন যয়তুন ও আনার। দেখ তার ফলের দিকে, যখন সে ফলবান হয় এবং তার পাকার প্রতি। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে এমন কওমের জন্য যারা ঈমান আনে।" - কুরআন ৬:৯৯
"তার মাধ্যমে তিনি তোমাদের জন্য উৎপন্ন করেন ফসল, যাইতুন, খেজুর গাছ, আঙ্গুর এবং সকল ফল-ফলাদি। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে এমন কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে।" - কুরআন ১৬:১১
"তারা কি লক্ষ করে না যে, আমি শুকনো ভূমিতে পানি প্রবাহিত করি। অতঃপর তা দিয়ে শষ্য উদগত করি, যা থেকে তাদের গবাদি পশু ও তারা নিজেরা খাদ্য গ্রহণ করে? তবুও কি তারা লক্ষ্য করবে না।" - কুরআন ৩২:২৭
"যিনি সবুজ বৃক্ষ থেকে তোমাদের জন্য আগুন তৈরী করেছেন। ফলে তা থেকে তোমরা আগুন জ্বালাও।" - কুরআন ৩৬:৮০
"তোমরা যে আগুন জ্বালাও সে ব্যাপারে আমাকে বল, তোমরাই কি এর (লাকড়ির গাছ) উৎপাদন কর, না আমি করি? একে আমি করেছি এক স্মারক ও মরুবাসীর প্রয়োজনীয় বস্তু।" - কুরআন ৫৬:৭১-৭৩.
"মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ করুক। আমিই প্রচুর বারি বর্ষণ করি, অতঃপর আমি ভূমিকে প্রকৃষ্টরূপে বিচূর্ণ করি এবং আমি উৎপন্ন করি শস্য, আঙুর, শাকসবজি, জইতুন, খেজুর এবং বহু বৃক্ষবিশিষ্ট উদ্যান, ফল ও গবাদিপশুর খাদ্য, এটা তোমাদের এবং তোমাদের পশুগুলোর জীবনধারণের জন্য।" - কুরআন ৮০:২৪-৩২
হাদিসে বৃক্ষের কথা
যে কোন মুসলিম ফলবান গাছ রোপণ করে কিংবা কোন ফসল ফলায় আর তা হতে পাখী কিংবা মানুষ বা চতুষ্পদ জন্তু খায় তবে তা তার পক্ষ হতে সদাকাহ্ বলে গণ্য হবে।দেখুনঃ বুখারী (তাওহীদ ২৩২০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২১৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২১৬৯, তাওহীদ ৬০১২, ইফাবা ৫৪৭৪); মুসলিম ২২/২, হাঃ ১৫৫৩; আহমাদ ১২৪৯৭
‘কোনো ব্যক্তি বৃক্ষরোপণ করে তা ফলদার হওয়া পর্যন্ত তার পরিচর্যা ও সংরক্ষণে ধৈর্য ধারণ করে, তার প্রতিটি ফল যা নষ্ট হয়, তার বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তাকে সদকার নেকি দেবেন। ’ (মুসনাদ আহমাদ: ১৬৭০২)
‘যে ব্যক্তি কোনো বৃক্ষ রোপণ করে, আল্লাহ তাআলা এর বিনিময়ে তাকে ওই বৃক্ষের ফলের সমপরিমাণ প্রতিদান দান করবেন। ’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৩৫৬৭)
আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃযদি কিয়ামত এসে যায় এবং তখন তোমাদের কারো হাতে একটি চারাগাছ থাকে, তবে কিয়ামত হওয়ার আগেই তার পক্ষে সম্ভব হলে যেন চারাটি রোপন করে।দেখুনঃ আদাবুল মুফরাদ ৪৮১, আহমাদঃ ১২৯৩৩ ও ১৩০১২
অপ্রয়োজনে গাছ-কাটা নিষেধ
আব্দুল্লাহ ইবনু হুবশী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কুল গাছ কাটবে, আল্লাহ তাকে মাথা উপুড় করে জাহান্নামে ফেলবেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ)-কে এ হাদীসের তাৎপর্য সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটি দীর্ঘ হাদিসের সংক্ষিপ্ত রূপ। এই হাদিস দ্বারা উদ্দেশ্য, খোলা ময়দানের কুল গাছ, যার ছায়ায় পথচারী ও চতুস্পদ প্রাণী আশ্রয় নিয়ে থাকে তা কোনো ব্যক্তি নিজ মালিকানাহীন, অপ্রয়োজনে ও অন্যায়ভাবে কেটে ফেললে আল্লাহ তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।দেখুনঃ আবু দাউদ ৫২৩৯
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলতেন, ‘তোমরা কোনো বৃক্ষ উৎপাটন করবে না।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৯৪৩০)
মক্কাকে আল্লাহ্ হারাম করেছেন, কোন মানুষ তাকে হারাম করেনি। তাই যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও আখিরাতে বিশ্বাস রাখে তার জন্য সেখানে রক্তপাত করা, সেখানকার গাছ কাটা বৈধ নয়।' বুখারী ১০৪, ১৮৩২,৪২৯৫; মুসলিম ১৫/৮২, হাঃ ১৩৫৪, আহমাদ ১৬৩৭৩, ২৭২৩৪
মদিনা এখান হতে ওখান পর্যন্ত হারাম (রূপে গণ্য)। সুতরাং তার গাছ কাটা যাবে না এবং এখানে কোন ধরনের অঘটন (বিদ‘আত, অত্যাচার ইত্যাদি) ঘটানো যাবে না। যদি কেউ এখানে কোন অঘটন ঘটায় তাহলে তার প্রতি আল্লাহ্র এবং ফেরেশতাদের ও সকল মানুষের লা’নত (অভিশাপ)। (বুখারী ১৮৬৭, ৭৩০৬, মুসলিম ১৫/৮৫, হাঃ ১৩৬৬) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৭৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৭৪৩ )
প্রয়োজনে গাছপালা কাটা যাবে-
"তোমরা যে আগুন জ্বালাও সে ব্যাপারে আমাকে বল, তোমরাই কি এর (লাকড়ির গাছ) উৎপাদন কর, না আমি করি? একে আমি করেছি এক স্মারক ও মরুবাসীর প্রয়োজনীয় বস্তু।" - কুরআন ৫৬:৭১-৭৩
মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ..... আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একটি গাছ মুসলিমদের (পথ গমন করার সময়) কষ্ট দিত। এক ব্যক্তি এসে সে গাছটি কেটে ফেললো, এরপর সে জান্নাতে প্রবেশ করলো। সূত্রঃ সহিহ মুসলিম (হাদিস একাডেমী ৬৫৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৪৩৪, ইসলামিক সেন্টার ৬৪৮৪)
স্বঘোষিত নাস্তিকদের চেরিপিকিং
গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)অধ্যায়ঃ ৩৩/ বর্গাচাষ (كتاب المزارعة)হাদিস নম্বরঃ ২১৭৫১৪৫০. খেজুর গাছ ও অন্যান্য গাছ কেটে ফেলা। আনাস (রা.) বলেন, নবী (সঃ) খেজুর গাছ কেটে ফেলার আদেশ দেন এবং টা কেটে ফেলা হয়।২১৭৫। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনূ নযির গোত্রের বুওয়াইরা নামক স্থানে অবস্থিত বাগানটির খেজুর গাছ জ্বালিয়ে দিয়েছেন এবং বৃক্ষ কেটে ফেলেছেন। এ সম্পর্কে হাস্সান (রাঃ) (তাঁর রচিত কবিতায়) বলেছেন, বুওয়াইরা নামক স্থানে অবস্থিত বাগানটিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে আর বনূ লূয়াই গোত্রের সর্দাররা তা সহজে মেনে নিল।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) হাদিসটি চেক করুন
গ্রন্থঃ সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)অধ্যায়ঃ ৩৩। জিহাদ ও সফর (كتاب الجهاد والسير)হাদিস নম্বরঃ ৪৪৪৪১০. কাফিরদের গাছ-পালা কাটা ও জ্বালিয়ে দেয়া বৈধ৪৪৪৪-(২৯/১৭৪৬) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, মুহাম্মাদ ইবনু রুমূহ ও কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ..... 'আবদুল্লাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাযীর গোত্রের খেজুর বাগান জ্বালিয়ে দিলেন এবং কেটে দিলেন। বুওয়াইরাহ ছিল সে বাগানের নাম। কুতাইবাহ এবং ইবনু রুমূহ (রহঃ) উভয়েই তাদের হাদীসে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন। এরপর মহান আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেনঃ "তোমরা যেসব খেজুর বৃক্ষ কেটে ফেলেছে কিংবা তার কাণ্ডের উপর খাড়া রেখেছ, সবই ছিল আল্লাহর নির্দেশে, যাতে তিনি পাপাচারীদের অপদস্থ করেন।" (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৪০২, ইসলামিক সেন্টার ৪৪০২) হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) হাদিসটি চেক করুন
গ্রন্থঃ সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)অধ্যায়ঃ ৩৩। জিহাদ ও সফর (كتاب الجهاد والسير)হাদিস নম্বরঃ ৪৪৪৫১০. কাফিরদের গাছ-পালা কাটা ও জ্বালিয়ে দেয়া বৈধ৪৪৪৫-(৩০/...) সাঈদ ইবনু মানসূর ... ইবনু উমর (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাযীর গোত্রের খেজুর বাগান কেটেছিলেন এবং জ্বলিয়ে দিয়েছিলেন। এ সম্পর্কে কবি হাস্সান (রাযিঃ) বলেন, "বনী লুওয়াই (অর্থাৎ- কুরায়শ) এর নেতাদের কাছে বুওয়াইরায় আগুনের লেলিহান শিখা খুব সহজ হয়ে গেছে।" আর এ সম্পর্কেই নাযিল হয়েছে এ আয়াতঃ (অর্থ) "তোমরা যেসব খেজুর গাছ কেটেছে অথবা তা কাণ্ডের উপর রেখে দিয়েছ" আয়াতটির শেষ পর্যন্ত। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৪০৩, ইসলামিক সেন্টার ৪৪০৩) হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) হাদিসটি চেক করুন
চেরিপিকিং খণ্ডন এবং হাদিসের বিস্তারিত ব্যাখ্যা
গ্রন্থঃ সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৩/ জিহাদ ও এর নীতিমালা (كتاب الجهاد والسير)
হাদিস নম্বরঃ ৪৪০২১০. (যুদ্ধ পরিস্থিতিতে) কাফিরদের বৃক্ষাদি কাটা ও জ্বালান বৈধ
৪৪০২। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, মুহাম্মদ ইবনু রুমহ ও কুতাইবা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাযীর গোত্রের খেজুর বাগান জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন এবং কেটে দিলেন। সে (বাগানের নাম) ছিল 'বুওয়ারা'। কুতায়বা এবং ইবনু রুমহ (রহঃ) উভয়েই তাঁদের হাদীসে আরো বর্ণনা করেছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ (এই আয়াত) নাযিল করেনঃ "তোমরা যে সব খেজুর গাছ কেটে ফেলেছো কিংবা তার মুলের উপর খাড়া রেখেছো, সবই ছিল আল্লাহর নির্দেশে, যাতে তিনি অবাধ্যদের লাঞ্ছিত করেন।"হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) হাদিসটি চেক করুন
গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত]
অধ্যায়ঃ ১৯/ যুদ্ধাভিযান (كتاب السير عن رسول الله ﷺ)
হাদিস নম্বরঃ ১৫৫২৪. অগ্নিসংযোগ ও (বাড়িঘর) ধ্বংস সাধন
১৫৫২। ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, বানু নাযীরের বুওয়ায়রাস্থ খেজুর বাগানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অগ্নিসংযোগ করেন এবং গাছগুলো কেটে ফেলেন। আল্লাহ তা'আলা এই বিষয়ে আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ “তোমরা যেসব খেজুরের গাছ কেটেছ বা এদের কাণ্ডের উপর যেগুলোকে স্বঅবস্থায় দাড়িয়ে থাকতে দিয়েছ, তা সবই আল্লাহ্ তা'আলার অনুমতিক্রমেই করেছ, যাতে তিনি ফাসিকদের লাঞ্ছিত করতে পারেন"(সূরাঃ হাশর– ৫)।
সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২৮৪৪), নাসা-ঈ
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান সহীহঁ। এ হাদীস মোতাবিক একদল অভিজ্ঞ আলিম মত দিয়েছেন। যুদ্ধাবস্থায় গাছপালা কর্তন এবং দুর্গসমূহের ধ্বংস করায় কোন সমস্যা নেই বলে তারা মনে করেন। কিছু আলিম তা মাকরূহ বলেছেন। এই মত দিয়েছেন ইমাম আওযাঈও। তিনি বলেন, ফলবান বৃক্ষ কাটতে এবং জনপদ ধ্বংস করতে আবূ বকর (রাঃ) বারণ করেছেন। মুসলিমগণও তার পরবর্তী সময়ে এই নীতির অনুসরণ করেছেন।
ইমাম শাফিঈ বলেন, শত্রু বাহিনীর কৃষিক্ষেত্রে আগুন লাগিয়ে দেওয়া এবং ফলবান বা যে কোন ধরনের গাছ কাটাতে কোন সমস্যা নেই।
ইমাম আহমাদ বলেন, প্রয়োজনবোধে তা করা যাবে, কিন্তু বিনা প্রয়োজনে আগুন লাগানো যাবে না।
ইমাম ইসহাক বলেন, শত্রুর প্রতি প্রবল আক্রমণের উদ্দেশ্যে এরূপ করাই সুন্নাত।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) হাদিসটি চেক করুন
আল্লাহ তা'আলা এ প্রসঙ্গে আয়াত নাজিল করেছিলেন, "তোমরা যে সব নতুন খেজুর গাছ কেটে ফেলছ অথবা সেগুলোকে তাদের মূলের ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে দিয়েছ। তা তো ছিল আল্লাহর অনুমতিক্রমে এবং যাতে তিনি ফাসিকদের লাঞ্ছিত করতে পারেন।" - কুরআন ৫৯:৫
তাফসীরে আহসানুল বয়ান-
"কিছু গাছ কেটে দিয়েছিলেন এবং কিছু গাছ নিজ অবস্থায় ছেড়ে দিয়েছিলেন। এ রকম করার লক্ষ্য ছিল, শত্রুর আড়কে ভেঙ্গে দেওয়া এবং এ কথা পরিষ্কার করে দেওয়া যে, মুসলিমরা এখন তোমাদের উপর সম্পূর্ণরূপে জয়যুক্ত হয়েছেন।……
মহান আল্লাহও মুসলিমদের এই কৌশলভিত্তিক কাজকে সঠিক বলে অনুমোদন করেন…"
তাফসীরে ফাতহুল মজিদ,
"অবরোধকালে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশে সাহাবীরা বনু নাযীরের খেজুর গাছ কেটে ফেলেছিল ও আগুন লাগিয়ে দিলেছিল। কিছুৃ গাছ বাকী ছিল। এ কাজ আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশেই হয়েছিল। এ রকম করার লক্ষ্য ছিল শত্রুর আড়ালকে ভেঙ্গে দেওয়া যাতে আত্মরক্ষা করতে না পারে। "
(ইমাম কুরতুবিও এই মতটি গ্রহণ করেছেন - তাফসীরে কুরতুবিতে উল্লেখ আছে)
মা'আরিফুল কুরআনে আছে,মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বনূ নাজীরের দূর্গ অবরোধ করেন, তখন আশপাশের কিছু খেজুর গাছ কাটতে হয়েছিল। এতে কিছু লোক এই বলে আপত্তি জানায় যে, ফলের গাছ কাটা সমীচীন হয়নি। তারই জবাবে এ আয়াত নাযিল হয়েছে। এতে বলা হচ্ছে, যেসব গাছ কাটা হয়েছে, তা আল্লাহ তাআলার হুকুমেই কাটা হয়েছে। কোন ন্যায়সঙ্গত জিহাদে যুদ্ধ কৌশল হিসেবে যদি এরূপ করতে হয়, তবে তা দোষের নয়।সূত্রঃ তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন (সংক্ষিপ্ত বঙ্গানুবাদ), ৫৯:৬ এর তাফসীর
…it was explained that the act of cutting or burning down the trees cannot be construed as disorderliness. But it was done to degrade the unbelievers, and therefore it carries reward in the Hereafter.
Ruling
Is it legitimate to demolish or burn down the homes of the infidels, or cut or burn down their trees, or destroy their fields and farms? The leading authorities on Islamic Jurisprudence are not unanimous on this question. Imam A'zam Abu Hanifah (رح) rules that all of these actions are permitted. Shaikh Ibn Humam (رح) ، however, qualifies the ruling and restricts it. He rules that all of the above are permitted if and only if the enemies cannot be vanquished or overpowered without resorting to the above measures, or if the victory of Muslims is not probable or likely. The whole purpose of this ruling is to break the might and power of the enemy. In the case where Muslims do not win the struggle, destruction of their moveable and immovable properties may be included in weakening their might and main. [ Mazhari ]
তাফসীরে মাউদূদীতে সুন্দরভাবে এসেছে। প্রাসঙ্গিক অংশঃপ্রসঙ্গটি এই যে, মুসলমানরা অবরোধের সুবিধার্থে বনী নাদিরের বসতির আশেপাশে মরুদ্যানে দাঁড়িয়ে থাকা অনেক খেজুর গাছ কেটে ফেলেছিল বা পুড়িয়েছিল। তবে সেই গাছগুলিকে অক্ষত রেখেছিলো যেগুলো যুদ্ধকাজে বাঁধা দেয় নি। এতে মদীনার মুনাফিকরা এবং বনী কুরাইযা এবং খোদ বনী নাদিররা হৈচৈ করে বলেছিল যে, একদিকে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা ছড়ানো নিষেধ করেছেন, কিন্তু, অন্যদিকে তার আদেশে ফলের গাছ কেটে ফেলা হচ্ছিল, যা বিশ্বে বিশৃঙ্খলা ছড়ানোর শামিল।
এই আল-হাশরে আল্লাহ নির্দেশ নাযিল করলেনঃ 'তোমরা যে গাছ কেটে ফেলো বা যা কিছু দাঁড় করিয়ে রেখেছ, তোমাদের কোন কাজই হারাম ছিল না, তবে তাতে আল্লাহর অনুমতি ছিল।'
এই আয়াত থেকে যে আইনগত নির্দেশ এসেছে তা হল যে সামরিক অভিযানের জন্য যে ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্ট হয় তা "বিশ্বে বিশৃঙ্খলা ছড়ানো" এর আওতায় আসে না। কিন্তু বিশ্বে বিশৃংখলা ছড়ানো হচ্ছে যুদ্ধের হিস্টিরিয়ায় ভুগতে থাকা সৈন্যবাহিনী শত্রু অঞ্চলে ঢুকে ফসল, গবাদিপশু ধ্বংস করা শুরু করবে, কোনো কারণ ছাড়াই বাগান, বাড়িঘর এবং সবকিছুই ধ্বংস করতে শুরু করবে।
হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা) মুসলিম বাহিনীকে সিরিয়ায় পাঠানোর সময় সাধারণ নির্দেশনাটিই দিয়েছিলেন: "ফলের গাছ কাটবেন না, ফসল নষ্ট করবেন না, বসতি ধ্বংস করবেন না।"
এটা ছিল ঠিক কুরআনের শিক্ষা অনুসারে, যেখানে যারা বিশৃঙ্খলা ছড়ায় তাদের নিন্দা করে; 'আর যখন সে ফিরে যায়, তখন যমীনে প্রচেষ্টা চালায় তাতে ফাসাদ করতে এবং ধ্বংস করতে শস্য ও প্রাণী। আর আল্লাহ ফাসাদ ভালবাসেন না।" (সূরা আল বাকারাহ ২০৫)। কিন্তু যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নির্দেশ হল যে, শত্রুর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের জন্য যদি ধ্বংসের প্রয়োজন হয় তবে তা বৈধ। এভাবে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এই আয়াতের তাফসীরে এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন: 'মুসলিমরা বনী নাদিরের সেই গাছগুলোই কেটে ফেলেছিল যেগুলো যুদ্ধের ময়দানে দাঁড়িয়ে ছিল।' (তাফসির নিসাবুরী)। কোন কোন মুসলিম ফকীহ বিষয়টির এ দিকটিকে উপেক্ষা করেছেন এবং অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, বনী নাদীরের গাছ কাটার অনুমতি শুধুমাত্র ঐ বিশেষ ঘটনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এটি সাধারণত জায়েয করে না যে যখনই যুদ্ধের প্রয়োজন হয় তখনই শত্রুদের গাছ কেটে পুড়িয়ে ফেলা হয়। ইমাম আওযায়ী, লাইছ ও আবু সাউরও একই মত পোষণ করেন। কিন্তু অধিকাংশ ফকীহ মনে করেন যে, গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অভিযানের জন্য এটা জায়েজ। তবে নিছক ধ্বংস ও লুটপাটের উদ্দেশ্যে এটা জায়েয নয়।
কেউ প্রশ্ন করতে পারে: কুরআনের এই আয়াতটি মুসলমানদের সন্তুষ্ট করতে পারে, কিন্তু যারা কুরআনকে আল্লাহর বাণী হিসাবে গ্রহণ করে নি তারা কীভাবে তাদের আপত্তির এই উত্তরে সন্তুষ্ট হতে পারে যে উভয় কাজই জায়েজ ছিল কারণ তাদের কাছে এর জন্য আল্লাহর অনুমতি ছিল?
উত্তর হলঃ কুরআনের এই আয়াতটি নাযিল হয়েছিল শুধুমাত্র মুসলমানদের সন্তুষ্ট করার জন্য; এটা কাফেরদের সন্তুষ্ট করার জন্য অবতীর্ণ হয়নি। যেহেতু ইহুদী ও মুনাফিকদের আপত্তির কারণে, অথবা তাদের নিজস্ব চিন্তাধারার কারণে, তারা পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা ছড়ানোর জন্য দোষী কিনা তা নিয়ে বিভ্রান্তির সাথে জড়িত ছিল, তাই আল্লাহ তাদের সন্তুষ্টি দিয়েছিলেন যে উভয় কাজই, অবরোধের সুবিধার্থে কিছু গাছ কেটে ফেলা এবং অবরোধকে বাধা দেয়নি এমন আরও কিছু গাছ কে দাঁড় করিয়ে রাখা, যা অবরোধে বাধা সৃষ্টি করে নি, সেগুলো আল্লাহর আইন অনুযায়ী ছিল।
সূত্রঃ তাফসীরে মাউদূদী ইংরেজি অনুবাদ অনলাইন উৎসঃ https://www.alim.org/quran/tafsir/maududi/surah/59/5