মূল লেখক: Ismail Hosen Emon
[নোটঃ— আর্টিকেলে কুরআন মাজীদ অনুযায়ী বিশুদ্ধ/সহীহ হাদিস মানা যে বাধ্যতামূলক তা উল্লেখ করা হবে।]
■ সর্বপ্রথম আমাদের জানতে হবে "আহলে কুরআন" কারা?
হাদীস অনুযায়ী আহলে কুরআন হচ্ছেঃ-
إِنَّ لِلهِ أَهْلِينَ مِنْ النَّاسِ فَقِيلَ مَنْ أَهْلُ اللهِ مِنْهُمْ قَالَ أَهْلُ الْقُرْآنِ هُمْ أَهْلُ اللهِ
❝মানবমণ্ডলীর মধ্য হতে আল্লাহর কিছু বিশিষ্ট লোক আছে; আহলে কুরআন (কুরআন বুঝে পাঠকারী ও তদনুযায়ী আমলকারী ব্যক্তিরাই) হল আল্লাহর বিশেষ ও খাস লোক।❞[01]
আহলে কুরআন বলতে ওই সকল ব্যক্তিবর্গসমূহ-কে বোঝানো হচ্ছে যাঁরা কুরআন পাঠ বা তিলাওয়াত করে এবং কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী সৎকার্যসমূহ পালন করে। কিন্তু বর্তমান সময়ে “আহলে কুরআন” হচ্ছেঃ-❝যাঁরা ইসলামে অনুসারীর দাবি করে এবং শুধুমাত্র কুরআনকে ইসলামের বিধান এবং আইন হিসাবে মানে ও বিশ্বাস করে তাদেরকে আহলে কুরআন বলে।❞
তারা অবশ্য কুরানবাদী বা অনলি কুরআন বলেও নিজেদেরকে পরিচয় দেন। তারা হাদিস, ইজমা ইত্যাদিকে ইসলাম ধর্মের বিধান এবং আইন হিসাবে মানেন না। কিন্তু বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে অবশ্যই তাঁরা চরম মিথ্যাবাদী। কেননা, আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া'তাআলা আমাদের উপর আবশ্যক করেছেন কুরআনের পাশাপাশি রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এর কর্ম, কথা ও কাজের অনুসরণ বা মান্য করা। নিচে আমরা কুরআন থেকে সেই বিষয়সমূহগুলো উল্লেখ করবো ইংশাআল্লাহ!
➤প্রথমত, কুরআনুম মাজীদ নাজিল করা হয়েছে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এর উপর দীর্ঘ প্রায় ২৩ বছর ধরে। আর ইসলামের প্রথম যুগ থেকেই নানাভাবে কুরআনুম মাজীদকে সংরক্ষণ করা হয়েছে। কখনো বা মুখস্থ বা আত্মস্থ করার মাধ্যমে৷ বিশেষ করে তাহাজ্জুদের সালাত ফরজ করার মাধ্যমে তিলাওয়াতের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়। কেননা, তাহাজ্জুদের সালাতে কুরআন তিলাওয়াত তুলনামূলক ভাবে দীর্ঘ হয়। কখনো কখনো বা দীর্ঘ সূরা অথবা একাধিক সূরা তিলাওয়াত করা হতো। এছাড়া পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে কুরআন তিলাওয়াত তো আছেই। এছাড়া, কুরআনুম মাজীদকে সংরক্ষণ করা হতো বিভিন্ন বস্তুতে। যেমনঃ— চামড়ায়, খেঁজুরের ডাল, খেঁজুর পাতা, প্রস্তর খণ্ড, সাদা পাথর, পশুর হাড় ইত্যাদি। সর্বশেষ কুরআন সংকলন করে সেটাকে একটি মাসহাফে সংরক্ষণ করা হয়। এছাড়া, কুরআন খতম করতে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ উৎসাহ দিয়েছেন এবং কুরআন তিলাওয়াতের ফযিলত রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বর্ণনা করেছেন একাধিক হাদীসে। এছাড়াও পূর্ববর্তী সময় থেকেই কুরআন হিফজ করার পদ্ধতি চলে আসছিল। বহু সাহাবী তৎকালীন সময়ে ছিলেন কুরআনের হাফিজ। ফলে কুরআনুম মাজীদকে হুবহু অবিকলভাবে বর্তমান সময়ে পৌছেছে এবং ইংশাআল্লাহ, তা কিয়ামাত পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে সত্যের আলো বিচ্ছুরণকারী হিসেবে।
➤দ্বিতীয়ত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এর কথা, কর্ম, আচার আচরণ, শিষ্টাচার, সৎগুণ ইত্যাদি অনুসরণে অগ্রগামী ছিলো সাহাবায়ে কিরামগণ (রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া আজমাইন)। রাসূলুল্লাহর অনুসরণে তাঁরা ছিলেন অগ্রগামী। জীবনের দীর্ঘ সময়ে নানান কাজে কর্মে, কথা বার্তায়, প্রত্যেকটি বিষয়ে তাঁরা ছিলেন রাসুলুল্লাহর যোগ্য উত্তরসূরী।
কীভাবে সিয়াম, সালাত, যাকাত, হাজ্ব ইত্যাদি পালন করতে হবে তা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। এমনকি খাওয়া দাওয়া, পায়খানা প্রস্রাব, হাঁটা চলা, আচার আচরণ ইত্যাদি এক কথায় সমস্ত বিষয় তিনি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সাহাবায়ে কিরামকে শিখিয়েছেন, জানিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন। কারণ সমস্ত সাহাবী রসুলল্লাহ ﷺ কে নিজেদের জীবনের চাইতেও বেশি ভালেবেসেছেন। তাঁর জন্য নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করতেও প্রস্তুত ছিলেন। ফলে তাঁরা রসুলল্লাহকে জানা, মানা, শোনা ও বোঝার কেন্দ্রবিন্দু করা হয়েছিলো , রসুলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাতসমূহ তাঁরা নিজেদের জীবনে ধারণ করেছেন মৃত্যু পর্যন্ত। এ সমস্ত সুন্নাত সাহাবায়ে কিরামগণ এবং তাঁর পরবর্তী অনুসারীগণদের মাঝে সুন্নাতগুলোর হয়েছে ব্যাপক প্রচলন। হাদীস লিপিবদ্ধ করা হয়েছে রসুলুল্লাহ ﷺ এর জামানা থেকেই। যুগ যুগ ধরে সুন্নাহর অনুশীলন, চর্চা, প্রচার, প্রসার ইত্যাদির মাধ্যমে আমাদের কাছে পৌছেছে। এছাড়া হাদীস সংগ্রহ, সংকলন, সংরক্ষণ এর মাধ্যমে আমাদের বর্তমান সময় পর্যন্ত পৌছেছে এবং ইংশাআল্লাহ, তা কিয়ামাত পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে যাতে আমাদের পরবর্তীরা কর্ম, কথা, আচার-আচরণ, বিশ্বাসে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ, অনুকরণ, আনুগত্য করে।
✔ এখানে আরেকটা বিষয় প্রণিধানযোগ্য যে, কুরআনের বিন্যাস রসুলুল্লাহ ﷺ এর মাধ্যমেই হয়েছে। কোন সূরা মাক্কী-মাদানী তা নির্ণয় করা হয়েছে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এর হিজরতের মাধ্যমে। এছাড়া তাওবা ব্যতীত বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম লেখা, রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এর জীবনের কিছু বিষয় নিয়ে কুরআনে আলোচনা ইত্যাদি। কোন সূরা কুরআনের কোথায় বসবে সেটাও রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বিন্যাস করেছেন।
আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া'তাআলা এবং রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এর আনুগত্য করা, অনুসরণ করা, মেনে চলা আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক।
কুরআনে আল্লাহ সুব্বহানাহু ওয়া তাআলা এবং রাসুল ﷺ এর আনুগত্য সম্পর্কিত বহু আয়াত বিদ্যমান। নিম্নে কয়েকটা আয়াত উল্লেখ করা হলোঃ—
Aal-e-Imran 3:32
Bengali - Bayaan Foundation
❝বল, ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর’। তারপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফিরদেরকে ভালবাসেন না।❞
Aal-e-Imran 3:132
Bengali - Bayaan Foundation
❝আর তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ ও রাসূলের, যাতে তোমাদেরকে দয়া করা হয়।❞
At-Taubah 9:71
Bengali - Bayaan Foundation
❝আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা একে অপরের বন্ধু, তারা ভাল কাজের আদেশ দেয় আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে, আর তারা সালাত কায়িম করে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। এদেরকে আল্লাহ শীঘ্রই দয়া করবেন, নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।❞
Aal-e-Imran 3:31
Bengali - Bayaan Foundation
❝বল, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।❞
এছাড়া আরো অনেক আয়াত রয়েছে রাসুল ﷺ এর আনুগত্য, অনুসরণ, মান্য করার বিষয়ে। নিচে আয়াতসমূহ উল্লেখ করা হলোঃ-
[Aal-e-Imran 03:31, 32, 132
An-Nisa' 04:13, 59, 69, 80
Al-Ma'idah 05:92
Al-Anfal 08:01, 20, 46
At-Taubah 09:71
An-Nur 24:52, 54, 56
Al-Ahzab 33:31, 33, 66, 71
Muhammad 47:33
Al-Fath 48:17
Al-Hujurat 49:14
Al-Mujadila 58:13
Al-Hashr 59:07
At-Taghabun 64:12]
সেক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এর সমস্ত কাজ, কথা, আচার-আচরণ অনুসরণযোগ্য রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এর আনুগত্য করাটা আবশ্যক। কিন্তু কুরআনুম মাজীদ অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এর বিশেষগুণ গুলো কী কী? আসুন আমরা দেখি।
Al-Ahzab 33:45—46
Bengali - Bayaan Foundation
❝হে নবী, আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। আর আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহবানকারী ও আলোকদীপ্ত প্রদীপ হিসেবে।❞
Saba' 34:28
Bengali - Bayaan Foundation
❝আর আমি তো কেবল তোমাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না,❞
Al-Ahzab 33:40
Bengali - Bayaan Foundation
❝মুহাম্মাদ তোমাদের কোন পুরুষের পিতা নয়; তবে আল্লাহর রাসূল ও সর্বশেষ নবী। আর আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞ।❞
Al-Ahzab 33:21
Bengali - Bayaan Foundation
❝অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।❞
Al-Anbiya 21:107
Bengali - Mufti Taqi Usmani
❝(হে নবী!) আমি তোমাকে বিশ্ব জগতের জন্য কেবল রহমত করেই পাঠিয়েছি।❞
Al-Qalam 68:4
Bengali - Bayaan Foundation
❝আর নিশ্চয় তুমি মহান চরিত্রের উপর অধিষ্ঠিত।
আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া'তাআলা পবিত্র কোরআন মাজীদে আরো এরশাদ করেছেন:
Aal-e-Imran 3:164
لَقَدْ مَنَّ اللّٰهُ عَلَي الْمُؤْمِنِيْنَ اِذْ بَعَثَ فِيْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْ اَنْفُسِهِمْ يَتْلُوْا عَلَيْهِمْ اٰيٰتِهٖ وَيُزَكِّيْهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَالْحِكْمَةَ ۚ وَاِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِيْ ضَلٰلٍ مُّبِيْنٍ
Bengali - Bayaan Foundation
❝অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের উপর অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের মধ্য থেকে তাদের প্রতি একজন রাসূল পাঠিয়েছেন, যে তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে আর তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেয়। যদিও তারা ইতঃপূর্বে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে ছিল।❞
▪︎ উপরোক্ত আয়াত সহ কুরআনুম মাজীদে আরো দুটি আয়াত রয়েছে যেগুলোতে আল্লাহ সুব্বহানাহু ওয়া তাআলা রাসূলুল্লাহ্ ﷺ কে তিনটি দায়িত্ব দিয়ে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন।
✔আরো দুটি আয়াত হচ্ছেঃ—
[Al-Baqarah 02:129
Al-Jumu'ah 62:02]✔
সূরা আলে ইমরানের উপরোক্ত আয়াতে আমরা রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এর ওপর প্রদত্ত তিনটি দায়িত্ব দেখতে পাই। সেগুলো হলোঃ—
(i) يَتْلُوْا عَلَيْهِمْ اٰيٰتِهٖ বা তাঁদেরকে (আল্লাহর) আয়াত তিলাওয়াত করে শোনানো।
(ii) وَيُزَكِّيْهِمْ বা তাঁদেরকে পরিশুদ্ধ করা।
(iii) وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَالْحِكْمَةَ বা তাঁদেরকে কিতাব ও হিকমাত তা'লিম বা শিক্ষা দেওয়া।
(iii) নম্বর পয়েন্টটি খেয়াল করি:
তাদেরকে ‘কিতাব’ ও হিকমাত’ শিক্ষা দেবেন।
‘কিতাব’ কুরআনেরই আরেক নাম। ‘হিকমাত’ কী? তার আগে কথা হল, এই হিকমাতও আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেছেন। কিতাব যেভাবে তিনি নাযিল করেছেন, হিকমাতও তিনি নাযিল করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:-
An-Nisa' 4:113
Bengali - Bayaan Foundation
❝.....আর আল্লাহ তোমার প্রতি নাযিল করেছেন কিতাব ও হিকমাত এবং তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন যা তুমি জানতে না। আর তোমার উপর আল্লাহর অনুগ্রহ রয়েছে মহান।❞
Al-Baqarah 2:231
Bengali - Bayaan Foundation
❝......আর তোমরা স্মরণ কর তোমাদের উপর আল্লাহর নিআমত এবং তোমাদের উপর কিতাব ও হিকমত যা নাযিল করেছেন, যার মাধ্যমে তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন। আর আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ যে, নিশ্চয় আল্লাহ সব বিষয় সম্পর্কে সুপরিজ্ঞাত।❞
▪︎ অতএব কিতাব ও হিকমাত দুই-ই আল্লাহর নাজিলকৃত। রাসূলুল্লাহ ﷺ যেভাবে কিতাব শিখিয়েছেন, হিকমাতও শিখিয়েছেন। হিকমাত হল রাসূলে কারীম ﷺ এর সুন্নাহ এবং শরীয়তের সকল বিধি-বিধান।
Al-Jasiyah 45:18
Bengali - Mufti Taqi Usmani
❝(হে রাসূল!) আমি তোমাকে দীনের এক বিশেষ শরীয়তের উপর রেখেছি। সুতরাং তুমি তারই অনুসরণ কর এবং যারা প্রকৃত জ্ঞান রাখে না, তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করো না।❞
▪︎ তিলাওয়াত শেখানো [পয়েন্ট i] আর তা‘লীম দেওয়া [পয়েন্ট iii] দুটো এক কথা নয় রাসূলে কারীম ﷺ কুরআনের তিলাওয়াত শিখিয়েছেন, আবার কুরআনের তালীমও দিয়েছেন। উভয়টাই তাঁর দায়িত্ব।
প্রশ্ন হল, এই তালীম দ্বারা কী উদ্দেশ্যে? তিলাওয়াত শেখানোটাই কি তালীম? সেটা তো নয়। কারণ তিলাওয়াত শেখানোর কথা প্রথমেই রয়েছে। এরপর আছে কিতাব শিখানোর কথা। অতএব কিতাবের তিলাওয়াত শেখানো আর কিতাবের তালীম দেওয়া দুটো এক কথা নয়। কিতাবের তালীম বলতে কী উদ্দেশ্য সেটা কুরআনের অন্য আয়াত দ্বারা প্রতিভাত হয়।
An-Nahl 16:44
Bengali - Mufti Taqi Usmani
.❝.....(হে নবী!) আমি তোমার প্রতিও এই কিতাব নাযিল করেছি, যাতে তুমি মানুষের সামনে সেই সব বিষয়ের ব্যাখ্যা করে দাও, যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে এবং যাতে তারা চিন্তা করে।❞
অতএব কুরআনের তালীম দ্বারা উদ্দেশ্য হল, কুরআনের কোন আয়াতের কী মর্ম, কোন আয়াতে কী বিধান, এবং সেই বিধান পালনের কী নিয়ম এগুলো শিক্ষা দেওয়া। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, উৎকৃষ্ট বস্তু হালাল করা এবং নিকৃষ্ট বস্তু হারাম করা। অর্থাৎ, আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া'তাআলা বাদে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এরও কোনো কিছু হালাল ও হারাম ঘোষণা দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। এ ক্ষমতা আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া'তাআলা কর্তৃক প্রদত্ত। নিচের আয়াতগুলোর দিকে খেয়াল করি।
Al-A'raf 7:157
Bengali - Bayaan Foundation
❝যারা অনুসরণ করে রাসূলের, যে উম্মী নবী; যার গুণাবলী তারা নিজদের কাছে তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিখিত পায়, যে তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ দেয় ও বারণ করে অসৎ কাজ থেকে এবং তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করে আর অপবিত্র বস্তু হারাম করে। আর তাদের থেকে বোঝা ও শৃংখল- যা তাদের উপরে ছিল- অপসারণ করে। সুতরাং যারা তার প্রতি ঈমান আনে, তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং তার সাথে যে নূর নাযিল করা হয়েছে তা অনুসরণ করে তারাই সফলকাম।❞
At-Taubah 9:29
Bengali - Mufti Taqi Usmani
❝কিতাবীদের মধ্যে যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে না এবং পরকালেও নয় এবং আল্লাহ ও তার রাসূল যা-কিছু হারাম করেছেন তাকে হারাম মনে করে না এবং সত্য দ্বীনকে নিজের দ্বীন বলে স্বীকার করে না, তাদের সঙ্গে যুদ্ধ কর, যাবৎ না তারা হেয় হয়ে নিজ হাতে জিযিয়া আদায় করে।❞
রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর নবুয়াতি দায়িত্ব পালানার্থে যা কিছু বলেছেন তার কোনোটি নিজের ইচ্ছেমতো বলেননি; বরং সবই আল্লাহর নির্দেশে।
An-Najm 53:03—04
Bengali - Bayaan Foundation
❝আর সে মনগড়া কথা বলে না।
তাতো কেবল ওহী, যা তার প্রতি ওহীরূপে প্রেরণ করা হয়।❞
Al-Ahqaf 46:9
Bengali - Bayaan Foundation
❝বল, ‘আমি রাসূলদের মধ্যে নতুন নই। আর আমি জানি না আমার ও তোমাদের ব্যাপারে কী করা হবে। আমার প্রতি যা ওহী করা হয়, আমি কেবল তারই অনুসরণ করি। আর আমি একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র’।❞
এই আয়াতদ্বয় থেকে স্পষ্ট, রাসূলুল্লাহ ﷺ কুরআনে কারীমের তাফসীর ও ব্যাখ্যা হিসাবে যা কিছু বলেছেন সবই ওহীর ভিত্তিতে। তথাপি বিষয়টি কুরআনে আরো বিশেষভাবেও উল্লেখিত হয়েছে।
Al-Qiyamah 75:16—19
Bengali - Mufti Taqi Usmani
❝(হে রাসূল!) তুমি এ কুরআনকে তাড়াতাড়ি মুখস্থ করার জন্য এর সাথে তোমার জিহ্বা নাড়িও না।নিশ্চয়ই একে (তোমার অন্তরে) জমানো ও (মুখ দিয়ে) পাঠ করানোর দায়িত্ব আমারই। সুতরাং আমি যখন এটা (জিবরাঈলের মাধ্যমে) পাঠ করি, তখন তুমি সেই পাঠের অনুসরণ কর।
তারপর তার বিশদ ব্যাখ্যার দায়িত্বও আমারই।❞
রাসূল ﷺ এর প্রতি ঈমান আনার অর্থই হল তাঁর সুন্নাহ ও হাদীসের অনুসরণ করা, তাঁর সকল কথা ও কাজ বিনা দ্বিধায় মেনে নেওয়া এবং তাঁর প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য প্রকাশ করা।
Aal-e-Imran 3:32
Bengali - Bayaan Foundation
❝বল, ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর’। তারপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফিরদেরকে ভালবাসেন না।❞
Al-Ahzab 33:36
Bengali - Bayaan Foundation
❝আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন নির্দেশ দিলে কোন মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য নিজদের ব্যাপারে অন্য কিছু এখতিয়ার করার অধিকার থাকে না; আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে।❞
An-Nisa' 4:65
Bengali - Bayaan Foundation
❝অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়।❞
সাহাবা-তাবেয়ীনসহ সকল যুগের হকপন্থীগণ এভাবেই রাসূলে কারীম ﷺ এর অনুসরণ করেছেন। তাঁর প্রতিটি কথা ও কাজ বিনা দ্বিধায় মান্য করেছেন। তাঁর সুন্নাহকে শরয়ী বিধি-বিধানের উৎস এবং কুরআন অনুধাবনের ভিত্তি ও মানদণ্ড/স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
Al-Hashr 59:7
.....وَمَاۤ اٰتٰىكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَهٰىكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا ۚ وَاتَّقُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ ۘ
Bengali - Mufti Taqi Usmani
❝.....রাসুল তোমাদেরকে যা দেয়, তা গ্রহণ কর আর তোমাদেরকে যা থেকে নিষেধ করে তা হতে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় করে চল। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।❞
এই আয়াতে ما (যা) একটি শব্দ আছে।
যা আয়াতের ব্যাপক অর্থ বোঝানোর জন্য এসেছে। অর্থাৎ রাসুল যা দেন বা নিষেধ করেন তা ব্যাপক। কুরআন এবং হাদিস দু’টোই এখানে শামিল। কেননা এই ما (যা) দ্বারা অহির কথা বলা হয়েছে। আর অহি দুই প্রকার।
[এক]➤ যে অহির শব্দ এবং অর্থ সবই আল্লাহর নির্ধারণকৃত। রাসুল তা শুধু তিলাওয়াত করে শুনিয়ে দেন এবং বুঝিয়ে দেন।
[দুই]➤ যে অহির অর্থ ও মর্ম আল্লাহ পাক নির্ধারণ করে দেন। তবে শব্দ নির্ধারণের এখতিয়ার থাকে রাসুল ﷺ এর।
এই প্রথম প্রকারকে বলে ‘অহিয়ে মাতলু’ যা কুরআন। দ্বিতীয় প্রকারকে বলে ‘অহিয়ে গাইরে মাতলু’। অন্য ভাষায় একেই বলা হয় হাদিস। উল্লিখিত আয়াতে ما (যা) ব্যাপক অর্থে হওয়ায় উভয় অহিই উলিখিত আয়াতের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কুরআনের পাশাপাশি হাদিসকেও মানতে হবে। এটা কুরআনেরই একটি হুকুম।
[এখানে এক আহলে কুরআন দাবিদারের অভিযোগের কিছু অতিরিক্ত বক্তব্য যুক্ত করা হলো। অভিযোগ হলো ❝.....রাসূল ﷺ তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও.....❞ এই আয়াতাংশ শুধু ঐ ফায় গ্রহণ অথবা গ্রহণ না হওয়ার সাথে সম্পৃক্ত। আসলেই কী তাই? আসুন দেখিঃ-
Al-Hashr 59:07
Bengali - Bayaan Foundation
❝আল্লাহ জনপদবাসীদের নিকট থেকে তাঁর রাসূলকে ফায় হিসেবে যা দিয়েছেন তা আল্লাহর, রাসূলের, আত্মীয়-স্বজনদের, ইয়াতীমদের, মিসকীন ও মুসাফিরদের এটি এ জন্য যে, যাতে ধন-সম্পদ তোমাদের মধ্যকার বিত্তশালীদের মাঝেই কেবল আবর্তিত না থাকে। রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও এবং আল্লাহকেই ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি প্রদানে কঠোর।❞
বলা হচ্ছে: -❝.....রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও....❞
এই অংশের আগে বলা হয়েছে:-❝......যাতে ধন-সম্পদ তোমাদের মধ্যকার বিত্তশালীদের মাঝেই কেবল আবর্তিত না থাকে।......❞
কুরআনের এই শিক্ষা কি শুধু ঐ যুদ্ধের উদ্দেশ্যে অংশগ্রহণকারীদের জন্য সীমাবদ্ধ নাকি? যদি না হয় তাহলে সম্বোধন (তোমাদের) কী খাস করে ঐ যুদ্ধের উদ্দেশ্যে অংশগ্রহণকারীদের জন্যে হবে শুধু?
❝.....রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও....❞
এই অংশের পরে বলা হচ্ছে:-❝.....এবং আল্লাহকেই ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি প্রদানে কঠোর।....❞
কুরআনের এই শিক্ষা কী শুধু ঐ যুদ্ধের উদ্দেশ্যে অংশগ্রহণকারীদের জন্য? যদি না হয় তাহলে সম্বোধন কী খাস করে ঐ যুদ্ধের উদ্দেশ্যে অংশগ্রহণকারীদের জন্যে হবে শুধু?
সাহাবীরাও জানতেন যে, এই আয়াতে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এর প্রদানকৃত এবং নিষেধকৃত সমস্ত কিছুই এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নিচে সহীহ হাদিসের আলোকে প্রমাণ দেখুন:
❝‘আলক্বামাহ (রহ.) হতে বর্ণিত।
-->তিনি বলেনঃ সৌন্দর্যের উদ্দেশে যে সব নারী অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে উল্কি আঁকে, যে সব নারী ভ্রূ উপড়ে ফেলে এবং যেসব নারী দাঁত সরু করে দাঁতের মাঝে ফাঁক করে- যা আল্লাহর সৃষ্টিকে বদলে দেয়, তাদের উপর ‘আবদুল্লাহ (ইবনু মাস‘ঊদ) লা‘নত করেছেন।
-->উম্মু ইয়াকূব বললঃ এ কেমন কথা --------?-->‘আবদুল্লাহ বললেনঃ আমি কেন তাকে লা‘নত করব না, যাকে আল্লাহর রাসূল লা‘নত করেছেন এবং আল্লাহর কিতাবও।
-->উম্মু ইয়াকূব বললঃ আল্লাহর কসম! আমি পূর্ণ কুরআন পাঠ করেছি, কিন্তু এ কথা তো কোথাও পাইনি।
-->তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম! তুমি যদি তা পড়তে, তবে অবশ্যই পেতেঃ—
(وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا) ‘‘রাসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর তোমাদেরকে যাত্থেকে নিষেধ করে তাত্থেকে বিরত থাক’’।
(সূরাহ হাশর ৫৯/৭)।❞ [2]
Al-Hashr 59:5
Bengali - Mufti Taqi Usmani
❝তোমরা যে খেজুর গাছ কেটেছ কিংবা যেগুলি মূলের উপর খাড়া রেখে দিয়েছ, তা তো আল্লাহরই হুকুমে ছিল এবং তা এজন্য যে, আল্লাহ অবাধ্যদেরকে লাঞ্ছিত করতে চেয়েছিলেন।❞
এখানে স্বাভাবিকভাবে একটি প্রশ্ন দেখা দেয় যে, কুরআনের কোথাও তো আল্লাহ পাক খেজুর গাছ কাটার কোন আদেশ দেননি। তাহলে তা আল্লাহ তা’লার আদেশে কেমনে হল? আল্লামা ইউসুফ বান্নুরী রহিমাহুল্লাহর রেফারেন্স টেনে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী হাফিজাহুল্লাহ এ প্রশ্নের জবাবে বলেন- আল্লাহর তা’লার যাবতীয় হুকুম দুইভাবে হয়ে থাকে।
এক. অহিয়ে মাতলু’ তথা কুরআনের মাধ্যমে। এখানে হুকুমও আল্লাহর এবং হুকুম প্রদানের শব্দসমূহও স্বয়ং আল্লাহর। দুই. অহিয়ে গাইরে মাতলু’ তথা হাদিসে রাসুলের মাধ্যমে। এখানে হুকুম আল্লাহর এবং ইচ্ছেও আল্লাহর। তবে হুকুম প্রদান ও ইচ্ছে প্রকাশের শব্দগুলো আল্লাহর নয়। বরং রাসুল ﷺ এর। উল্লেখিত আয়াতেও ঠিক তা-ই হয়েছে। আল্লাহ পাক রাসুলের আদেশকে স্বীয় আদেশ বলে ব্যক্ত করেছেন। কারণ যদিও নিজস্ব শব্দের মাধ্যমে রাসুল সাহাবাদের আদেশ করেছেন। কিন্তু অবশ্যই এ আদেশ আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ীই হয়েছে। তাই আল্লাহ পাক সরাসরি বলেছেন, খেজুর গাছ কাটা মূলত (فبإذن الله) আল্লাহর আদেশেই হয়েছে। সুতরাং এ আয়াত দ্বারাও প্রমাণ হল যে, হাদিস মানতে হবে। হাদিসও আল্লাহর হুকুমেরই অন্তর্ভূক্ত।
At-Tahrim 66:03
Bengali - Bayaan Foundation
❝আর যখন নবী তার এক স্ত্রীকে গোপনে একটি কথা বলেছিলেন; অতঃপর যখন সে (স্ত্রী) অন্যকে তা জানিয়ে দিল এবং আল্লাহ তার (নবীর) কাছে এটি প্রকাশ করে দিলেন, তখন নবী কিছুটা তার স্ত্রীকে অবহিত করল আর কিছু এড়িয়ে গেল। যখন সে তাকে বিষয়টি জানাল তখন সে বলল, ‘আপনাকে এ সংবাদ কে দিল?’ সে বলল, ‘মহাজ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ আল্লাহ আমাকে জানিয়েছেন।’❞
কিন্তু কুরআনুম মাজীদে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ কে উক্ত সংবাদ বা বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া সম্পর্কিত কোন আয়াত পাওয়া যায় না। সুতরাং বলা যায় যে রাসুলুল্লাহ ﷺ এর প্রতি ওহিয়ে গাইরি মাতলু এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিলো যা কুরআনে উল্লেখ করা হয়নি।
Al-Baqarah 2:143
Bengali - Bayaan Foundation
❝আর এভাবেই আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী উম্মত বানিয়েছি, যাতে তোমরা মানুষের উপর সাক্ষী হও এবং রাসূল সাক্ষী হন তোমাদের উপর। আর যে কিবলার উপর তুমি ছিলে, তাকে কেবল এ জন্যই নির্ধারণ করেছিলাম, যাতে আমি জেনে নেই যে, কে রাসূলকে অনুসরণ করে এবং কে তার পেছনে ফিরে যায়। যদিও তা অতি কঠিন (অন্যদের কাছে) তাদের ছাড়া যাদেরকে আল্লাহ হিদায়াত করেছেন এবং আল্লাহ এমন নন যে, তিনি তোমাদের ঈমানকে বিনষ্ট করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল, পরম দয়ালু।❞
রাসূলুল্লাহ্ ﷺ কে বর্তমানে যে কিবলা থেকে সরিয়ে নেওয়া হলো; উপরোক্ত আয়াত অনুযায়ী তা আল্লাহ সুব্বহানাহু ওয়া'তাআলা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু কুরআনের কোথায় সেটার বর্ণনা আছে? এর মানে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এর প্রতি আরো এক প্রকার ওহি নাঝিল হতো যা ওহিয়ে গাইরি মাতলু।
Al-Fath 48:27
Bengali - Bayaan Foundation
❝অবশ্যই আল্লাহ তাঁর রাসূলকে স্বপ্নটি যথাযথভাবে সত্যে পরিণত করে দিয়েছেন। তোমরা ইনশাআল্লাহ নিরাপদে তোমাদের মাথা মুন্ডন করে এবং চুল ছেঁটে নির্ভয়ে আল-মাসজিদুল হারামে অবশ্যই প্রবেশ করবে। অতঃপর আল্লাহ জেনেছেন যা তোমরা জানতে না। সুতরাং এ ছাড়াও তিনি দিলেন এক নিকটবর্তী বিজয়।❞
উপরোক্ত আয়াত অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এর প্রতি স্বপ্নের ভেতরেও ওহী নাজিল হয়। সেই স্বপ্ন দেখানো হয়েছিলো আগে। এবং আল্লাহ সুব্বহানাহু ওয়া তাআলা তা পরবর্তীতে সত্যে পরিণত করেছেন। সেটি ওহি গাইরি মাতলু।
An-Nisa' 4:61
Bengali - Bayaan Foundation
❝আর যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘তোমরা আস যা আল্লাহ নাযিল করেছেন তার দিকে এবং রাসূলের দিকে’, তখন মুনাফিকদেরকে দেখবে তোমার কাছ থেকে সম্পূর্ণরূপে ফিরে যাচ্ছে।❞
এখানে শুধু আল্লাহ সুব্বহানাহু ওয়া তাআলা কর্তৃক নাঝিলকৃত বিষয়ের প্রতিই শুধু আহ্বান করা হচ্ছে না। বরং রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এর প্রতিও ডাকা হচ্ছে। অর্থাৎ, আল্লাহ সুব্বহানাহু ওয়া তাআলার নাযিলকৃত বিষয়ের পাশাপাশি রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এর কর্ম, কথা, আচার-আচরণও জরুরি এবং আবশ্যিক একটা বিষয়। আবার বলা হয়েছে:
Al-Hujurat 49:01
Bengali - Bayaan Foundation
❝হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সামনে অগ্রবর্তী হয়ো না এবং তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।❞
অর্থাৎ, যে কোন বিষয়ে, কথা, কাজ, আচরণ-আচরণ, ইবাদত ইত্যাদি বিষয়ে আল্লাহ সুব্বহানাহু ওয়া তাআলার আগ বাড়ানো যাবে না এবং একইসাথে কোন বিষয়ে, কথা, কাজ, আচরণ-আচরণ, ইবাদত ইত্যাদি বিষয়ে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এর আগ বাড়ানো যাবে না।
An-Nisa' 4:80
Bengali - Bayaan Foundation
❝যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে বিমুখ হল, তবে আমি তোমাকে তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক করে প্রেরণ করিনি।❞
An-Nur 24:63
لَا تَجْعَلُوْا دُعَآءَ الرَّسُوْلِ بَيْنَكُمْ كَدُعَآءِ بَعْضِكُمْ بَعْضًا ؕ قَدْ يَعْلَمُ اللّٰهُ الَّذِيْنَ يَتَسَلَّلُوْنَ مِنْكُمْ لِوَاذًا ۚ فَلْيَحْذَرِ الَّذِيْنَ يُخَالِفُوْنَ عَنْ اَمْرِهٖۤ اَنْ تُصِيْبَهُمْ فِتْنَةٌ اَوْ يُصِيْبَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
Bengali - Bayaan Foundation
❝তোমরা পরস্পরকে যেভাবে ডাকো রাসূলকে সেভাবে ডেকো না; তোমাদের মধ্যে যারা চুপিসারে সরে পড়ে আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে জানেন। অতএব যারা তাঁর নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ★[ব্যতিক্রম] করে তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌঁছার ভয় করে।❞
★মুখালাফাহ (مخالفة) অর্থ ব্যতিক্রম করা বা বিরোধিতা করা। (to contradict, to be at variance)। এরপর.... খিলাফ (خلاف) অর্থ ব্যতিক্রম, বিপরীত, অসমঞ্জস। (difference, dissimilarity)। এ থেকে আমরা বুঝি যে রাসুলুল্লাহ ﷺ এর কর্ম, শিক্ষা বা আদর্শের ব্যতিক্রম বা বিপরীত পথে চলা একটি ভয়ংকর কারণ!!!
Aal-e-Imran 3:31—32
Bengali - Bayaan Foundation
❝বল, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।
বল, ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর’। তারপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফিরদেরকে ভালবাসেন না।❞
Bengali - Tafsir Ibn Kathir
৩১-৩২ নং আয়াতের তাফসীরঃ-❝এ পবিত্র আয়াতটি মীমাংসা করে দিয়েছে যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলাকে ভালবাসার দাবী করে, কিন্তু তার আমল ও বিশ্বাস যদি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নির্দেশের অনুরূপ না হয় এবং সে তাঁর সুন্নাতের অনুসারী না হয়, তবে সে তার এ দাবীতে মিথ্যাবাদী। সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি কোন এমন কাজ করে যার উপর আমার নির্দেশ নেই তা অগ্রাহ্য।" এ জন্যেই এখানেও ইরশাদ হচ্ছে—যদি তোমরা আল্লাহ তা'আলার সাথে ভালবাসা রাখার দাবীতে সত্যবাদী হও তবে আমার সুন্নাতের উপর আমল কর। সে সময় আল্লাহ তা'আলা তোমাদেরকে তোমাদের চাহিদা অপেক্ষা বেশী দান করবেন অর্থাৎ স্বয়ং তিনিই তোমাদেরকে চাইবেন।
.........এরপর সর্বসাধারণের উপর নির্দেশ হচ্ছে যে, তারা যেন সবাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর আনুগত্য স্বীকার করে। যারা এরপর থেকে ফিরে যাবে অর্থাৎ আল্লাহ ও তার রাসূল (ﷺ)-এর আনুগত্য হতে সরে পড়বে তারা কাফির এবং আল্লাহ তাআলা কাফিরদেরকে ভালবাসেন না। যদিও তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-কে ভালবাসার দাবী করে কিন্তু যে পর্যন্ত তারা আল্লাহ তা'আলার সত্যবাদী, নিরক্ষর, রাসূলগণের (আঃ) সমাপ্তি আনয়নকারী এবং দানব ও মানবের নবী (ﷺ)-এর সুন্নাতের অনুসরণ ও অনুকরণ না করবে সেই পর্যন্ত তারা তাদের এ দাবীতে মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হবে। হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এমনই রাসূল যে, যদি আজ নবীগণ (আঃ) এমনকি স্থির প্রতিজ্ঞ রাসূলগণও (আঃ) জীবিত থাকতেন তবে তাঁদেরও এ রাসূল (সঃ)-কে ও তাঁর শরীয়তকে মান্য করা ছাড়া উপায় ছিল না। এর বিস্তারিত বিবরণ (আরবী) (৩:৮১) -এ আয়াতের তাফসীরে ইনশাআল্লাহ আসবে।❞
এই আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহর ভালবাসা পেতে হলে রাসুলের অনুসরণ করতে হবে। জীবনের পাপ মোচন করতে হলে রাসুলের অনুসরণ করতে হবে। আর এ দু’টি জিনিসের মাধ্যমেই মানুষ মুক্তি পাবে। অর্থাৎ ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তির জন্য রাসুলের আনুগত্য করার কথা বলেছে স্বয়ং কুরআন। আর রাসুলের আনুগত্য দুইভাবে হয়ে থাকে। অহিয়ে মাতলু’ এবং অহিয়ে গাইরে মাতলু’ দ্বারা। উল্লেখিত আয়াতের ‘ইত্তিবা’ শব্দটি ব্যাপক অর্থে উভয় অহি তথা কুরআন ও হাদিস দু’টোকেই শামিল করে।
Al-Ahzab 33:21
Bengali - Tafsir Abu Bakr Zakaria
❝অবশ্যই তোমাদের জন্য রয়েছে রাসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম আর্দশ [১], তার জন্য যে আসা রাখে আল্লাহ্ ও শেষ দিনের এবং আল্লাহ্কে বেশী স্মরণ করা।
[১] এরপর অকপট ও খাঁটি মুসলিমগণের বর্ণনা প্রসঙ্গে এদের অসম দৃঢ়তার প্রশংসা করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এর অনুসরণ অনুকরণের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্যতাকে মূলনীতিরূপে বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, “নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসূলের মধ্যে উত্তম অনুপম আদর্শ রয়েছে'। এদ্বারা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বাণীসমূহ ও কার্যাবলী উভয়ই অনুসরণের হুকুম রয়েছে বলে প্রমাণিত হয়। [দেখুন, মুয়াস্সার]❞
Al-Ahzab 33:21—22
Bengali - Tafsir Ibn Kathir
২১-২২ নং আয়াতের তাফসীরঃ—
❝এ আয়াত ঐ বিষয়ের উপর বড় দলীল যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সমস্ত কথা, কাজ ও অবস্থা আনুগত্য ও অনুসরণের যোগ্য।.......❞
🟦।। An-Najm 53:4
Bengali - Tafsir Fathul Mazid
❝.......আল্লাহ তা‘আলা বলছেন : তোমাদের সাথী মুহাম্মাদ (ﷺ) পথভ্রষ্ট না এবং বিপদগামীও না। বরং সে সঠিক দীনের ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত। অর্থাৎ নাবী (ﷺ) সত্য সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলেন না এবং সত্য হতে বিমুখও হননি। বরং তিনি সত্যানুরাগী ও সত্যের অনুসারী । যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন :
(فَاسْتَمْسِكْ بِالَّذِيْٓ أُوْحِيَ إِلَيْكَ ج إِنَّكَ عَلٰي صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ)
“সুতরাং তোমার প্রতি যা ওয়াহী করা হয়েছে তা দৃঢ়ভাবে অবলম্বন কর। নিশ্চয়ই তুমি সরল পথেই রয়েছ।” (সূরা যুখরুফ ৪৩ : ৪৩)
তাই নাবী (ﷺ) দীনের ব্যাপারে যত কথা বলেছেন সব কথাই ওয়াহী মারফত বলেছেন। তবে এ ওয়াহী মাতলু না বরং গাইরে মাতলু। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে যা শুনতাম তা লিখে নিতাম। অতঃপর কুরাইশরা আমাকে এ কাজ করতে নিষেধ করে বলল : তুমি তো রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হতে যা শুনছ তার সবই লিখে নিচ্ছ, অথচ তিনি তো একজন মানুষ। তিনি কখনো কখনো ক্রোধের বশবর্তী হয়ে কিছু বলে ফেলেন। আমি তখন লেখা হতে বিরত থাকলাম এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট এটা উল্লেখ করলাম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে বললেন : তুমি আমার কথাগুলো লিখতে থাকো। আল্লাহ তা‘আলার শপথ! সত্য কথা ছাড়া আমার মুখ দিয়ে অন্য কোন কথা বের হয় না। (আবূ দাঊদ হা. ৩৬৪৬, সিলসিলা সহীহাহ্ হা. ১৫৩২)
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন : আমি সত্য ছাড়া কিছু বলি না। কতক সাহাবী বললেন : হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যে আমাদের সাথে রসিকতা করেন? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন : আমি সত্য ছাড়া কিছু বলি না। (তিরমিযী হা. ১৯৯০, হাসান সহীহ).
তাই কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ শরীয়তের মূল উৎস এবং একটি অপরটির পরিপূরক। সহীহ হাদীস ছাড়া কখনো শরীয়ত চলতে পারে না। যারা বলে- আমরা কুরআনে যা কিছু পেয়েছি তা-ই আমাদের জন্য যথেষ্ট; তারা পথভ্রষ্ট ছাড়া কিছুই নয়।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন :
أَلَا إِنِّي أُوتِيتُ الْقُرْآنَ وَمِثْلَهُ مَعَهُ
সাবধান! জেনে রেখ! আমি কুরআন ও অনুরূপ আরো পেয়েছি। (মুসনাদ আহমাদ হা. ১৭১৭, সহীহ)
(وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوٰي)
‘এবং সে প্রবৃত্তি হতেও কোন কথা বলে না’ এ আয়াত থেকে এটাও প্রমাণিত হয় যে, দীনের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইজতিহাদ করে কোন কথা বলতেন না। যা বলতেন ওয়াহীভিত্তিক বলতেন।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়ঃ-
২. নবী (ﷺ) যে দীন নিয়ে এসেছেন তা সত্য, তাতে কোন প্রকার ভ্রষ্টতা নেই।
৩. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ওয়াহী ছাড়া দীনী বিষয়ে কোন কথা বলেননি।❞
এই আয়াতের মধ্যেও যে অহির কথা এসেছে তার অর্থ ব্যাপক। অর্থাৎ অহিয়ে মাতলু’ ও গাইরে মাতলু’ তথা কুরআন ও হাদিস দু’টোই শামিল। এর অর্থ দাঁড়ায় যে, তিনি যা কিছুই বলেন, আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ীই বলেন।
An-Nisa' 4:65
Bengali - Tafsir Abu Bakr Zakaria
❝কিন্তু না, আপনার রবের শপথ! তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের [১] বিচার ভার আপনার উপর অর্পণ না করে; অতঃপর আপনার মীমাংসা সম্পর্কে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে [২] এবং সর্বান্তকরণে তা মেনে নেয় [৩]।
.........কাজেই শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে, যখনই কোন বিষয়ে, কোন সমস্যার ব্যাপারে মতবিরোধ দেখা দেয়, তখনই রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বিচারক সাব্যস্ত করে তার মীমাংসা করিয়ে নেয়া উচিত এবং অতঃপর তার মীমাংসাকে স্বীকার করে নিয়ে সেমতে কাজ করা উভয় পক্ষের উপর ফরয। মনে রাখতে হবে যে, কুরআনের বাণী ও রাসূলের হাদীসসমূহের উপর আমল করা মহানবী ﷺ এর যুগের সাথেই সীমিত নয়। তাঁর তিরোধানের পর তাঁর পবিত্র শরীআতের মীমাংসাই হল তাঁর মীমাংসা। কাজেই এ নির্দেশটি কিয়ামত পর্যন্ত তেমনিভাবেই বলবৎ থাকবে, যেমন ছিল তাঁর যুগে। তখন যেমন সরাসরি কোন বিষয়ের সিদ্ধান্তকল্পে তাঁর কাছে উপস্থিত করা হত, তেমনি তাঁর পরে তাঁর প্রবর্তিত শরীআতের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। এটা প্রকৃতপক্ষে তাঁরই অনুসরণ।❞
An-Nisa' 4:64—65
Bengali - Tafsir Fathul Mazid
৬৪-৬৫ নং আয়াতের তাফসীরঃ—
❝.......অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা নিজের পবিত্র সত্তার শপথ করে বলছেন, তারা ঈমানদার নয় যারা সন্তুষ্টচিত্তে বিনা দ্বিধায় সকল বিষয়ের ফায়সালাকারী হিসেবে নাবী (ﷺ)-কে মানে না। কারণবশতঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বাহ্যিকভাবে ফায়সালাকারী মেনে নিলেও আন্তরিকভাবে এবং বিনা দ্বিধায় না মেনে নিলে কেউ মু’মিন হবে না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتّٰي يَكُوْنَ هَوَاهُ تَبْعًا لِمَا جِئْتُ بِهِ
তোমাদের কেউ মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষণ না আমি যা নিয়ে এসেছি তার কামনা-বাসনা তার প্রতি হয়। (ফাতহুল বারী ১২/২৮৯)
তাই একজন মু’মিনের কাজ সকল বিষয়ের ফায়সালার জন্য কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর দিকে ফিরে আসা। চাই তা কোন মাসআলা মাসায়েল হোক, কোন বিধি-বিধান হোক বা কোন বিচার ফায়সালা হোক। যেমন আল্লাহ তা’আলা মু’মিনদের ব্যাপারে বলেন:
(إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِيْنَ إِذَا دُعُوْا إِلَي اللّٰهِ وَرَسُوْلِه۪ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَنْ يَّقُوْلُوْا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا)
“মু’মিনদের উক্তি তো কেবল এই- যখন তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেবার জন্য আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের দিকে আহ্বান করা হয় তখন তারা বলে, ‘আমরা শ্রবণ করলাম ও আনুগত্য করলাম।’’ (সূরা নূর ২৪:৫১)
যদি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ফায়সালাকে মনে প্রাণে মেনে না নেয়ার কারণে কাফির হয়ে যায় তাহলে কুরআন ও সুন্নাহর ফায়সালাকে যারা অগ্রাহ্য করে প্রত্যাখ্যান করে তাদের বিধান কী হতে পারে?
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়ঃ
১. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যা নির্দেশ ও নিষেধ করেন তা মেনে নেয়া ওয়াজিব।
২. সকল বিষয়ের মীসাংসাকারী কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ।
৩. রাসূলের তথা কুরআন ও সুন্নাহর ফায়সালা সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নেয়া ওয়াজিব। যদিও তা মাযহাব, দল ও মতের বিপরীতে হয়।❞
আল্লাহ্ বলেছেন:
Al-Baqarah 2:85
Bengali - Bayaan Foundation
......... তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে? আর কিয়ামতের দিনে তাদেরকে কঠিনতম আযাবে নিক্ষেপ করা হবে। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফিল নন।
আহলে কুরআনরাও রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এর আনুগত্য, অনুসরণ, অনুকরণকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অস্বীকারের মাধ্যমে তাঁরা কুরআনের কিছু অংশকে প্রত্যাখ্যান করছে।
আল্লাহ সুব্বহানাহু ওয়া তাআলা আমাদেরকে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শকে পূর্ণাঙ্গরুপে গ্রহণ করার তাওফিক দান করুক, আমীন। ইয়া রব্বাল আলামীন।
❝ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ-অচিরেই কোন ব্যাক্তি তার আসনে হেলান দেয়া অবস্থায় বসে থাকবে এবং তার সামনে আমার হাদীস থেকে বর্ণনা করা হবে, তখন সে বলবে, আমাদের ও তোমাদের মাঝে মহামহিম আল্লাহ্র কিতাবই যথেষ্ট। আমরা তাতে যা হালাল পাবো তাকেই হালাল মানবো এবং তাতে যা হারাম পাবো তাকেই হারাম মানবো। (মহানবী (সাঃ) বলেন) সাবধান! নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ ﷺ যা হারাম করেছেন তা আল্লাহ যা হারাম করেছেন তার অনুরূপ।❞ [02]
❝রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ-
জেনে রাখো! আমাকে কিতাব এবং তার সঙ্গে অনুরূপ কিছু দেয়া হয়েছে। জেনে রাখো! এমন এক সময় আসবে যখন কোনো প্রাচুর্যবান লোক তার আসনে বসে বলবে, তোমরা শুধু এ কুরআনকেই গ্রহণ করো, তাতে যা হালাল পাবে তা হালাল এবং যা হারাম পাবে তা হারাম মেনে নিবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জেনে রাখো! গৃহপালিত গাধা তোমাদের জন্য হালাল নয় এবং ছেদন দাঁতবিশিষ্ট হিংস্র পশুও নয়।
অনুরূপ সন্ধিবদ্ধ অমুসলিম গোত্রের হারানো বস্তু তোমাদের জন্য হালাল নয়, অবশ্য যদি সে এর মুখাপেক্ষী না হয়। আর যখন কোনো লোক কোনো সম্প্রদায়ের নিকট আগন্তুক হিসেবে পৌঁছে তখন তাদের উচিত তার মেহমানদারী করা। যদি তারা তা না করে, তাহলে তাদেরকে কষ্ট দিয়ে হলেও তার মেহমানদারীর পরিমাণ জিনিস আদায় করার অধিকার তার আছে।❞ [03]
তথ্যসূত্রঃ-
➤[01] গ্রন্থঃ হাদীস সম্ভার
অধ্যায়ঃ ১২/ কুরআন
হাদিস নম্বরঃ ১৪১৬
(আহমাদ ১২২৭৯, নাসাঈ, বাইহাক্বী, হাকেম, সহীহুল জামে ২১৬৫)
https://hadithbd.com/hadith/link/?id=65164
➤[02] গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৭৭/ পোশাক (كتاب اللباس)
হাদিস নম্বরঃ ৫৯৩৯
৭৭/৮৪. ভ্রূ উপড়ে ফেলা।
[৪৮৮৬] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪০১)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=30536
➤[03] গ্রন্থঃ সুনানে ইবনে মাজাহ
অধ্যায়ঃ ভূমিকা পর্ব (كتاب المقدمة)
হাদিস নম্বরঃ ১২
২. রাসূলুল্লাহ্ ﷺ-এর হাদীসের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তার বিরুদ্ধবাদীর প্রতি কঠোর মনোভাব পোষণ।
তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ:তিরমিযী ২৬৬৪, আবূ দাঊদ ৪৬০৪, দারিমী ৫৮৬। তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ। তাখরীজ আলবানী: তাখরীজুল মিশকাত ১৬৩। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=9622
➤[04] গ্রন্থঃ সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ৩৫/ সুন্নাহ (كتاب السنة)
হাদিস নম্বরঃ ৪৬০৪
৬. সুন্নাতের অনুসরণ আবশ্যক
http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=61972