লিখেছেন- পদার্থবিজ্ঞানী প্রফেসর সালেহ হাসান নাকিব
ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর নিয়ে অনেক কথাবার্তা শোনা যায়। তবে বিভিন্ন আলাপ থেকে বুঝতে পারি এই scientometric index-টি সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা পরিষ্কার নয়।
ধরা যাক, X একটি পিয়ার রিভিউড এবং ইন্ডেক্সড জার্নাল। পিয়ার রিভিউ এবং ইন্ডেক্সিং-এর কথা এ কারণে আসছে যে, এ দুটো ঠিক না থাকলে ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টরের তাৎপর্য থাকে না।
ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর কী ভাবে ক্যাল্কুলেইট করতে হয়? ধরা যাক, X জার্নালটিতে ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে প্রকাশিত প্রবন্ধগুলো ২০১৯ সালে ৫০০ বার সাইটেড হয়েছে এবং ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে X জার্নালে মোট প্রকাশিত প্রবন্ধের সংখ্যা ২০০। সেক্ষেত্রে ২০১৯ সালে এই জার্নালটির ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর গিয়ে দাঁড়াবে ৫০০/২০০ = ২.৫। এই হিসেব পূর্ববর্তী দু'বছরে প্রকাশিত মোট প্রবন্ধ সংখ্যার সাপেক্ষে একটি গড়। হিসাবটি ভালো করে বুঝে নিতে হবে। প্রতিটি ডিসিপ্লিনের আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে, তাই ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর থেকে কোন সিদ্ধান্তে আসতে হলে এই বিষয়ে সজাগ থাকা বাঞ্ছনীয়। ফিজিক্যাল সায়েন্সের একটি জার্নালের ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টরের সাথে বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের একটি জার্নালের ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টরের তুলনা খুব কার্যকরী কিছু নয়।
ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর একটি গুরুত্বপূর্ণ ইন্ডিকেটর। তবে এর ভেতর অনেক কিন্তু আছে। প্রথম কিন্তু হচ্ছে, ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর একটি জার্নালের কোয়ালিটি সম্পর্কে ধারণা দেয়। জার্নালে প্রকাশিত একটি পার্টিকুলার আর্টিক্যাল সম্পর্কে ধারণা ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর থেকে পাওয়া যায় না। হাই ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর জার্নালে এমন অনেক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় যেগুলো কারো কোন কাজে লাগে না, তেমন ভাবে সাইটেড হয় না। আবার এমন অনেক উদাহরণ দেওয়া যাবে যেখানে জার্নালের ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর হয়ত তেমন বেশি কিছু না, কিন্তু সেই জার্নালে প্রকাশিত কোন একটি বিশেষ আর্টিক্যাল শত শতবার সাইটেড হয়েছে। এই আর্টিক্যালটি একটি দারুণ কাজ যদিও ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর বিচারে জার্নালটি তেমন ভালো কিছু নয়। তাহলে কী দাঁড়াচ্ছে? কোন একটি পার্টিকুলার কাজ ভালো না মন্দ তা জার্নালের ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর থেকে সরাসরি বলা যাবে না।
আরো ব্যাপার আছে। আগেই বলেছি, ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর একটা গড় পরিমাপ। জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধ এবং তাদের সাইটেশনের যে ফ্রিকুয়েন্সি ডিস্ট্রিবিউশন তা অত্যন্ত skewed। উদাহরণ দিই, জার্নাল হিসেবে নেচার এবং সায়েন্সের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর ৪০-এর আশেপাশে। তবে এই দুই জার্নালে পূর্ববর্তী দু'বছরে প্রকাশিত বেশির ভাগ আর্টিক্যালের সাইটেশন ১০ অথবা তার থেকে কম। তাই যদি হয়, তাহলে ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর এত বেশি হল কী করে? ঐ যে বলছিলাম skewed frequency distribution-এর কথা। এই দুই জার্নালে সব সময়ই এমন কিছু প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় যা দু'বছরে শত শত সাইটেশন অর্জন করে। এই ধরণের প্রবন্ধের সংখ্যা খুব কম হলেও তারা ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর অনেক বাড়িয়ে দেয়। ব্যাপারটা অনেকটা এই রকম, বান্ডিলে বেশির ভাগ নোট পাঁচ টাকার হলেও, বান্ডিলে যদি অল্প কিছু হাজার টাকার নোট থাকে তাহলে নোট প্রতি গড়পড়তা ভ্যালু অনেক বেড়ে যায়।
কী বোঝা গেল? ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর হচ্ছে একটি জার্নালের গুণগত মানের একটি পরিমাপ। ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর থেকে একটি বিশেষ প্রবন্ধের মান সম্পর্কে ভালো জানা যায় না। তবে এটাও সত্য, মোটা দাগে একটি জার্নালের ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর যত বেশি, ভালো প্রবন্ধ সেই জার্নালে খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনাও তত বেশি। এখানে সম্ভাবনা শব্দটি গুরুত্বপূর্ণ।
জার্নালের মান বুঝতে ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর কতটা কার্যকরী? অনেকটাই। প্রতিটি scientometric index-এর দুর্বলতা আছে। ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টরেরও। তারপরেও যে বোঝে, তার জন্য ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর একটি ভালো ইনডিকেটর।
যারা গবেষক তারা হাই ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর জার্নাল টার্গেট করেন, এটা স্বাভাবিক। যতদূর সম্ভব হাই মপ্যাক্ট ফ্যাক্টর এবং টার্গেট অডিয়েন্স ঠিক করে পেপার সাবমিট করতে হয়। টার্গেট অডিয়েন্স একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এ ব্যাপারে সময় পেলে লেখার ইচ্ছা আছে।
সুবিধা অসুবিধা বুঝে ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর নিয়ে কথাবার্তা হতে অসুবিধা নেই। তবে অনেকে আজকাল ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টরকে একরকম তুড়ি দিয়ে উড়িয়ে দিতে চাচ্ছে। এই অ্যাটিচুডের কারণ বোঝা মুশকিল। সমস্যাটা বোধহয় বিজ্ঞান বা scientometric index হিসেবে ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর নয়, অন্য কোথাও।
পড়ুন- impact factor fallacy