বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
খ্রিস্টান বনাম মুসলিম সংলাপ:
বিষয়: যীশু তথা ঈসা আঃ কতৃক বিঘোষিত সাহায্যকারী কে? পবিত্র আত্মা নাকি রাসূল ﷺ ?
তৎকালীন সময়ে অসংখ্য সাহাবী পূর্বে ইহুদি ছিলেন, যারা পরে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তাওরাত- ইঞ্জিলের মধ্যে নবী ﷺ এর গুণাবলি দেখে। আবার মহান আল্লাহ্ সুবাহানাহু ওয়া'তাআলা পবিত্র কোরআনের মধ্যে এ সম্পর্কে বলেছেন:
Al-A'raf 7:157
ٱلَّذِينَ يَتَّبِعُونَ ٱلرَّسُولَ ٱلنَّبِىَّ ٱلْأُمِّىَّ ٱلَّذِى يَجِدُونَهُۥ مَكْتُوبًا عِندَهُمْ فِى ٱلتَّوْرَىٰةِ وَٱلْإِنجِيلِ يَأْمُرُهُم بِٱلْمَعْرُوفِ وَيَنْهَىٰهُمْ عَنِ ٱلْمُنكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ ٱلْخَبَٰٓئِثَ وَيَضَعُ عَنْهُمْ إِصْرَهُمْ وَٱلْأَغْلَٰلَ ٱلَّتِى كَانَتْ عَلَيْهِمْۚ فَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ بِهِۦ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَٱتَّبَعُوا۟ ٱلنُّورَ ٱلَّذِىٓ أُنزِلَ مَعَهُۥٓۙ أُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْمُفْلِحُونَBengali - Bayaan Foundation
যারা অনুসরণ করে রাসূলের (মুহাম্মদ ﷺ এর), যে উম্মী নবী; যাঁর গুণাবলী তারা নিজদের কাছে তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিখিত পায়, যে তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ দেয় ও বারণ করে অসৎ কাজ থেকে এবং তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করে আর অপবিত্র বস্তু হারাম করে। আর তাদের থেকে বোঝা ও শৃংখল- যা তাদের উপরে ছিল- অপসারণ করে। সুতরাং যারা তার প্রতি ঈমান আনে, তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং তার সাথে যে নূর নাযিল করা হয়েছে তা অনুসরণ করে তারাই সফলকাম।"
▪︎ এইখানে মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ ﷺ এর সম্পর্কে কথা বলেছেন যে, তাঁর গুণ-বৈশিষ্ট্যের সম্পর্কে পূর্ববর্তী কিতাব তথা তাওরাত-ইঞ্জিলের মধ্যে অগ্রিম জানিয়ে দিয়েছিলেন, যার জন্য তাঁর সম্পর্কে আহলে কিতাবী পন্ডিতগণ তাঁর আবির্ভাবের পূর্ব থেকেই জানতে পেরেছিল; এবং কি তাঁর সম্পর্কে তাওরাত-ইঞ্জিলের মধ্যে যেসব গুণাবলীর কথা বলা হয়েছিল সেসবও প্রকাশ্যে তাঁর (নবী) দ্বারা বাস্তবায়িত হয়েছে। আবার মহান আল্লাহ্ মহানবী ﷺ এর সম্পর্কে ঈসা আঃ এর উক্তি তুলে ধরে সারা বিশ্ববাসী- কে জানিয়ে দিলেন যে:
As-Saf 61:6
وَإِذْ قَالَ عِيسَى ٱبْنُ مَرْيَمَ يَٰبَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ إِنِّى رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيْكُم مُّصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَىَّ مِنَ ٱلتَّوْرَىٰةِ وَمُبَشِّرًۢا بِرَسُولٍ يَأْتِى مِنۢ بَعْدِى ٱسْمُهُۥٓ أَحْمَدُۖ فَلَمَّا جَآءَهُم بِٱلْبَيِّنَٰتِ قَالُوا۟ هَٰذَا سِحْرٌ مُّبِينٌBengali - Mujibur Rahman
স্মরণ কর, মারইয়াম তনয় ঈসা বললঃ হে বানী ইসরাঈল! আমি তোমাদের নিকট আল্লাহর রাসূল এবং আমার পূর্ব হতে তোমাদের নিকট যে তাওরাত রয়েছে আমি উহার সমর্থক এবং আমার পরে আহমাদ নামে যে রাসূল আসবেন আমি তাঁর সুসংবাদদাতা। পরে সে যখন স্পষ্ট নিদর্শনসহ তাদের নিকট এলো তখন তারা বলতে লাগলঃ এটাতো এক স্পষ্ট যাদু।
▪︎ এখানে ঈসা আঃ এর পরে যাঁর আগমন হবে তাঁর নাম স্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে- আহমাদ। আর এটা হলো আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ এর আরেকটা নাম যেটা মূলত তাঁর মাতা রেখেছিলেন। তো আল্লাহর কুরআন বলছে, পূর্ববর্তী কিতাব অর্থাৎ তাওরাত-ইঞ্জিলের মধ্যে মহানবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ এর সম্পর্কে বিভিন্ন গুণাবলির বর্ণনাও ছিল। আবার আমরা যদি বর্তমান সময়ে প্রচলিত খ্রিস্টানদের কিতাব বাইবেলও পড়ি, তাহলে এতেও দেখব যে, ঈসা আঃ যাকে যীশু খ্রিস্ট বলা হয়, তিনি এমন একজনের সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যিনি যীশুর পরে সমগ্র মানবজাতিকে পরিপূর্ণ সত্যের পথে নিয়ে যাবেন। কিন্তু মুসলিমদের আর খ্রিস্টানদের মধ্যে যীশু খ্রিস্টের এই ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। কারণ মুসলিমদের দাবি ও যৌক্তিক প্রমাণ অনুযায়ী যীশু খ্রিস্টের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী যেই সাহায্যকারীর আসার কথা ছিল তিনি হলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ, অপরদিকে খ্রিস্টানদের দাবি হলো তিনি পবিত্র আত্মা- যাঁকে তারা ঈশ্বর বলে। কারণ তারা যীশুর উক্ত বাণী দেখিয়ে বলে এটা পবিত্র আত্মা সম্পর্কে বলা হয়েছে যা একদম স্পষ্ট লেখাই আছে; কাজেই এটা কখনোই মুসলিমদের নবী মুহাম্মদের সম্পর্কে বলা হয় নাই, কারণ তিনি দৃশ্যমান রক্ত মাংসের একজন।
অপরদিকে মুসলিমদের দাবি হলো, যীশু খ্রিস্ট আসলেই হযরত মুহাম্মদ ﷺ এর সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে তাঁর জাতিকে জানিয়েছেন যে, তিনি যখন আসবেন তখন যেন তারা তাঁর উপর পরিপূর্ণ ঈমান আনে। কেননা তিনি ভবিষ্যদ্বাণীতে সেই সাহায্যকারীর যেসব শর্ত বা গুণ- বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন তা কস্মিনকালেও একজন অশরীরী আত্মা- যাকে দেখা যায় না, তার সাথে যায় না; সেই সাথে উক্ত গুণ- বৈশিষ্ট্যের কোন কিছুই খ্রিস্টানদের দাবিকৃত অশরীরী আত্মা- পবিত্র আত্মার কথা বলা হয় নাই, যদিও সেখানে স্পষ্ট পবিত্র আত্মা শব্দের উল্লেখ রয়েছে। এর উত্তর হিসেবে বিভিন্ন গবেষক ও পন্ডিতগণ বলেছেন, এইখানে আসলে পবিত্র আত্মা শব্দটাই বাইবেলের নতুন সংযোজন- যেন অনাগত ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পরবর্তী নবী মুহাম্মদ ﷺ এর আগমন সম্পর্কে জানতে না পারে, যার ফলে তারা খ্রিস্টান ধর্ম থেকে ইসলামে দীক্ষিত হবার যে সুযোগ ছিল তা ঘোলাটে করে দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে মুসলিমরা আরো বলেন যে, যীশুর বর্ণিত ভবিষ্যদ্বাণীতে যেসব গুণ-বৈশিষ্ট্যের কথা উক্ত সাহায্যকারীর মধ্যে থাকার কথা বলা হয়েছে, তা কেবলমাত্র নবী মুহাম্মদ ﷺ ছাড়া পৃথিবীর আর কারো দ্বারা পরিপূর্ণ হয়নি এবং কি খ্রিস্টানদের দাবিকৃত পবিত্র আত্মার দ্বারাও পূর্ণ হয়নি। কাজেই এটা কখনোই পবিত্র আত্মা হতে পারে না নবী মুহাম্মদ ﷺ ব্যতীত। তো কি সেই ভবিষ্যদ্বাণী যা যীশু খ্রিস্ট বলে গেছেন? আসুন আমরা বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্টের উদ্ধৃতির আলোকে তা জানি।সম্মানিত খ্রিস্টান ভাই ও বোনেরা আপনারা অনেকেই বলেন যে, (ক) (প্রচলিত) ইঞ্জিল শরিফ, ৪র্থ খন্ড, ইউহান্না/যোহন ১৪:১৫-১৭ তে যীশু তথা ঈসা আঃ ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছেন:
15. তোমরা যদি আমাকে মহব্বত কর ,তবে আমার সমস্ত হুকুম মেনে চলবে।
16. আমি পিতার নিকট প্রার্থনা করব এবং তিনি তোমাদের কাছে আর একজন সাহায্যকারী (ἄλλον Παράκλητον--allon Paraklēton/another helper) প্রেরণ করবেন। তিনি তোমাদের কাছে চিরকাল থাকবেন। সেই সাহায্যকারীই সত্যের আত্মা [Spirit of Truth] ..।
17. দুনিয়া তাঁকে গ্রহণ করতে পারে না এবং তাঁকে জানেও না। তোমরা কিন্তু তাঁকে জানো, কারণ তিনি তোমাদের সঙ্গে থাকবেন, আর তিনি তোমাদের অন্তরে বাস করবেন. (তিনি মুহাম্মদ ﷺ নন).........।"
[বিঃদ্রঃ এখানে যোহনের ১৪:১৭ পদের যৌক্তিক ব্যাখ্যা আমরা মুসলিমরা দিতে পারলেও খ্রিস্টানগণ কখনোই দিতে পারবে না বরং এর ব্যাখ্যা দিতে গেলে তারা ধরাশায়ী হয়ে যাবেন এবং এই কথাগুলো অর্থহীন বাক্যে পরিণত হবে। ইনশাআললাহ কোন এক সময় এটা বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করব]
আপনারা (খ্রিস্টানরা) বলেন,"তিনি (সেই সাহায্যকারী) মুহাম্মদ ﷺ নন।" আমি জিজ্ঞেস করি তিনি (সেই সাহায্যকারী ) যদি মুহাম্মদ ﷺ
না হন, তবে তিনি কে?" ঈসা আঃ কতৃক বর্ণিত "সেই সাহায্যকারী "-কে??? যীশু [হযরত ঈসা আঃ] তাঁর গ্রেফতার হওয়ার (?) আগে শেষ নৈশভোজের শেষে শিষ্যদের উদ্দেশ্যে একটি দীর্ঘ ভাষণ দিয়েছিলেন।এই ভাষণে তিনি আরেকজন নবীর আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। আর ইনিই ঈসা আঃ কতৃক বিঘোষিত ও প্রতিশ্রুতি সত্যের আত্মা-মুহাম্মদ ﷺ। ঈসা আঃ এর বিদায়ের পর- ভবিষ্যত প্রজন্মকে সেই অনাগত মুক্তিদাতার আনুগত্য করতে নির্দেশ দিয়ে গেছেন। আসলে তিনি বলে গেছেন যে, "আল্লাহ্ তাঁর পরে আর একজন সাহায্যকারী পাঠাবেন, যিনি আল্লাহর বাণী শুনে তাঁর পয়গাম মানুষের সামনে পুনরাবৃত্তি করবেন।"
সমগ্র মানবতার গুরুত্বপূর্ণ পথনির্দেশক এ ভাষণটি যোহনের সুসমাচারের ১৪-১৭ অধ্যায়ে আছে কিন্তু অন্য তিনটি ইঞ্জিলে নেই।মথি, মার্ক ও লুক লিখিত এ তিনটি ইঞ্জিলে যীশুর স্পর্শকাতর দৃশ্যটি একেবারেই নেই। প্রশ্ন উঠে এ বিরাট ফাঁকা রাখার কারণ কি? কেন? ঐ তিন ইঞ্জিলের আদি সংস্করণগুলোতে কি এ ঘটনাটি বর্ণিত ছিল?পরবর্তীকালে কি এটা মুছে ফেলা হয়েছে? কেন? এটা কি জন্য করা হয়েছিল? এটা কি এজন্য করা হয়েছে যে মহানবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ এর ভবিষ্যদ্বাণী এড়িয়ে যেতে হবে এবং যীশুকে শেষ নবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে?
এখানে দুই পক্ষের অর্থাৎ খ্রিস্টান এবং মুসলিমদের দাবি ভিন্ন। খ্রিস্টানগণ দাবি করেন এটা তাদের পবিত্র আত্মা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যীশু। অপরদিকে মুসলিম পন্ডিতগণ দাবি করেন, এটা তাদের রাসূল ﷺ এর সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যীশু। আসলে কোন পক্ষের দাবি সঠিক? এটা আমরা কিভাবে নির্ণয় করে প্রকৃত সত্যকে জানব? আসুন এ বিষয়ে নিরপেক্ষ যৌক্তিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে আলোচনা করা যাক।
ছোট্ট গল্পের মাধ্যমে একটা বিষয় লক্ষ্য করা যাক। মনে করুন আপনি মিনহাজ। আর আপনার বন্ধু জেনিফার। আর আপনাদের উভয়ের পরিচয় ফেসবুকে। তো আপনি এখন ফেসবুক অনলাইনে জেনিফারের সঙ্গে প্রেম-ভালবাসা বিনিময় করছেন, কিন্তু আপনি কখনোই তাকে দেখেননি এবং জেনিফারও আপনাকে দেখে নাই। এখন জেনিফার আপনাকে দেখতে চাইল, তো আপনি তাকে বললেন, "আমরা তাহলে একদিন দেখা করি।" এতে জেনিফার রাজি হলো।
এখন কথা হলো: জেনিফারও মিনহাজকে দেখে নাই, আবার মিনহাজও জেনিফারকে দেখে নাই। তাহলে উভয়েই উভয়কে কখনো না দেখলে চিনবে কিভাবে? তখন জেনিফার কোথায় দেখা করবে, সে স্থানের ঠিকানা দিয়ে দিল মিনহাজ। আর এমন মুহূর্তে জেনিফার মিনহাজ কে বলল, "আমি যখন তোমার সাথে দেখা করব, তাহলে কিভাবে চিনব তুমিই মিনহাজ?" আর মিনহাজ তখন নিজেকে চেনার কিছু বৈশিষ্ট্য জেনিফারকে বলে দিল। তো বৈশিষ্ট্য গুলো ছিল এমন:
- সে ভালোই উচু-লম্বা এবং ফর্সা রঙের সুদর্শন;
- সে নীলের মাঝে সাদা রঙের একটা শার্ট পড়া;
- খয়েরি রঙের জিন্সের প্যান্ট পড়া;
- বাম হাতে নীল রঙের ঘড়ি পড়া;
- পায়ে কালো জুতা এবং
- মাথায় নীল রঙের একটা ক্যাপ পড়া।
মিনহাজ তাকে চেনার এই ছয়টি বৈশিষ্ট্য জেনিফারকে বলে দিল। আর কাঙ্খিত দিনে জেনিফার মিনহাজের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী জায়গায় রওনা দিল। আর মিনহাজও জেনিফারের সাক্ষাতের জন্য অপেক্ষারত ছিল। কিন্তু সমস্যা হলো: মিনহাজ জেনিফারকে কিভাবে চিনবে যেহেতু সে জেনিফারকে চেনার মতো কোন চিহ্ন বা বৈশিষ্ট্য তার থেকে জেনে নেয়নি। এরকম চিন্তা করার সময় সে ভাবল,"আমি না হয় জেনিফারকে চিনতে না পারলাম কিন্তু জেনিফার তো আমার দেওয়া ছয়টি চিহ্ন বা বৈশিষ্ট্য দেখে আমাকে চিনে নিবে।" এসব ভেবে সে আনমনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।
আর এমন সময় জেনিফার মিনহাজের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী উক্ত জায়গায় পৌছল। তো তখন সে ঐখানে অনেক ছেলেকেই দেখতে পেল। জেনিফার তখন চিনবে কিভাবে, আসলে কোন ছেলেটা মিনহাজ হবে? তখন সে মিনহাজের দেওয়া বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী খুঁজতে লাগল, এখানে এই ছয়টি বৈশিষ্ট্য কোন ছেলের মধ্যে পাওয়া যায়। আর হঠাৎ-ই জেনিফার দেখতে পেল যে, এই ছয়টি বৈশিষ্ট্যের সবগুলোই উপস্থিত ঐ ছেলেগুলোর একজনের মধ্যে হুবহু মিল পাওয়া গেল, আর ঐ ছেলেটাই নিশ্চিত মিনহাজ হবে। আর এমন সময় মিনহাজ দেখতে পেল একটা মেয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে। আর তখন মিনহাজ ভাবল এ হয়ত জেনিফার হবে। আর তখন উভয়েই উভয়কে চিনতে পারল।
তাহলে আমরা উপরোল্লিখিত ছোট্ট গল্পে দেখতে পেলাম যে, জেনিফার অতগুলো ছেলের মধ্যে একজন অদেখা অপরিচিত ছেলেকে মিনহাজ হিসেবে চিনতে পেরেছিল ছয়টি চিহ্ন বা বৈশিষ্ট্যের জন্য। কেননা ঐ ছয়টি বৈশিষ্ট্য ছিল মিনহাজকে সঠিকভাবে চেনার চিহ্ন। আর ঠিক এইভাবে বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করে বাইবেলের মধ্যে যীশু কতৃক বর্ণিত "সেই সাহায্যকারী" কে আমরা সঠিক ভাবে চিনতে পারব যে, আসলে কে সেই সাহায্যকারী? পবিত্র আত্মা নাকি মুহাম্মদ ﷺ। জেনিফার যেইভাবে ৬ টি চিহ্ন বা বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করে মিনহাজ কে সঠিকভাবে চিনতে পেরেছিল ঠিক একইভাবে নবী মুহাম্মদ ﷺ ও পবিত্র আত্মার মধ্যে বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করে আমরা "সেই সাহায্যকারী" কে চিনতে পারব। তাহলে আসুন, প্রথমে আমরা যীশুর করা সেই ভবিষ্যদ্বাণী এক নজরে দেখি।
(খ) ইউহান্না ১৪:২৫-২৬ এ ঈসা আঃ বলেছেন-
25. তোমাদের সংগে থাকতে থাকতেই এ সমস্ত কথা আমি তোমাদের বলছি।
26. সেই সাহায্যকারী অর্থাৎ পাকরূহ (পবিত্র আত্মা) যাকে পিতা আমার নামে পাঠিয়ে দিবেন। তিনিই সমস্ত বিষয় তোমাদের শিক্ষা দিবেন। আর আমি তোমাদের যা কিছু বলেছি সেই সমস্ত তোমাদের মনে করিয়ে দিবেন।"(গ) ইউহান্না ১৫:২৬ ঈসা আঃ আরো বলেছেন:
26. সেই সাহায্যকারীকে আমি পিতার নিকট থেকে তোমাদের নিকট পাঠিয়ে দিব, তিনি যখন আসবেন তখন তিনিই 'আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দিবেন'। ইনিই সত্যের রুহ (Spirit of Truth)........(গ) ইউহান্না ১৬:৭-৮ ঈসা আঃ আরো বলেছেন:
7. তথাপি আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, আমার যাওয়া তোমাদের পক্ষে ভাল, কারণ আমি না গেলে, সেই সহায় তোমাদের নিকটে আসিবেন না; কিন্তু আমি যদি যাই, তবে তোমাদের নিকটে তাঁহাকে পাঠাইয়া দিব।
8. আর তিনি আসিয়া পাপের সম্বন্ধে, ধার্মিকতার সম্বন্ধে ও বিচারের সম্বন্ধে, জগৎকে দোষী করিবেন।(ঙ) যোহন ১৬:১২ ঈসা আঃ আরো বলেছেন:-
12. তোমাদিগকে বলিবার আমার আরও অনেক কথা আছে, কিন্তু তোমরা এখন সেই সকল সহ্য করিতে পার না।"(চ) যোহন ১৬:১৩ ঈসা আঃ আরো বলেছেন:-
13. পরন্তু তিনি সত্যের আত্মা, যখন আসিবেন, তখন পথ দেখাইয়া তোমাদিগকে সমস্ত সত্যে লইয়া যাইবেন; কারণ তিনি আপনা হইতে কিছু বলিবেন না, কিন্তু যাহা যাহা শুনেন, তাহাই বলিবেন, এবং আগামী ঘটনাও তোমাদিগকে জানাইবেন।
14. তিনি আমাকে মহিমান্বিত করিবেন...!
▪︎ ইঞ্জিল (?) এর উপরোল্লিখিত ৬ টি উদ্ধৃতিতে "সেই সাহায্যকারীর" মধ্যে কমপক্ষে নিন্মের ১৪ টি বৈশিষ্ট্য/শর্ত/গুণগুলো অবশ্যই বিদ্যমান থাকতে হবে। এখন এসব বৈশিষ্ট্য কার মধ্যে রয়েছে বিশ্ব মানবতার দূত হযরত মুহাম্মদ ﷺ নাকি ত্রিত্ববাদী খ্রিস্টানদের দাবিকৃত পবিত্র আত্মা? মুসলিমদের দাবি অনুযায়ী অবশ্যই এসকল বৈশিষ্ট্য একমাত্র নবী মুহাম্মদ ﷺ এর দ্বারা পরিপূর্ণ হয়েছে। কিন্তু ত্রিত্ববাদী খ্রিস্টানদের দাবি অনুযায়ী এসকল বৈশিষ্ট্য কী পবিত্র আত্মা দ্বারা পরিপূর্ণ হয়েছে কী? তাহলে আসুন বৈশিষ্ট্য গুলো দেখা যাক:
- নং বৈশিষ্ট্য- তাঁর পূর্বে দেহ বিশিষ্ট আরো সাহায্যকারী থাকতে হবে অর্থাৎ যীশুর পরে "আর একজন (ἄλλον Παράκλητον--allon Paraklēton/another helper) সাহায্যকারী" আসবেন (যোহন ১৪:১৬) ["আর" শব্দ প্রমাণ করে যে এই "সাহায্যকারীর" পূর্বে আরো "সাহায্যকারী" ছিলেন]
- নং বৈশিষ্ট্য- ইনি হবেন দেহ বিশিষ্ট পূর্বের "সাহায্যকারীদের মতই একজন অর্থাৎ রক্ত মাংসের মানুষ।
- নং বৈশিষ্ট্য- "সেই সাহায্যকারী মানুষের কাছে চিরকাল থাকবেন" (যোহন ১৪:১৬)
- নং বৈশিষ্ট্য- তিনি হবেন সত্যের আত্মা (Spirit of Truth) (যোহন ১৪:১৭; ১৫:২৬; ১৬:১৩)
- নং বৈশিষ্ট্য- তিনিই "সমস্ত বিষয় মানুষকে শিক্ষা দিবেন"(যোহন ১৪:২৬)
- নং বৈশিষ্ট্য- তিনি যীশুর কথা "বিশ্বাসীদের মনে করিয়ে দিবেন"(যোহন ১৪:২৬)
- নং বৈশিষ্ট্য- "সেই সাহায্যকারী "যীশু তথা ঈসা আঃ এর বিষয়ে সাক্ষ্য দিবেন"(যোহন ১৬:১৪)
- নং বৈশিষ্ট্য- যীশু না গেলে "সেই সাহায্যকারী আসবে না"(যোহন ১৬:৭)
- নং বৈশিষ্ট্য- তিনি পাপের সম্বন্ধে জগতকে দোষী সাবস্ত্য; করবেন, ধার্মিকতা ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন" (যোহন ১৬:৮]
- নং বৈশিষ্ট্য- যীশুর অনেক কথা বলার ছিল কিন্তু তিনি তা বলেননি বরং তাঁর উত্তরসূরীর জন্য রেখে গেছেন" (যোহন ১৬:১২)
- নং বৈশিষ্ট্য- তিনি পথ দেখিয়ে বিশ্বাসীদের পূর্ণ সত্যে নিয়ে যাবেন" (যোহন ১৬:১৩)
- নং বৈশিষ্ট্য- "সেই সাহায্যকারী নিজ থেকে কথা বলবেন না, যা কিছু শুনেন তাই বলবেন" (যোহন ১৬:১৩)
- নং বৈশিষ্ট্য- সেই সাহায্যকারী আগামী ঘটনাও জানাবেন" (যোহন ১৬:১৩)
- নং বৈশিষ্ট্য- সেই সাহায্যকারী যীশু তথা ঈসা আঃ কে মহিমান্বিত করবেন" (যোহন ১৬:১৪)
আর অনেক খ্রিস্টান ভাই-বোনেরা বলেন যে, "আর একজন সাহায্যকারী (গ্রিক- ἄλλον Παράκλητον--allon Paraklēton/another helper) মুহাম্মদ ﷺ না!
তিনি যদি মুহাম্মদ ﷺ না হয়ে থাকেন তাহলে তবে তিনি কে? আপনাদের প্রমাণ করে দেখাতে হবে যে অন্য কার মধ্যে উপরোল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি খুঁজে পাওয়া যায় অথবা মিলে যায় ? পাক-রুহ বা ফেরেশতা জিব্রাইল আঃ এর দ্বারা উপরোল্লিখিত একটা শর্তও পূর্ণ হয়নি। তবে তিনি কে? প্রমাণিক উৎস থেকে বিশ্বাসযোগ্য যুক্তি-প্রমাণ দিয়ে আপনাদের তা প্রমাণ করে দেখাতে হবে। যদি না পারেন তাহলে আমরা যুক্তি প্রমাণ দিয়ে যার কথা বলেছি তাঁকে মেনে নিতে হবে। আপনাদের নিশ্চয়ই অকপট হতে হবে। আপনারা অনুগ্রহ করে অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিবেন না। খোঁড়াযুক্তি দেখাবেন না, অথবা সত্যকে গোপন করার জন্য ভাষাকে পেঁচিয়ে ফেলবেন না অথবা টাল-বাহানা করবেন না। (কারণ এগুলো খ্রিস্টান পন্ডিতদের স্বভাব যা পৌলীয় স্বীকৃতি দেওয়া)। আপনারা অনুগ্রহ করে মনে রাখবেন, একদিন আমাদের সকলকেই সৃষ্টিকর্তার সামনে হাজির হতে হবে।
মথির ৭:১৬ তে যীশু বলেছেন:
7. তোমরা তাঁহাদের [নবীদের] ফল দ্বারাই তাঁহাদিগকে চিনিতে পারিবে...।"
▪︎ [নোট: মথি ৭:১৩-২০ পদ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে পারেন। কেননা এইখানে যীশু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন উপমার মাধ্যমে]
15. ভাক্ত ভাববাদিগণ (গ্রিক: ψευδοπροφητῶν--pseudoprophētōn/the false prophets) হইতে সাবধান (but bewere of the false prophets) তাহারা মেষের বেশে তোমাদের নিকটে আইসে, কিন্তু অন্তরে গ্রাসকারী কেন্দুয়া।
▪︎ [ফুটনোট: অধিকাংশ সময়ই খ্রিস্টান মিশনারি/পাদ্রিগণ ভন্ড ভাব্বাদীগণ বিষয়ক এসকল বক্তব্য যীশু খ্রিস্টের পরে আর কোন ভাব্বাদীর আগমন হবে না- এই দাবির পক্ষে প্রমাণ হিসেবে উপরোল্লিখিত ১৫ পদ পেশ করেন যা খুবই অদ্ভুত বিষয় এবং তাদের অজ্ঞতার কারণে মারাত্মক ভুল। অথচ এসব খ্রিস্টানগণ-ই যীশু খ্রিস্টের পরে অন্য মানুষের ভাব্বাদীত্ব স্বীকার করেন। তারা খ্রিস্টের ১২ জন প্রেরিতকে ভাব্বাদী বলে বিশ্বাস করেন। এছাড়া পৌলকেও তারা ঐশ্বরিক প্রেরণা ভাব্বাণী প্রাপ্ত ভাব্বাদী বলে বিশ্বাস করেন। শুধুই তাই নয়, তারা পরবর্তী অন্য অনেক মানুষের ভাব্বাদীত্ব স্বীকার করেন" [প্রেরিতগণের কার্য্য বিবরণ ১১:২৭; ২১:১০] ।
মথি ৭:১৫-২০
16. তোমরা তাহাদের ফল দ্বারাই তাহাদিগকে চিনিতে পারিবে। লোকে কি কাঁটা গাছ হইতে দ্রাক্ষাফল, কিম্বা শিয়ালকাঁটা হইতে ডুমুর ফল সংগ্রহ করে?
17. সেই প্রকারে প্রত্যেক ভাল গাছে ভাল ফল ধরে, কিন্তু মন্দ গাছে মন্দ ফল ধরে।
18. ভাল গাছে মন্দ ফল ধরিতে পারে না, এবং মন্দ গাছে ভাল ফল ধরিতে পারে না।
19. যে কোন গাছে ভাল ফল ধরে না, তাহা কাটিয়া আগুনে ফেলিয়া দেওয়া যায়।
20. অতএব তোমরা উহাদের ফল দ্বারাই উহাদিগকে চিনিতে পারিবে।
▪︎ [মথি ৭:১৩-২০ পদের মূল সারমর্ম: যীশুর পরে আর কোন সত্য ভাব্বাদীর আগমন হবে না এই কথা তিনি কখনোই বলেননি। বরং তিনি বিভিন্ন সময়ে ভন্ড ভাব্বাদী থেকে সাবধান করতেন যার জন্য তিনি এইখানে সুনির্দিষ্ট করে বলেছেন,"ভাক্ত ভাববাদিগণ/মিথ্যা নবী (গ্রিক: τῶν ψευδοπροφητῶν- pseudoprophētōn/false prophets) হইতে সাবধান/but bewere of the false prophets ; অর্থাৎ এটা দ্বারা বোঝা যাচ্ছে যে, ভবিষ্যতে অনেকেই নিজেকে নবী দাবি করবে। আর এসব মিথ্যা নবীদের চেনা যাবে তাদের কার্য্য (ফল) দ্বারা। যীশু কিন্তু এইখানে সত্য নবী (True Prophet) থেকে সাবধান করেননি। তিনি কেবলমাত্র মিথ্যা/ভন্ড নবী থেকে সাবধান করে তাদের থেকে আটকে দিয়েছেন, যার জন্য তিনি সুনির্দিষ্ট বাচক ওয়ার্ড গ্রিক: ψευδοπροφητῶν--pseudoprophētōn/the false prophets শব্দ ব্যবহার করেছেন।
যদি যীশুর পরে কোন নবী নাই আসত তাহলে তিনি কখনোই এইভাবে সুনির্দিষ্ট করে কেবলমাত্র "ভাক্ত ভাববাদিগণ/মিথ্যা নবী/the false prophets বলে উল্লেখ করতেন না বরং তিনি হয়তো এরুপ বলতেন, "আমার পরে যত ভাববাদী আগমন করবে, সকলের থেকে সাবধান থাকবে।" কিন্তু যীশু এটাও বলেননি। যীশু কেবলমাত্র মিথ্যা নবী থেকে সাবধান করলেও সত্য নবী থেকে সাবধান করেননি। কারণ যীশুর পরেও সত্য নবীর আবির্ভাব হবে। আর আপনি যদি ইসলামিক ইতিহাস দেখেন তাহলে সেখানে দেখতে পাবেন যে,"মুহাম্মদ ﷺ বলেছেন, তিনিই শেষ নবী এবং তাঁর পরে আর কোন নবীর আগমন হবে না (এখানে রাসূল ﷺ যীশুর মতো কথাগুলো বলেননি অর্থাৎ তিনি কেবলমাত্র ভন্ড নবী থেকেই সাবধান করেননি বরং তাঁর পরে আর কোন নবীর আগমন হবে না সেটা ক্লিয়ার করে দিয়েছেন) এবং কী তিনি এই সাথে এও জানিয়ে দিয়েছেন যে, তাঁর পরে ৩০ জন মিথ্যা নবীর আগমন ঘটবে।
তাহলে আমরা পাই:
- যীশু কেবলমাত্র ভন্ড নবী থেকে সাবধান করেছেন কিন্তু সত্য নবী থেকে সাবধান করেনি;
- অপরদিকে রাসূল ﷺ ই শেষ নবী অর্থাৎ তাঁর পরে নবী আসার সকল পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
এছাড়া এইখানে ১৬-২০ পদে যীশু উপমার মাধ্যমে এই বিষয়টি ক্লিয়ার করেছেন যে,"শিয়ালকাঁটা গাছ হতে যেমন ডুমুর ফল সংগ্রহ করা যায় না ঠিক তেমনি ভালো গাছে ভাল ফল ছাড়া খারাপ ফল ধরে না অর্থাৎ ভালো গাছে ভাল ফল ধরে আর খারাপ গাছে খারাপ ফল ধরে। আর যেমন এইভাবে ফল দেখে গাছ চেনা যায় ঠিক তেমনি নবীদের ফল দেখে সত্য নবী এবং ভন্ড নবী কে তা চেনা যাবে। এছাড়া বাইবেলের মধ্যে সত্য নবীকে চেনার কিছু চিহ্ন বলে দেওয়া হয়েছে, যা রাসূল ﷺ এর মধ্যে রয়েছে।
"মুহাম্মদ ﷺ এর ফল দ্বারাই তাঁকে চিনতে পারবেন।" উপরোল্লিখিত ১৪ টি শর্ত/বৈশিষ্ট্য/গুণের সবগুলো তাঁর [নবী মুহাম্মদ ﷺ] এর দ্বারাই পরিপূর্ণ হয়েছে। এখানে একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন। তা হচ্ছে চার্চ (Church) মানুষের (নামবাচক বিশেষ্যর) নামের অনুবাদ করে এক নতুন পীড়ার জন্ম দিয়েছে। অথচ নামের অনুবাদ করার অধিকার কারোরই নেই। কোন ব্যক্তি, কোন দেশ, কোন স্থান বা কোন কিছুর নিজস্ব/নির্দিষ্ট (Specific) নাম বোঝায়, সেটা হলো Proper Noun. আর নিচের সব শব্দগুলো Proper Noun. দৃষ্টান্ত স্বরূপ লক্ষ্য করুন: ইসলামী নাম থেকে অনুদিত খ্রিস্টান নাম :
নামবাচক বিশেষ্য: থেকে : অনুবাদ
ইদ্রিস আঃ (Idris ): থেকে :Enoch
ইয়াহুদা (Yehuda): থেকে :যুদা (Juda )
ইউসুফ আঃ (Yusuf):থেকে :জোসেফ (Joseph)
ইউনুস আঃ (Yunus):থেকে :যোনাহ (Jonah )
ঝুলকিফল (Dhulkifl):থেকে: এজিকিল (Ezekiel )
ইয়াকুব আঃ (Yaqub): থেকে :যাকোব (Jacob)
আইয়ুব আঃ (Ayoob):থেকে : যব (Job)
দাউদ আঃ (Dawood):থেকে : ডেভিড (David)
ইয়াহিয়া আঃ(Yahya): যোহন(John the Baptist)
ঈসা আঃ (Esau): থেকে :যীশু (Jesus)
মেসাইয়্যা (Messiah) আঃ: থেকে :খ্রিস্ট (Christ)
মুহাম্মদ ﷺ ( Muhammad pbuh) থেকে: তিনি সর্বতোভাবে মনোহর (Altogether Lovely) [ সলোমনের পরমগীতী ৫:১০-১৬)।
যাবুর (Jabur):থেকে: গীতসংহিতা (Psalm)
ইঞ্জিল (Injel):থেকে: সুসমাচার (Gospel) ।
আর যীশু তথা হযরত ঈসা আঃ এর উপরে আরামায়িক ভাষায় ইঞ্জিল নাযিল হয়েছিল। আরামায়িক হিব্রুরই একটা আঞ্চলিক রুপ। যেমন মিশরের লোকেরা কথা বলে তাদের আরামায়িক আরবিতে, ইয়েমেনের মানুষ কথা বলে তাদের আঞ্চলিক আরবিতে, অথচ কোরআন নাযিল হয়েছে মক্কার কুরাইদের আরবিতে। আরামায়িক হিব্রুরই একটা আঞ্চলিক রুপ। ঈসা আঃ গ্রীক, ল্যাটিন বা ইংরেজি কিছুই জানতেন না। উল্লেখ্য যে ইংরেজি ভাষা আবিষ্কার হয়েছে অষ্টম শতাব্দীতে. Bible, Gospel, Jesus, God, Paracletos ইত্যাদি ইংরেজি শব্দ ঈসা আঃ এর সময় ছিল না। আল্লাহ্ ঈসা আঃ এর উপর এসব নাযিল করেননি। এগুলো খ্রিস্টানদের নিজেদের সৃষ্টি। ইঞ্জিল বা প্রকৃত সুসমাচার ঈসা আঃ এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল আরামায়িকে অথচ ইউহান্না লিখিত সুসমাচার লেখাই হয়েছে ১০০ বছর পর গ্রীক ভাষায়। সুতরাং হিব্রু থেকে গ্রিকে এবং গ্রিক থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ এর সময়ে ইঞ্জিলে কত যে পরিবর্তন হতে পারে তা নিয়ে কেউ সন্দিহান হতে পারেন। অনুবাদের সময় ইঞ্জিলে যে কত অজস্র ও বড় রকমের ভুল হয়েছে তাতে আজকের ইঞ্জিলের বিশুদ্ধতা ও যথার্থ তা অবশিষ্ট থাকার কথা নয়। তাছাড়া গির্জা কতৃক অনুমোদিত ইঞ্জিল এবং হিব্রু ভাষায় লিখিত আসল ইঞ্জিল গুলোকে প্রচলিত ধর্মমতের বিরোধী বলে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। গির্জা কতৃক অনুমোদিত ইঞ্জিল মাত্র চারখানা।
- মথি লিখিত ইঞ্জিল;
- মার্ক লিখিত ইঞ্জিল;
- লুক লিখিত ইঞ্জিল এবং
- ইউহান্না/যোহন লিখিত ইঞ্জিল।
এগুলো বেনামী লেখকদের লেখা। কারণ এদের পরিচয় পাওয়া যায় না। সুতরাং সত্য সন্ধানীরা বুঝতে পারবেন যে, এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদের দীর্ঘ প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে কিভাবে বহু সুসমাচারকে বিকৃত বা পরিবর্তন করা হয়েছে। অনুদিত গ্রন্থগুলোর ভাষা মহান আল্লাহর না ,অনুবাদের ভাষা অনুবাদকের। যদিও বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত সুসমাচারগুলো আল্লাহর বাণীতে পরিপূর্ণ বলে খ্রিস্টীয় ধর্মতাত্ত্বিকরা দাবি করেন তবুও এটা বলা যায় যে ,যেহেতু আল্লাহর অবতীর্ণ বাণী থেকে এর বিভিন্ন ভাষা আলাদা সেহেতু এগুলো আল্লাহর বাণী নয়।
নোট: যীশু সেই সাহায্যকারীর আগমন সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছিলেন। যার প্রমাণ দেখুন:(যোহন ১৪:১৫-১৬; ১৫:২৬; ১৬:৭-৮; ১৬:১২-১৩)।"
আর এইসব উদ্ধৃতি তে কমপক্ষে "১৪ টি বৈশিষ্ট্য বা শর্ত" সম্পর্কে জানান দিয়েছেন যীশু। অর্থাৎ যার দ্বারা এসব বৈশিষ্ট্য পূর্ণ হবে নিশ্চিত তিনিই হবেন যীশুর বর্ণিত "সেই সাহায্যকারী।" কেননা যার সম্পর্কে বলা হয়েছে একমাত্র তিনি ছাড়া পৃথিবীর দ্বিতীয় কেউই এসব বৈশিষ্ট্যগুলো পরিপূর্ণ করতে পারবে না। এখন যীশু যদি "পবিত্র আত্মা"র কথা বলেন তাহলে এসকল বৈশিষ্ট্যের সবগুলো একমাত্র "পবিত্র আত্মা" দ্বারা পরিপূর্ণ হবে। আর যদি "নবী মুহাম্মদ ﷺ"- এর সম্পর্কে বলেন তাহলে নিশ্চয়ই এসকল বৈশিষ্ট্যের সবগুলো একমাত্র "নবী মুহাম্মদ ﷺ"- এর দ্বারা পরিপূর্ণ হবে। অর্থাৎ এই ভবিষ্যদ্বাণীর সকল বৈশিষ্ট্য বা শর্তগুলো সেই পরিপূর্ণ করতে পারবে যার সম্পর্কে যীশু বলেছিলেন। কিন্তু কখনোই একসাথে একজন ব্যতীত দুইজনের দ্বারা পরিপূর্ণ করা সম্ভব নয়। আর এসব বৈশিষ্ট্যের সবগুলো ই একমাত্র "নবী মুহাম্মদ ﷺ"- এর দ্বারা পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু তথাকথিত "পবিত্র আত্মা"- দ্বারা পরিপূর্ণ হয় নাই। এখন বলেন কেন এমনটি হলো?
এছাড়া এ বিষয়ে ফরাসী বিজ্ঞানী ড.মরিচ বুকাইলী বলেছেন, "আমরা অধুনা প্রচলিত ইঞ্জিলগুলোতে প্যারাক্লীটস (Paracletos-হিব্রু শব্দ) শব্দের বদলে "পাক রুহ বা (পবিত্র আত্মা) (Holy Spirit)" বলে যে কথাটা পাচ্ছি, তা নিঃসন্দেহে পরবর্তীকালের সংযোজন এবং ঐ শব্দ দুটি জুড়ে দেওয়া হয়েছে একান্ত ইচ্ছাকৃত ভাবেই। এর দ্বারা মূল বাইবেলের যে বাণীতে যীশু তথা ঈসা আঃ এর পরে আরেকজন নবীর আবির্ভাবের কথা বলা হয়েছিল তা পুরোপুরিভাবে ধামা-চাপা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, খ্রিস্টান গির্জাসমূহের সংগঠনের কালে, প্রচার চালানো হয়েছিল যে, যীশুই হচ্ছেন সর্বশেষ নবী। গির্জা সংস্থার সেই প্রচারটা যাতে মাঠে মারা না যায় তার জন্যই বাইবেলের বাণীতে ও অনুবাদে এ ধরনের কারসাজি ও বিকৃতি সাধন করা হয়েছিল। (বাইবেল,কোরআন ও বিজ্ঞান ,পৃষ্ঠা:১৬৭)। পাক-রুহ বা পবিত্র আত্মা আর কেউ নন বরং প্রধান ফেরেশতা হযরত জিব্রাইল আঃ।
কৃতজ্ঞতায়: শেখ মুহাম্মদ আব্দুল হাই এবং আল্লামা কিরানবী রহঃ।