Are you sure?

কুরআন »  বিবিধ

ইবলিশ কী যুক্তি দাঁড় করিয়ে অভিশপ্ত হয়েছিল?

আমাদের মধ্যে অধিকাংশ সবাই জানে- ইবলিশ একজন অভিশপ্ত জ্বীন শয়তান। কিন্তু কেন অভিশপ্ত হয়েছিল সেই কারণ হিসেবে যেটা জানে, সেটা হলো কেবলমাত্র তার মিথ্যা অহঙ্কার। আর সে এই বলে অহঙ্কার করেছিল যে, আদম তো মাটির সৃষ্টি আর অপরদিকে আমি আগুনের সূষ্টি। কাজেই আদম অপেক্ষা আমিই বেশি শ্রেষ্ঠ। আর এটাকে অনেকেই ইবলিশের যুক্তি হিসেবে ধরে নেয় আর বলে, এজন্য কুরআন মানার ক্ষেত্রে কোনরুপ যুক্তি চলবে না। কারণ ইবলিশ সর্বপ্রথম যুক্তি দিয়েছিল এবং পথভ্রষ্ট হয়েছিল। অথচ এটা তাদের ভুল ধারণা এবং সঠিক জ্ঞানের অভাব। কারণ ইবলিশ কখনোই যুক্তি দেয়নি। সে বরং অহঙ্কারবশত অযৌক্তিক ভাবেই নিজেকে শ্রেষ্ঠ দাবি করেছিল এবং আদম আঃ এর যে শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে তা অস্বীকার করেছিল। আবার যুক্তি সত্য এবং মিথ্যার মধ্যে ঢাল স্বরূপ তথা সত্য এবং মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে দিয়ে প্রকৃত সত্যকে চিনিয়ে দেয়। কাজেই যুক্তি সবসময়ই সত্যের পক্ষে অবস্থান নিলে মহান আল্লাহর শত্রু ইবলিশ- কিভাবে তাঁর সামনে যুক্তি দাঁড় করাতে পারে? বরং যারা বলে ইবলিশ যুক্তি দিয়েছিল, তারা আসলে ভুল জানে অথবা সঠিক জ্ঞান সম্পর্কে ভাল করে অবগত নয়। আপনি যদি পবিত্র কুরআন গভীরভাবে অধ্যায়ন করেন তাহলে দেখবেন স্বয়ং মহান আল্লাহ্ তা'আলা নিজেই পবিত্র কালামে অসংখ্যবার যুক্তি দিয়ে কথা বলেছেন যার উদাহরণ হলো ৫:১৭,৭৫ সহ ইত্যাদি আয়াত দ্রষ্টব্য। আবার মুসলিম জাতির পিতা ইব্রাহিম (আঃ)ও যুক্তির মাধ্যমে তাঁর সত্যকে চিনে নিয়েছিলেন। সুতরাং এটা অবশ্যই বলা যায় যে, ইবলিশ কখনোই যুক্তি দিয়ে পথভ্রষ্ট হয়নি। এখন আসুন আমরা জেনে নিই ইবলিশ কিভাবে পথভ্রষ্ট, অভিশপ্ত হয়েছিল এবং কেন? তার অভিশপ্ত হওয়ার পেছনে কেবলমাত্র অহঙ্কার দায়ী নাকি আরও কিছু?সাধারণভাবে সবাই জানে আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা আমাদের আদিপিতা হযরত আদম আঃ কে সৃষ্টি করেন। সৃষ্টি করার পর তিনি আদম আঃ কে সিজদা করার জন্য ফেরেশতাগণকে আদেশ করেন। সবাই এটা মেনে নিয়েছিল কিন্তু ইবলিশ অমান্য করেছিল। এটাই ঘটনার সহজ একটি বিবরণ। অধিকাংশ মানুষ এর সাথে পরিচিত। কিন্তু কুরআনে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিস্তারিত বিবরণও এসেছে যা বাদ পড়ে যায় সরল অনুবাদের মধ্যে অনুপস্থিত থাকার জন্য, যখন আপনি ঘটনাটি নিয়ে এভাবে সংক্ষেপে চিন্তা করেন। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জ্বাল সর্বপ্রথম সকল ফেরেশতাদের প্রতি ঘোষণা জারি করেন, আর আমরা বুঝতে পারি সেসময় তাদের মাঝে ইবলিশও এ ঘোষণার অন্তর্ভুক্ত ছিল। মহান আল্লাহ্ বলেছেন:

Sad 38:71
إِنِّى خَٰلِقٌۢ بَشَرًا مِّن طِينٍ

ইন্নি খা-লিকুন বাশারাম মিন ত্বীন
আমি মানুষ সৃষ্টি করতে যাচ্ছি মাটি বা কাদা থেকে।"

▪︎ আল্লাহ যখন এই ঘোষণা দিচ্ছেন তখনো তিনি আদম আঃ কে সৃষ্টি করেননি অর্থাৎ আদম আঃ কে এখনো সৃষ্টি করা হয়নি কিন্তু ঘোষণা জারি করা হয়েছে যে, আল্লাহ এটা করতে যাচ্ছেন। আর এটা হলো খালিকুন বাশারাম মিন ত্বীন। এরপর আল্লাহ্ বলেন:

Sad 38:72
فَإِذَا سَوَّيْتُهُۥ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِن رُّوحِى...

ফা ইজা ছাওওয়াইতুহু ওয়া নাফাখতু ফিইহি মির রুউহি...
তাঁকে যখন আমি ভারসাম্যপূর্ণ করে তুলবো এবং তার ভিতরে আমার রূহ ফুঁকে দেব..."

▪︎ এখানে فَإِذَا 'ফা ইজা'র দিকে লক্ষ্য করুন। আরবি ব্যাকরণ অনুযায়ী 'ইজা' ব্যবহৃত হয় ভবিষ্যতে ঘটতে যাচ্ছে এমন কিছু বুঝাতে। এগুলোর কোন কিছুই এখনো ঘটেনি কিন্তু সামনে ঘটতে যাচ্ছে। এরপর মহান আল্লাহ্ আরো বললেন-

Sad 38:72
فَقَعُوا۟ لَهُۥ سَٰجِدِينَ

ফাকা'য়ু লাহু ছা-জিদিইন
তখন তোমরা তার প্রতি সিজদাবনত হয়ে যাও"।

▪︎ আল্লাহ বর্ণনা করছেন তিনি আমাদের পিতাকে সৃষ্টি করতে যাচ্ছেন এবং আমাদের সৃষ্টি করার জন্য যে প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে যাচ্ছেন তার বর্ণনাও তিনি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সবার আগে আমি তাঁকে طِينٍ- 'ত্বীন' থেকে সৃষ্টি করবো।
চলুন, এখানে একটু থামি। এই পৃথিবীতে আমরাই একমাত্র সৃষ্টি নই যাদের 'ত্বীন' থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। বস্তুত সকল প্রাণিকুল তথা যত ধরণের প্রজাতি এই পৃথিবীতে বর্তমান আছে তার সবই 'ত্বীন' থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আমাদের এবং এই গ্রহে অবশিষ্ট অন্য সকল জীবের মাঝে এটা একটা কমন উপাদান। সমগ্র প্রাণী জগত, সকল পোঁকা-মাকড় সবাই 'ত্বীন' থেকে এসেছে। আপনি যদি বায়োলজি পড়েন, তাহলে সেখানে দেখবেন সকল সৃষ্টি জীবের মধ্যে একটা কমন উপাদান রয়েছে আর সেটা হলো এই "ত্বীন" তথা মাটি। আচ্ছা, বুঝলাম। কিন্তু আল্লাহ এখন যাঁকে সৃষ্টি করতে যাচ্ছেন তার মাঝে অতিরিক্ত কিছু ব্যাপারও রয়েছে। আমাদের পিতার মাঝে এবং এর সাথে আমাদের মাঝেও। এই সৃষ্টিটি 'ত্বীন' ছাড়াও আরও কিছু। তার মাঝে পাশবিক দিকের অস্তিত্ব ছাড়াও আরও কিছু আছে।

প্রসঙ্গত আমাদের এবং পশুদের মাঝে কমন কিছু ব্যাপার রয়েছে

  • খাদ্য সন্ধান করা;
  • এবং আশ্রয়/বাসস্থান খোঁজা।

অর্থাৎ পশুরা খাদ্য সন্ধান করে এবং আশ্রয় খোঁজে। আবার আমরা মানুষেরাও খাদ্যের সন্ধানে মুদি দোকানে যাই, রেস্টুরেন্টে যাই। আমরা থাকার জন্য আশ্রয়ও খুঁজি। মূলত এ দুইটা প্রধান কারণেই আমরা পড়ালেখা শিখি, চাকরি খুঁজি বা ব্যবসা শুরু করি। দিনশেষে এগুলোর মূল প্রেরণা হলো খাদ্য এবং বাসস্থান। ফ্রিজে খাবার আছে তো? যে বাড়িতে বাস করছেন তা বসবাস করার জায়গা হিসেবে ঠিক আছে তো? বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে পারছি তো? কলে পানি আছে তো?আমি যা বলতে চাচ্ছি- খাদ্য সংগ্রহ এবং বাসস্থান নির্মাণের ক্ষেত্রে আমরা অন্যান্য প্রাণী জগতের চেয়ে অনেক বেশি দক্ষ। কিন্তু দিন শেষে এগুলো একই ধরণের মৌলিক কাজ। পশুরাও জন্ম দান করে। তাদেরও বাচ্চা-কাচ্চা আছে। তাদের প্রজাতিও প্রজন্মান্তরে চলতে থাকে। মানব জাতিও একই কাজ করে। তো এ অর্থে...জীবন চালিয়ে যাওয়ার দৃষ্টিতে আমরা আসলে প্রাণী জগৎ থেকে অতটা আলাদা কিছু নই; এবং অন্য আরও প্রজাতি যা করে। আমরা বাড়ি নির্মাণ করি; পাখি বাসা বানায়। আমরা রিজিকের সন্ধানে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ি; পাখিও তার রিজিকের সন্ধানে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে।

এরপর আল্লাহ আরও যোগ করলেন- কেন কাদা থেকে নির্মিত এই সৃষ্টি পৃথিবীতে বর্তমান থাকা অন্য সকল সৃষ্টি থেকে আলাদা?

فَإِذَا سَوَّيْتُهُۥ

ফা ইজা ছাওওয়াইতুহু
যখন আমি তাকে সুষম করে তৈরি করবো বা ভারসাম্যপূর্ণ করবো।

▪︎ এখানে "تسويات" মানে কোনো কারূশিল্পকে নিখুঁত করা, ভারসাম্যপূর্ণ করা। উদাহরণস্বরূপ- কেউ যদি লোহা বা কোন ধাতু গলিয়ে জোড়া লাগায়, সে তখন নিশ্চিত করতে চায়- যেন উভয় অংশ একেবারে সমানভাবে জোড়া লাগে। তার কাছে জোড়াটাকে নিখুঁতভাবে সমান করার বিভিন্ন যন্ত্র থাকে। একে বলে تسويات। তো, আল্লাহ বলছেন- এক ধরণের ভারসাম্য এবং পারফেকশন এই সৃষ্টির মাঝে যোগ করা হবে যা অন্য সৃষ্টির মাঝে নেই। এক সেন্সে বলতে গেলে- অন্য অনেক সৃষ্টির মাঝে আমাদের চেয়েও বেশি ভারসাম্য রয়েছে। বানর এক হাত ব্যবহার করেই ঝুলে থাকতে পারে। তাদের খুব ভালো ব্যালেন্স রয়েছে। পাখিরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিভিন্ন ভঙ্গিতে উড়তে পারে। তো, এখানে আমাদের দুইপায়ে দাঁড়ানোর সামর্থ্যের চেয়েও বেশি কিছু নিয়ে কথা বলা হচ্ছে।

আল্লাহ এখানে বলছেন মানবজাতির পরস্পর সাংঘর্ষিক বিষয়ের মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করার সামর্থ্য থাকবে। উদাহরণস্বরূপ, ব্যক্তিগত প্রয়োজন এবং পারিবারিক প্রয়োজনের মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করার সামর্থ্য থাকবে তাদের। তারা ব্যক্তিগত দায়-দায়িত্ব এবং সামাজিক দায়-দায়িত্বের মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারবে। তারা তাদের অধিকার এবং দায়িত্বের মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করবে। আমাদের সমগ্র জীবনটাই হবে আসলে ভারসাম্যের সমষ্টি। বর্তমানে মাল্টি মিলিয়ন ডলারের এমন সব প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে ভারসাম্য শিক্ষা দেওয়া হয়। সফল মানুষেরা, সফল ব্যবসায়ীরা, বড় বড় কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা চাকরি জীবনের মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করা শিখতে এসব সেমিনারে যোগ দেয়। তাই না? ব্যাল্যান্স অর্জন করতে।

আর আল্লাহ বলছেন এই মানুষের এমনভাবে জীবন যাপন করার সামর্থ্য থাকবে, যে জীবন হবে সবদিক থেকে সমান, ভারসাম্যপূর্ণ। আল্লাহ বর্ণনা করছেন ভারসাম্য রক্ষা করার এই গুণটি মানুষের অন্যতম একটি মহৎ গুণ হবে যা তাকে বিস্ময়কর করে তুলবে। তাহলে প্রথমত তিনি মানুষকে অন্য সব প্রাণীর মত করে সৃষ্টি করেছেন- ত্বীন থেকে। তারপর এই মানুষের সবকিছুর মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করার চমকপ্রদ এক গুণ থাকবে যেটাকে আরবিতে বলা হয়েছে تسويات। এরপর তিনি বলেন, এ সবকিছুর উপরে,وَ نَفَخۡتُ فِیۡهِ مِنۡ رُّوۡحِیۡ.
প্রসঙ্গত, সামনে আরও এগিয়ে যাওয়ার পূর্বে ভারসাম্য নিয়ে আরেকটি কথা বলতে চাই। ভারসাম্য হলো আমাদের আবেগ-অনুভূতি এবং চিন্তাশক্তির মাঝে। এর মানে কী? চলুন, একটু ব্যাখ্যা করি। ক্ষুধার্ত কুকুর সামনে কোনো খাবার দেখলে এর প্রতি ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং কামড় দিয়ে বসে। সে ফলাফল নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে না। এখানে আছে শুধু অন্তরের ইচ্ছা এবং কর্ম। আর কিছু না।

কিন্তু মানুষ লোভনীয় কিছু একটার দিকে তাকিয়ে বলতে পারে, না, এটা অবৈধ। না, ঐটা হারাম। না, এটা করা যাবে না। তার বিবেক-বুদ্ধি কর্মতৎপর হয়ে উঠে। সে ফলাফলের কথা ভেবে থেমে যেতে পারে। গাড়ি চালিয়ে অফিসে যাচ্ছেন, ইতোমধ্যে দেরি করে ফেলেছেন। এখন আবার রাস্তায় লাল বাতি। এমন সময়েও ভারসাম্য রক্ষা করার সামর্থ্য আপনার আছে। তাড়াতাড়ি অফিসে যাওয়ার আগ্রহ যেমন আছে, ঠিক তেমনি আইন মেনে চলার বুঝও আপনার আছে। আমরা আমাদের চিন্তা এবং আবেগের মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে পারি। অন্য সৃষ্টির মত নয়, যারা কোনো একটা আবেগ জাগ্রত হলেই তা পূর্ণ করার জন্য ঝাঁপিয় পড়ে। তারা প্রতিক্রিয়া দেখায়।

কিন্তু, আমরা ফলাফল নিয়ে ভাবতে পারি, দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করতে পারি। আমরা নিজেদের থামিয়ে দিতে পারি। কুরআনে আমাদের বুদ্ধির নামও ঠিক এভাবে এসেছে। 'আল-হিজর', 'আন-নুহা'। আমাদের বুদ্ধির বর্ণনা দিতে এ শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। 'হিজর' মানে শিলা, পাথর। কারণ, পাথর সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করে। আর 'নুহা' মানে প্রতিনিষেধ। কারণ, আমাদের বুদ্ধি আমাদেরকে বোকার মত কিছু করতে বাধা দান করে। এটি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। আবার কখনো কখনো আমি আপনি অতিরিক্ত আবেগ তাড়িত হয়ে বোকার মত কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি বা আমরা এমন কিছু বলে ফেলি যা আমাদের বলা উচিত ছিল না; অথবা এমন কিছু করে ফেলি যা করা উচিত ছিল না। কারণ সে সময় আমরা সঠিকভাবে চিন্তা করছিলাম না; আমরা আমাদের আবেগকে ভারসাম্যহীন হতে দিয়েছি। তো আল্লাহ তা'আলা এখানে বলছেন, এমনসব মুহূর্তেও ভারসাম্য রক্ষা করার বিস্ময়কর সামর্থ্য মানুষের থাকবে। এরপর তিনি বলেন:

وَ نَفَخۡتُ فِیۡهِ مِنۡ رُّوۡحِی...

ওয়া নাফাখতু ফিইহি মির রুউহি...
অর্থাৎ তাঁর ভিতরে আমার রূহ ফুঁকে দেব...।

▪︎ অর্থাৎ রুহ, যা আল্লাহ বিশেষভাবে ডিজাইন করেছেন এই মানুষের জন্য, বিশেষ আধ্যাত্মিক সম্পর্ক, বিশেষ জিনিস যা মানুষকে অনন্য উপায়ে আল্লাহর সাথে সম্পর্কযুক্ত করবে; অসাধারণ শক্তিশালী উপায়ে। আর এ জিনিসটাই মানুষের ভেতর থাকবে। তো এই রুহ মানুষের ভেতর থাকবে, অন্যান্য প্রজাতি বা প্রাণীদের মত নয়। বিশেষ ধরণের এক আধ্যাত্মিক আলো মানুষের ভেতর থাকবে। সুতরাং, মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে তিনটি জিনিসের সমন্বয়ে।

  1. তাঁকে মাটি থেকে তৈরি করা হয়েছে,
  2. তাঁকে ভারসাম্যসহ তৈরি করা হয়েছে,
  3. এবং তাঁকে রুহ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

এ তিনটি উপাদান আল্লাহ বর্ণনা করেছেন এই আয়াতে। আর তিনি ফেরেশতাদের এগুলো জানিয়ে দিয়েছেন যে, এই তিনটি অংশ মানুষ কে বিস্ময়কর করে তুলবে। যখন এই তিনটি জিনিসের সমন্বয় ঘটবে,

فَقَعُوا۟ لَهُۥ سَٰجِدِينَ

ফাকা'য়ু লাহু ছা-জিদিইন
তখন তোমরা তার প্রতি সিজদাবনত হয়ে যাও"।

▪︎ প্রসঙ্গত যে আল-কুরআনে যদি সিজদার উল্লেখ নিয়ে অধ্যয়ন করেন, তাহলে আপনি একটা বিষয় শিখবেন। সমগ্র কুরআনে যদি অনুসন্ধান চালান যে কোথায় আল্লাহ সিজদা নিয়ে কথা বলেছেন; আল্লাহ সিজদা নিয়ে কথা বলেছেন তখন, যখন বিস্ময়কর কিছু ঘটে। আল্লাহ সিজদা নিয়ে কথা বলেছেন তখন, যখন কোনো মিরাকল ঘটায়।

যখন জাদুকরেরা দেখল যে, মূসা আঃ এর লাঠি সাপে পরিণত হয়ে গেলো এবং খেয়ে ফেললো "মা ইয়া'ফিকুন" তারা যা কিছু বানিয়েছিল তার সবকিছু, তারা নিজেদের আর থামিয়ে রাখতে পারেনি, তারা সিজদায় অবনত হয়ে গেলো।" [1]

যখন খ্রিস্টানরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে সাক্ষাৎ করতে এলো, তারা কুরআনের তিলাওয়াত শুনল,

تَرٰۤی اَعۡیُنَهُمۡ تَفِیۡضُ مِنَ الدَّمۡعِ
তুমি দেখবে তাদের চক্ষু অশ্রুতে ভেসে যাচ্ছে...।" [2]
یَخِرُّوۡنَ لِلۡاَذۡقَانِ سُجَّدًا
তখন তারা সিজদাবনত হয়ে লুটিয়ে পড়ে।” [3]

▪︎ এখন এসব লোকেরা কেন সিজদায় লুটিয়ে পড়েছিল? কারণ তারা কুরআনের অলৌকিকতায় এতটাই অভিভূত হয়ে পড়েছিল।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সিরাতেও একটি ঘটনা আছে, কুফফাররা শুনছিল। তারা কুরআনে বিশ্বাস করে না তবু তারাও শুনছিল।

فَاِنۡ اَعۡرَضُوۡا فَقُلۡ اَنۡذَرۡتُکُمۡ صٰعِقَۃً مِّثۡلَ صٰعِقَۃِ عَادٍ وَّ ثَمُوۡدَ
যখন আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ আমি তোমাদের বজ্রপাতে ধ্বংস হওয়ার সতর্ক করছি, আদ-সামুদ জাতির নিকট আসা বজ্রপাতের ন্যায়।" [4]

▪︎ আর এসব লোকগুলো, তারা সিজদায় পড়ে যায়। তারা নিজেদের থামিয়ে রাখতে পারেনি। তারা সেজদায় লুটিয়ে পড়ে। কুরআন বার বার বর্ণনা করছে- যখন বিহ্বলকারী কিছু ঘটে, যখন অবিশ্বাস্য কিছু ঘটে, যা আল্লাহ ঘটান আর যা কেবল আল্লাহর পক্ষেই ঘটানো সম্ভব- তখন মানুষ আল্লাহর শক্তিমত্তাকে এতটাই উপলব্ধি করে যে, তাদের উভয় হাঁটু ভাঁজ হয়ে যায়, অহংকার ধূলিসাৎ হয়ে যায়, আর এই কপাল যা আমাদের অহমিকা বহন করে, মাটিতে লুটিয়ে পড়ে- যেটাকে কুরআন সিজদা হিসেবে বর্ণনা করেছে।

ঐতিহাসিকভাবে সকল সংস্কৃতিতে এই কপাল হলো দাম্ভিকতার জায়গা। এ জন্য রাজারা কপালে মুকুট পরে, কব্জিতে নয়। এখনকার সময়ে অবশ্য মানুষ উচ্চ স্ট্যাটাসের চিহ্ন হিসেবে হাতে দামী ঘড়ি পরে। কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে সকল সংস্কৃতিতে অহংকার প্রকাশের স্থান কোনটি? কপাল, যা কপালে পরা হয়। পাগড়ী কপালে পরা হয়, মুকুট কপালে পরা হয়। এর মাধ্যমে আপনার পদমর্যাদা প্রকাশ করা হয়। আজকের দুনিয়াতেও এমন কিছু দেশ আছে যেখানে নির্দিষ্ট ধরণের পাগড়ী আছে যা শুধু স্থানীয়দের জন্য নির্ধারিত। আপনি যদি পরেন ঝামেলায় পড়বেন। আপনি অন্য রঙেরটা পরতে পারবেন। কিন্তু তাদের রঙেরটা পরতে পারবেন না। এটা তাদের রং। সমাজের এলিট ক্লাসের জন্যে এটা। এই কপাল আমাদের গৌরব প্রকাশের স্থান। এই কপাল আমাদের সামাজিক পদমর্যাদা প্রদর্শনের স্থান। জানেন? এই সমস্ত কিছু মাটি হয়ে যায় যখন আপনি আল্লাহর ক্ষমতা উপলব্ধি করতে পারেন, যখন তাঁর শক্তিমত্তার কাছে অভিভূত হয়ে পড়েন, তখন সাথে সাথে সিজদায় লুটিয়ে পড়েন। কুরআন এ ব্যাপারটাই বার বার তুলে ধরেছে।

আল্লাহ এখানে সমস্ত ফেরেশতাদের নিকট দাবি জানাচ্ছেন। ফেরেশতাদের একটা ব্যাপার মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। ফেরেশতারা যে শুধু দৃশ্যমান বাস্তবতা দেখতে পায় তাই নয়, তাঁরা তো অদৃশ্য জগতের এক সৃষ্টি। যা আমাদের নিকট অদৃশ্য যেমন আল্লাহর আরশ; আমাদের নিকট যা অদৃশ্য যেমন জ্বীন জাতি; আমাদের নিকট যা অদৃশ্য যেমন মহাবিশ্বের গোপন বিষয়াবলী; এর অনেক কিছুই ফেরেশতারা দেখতে পান। তাঁরা আকাশগুলোর ভেতর দিয়ে ভ্রমণ করেন। তো আমরা হয়তো একটি পর্বত দেখে চমৎকৃত হয়ে যাই বা সমুদ্র দেখে বা ঝর্না দেখে। দৃশ্যমান জগত আমাদের অভিভূত করে ফেলে। কেউ যখন মহাবিশ্ব নিয়ে অধ্যয়ন করে আর ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দেখে, তাঁরা দৃশ্যমান মহাবিশ্বের বিশালতা দেখে হতভম্ব হয়ে যেতে পারে। ভাবতে পারেন? দৃশ্যমান মহাবিশ্বের সাথে সাথে যারা অদৃশ্য জগতও দেখেছেন! আল্লাহ যা করেন তা দেখে কতটা অভিভূত...তাঁরা অর্থাৎ ফেরেশতাগণ। অধিকন্তু তাঁরা আল্লাহর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আল্লাহ সরাসরি ফেরেশতাদের সাথে কথা বলেন। তাঁরা আমাদের মানুষের মত নন; তাঁদের আল্লাহর সাথে উভয় দিক থেকে যোগাযোগ আছে।

আর আল্লাহ তাঁদেরকে বলছেন, এই সৃষ্টিটি এতটাই বিস্ময়কর...যে সুবিশাল মহাবিশ্ব তিনি সৃষ্টি করেছেন, যত কিছু তিনি রেখেছেন এই অত্যাশ্চার্য দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান কাউন-এ (كون), তিনি বলছেন সবকিছুর মাঝে এই একটি সৃষ্টি এতই শক্তিশালী যে, তোমাদের প্রত্যেকেরই বিস্ময়াভিভূত হয়ে যাওয়া উচিত, তিনি যেভাবে আদম আঃ কে সৃষ্টি করেছেন তা দেখে, তোমাদের হতভম্ভ হয়ে যাওয়া উচিত আল্লাহর অত্যাশ্চার্য এই সৃষ্টি দেখে। আর এটা দেখে তাঁরা কি করল? কুরআন এভাবে বলছে এরপর,

Sad 38:73
فَسَجَدَ الۡمَلٰٓئِکَۃُ کُلُّهُمۡ اَجۡمَعُوۡنَ
ফেরেশতারা সবাই মিলে সিজদা করল।

▪︎ ব্যাপারটা হলো- যখন মূসা আঃ এর লাঠি দিয়ে মিরাকল ঘটলো তখন কয়েকজন জাদুকর সিজদায় পড়ে গেল" [5] । যখন কিছু মানুষ কুরআন শুনল, কিছু অবিশ্বাসী সিজদায় পড়ে গেল, বা কিছু খ্রিষ্টান সিজদায় পড়ে গেলো [6]। আপনি কিছু (some but not all) মানুষের সিজদায় পড়ে যাওয়ার উল্লেখ পাবেন। কিন্তু এই ঘটনায় আপনি পাচ্ছেন- আল্লাহ যত ফেরেশতা সৃষ্টি করেছেন সকলকে সিজদায় পড়ে যাওয়ার আদেশ দেওয়া হয়। কি বিশাল এক মিরাকল, কি বিস্ময়কর এক ব্যাপার ছিল আদম আঃ এর সৃষ্টি! কতটাই না শক্তিশালী এই সৃষ্টি!

যদি এ নিয়ে গভীরভাবে ভেবে দেখেন...আবারো বলছি, আদম আঃ কে এখনো সৃষ্টি করা হয়নি। এটা ছিল শুধুমাত্র ঘোষণা যে- তাঁকে আমি (আল্লাহ্) সৃষ্টি করতে যাচ্ছি। কেন তোমরা এই এতটা বিস্ময়াভিভূত হয়ে পড়বে, কোন কারণে এই সিজদা, কোন ব্যাপারটা এই সিজদাকে ন্যায়ানুগ করে? কেন তাঁরা তাঁদের চেহারা নত করে দিবে তখন? ঠিক এই তিনটা জিনিসের কারণে।

  1. ইন্নি খা-লিকুন বাশারাম মিন ত্বীন- إِنِّى خَٰلِقٌۢ بَشَرًا مِّن طِينٍ
  2. ফা ইজা ছাওওয়াইতুহু- فَإِذَا سَوَّيْتُهُۥ
  3. ওয়া নাফাখতু ফিইহি মির রুউহি- وَ نَفَخۡتُ فِیۡهِ مِنۡ رُّوۡحِی

▪︎ এরপর এসেছে 'ফা-فا'। এটি হলো 'ফা সাবাবিইয়া'। অর্থাৎ, সেই জন্য বা সেই অনুসারে সিজদায় পড়ে যাও। 'ফা' এখানে সাবাবিইয়া হতে পারে। 'এমতে' তোমরা তার সামনে সিজদায় পড়ে যাও। এখন এই ঘোষণাটি জারি করা হলো। আমরা জানি, ইবলিশও ঘোষণাটি শুনলো। সে যদি এই ঘোষণা শুনে থাকে তাহলে, সেও জানে আদম আঃ কে সৃষ্টি করা হয়েছে তিনটি জিনিসের সমন্বয়ে। আমি বার বার তিনটি জিনিসের কথা উল্লেখ করছি। কারণ যেন এটা আপনাদের মাথায় একেবারে বদ্ধমূল হয়ে যায়। তিনটা জিনিস। তিনটা জিনিস। তিনটা জিনিস।

আর আমরা জানি, আল্লাহর আদেশে সকল ফেরেশতাগণ একসাথে আদম আঃ কে সিজদা করলেও ইবলিশ তা করেনি। কারণ সে সৃষ্টিগতভাবে জ্বীনদের অন্তর্ভুক্ত ছিল [7] but not angels. কাজেই জ্বীন হিসেবে তার বৈশিষ্ট্য ছিল, সে ইচ্ছে করলেই মহান আল্লাহর আদেশ লঙ্ঘন করতে পারে; অপরদিকে ফেরেশতাদের বৈশিষ্ট্য হলো তাঁরা মহান আল্লাহর আদেশ লঙ্ঘন করতে পারে না। কারণ মানব ও জ্বীন জাতির মত ফেরেশতাদের নিজস্ব স্বাধীন ইচ্ছা নেই যার জন্য তাঁরা আল্লাহর কোন আদেশ স্বেচ্ছায় লঙ্ঘন করবে বরং তাঁরা আল্লাহর প্রতিটি আদেশেই অনুগত এক বান্দা। আমাদের পিতা আদম আঃ এর প্রতি ইবলিশের সিজদার ব্যপারে পবিত্র কুরআনে ঠিক এইভাবে বলা হয়েছে যে, যেখানে মহান আল্লাহ্ বলেছেন:

Sad 38:74
اِلَّاۤ اِبۡلِیۡسَ ؕ اِسۡتَکۡبَرَ وَ کَانَ مِنَ الۡکٰفِرِیۡنَ
ইবলীস ব্যতীত; সে অহংকারী ছিল এবং কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।

Sad 38:75
قَالَ يَٰٓإِبْلِيسُ مَا مَنَعَكَ أَن تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَىَّۖ أَسْتَكْبَرْتَ أَمْ كُنتَ مِنَ ٱلْعَالِينَ
তিনি (আল্লাহ্) বললেনঃ হে ইবলীস! আমি যাঁকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছি তার প্রতি সিজদাহবনত হতে তোকে কিসে বাধা দিল? তুই কি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করলি নাকি তুই উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন?

Sad 38:76
قَالَ اَنَا خَیۡرٌ مِّنۡهُ ؕ خَلَقۡتَنِیۡ مِنۡ نَّارٍ وَّ خَلَقۡتَهٗ مِنۡ طِیۡنٍ
সে বলল, "আমি তাঁর চেয়ে উত্তম। আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন আর তাঁকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।"

▪︎ অর্থাৎ আল্লাহ আমাদের বলেছেন যখন সে সিজদা করতে অস্বীকৃতি জানালো। আর সে আল্লাহর দিকে ফিরে এভাবে বলেনি, "খালাক তানি মিন নারিন, ওয়া খালাক তাহু মিন তিইনিন, ওয়া সাওআইতাহু, ওয়া নাফাখতা ফিইহি মিন রুহিকা।" সে এটা বলেনি। সে শুধু বলেছিল- আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন আর তাঁকে (আদম আঃ) কাদা থেকে সৃষ্টি করেছেন। এটা শুধু তিনটা বিষয়ের একটা মাত্র। তাই না? আরও দুইটা জিনিস তো বাকি আছে। সে বাকি দুইটা সম্পর্কেও জানতো। সে 'তাসবিয়াহ' তথা মানুষের ভারসাম্য সম্পর্কে জানতো। সে মানুষের ভেতর ফুঁকে দেওয়া রুহ সম্পর্কেও জানতো। কিন্তু ইবলিশ আল্লাহর নিকট অভিযোগ করার সময় এমনভাবে অভিযোগ করলো যেন বাকি দুইটা সম্পর্কে সে অজ্ঞ। কিন্তু সে জানে। তার পূর্ণ জ্ঞান ছিল। কিন্তু সে মানুষের এই দুইটি গুণ সম্পর্কে জানা সত্বেও কেন তা অস্বীকার করেছিল? কারণ বাকি দুইটা বিষয় অস্বীকার করার কারণ হলো- সে যদি অবশিষ্ট দুইটি বিষয়ও স্বীকার করে নেয়, তাহলে তাকে স্বীকার করতে হবে মানুষ আসলে আল্লাহর এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। কিন্তু সে যদি শুধু কাদার কথা স্বীকার করে, সে যদি শুধু মাটির কথা স্বীকার করে তাহলে আদম এবং একটি ঘোড়ার মাঝে আর কি পার্থক্য আছে? আদম এবং একটি গরু বা বানরের মাঝে কি আর এমন পার্থক্য আছে? তারা আহার করে, সেও আহার করে। তারা আশ্রয় খোঁজে, সেও আশ্রয় খোঁজে। তাদের বাচ্চাকাচ্চা আছে, তারও বাচ্চাকাচ্চা আছে। সে শুধু একজন আরও উন্নীত এক প্রাণী। এটাই সব। সে দুই পায়ে দাঁড়াতে পারে। তো কি হয়েছে! এটা আর বড় কিছু নয়! সে শুধু আরও বিকশিত এক প্রজাতি। তার মাঝে অতিরিক্ত আর কিছু নেই। তার মাঝে বৃহত্তর কিছুর অস্তিত্ব নেই।

অতএব, ইবলিশ ইচ্ছা করেই আমাদের অস্তিত্বের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানকে অস্বীকার করে। তিনটার মধ্যে...দুইটাকে সে জেনেশুনে অস্বীকার করে। সে যদি এ দুইটা স্বীকার করে নেয় তাহলে আল্লাহর এই বিস্ময়কর সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্ব তাকে স্বীকার করে নিতে হবে। এখন সে মানব জাতিকে ঘৃণা করে। আমাদেরকে এই পদমর্যাদা দেওয়ার কারণে সে আল্লাহকে দোষারোপ করে (নাউযুবিল্লাহ)। সে শপথ করে যে, সে শুধু আদম আঃ কে-ই ব্যর্থ দেখতে চায় না বরং সেই সাথে তাঁর অনাগত সন্তানদের পর্যন্ত সেই ব্যর্থতার ফাঁদে ফেলতে চায়- যা এই সূরায় পরের আয়াতের অংশে বর্ণিত হয়েছে।

তো ইবলিশ এরপর থেকে বিড়াতিত হলো [8] এবং বিচার দিবস পর্যন্ত অভিশপ্ত হয়ে গেল [9]। তাহলে আমরা কী পেলাম? ইবলিশ কিভাবে মহান আল্লাহর আদেশ লঙ্ঘন করেছিল, কিভাবে সে অহঙ্কার প্রদর্শন করেছিল, কিভাবে সে সত্যকে অস্বীকার করেছিল। ইবলিশ কেবলমাত্র অহঙ্কার প্রদর্শনের জন্যেই লাঞ্ছিত, অভিশপ্ত হয়নি। সে বরং বিশ্বজগতের মহান অধিপতি আল্লাহর সামনে, আমাদের আদিপিতা আদম আঃ এর যে শ্রেষ্ঠত্বের সম্মান দেওয়া হয়েছিল তাঁকে অহঙ্কারবশত তুচ্ছ জ্ঞান করেছিল এই বলে যে- সে তো মাটির সৃষ্টি এবং মানব জাতির শ্রেষ্ঠত্বের যেই অবিশ্বাস্য উপাদান বা অস্তিত্ব, তাও অস্বীকার করেছিল সরাসরি। যার ফলশ্রুতিতে সে নিজেই নিজের জন্য অভিশপ্ত হয়েছিল।

উপসংহার: ইবলিশ মহান আল্লাহর সামনে অহঙ্কারবশত নিজের শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করেছিল একদম অযৌক্তিক ভাবেই। কেননা সে ভেবেছিল মাটি অপেক্ষা আগুনের শ্রেষ্ঠত্ব বেশি। অথচ মহান আল্লাহ্ মাটির সৃষ্টি আদম আঃ কে বেশি শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন আর এটাই সে মেনে নেয়নি। সর্বাপেক্ষা আমার কাছে যেটি বড় এবং গুরত্বপূর্ণ সেটি হলো মহান আল্লাহর আদেশ পালন। এতে কোনরুপ অযুহাত দেখানো যাবে না যদিও নিজের কাছে যৌক্তিক মনে হোক অথবা না হোক। এটি আমার আপনার ব্যর্থতা। কিন্তু তাঁর আদেশ পালনে কোনরুপ ত্রুটি করা চলবে না।

কৃতজ্ঞতায়: উস্তাদ নোমান আলী খান
তথ্যসূত্রঃ-
➤[01] পবিত্র কুরআন, সূরা ত্ব-হা ২০:৭০ (সম্মানিত নবী হযরত মুসা আঃ এর সাথে ফেরাউনের ঘটনা বিস্তারিত জানতে চাইলে ২০:৩৬-৯৮ নং আয়াত পর্যন্ত পড়ুন তাফসীর সহকারে)
➤[02] পবিত্র কুরআন, আল-মায়েদা ৫:৮৩
➤[03] পবিত্র কুরআন, সূরা বনি ইস্রাইল ১৭:১০৭-১০৯ নং আয়াত দ্রষ্টব্য
➤[04] পবিত্র কুরআন, সূরা হা-মীম আস সাজদাহ ৪১:১৩
➤[05] পবিত্র কুরআন, সূরা ত্ব-হা ২০:৭০
➤[06] পবিত্র কুরআন, সূরা বনি ইস্রাইল ১৭:১০৭-১০৯
➤[07] পবিত্র কুরআন, সূরা কাহাফ ১৮:৫০ নং আয়াত দ্রষ্টব্য
➤[08] পবিত্র কুরআন, সূরা সোয়াদ ৩৮:৭৭
➤[09] পবিত্র কুরআন, সূরা সোয়াদ ৩৮:৭৮