অজ্ঞতা:
মানুষ শাস্তির ভয়ে এই মহাবিশ্বের স্রষ্টায় বিশ্বাস করে !
জবাব:
প্রথমত, ভাবখানা যেন এমন, “আমরা বেশ সাহসী ! এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার সাথে লড়াই করার মতো আমাদের যথেষ্ট শক্তি-সামর্থ আছে ! ”
দ্বিতীয়ত, এটি অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়া একটি বুলি । একজন মানুষ শাস্তির ভয়ে নাকি অন্য কোনো কারণে স্রষ্টায় বিশ্বাস করে, সেটা একমাত্র তিনিই ভালো বলতে পারবেন ।
তৃতীয়ত, কোনো রকম তর্কে না যেয়ে ধরেই নেওয়া যাক যে, মানুষ সত্যি সত্যি শাস্তির ভয়েই স্রষ্টায় বিশ্বাস করে । কিন্তু তার মানে কি প্রমাণ হলো যে, স্রষ্টা নাই? শাস্তির ভয়ে কোনো কিছুতে বিশ্বাস করলেই তার অস্তিত্ব ‘নাই’ হয়ে যায় নাকি ?! এ আবার কেমন যুক্তি !
অউদাহরণস্বরূপ, শিশু বাচ্চারা বাঘকে না দেখেই বাঘের জন্য ভয় করে বলে কি প্রমাণ হয় যে, বাঘ বলে কিছু নাই? অধিকন্তু, নিছক ভয়ের কারণে মানুষ স্রষ্টায় বিশ্বাস করলে তো তাঁকে ওয়ার্শিপ করার কথা না । বাঘ-সিংহের ভয়ে কি কেউ তাদের সামনে কড়জোর করে প্রার্থনা শুরু করে দেয়, নাকি পালিয়ে যায় ? অতএব, এই ধরণের কু-যুক্তির সামান্যতমও কোনো মূল্য নেই । এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার অনস্তিত্ব প্রমাণের জন্য এটি আসলে কোনো যুক্তিই নয় ।
অজ্ঞতা:
একটা সময় ছিল যখন মানুষ বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রপঞ্চের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জানতো না । যেমন, মেঘ-বৃষ্টির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা না জানার কারণে মেঘ-বৃষ্টির জন্য একজন গড আবিষ্কার করা হয় । ভূমিকম্পের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা না জানার কারণে ভূমিকম্পের জন্য একজন গড আবিষ্কার করা হয় । আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা না জানার কারণে আগ্নেয়গিরির জন্য একজন গড আবিষ্কার করা হয় । ইত্যাদি । এভাবে নিছক অজ্ঞতা থেকেই গডের সৃষ্টি !
জবাব:
প্রথমত, এই অজ্ঞতা বা কু-যুক্তিকে সহজেই খণ্ডন করা সম্ভব । কেননা এই আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগেও অনেকেই উপরোল্লেখিত গডে বিশ্বাস করে । দ্বিতীয়ত, কোরআন ও মুসলিমদের বিশ্বাসের আলোকে এই ধরণের যুক্তির আসলে কোনো মূল্যই নেই । কোরআনের কোথাও বলা হয়নি যে, কোনো কিছুর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা না জানার কারণে গডের সরণাপন্ন হতে হবে/হয়েছে । কোরআনে বরঞ্চ ঠিক তার বিপরীতটাই দেখা যায় । যেমন, কোরআনে কীভাবে মেঘ তৈরী হয়ে বৃষ্টি হয় তার বর্ণনা দেওয়ার পরও সেই প্রপঞ্চকে গডের প্রতি অ্যাট্রিবিউট করা হয়েছে (২৪:৪৩, ৩০:৪৮) ।
অর্থাৎ কোরআন অনুযায়ী সবকিছুর আলটিমেট নিয়ন্ত্রক হচ্ছেন এই মহাবিশ্বের একজন মহান স্রষ্টা। কোরআন থেকে এরকম আরো অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়। তৃতীয়ত, কোনো কিছুর মেকার সত্যি সত্যি থেকে থাকলে সেটির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জানলেও থাকবে আবার না জানলেও থাকবে । কোনো কিছুর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জানার আগ পর্যন্ত তার মেকার থাকে কিন্তু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জেনে গেলে সেই মেকার ‘নাই’ হয়ে যায় নাকি? উদাহরণস্বরূপ, আমাজন জঙ্গলের বাসিন্দারা কম্পুটারের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জানে না বলে তাদের কাছে কম্পুটারের মেকার আছে, আর বিজ্ঞানীরা কম্পুটারের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জানেন বলে তাদের কাছে কম্পুটারের কোনো মেকার নাই ? তাহলে তো মনে হচ্ছে যারা এই ধরণের যুক্তিতে বিশ্বাস করে তারা নিজেরাই আসলে আমাজন জঙ্গলের বাসিন্দা!
অজ্ঞতা:
মানুষের প্রয়োজনেই মানুষ গড ও ধর্ম সৃষ্টি করেছে !
জবাব:
প্রথমত, মানুষের প্রয়োজনেই যদি মানুষ গড ও ধর্ম সৃষ্টি করে থাকে তাহলে কার প্রয়োজনে কে আবার মানুষ সৃষ্টি করেছে? কার প্রয়োজনে কে সূর্য ও চন্দ্র সৃষ্টি করেছে? কার প্রয়োজনে কে ফল-মূল ও খাদ্য-শস্য সৃষ্টি করেছে? কার প্রয়োজনে কে আলো-বাতাস ও পানি সৃষ্টি করেছে? কার প্রয়োজনে কে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছে? জবাব নেই! দ্বিতীয়ত, ‘গড’ ও ‘ধর্ম’ শব্দ দুটি আসলে অনেকের কাছেই বিভ্রান্তিকর। কারণ ‘গড’ বলতে যেমন অনেকের মনে অনেক গড ভেসে ওঠে তেমনি আবার ‘ধর্ম’ বলতেও অনেকের মনে অনেক ধর্ম ভেসে ওঠে। অনেকেই অজ্ঞতাবশত মনে করে এই মহাবিশ্বে অনেকগুলো গড ও ধর্ম আছে! যেমন গুগল সার্চ দিলে অনেক গডের ইমেজ দেখা যায় যারা আমাদেরই মতো মানুষ। এই গডগুলোকে যে মানুষের প্রয়োজনেই মানুষ সৃষ্টি করেছে তাতে কোনোই সন্দেহ নেই। এখন কেউ যদি ‘গড’ বলতে এদেরকেই বুঝে থাকে তাহলে কিছু বলার নাই। অনুরূপভাবে, কিছু কিছু ধর্ম যে শত শত বছর ধরে বিবর্তিত হয়েছে তাতেও কোনো সন্দেহ নেই। যেমন, প্রায় চল্লিশ জন অথার মিলে প্রায় চৌদ্দশ’ বছর ধরে এক বাইবল লিখা হয়েছে, এবং এখনও সংস্কার চলছে। ঋগ্বেদ থেকে শুরু করে আরো তিন খণ্ড বেদ-সহ রামায়ণ, মহাভারত, গীতা, উপনিষদ, মনুসংহিতা, ইত্যাদি ধর্মগ্রন্থগুলোও শত শত বছর ধরে লিখা হয়েছে । দশজন গুরু মিলে দীর্ঘদিন ধরে শিখ ধর্মের ধর্মগ্রন্থ লিখা হয়েছে। অন্যদিকে মুহাম্মদ (সাঃ)-এঁর জীবদ্দশায় মাত্র তেইশ বছরে কোরআন লিখা হয়েছে এবং তারপর থেকে কোনো রকম সংস্কার হয়নি ।
অজ্ঞতা:
পলিথীয়িজম থেকে মনোথীয়িজম বিবর্তিত হয়েছে!
জবাব:
প্রথমত, কোনো রকম প্রমাণ ছাড়াই এটি একটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বুলি। কারণ ইতিহাসে এমন কোনো সময় খুঁজে পাওয়া যায় না যখন একই সাথে পলিথীয়িজম ও মনোথীয়িজমের অনুসারী ছিল না। তার চাক্ষুস প্রমাণ হচ্ছে ভারতীয় উপমহাদেশ যেখানে এই আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগেও একই সাথে পলিথীয়িজম ও মনোথীয়িজমের অনুসারী আছে। দ্বিতীয়ত, বেদ নাকি ধর্মগ্রন্থগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরাতন। অথচ সেই বেদ-সহ আরো কিছু ধর্মগ্রন্থে একক স্রষ্টার কথাই লিখা আছে (ঋগ্বেদ ১:১৬৪:৪৬, ৮:১:১; ছান্দোগায়া উপনিশদ ৬:২:১)। বাইবেলের পুরাতন নিয়মেও অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে একক স্রষ্টার কথা লিখা আছে । তৃতীয়ত, জুদাইজম ও ইসলামের মাঝে খ্রীষ্টানিটি এলেও খ্রীষ্টানিটিকে একটি পলিথীয়িস্টিক ধর্ম বানিয়ে ফেলা হয়েছে ( ট্রিনিটি: ফাদার, সান, ও হলিঘোষ্ট )। ফলে এই ভিত্তিহীন দাবির কিন্তু এখানেই অপমৃত্যু হচ্ছে। অনেকে অজ্ঞতাবশত ‘পলিথীয়িজম’ বলতে সম্ভবত এই মহাবিশ্বের ‘একাধিক স্রষ্টা’ বুঝে থাকেন, যেটি সম্পূর্ণ ভুল। প্রকৃতপক্ষে, কোনো ধর্মগ্রন্থেই একাধিক স্রষ্টার কথা লিখা নাই। এর পরও এমন কিছুতে বিশ্বাস করা মানে বোকার স্বর্গে বাস করা!
অজ্ঞতা:
বনে-জঙ্গলে দেখা যায় বাঘ হরিণকে নির্দয়ভাবে হত্যা করে খায়। এটি কি অমানবিক ও অন্যায় নয়? এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা বলে কিছু থেকে থাকলে বাঘ হরিণকে হত্যা করবে কেন? এরকম আরো অনেক উদাহরণ আমাদের পকেটে আছে, বুঝলেন!
জবাব:
কথায় বলে, “ একজন পাগল সাত সেকেন্ডে যে প্রশ্ন করতে পারে, একজন জ্ঞানীর পক্ষে সাত বছর বা এমনকি সারা জীবনেও সেগুলোর যৌক্তিক উত্তর দেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে । ” কিন্তু তার মানে এই নয় যে, সেই পাগল যা বলেছে তা যৌক্তিক বা সত্য । প্রথমত, তর্কের খাতিরে যদি ধরেই নেওয়া হয় যে, এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা বলে কিছু নাই সেক্ষেত্রে কি আপনাদের কাছে বাঘের হরিণ হত্যা মানবিক ও ন্যায় হয়ে যাবে ? নাকি বাঘের হরিণ হত্যা এমনি এমনি বন্ধ হয়ে যাবে ? দ্বিতীয়ত, বাঘের হরিণ হত্যার সাথে এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার থাকা বা না থাকার সম্পর্কই বা কী ? তৃতীয়ত, বাঘের হরিণ হত্যাকে আপনাদের কাছে যদি সত্যি সত্যি অমানবিক ও অন্যায় মনে হয় সেক্ষেত্রে আপনারা কি কখনো এই অমানবিকতা ও অন্যায়কে প্রতিহত করার চেষ্টা করেছেন? - না তো ! সেভাবে কখনো ভাবিনি তো ! -কিন্তু কেন ? ওয়েল, আমরা এতদিন পর্যন্ত আরজ আলী মাতুব্বরের লেখাকে কোনো রকম সংশয়-সন্দেহ ছাড়াই অন্ধভাবে বিশ্বাস করেছি !
-মাতুব্বর সাব নিজেকে কখনো নবী বা অবতার হিসেবে দাবি না করা সত্ত্বেও তার লেখাকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করেছেন ?
-হুমম ! আমরা সংশয়বাদী ! আমরা প্রশ্ন-সংশয় করাকে খুউব ভালোবাসি! -আপনারা যদি বাঘের হরিণ হত্যার মতো অমানবিকতা ও অন্যায়কে কোনো ভাবে প্রতিহত করার চেষ্টা না করেন সেক্ষেত্রে কি আপনারা জেনে-শুনে অমানবিকতা ও অন্যায়কে প্রশ্রয় দিচ্ছেন না ? আপনারা গাছেরও খাইবেন আবার তলারও কুড়াইবেন – তা তো হবে না !
-হুমম ! আমরা বিজ্ঞানকে খুউব ভালোবাসি !
অজ্ঞতা:
আমাদের জীবনে যেহেতু স্রষ্টার কোনো প্রয়োজন নেই সেহেতু এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা বলেও কিছু থাকতে পারে না!
জবাব:
ওয়েল, অনেকের জীবনে অনেক কিছুই প্রয়োজন হয় না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, সেগুলোর কোনো অস্তিত্ব নাই ! যেমন, ঢাকার বস্তির লোকজনের কাছে স্যাটেলাইট, কম্পুটার, ইন্টারনেট, ফ্রীজার, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওভেন, সেলফোন, ফ্যাক্স, এরোপ্লেন, জঙ্গি বিমান, আমেরিকা, ক্যানাডা, জ্যাপান ইত্যাদির কোনোই প্রয়োজন নেই। কিন্তু তার মানে কি প্রমাণ হলো যে, এগুলোর বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নাই?
অজ্ঞতা:
ধর্মগ্রন্থ ছাড়াই আমরা দিব্বি চলতে পারি। আমাদের জন্য ধর্মগ্রন্থ থেকে নৈতিকতা শেখারও কোনো দরকার নাই, যদিও আমরা নৈতিকতা কোথা থেকে যে শিখি সেটাও জানি না ! কেননা আমরা নিজেরাই একেকজন গড, তবে যে দেশে বাস করি সেই দেশের আইন তথা ধর্মকে অমান্য করলে পুলিশের হাতে লাঠিপেটা খাই কিংবা জেলেও যেতে হয় !
জবাব:
যেমনটি উপরের জবাবে বলা হয়েছে, অনেকেই অনেক কিছু ছাড়াই চলতে পারে। ম্যাকডোনাল্ড, কেএফসি, পাঁচ তারা হোটেল, ব্যাঙ্ক, শপিং মল, কমুনিটি সেন্টার, হলিউড মুভি ইত্যাদি ছাড়াই বস্তির লোকজন দিব্বি চলতে পারে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, এগুলোর কোনো দরকার নেই! বিন লাদেনের কাছে রবীন্দ্র সঙ্গীত ও বীথোভেন মিউজিকের কোনো দরকার আছে বলে মনে হয় না! অতএব, কারো কারো কাছে ধর্মগ্রন্থ দরকার নাই বা ধর্মগ্রন্থ থেকে নৈতিকতা শেখার দরকার নাই মানে এই নয় যে, ধর্মগ্রন্থ এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার বাণী নয় বা অন্য কারো জন্যও তা দরকার নাই।
অজ্ঞতা:
ধর্মগ্রন্থ যে এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার বাণী নয় সেটা বুঝতে হলে নৃবিজ্ঞান পড়তে হবে!
জবাব:
হা-হা-হা! তার মানে “প্রজাতির উৎপত্তি” নামক বইটি যে চার্লস ডারউইনের লিখা নয় সেটা বুঝতে হলে বাংলা সাহিত্য পড়তে হবে (?) ! তা ধর্মগ্রন্থ যে এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার বাণী নয় সেটা কি নৃবিজ্ঞানে প্রমাণ করা হয়েছে? কে, কোথায়, ও কীভাবে প্রমাণ করেছে?
-হুমম ! এবার তো মনে হয় মহা বিপদে ফেলে দিলেন ! এভাবে তো কখনো ভাবিনি !
অজ্ঞতা:
আস্তিকতা ও নাস্তিকতা হচ্ছে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ!
জবাব:
ওয়েল, নাস্তিকতা শুধু যে একটি অযৌক্তিক ও অন্ধ বিশ্বাস তা-ই নয়, সেই সাথে সবচেয়ে অমানবিক ও বিপদ্জনক বিশ্বাস। কারণ নাস্তিকরা হিটলার, পল পট, স্ট্যালিনের মতো গণহত্যাকারী ও তাদের ভিকটিমদের ন্যায়বিচারে বিশ্বাস করে না। তাদের কাছে হিটলার ও মাদার তেরেসার মধ্যে কোনোই পার্থক্য নাই! স্ট্যালিন ও গান্ধির মধ্যে কোনোই পার্থক্য নাই! গৌতম বুদ্ধ ও বিন লাদেনের মধ্যে কোনোই পার্থক্য নাই! টেররিষ্ট ও সেইন্ট এর মধ্যে কোনোই পার্থক্য নাই! তাদের কাছে মৃত্যুর সাথে সাথে সবকিছুর অবসান! এমনকি তারা অতি সামান্য একটি বলপেন-এর মেকারে বিশ্বাস করলেও তারা নিজেরা-সহ এই বিশাল মহাবিশ্বের মেকারে বিশ্বাস করে না! এর পরও যারা আস্তিকতা ও নাস্তিকতাকে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে তারা হয় অজ্ঞ না-হয় প্রতারক।
প্রশ্ন:
কেউ প্রকৃত সংশয়বাদী ও ফ্রী-থিংকার কি-না – সেটা কীভাবে বুঝা যাবে?
জবাব:
প্রথমত, এই পৃথিবীর সকলেই কোনো-না-কোনো ভাবে সংশয়বাদী ও ফ্রী-থিংকার । বাংলাভাইও একজন সংশয়বাদী ও ফ্রী-থিংকার। নরেন্দ্র মোদিও একজন সংশয়বাদী ও ফ্রী-থিংকার। প্যাট রবার্টসনও একজন সংশয়বাদী ও ফ্রী-থিংকার । তবে বাস্তবে অ্যাবসলিউট সংশয়বাদী ও ফ্রী-থিংকার বলে কিছু নাই। প্রত্যেকেই একটি নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে সংশয়বাদী ও ফ্রী-থিংকার – যাকে বলে লিমিটেড সংশয়বাদী ও ফ্রী-থিংকার। কিন্তু লিমিটেড সংশয়বাদী ও ফ্রী-থিংকার বলেও কিছু থাকতে পারে না। কারণ চিন্তা-ভাবনাকে লিমিট করে তো আর ফ্রী-থিংকার হওয়া যায় না ! তাহলে দেখা যাচ্ছে ‘সংশয়বাদী’ ও ‘ফ্রী-থিংকার’ শব্দ দুটি আসলে বিভ্রান্তিকর। সঠিক শব্দ হওয়া উচিত ‘যুক্তিবাদী।’
প্রশ্ন:
চার্লস ডারউইন কি নাস্তিক ছিলেন?
জবাব:
‘নাস্তিকতা’ বলতে যদি এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার অস্তিত্বে অবিশ্বাস বুঝায় সেক্ষেত্রে চার্লস ডারউইন স্বঘোষিত নাস্তিক বা এমনকি স্বঘোষিত ফ্রী-থিংকারও ছিলেন না। তিনি কখনোই বলেননি যে, এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা বলে কিছু নাই কিংবা এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস করি না। এমনকি তিনি ইসলাম বা ইসলামের নবীর কোনো রকম সমালোচনা করেছেন বলেও কোনো প্রমাণ নাই। অথচ তাঁকে এমনভাবে (অপ)ব্যবহার করা হচ্ছে যেন তিনি ইসলাম-বিদ্বেষী নাস্তিক ছিলেন! সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে তিনি নাস্তিকতাকে প্রচার বা প্রমোট করেননি। কারণ নাস্তিকতা আসলে প্রচার বা প্রমোট করার মতো কিছু নয়। যৌক্তিক ও মানবিক বিষয় দুটিকে এক পাশে রেখেও কোনো কিছুকে প্রচার বা প্রমোট করতে হলে তার একটা ভিত্তি বা নিদেনপক্ষে স্বতন্ত্র একটি রেফারেন্স থাকতে হয়, যেটি নাস্তিকতার মধ্যে নেই। যেমন, মুসলিমদের বিশ্বাসের ভিত্তি বা স্বতন্ত্র তিনটি রেফারেন্স হচ্ছে: ১) প্রাকৃতিক মহাবিশ্ব, ২) মহাবিশ্বের স্রষ্টার মেসেঞ্জার তথা নবী-রাসূল দাবিদার অনেক ব্যক্তিত্ব, ও ৩) মেসেঞ্জারের মেসেজ তথা কোরআন। নাস্তিকদের কাছে এরকম স্বতন্ত্র কোনো রেফারেন্স নেই।
প্রশ্ন:
আরজ আলী মাতুব্বর কি নাস্তিক ছিলেন?
জবাব:
আমার জানামতে আরজ আলী মাতুব্বর নিজেকে কখনো নাস্তিক দাবি করেননি – অর্থাৎ তিনি স্বঘোষিত নাস্তিক ছিলেন না। তাকে সংশয়বাদী বলাটাই হয়তো বেশী যৌক্তিক হবে। কাজী নজরুল ইসলামও নিজেকে কখনো নাস্তিক দাবি করেননি, যদিও কে বা কারা তাঁকে নাকি মুরতাদ ফতোয়া দিয়েছিল বলে শোনা যায়। কিন্তু কাউকে মুরতাদ বললেই তো সে মুরতাদ বা নাস্তিক হয়ে যায় না। এরকম ফতোয়া অনেককেই দেওয়া হয়েছে। অনুরূপভাবে, আইনস্টাইনও নিজেকে কখনো নাস্তিক দাবি করেননি – অর্থাৎ তিনিও স্বঘোষিত নাস্তিক ছিলেন না। অথচ তাঁদের সবাইকে 'নাস্তিক' বানিয়ে দেওয়া হয়েছে! ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত আইনস্টাইনের দুটি উক্তি দেখা যেতে পারে, " In view of such harmony in the cosmos which I, with my limited human mind, am able to recognize, there are yet people who say there is no God. But what makes me really angry is that they quote me for support of such views. " [↑]
" I'm not an atheist and I don't think I can call myself a pantheist. We are in the position of a little child entering a huge library filled with books in many languages. The child knows someone must have written those books. It does not know how. It does not understand the languages in which they are written. The child dimly suspects a mysterious order in the arrangements of the books, but doesn't know what it is. That, it seems to me, is the attitude of even the most intelligent human being toward God. " [↑]
অভিযোগ:
মুসলিমরা ইসলাম নিয়ে প্রশ্ন করে না। বিশ্বাস দুর্বল হওয়ার ভয়ে তারা প্রশ্ন করতে ভয় পায়! তারা তাদের ব্রেনও ব্যবহার করে না কিংবা তাদেরকে ব্রেন ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না!
জবাব:
মুসলিমদের মধ্যে যারা ইসলাম নিয়ে প্রশ্ন করে না কিংবা প্রশ্ন করতে ভয় পায় তারা হয় অজ্ঞ অথবা কীভাবে প্রশ্ন করতে হয় সেটাই হয়তো জানে না। তবে ইন্টারনেট ও ইউটিউবে ধর্ম নিয়ে অসংখ্য লেকচার ও ডিবেট আছে। সেখানে প্রায় প্রত্যেকটি লেকচার ও ডিবেট শেষে প্রশ্ন-উত্তর পর্ব রাখা হয়েছে। লক্ষ্য করলে দেখা যায় মুসলিমরাই ইসলাম নিয়ে বিভিন্ন ধরণের প্রশ্ন করছে। এমনকি অমুসলিমরা ইসলাম নিয়ে যে প্রশ্নগুলো করে, সেই প্রশ্নগুলো মুসলিমরাও করছে। সবার সামনে আল্লাহর অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করতেও তারা ভয় করে না। মুসলিম স্কলাররা তাঁদের সাধ্যমতো উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁরা কখনোই বলেন না যে, ইসলাম নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না বা প্রশ্ন করা পাপ। এমন উদ্ভট কিছু তাঁরা বলতেও পারেন না। কারণ কোরআনে যেভাবে প্রশ্ন ও মুক্তচিন্তাকে উৎসাহিত করা হয়েছে, অন্য কোনো ধর্মগ্রন্থে সেরকম কিছু দেখা যায় না। এমনকি কোরআন ও মুহাম্মদ (সাঃ)-এঁর বিরুদ্ধে অসংখ্য প্রশ্ন ও অভিযোগের জবাব কোরআনেই দেওয়া হয়েছে। অতএব, আপনাদের তৈরী করা 'মন কলা' আপনারাই খেয়ে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলতে থাকুন!
অভিযোগ:
এক মুসলিমকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, “বিজ্ঞানের কোনো আবিষ্কার যদি কোরআনের বিরুদ্ধে যায় সেক্ষেত্রে আপনি বিজ্ঞান নাকি কোরআনে বিশ্বাস করবেন?” উনি উত্তরে বলেছিলেন, “কোরআনে!” অতএব, মুসলিমরা মৌলবাদী ও বিজ্ঞান-বিরোধী!
জবাব:
কোন বোকা মুসলিমকে যে এই প্রশ্ন করা হয়েছিল, কে জানে ! কী হইলে কী হইতো – এই ধরণের হাইপোথিটিক্যাল প্রশ্নের কোনো যৌক্তিকতা নেই; বিশেষ করে মুসলিমদের কাছে, যেহেতু তারা কোরআনকে এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার বাণী হিসেবে বিশ্বাস করে । এ পর্যন্ত বিজ্ঞানের কোনো আবিষ্কার কোরআনের বিরুদ্ধে গেছে কি-না সেটাই বড় কথা । এমন কিছু থেকে থাকলে অকাট্য যুক্তি-প্রমাণসহ উপস্থাপন করতে হবে। অন্যথায় মুসলিমদের নামে এভাবে কাহিনী ফেঁদে কোনো লাভ হবে না।
অভিযোগ:
মুসলিমরা তাদের নবী মুহাম্মদের কোনো সমালোচনা করে না – শুধুই গুণ-গান গায় !
জবাব:
প্রথমত, মুহাম্মদ (সাঃ) শুধু মুসলিমদের নবী নন, তিনি সারা বিশ্বের নবী (কোরআন দ্রষ্টব্য)। দ্বিতীয়ত, মুসলিমরা সাধারণত অন্যান্য ধর্মের নবী বা অবতারেরও সমালোচনা করে না। তৃতীয়ত, আপনি যাকে নবী বা অবতার বা হিরো হিসেবে বিশ্বাস করেন তার বিরুদ্ধে যে কোনো সমালোচনা করবেন না, সেটাই তো স্বাভাবিক। চতুর্থত, খ্রীষ্টানরা কখনো যীশুর সমালোচনা করে না, শুধুই গুণ-গান গায়! এমনকি তারা পোপেরও সমালোচনা করে না। ইহুদীরা কখনো তাদের নবী মোজেস এর সমালোচনা করে না, শুধুই গুণ-গান গায়! হিন্দুরা কখনো রাম ও কৃষ্ণের সমালোচনা করে না, শুধুই গুণ-গান গায়! এমনকি তারা মনি-ঋষি বা বড় কোনো পুরোহিতেরও সমালোচনা করে না। বৌদ্ধরা কখনো গৌতম বুদ্ধের সমালোচনা করে না, শুধুই গুণ-গান গায়! এমনকি তারা সম্রাট অশোকারও সমালোচনা করে না, শুধুই গুণ-গান গায় । শিখরা কখনো গুরু নানক বা আরো নয় জন গুরুর সমালোচনা করে না, শুধুই গুণ-গান গায়। মার্ক্সবাদীরা কখনো কার্ল মার্ক্সের সমালোচনা করে না, শুধুই গুণ-গান গায়! বিবর্তনবাদীরা কখনো চার্লস ডারউইন ও রিচার্ড ডকিন্সের সমালোচনা করে না, শুধুই গুণ-গান গায়! ইত্যাদি। ইত্যাদি। অতএব, আপনারা ঠিক কী বলতে চান সেটা পরিষ্কার নয়। আপনাদের মনে হয় অসৎ কোনো উদ্দেশ্য আছে! না! না! না! আমরা হইলাম গিয়া ফ্রী-থিংকার ও বিজ্ঞান-মনষ্ক! আমরা বিজ্ঞানকে খুউব ভালোবাসি! আমরা যে বিজ্ঞানকে সত্যি সত্যি ভালোবাসি তার একটি প্রমাণ হচ্ছে মানুষ এক সময় এই পৃথিবীকে সমতল ও অনড় মনে করতো। কিন্তু আমাদের মতো কিছু ফ্রী-থিংকার ও বিজ্ঞানীরা পূর্বের প্রচলিত বিশ্বাস নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বলেই পৃথিবীর আকার গোলাকার প্রমাণিত হয়েছে এবং সেই সাথে পৃথিবীটা ঘোরাও শুরু করেছে! হুমম! ধান ভানতে শীবের গীত আরকি! তাছাড়া আপনারা হয়তো জানেনই না যে, বড় কোনো বিজ্ঞানী বা দার্শনিক নবী মুহাম্মদের বিরুদ্ধে মিথ্যে অপপ্রচার বা ঘৃণা-বিদ্বেষ তো দূরে থাক এমনকি চোখে লাগার মতো কোনো সমালোচনাও করেননি। রিচার্ড ডকিন্সের মতো কট্টর নাস্তিকও নবী মুহাম্মদের বিরুদ্ধে তেমন কিছু বলেছেন বলে মনে হয় না।
অভিযোগ:
কোরআন-হাদিসে মুহাম্মদের অসংখ্য অমানবিকতার কথা মুসলিমরা কখনোই জনসম্মুখে প্রচার করে না। তারা বানোয়াট কিছু ভালো দিকগুলোই বারংবার প্রচার করে!
জবাব:
প্রথমত, উপরের উত্তর দ্রষ্টব্য । দ্বিতীয়ত, একদম মুহাম্মদ (সাঃ)-এঁর সময় থেকে কোরআন-হাদিসের বাণী সাধারণ মানুষের হৃদয়ে ও মুখে মুখে ছিল এবং এখনও আছে । ইন্টারনেট আসার পর থেকে সারা ইন্টারনেট জুড়ে বিভিন্ন ভাষায় কোরআন-হাদিসের অসংখ্য অনুবাদ ছড়ানো-ছিটানো আছে । সারা পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন লাইব্রেরী ও বুক স্টলে কোরআন-হাদিসের কপি পাওয়া যায়। ফলে যে কেউ ইচ্ছে করলে কোরআন-হাদিস পড়ে নিতে পারেন । বিশ্বসযোগ্য হলে বিশ্বাস করবে, অন্যথায় প্রত্যাখ্যান করবে । অনেকে কিন্তু তা-ই করছেন । অতএব, “মুসলিমরা কোরআন-হাদিসকে সাধারণ জনগণ থেকে লুকিয়ে রেখেছে” – এই ধরণের অভিযোগ ডাহা মিথ্যা ও বিদ্বেষপ্রসুত । অধিকন্তু, মুসলিমরা সব সময় মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সবাইকে কোরআন-হাদিস পড়ার জন্য তাগাদা দিয়ে আসছে। তাদের মনে কোনো রকম দুর্বলতা থাকলে তারা কোরআন-হাদিস পড়ার জন্য মানুষকে উৎসাহিত করত না নিশ্চয় ।
অভিযোগ:
ইসলামের নবী স্রেফ মজা লোটার জন্য বায়ান্ন থেকে তেষট্রি বছর বয়সে একাধিক বিয়ে করেছেন! অতএব, তিনি কোনো ভাবেই প্রকৃত নবী হতে পারেন না এবং সেই সাথে কোরআন অন্তত স্রষ্টার বাণী হতে পারে না!
জবাব:
প্রথমত, এই ধরণের অভিযোগ বা অজ্ঞতা বা বিদ্বেষের আসলে কোনো জবাব হয় না। এটি নতুন কোনো অভিযোগও নয়। দ্বিতীয়ত, মুহাম্মদ (সাঃ)-এঁর একাধিক স্ত্রীর জন্য কেউ রাগে-ক্ষোভে-হিংসায়-ঈর্শায় আত্মাহুতি দিলে করার কিছু নাই! তৃতীয়ত, প্রত্যেকটি দেশেই অনেক এতিম, বিধবা, বা এমনকি কুমারী নারী আছে যারা ঠিকমতো খাদ্য, বস্ত্র, ও বাসস্থান পেলে স্ত্রী হিসেবে কারো সাথে শেয়ার করতে প্রস্তুত। ফলে যারা ইসলামের নবীর একাধিক স্ত্রীর জন্য হিংসায়-ঈর্শায় জিহ্বার লালা ফেলে তারা কি একাধিক বিধবা নারীকে বিয়ে করে খাদ্য, বস্ত্র, ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করে মজা লুটতে রাজি আছে? উত্তর যদি ‘না’ হয় তাহলে তারা ইসলাম-বিদ্বেষী ভণ্ড ও প্রতারক ছাড়া কিছু নয়। স্রেফ মজা লোটার জন্য কেউ চুয়ান্ন থেকে তেষট্রি বছর বয়সে একাধিক বিধবা নারীকে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে রাখে না, মিয়া! চেষ্টা করেই দেখুন না। মজা লোটার জন্য গোপনে একাধিক মিস্ট্রেস রাখা হয় অথবা রাতের অন্ধকারে গণিকালয়ে যাওয়া হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে ইসলামের নবীর একাধিক বিয়ের সাথে তাঁর নবীত্ব ও কোরআন এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার বাণী হওয়া বা না হওয়ার আদৌ কোনো সম্পর্ক আছে কি? একাধিক বিয়ে করলে কেউ নবী হতে পারবে না – কিংবা প্রকৃত নবী কখনো একাধিক বিয়ে করতে পারেন না – এই 'যুক্তি' তারা কোন্ গ্রহ থেকে পেয়েছে?
অজ্ঞতা:
এই আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগেও মুসলিমরা বিজ্ঞান শেখার জন্য কোরআন পড়ে ! তারা কতটা পশ্চাৎগামী, দেখেছেন! লাইব্রেরীতে হাজার হাজার বিজ্ঞানের বই-পুস্তক ছেড়ে সপ্তম শতাব্দীতে লিখা একটি ধর্মগ্রন্থ থেকে বিজ্ঞান শিখতে হবে কেন বাবা! তারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে যে কেন পিছিয়ে আছে সেটা বোঝার জন্য তসলিমা নাসরিন হওয়ার দরকার নাই নিশ্চয় !
জবাব:
এটি আসলে অজ্ঞতা নাকি অন্য কিছু সেটা বুঝা মুশকিল । মুসলিমরা বিজ্ঞান শেখার জন্য কোরআন পড়ে না কিংবা কোরআন থেকে বিজ্ঞান শেখে না । তারা কোরআনকে স্রষ্টার বাণী হিসেবে বিশ্বাস করে। ফলে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সাথে কোরআনকে তারা সমন্বয় করাতেই পারে। তাতে কারো গাত্রদাহ হলে করার কিছু নাই। কোরআনের মধ্যে বৈজ্ঞানিক তথ্য খোঁজা বা না খোঁজার সাথে মুসলিমদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে পিছিয়ে পড়ারও কোনো সম্পর্ক নেই । আর যদি কোনো সম্পর্ক থেকেই থাকে তাহলে কোরআন থেকে অনেকটা দূরে সরে যাওয়ার কারণেই তারা পিছিয়ে পড়েছে । মুসলিম বিশ্বের মধ্যে ইরানিয়ান ও মালয়েশিয়ান'রা তুলনামূলকভাবে বেশী শিক্ষিত ও সচেতন ধার্মিক । তারাই মুসলিম বিশ্বের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এগিয়ে আছে ।
অজ্ঞতা:
কোনো বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার প্রকাশ হওয়ার পর মুসলিমরা তড়িঘড়ি করে কোরআনের আয়াতের সাথে সমন্বয় করানোর চেষ্টা করে কেন ? বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের আগে তারা কিছু বলে না কেন ?
অজ্ঞতার জবাব:
প্রথমত, মুসলিমরা যেহেতু কোরআনকে স্রষ্টার বাণী হিসেবে বিশ্বাস করে সেহেতু তারা কোরআনকে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সাথে সমন্বয় করাতেই পারে। এখানে অসততার কিছু নাই । দ্বিতীয়ত, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের আগে নাকি পরে কোরআনের সাথে সমন্বয় করানো হলো সেটা যেমন কোনো বিবেচ্য বিষয় নয় তেমনি আবার তার জন্য কারো ঈর্ষা বা গাত্রদাহ হলে করার কিছু নাই । তাছাড়া বিজ্ঞান কারো পৈত্রিক সম্পত্তি নয় যে, তার ইচ্ছা-অনিচ্ছা অনুযায়ী মুসলিমরা উঠাবসা করবে । বিজ্ঞানে সবারই কম-বেশী ও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ অবদান আছে। দেখতে হবে যে, দাবিটা যৌক্তিক কি-না। ব্যাস। ইতোমধ্যে কয়েকজন বিজ্ঞানী কোরআনের বেশ কিছু আয়াতকে তথ্যপূর্ণ ও বৈজ্ঞানিক বলে সার্টিফাই করেছেন। তৃতীয়ত, কোরআনকে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সাথে সমন্বয় করানো যদি 'মহা অপরাধ' হয় তাহলে কোথাও কোনো বোমাবাজি বা চোরাগুপ্তা সন্ত্রাসী হামলা হওয়ার সাথে সাথে যারা তড়িঘড়ি করে কোরআনের আয়াতের সাথে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করে তাদের কী হবে? প্রকৃত অসৎ কে বা কারা? যারা কোরআনকে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সাথে সমন্বয় করানোর চেষ্টা করে তারা, নাকি যারা কোরআনে বিশ্বাস না করেও কোরআনকে বোমাবাজি ও চোরাগুপ্তা সন্ত্রাসী হামলার সাথে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করে তারা?
অজ্ঞতা:
নাস্তিকরা যতগুলো গডে অবিশ্বাস করে, মুসলিমরা তার চেয়ে মাত্র একজন কম গডে অবিশ্বাস করে! তাহলে নাস্তিক ও মুসলিমদের মধ্যে পার্থক্য থাকলো কোথায়? আর মাত্র একজন গডকে মন থেকে মুছে দিলেই তো ল্যাটা চুকে যায়!
জবাব:
ঠিকই বলেছেন ! এই দিক দিয়ে নাস্তিক ও মুসলিমদের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। মুসলিমরা যেমন বলে “দেয়ার ইজ নো গড” নাস্তিকরাও তেমনি বলে “দেয়ার ইজ নো গড”! গডে অবিশ্বাসের ক্ষেত্রে নাস্তিকরা একশতে একশ’ পেলে মুসলিমরা পাবে নিরানব্বই! ফলে মুসলিমদের চেয়ে মাত্র এক নাম্বার বেশী নিয়ে নিজেদেরকে নাস্তিক, যুক্তিবাদী, বিজ্ঞানমনষ্ক, ফ্রী-থিংকার, ক্রিটিক্যাল থিংকার ইত্যাদি দাবি করে বুক চাপড়ানোর যৌক্তিক কোনো কারণ থাকতে পারে না। এবার তাহলে বলুন তো, বাংলাভাই এর সাথে নাস্তিকদের আদপেই কোনো পার্থক্য আছে কি-না? প্রফেসর রিচার্ড ডকিন্স একশতে একশ’ পেলে বাংলাভাই পাবে নিরানব্বই! প্রফেসর ডকিন্স A+ গ্রেড পেলে বাংলাভাইও পাবে A+! তবে এখানে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা রয়ে গেছে, ভাই ! যেমন: ১. মুসলিমরা “দেয়ার ইজ নো গড” বলে সেখানেই থেমে থাকে না। অন্যদিকে নাস্তিকরা “দেয়ার ইজ নো গড” বলে একদম ফুলস্টপ দিয়ে সকল প্রকার যুক্তি-তর্ক ও বিজ্ঞানের দরজা বন্ধ করে দেয় । এবার তাহলে বলুন তো মিয়া ভাই, প্রকৃত যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞান-মনস্ক কে বা কারা? ২. গডে বিশ্বাস ‘লাইগ্যা’ যাওয়ার মতো কিছু নয়, ম ভাই! মুসলিমরা যে সকল গডে অবিশ্বাস করে তারা এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা নয় । তারা আসলে মানুষের তৈরী ফেক গড। মুসলিমরা মানুষের তৈরী ফেক গডে অবিশ্বাস করে, আসল গডে নয় । ৩. মুসলিমরা নিজেরা-সহ সকল প্রকার অপরাধী ও তাদের ভিকটিমদের চূড়ান্ত ন্যায়বিচারে বিশ্বাস করে। অন্যদিকে নাস্তিকরা অপরাধী ও তাদের ভিকটিমদের চূড়ান্ত ন্যায়বিচারে বিশ্বাস করে না। তাদের কাছে হিটলার ও গৌতম বুদ্ধের মধ্যে কোনোই পার্থক্য নাই ! গান্ধি ও স্ট্যালিনের মধ্যে কোনোই পার্থক্য নাই ! স্বাভাবিক মৃত্যু ও আত্মঘাতী মৃত্যুর মধ্যে কোনোই পার্থক্য নাই ! সত্য ও মিথ্যার মধ্যে কোনোই পার্থক্য নাই ! ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে কোনোই পার্থক্য নাই ! এবার তাহলে বলুন তো ভাই, প্রকৃত মানবতাবাদী কে বা কারা ? হুমম! আমরা বিবর্তনবাদকে খুউব ভালোবাসি !
অভিযোগ:
মুসলিমদের গড সুনামি ও ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দূর্যোগের হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে পারে না কেন? হিটলারের হাত থেকে ইহুদীদেরকে রক্ষা করতে পারেনি কেন? পাকিদের হাত থেকে বাঙ্গালীদেরকে রক্ষা করতে পারেনি কেন? ইহুদীদের হাত থেকে প্যালেস্টাইনীদেরকে রক্ষা করতে পারছে না কেন? বুশের হাত থেকে ইরাকীদেরকে রক্ষা করতে পারছে না কেন? রোগ-আপদের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করতে পারে না কেন? আমাদের মনই যেখানে মুসলিমদের জন্য দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা কেঁদে বুক ভাসায় সেখানে তাদের গড চুপ-চাপ বসে থেকে তাদের দুঃখ-দুর্দশা দেখে কেন? তার মানে কি প্রমাণ হচ্ছে না যে, মুসলিমদের গড একজন অনিষ্টকারী, প্রতিহিংসাপরায়ণ, নির্দয়, অপারগ, ইত্যাদি?
জবাব:
শুধু মুসলিমদের গড বলে কিছু নাই, মিয়া ভাই! মুসলিমরা যাকে গড হিসেবে বিশ্বাস করে তিনি হচ্ছেন এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা। তর্কের খ্যাতিরে যদি ধরেই নেওয়া হয় যে, মুসলিমদের গড অনিষ্টকারী, প্রতিহিংসাপরায়ণ, নির্দয়, অপারগ ইত্যাদি সেক্ষেত্রে আপনাদের গড তাহলে কী হবে! আপনাদের গড কেন মুসলিমদের গডের মতো একজন অনিষ্টকারী, প্রতিহিংসাপরায়ণ, নির্দয়, অপারগ গডের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করতে পারেনি বা পারছে না? আপনারাই কি তাহলে প্রমাণ করে দিলেন না যে, আপনাদের গড আসলে মিথ্যা গড, যার উপকার বা অপকার কোনোটাই করার ক্ষমতা নাই। পরোক্ষভাবে হলেও সত্যকে স্বীকার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ!
অভিযোগ:
ইসলাম সত্য ধর্ম হলে মুসলিমরা ইসলামের সমালোচনার জন্য এত ভীত-সন্ত্রস্ত কেন! সত্যকে কি ডিফেন্ড করার দরকার আছে?
জবাব:
মুসলিমরা ইসলামের সমালোচনার জন্য মোটেও ভীত-সন্ত্রস্ত নয়। তারাই বরং সমালোচনা ও বিতর্ককে সবচেয়ে বেশী উৎসাহিত করে। একটি প্রমাণ হিসেবে ইউটিউবে বিতর্কমূলক কিছু ভিডিও দেখা যেতে পারে । তবে ইসলামের সমালোচনা বলতে কেউ যদি ইসলামের নবীর মাথায় বোমা পেঁচিয়ে হিটলার, বিন লাদেন, টেররিজম, সুইসাইড বোম্বিং, ইত্যাদির সাথে সম্পৃক্ত করা বুঝায় – তাঁকে নিয়ে ব্যঙ্গ-চিত্র আঁকা বুঝায় – তাঁকে নিকৃষ্ট ভাষায় গালিগালাজ বুঝায় – দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা তাঁর বেডরুমে উঁকি-ঝুঁকি বুঝায় – একটি অভিযোগের বারংবার জবাব দেওয়া সত্ত্বেও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে নামে-বেনামে একই মদ বারংবার গেলানো বুঝায় — সেক্ষেত্রে দু’খান কথা আছে, মিয়া ভাই । যুক্তি ও বুদ্ধিমত্তা লোপ পেলেই কেবল ব্যঙ্গাত্মক ও জংলী ভাষার আশ্রয় নিতে হয় । আর হ্যাঁ, সত্য ও সুন্দরকেই মানুষ ডিফেন্ড করে, মিথ্যা বা কুৎসিতকে নয় । যে বাড়িতে যত বেশী সম্পদ থাকে সেই বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থাও তত বেশী উন্নত ও জোরালো হয়। সম্পদ না থাকলে রক্ষণাবেক্ষণের প্রশ্নই ওঠে না ! প্রাসাদকেই রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়, বস্তিকে নয় ! একটি দেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান মন্ত্রীকেই রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়, বস্তির টোকাইকে নয়! ফল-মূল ও ফুলের বাগানকেই রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়, আগাছাকে নয় ! কুকুর-শূয়রেরা হীরা-মনি-মুক্তাকে রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন মনে করে না বলে মানুষও সেগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন মনে করবে না – এ তো নিছক অজ্ঞতা, মিয়া ভাই !
অভিযোগ:
মুসলিম স্কলার’রা কোরআনের প্রচলিত অনুবাদের কিছু কিছু শব্দকে নতুন করে অনুবাদ ও ব্যাখ্যা করা শুরু করেছেন কেন? তারা কি কোরআনের জন্য লজ্জিত !
জবাব:
মুসলিমরা কোরআনকে যেহেতু স্রষ্টার বাণী হিসেবে বিশ্বাস করে সেহেতু মুসলিম স্কলারদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো কোরআনের আক্ষরিক অনুবাদ করার চেষ্টা করেছেন। মুসলিমরা তার জন্য মোটেও লজ্জিত নয়। কার জন্য লজ্জিত হতে হবে, মিয়া ভাই! কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে কিছু আস্তিক-নাস্তিক পাদ্রী-পুরোহিতদের নিয়ে। তারা কোরআনের পুরাতন অনুবাদ থেকে কিছু ‘শব্দ’ বেছে নিয়ে তার সাথে মুসলিম পরিবারে সংঘটিত বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনাকে যোগ করে তিলকে তাল বানিয়ে ইসলামকে অমানবিক ও নারী-বিদ্বেষী বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। কোরআন সম্পর্কে যাদের সার্বিক জ্ঞান নেই তারা এই ধরণের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হতেই পারে। এই ধরণের অপপ্রচারের জবাব হিসেবে মুসলিম স্কলারদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো কিছু কিছু আয়াতের পুনর্ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছেন, এবং সেটি করা হচ্ছে কোরআনের আলোকেই।
অজ্ঞতা:
আমরা সেক্যুলার নাস্তিক, যেহেতু আমরা গড ও ধর্মে বিশ্বাস করি না । অতএব, আমাদের কাছে সবই সমান !
জবাব:
নিজেকে ‘সেক্যুলার নাস্তিক’ ঘোষণা দিলেই সব কিছু সমান হয়ে যায় নাকি! সাত খুন মাফ হয়ে যায় নাকি! ধরা যাক, বাংলাভাই সাহিত্যে বিশ্বাস করে না কিংবা সাহিত্যকে অপছন্দ করে। এবার বাংলাভাই সাহিত্যের ক্ষেত্রে নিজেকে ‘সেক্যুলার নাস্তিক’ ঘোষণা দিলেই কি রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ও তসলিমার সাহিত্য এক হয়ে যাবে! সেই সাথে বাংলাভাই মাসুম প্রমাণিত হবে! প্যাট রবার্টসনের মতো কেউ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নিজেকে ‘সেক্যুলার নাস্তিক’ ঘোষণা দিলেই কি বিজ্ঞান ও অপবিজ্ঞান এক হয়ে যাবে! একজন খুনি-ধর্ষক বিচারকের সামনে দাঁড়িয়ে "ইয়োর অনার, আমি কিন্তু সেক্যুলার নাস্তিক" বললেই কি তাকে বেকসুর খালাস দেওয়া হবে?
অভিযোগ:
পুরুষ রচিত কোরআনে নারীরা বিকলাঙ্গ কেন?
জবাব:
প্রথমত, কোরআন পুরুষ দ্বারা লিখিত হতে পারে তবে পুরুষ দ্বারা রচিত নয়। বিগত চৌদ্দশ’ বছরে মুসলিমরা কখনোই বিশ্বাস করেনি যে, কোরআন পুরুষ দ্বারা রচিত একটি ধর্মগ্রন্থ। বর্তমানেও দেড় বিলিয়নেরও বেশী মানুষের বিশ্বাস অনুযায়ী কোরআন হচ্ছে এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার বাণী। অতএব, আপনাদের অন্ধ বিশ্বাসকে আপডেট করতে হবে, মিয়া ভাই! দ্বিতীয়ত, “কোরআনে নারীরা বিকলাঙ্গ” বলতে আসলে কী বুঝানো হয়? কোরআনে পুরুষরাও তো বিকলাঙ্গ হতে পারে। তাছাড়া কাউকে ‘বিকলাঙ্গ’ করা মানে তার হাত-পা ভেঙ্গে দিয়ে সারা জীবন ধরে শাস্তি দেওয়া কিংবা ব্রেনকে নষ্ট করে উন্মাদ বানিয়ে রেখে মানসিকভাবে কষ্ট দেওয়া বুঝায়। কোরআনে এরকম কিছু আছে কি? ওয়েল, আপনারা কি জানেন না যে, কোরআনে নারীকে পুরুষের অর্ধেক সম্পত্তি দেওয়া হয়েছে? আমরা যে জানি না সেটা আপনাদেরকে কে বলেছে? কিন্তু তার মানে কি প্রমাণ হলো যে, নারীরা বিকলাঙ্গ? বাংলাদেশে অনেক নারীরা ইচ্ছাকৃতভাবেই তাদের পিতার পরিবার থেকে কোনো সম্পত্তি নেয় না। অন্যান্য দেশেও হয়তো একই অবস্থা। কেননা নারীরা বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি যেয়ে সেখানেই স্থায়ী হয়ে যায়। স্বামীর অর্থনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ না হলে তারা সাধারণত তাদের পিতার পরিবার থেকে কোনো সম্পত্তি নেয় না। কোরআনে নারীকে কিছুটা কম সম্পত্তি দেওয়ার পেছনে যথেষ্ট যুক্তি আছে। হুমম! তাহলে লোকজন যে কইতাছে। ওয়েল, লোকজন তো অনেক কিছুই কইবে। কিন্তু সবার কথায় কান দিতে গেলে অচিরেই বধির হইতে হইবে! চিলের পেছনে না দৌড়াইয়া কোরআন নিয়ে অধ্যয়ন করা এবং সেই সাথে পশ্চিমা বিশ্বের হাজার হাজার নারী-পুরুষ ইসলাম গ্রহণ করে কোরআন সম্পর্কে কী বলেন তা মনোযোগ দিয়ে শোনাটাই মনে হয় বুদ্ধিমানের কাজ হইবে। পশ্চিমা বিশ্বের হাজার হাজার নারী পুরুষদেরই যদি কোরআন নিয়ে কোনো সমস্যা না থাকে সেক্ষেত্রে কিছু বাংলা নাস্তিক কোরআনের বিরুদ্ধে কী বললো আর না বললো তাতে কি আদৌ কিছু আসে যায়!
অভিযোগ:
কোরআনে নারীদেরকে যদি যথাযথ মর্যাদা ও অধিকার দেওয়া হয়ে থাকে তাহলে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে নারী জাতির বেহাল দশা কেন?
জবাব:
প্রথমত, কোরআনে নারীদেরকে যে যথাযথ মর্যাদা ও অধিকার দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে কি আপনাদের মনে কোনো রকম সংশয়-সন্দেহ আছে? সংশয়-সন্দেহ থেকে থাকলে প্রশ্নটা বোকার মতো হয়ে গেল কি-না! আর সংশয়-সন্দেহ যদি না থাকে তাহলে মুসলিম বিশ্বে নারী জাতির বেহাল দশার জন্য কে বা কারা দায়ী সেটা খুঁজে বের করে তার সমাধান করাটাই কি বুদ্ধিমানের কাজ নয়? দ্বিতীয়ত, “মুসলিম বিশ্বে নারী জাতির বেহাল দশা” বলতে ঠিক কী বুঝানো হয়? মুসলিম বিশ্বে পুরুষ জাতির দশা কি খুবই ভালো ? তৃতীয়ত, মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সবাই একবাক্যে স্বীকার করবেন যে, মুসলিম বিশ্বে আফগান নারীদের দশা সবচেয়ে বেহাল। এর পরও আপনারা কি কখনো শুনেছেন যে, আফগান পুরুষরা মিলিয়ন মিলিয়ন তো দূরে থাক এমনকি দু-চার জন নারীকে ‘ডাইনী’ আখ্যা দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে ? হাজার হাজার তো দূরে থাক এমনকি দু-চার জন বিধবা নারীকে ‘সতী’ আখ্যা দিয়ে তাদের মৃত স্বামীর সাথে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে ? প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ তো দূরে থাক এমনকি হাজার হাজার বা শত শত কন্যা শিশুকে হত্যা করছে ? যৌতুকের কারণে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ নারীকে অত্যাচার-নির্যাতন থেকে শুরু করে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করছে ? নারীদেরকে উলঙ্গ বা অর্ধ-উলঙ্গ করে পর্ণগ্র্যাফিক বস্তু বানিয়ে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যবসা করছে ? এমনকি ব্যভিচারের অপরাধে প্রতি বছর হাজার হাজার বা শত শত নারীকে পাথর মেরে হত্যা করছে ?
-না তো! এমন কিছু শোনা যায় না তো। কিন্তু কিছু মিডিয়াতে যে—এ!
-ওয়েল, কথায় বলে না, চোরের মায়ের বড় গলা! মুসলিম বিশ্বে আফগানিস্তানের অবস্থাই যদি এই হয় তাহলে অন্যান্য দেশ বিশেষ করে মালয়েশিয়ান নারীদের অবস্থা যে কেমন হবে সেটা কিন্তু সহজেই অনুমেয়। মালয়েশিয়ার অনেক ইউনিভার্সিটিতে পুরুষের চেয়ে নারীদের সংখ্যা বেশী, যেটা আমেরিকাতেও হয়তো বিরল। তাছাড়াও অফিস-আদালত থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ, দোকান-পাট, হোটেল-রেস্তোরা, রাস্তা-ঘাট, ও মসজিদে নারীদের আধিক্য চোখে পড়ার মতো। ইরানের কিছু কিছু ইউনিভার্সিটিতেও মালয়েশিয়ার মতোই অবস্থা ।
কিন্তু সৌদি আরবে নাকি নারীদেরকে গাড়ি চালাতে দেওয়া হয় না ? ওয়েল, সৌদি আরবে নারীদেরকে কেন গাড়ি চালাতে দেওয়া হয় না তার কারণ আমার জানা নেই। কিন্তু তার মানে কি প্রমাণ হলো যে, “কোরআনে নারীরা বিকলাঙ্গ” কিংবা “সমগ্র মুসলিম বিশ্বে নারী জাতির বেহাল দশা”? এ আবার কেমন গাঞ্জাখুরি যুক্তি, মিঞা ভাই!
অভিযোগ:
ইসলামের নবী মুহাম্মদ বানু কুরাইজা নামক এক ইহুদী উপজাতির ৬০০-৯০০ জন নিরপরাধী ইহুদীকে হত্যা করেছিলেন কেন? তাঁর এই নিষ্ঠুরতার জন্য মুসলিমদের কি লজ্জিত হওয়া উচিত নয়?
জবাব:
প্রথমত, এমন কিছু কোরআনে লিখা নেই। এমনকি হাদিসেও নেই। ইবনে ইসহাকের লিখা বায়োগ্র্যাফিতে এরকম একটি ঘটনার কথা উল্লেখ আছে। দ্বিতীয়ত, ইহুদীরা নিজেরাই যেখানে বিষয়টি নিয়ে কান্নাকাটি করে না, কান্নাকাটি না করার পেছনে কারণও আছে, সেখানে আপনাদের এত মায়াকান্না কেন মিঞা ভাই ? আপনারা কি ইহুদীদের সেবা দাস ? তৃতীয়ত, ইহুদীরা যে কেমন ‘নিরপরাধী’ তার চাক্ষুস প্রমাণ তো চৌদ্দশ’ বছর পরও দেখা যাচ্ছে। আপনারা কি বোবা-কালা-অন্ধ ? জায়নবাদীদের এর নাম শুনেছেন? তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ? চতুর্থত, যে উৎস থেকে এই অভিযোগ উত্থাপন করা হয় সেই উৎস অনুযায়ীই যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে তারা আসলে যুদ্ধাপরাধী রাজাকার ছিল, নিরপরাধী তো নয় বটেই । ইহুদিরাই কুরআন ও ইসলামের নবীর পরিবর্তে তাদের ধর্মীয় আইনে তাদের পছন্দের ব্যাক্তির আওতায় বিচার চেয়েছিলো আর ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদেরকে হত্যা করা হতো বলে তাদের পছন্দের ব্যাক্তিই এই রায় দিয়েছে ফলে এই ঘটনা যদি সত্যও হয় সেক্ষেত্রে বাইবেলের নিয়ম অনুযায়ীই তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। দেখুন: When thou comest nigh unto a city to fight against it, then proclaim peace unto it. And it shall be, if it make thee answer of peace, and open unto thee, then it shall be, that all the people that is found therein shall be tributaries unto thee, and they shall serve thee. And if it will make no peace with thee, but will make war against thee, then thou shalt besiege it: And when the LORD thy God hath delivered it into thine hands, thou shalt smite every male thereof with the edge of the sword: But the women, and the little ones, and the cattle, and all that is in the city, even all the spoil thereof, shalt thou take unto thyself; and thou shalt eat the spoil of thine enemies, which the LORD thy God hath given thee. ( Deuteronomy 20:10-14 ) পঞ্চমত, কিছু মুসলিম স্কলার জোরালো কিছু যুক্তি-প্রমাণের সাহায্যে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, এরকম একটি ঘটনা মুহাম্মদ (সাঃ)-এঁর জন্মের আগে বা সমসাময়িক সময়ে অন্য কোথাও ঘটে থাকতে পারে। ইবনে ইসহাক হয়তো ভুলক্রমে মুহাম্মদ (সাঃ)-কে সেই ঘটনার সাথে জড়িয়েছেন। কেননা এরকম একটি ঘটনা কোরআন অথবা নিদেনপক্ষে সহী হাদিসে না থাকাটা অস্বাভাবিক। ষষ্ঠত, মুহাম্মদ (সাঃ)-এঁর দীর্ঘ তেইশ বছরে সবগুলো যুদ্ধে উভয় পক্ষে হতাহতের সংখ্যা মাত্র এক হাজারের কিছু উপরে। অন্যদিকে বাইবেলের এক যুদ্ধেই হতাহতের সংখ্যা বারো হাজার (জশুয়া ৮:২৫)। সম্পূর্ণ বাইবেলে হতাহতের সংখ্যা যে কত, তার কোনো হিসাব নাই। অন্যদিকে কৃষ্ণ পরিচালিত এক কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধেই হতাহতের সংখ্যা প্রায় ৯৪ কোটি (সূত্র)। গীতাতেও তার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত আছে (গীতা ১১:৩২-৩৪)। এরকম আরো অসংখ্য প্রমাণ দেওয়া সম্ভব। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা মিলিয়ন মিলিয়ন। এক হিটলারই নাকি ছয় মিলিয়ন নিরপরাধী ইহুদীকে হত্যা করেছে। তাদের জন্য আপনাদের মন কাঁদে না কেন, মিয়া ভাই ! এক স্ট্যালিন মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ হত্যা করেছে। এছাড়াও সম্রাট অশোক, মাও, পল পট, চেঙ্গিস খাঁ, হালাকু খাঁ, মুসলিনি, বুশ, এলকে আধভানী, নরেন্দ্র মোদি, ও তাদের মতো কয়েকজন মিলে নিরপরাধ নারী-শিশুসহ মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ হত্যা করেছে। কিন্তু ফলাফল শূন্য! ফলে যারা তিন নম্বরী উৎস থেকে চৌদ্দশ’ বছর আগের ৬০০-৯০০ জন যুদ্ধাপরাধী ইহুদীর জন্য মায়াকান্না করে চোখের জলে বুক ভাসায় তাদের জন্য লজ্জিত হওয়ার কিছু নাই।
অজ্ঞতা:
মুসলিম স্কলাররা তাদের গডের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে না পেরে “ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন”-এর মধ্যে মাথা গোঁজা শুরু করেছেন, যে আইডি-কে আমেরিকার কোনো এক প্রদেশের কোর্টে বিজ্ঞানের সিলেবাস থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে!
জবাব:
প্রথমত, মুসলিম স্কলাররা বৈজ্ঞানিকভাবে গডের অস্তিত্ব প্রমাণ করার চেষ্টা করেন না। যারা স্বচক্ষে দেখেই তবে গডে বিশ্বাস করতে চায় তাদের জন্য তো ইসলাম নয়। পিরিয়ড। যেসকল ধর্মাবলম্বীরা স্বচক্ষে দেখে গডে বিশ্বাস করে তাদের ধর্মে বিশ্বাস করলেই তো ল্যাটা চুকে যায়। কিন্তু তা না করে মুসলিমদের কাছে গডের অস্তিত্বের স্বপক্ষে প্রমাণ চাইলে মানুষ কিন্তু ভণ্ড ভাববে। দ্বিতীয়ত, মুসলিমদের কাছে ‘আইডি’ নতুন কোনো ধর্ম বা মোটেও তেমন কিছু নয়। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী একজন মহান স্রষ্টা এই মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করেছেন। অন্যদিকে আইডি’র প্রবক্তাদের যুক্তি অনুযায়ীও এই মহাবিশ্বের একজন ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনার আছে। মুসলিমদের বিশ্বাসের সাথে যেহেতু তাদের বিশ্বাসের মিল আছে সেহেতু মুসলিমদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো আইডি’র প্রবক্তাদের লেখা ও যুক্তিকে ব্যবহার করতে পারেন। তাতে তো কারো গাত্রদাহ হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আইডি’র প্রবক্তারা কোনো কারণে পিছুটান দিলে মুসলিমরাও তাদের অবস্থান থেকে পিছুটান দেবে। কারণ মুসলিমদের বিশ্বাসের ভিত্তি হচ্ছে কোরআন। তারা যা কিছু বলে তা কোরআনের উপর ভিত্তি করেই বলে। অন্যদিকে আইডি’র প্রবক্তারা তাদের ধর্ম থেকে বের হয়ে যেয়ে নতুন নতুন তত্ত্ব প্রস্তাব করার চেষ্টা করছেন, যদিও কারো কারো মতে আইডি-ওয়ালারা আসলে বিশেষ একটি ধর্মে বিশ্বাসী। কিন্তু মুসলিম স্কলাররা এই ধরণের লুকোচুরি খেলেন না। তৃতীয়ত, আমেরিকার কোন্ প্রদেশের কোর্টে কী করা হলো আর কোথায় কোন্ নাস্তিক বিজ্ঞানী কী বললেন, তার উপর মুসলিমদের বিশ্বাস বা অবিশ্বাস নির্ভর করে না। আপনারা যেকোনো গার্বেজকে ‘ইসলামের বিরুদ্ধে’ মনে করে তড়িঘড়ি করে বিজ্ঞানের নামে অন্ধভাবে বিশ্বাস করতে পারেন কিন্তু মুসলিমরা ধীরে-সুস্থে ও চিন্তা-ভাবনা করে এগোবে । তাদের কোনো তাড়াহুড়া নেই ।
প্রশ্ন:
ক্রিয়েশানিস্ট কারা। ক্রিয়েশন স্টোরিই বা কী?
জবাব:
যারা বাইবেল পড়েছেন তারা হয়তো জানেন যে, বাইবেল অনেকটাই স্টোরি বুক এর মতো। সেখানে প্রায় প্রত্যেকটি ঘটনার খুঁটি-নাটি বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। বাইবেলের সৃষ্টিতত্ত্বগুলোকেও যেহেতু স্টোরি আকারে বর্ণনা করা হয়েছে সেহেতু ‘ক্রিয়েশন স্টোরি’ বলতে মূলত বাইবেলের ক্রিয়েশন স্টোরিকেই বুঝানো হয়। কিন্তু অনেকেই অজ্ঞতাবশত কোরআনের ক্ষেত্রেও একই বুলি আউড়ায়। কিছু গণ্ডমূর্খ বিবর্তনবাদী নাস্তিক খ্রীষ্টান ক্রিয়েশানিস্টদের বিশ্বাসকে কৌশলে মুসলিমদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। ক্রিয়েশানিস্ট তাদেরকেই বলা হয় যারা একজন বুদ্ধিমান ও সুপ্রিম ক্রিয়েটরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে, যিনি এই মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করেছেন। অন্যথায় বিশ্বাস করতে হবে যে, আকস্মিক ও দৈব ঘটনার মাধ্যমে এমনি এমনি এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে! তবে মুসলিমরা তাদের গায়ে নতুন কোনো তকমা লাগানোর প্রয়োজন মনে করে না, যেহেতু "মুসলিম" বলতে বাই-ডিফল্ট ক্রিয়েশানিস্ট-ও বুঝায়।
অভিযোগ:
শিক্ষিত মুসলিমরা দেখা যাচ্ছে হাদিস নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা শুরু করেছেন। কিছু কিছু হাদিসকে প্রত্যাখ্যানও করা হচ্ছে। তারা কি হাদিসের জন্য লজ্জিত!
জবাব:
প্রথমত, হাদিসের জন্য লজ্জিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। মুসলিমরা আসলে কী বুঝাতে চায় সেটা না বুঝে ইউরেকা ইউরেকা করলেই তো আর হবে না। দ্বিতীয়ত, ইসলামে যেমন এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার বাণী (আল-কোরআন), নবীর বাণী (হাদিস), ও স্কলারদের বাণী সুস্পষ্টভাবে আলাদা করা আছে, অন্য কোনো ধর্মে সেভাবে আলাদা করা নেই। ইসলামের অসংখ্য মির্যাকলের মধ্যে এটিও একটি লিভিং মির্যাকল। ইসলামের ভিত্তি হচ্ছে কোরআন। শতভাগ মুসলিম কোরআনকে কাভার-টু-কাভার স্রষ্টার বাণী হিসেবে বিশ্বাস করে। ‘স্রষ্টার বাণী’ বলতে তারা কোরআন ছাড়া অন্য কিছুকে বোঝে না। ‘নবীর বাণী’ বলতে তারা হাদিস ছাড়া অন্য কিছুকে বোঝে না। ‘স্কলারদের বাণী’ বলতে কোরআন ও হাদিসের বাইরে যা কিছু আছে সেগুলোকে বুঝানো হয়। তৃতীয়ত, কোরআনকে যেহেতু স্রষ্টার বাণী হিসেবে বিশ্বাস করা হয় সেহেতু ইসলামকে ভুল প্রমাণ করতে হলে কোরআনকে ভুল প্রমাণ করতে হবে। ইসলামের সমালোচনা করতে হলে কোরআনের সমালোচনা করতে হবে। হাদিস বা অন্য কিছু দিয়ে ইসলাম বা কোরআনকে ভুল প্রমাণ করা যাবে না। হাদিস বা অন্য কিছু দিয়ে মুহাম্মদের নবীত্বকেও ভুল প্রমাণ করা যাবে না, যেহেতু তিনি একমাত্র কোরআন ছাড়া অন্য কোনো প্রমাণ রেখে যাননি। এমনকি হাদিস বা অন্য কিছু দিয়ে ইসলামের সমালোচনা করাও অযৌক্তিক। তার মানে কি মুসলিমরা হাদিসের জন্য লজ্জিত ? না! না! উত্তেজিত হবেন না! ইতোমধ্যে তার যৌক্তিক ব্যাখ্যা তো দেওয়া হলো। হাজার-হাজার হাদিসের মধ্যে থেকে কেউ যদি অকাট্য যুক্তি-প্রমাণের সাহায্যে কিছু হাদিসকে ভুল বা অবৈজ্ঞানিক প্রমাণ করতে পারে সেক্ষেত্রে মুসলিমরা সেই হাদিসগুলোকে জোর করে ডিফেন্ড করতে যাবে না। কারণ তাতে ইসলামের কিছুই যায় আসে না। তার মানে কি সেই হাদিসগুলোকে মুছে ফেলা হবে? না! না! সেটা করা সম্ভব নয় এবং তার দরকারও নেই। এ বিষয়ে সবাইকে শিক্ষিত ও সচেতন হলেই হবে। বাইবেল-বেদে বিশ্বাসীরা যদি বাইবেল-বেদ'র ক্ষেত্রেই ‘পিক অ্যান্ড চুজ’ পন্থা অনুসরণ করতে পারে তাহলে কোরআনে বিশ্বাসীরা হাদিসের ক্ষেত্রে একই পন্থা অনুসরণ করতে পারবে না কেন?
অজ্ঞতা:
বিবর্তনে বাইবেল সংশোধিত হয়ে কোরআন রচিত হয়েছে, যাকে মুসলিমরা আল্লাহর বাণী হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। তারা কতবড় বোকা!
জবাব:
প্রথমত, কিছু কিছু নাস্তিক্য আইডিওলজিতে বিশ্বাস করতে হলে গড ও ধর্ম সম্পর্কে তোতা পাখির মতো ঢালাওভাবে কিছু বুলি মুখস্ত করতে হয়। আর একবার কাউকে কোনো বুলি শেখানো হলে সারাক্ষণ ধরে একই বুলি আউড়াতে থাকে! দ্বিতীয়ত, সঙ্গত কারণে ইহুদীরা নিজেরাই বাইবেলে বিশ্বাস করে না বললেই চলে। হাতে গোনা কিছু ইহুদী রাবাই হয়তো বাইবেলের বড় একটি অংশে বিশ্বাস করে। এমনকি খুব কম সংখ্যক মিশনারি ছাড়া খ্রীষ্টানরাও বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টকে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদেরও একই অবস্থা। অন্যদিকে বিলিয়নেরও বেশী মুসলিম কোরআনকে স্রষ্টার বাণী হিসেবে যেমন বিশ্বাস করে তেমনি আবার কাভার-টু-কাভার ডিফেন্ডও করে। প্রতি বছর হাজার হাজার ইহুদী-খ্রীষ্টান-নাস্তিক ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েও কোরআনকে ডিফেন্ড করছেন। এই যখন বাস্তবতা তখন বছরের পর বছর ধরে একই বুলি আউড়ানো হচ্ছে এই বলে যে, বাইবেলের জেনেসিস থেকে কপি করে কোরআন লিখা হয়েছে যাকে মুসলিমরা স্রষ্টার বাণী হিসেবে বিবেচনা করে থাকে! কিন্তু মুহাম্মদ (সাঃ) কবে, কোথায়, ও কীভাবে বাইবেলের জেনেসিস থেকে কপি করেছেন তার কোনো প্রমাণ দেওয়া হয় না। তাদের হাবভাব দেখলে মনে হবে যেন তারা সেই সময় উপস্থিত ছিল! এই ধরণের অন্তঃসারশূন্য বুলিকে বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী মহলে উপস্থাপন করা হলে হেসেই উড়িয়ে দেওয়া হবে। জন্মসূত্রে মুসলিমরা তো বটেই এমনকি ডঃ গ্যারি মিলার, ইউসুফ এস্টেস, ও আব্দুর রহিম গ্রীন এর মতো ইহুদী-খ্রীষ্টান পরিবার থেকে হাজার হাজার ধর্মান্তরিত মুসলিমরাও এই ধরণের বুলি শুনলে হেসেই উড়িয়ে দেবেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে যারা এই ধরণের বুলি আউড়ায় তারা কিন্তু কোরআন বা বাইবেল কোনোটাই নিয়ে অধ্যয়ন করেনি। তারা কোরআন ও বাইবেলের মধ্যে পার্থক্যই জানে না। এগুলো সবই শেখানো বুলি।
অজ্ঞতা:
ধর্মগ্রন্থগুলোকে যারা আল্লাহর বাণী হিসেবে বিচ্ছিন্নভাবে দেখেন, তারা বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞানকে অস্বীকার করেন। কারণ বিশ্বব্রহ্মান্ডের কোনো কিছুই বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। সব কিছুই পরস্পর সম্পর্কযুক্ত ও নির্ভরশীল যাকে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ বলা হয়।
জবাব:
ঠিক কথা! যারা নৃবিজ্ঞান ও দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের ফাঁদে পড়ে সবকিছুকে অবিচ্ছিন্নভাবে দেখতে যেয়ে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যের সাথে তসলিমার সাহিত্যকে গুলিয়ে ফেলে উভয়কেই চটি-সাহিত্য মনে করেন – আইনস্টাইনের বিজ্ঞানের সাথে বাংলাভাইয়ের বিজ্ঞানকে গুলিয়ে ফেলে উভয়কেই অপবিজ্ঞান মনে করেন – সিডনি শহরের সাথে ঢাকা শহরকে গুলিয়ে ফেলে উভয়কেই বস্তির শহর মনে করেন – চিনির সাথে বালিকে গুলিয়ে ফেলে উভয়কেই ধুলা-বালি মনে করেন – জেনেসিসের কাহিনীকে কোরআনের সাথে গুলিয়ে ফেলে আল্লাহর বাণী বলে চালিয়ে দিয়ে উভয়কেই পৌরাণিক কাহিনী মনে করেন – তারা যে বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞানকে অস্বীকার করেন তাতে কোনোই সংশয়-সন্দেহ নেই! তবে কোরআনকে যে আল্লাহর বাণী হিসেবে বিচ্ছিন্নভাবে দেখা হয়নি সেটা মনে হয় তারা জানেন না। প্রমাণ দেখুন: "And who believe in that which is revealed unto thee (Muhammad) and that which was revealed before thee, and are certain of the Hereafter." (Al-Qur'an 2:4)
"To thee We sent the Scripture in truth, confirming the scripture that came before it, and guarding it in safety." (Al-Qur'an 5:48)
অজ্ঞতা-অভিযোগ:
আপনি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন বলে আল্লাহকে স্রষ্টা হিসেবে ওয়ার্শিপ করছেন। কিন্তু এই আপনিই যদি খ্রীষ্টান পরিবারে জন্মগ্রহণ করতেন তাহলে যীশুকে স্রষ্টা হিসেবে ওয়ার্শিপ করতেন! হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করলে মা কালিকে স্রষ্টা হিসেবে ওয়ার্শিপ করতেন! ইত্যাদি! ইত্যাদি! তাহলে আপনার দোষ বা ক্রেডিট কোথায়!
জবাব:
প্রথমত, একটা সময় আমার মনেও এই ধরণের অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খেত। কিন্তু কোরআন ও অন্যান্য ধর্ম নিয়ে অধ্যয়ন করার পর সেই প্রশ্নগুলো ধীরে ধীরে বিদায় নিয়েছে। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ এক ধর্ম থেকে অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত হচ্ছে বা নাস্তিক হয়ে যাচ্ছে। কাজেই একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেই যে সেই পরিবারের বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরে থাকতে হবে – এই অভিযোগের যৌক্তিক কোনো ভিত্তি নেই। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই ধরণের অভিযোগ মূলত নাস্তিকদের পক্ষ থেকে আসে। কিন্তু নিজ পরিবারের বিশ্বাসকে প্রত্যাখ্যান করা যদি অসম্ভবই হবে তাহলে তারা আবার নাস্তিক হয় কী করে! তাছাড়া তারা কি বিজ্ঞানের আলোকে তাদের বিশ্বাসকে নিয়মিত আপডেট করছে না! দ্বিতীয়ত, খ্রীষ্টান পরিবারে জন্মগ্রহণ করলে স্বাভাবিকভাবেই বাইবেলে বিশ্বাস করতে হতো। কিন্তু বাইবেলের কোথাও যীশু নিজেকে এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা বা স্রষ্টার পুত্র বলে দাবি করেননি বা তাঁকে ওয়ার্শিপের কথাও বলেননি। বরঞ্চ বাইবেল অনুযায়ী যীশু নিজেই তাঁর স্রষ্টাকে ওয়ার্শিপ করতেন। এর পরও যীশুকে স্রষ্টা বা স্রষ্টার পুত্র হিসেবে বিশ্বাস করা এবং সেই সাথে তাঁকে ওয়ার্শিপ করার মধ্যে তো কোনো যৌক্তিকতা নেই। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, খ্রীষ্টান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও কিন্তু বাইবেল অনুসরণ না করে অন্য কিছুকে অনুসরণ করা হচ্ছে! অনুরূপভাবে, হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করলে স্বাভাবিকভাবেই বেদ-গীতাতে বিশ্বাস করতে হতো। কিন্তু বেদ-গীতা ও আরো কিছু ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী গডের কোনো আকার-আকৃতি নেই – অর্থাৎ নিরাকার বা অদৃশ্য। অন্যদিকে আবার রাম ও কৃষ্ণকে মানুষ আকৃতির গড হিসেবে ওয়ার্শিপ করা হয়। অধিকন্তু, গীতা অনুযায়ী কৃষ্ণকে ওয়ার্শিপ না করলে কোনো সালভেশন নেই (গীতা ৯:২৫, ১৬:১৯-২০)। ফলে পুরো ব্যাপারটাই যেখানে সাংঘর্ষিক সেখানে আবার মা কালি বা অন্য কাউকে ওয়ার্শিপের কথা আসবে কেন, সেটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। তবে কেউ না বুঝলে সেটা আলাদা (Ignorance is bliss!) কিন্তু সুস্পষ্টভাবে বুঝে যাওয়ার পরও কেউ যদি সেই বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরে থাকতে চায় তাহলে তো নিজের সাথেই প্রতারণা করা হলো। আর নিজের সাথে প্রতারণা হচ্ছে এক ধরণের অপরাধ। যারা দিনের-পর-দিন ধরে এই ধরণের প্রশ্ন করে তারা সবকিছু জেনে-শুনেই করে। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে আমজনতাকে বিভ্রান্ত করা। উদাহরণস্বরূপ, প্রফেসর রিচার্ড ডকিন্সের মতো যেকারো নিশ্চিতভাবেই জানা উচিত যে, যীশু অন্তত এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা হতে পারেন না। এমনকি বাস্তবে ট্রিনিটি-র মতো কোনো কিছুর অস্তিত্বও থাকতে পারে না। এর পরও প্রফেসর ডকিন্সের মতো কেউ এই ধরণের ছেলেমি-মার্কা প্রশ্ন করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করলে সেটা হবে অপরাধ। তৃতীয়ত, ইসলামে প্রফেসর ডকিন্স ও ঢাকার রাস্তার টোকাইকে এক পাল্লায় বিচার করা হবে না। প্রত্যেক মানুষকে নিজ-নিজ বিশ্বাস ও কর্ম অনুযায়ী বিচার করা হবে (২:৬২, ৫:৬৯, ২২:১৭, ২:১১১-১১২, ২২:৬৭, ইত্যাদি)। কেউ মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও জাহান্নামে যেতে পারে। এমনকি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করে কেউ কেউ দেখা যাচ্ছে নিজেদেরকে ‘নাস্তিক’ ঘোষণা দিয়ে স্ব-ইচ্ছায় জাহান্নামকে বেছে নিয়েছে। অতএব, এই ধরণের প্রশ্ন করে নিজেকে বোকা না বানিয়ে নিজের চরকায় তেল দেওয়াই মনে হয় বুদ্ধিমানের কাজ হবে!
যারা সমতল ও অনড় পৃথিবীর তত্ত্বে বিশ্বাস করে তাদের সামনে যতই যুক্তি-প্রমাণ হাজির করা হোক না কেন, তাদের কাছে পৃথিবীকে সমতল ও অনড়ই মনে হয়! কারণ সেটিই তাদের অবস্থান। অনুরূপভাবে, যারা একদম প্রথম থেকে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে অপপ্রচার শুরু করেছে তাদের সামনে যতই যুক্তি-প্রমাণ হাজির করা হোক না কেন, তারা তাদের প্রাথমিক অবস্থান থেকে এক চুল পরিমাণও সামনে-পেছনে-ডানে-বামে নড়বে না। কেননা তাদের উদ্দেশ্যই হচ্ছে সাদাকে কালো বানানো। একজন মানুষ পঁচিশ বছর বয়স পর্যন্ত আইডিয়াল লাইফ লিড করে, প্রায় পঞ্চাশ বছর বয়স পর্যন্ত পনের বছর বেশী বয়সের এক বিধবার সাথে আইডিয়াল মনোগ্যামাস লাইফ লিড করে, বায়ান্ন বছর বয়স থেকে একাধিক বিয়ে করা শুরু করলেন কেন – এ নিয়ে তারা কোনো প্রশ্ন বা সংশয় করে না। অথচ তারাই আবার নিজেদেরকে 'যুক্তিবাদী', 'সংশয়বাদী' দাবি করে বুক চাপড়ায়।
এস এম রায়হান, সদালাপ ব্লগ, ২০০৯