সূচনা:
বানু কুরাইযা গোত্রের ইতিহাস ইদানিং বাংলা ব্লগ-জগতে জনপ্রিয়তা পাওয়া শুরু করেছে; কয়েক বছর আগেও ব্লগে কিংবা মিডিয়াগুলোতে এর প্রতি উৎসাহ ছিল না বললেই চলে। প্রায় সব লেখা কিংবা মন্তব্যগুলোর ধরণ একই রকমের। তাদের অভিযোগ,
“নিরপরাধ বানু কুরাইযা ইহুদী গোত্রের সব পুরুষদের বিনা কারণে কেবল ইহুদী-বিদ্বেষীতার কারণে মুহাম্মাদ (সাঃ) হত্যা করেন।”
তাদের উত্থাপিত এই অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখার জন্যে এ লেখার প্রয়াস। তবে শুরু করার আগে অভিযোগকারীদের কিছু প্রাক অসামঞ্জস্যতা যা চোখে পড়েছে তা নিয়ে দু-কথা বলে নিই।
বানু কুরাইযা গোত্রের হত্যার ব্যথায় ব্যথাতুর বাংলার এই প্রতিবাদী, বিবেকবান লেখকদের লেখাতে সত্যি সত্যিই অগ্নি-স্ফুলিঙ্গ দেখা যায়। এমনিতে বাংলাদেশের সীমানাতে যাদের বসবাস তাদের সাথে ইহুদীদের ব্যক্তিগত পরিচিতি থাকার সম্ভবনা নেই বললেই চলে। তবে ব্লগের বিবেক বলে পরিচয় দেয়া কতিপয় মহান লেখকদের কলমের ডগা ফেটে বের হওয়া প্রতিবাদী শোণিত ধারায় লেখা ইহুদীদের বিরুদ্ধে ঘটা বানু কুরাইযা’র হত্যাকাণ্ডের পৌনঃপুনিক উল্লেখ অনেকেরই মাথাকে হয়ত এমনভাবেই ধোলাই করতে সক্ষম হয়েছে যে যেকোনো বিবেকবান লোকেরই মনে হতে পারে,
“নিশ্চয়ই বানু কুরাইযার ইতিহাস ইহুদী জাতির বিরূদ্ধে ঘটে যাওয়া অন্যতম বৃহৎ হত্যাকাণ্ডই হবে।”
মানবতাবাদী ও অন্যায়ের সোচ্চার প্রতিবাদী এহেন বাংলা লেখকদের লেখা পড়ে মোহাবিষ্ট আমারও ধারণা ছিল, ইহুদী জাতির বিরুদ্ধে ঘটা ইতিহাসের সকল অন্যায়ের তালিকা যদি পাওয়া যায় তাতে তো অবশ্যই বানু কুরাইযা থাকবে – এর পরে না হয় দেখা যাবে অন্যান্য ইহুদী-বিদ্বেষী অন্যায়ের সাপেক্ষে বানু কুরাইযার তুলনামূলক অবস্থানটা কোথায়! সামান্য গবেষণাতেই দেখা যায়, ইহুদী জাতির ওপর ঘটে যাওয়া প্রায় সকল অন্যায় গণহত্যা ও ধ্বংসের যেসব সুত্র পাওয়া যায় সেখানে বানু কুরাইযার ঘটনার অনুপস্থিতি (সূত্র: ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬)।
অবশ্য রবার্ট স্পেন্সর, ফ্রাঙ্ক গ্যাফনি কিংবা ড্যানিয়েল পাইপস এর মতো পেশাজীবি ইসলাম বিদ্বেষী ও তাদের চ্যালা চামুণ্ডাদের সুবাদে কিছু জায়গাতে হয়ত বানু কুরাইযা’র ঘটনাকে ইহুদী বিদ্বেষ হিসেবে পাওয়া যেতে পারে – তবে নিরপেক্ষ বিশ্লেষণে ঐসব তালিকা বাদ পড়বে সবার আগে। মোটামুটিভাবে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ আন্তর্জালিক সূত্র, যেমন উইকি’র যেমন উইকি’র Timeline of anti-Semitism বা মিউজিয়াম এর রিপোর্ট অথবা কিংবা ADL (Anti Defamation League) এর An Abridged History of Anti-Semitism এর তালিকাতে ইহুদীদের বিরূদ্ধে ঘটে যাওয়া হাজার বছরের ইতিহাসে’র নথিতেও নেই বানু কুরাইযা’র ঘটনা। এই তালিকাগুলোতে বানু কুরাইযার ঘটনা কেন নেই, তার কারণ অনুমান করতে তেমন আয়াস পেতে হয়না। কারণটা এই যে, বানু কুরাইযার ঘটনা নির্বিচার গণহত্যা নয়, বরং যুদ্ধ-প্রাক্কালে ঘটা বিশ্বাসঘাতকতার স্বাভাবিক পরিণতি। অথচ ব্লগের বিবেকবান, প্রতিবাদী ও অহর্নিশ নিজেদের পক্ষপাতহীন, আপোষহীণ, মানবতার অগ্রদল বলে জানান দিয়ে যাওয়া এই সুশীল-গোষ্ঠীকে কোনোদিনও দেখিনি ষাট লক্ষাধিক নিরীহ ইহুদী নিধনের নৃশংসতার বিরূদ্ধে ২-লাইনের লেখাও লিখতে। দেখিনি টাইটাসের জেরুসালেম আক্রমণে অকারণে এগারো লক্ষ ইহুদী কিংবা ক্রুসেডে মুসলিমদের পাশাপাশি লক্ষ-লক্ষ ইহুদী নিধনের জন্যে দু’কলম স্মারক। ‘মানবতাই ধর্ম’ বুলি আওড়ানো এসব ব্লগ-বুদ্ধিজীবীদের মানবতা কোনো কারণে আঁটকে থাকে কেবল বানু কুরাইযাতে কয়েক’শ ইহুদীর প্রাণদণ্ড দেয়ার তথাকথিত নৃশংসতায়।
অথচ তার চাইতে হাজার-লক্ষ গুণ বড় ও আসল গণহত্যার কথা তাদের মানবতার এন্টেনাতে কখনো ধরা পড়েনা।
ইহুদী গণহত্যার অসংখ্য উদাহরণ থাকা সত্ত্বেও দেয়া সূত্রগুলোতে না থাকা বানু কুরাইযার ঘটনাকে লাইম লাইটে নিয়ে আসা এহেন কপট প্রতিবাদী, মানবতাবাদীদের মায়াকান্নাকে তাই কংস মামার কুম্ভিরাশ্রু বিসর্জননের বেশী কিছু বলতে পারছি না বলে দুঃখিত। তথাকথিত এই সুশীল গোষ্ঠীর কাছে মুসলিমরা চক্ষুশূল হলেও, তাদের অন্তর্জ্বালার মূল কারণ রাসুল (ﷺ)। তারা চলনে-বলনে, শ্বাসে-প্রশ্বাসে, অহর্নিশ একনিষ্ঠ ও একাগ্র চিত্তে নিয়োজিত আছেন ইসলাম ও বিশেষত এর নবীকে (ﷺ) হেয় প্রতিপন্ন করার অভিপ্রায়ে। আর মানবতার লেবাসে মোড়ানো এসব সুশীলরা নিরপেক্ষতার লেন্সে কখনো ঘটনার বিশ্লেষণে প্রত্যয়ী হননা, বরং উনারা ধ্যান ও জ্ঞান অর্জন করে থাকেন উইকি ইসলাম, ইসলাম ওয়াচ জাতীয় মার্কামারা ইসলাম বিদ্বেষী ওয়েবসাইট থেকে।
এরই ফলস্বরূপ ইসলামের নবীর বিরুদ্ধে এরা অ্যান্টি-সেমিটিজমের অভিযোগ আনেন, অথচ অ্যান্টি-সেমিটিজমের ঘটনাগুলোর বিশদ তালিকার মধ্যেই বানু কুরাইযা দেখা যায়না।
অ্যান্টি-সেমিটিজমের অভিযোগের বাইরেও বাংলা ব্লগের এই স্বঘোষিত, স্বনির্বাচিত নব্য ইসলাম বিশেষজ্ঞদের বানু কুরাইযা সম্পর্কে যে কয়টা অভিযোগ দেখা যায় তা হলো,
১. বানু কুরাইযা গোত্র নিরপরাধ।
২. বানু কুরাইযার সকল পুরুষদের হত্যা করা হয়।
৩. কুরাইযা গোত্রের প্রায় ৭০০ থেকে ৯০০ পুরুষকে হত্যা করা হয়।
এই লেখাতে মূলত এই ৩টি সহ আরো কিছু আনুষঙ্গিক দিকে আলোকপাত করার ইচ্ছে আছে।
সূত্র ও নিয়মানুগ অন্যান্য ব্লগ:
বুদ্ধিজীবীদের মতো নির্মোহ ঘটনার বিশ্লেষণ আমি করবোনা, তা আগেই বলে রাখি। আমি মুসলিম; আর তাই পূর্বসূরী ইসলামী বিশেষজ্ঞের দেখানো পথেই আমি আমার বিশ্লেষণ নিয়ে এগিয়ে যাবো। আর সে সূত্র হচ্ছে কোরান ও সহীহ হাদীস। বোখারী ও মুসলিমের মতো অধিকতর বিশ্বাসযোগ্য হাদীস বইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য হাদীস গ্রন্থ থেকেও সংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলো আসবে। আর কোরান-হাদীসের পাশাপাশি সীরাতের বইগুলোও আলোচনায় থাকবে, তবে কোরান-হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক কোনো ঘটনা সীরাতে থাকলে আমরা তা সত্যি বলে গ্রহণ করবোনা। কোরান, হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক না হলে সীরাতের বর্ননা গ্রহণ করা যেতে পারে, তবে অবশ্যই সেক্ষেত্রে বর্ণিত ঘটনাটি যৌক্তিক বিশ্লেষণের আওতায় আসবে; আরো আসবে সে সম্পর্কে আসা পূর্বসূরীদের মতামতও। ৩. সীরাত থেকে বানু কুরাইযার সংক্ষিপ্ত ঘটনা রাসুল (ﷺ) মদিনাতে আসার পরে মুসলিম, ইহুদী ও পৌত্তলিকদের নিয়ে এক অভিনব সাধারণতন্ত্র গড়ে তোলেন। বিপরীত চিন্তা, রুচি ও ধর্মাভাব সম্পন্ন মুসলিম, ইহুদী ও পৌত্তলিকদের দেশের সাধারণ স্বার্থরক্ষা ও মঙ্গলের জন্যে একটি রাজনৈতিক জাতিতে পরিণত করার জন্যে তিনি একটি সনদ তৈরী করেন। সনদে তিন পক্ষই স্বাক্ষর করেন। এই অভিনব ও অশ্রুতপূর্ব চুক্তি বা সনদের কিছু ধারা নীচে দেয়া হলো-
১। ইহুদী ও মুসলিমরা এক জাতি (রাষ্ট্রীক কাঠামোর মধ্যে বসবাসকারী ‘জাতি’)।
২। এই সনদের অন্তর্ভূক্ত কোন গোত্র শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলে সবার সমবেত শক্তি নিয়ে তা প্রতিহত করতে হবে।
৩। কেউ কোরাইশদের সাথে কোনো রকমের গুপ্ত সন্ধিসূত্রে আবদ্ধ হবে না ও তাদের সঙ্কল্পকে সাহায্য করবে না।
৪। মদিনা আক্রান্ত হলে দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্যে সবাই মিলে যুদ্ধ করবে এবং সম্প্রদায়গুলো নিজেদের যুদ্ধব্যয় নিজেরা বহন করবে।
৫। ইহুদী-মুসলিম সহ চুক্তিবদ্ধ সকল সম্প্রদায় স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্মকর্ম পালন করবে, কেউ কারুর ধর্ম-স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে না। … ইত্যাদি।
মদিনার সাধারণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলে চুক্তি/সন্ধি অনুসারে কুরাইযা সহ সব ইহুদী গোত্র প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল যে তারা মুসলিমদের কোন শত্রুকে কোনরকম সাহায্য করবেনা। কোন বহিঃশত্রু মদিনা আক্রমণ করলে তারাও মুসলিমদের মতো স্বদেশ রক্ষার্থে নিজেদের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করবে। কিন্তু সন্ধির শর্ত ও স্বদেশের স্বাধীনতা ও সম্মানকে উপেক্ষা করে কুরাইযা সহ বাকী ইহুদী গোত্র একাধিকবার শত্রুপক্ষের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। বানু কুরাইজার ইহুদীদের এই অপরাধ আগে অন্তত একবার ক্ষমা করে দেয়া হয়। ভেঙ্গে ফেলা প্রতিজ্ঞাপত্র উহুদ যুদ্ধের পরে কুরাইযা গোত্র পুনর্বহাল করে এই শর্তে যে, এরপরে আর কখনোই তারা মুসলিমদের শত্রুদের সাথে কোন রকম যোগাযোগ ও সাহায্য করবেনা। ফলে তখন তাদের বিনাদণ্ডে ও বিনা ক্ষতিপূরণে মাফ করে দেয়া হয়। কিন্তু খন্দকের যুদ্ধের প্রাক্কালে প্রথম সুযোগ পাওয়া মাত্রই তারা এই সন্ধিপত্র ছিঁড়ে ফেলে শত্রুদলে যোগদান করে।
কুরাইযা গোত্রের এই বিদ্রোহের খবর পাওয়া মাত্র আওস ও খাযরায গোত্রের প্রধান সাদ বিন উবাদা (রাঃ) ও সাদ বিন মুয়াদ (রাঃ) সহ আর কিছু সাহাবীকে মুহাম্মাদ (ﷺ) খন্দকের প্রান্ত থেকে কুরাইযা পল্লীতে পাঠান। তাঁরা কুরাইযা পল্লীতে উপস্থিত হয়ে আগের পৌণঃপুনিক চুক্তি ভাঙ্গার কথা তুলে ধরেন ও তাদেরকে এই বিশ্বাসঘাতকতার পরিণাম ভালোভাবে বুঝিয়ে দেন। কিন্তু আহযাবে মুসলিমদের পরাজয় সুনিশ্চিত ও খায়বার থেকেও ইহুদী দল মদিনা আক্রমণে আসছে – এই দুই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে তারা উল্টা মুসলিমদের গালাগালি করা শুরু করে দেয়। তাদের দলপতি কাব বিন আসাদ বলে ওঠে, “মোহাম্মদ কে? আমরা তাকে চিনি না। আমরা কোনো সন্ধিপত্রের ধার ধারি না। তোমরা চলে যাও।” এরপরে তারা খন্দকের যুদ্ধে যোগদান করে। আর কুরাইযা বাহিনীর হাত থেকে মদিনার নারী ও শিশুদের রক্ষা করার জন্যে একদল মুসলিমকে মদিনার দক্ষিণ দিকে নিয়োজিত করা হয়েছিল।
বানু নাদির গোত্রের হোয়াই-বিন-আখতাব মদিনা থেকে বিতাড়িত হবার পরে খাইবারে আসন গেড়ে বসে। সে কুরাইযা গোত্র প্রধান কাব-বিন-আসাদকে বোঝাতে সক্ষম হয় যে আরবের সকল পৌত্তলিক এখন একত্রিত। গাতাফান আর নজদের পৌত্তলিকরাও সাথে যোগ দিয়েছে। আর ঐদিকে খাইবার থেকে ইহুদীদের কয়েক হাজার সদস্যের বাহিনী খুব তাড়াতাড়ি এসে যোগ দিতে যাচ্ছে আহযাবে। সুতরাং এটাই মুসলিমদের সমূলে উৎপাটন করার সুবর্ণ সুযোগ। কাব প্রথমে নিমরাজী থাকলেও শেষে খন্দকে আহযাব পক্ষে যোগ দিতে রাজী হয়। খন্দক থেকে ফিরে এসে রাসুল (ﷺ) মদিনায় ফিরে যখন গোসল সারলেন তখন জীব্রাঈল (আঃ) এসে বানু কুরাইযা গোত্রের বিশ্বাসঘাতকতার কথা রাসুল (ﷺ)-কে স্মরণ করিয়ে দেন, ও তার পরপরই মুসলিম বাহিনী কুরাইযা অভিমুখে রওয়ানা হয়। মুসলিম বাহিনী কুরাইযার দূর্গের সামনে এসে পৌঁছলে তারা দূর্গ-তোরণ থেকে রাসুল (ﷺ) ও তাঁর সহধর্মীনিদের উদ্দেশ্যে অশ্রাব্য গালিগালাজ করতে থাকে। তাদের ধারণা ছিল খায়বার থেকে খুব তাড়াতাড়ি ইহুদী বাহিনী এসে পড়বে, আর তারপরে দুই ইহুদী বাহিনীর যৌথ আক্রমণে মুসলিমদের বিধ্বস্ত করে ফেলবে। মক্কার কোরাঈশরা যুদ্ধ ছেড়ে চলে গেছে বলে তারা বরং খুশীই ছিল, কেননা মদিনা প্রদেশের বিশাল সাম্রাজ্য এখন কেবল ইহুদীদের হয়ে যাবে। এরপরে যথারীতি অনেকদিন দূর্গের মধ্যে অবরূদ্ধ থেকে যখন তারা দেখলো যে খায়বার থেকে ইহুদী বাহীনির আসার কোনোই সম্ভবনা নেই তখন তারা আত্মসমর্পণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে রাসুল (ﷺ) এর কাছে আত্মসমর্পন না করে তারা তাদের পুরোনো মিত্র সাদ-বিন-মুয়াদের (রাঃ) কাছে নিজেদের ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত ছেড়ে দেয়। সাদ (রাঃ) সিদ্ধান্ত দেন কুরাইযা গোত্রের সকল যোদ্ধাদের প্রাণদণ্ড দেয়া হোক আর মহিলা ও শিশুদের বন্দী করা হোক। [৭-১৩]
উপরে সীরাতের আলোকে বানু কুরাইযার ইতিহাস খুব সংক্ষেপে দেয়া হলো; এখন দেখা যাক বানু কুরাইযা গোত্র কি আসলেই নিরপরাধ?
৪.১ প্রথম অভিযোগ – নিরপরাধ বানু কুরাইযা গোত্রকে হত্যা করা হয় :
অভিযোগকারীদের কথায় বানু কুরাইযা গোত্র নিরপরাধ, কেননা হাদীস ও সীরাত ইবন ইসহাকেই বলা আছে,
When he returned from the Ditch and laid down his arms and took a bath, the angel Gabriel appeared to him and he was removing dust from his hair (as if he had just returned from the battle). The latter said: You have laid down arms. By God, we haven't (yet) laid them down. So march against them. The Messenger of Allah (may peace be upon him) asked: Where? He poirftad to Banu Quraiza. So the Messenger of Allah (may peace he upon him) fought against them. অর্থাৎ, খন্দক থেকে ফেরার পরে মুহাম্মাদ (সাঃ) অস্ত্র রেখে গোসল করলেন, এবং তখন জীব্রাঈল (আঃ) এসে বললেন তুমি অস্ত্র নামিয়ে রেখেছ, অথচ আমরা এখনো অস্ত্রত্যাগ করিনি; সুতরাং বানু কুরাইযার দিকে এখনই রওয়ানা হও। হাদীসের এই বর্ণনা পড়ে অভিযোগকারীরা বলেন, বানু কুরাইযা তো সমীকরণেই ছিলোনা, তা এই হাদীস থেকে স্পষ্ট। বরং খন্দক থেকে ফিরে এসে রাসুল (সাঃ) অস্ত্রত্যাগ করে গোসল করছিলেন, আর তখনই জীব্রাঈল (আঃ) এসে বানু কুরাইযার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করলে মুসলিম বাহিনী সেদিকে রওয়ানা হন।
এই ব্যপারে যাথারীতি অভিযোগকারীদের সূত্র বিভ্রাট দেখা দেয়। আমার বিশ্লেষণে এই সমস্যাটা সব-সময়ই দেখেছি। তারা কোরান, হাদীস কিংবা সীরাত থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে অভিযোগ আনেন কিন্তু যখন দেখা যায় এই একই উৎসগুলো দিয়েই তাদের অভিযোগগুলো নাকচ হয়ে যাচ্ছে, তখন তারা সুবিধামতো সেই অংশটুকু ভুলে যান। তাহলে দেখা যাক কোরান, হাদীস ও সীরাত অনুযায়ী কুরাইযা গোত্র নিরপরাধ কিনা।
৪.১.১ প্রমাণ-১: সীরাত অনুযায়ী বানু কুরাইযা গোত্র অপরাধী
সীরাতে ইবন ইসহাকে গেলে আমরা দেখি, যখন আয়েশা (রাঃ) কিংবা আবু-সাইদ আল খুদরীর (রাঃ) বর্ণনার আলোকে জীব্রাঈল (আঃ) এর হাদীস দিয়ে বানু কুরাইযার অধ্যায়ের সূচনা হয় তার ২-পাতা আগেই খন্দকের যুদ্ধের প্রাক্কালে খবর আসে যে কুরাইযা গোত্র বিদ্রোহ করে বসেছে
[সীরাত ইবন ইসহাকের পবেন এখানে ডাউনলোড লিঙ্ক ]
“And news came that the Jewish tribe of Banu Qurayza had broken their treaty with Muhammad. ”
যে সীরাত ইবন ইসহাকের রেফারেন্স দিয়ে বানু কুরাইযার নিরপরাধতার শক্ত যুক্তি তারা তুলে ধরেন, সেই একই বইয়ের মাত্র ২ পাতা আগে উল্লেখ করা কুরাইযা গোত্রের প্রতারণা আর বিশ্বাসঘাতকতার কথা কেন তারা সুবিধাজনক ভাবে ভুলে যান?
তাদের দুর্বল যুক্তিবোধ কি তাহলে সুবিধাজনক ক্ষণস্থাযী স্মৃতিশক্তির ফসল?
৪.১.২ প্রমাণ-২, হাদীস অনুযায়ী বানু কুরাইযা গোত্র অপরাধী
💠 সাহীহ মুসলিম শরীফের হাদীসে আছে,
“মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) ..... ইবনু উমর (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, বানু নাযীর এবং বানু কুরাইযাহ্ গোত্র দুটির ইয়াহুদীরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বানু নাযীরকে দেশান্তর করেন। এবং বনু কুরাইযাকে সেখানে থাকার অনুমতি দিলেন এবং তিনি তাদের প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করলেন। পরিশেষে বানু কুরাইযাও যুদ্ধ করল। ফলে তিনি তাদের পুরুষদেরকে হত্যা করলেন এবং তাদের নারী, শিশু ও সম্পদসমূহ মুসলিমদের মাঝে বন্টন করে দিলেন। কিন্তু তাদের কিছু সংখ্যক লোক যারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে মিলিত হয়েছিল তাদেরকে তিনি নিরাপত্তা প্রদান করেন। তখন তারা মুসলিম হয়ে গিয়েছিল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাদীনার সকল ইয়াহুদীকে দেশান্তর করেন। বানু কায়নুকা গোত্রের ইয়াহুদী (আবদুল্লাহ ইবনু সালামের ইয়াহুদী গোত্র), বানু হারিসাহর ইয়াহুদী এবং মাদীনায় বসবাসরত সকল ইয়াহুদীকেই দেশ থেকে বহিষ্কার করেন। (সহীহ মুসলিম ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৪৪০, ইসলামিক সেন্টার ৪৪৪২)
It has been narrated on the authority of Ibn Umar that the Jews of Banu Nadir and Banu Quraiza fought against the Messenger of Allah (ﷺ) who expelled Banu Nadir, and allowed Quraiza to stay on, and granted favour to them until they too fought against him Then he killed their men, and distributed their women, children and properties among the Muslims, except that some of them had joined the Messenger of Allah (ﷺ) who granted them security. They embraced Islam. The Messenger of Allah (ﷺ) turned out all the Jews of Medina. Banu Qainuqa' (the tribe of 'Abdullah b. Salim) and the Jews of Banu Haritha and every other Jew who was in Medina.
باب إِجْلاَءِ الْيَهُودِمِنَ الْحِجَازِ وَحَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ رَافِعٍ، وَإِسْحَاقُ بْنُ مَنْصُورٍ، قَالَ ابْنُ رَافِعٍ حَدَّثَنَا وَقَالَ، إِسْحَاقُ أَخْبَرَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا ابْنُ جُرَيْجٍ، عَنْ مُوسَى بْنِ عُقْبَةَ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّالله عليه وسلم فَأَجْلَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بَنِي النَّضِيرِ وَأَقَرَّ قُرَيْظَةَ وَمَنَّ عَلَيْهِمْ حَتَّى حَارَبَتْ قُرَيْظَةُ بَعْدَ ذَلِكَ فَقَتَلَ رِجَالَهُمْ وَقَسَمَ نِسَاءَهُمْ وَأَوْلاَدَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ بَيْنَ الْمُسْلِمِينَ إِلاَّ أَنَّ بَعْضَهُمْ لَحِقُوا بِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَآمَنَهُمْ وَأَسْلَمُوا وَأَجْلَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَهُودَ الْمَدِينَةِ كُلَّهُمْ بَنِي قَيْنُقَاعَ - وَهُمْ قَوْمُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَلاَمٍ - وَيَهُودَ بَنِي حَارِثَةَ وَكُلَّ يَهُودِيٍّ كَانَ بِالْمَدِينَةِ .
গ্রন্থঃ সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ৩৩। জিহাদ ও সফর (كتاب الجهاد والسير)
হাদিস নম্বরঃ ৪৪৮৪ [ ৪৪৮৪-(৬২/১৭৬৬) ]
আব্দুল্লাহ ইবন ওমরের (রাঃ) উপরের হাদীস থেকে এটা স্পষ্ট যে কুরাইযা গোত্র একবার না, বরং ২ বার চুক্তি ভংগ করে, প্রথম বার বানু নাদীরের ঘটনার সময় (অর্থাৎ উহুদের যুদ্ধের পরে); যে অপরাধ রাসুল (সাঃ) নিজ মহানুভবতার গুণে ক্ষমা করে দেন ও আগের করা চুক্তিটি আবার ফিরিয়ে আনেন। আর দ্বিতীয়বার চুক্তি ভঙ্গ করে আলোচ্য খন্দকের যুদ্ধ চলার সময়।
৪.১.৩ প্রমাণ-৩, কোরান অনুযায়ি বানু কুরাইযা গোত্র অপরাধী
সবচাইতে স্পষ্ট প্রমাণ আছে কুরআনেই, বানু কুরাইযার বর্ণনা আছে সুরা আহযাবের ২৬ নং আয়াতে,
وَأَنزَلَ ٱلَّذِينَ ظَٰهَرُوهُم مِّنْ أَهْلِ ٱلْكِتَٰبِ مِن صَيَاصِيهِمْ وَقَذَفَ فِى قُلُوبِهِمُ ٱلرُّعْبَ فَرِيقًا تَقْتُلُونَ وَتَأْسِرُونَ فَرِيقًا
[Bengali - Mujibur Rahman] কিতাবীদের মধ্যে যারা তাদেরকে সাহায্য করেছিল তাদেরকে তিনি তাদের দুর্গ হতে অবতরণে বাধ্য করলেন এবং তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করলেন; ফলে তোমরা তাদের কতককে হত্যা করেছ এবং কতককে করছ বন্দী। (English - Dr. Mustafa Khattab, the Clear Quran] And He brought down those from the People of the Book[[ The Jews of Banu Quraiẓah who had violated their treaty with the Muslims and sided with the enemy alliance. The Prophet ﷺ asked how they wished to be judged, and they chose to be judged by their book, the Torah—in which the penalty for treason is death. ]] who supported the enemy alliance from their own strongholds, and cast horror into their hearts. You ˹believers˺ killed some, and took others captive. )
এখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে কুরাইযা গোত্র কোরাঈশদের সাথে চুক্তি করে মুসলিমদের সাথে করা আগের চুক্তি ভেঙ্গে দিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করে। এত স্পষ্ট প্রমাণ থাকার পরেও কেন তারা বানু কুরাইযাকে নিরপরাধ বলেন?
৪.১.৪ জীব্রাঈল (আঃ) এর আবির্ভাবের ব্যাখ্যা তাহলে খন্দক যুদ্ধের পরে জীব্রাঈল (আঃ) আবির্ভূত হয়ে কুরাইযা অভিমুখে যাবার কথা মনে করিয়ে দেবার কারণ কী? সামান্য যুক্তিবোধ থাকা লোক মাত্রই কারণটা অনুমান করা উচিত। খন্দক ছিলো তখন পর্যন্ত মুসলিমদের জীবনে ঘটা সবচাইতে চ্যালেঞ্জিং যুদ্ধ। খন্দকে কুরাইশ বাহিনী সহ, গাতাফান ও নজদ থেকে আসা দশ হাজার লোকের সুবিশাল বাহিনী মুসলিম জাতিকে সর্বাংশে নির্মুলের লক্ষ্যে মদিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। বিশাল এই বাহিনীকে মুসলিম বাহিনী মদিনার বাইরে গিয়ে মোকাবিলার কথা ভাবতেও পারেনি, তাই পার্সী মুসলিম সালমানের (রাঃ) পরামর্শ অনুযায়ী খন্দক খুঁড়ে আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধের পরিকল্পনা করা হয়। একে যুদ্ধের আগে অল্প সময়ের মধ্যে বিশালাকায় খন্দক খোঁড়ার জন্যে মুসলিম বাহিনী ছিলেন অসম্ভব ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত; তার উপরে চলে এক মাসব্যাপী আগ্রাসী জোটের অবরোধ। তখনকার চলতি যুদ্ধের প্রেক্ষিতে খন্দক ছিল ব্যতিক্রম। আগের বদর ও ঊহুদ যুদ্ধ চলে কেবল এক বেলা (হয়ত কয়েক ঘন্টা), কিন্তু খন্দকের যুদ্ধের অব্যবহিত আগের বিশালাকায় খন্দক খোড়ার অহর্নিশ অক্লান্ত পরিশ্রমের পরেও মোটের উপর ৫ সপ্তাহের ধকল মুসলিমদের উপর যায়। এমতাবস্থায় ৫ সপ্তাহ পরে কুরাইযা বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার আগে কিছুটা বিশ্রাম নেয়া [যেমন বাসায় ফিরে অস্ত্র রেখে গোসল করে কিছুটা বিশ্রাম করা] অমূলক নয়। তবে কেবল এই চিত্রকল্পকে আলাদা ভাবে এঁকে, আগের ঘটনাগুলো সুবিধামতো ভুলে গিয়ে, যদি কেউ বোঝাতে চান যে কোনো কারণ ছাড়াই বানু কুরাইযা গোত্রের উপর অন্যায় ভাবে যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হয়েছে তাহলে তার সাথে কীভাবে বিতর্ক করবেন? আমার মতামত, কুরাইযা বাহিনীর অপরাধ সম্পর্কে সব মুসলিমই অবগত ছিলেন, এবং অক্লান্ত পরিশ্রমের ৫-সপ্তাহ পরে কিছুটা বিশ্রামের পরে অবশ্যই সে ব্যবস্থা নেয়া হতো। কিন্তু এমতাবস্থায় জীব্রাঈল (আঃ) এসে মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে বানু কুরাইযার করা বিশ্বাসঘাতকতার কথা স্মরণে এনে দেন। এতে করে রাসুল (সাঃ) ঘটনার গুরুত্ব পুরোপুরি বুঝে উঠতে সক্ষম হন ও সবাইকে ডেকে এনে নির্দেশ দেন বানু কুরাইযাতে গিয়ে আসর সালাত পড়তে (অর্থাৎ যথাশীঘ্রই বানু কুরাইযাতে পৌঁছতে)। [৭-১৩]
৪.২ দ্বিতীয় অভিযোগ – বানু কুরাইযার সকল পুরুষদের হত্যা করা হয় দ্বিতীয় অভিযোগ হচ্ছে সাদের (রাঃ) প্রদত্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কুরাইযা গোত্রের সকল পুরুষদের হত্যা করা হয়।
এই অভিযোগ খণ্ডনের আগে কিছু প্রাসঙ্গিক তথ্য আলোচনা করা জরুরী। অভিযোগের ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয় সীরাত ইবন ইসহাকের বর্ণিত হাদীসটিই। ইবন ইসহাকে আগে উল্লেখ করা জীব্রাঈল (আঃ) এর কুরাইযা অভিমুখে অভিযাত্রার নির্দেশের পরেই বলা হচ্ছে,
When Sad appeared the apostle said to the Muslims, 'Arise in honour of your chief!” Then Sad asked, 'Do you covenant with Allah to abide by my decision?' and they said, 'We do!’ The apostle of Allah also replied, 'Yes.' And Sad pronounced the following sentence, 'I decree that the men be killed, the property be divided, and the women with their children be made captives.'
এই বিষয়টার ব্যাখ্যাকল্পে সেকালের গোত্রভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার দিকে আমাদের চোখ ফেরাতে হবে। সে আমলে যুদ্ধ, শান্তি, চুক্তি, সন্ধি, দৈনন্দিন কিংবা রাষ্ট্রিক সব কার্যাদি ছিল গোত্রভিত্তিক। আর তাই গোত্রের প্রাপ্ত বয়স্ক সবাই স্বভাবতই যোদ্ধা ছিলেন। সে সময়ের ইতিহাস পড়ে আমি এমন কোনো রেফারেন্স পাইনি যেখানে গোত্রের পুরুষ প্রাপ্তবয়ষ্ক হয়েছে কিন্তু সে যোদ্ধা নয়। পুরুষেরা ব্যবসা কিংবা কৃষিকাজ সহ যে সমস্ত মূল কাজে নিয়োজিত ছিলেন, তার বাইরে সবার আরেকটা পরিচয় ছিল, তা হলো গোত্র রক্ষায় সবাই একতাবদ্ধ যোদ্ধা। আজকালকার দিনের মতো নিয়মিত সামরিক বাহিনী সে দিনের আরব সমাজে ছিলনা। তবে যোদ্ধা জাতির উদাহরণ যে কেবল সে দেশেই আর সে কালেই প্রচলিত ছিল তা ঠিক নয়; এমনকি হালের রাষ্ট্র ইসরায়েল, তাইওয়ান, কিউবা কিংবা দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়ার সকল প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষই যোদ্ধা – এটা ঐ সমস্ত দেশের রাষ্ট্রিক নিয়ম। প্রাপ্ত বয়স্ক হলে সকলেরই যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়ে কিছুকাল সামরিক বাহিনীতে যোগদান করা বাধ্যতামুলক। তাই আরবের সেই রুক্ষ ও গোত্রভিত্তিক সমাজে যুদ্ধে পরাজিত হলে যুদ্ধের পরিণতি সকল পুরুষদের উপরই নেমে আসবে তা স্বাভাবিক – কেননা গোত্রের সব প্রাপ্তবয়ষ্ক পুরুষই যোদ্ধা। সেজন্যে যদিও ইবন ইসহাকের সীরাতে সকল পুরুষদের হত্যা করার আদেশ দেয়া হয় বলে বলা হচ্ছে কিন্তু প্রাসঙ্গিক হাদীসগুলো মূল আরবীতে পড়লে দেখা যায়, সকল পুরুষদের নয় বরং সকল যোদ্ধাদের হত্যা করা হোক একথা বলা আছে। নীচে আয়েশা (রাঃ) ও আবু সাইদ আল খুদরীর হাদীসের হত্যার আদেশ সংক্রান্ত অংশটুকু পড়ুন,
💠আবু সাইদ খুদরী রাঃ এর হাদীস:
গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ) অধ্যায়ঃ ৬৬/ অনুমতি চাওয়া (كتاب الاستئذان) হাদিস নম্বরঃ ৫৮২৮ ২৫৮৬. নাবী (সাঃ) এর বানীঃ তোমরা তোমাদের সরদারের জন্য দাঁড়াও ৫৮২৮। আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) ... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, কুরাইযা গোত্রের লোকেরা সা'দ (রাঃ) এর ফায়সালার উপর আত্মসমর্পন করলো। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আসার জন্য লোক পাঠালেন। তারপর তিনি এলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের বললেনঃ তোমরা আপন সরদারের প্রতি অথবা বললেনঃ তোমাদের শ্রেষ্ঠ ব্যাক্তির প্রতি উঠে দাঁড়াও। তারপর সা'দ (রাঃ) এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পাশেই বসলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেনঃ এরা তোমার ফায়সালার উপর আত্মসমর্পণ করেছে। তিনি বললেনঃ তা হলে আমি ফায়সালা দিচ্ছি যে এদের মধ্যে যারা যূদ্ধযোগ্য তাদের হত্যা করা হোক। আর তাদের বাচ্চাদের বন্দী করা হোক। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এদের ব্যাপারে তুমি আল্লাহ তাআলার ফায়সালা অনুযায়ীই ফায়সালা দিয়েছ। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, আমার কোন কোন সঙ্গী আবূল ওয়ালীদ থেকে আবূ সাঈদের এ হাদীছে عَلَى حُكْمِكَ এর স্থলে إِلَى حُكْمِكَ শব্দ আমার কাছে বর্ণনা করেছেন। Narrated Abu Sa`id: The people of (the tribe of) Quraiza agreed upon to accept the verdict of Sa`d. The Prophet (ﷺ) sent for him (Sa`d) and he came. The Prophet (ﷺ) said (to those people), "Get up for your chief or the best among you!" Sa`d sat beside the Prophet (ﷺ) and the Prophet (ﷺ) said (to him), "These people have agreed to accept your verdict." Sa`d said, "So I give my judgment that their warriors should be killed and their women and children should be taken as captives." The Prophet (ﷺ) said, "You have judged according to the King's (Allah's) judgment." باب قَوْلِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم " قُومُوا إِلَى سَيِّدِكُمْ ". حَدَّثَنَا أَبُو الْوَلِيدِ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ سَعْدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ أَبِي أُمَامَةَ بْنِ سَهْلِ بْنِ حُنَيْفٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، أَنَّ أَهْلَ، قُرَيْظَةَ نَزَلُوا عَلَى حُكْمِ سَعْدٍ فَأَرْسَلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِلَيْهِ فَجَاءَ فَقَالَ " قُومُوا إِلَى سَيِّدِكُمْ ". أَوْ قَالَ " خَيْرِكُمْ ". فَقَعَدَ عِنْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ " هَؤُلاَءِ نَزَلُوا عَلَى حُكْمِكَ ". قَالَ فَإِنِّي أَحْكُمُ أَنْ تُقْتَلَ مُقَاتِلَتُهُمْ، وَتُسْبَى ذَرَارِيُّهُمْ. فَقَالَ " لَقَدْ حَكَمْتَ بِمَا حَكَمَ بِهِ الْمَلِكُ ". قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ أَفْهَمَنِي بَعْضُ أَصْحَابِي عَنْ أَبِي الْوَلِيدِ مِنْ قَوْلِ أَبِي سَعِيدٍ إِلَى حُكْمِكَ.
💠আয়েষা (রাঃ) এর হাদীস,
গ্রন্থঃ সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী) অধ্যায়ঃ ৩৩। জিহাদ ও সফর (كتاب الجهاد والسير) হাদিস নম্বরঃ ৪৪৮৯ ২২. যে ব্যক্তি চুক্তি ভঙ্গ করে তাকে হত্যা করা বৈধ হওয়া এবং দুর্গের অধিবাসীদের কোন ন্যায়পরায়ণ ক্ষমতা প্রদত্ত বিচারকের নির্দেশে অবতরণ বৈধ হওয়া ৪৪৮৯-(৬৫/১৭৬৯) আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ ও মুহাম্মাদ ইবনু 'আলা হামদানী (রহঃ) ..... আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধের দিন সা'দ (রাযিঃ) আঘাতপ্রাপ্ত হন। কুরায়শের ইবনুল আরিকা নামক এক ব্যক্তি তার শিরায় তীর নিক্ষেপ করেছিল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা'দ (রাযিঃ) এর জন্যে মাসজিদে একটি তাবু স্থাপন করে দিলেন, যেন নিকট থেকে তাকে দেখাশোনা করা যায়। যখন তিনি (রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খন্দকের যুদ্ধ থেকে ফিরে অস্ত্র রেখে সবেমাত্র গোসলের কাজ সমাপ্ত করেছেন এমন সময় জিবরাঈল (আঃ) স্বীয় মাথা থেকে ধূলিবালি ঝাড়তে ঝাড়তে আগমন করলেন। এরপর বললেন, আপনি অস্ত্র রেখে দিয়েছেন? আল্লাহর শপথ! আমরা তো অস্ত্র রাখিনি। তাদের দিকে গমন করুন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোন দিকে? তখন তিনি বানু কুরাইযার দিকে ইঙ্গিত করলেন। এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে যুদ্ধ করলেন। তারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশে দূর্গ থেকে অবতরণ করলো। তারপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিচারের ভার (তাদের নেতা) সা'দ (রাযিঃ) এর উপর অর্পণ করলেন। সা'দ (রাযিঃ) বললেন, আমি নির্দেশ দিচ্ছি যে, তাদের মধ্যে যুদ্ধের উপযুক্ত (যুবক) লোকদেরকে হত্যা করা হোক, নারী ও শিশুদেরকে বন্দী করা হোক এবং তাদের সম্পদগুলো ভাগ করা হোক। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৪৪৬, ইসলামিক সেন্টার ৪৪৪৮) It has been narrated on the authority of A'isha who said: Sa'd was wounded on the day of the Battle of the Ditch. A man from the Quraish called Ibn al-Ariqah shot at him an arrow which pierced the artery in the middle of his forearm. The Messenger of Allah (ﷺ) pitched a tent for him in the mosque and would inquire after him being in close proximity. When he returned from the Ditch and laid down his arms and took a bath, the angel Gabriel appeared to him and he was removing dust from his hair (as if he had just returned from the battle). The latter said: You have laid down arms. By God, we haven't (yet) laid them down. So march against them. The Messenger of Allah (ﷺ) asked: Where? He pointed to Banu Quraiza. So the Messenger of Allah (may peace he upon him) fought against them. They surrendered at the command of the Messenger of Allah (ﷺ), but he referred the decision about them to Sa'd who said: I decide about them that those of them who can fight be killed, their women and children taken prisoners and their properties distributed (among the Muslims). باب جَوَازِ قِتَالِ مَنْ نَقَضَ الْعَهْدَ وَجَوَازِ إِنْزَالِ أَهْلِ الْحِصْنِ عَلَى حُكْمِ حَاكِمٍ عَدْلٍ أَهْلٍ لِلْحُكْمِ وَحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَمُحَمَّدُ بْنُ الْعَلاَءِ الْهَمْدَانِيُّ، كِلاَهُمَا عَنِ ابْنِ نُمَيْرٍ، قَالَ ابْنُ الْعَلاَءِ حَدَّثَنَا ابْنُ نُمَيْرٍ، حَدَّثَنَا هِشَامٌ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ أُصِيبَ سَعْدٌ يَوْمَ الْخَنْدَقِ رَمَاهُ رَ��ُلٌ مِنْ قُرَيْشٍ يُقَالُ لَهُ ابْنُ الْعَرِقَةِ . رَمَاهُ فِي الأَكْحَلِ فَضَرَبَ عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم خَيْمَةً فِي الْمَسْجِدِ يَعُودُهُ مِنْ قَرِيبٍ فَلَمَّا رَجَعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنَ الْخَنْدَقِ وَضَعَ السِّلاَحَ فَاغْتَسَلَ فَأَتَاهُ جِبْرِيلُ وَهُوَ يَنْفُضُ رَأْسَهُ مِنَ الْغُبَارِ فَقَالَ وَضَعْتَ السِّلاَحَ وَاللَّهِ مَا وَضَعْنَاهُ اخْرُجْ إِلَيْهِمْ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " فَأَيْنَ " . فَأَشَارَ إِلَى بَنِي قُرَيْظَةَ فَقَاتَلَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَنَزَلُوا عَلَى حُكْمِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَرَدَّ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْحُكْمَ فِيهِمْ إِلَى سَعْدٍ قَالَ فَإِنِّي أَحْكُمُ فِيهِمْ أَنْ تُقْتَلَ الْمُقَاتِلَةُ وَأَنْ تُسْبَى الذُّرِّيَّةُ وَالنِّسَاءُ وَتُقْسَمَ أَمْوَالُهُمْ .
উপরের ২-টি হাদীসেই রাজুল (رجل) বা পুরুষ শব্দের বদলে মোকাতেল (مقاتل) অর্থাৎ যোদ্ধা শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আর উপরে আমরা ব্যাখ্যা করলাম কী অর্থে রাজুল ও মোকাতেল সমার্থক হতে পারে। সেই অর্থে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ যোদ্ধা কে কে তা নির্বাচন করার জন্যে যে পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়েছিল তার একটা বিবরণ আবু-দাউদে বর্ণিত হাদীসে আমরা পাই। সেখানে বলা হচ্ছে,
আতিয়া আল-কুরাযী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বনু কুরাইজার বন্দীদের মধ্যে ছিলাম। তারা (সাহাবীগণ) আমাদের পরীক্ষা করলেন এবং যাদের নিন্মাঙ্গে চুল গজানো শুরু করেছিল তাদের হত্যা করা হয়েছিল এবং যাদের না তাদের হত্যা করা হয়নি। আমি তাদের মধ্যে ছিলাম যাদের চুল বাড়েনি।
Narrated Atiyyah al-Qurazi: I was among the captives of Banu Qurayzah. They (the Companions) examined us, and those who had begun to grow hair (pubes) were killed, and those who had not were not killed. I was among those who had not grown hair.
অর্থাৎ গুপ্তাঙ্গের কেশ দেখে কোন কোন পুরুষ প্রাপ্তবয়ষ্ক ছিল তা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তাহলে প্রশ্ন থাকে গুপ্তাঙ্গে কেশ যাদের ছিল তাদের সবাইকেই কী মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল? এর বাইরে কি কেউ ছিলেন না যাকে মৃত্যুদণ্ড থেকে অব্যহতি দেয়া হয়েছিল? উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ। আরো অনেককেই ঐদিন মৃত্যুদণ্ড থেকে অব্যহতি দেয়া হয়েছিল।
নীচের ইবন ওমরের (রাঃ) হাদীসটা দেখা যাক, Bani An-Nadir and Bani Quraiza fought (against the Prophet violating their peace treaty), so the Prophet exiled Bani An-Nadir and allowed Bani Quraiza to remain at their places (in Medina) taking nothing from them till they fought against the Prophet again. He then killed their men and distributed their women, children and property among the Muslims, but some of them came to the Prophet and he granted them safety, and they embraced Islam. বনি আন-নাদির এবং বনি কুরাইজা যুদ্ধ করেছিলো (তাদের শান্তি চুক্তি লঙ্ঘন করে নবী ﷺ এর বিরুদ্ধে), তাই নবীﷺ বনি আন-নাদিরকে নির্বাসিত করেছিলেন এবং বনি কুরাইজাকে তাদের জায়গায় (মদিনায়) থাকার অনুমতি দিয়েছিলেন যতক্ষণ না তারা আবার নবীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করে। অতঃপর তিনি তাদের পুরুষদের হত্যা করেন এবং তাদের নারী, সন্তান ও সম্পত্তি মুসলমানদের মধ্যে ভাগ করে দেন, কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ কেউ নবীর কাছে আসে এবং তিনি তাদের নিরাপত্তা প্রদান করেন এবং তারা ইসলাম গ্রহণ করে।
এই হাদীসটি সহ অন্যান্য হাদীস, কোরান ও সীরাতের বর্ণনা মিলিয়ে পড়লে ঘটনার যে ধারাবাহিকতা আমরা পাই তা হলো, ১। কুরাইযা গোত্রের নিজেদের নির্বাচিত বিচারক ও প্রাক্তণ বন্ধুগোত্র প্রধান, সাদ বিন মুয়াদ (রাঃ) কুরাইযা গোত্রের কেবল যোদ্ধাদের কতলের নির্দেশ দেন। ২। কে কে যোদ্ধা তা ঠিক করার জন্যে সমবেত কুরাইযা গোত্রের লোকদের প্রতি আহবান জানানো হলে কিছু লোক তাঁর কাছে এসে তাদের যুদ্ধের বিরোধিতার কথা ব্যক্ত করলে রাসুল (সাঃ) তাঁদের ক্ষমা করে দেন ও পরে তারা ইসলাম গ্রহণ করেন। ৩। আহ্বানে সাড়া না দেয়া বাকী পুরুষরা যোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হন ও তাদের মধ্যে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের গুপ্তাঙ্গে কেশ দেখে ছেড়ে দেয়া হয়। এছাড়াও ইতিহাস ও হাদীস থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে বানু কুরাইযা গোত্রের প্রায় তিনশ লোককে যুদ্ধ করার অপরাধে হত্যা করার পরে বাকী অনেককে মদিনা ত্যাগ করার শর্তে ছেড়েও দেয়া হয়। ইবন-আসাকের বিশিষ্ট মোহাদ্দেস ও ইতিহাসবেত্তা বানু কুরাইযার ঘটনা সম্পর্কে নিম্নলিখিত হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, অতঃপর হযরত তাদের তিন শত পুরুষকে নিহত করলেন এবং অবশিষ্ট লোকদের বললেন – তোমরা সিরিয়া প্রদেশে চলে যাও, অবশ্য তোমাদের গতিবিধির উপর লক্ষ্য রাখবো। অতঃপর হযরত তাদের সিরিয়া প্রদেশে পাঠিয়ে দিলেন। [১১-১৩] فقتل رسول الله حملعيم منهم ثلث ماىة وقل ليقيتهم انطاقوا الى ارض المحشر قاتانى آثاركم يعنى ارض الشام فسيرهم اليها … সিরিয়া প্রদেশে পাঠানোর বর্ণনা এখানেও দেয়া আছে। [ http://islamport.com/d/1/krj/1/76/896.html ]
৪.২.১ কোরান থেকে প্রমাণ কোরানের প্রমাণ সেই আগের আলোচিত আয়াতেই (৩৩.২৬) আছে। আয়াতটা আবার পড়ুন,
وَأَنزَلَ الَّذِينَ ظَاهَرُوهُم مِّنْ أَهْلِ الْكِتَابِ مِن صَيَاصِيهِمْ وَقَذَفَ فِي قُلُوبِهِمُ الرُّعْبَ فَرِيقًا تَقْتُلُونَ وَتَأْسِرُونَ فَرِيقًا কিতাবীদের মধ্যে যারা কাফেরদের পৃষ্টপোষকতা করেছিল, তাদেরকে তিনি তাদের দূর্গ থেকে নামিয়ে দিলেন এবং তাদের অন্তরে ভীতি নিক্ষেপ করলেন। ফলে তোমরা একদলকে হত্যা করছ এবং একদলকে বন্দী করছ। And those of the people of the Scripture who backed them (the disbelievers) Allâh brought them down from their forts and cast terror into their hearts, (so that) a group (of them) you killed, and a group (of them) you made captives.
এখানে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে যে একদলকে হত্যা করা হলো ও আরেক দলকে বন্দী করা হলো। এখান থেকে এটা স্পষ্ট যে সবাইকে হত্যা করা হয়নি।
৪.৩ তৃতীয় অভিযোগ – কুরাইযা গোত্রের ছয় থেকে নয় শতাধিক লোককে হত্যা করা হয়
সীরাতের বিভিন্ন বর্ণনা এক করে দেখলে দেখা যায় যে ছয় থেকে নয়’শ কুরাইযা গোত্রের পুরুষ যোদ্ধাদের হত্যা করা হয়। আগে সূত্র ও নিয়মানুগে যেভাবে উল্লেখ করা হয়ছে সে অনুযায়ী হাদীস শাস্ত্রে গেলে আমরা দেখি বোখারী ও মুসলিমে কোথাও কত জনকে হত্যা করা হয় তার সংখ্যা পাওয়া যায়না। কোরানেও কুরাইযা গোত্রের সর্বমোট কতজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় তার হিসেব পাওয়া যায়না। সুতরাং কোরান ও বিশ্বস্ত হাদীস গ্রন্থের সাথে সীরাতের বর্ণনার অসামঞ্জস্যতা থাকাতে আমাদের সতর্কতার সাথে এগুতে হবে। দেখতে হবে অন্য কোনো হাদীস গ্রন্থে সংখ্যা সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায় কিনা। হ্যাঁ, সংখ্যার হিসেব দিয়ে কিছু হাদীস পাওয়া যায় অবশ্য নেসায়ী, তিরমিযী প্রমুখ হাদীস গ্রন্থে [১৩]। ওখানে বলা হচ্ছে যে সাদ বিন মুয়াদ (রাঃ) যখন মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন তখন চারশ’র মতো কুরাইযা গোত্রের পুরুষ উপস্থিত ছিলেন। এখন যদি ধরাও হয় যে সব পুরুষকেই মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়, তাহলেও সংখ্যা হাদীসের ইঙ্গিত অনুসারে বলা যায় যে সর্বোচ্চ হয়তবা চারশ লোকের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কোরান কিংবা বুখারী ও মুসলিম প্রমুখ অধিক বিশ্বস্ত হাদীস গ্রন্থের বর্ণনায় এটা আগে প্রমাণ করা হয়েছে যে কুরাইযার সব পুরুষকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়নি। তবে যাই হোক না কেন সীরাতে বর্ণিত ৬ থেকে ৯ শ লোককে মৃত্যুদণ্ড কিন্তু হাদীস অনুসারেই বিশ্বস্ত বলে প্রতীয়মান হচ্ছেনা। অতএব, কোরান ও হাদীসের অন্যান্য বর্ণনার সাথে এক করে দেখলে সয়ুতির আল জামি আল কুবরা কিংবা আলী ইবন আব্দ-আল-মালিক আল হিন্দী’র কাঞ্জুল ঊম্মালে দেয়া বর্ণনাই অধিকতর যুক্তিপূর্ণ, অর্থাৎ শ’তিনেক কুরাইযা পুরুষকে ঐদিন মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ও অনেককে ছেড়ে দেয়া হয়, যারা সিরিয়ায় চলে যায়। [১১, ১২]
৫. উল্টো ইতিহাস হলে কী হতো? বাইবেলই বা কী বলে?
এটা একটা স্বাভাবিক প্রশ্ন। ঐদিন আহযাবের যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী পরাজিতও হতে পারতেন। আর আহযাব বাহিনী যে পুরো মুসলিম উম্মাহকে সমূলে ধ্বংস করতে সেদিন জমায়েত হয়েছিল তাতে কারুর সন্দেহ নেই। পরাজিত হলে জীবিত প্রতিটি মুসলিমকে সেদিন কতল করে ফেলা হতো নিঃসন্দেহে। এতে বানু কুরাইযাও নিশ্চয়ই এগিয়ে আসতেন বাইবেলের নির্দেশ পালন করতে-
When you march up to attack a city, make its people an offer of peace. If they accept and open their gates, all the people in it shall be subject to forced labor and shall work for you. If they refuse to make peace and they engage you in battle, lay siege to that city. When the Lord your God delivers it into your hand, put to the sword all the men in it. As for the women, the children, the livestock and everything else in the city, you may take these as plunder for yourselves. And you may use the plunder the Lord your God gives you from your enemies. তোমরা যখন একটি জনপদে আক্রমণ করার জন্য সেনাবহর নিয়ে অবতরন করবে, তখন তার জনগণকে শান্তির প্রস্তাব দাও। যদি তারা মেনে নেয় এবং তাদের দরজা খুলে দেয়, তবে এর সমস্ত অধিবাসীকে জোর করে তামাদের দাস বানিয়ে নিতে হবে এবং তারা তোমাদের সকল কাজ করবে। যদি তারা শান্তি স্থাপনে অস্বীকৃতি জানায় এবং তোমাদের যুদ্ধে লিপ্ত করে, তবে তোমরা সেই শহর অবরোধ কর। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যখন তা তোমাদের হাতে তুলে দেন, তখন তাতে থাকা সমস্ত পুরুষ লোককে তলোয়ারের ধারালো প্রান্তদিয়ে মরনআঘাত করো । আর ওখাধকার নারী, শিশু, গবাদি পশু এবং শহরের অন্য সব কিছু তোমাদের ভোগের তোমরা এগুলি নিজেদের জন্য লুণ্ঠন হিসাবে গ্রহণ করতে পারো । তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের শত্রুদের কাছ থেকে তোমাদের যে লুণ্ঠন দিয়েছেন তা তোমরা যথেচ্ছা ব্যবহার করতে পারো।
কিন্তু ঐদিন আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী মুসলিমরা বিজয়ী হন, আর তোরাহের নিয়ম গিয়ে বর্তায় মূলত বানু কুরাইযা গোত্রের উপর, যে নীতি অনুসরণ করে সাদ (রাঃ) তার রায় ঘোষণা দেন। অতএব, যুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা করার পরে তাদের নিজেদের বইতে লেখা আইনের আলোকে যখন তাদের শাস্তি দেয়া হয় (আদতে বাইবেলে বর্ণিত আইনের চেয়ে শাস্তি অনেক কম হয়েছিল বলেই প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে) তখন কোনো foul play এর অযুহাত তোলা যায়না।
প্রসঙ্গত আরেকটা কথা এখানে বলা দরকার। কুরাইযা গোত্র নিজেরাই সাদ (রাঃ) এর কাছে তাদের ভবিষ্যত এর ভার ছেড়ে দেয়।
অনেক মুসলিম আলেমকে বলতে দেখেছি, যদি তারা মুহাম্মাদ (ﷺ) এর কাছে বিচারের ভার সমর্পণ করতেন তাহলে হয়তো রাসুল (ﷺ) সব যোদ্ধাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়ার মতো চরম সিদ্ধান্ত নিতেন না [১৩]।
এখন কথা হচ্ছে এভাবে ইতিহাস ঘটেনি, তাই কী হতো তা পুরোপরি বলা সম্ভব নয়। তবে রাসুল (ﷺ) এর আগে কাইনুকা ও নাদীর গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের পরোয়ানা দেননি; তাই যুক্তি উপস্থাপন করা যেতে পারে যে রাসুল (ﷺ) কুরাইযা গোত্রের ক্ষেত্রেও হয়ত আরো অনেককেই রেহাই দিতেন। কিন্তু যেভাবে ইতিহাস এগিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে কৃতঘ্ন কুরাইযা গোত্র শেষ মুহুর্তেও রাসুল (ﷺ) এর উপরে কিছুটা আক্রোশ ঝাড়ে এভাবে যে তারা রাসুল (ﷺ) এর বদলে সাদ (রাঃ) এর কাছে আত্মসমর্পণ করে ও তাকে বিচারক বানায়। পরের ইতিহাস সবার জানা। হাদীস শেষে এও দেখা যাচ্ছে যে রাসুল (ﷺ) সাদ (রাঃ)-কে বলেন, যে সাদ (রাঃ) আল্লাহর ইচ্ছে মতোই রায় দিয়েছেন। ইসলাম বিদ্বেষীরা এখানেও অনুযোগ আনেন যে, রাসুল (ﷺ)-কে বিচারক মানলে একই বিচারই আসতো; কেননা রাসুল (ﷺ) নিজেই তো শেষে বলছেন, যে সাদ (রাঃ) আল্লাহর ইচ্ছে অনুসারেই রায় দিয়েছেন। এটা বেশ দূর্বল যুক্তি; কেননা হতে পারে যে আল্লাহ্র ইচ্ছে হচ্ছে এটা, যে যদি তারা সাদ (রাঃ)-কে নির্বাচন করে তবে তাদের রায় হবে চরম –অন্যথায় নয়। এই অংশটা বললাম কেবল যুক্তির খাতিরে, আদতে অন্যপথে ইতিহাস আগালে কী হতো তা আল্লাহই ভালো জানেন।
৬. উপসংহার এই লেখাতে দেখানো হলো:
১। বাংলা নাস্তিকদের গোয়েবলসীয় আর্তনাদ ও উপর্যুপরি তথ্য সন্ত্রাসে যদিও অনেকে মনে করতে পারেন যে বানু কুরাইযা সম্ভবত ইহুদীদের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া অন্যতম বড় হত্যাকাণ্ড, কিন্তু অ্যান্টি-সেমিটিজমের নিরপেক্ষ তালিকাগুলোতে এই হত্যাকাণ্ডের বিবরণ পাওয়া যায়না। তালিকাতে থাকা ইহুদী নিধনের ইতিহাস বলতে গেলে ৯৯% খৃষ্টান ও পেগানদের বদাণ্যতায় ঘটে।
২। ইহুদীদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া এসব বড় বড় হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে অনেকবারই দেখা গেছে মুসলিমদেরই আহলে কিতাবের কাজিনদের রক্ষাকল্পে এগিয়ে আসার ইতিহাস। মধ্যযুগে ইউরোপের খৃষ্টান চার্চের প্রাতিষ্ঠানিক অত্যাচারে ইহুদীরা নিজেদের রক্ষাকল্পে মুসলিম অধ্যুষিত স্পেন, জেরুসালেম কিংবা অটোম্যান সাম্রাজ্যে পাড়ি জমায়। আর খৃষ্টান শক্তি যখন ক্রুসেড কিংবা রিকনকোয়েস্টা’র মাধ্যমে মুসলিমদের উপর আক্রমণ চালায় তখন দেখা যায় মুসলিমদের ছায়াবরণে থাকা ইহুদীদের বিরুদ্ধে দ্বিগুণ প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে [১৪, ১৫]। ইউরোপের হাজার বছরের ‘ইহুদী সমস্যা’র শেষ সমাধান দেন হিটলার নামের জনৈক অ্যারিয়ান খৃষ্টান। হত্যা করেন ৬০ লক্ষ ইহুদী। অথচ আজ হাজার বছরের ইতিহাস ভুলে গিয়ে ইহুদী আর খৃষ্টান (সবাই নয় অবশ্যই; বলছি গোঁড়া দক্ষিণপন্থী ইসলাম-বিদ্বেষী ইভ্যাঞ্জ্যালিক্যাল খৃষ্টান ও গোঁড়া ইহুদীদের কথা) এক হয়েছে রিভিশানিষ্ট ইতিহাস রচনাকল্পে। এই লক্ষ্যে তারা তৈরী করেছে উইকি-ইসলাম, জিহাদ ওয়াচ, ফেইথফ্রীডম নামের ওয়াবসাইটগুলো। আর ওখান থেকেই উচ্ছিষ্ট খেয়ে বাংলার একদল নব্য ইসলাম বিদ্বেষী কুলাঙ্গার একই ধারায় ঐ হিটলারের তথ্যমন্ত্রী গোয়েবেলস’র দেখানো পথে একই মিথ্যা বারংবার উচ্চারণ করে একে সত্য বলে আম জনতার মাথায় প্রোথিত করার কুকাজে লিপ্ত। তবে ভাগ্য ভালো এখনো নিরপেক্ষ সূত্রগুলো টিকে আছে, যেখানে গেলে এই দুষ্টচক্রের ভণ্ডামি ধরা পড়ে সহজেই।
৩। বানু কুরাইযা গোত্র মুসলিমদের সাথে চুক্তি করে যে তারা দেশ রক্ষা করবে সম্মিলিতভাবে, আর তারা কখনো পরাশক্তিকে নিজের দেশের বিরুদ্ধে মদদ ও সাহায্য দেবেনা। মদিনা রক্ষা করার কোনো যুদ্ধে তারা স্বদেশ অর্থাৎ মুসলিম পক্ষে যুদ্ধ করতে যোগ দেয়নি (বদর থেকে খন্দক), যা করতে তারা চুক্তি মোতাবেক বাধ্য ছিল। স্বশরীরে যুদ্ধ করা না হয় বাদই দেয়া গেলো, দেখা যাচ্ছে উল্টো বানু নাদিরের ঘটনার সময় একবার আর আহযাবের সময় দ্বিতীয়বার তারা সরাসরি মুসলিমদের বিরুদ্ধ শিবিরে যোগদান করে। বানু নাদিরের ঘটনার পরে তারা মুসলিমদের সাথে নাকে খত দিয়ে শান্তিচুক্তি নবায়ন করে; কিন্তু প্রথম সুযোগ পাওয়া মাত্রই তারা সেই নবায়িত চুক্তি আবার ভেঙ্গে ফেলে। সাহাবীরা কুরাইযা পল্লীতে গিয়ে চুক্তি ভাঙ্গার পরিণাম সম্পর্কে মনে করিয়ে দিলেও তারা বলে, “মোহাম্মদ কে? আমরা তাকে চিনি না। আমরা কোনো সন্ধিপত্রের ধার ধারি না।” [১-৭]
৪। কোরান, হাদীস, সীরাত, তাফসির সব যায়গাতেই দেখা যাচ্ছে তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, আর তাই সে মতে তাদের শাস্তিও তারা পেয়েছে। দেখানো হলো যে সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়নি। ইবন আসাকেরের হাদীস থেকে দেখা যাচ্ছে যে অনেক কুরাইযা গোত্রের লোককে সিরিয়ায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল।
৫। দেখানো হলো যে, ৬০০ থেকে ৯০০ কুরাইযা পুরুষকে হত্যা করার সীরাতে বর্ণনা প্রশ্ন সাপেক্ষ – কেননা হাদীস থেকে বড়জোর ৩ থেকে ৪-শ লোকের মৃত্যুদণ্ডের প্রমাণ পাওয়া যায়।
৬। জীব্রাঈল (আঃ) এর আবির্ভাবের কারণ ব্যাখ্যা করা হলো।
৭। দেখানো হলো যে, ইহুদীরা মুহাম্মদ (ﷺ) এর চাইতে তাদের প্রাক্তণ বন্ধুপ্রতিম গোত্রপ্রধাণ সাদ বিন মুয়াদের উপর নিজেদের বিচারের ভার ছেড়ে দেয় – কেননা তারা তাকে বেশী নিরাপদ ভাবছিল। সাদ (রাঃ) যথারীতি সকল যোদ্ধাদের মৃত্যুদণ্ড দেন, যাকে রাসুল (ﷺ) আল্লাহ্র ইচ্ছা অনুসারেই রায় দিয়েছেন বলে বলেছেন। এর মানে এই ভাবার কারণ নেই যে, মুহাম্মাদ (সাঃ) এর উপর বিচারের ভার ছেড়ে দেয়া হলে তিনি একই রকমের সিদ্ধান্তেই আসতেন।
৮। বিচারের রায় দেয়া হয়েছিল বাইবেলের Deuteronomy এর বিধান অনুসারেই। আর ঐদিন মুসলিমরা পরাজিত হলে তাদেরো একই ধরণের কিংবা আরো খারাপ পরিণতি হতো। অতএব, এনিয়ে অভিযোগ অনুযোগ ও লোক দেখানো মায়াকান্নার সুযোগ নেই। তো সর্বোপরি আমরা দেখলাম বানু কুরাইযার ঘটনায় নির্দোষ কেউ মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন নাই। নিছক ধর্মীয় বৈরীতার কারণেও কেউ মারা যাননি। নিহতরা ছিলেন সেই মরু উপত্যকার পেশাদার যোদ্ধা; আর তাদের ভাগ্যে তাই ঘটেছিল যা সেই কিংবা এই সময়ে যা ঘটে তাই; অর্থাৎ বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি। তারা মুসলিমদের সাথে বেঈমানি করে, তাদের সাথে করা চুক্তির বরখেলাফ করেছিল। আর তাদেরকে এর আগে আরেকবার উহুদ যুদ্ধের পরপর চুক্তিভঙ্গের জন্যে মাফ করে দেয়া হয়েছিল। তারা নবগঠিত রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল এবং নতুন মুসলিমদের সেই ক্ষুদ্র দলকে সমূলে ধ্বংস করার জন্যে আরব আহযাব বাহিনীর সাথে যোগ দিয়েছিল। সেদিন যুদ্ধে মুসলিমরা পরাজিত হলে যে সবাইকেই এই পৃথিবী থেকে যে সরিয়ে ফেলা হতো এ নিয়ে কি কারুর মনে কোনো সন্দেহ আছে? যদি সন্দেহ না থাকে তবে স্বদেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা, রাজাকারী মনোভাবের কৃতঘ্ন কুরাইযা গোত্রের জন্যে এত মায়াকান্না করার মানে কী?
📖 তথ্যসূত্র:
১.
http://en.wikipedia.org/wiki/Timeline_of_antisemitism
২.
১.১ http://www.simpletoremember.com/articles/a/HistoryJewishPersecution/
৩. http://www.bibletopics.com/biblestudy/65.htm
৫. http://www.southerninstitute.info/holocaust_education/ds1.html
৬.http://www.adl.org/education/holocaust/holocaust_history.asp
৭. সিরাত ইবন ইসহাক
৮. কিতাবুস সিরাত –ওয়াকিদী
৯. তাবকাতে ইবন সায়াদ – ইবন সায়াদ
১০. তারিখ আল রাসুল ওয়া আল মুলক – ইবন জরীর তাবারী
১১. কাঞ্জুল উম্মাল – আলী ইবন আব্দ-আল-মালিক আল হিন্দী
১২. আল জামি আল কাবির – আস সয়ুতি
১৩. মোস্তফা চরিত – মাওলানা আকরম খাঁ
১৪. https://www.journals.uchicago.edu/doi/abs/10.1086/690757?journalCode=spc
১৫. https://www.britannica.com/topic/anti-Semitism/Nazi-anti-Semitism-and-the-Holocaust
✍️লিখেছেন - শাহবাজ নজরুল ইসলাম