প্রাকৃতিক নির্বাচন এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোন প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো জনগোষ্ঠীতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। এটি ডারউইনীয় বিবর্তনের অন্যতম চালিকাশক্তি।
দৈব ঘটনার সম্ভাবনা চেপে যাওয়া
জেনেটিক ড্রিফট
প্রাকৃতিক নির্বাচনকে গণিতের মত নির্দিষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয় যে, শক্তিশালী জীব টিকে থাকবে। কিন্তু এখানে আকস্মিক ঘটনাকে উপেক্ষা করা হয়। যেমন : হঠাৎ কোন দুরারোগ্য মহামারীর আগমন, অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে দীর্ঘ শীতকালীন শৈত্যপ্রবাহ কিংবা বর্ষায় সুবিস্স্তৃৃত ভয়ানক প্লাবন যা সেসব জীবকে বিলুপ্ত করে দেয়, যাদের আপাতদৃষ্টিতে সেই পরিবেশে টিকে থাকার কথা ছিল।
দৈব ঘটনা কিভাবে প্রাকৃতিক নির্বাচনে গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে, তার উদাহরণ হিসাবে আমি আকস্মিক মহামারী, অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে দীর্ঘ শৈত্যপ্রবাহের এবং কখনও কখনও হাতুড়ির আঘাত সহনশীল তেলাপোকার উদাহরণ দেই। এটা আরও ভাল করে বুঝতে হলে জেনেটিক ড্রিফট নিয়ে ধারণা পরিষ্কার হওয়া উচিত।
জেনেটিক ড্রিফটের একাডেমিক সংজ্ঞা বেশ বদহজম সৃৃষ্টিকারী বিষয়। আম জনতার জন্য এভাবে বলা যেতে পারে যে, কোন নির্দিষ্ট প্রজন্মে কিছু বিশেষ জিন ধারী জীবের সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে, মানে পূর্বপুরুষ তাদের অধিকাংশ সন্তানদের সংরক্ষণ করতে সফল হতে পারে। ফলশ্রুতিতে কিছু জিন প্রকৃৃতিতে সহজে সংরক্ষিত হয়, একারণে নয় যে সেগুলো উপযুক্ত বা fittest; একারণে যে, তারা সংখ্যায় বেশি।
এভাবে দৈব ঘটনা survival of the fittest তত্ত্বকে বিপদে ফেলতে পারে, যা প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্ব উপেক্ষা করে থাকে।
ফাউন্ডার ইফেক্ট
প্রাকৃতিক নির্বাচনে দৈব ঘটনার প্রভাব নিয়ে আলোচনা করতে গেলে একটি বিশেষ প্রকারের জেনেটিক ড্রিফট উল্লেখ করার মত, তা হল ফাউন্ডার ইফেক্ট।
কোন এক কারণে মূল পপুলেশন থেকে একটা দল অন্য অঞ্চলে গমন করায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জিনগত বৈচিত্র্য কমে আসে. পূর্বের আদি নিবাসে মূল জনগোষ্ঠী প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিলুপ্ত হতে পারে। আর অন্য অঞ্চলে চলে যাওয়া সাব-সেট টিকে থাকতে পারে। তাই অনেক ক্ষেত্রেই, survival of fittest নির্বাচিত হয় না। শুধু একটা নতুন সাব-সেট গঠিত হয়;
প্রাকৃতিক নির্বাচনের ফলে বৈচিত্র্য আসে?
প্রাকৃতিক নির্বাচন তখনই কাজ করতে পারে যখন জীবের বৈচিত্র্য পূর্ব থেকেই পপুলেশনে উপস্থিত থাকে। সুতরাং প্রাকৃতিক নির্বাচন বুঝতে গেলে 'বৈচিত্র্যের উদ্ভব' সংক্রান্ত জ্ঞান জানা থাকা জরুরি। কিন্তু বৈচিত্র্যের উদ্ভব নিয়ে যথেষ্ট জানা যায় নি। যদিও বঙ্গের অশিক্ষিত বিবর্তনবাদীরা শুধু তোতা পাখির মত 'মিউটেশন, মিউটেশন ' যিকির করে থাকে। যাইহোক, অদ্যাবধি বৈচিত্র্যের উদ্ভব নিয়ে উল্লেখযোগ্য যেসব কারণ জানা যায় তা হল- এপিজেনেটিক চেঞ্জ, developmental plasticity, এবং পরিবেশীয় প্রভাব।
যেমনঃ খরগোশের লোমের রঙের বৈচিত্র্য নব্য-ল্যামার্কীয় পদ্ধতিতে হয়, নয়া ডারউইনবাদ অনুযায়ী হয় না। উল্লেখ্য বিবর্তনবাদীরা পাঠ্যবইয়ে pigmentation-কে অভিযোজন না বলে বিবর্তনের প্রমাণ বলে হৈ চৈ করে থাকে
https://www.frontiersin.org/articles/10.3389/fgene.2020.603528/full
প্রাকৃতিক নির্বাচন ও গোষ্ঠী নির্বাচন
আত্মত্যাগ শুধু মানুষ নয়, বরং প্রাণীকুল ছাড়াও বৃৃক্ষকুলেও তা লক্ষ্য করা যায়। ডারউইনবাদীদের জন্য এটা খুব সমস্যা সৃৃষ্টি করে। কারণ, তত্ত্বানুসারে, জীব শুধু তার নিজস্ব জিন বংশগতিতে স্থান দেয়ার কথা ভাবে।
সমস্যার সমাধানের জন্য ডারউইনের কবরে লাথি দিয়ে 'গোষ্ঠী নির্বাচন' তত্ত্ব পেশ করা হয়, যেখানে দাবি করা হয় যে, পরস্পরের মধ্যে সহযোগিতামূলক আচরণ যে গোষ্ঠীর মধ্যে পাওয়া যায়, তারা টিকে থাকে, fittest টিকে থাকে না।
কিন্তু এই তত্ত্ব আসলে প্রাণীর আচরণের ব্যাখ্যা দিতে পারে না। কারণ মানুষের ক্ষেত্রে আমরা প্রায়শই দেখি, ব্যক্তি তার নিজ গোষ্ঠীর বাইরের স্যাম্পলের সদস্যকে সাহায্য করে।
দিন শেষে, আত্মত্যাগের বিষয়টি ডারউইনের বিরুদ্ধেই থেকে গেল।
জটিল বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব
মানুষের মস্তিষ্কের মত জটিল অঙ্গের উদ্ভব বিবর্তনীয় পদ্ধতিতে ব্যাখ্যা করা মুশকিল।