একজনের অপরাধের কারণে অন্য জনকে পাঁকড়াও করা যাবে কিনা?
أَلَّا تَزِرُ وَازِرَةٞ وِزۡرَ أُخۡرَىٰ ٣٨ ﴾ [النجم : ٣٨]
আল্লাহর কথা তা এই যে,
কোন বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না।1
দ্বারা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার প্রমাণ পেশ করা।
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: إِنَّ الْمَيِّتَ لَيُعَذَّبُ بِبُكَاءِ أَهْلِهِ عَلَيْهِ “নিশ্চয় মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবারের লোক জনের কান্নার কারণে শাস্তি দেওয়া হয়।”
প্রশ্ন: ইমাম বুখারী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করেন—রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ الْمَيِّتَ لَيُعَذَّبُ بِبُكَاءِ أَهْلِهِ عَلَيْهِ - “নিশ্চয় মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবারের লোক জনের কান্নার কারণে শাস্তি দেওয়া হয়। ”অপর একটি হাদীস আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, যা এ হাদীসটিকে প্রত্যাখ্যান করে যাতে তিনি বলেন, তোমাদের জন্য কুরআনই যথেষ্ট। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তা এই যে, কোন বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না।” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৩৮] উভয়ের মধ্যে যে বিরোধ পরিলক্ষিত, সে বিষয়ে আপনাদের উত্তর কি? মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবার পরিজনের কান্নার কারণে কি শাস্তি দেওয়া হবে? নাকি মানুষের জন্য তাই রয়েছে যা সে অর্জন করে। তা এই যে, কোন বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না।” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৩৮]।
উত্তর: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা যে আয়াত উল্লেখ করেছেন এবং উল্লিখিত হাদীসগুলোর মধ্যে কোন বিরোধ নেই। আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু মুগীরা রা. সহ অন্যান্যদের থেকেও সহীহ বুখারী ও মুসলিমে একই হাদীস বর্ণিত রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, إِنَّ الْمَيِّتَ لَيُعَذَّبُ بِمَا يُنَاحُ بِهِ عَلَيْهِ “মৃত ব্যক্তিকে তার ওপর উচ্চ আওয়াজে কান্না-কাটির কারণে শাস্তি দেওয়া হয়।” বুখারীর অপর একটি বর্ণনায় বর্ণিত, بِبُكَاءِ أَهْلِهِ عَلَيْهِ “তার ওপর তার পরিবারের কান্নার কারণে” নিয়াহা অর্থ উচ্চ আওয়াজ। কিন্তু চোখের পানি ফেলানোতে কোন ক্ষতি নেই। ক্ষতি হলো উচ্চ আওয়াজে কান্নাকাটি করাতে। আর উচ্চ আওয়াজে কান্নাকাটি করাকেই নিয়াহা বলা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ কথা দ্বারা উদ্দেশ্য মানুষকে মৃত ব্যক্তিদের জন্য উচ্চ আওয়াজে কান্নাকাটি করা থেকে বিরত রাখা এবং তারা যেন ধৈর্য অবলম্বন করে। তবে চোখের পানি বা অন্তরের ব্যথাতে কোন ক্ষতি নেই। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছেলে ইবরাহীম মারা গেলে তিনি বলেন, إِنَّ الْعَيْنَ تَدْمَعُ وَالْقَلْبَ يَحْزَنُ وَلَا نَقُولُ إِلَّا مَا يَرْضَى رَبُّنَا وَإِنَّا بِفِرَاقِكَ يَا إِبْرَاهِيمُ لَمَحْزُونُونَ “চোখ অশ্রু শিক্ত হয়, অন্তর ব্যথিত হয় আল্লাহ তা‘আলা যে কথায় খুশি হন সে কথাই বলব। হে ইব্রাহীম আমি তোমার বিচ্ছেদে অত্যন্ত ব্যথিত।”[1] সুতরাং, মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবারের উচ্চ আওয়াজে কান্নার কারণে শাস্তি দেওয়া হয়। কান্নাকাটি করার কারণে তার যে শাস্তি হয় তার ধরণ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলাই ভালো জানেন। বিষয়টি আল্লাহ তা‘আলার এ ﴿أَلَّا تَزِرُ وَازِرَةٞ وِزۡرَ أُخۡرَىٰ ٣٨﴾ [النجم : ٣٨] “তা এই যে, কোন বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না।” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৩৮] বিধান থেকে বাদ রাখা হয়েছে। কারণ, কুরআন ও সুন্নাহের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। বরং একটি অপরটির সত্যায়ন ও ব্যাখ্যা। আয়াতটি এখানে ব্যাপক আর হাদীসটি খাস। সুন্নাহ সাধারণত কুরআনের ব্যাখ্যা ও বর্ণনা হয়। সুতরাং পরিবারের লোকদের কান্নার কারণে মৃত ব্যক্তির শাস্তির আয়াত থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে আয়াতের মধ্যে এবং হাদীসগুলো মধ্যে কোন বিরোধ নেই। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কথাটি তার ইজতিহাদ ও গবেষণা এবং ভালো কর্মের প্রতি তার অধির আগ্রহ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা তার কথার ওপর এবং অন্যদের কথার ওপর অবশ্যই প্রাধান্য। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَا ٱخۡتَلَفۡتُمۡ فِيهِ مِن شَيۡءٖ فَحُكۡمُهُۥٓ إِلَى ٱللَّهِۚ ذَٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبِّي عَلَيۡهِ تَوَكَّلۡتُ وَإِلَيۡهِ أُنِيبُ ١٠﴾ [الشورى: ١٠] “আর যে কোন বিষয়েই তোমরা মতবিরোধ কর, তার ফয়সালা আল্লাহর কাছে; তিনিই আল্লাহ, আমার রব; তাঁরই উপর আমি তাওয়াক্কুল করেছি এবং আমি তাঁরই অভিমুখী হই।” [সূরা আশ-শুরা, আয়াত: ১০] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ ذَٰلِكَ خَيۡرٞ وَأَحۡسَنُ تَأۡوِيلًا ٥٩﴾ [النساء : ٥٩] “অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৫৯] একই অর্থে আরো অনেক আয়াত রয়েছে। আল্লাহই ভালো জানেন।
সৌদি গ্র্যান্ড মুফতি শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩০৩
- ⇧ সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৩৮