ইসলামে পুরুষদের চারটি বিবাহের অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে এ নিয়ে খ্রিস্টান প্রচারকদের অনেক কিছু বলতে দেখা যায়। কিন্তু তারা কি জানে তাদের বাইবেলে অনেক বহু বিবাহের ঘটনা উল্লেখ আছে। বাইবেলে বর্ণিত যারা বহু বিবাহ করেছিল,তাদের বিরুদ্ধে এইসব খ্রিস্টান প্রচারকরা আপত্তি করবে না।কিন্ত ইসলামে চারটি বিবাহের অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে তাদের মাথা ব্যথার শেষ নেই।প্রথমে আমরা ইসলামে চারটি বিবাহের অনুমতি প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করবো এবং শেষে বাইবেলে বর্ণিত বহু বিবাহ নিয়ে আলোচনা করবো। মহান আল্লাহ বলেন,
আর যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, ইয়াতীমদের ব্যাপারে তোমরা ইনসাফ করতে পারবে না, তাহলে তোমরা বিয়ে কর নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল লাগে; দু’টি, তিনটি অথবা চারটি। আর যদি ভয় কর যে, তোমরা সমান আচরণ করতে পারবে না, তবে একটি(বিবাহ করো)।[সূরা নিসা ৪/৩]
এখানে বলা হয়েছে কোন মুসলিম ইচ্ছা করলে চারটি বিবাহ করতে পারবে।তবে শর্ত হলো সকল স্ত্রীদের সাথে সমান আচরণ, সুবিচার করতে হবে।যদি সে স্ত্রীদের মাঝে সুবিচার করতে না পারে,তাহলে সে যেন একটি বিবাহ করে।হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন‘,
যে ব্যক্তির দুই স্ত্রী রয়েছে, সে যদি এদের মধ্যে ব্যবহারের ক্ষেত্রে পূর্ণ সমতা ও ইনসাফ করতে না পারে, তবে কিয়ামতের ময়দানে সে এমনভাবে উঠবে যে, তার শরীরের এক পার্শ্ব অবশ হয়ে থাকবে’। [আবু দাউদঃ ২১৩৩, তিরমিযীঃ ১১৪১, ইবন মাজাহঃ ১৯৬৯, আহমাদঃ ২/৪৭১]
এখানে বহু বিবাহের ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। ইসলাম চারটি বিবাহের অনুমতি প্রদান করেছে কিন্ত সে যদি চারজনের সঙ্গে সমান বিচার না করতে পারে তাহলে আল্লাহ তাকে একটি বিবাহ করার নির্দেশ দিয়েছেন।আপনি যদি দেখেন ইসলাম পূর্ব যুগে কারও কারও দশটি পর্যন্ত স্ত্রী থাকতো।আজ থেকে দেড়শো-দুইশো বছর আগে ভারতীয় উপমহাদেশে অমুসলিমরা অনেক বহু বিবাহ করতো এবং বাইবেল থেকেও অনেক বহু বিবাহের বর্ণনা পাওয়া যায়। ইসলাম এটাকে চারের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে। ইসলাম চারের অধিক বিবাহকে হারাম ঘোষণা করেছে।
বাইবেলে বর্ণিত বহু বিবাহ:
ইহুদি ও খ্রিস্টানদের প্রাণপুরুষ হলো রাজা দায়ূদ।মথির দেওয়া বংশতালিকা অনুযায়ী রাজা দায়ূদ ছিলেন যিশুর পূর্বপুরুষ (দেখুন: মথি ১/১-১৬)। বাইবেলের ভাষ্যে দায়ূদ ঈশ্বরের ঔরসজাত পুত্র, ঈশ্বরের প্রথম পুত্র ও ঈশ্বরের মাসীহ বা খৃস্ট। বাইবেলে উল্লেখ আছে,
আমি তাকে আমার প্রথম জাত সন্তান করবো। সে পৃথিবীর সব রাজাদের ওপরে মহারাজা হবে। (গীতসংহিতা ৮৯/২৭)। বিস্তারিত দেখুন গীতসংহিতা[ ৮৯/২০-২৭]।
ঈশ্বরের ঔরসজাত পুত্র, ঈশ্বরের প্রথম সন্তান রাজা দায়ূদের সাতজন স্ত্রী ছিলো।দায়ূদের সাত জন স্ত্রীর নাম হলো,
যিষ্রিযেলের অহীনোযম,যিহুদার কর্মিলের অবীগল,গশূরাজ তলময়ের কন্যা মাখা,হগীত,অবিটল,ইগ্লা,অম্মীয়েলের কন্যা বত্সেবা।
[দেখুন,১ বংশাবলি ৩/১-৫]
দায়ূদের স্ত্রীর সংখ্যা ১ বংশাবলি ৩/১-৫ পদ অনুযায়ী ৭ জন।কিন্ত দায়ূদ শৌলের কন্যা মিখলকে বিয়ে করেছিলো।এটা ধরলে তার স্ত্রী সংখ্যা হবে ৮জন।
দায়ূদ তাঁর লোকদের নিয়ে পলেষ্টীয়দের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গেলেন।তিনি 200 জন পলেষ্টীয়কে হত্যা করলেন। আর তাদের লিঙ্গত্বক শৌলকে উপহার দিলেন।তাঁকে রাজার জামাতা হবার জন্য, এই মূল্য দিতে হল।শৌলের কন্যা মীখলের সঙ্গে দাযূদের বিয়ে হয়ে গেল(১ শমূয়েল ১৮/২৭)।
তবে তার স্ত্রীদের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। কারণ বাইবেল বলছে, দায়ূদ জেরুশালেম শহরে অনেককে বিয়ে করেন এবং তাঁর বহু পুত্রকন্যা হয়(১ বংশাবলি ১৪/৩)।
শলোমনের এক হাজার স্ত্রী:
মথির দেওয়া বংশতালিকা অনুযায়ী শলোমন ছিলেন যিশুর পূর্বপুরুষ।এই শলোমনের এক হাজার স্ত্রী ছিলো। শলোমনের 700 জন স্ত্রী ছিল।এছাড়াও তাঁর 300 জন ক্রীতদাসী উপপত্নী ছিল(১ রাজাবলি ১১/৩)।
ইসহাকের পুত্র এষৌর চার জন স্ত্রী:
অব্রাহামের দুই পুত্রের নাম ইসহাক ও ইশ্মায়েল(১ বংশাবলি ১/২৮)। খ্রিস্টানরা ইশ্মায়েলের থেকেও ইসহাককে বেশি সম্মান করে, বেশি ভালোবাসে।এই ইসহাকের পুত্র এষৌর চার জন স্ত্রী ছিলো।
এষৌ কনান দেশের স্ত্রীলোককে বিয়ে করেন।এষৌর স্ত্রীরা ছিলেন: হিত্তীয় এলোনের কন্যা আদা, অনার কন্যা অহলীবামা, অনা ছিলেন হিব্বীয় সিবিয়োনের পৌত্রী এবং ইশ্মায়েলের কন্যা বাসমত্(আদিপুস্তক ৩৬/২-৩)।
এখানে এষৌ তার চাচাতো বোন বাসমত্কে বিবাহ করেছেন। এছাড়াও এষৌর স্ত্রী সংখ্যা ও তার স্ত্রীদের নাম নিয়ে বাইবেলে বৈপরীত্য এবং ভুল আছে। এখানে এষৌর স্ত্রীদের সংখ্যা তিন জন দেখানো হয়েছে।কিন্ত এখানে এষৌর আর একজন স্ত্রীর নাম মিসিং আছে। বাইবেলে উল্লেখ আছে,
এষৌর যখন 40 বছর বয়স হল তখন সে দুজন হিত্তীয় রমণীকে বিবাহ করল।একজন ছিল বেরির কন্যা য়িহূদীত্।অন্যজন ছিল এলনের কন্যা বাসমত্(আদিপুস্তক ২৬/৩৪)।
বাইবেলে আদিপুস্তক ৩৬/২-৩ পদে বেরির কন্যা যিহুদীত এর নাম মিসিং ছিলো।তাহলে এষৌর স্ত্রীর সংখ্যা দাঁড়ালো চারজন।এষৌর স্ত্রীদের নামে মারাত্বক ভুল এবং বৈপরীত্য আছে। এতক্ষণে হয়তো কোন পাঠক ধরে ফেলেছেন।এই বিষয়ে বলতে গেলে আলাদা একটি লেখার প্রয়োজন।আমি এখানে একটি বৈপরীত্য উল্লেখ করছি। এলোনের কন্যার নাম আদা নাকি বাসমত্?
এষৌর স্ত্রী ছিল হিত্তীয় এলোনের কন্যা আদা(আদিপুস্তক ৩৬/২)।
এষৌর স্ত্রী ছিল হিত্তীয় এলোনের কন্যা বাসমত্(আদিপুস্তক ২৬/৩৪)।
অবিয়র ১৪ জন স্ত্রী:
অবিয ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠেন।তিনি 14 জন মহিলাকে বিয়ে করেন আর তাঁর 22 জন পুত্র ও 16 জন কন্যা হয়েছিল(২ বংশাবলি ১৩/২১)।
যোয়াশের পুত্র যিরুব্বালের অনেকগুলো স্ত্রী:
২৯) যোয়াশের পুত্র যিরুব্বাল অতঃপর গিদিয়োন দেশে গেলেন।
৩০) তাঁর ছিল 70টি সন্তান, অনেকগুলি বিয়ে করেছিলেন বলেই তাঁর এতগুলো সন্তান।[বিচারকচরিত (Judges) ৮/২৯-৩০]
তার ৭০ টি সন্তান ছিলো। তাহলে তার কয়টি স্ত্রী ছিলো এখান থেকেই আন্দাজ লাগাতে পারেন। কম করে হলেও ১০ এর নিচে তো থাকার কথা নয়।
বাইবেলে উল্লেখ আছে,
যদি মনিব অন্য কোনও স্ত্রীলোককে বিয়ে করে তাহলে সে তার প্রথম স্ত্রীকে কম খাবার বা কম জামাকাপড় দিতে পারবে না।সে তার স্ত্রীর প্রতি বিবাহের অধিকার হিসেবে সব কর্তব্য করবে(যাত্রাপুস্তক ২১/১০)।
বাইবেলর এই ভার্স দিয়ে এটায় প্রমাণ হয় কেউ যদি বহু বিবাহ করে তবে সে যেন প্রত্যেক স্ত্রীদের সাথে সমান ব্যবহার করে।ঠিক এমনটাই ইসলামে বলা হয়েছে।তবে ইসলাম লাগাম ছাড়া বহু বিবাহকে নিষিদ্ধ করেছে। ইসলাম এটাকে চারের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে এবং এটাও বলা দিয়েছে যে,চারজনের সঙ্গে সমান আচরন,সমান বিচার করতে না পারলে একটি বিবাহ করতে।
তাহলে বাইবেল থেকেও প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে,সেই সময়ে অনেকে নিজের ইচ্ছামতো যতখুশি বহু বিবাহ করতো এবং খ্রিস্টান ধর্মেও বহু বিবাহ সম্পর্ণ অনুমোদিত।এরপরেও তারা ইসলাম নিয়ে সমালোচনা করবে কিন্তু বাইবেলে বর্ণিত এইসব মহাপুরুষদের বহু বিবাহ নিয়ে সমালোচনা করবে না।তাদের এই আচরণকে আপনি কি বলবেন?