নালন্দা’ শব্দটির অর্থ জ্ঞানের অনন্ত প্রবাহ। অন্য মতে নালন্দা” শব্দটির অর্থ “দানে অকৃপণ”।এমন সার্থক নামকরণ সত্যিই অভাবনীয় নালন্দার চিরপ্রবাহিত শিক্ষাদানের মাধ্যমে।
চীনা তীর্থযাত্রী ও সন্ন্যাসী হিউয়েন সাঙ নালন্দা নামের বিবিধ ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। তাঁর বিভিন্ন মতের একটি মত হল, এই নামটি স্থানীয় আম্রকুঞ্জের মধ্যবর্তী পুষ্করিণীতে বসবাসকারী একটি নাগের নাম থেকে উদ্ভুত। কিন্তু যে মতটি তিনি গ্রহণ করেছেন, সেটি হল,শাক্যমুনি বুদ্ধ একদা এখানে অবস্থান করে “অবিরত ভিক্ষাপ্রদান” করতেন; সেই থেকেই এই নামের উদ্ভব। অপর একটি মতে, বুদ্ধ শিষ্য সারিপুত্তর মৃত্যু হয়েছিল “নালক” নামে এক গ্রামে। কোনো কোনো গবেষক এই গ্রামটিকেই “নালন্দা” নামে অভিহিত করেন।
যদি কোনও দিন টাইম মেশিন আবিষ্কার হয়, তাহলে একবার হয়তো ঘুরে আসা যেত নালন্দা মহাবিহার। কিন্তু তা যখন নেই, মনে মনে ইতিহাসের পাতাকে স্পর্শ করে ঘুরেই আসা যায়। কল্পনার রাজ্যে ঝাঁপ দিন, এবং প্রত্যক্ষ করুন জমজমাট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যাকে বলা হত মহাবিহার। পড়ুয়া-শিক্ষকে গমগম করছে সর্বত্র।দরজা পেরিয়ে ভিতরে ঢুকে আসছেন এক চৈনিক ছাত্র। নাম তাঁর হিউয়েন সাং!
তাঁর এবং ইত - শিং- য়ের মতো চৈনিক পরিব্রাজকের লেখায় সেই কবেকার হারানো এক কালখণ্ডকে ফুটে উঠতে দেখেছি আমরা। আজ ভাবলে অবিশ্বাস্য লাগে, হাজার দশেক ছাত্র। দেড় হাজার (মতান্তরে ২ হাজার) শিক্ষক(?) চিন, জাপান, কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পারস্য, তুরস্ক, শ্রীলঙ্কার মতে নানা দেশ থেকেও মেধাবী পড়ুয়ারা ভিড় জমান সেখানে। তবে সুযোগ পাওয়া খুব সহজ ব্যাপার ছিল না। দিতে হত কঠোর পরীক্ষা। একেবারে মূল তোরণে উপস্থিত থাকতেন কোনও না কোনও শিক্ষক। নানা শাস্ত্র থেকে করা কঠিন প্রশ্নের মোকাবিলা করতে হত। বেশির ভাগই প্রত্যাখ্যাত হতেন। যাঁরা সুযোগ পেতেন, তাঁদের শ্রেষ্ঠত্ব ছিল তর্কাতীত। শিক্ষকরাও তেমন। এমনও শোনা যায় আর্যভটের মতো গণিতবিদ ছিলেন এখানকার অধ্যক্ষ(?) । বাসুবন্ধু, ধর্মপাল, নাগার্জুন, পদ্মসম্ভব, হিউয়েন সাংয়ের মতো নামও জড়িয়ে ছিল এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে।
বিভিন্ন ঐতিহাসিক উপাদানের ভিত্তি বিশ্লেষণ করে নালন্দার প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ-পঞ্চম শতাব্দী থেকে। তখন নালন্দা ছিল একটি সমৃদ্ধ শহর। কিন্তু নালন্দার অবস্থান নিয়ে ঐতিহাসিকেরা সহমত হতে পারেননি। বিভিন্ন তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে পার্ববর্তী অনেক স্থানের সঙ্গে নালন্দাকে সনাক্ত করেছেন ঐতিহাসিকেরা। কিন্তু এইসব তথ্য প্রমাণ থেকে নালন্দার সঠিক সনাক্তকরণ সহজসাধ্য নয়। কারণ অনেক তথ্যই পরস্পর বিরােধী। তবে পালিবৌদ্ধ সাহিত্য ও জৈন উপাদান থেকে নালন্দার যে বর্ণনা পাওয়া যায়, সে নালন্দা এবং বর্তমান নালন্দা মােটামুটিভাবে একই, যা কিনা বিহার রাজ্যের রাজগীর শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত।
বৌদ্ধ সংঘের সংস্কৃত বা পালি প্রতিশব্দ হল বিহার, যার প্রকৃত অর্থ বৌদ্ধ ভিদের আশ্রয়স্থল। এইসব বিহারের অনেকগুলি পরবর্তীকালে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল, তার মধ্যে কয়েকটি আবার বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়েছিল, যেমন নালন্দা। এই নালন্দার উল্লেখ পাওয়া যায় খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে। কারণ ফা-হিয়েন যখন নালন্দাতে আসেন, তখন সেখানে কোনাে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না।( বি এন মিশ্র, নালন্দা সাের্সের্স অ্যান্ড ব্যাক গ্রাউন্ড, খণ্ড-১, বি আর পাবলিশিং কর্পোরেশন, ১৯৯৮, পৃ. ১৮১)।
নালন্দা মহাবিহারের ব্যাপক উন্নতি লাভের কারণ ছিল, গুপ্তযুগে নালন্দা বিহার থেকে মহাবিহারে রূপান্তরিত হয়েছিল মূলত রাজকীয় অনুদানের দ্বারাই। আর কোনাে মহাবিহার নালন্দার মত রাজকীয় অনুদান পায়নি। কারণ নালন্দা ছিল বিশ্বমানের শিক্ষাক্ষেত্র। পাল রাজারাও ছিলেন নালন্দার পৃষ্ঠপােষক। পাল শাসনকালেই নালন্দা খ্যাতির চরম শিখরে পৌঁছেছিল। এই পাল রাজারা ছিলেন মহাযান বৌদ্ধধর্মের অনুসারী আর নালন্দা ছিল তাঁদের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র, যার ফলে তাঁরা মুক্তহস্তে নালন্দাতে দান করছিলেন। সেই সময় নালন্দাতে ভারতের বাইরের বিভিন্ন দেশ থেকেও শিক্ষার্থীরা আসতাে, যারা জ্ঞানার্জনের শেষে প্রচুর আর্থিক সাহায্য নালন্দাকে দিয়ে যেত—নালন্দার সমৃদ্ধির এটাও একটা অন্যতম প্রধান কারণ বলা যেতে পারে।
নালন্দা মহাবিহার এর স্থাপনা করা হয়েছিল গুপ্ত যুগে , গুপ্ত যুগে শুক্রাদিত্য উপাধি সম্পন্ন একজন সম্রাট নালন্দা মহাবিহার কে তৈরি করেন , তার নামের একটি সিল নালন্দা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে , অধিকাংশ ইতিহাসবিদদের মতে এই শুক্রাদিত্য হচ্ছেন গুপ্ত সম্রাট কুমারগুপ্ত । যাইহোক ৪২৭ খ্রিস্টাব্দে রাজা কুমারগুপ্তের পৃষ্ঠপোষকতায় বৌদ্ধ ভিক্ষুকরা নির্মাণ করেন এই শিক্ষাকেন্দ্র। বৌদ্ধ ধর্মের গবেষণা, ধর্মচর্চাই ছিল প্রধান। পাশাপাশি পড়ানো হত হিন্দু দর্শন, বেদ, ধর্মতত্ত্ব, যুক্তিবিদ্যা, চিকিৎসা বিজ্ঞান, ব্যকরণ, ভাষাতত্ত্ব, বিজ্ঞানের আরও বেশ কয়েকটি বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ চলত রাজ আনুকূল্যে। মেধা এবং একমাত্র মেধাই ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের চাবিকাঠি। এমনকী রাজপরিবারের সদস্যদের ক্ষেত্রেও কোনও রকম পক্ষপাতিত্বের সুযোগ ছিল না। পড়ার জন্য কোনও বেতন দিতে হত না পড়ুয়াদের। উলটে ২০০টি গ্রাম থেকে তাদের জন্য আসত দুধ, ঘি, চাল, মাখনের মতো নানা পুষ্টিকর খাদ্য।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম গর্ব ছিল এখানকার পাঠাগার। নাম ছিল ‘ধর্মগঞ্জ’। এখানে ছিল তিনটি অতিকায় বহুতলবিশিষ্ট ভবন। ভবনগুলির নাম ছিল ‘রত্নসাগর’ (যার অর্থ রত্নের মহাসাগর), ‘রত্নোদধি’ ( অর্থ রত্নের দই ভান্ডার) ও ‘রত্নরঞ্জক’ (যার অর্থ রত্নখচিত)। সব মিলিয়ে কত বই এখানে ছিল তা জানা না গেলেও লক্ষাধিক বই যে ছিল সে বিষয়ে নিশ্চিত ইতিহাসবিদরা। বলা হয়, উপনিষদের কয়েকটি অংশের আসল পাণ্ডুলিপি ছিল এখানে। ছিল প্রজ্ঞাপারমিতা সূত্রর মতো ধর্মগ্রন্থও। এমন কত! আর সেই সব অমূল্য সম্পদ শেষ পর্যন্ত গিলে খেয়েছিল উন্মত্ত অগ্নি । এবার সেকথায় আসা যাক।
নালন্দা ধ্বংসে বখতিয়ার খিলজি: ইতিহাস ও ঐতিহাসিক দের দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচনা:
ইতিহাসের অন্যতম একটি মুখরোচক বিষয় হচ্ছে বখতিয়ার খলজী নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। এই দাবির পক্ষে-বিপক্ষে অনেক বিতর্ক হয়েছে। সেইসঙ্গে এটা ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় এবং প্রতিষ্ঠিত যে মুসলিম সেনাপতি মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি নালন্দা ধ্বংস করার জন্য একমাত্র দায়ী ছিলেন। যাইহোক, নালন্দা ধ্বংস নিয়ে অসংখ্য ঐতিহাসিক নথি এবং বিবৃতি আমাদের মনে একাধিক প্রশ্নবোধক চিহ্ন রেখে যেতে বাধ্য
ড. দীনেশচন্দ্র সেন (১৮৬৬-১৯৩৯) ছোট-বড় ৬০টি গ্রন্থের জনক। ভূমিজ মনীষা বলতে যা বোঝায়, তার বেলায় তা যথার্থই বলা যায়। যে দায় ও দৃষ্টি নিয়ে প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা সমাজ ব্যবস্থার সাথে তিনি আমাদের পরিচিত করান, তার নজির বিরল। ১৮৯৬ সালে প্রকাশিত তার বঙ্গভাষা ও সাহিত্য আমাদের এই বিষয়ে আত্মপ্রত্যক্ষণের বিশ্বস্ত এক আয়না। এই লেখকের গুরুত্ববহ আরেক বই, প্রাচীন বাংলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান (১৯৪০)। এতে আমরা দেখি, মুসলিম-পূর্বকালে এ দেশে নিম্নশ্রেণীর মানুষের পাশাপাশি বৌদ্ধদের ভয়াবহ দুর্ভোগের চিত্র। ব্রাহ্মণ্যবাদীদের দুঃশাসন তাদের জীবনকে নরকতুল্য করে চলছিল। বিশেষত বৌদ্ধদের ওপর বয়ে যায় গণহত্যা ও বিনাশের কী ঝড়!
ড: দীনেশ চন্দ্র সেন লেখেন, কর্ণসুবর্ণের রাজা শশাঙ্কের (শাসন ৫৯০-৬২৫) আদেশ ছিল, সেতুবন্ধ হতে হিমগিরি পর্যন্ত যত বৌদ্ধ আছে বালক-বৃদ্ধ-নির্বিশেষে তাদের হত্যা করবে, যে না করবে তার মৃত্যুদণ্ড হবে।’ এভাবে বৌদ্ধদের ইতিহাস ও সংস্কৃতি উচ্ছেদের অভিযান চলে। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী (১৮৫৩-১৯৩১) দেখিয়েছেন, যে জনপদে (পূর্ববঙ্গে) এক কোটির অধিক বৌদ্ধ এবং ১১ হাজার ৫০০ ভিক্ষু বাস করত, সেখানে একখানা বৌদ্ধগ্রন্থ ৩০ বছরের চেষ্টায় পাওয়া যায় নাই।’ এর পাশাপাশি এখান থেকে তিনি বৌদ্ধাধিকারের চিহ্নমাত্র লোপ করতে সচেষ্ট ছিলেন।
শশাঙ্কের পর চার শ’ বছরের মতো পাল রাজত্ব জারি থাকে। এগারো শতকে আবার ক্ষমতায় আসে শশাঙ্কের পথিক সেনবংশ। গোঁড়া ব্রাহ্মণ্যবাদে বিশ্বাসী এবং এর কঠোর প্রয়োগে অনমনীয় ছিলেন তারা। অন্য ধর্মের প্রতি একবিন্দুও সহিষ্ণুতা ছিল না। গণমানুষের অর্থনৈতিক বিপন্নতা, ভয়াবহ বর্ণাশ্রম প্রথা, প্রশাসনের উচ্চতর হতে শুরু করে নিম্নতর পর্যন্ত ব্রাহ্মণ্য অনুশাসন চরমে উপনীত হলো। বৌদ্ধদের তখন করুণ অবস্থা। তাদেরকে হয় দেশত্যাগ করতে হচ্ছিল, নতুবা চরম দুর্যোগের মধ্যে কোনোক্রমে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হচ্ছিল। নারী ও নিম্নবর্গের মানুষ হারিয়েছিল মানুষের মর্যাদা।
অধ্যাপক নলিনী নাথ দাশগুপ্ত ও বৌদ্ধ ভিক্ষু সুনীথানন্দ দেখিয়েছেন, বৌদ্ধদের উপাসনালয় ও ঐতিহ্য বিনাশ চলছিল তুমুলভাবে। এমনকি তারা ‘বৌদ্ধদের ইতিহাসের উজ্জ্বলতম অধ্যায়কে এ দেশীয় ইতিহাসের পাতা থেকে চিরদিনের জন্য মুছে ফেলতে প্রয়াসী হয়েছিলেন’। এ অত্যাচার কী তীব্র আকার নেয় এবং বৌদ্ধজীবন কী ভয়াবহতায় উপনীত হয়, এর চিত্র দেখা যায় প্রাচীন ‘শঙ্কর বিজয়’ ও শূন্য পুরাণের মতো গ্রন্থে। সর্বনাশ সব দিকেই থাবা বসাচ্ছিল। সমাজ, সংস্কৃতি ছিল ভয়াবহতার হাতে বন্দী। এ পরিস্থিতিতে ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির (মৃত্যু-১২০৬) বঙ্গজয়।
ষষ্ঠ শতকের রাজা মিহিরকুল বৌদ্ধদের সহ্য করতে পারতেন না। তিনি যখন পাটলিপুত্র আক্রমণ করেন তখন সম্ভবত নালন্দা মহাবিহার ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
এইচ হিরাস এ বিষয়ে লিখেছেন ‘Nalanda University was not far from the capital, Pataliputra and its fame had also reached Mihirakula’s ears. The buildings of Nalanda were then probably destroyed for the first time, and its priests and students dispersed and perhaps killed.’ (এইচ হিরাস, দ্য রয়েল পেট্রনস্ অফ দ্য ইউনিভার্সিটি অফ নালন্দা, জার্নাল অফ দ্য বিহার অ্যান্ড উড়িষ্যা রিসার্চ সােসাইটি, পার্ট-১, খণ্ড-১৪, ১৯২৮, পৃ. ৮-৯)।
স্কন্দগুপ্ত ও তার পরবর্তীদের হাতে নালন্দা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল।
মিহিরকূলের পরবর্তীতে এই নালন্দা কে যিনি ধ্বংস করেন , তার নাম আমাদের অনেকের জন্যই অনেক বড় একটি আঘাত নিয়ে আসতে পারে , তিনি হচ্ছেন শ্রীগুপ্ত এর পরেই দ্বিতীয় বাঙালি এবং বাংলাদেশ এর ভুখন্ডের প্রথম স্বাধীন সম্রাট শশাঙ্ক ।
ঐতিহাসিক DD kosambi তার বইতে উল্লেখ করেছেন, সর্ব প্রথম এই মহাবিহার এর উপরে সত্যিকার এর হামলা আসে শশাঙ্ক নরেন্দ্রগুপ্ত এর দ্বারা , যিনি পশ্চিমবঙ্গ থেকে তার সেনাবাহিনী নিয়ে এসে , গাঙ্গেয় উপদ্বীপ এর এক বিস্তীর্ণ এলাকা অধিকার করেন , তার বৌদ্ধ বিদ্বেষ এতটাই তীব্র ছিল যে তিনি , বোধিবৃক্ষ কে উপড়ে নদীতে নিক্ষেপ করেন , বুদ্ধের পদচিহ্ন ধ্বংস করেন । নালন্দা এর প্রভূত ক্ষতি ধ্বংস করেন তিনি , এমনকি হিউয়েন সাঙ আসার পরেও নালন্দা নিজের দৈন্যদশা থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি ,শশাঙ্ক এর মৃত্যুর পরে এমনকি এই নালন্দা এর প্রধান মঠ টিকেও পরিপূর্ণ রূপে ধ্বংস করা হয় ৬৫৫ খ্রিস্টাব্দে “। বিনষ্ট করেন বুদ্ধের পদচিহ্ন। শশাঙ্কের বিনাশযজ্ঞের বিবরণ পাওয়া যায় চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙয়ের (৬০২-৬৬৪) সফরনামায়। বর্মন রাজবংশের রাজা জাতবর্মা সোমপুর মহাবিহার আক্রমণ করে ধ্বংস করেন। মঠাধ্যক্ষ্য করুণাশ্রী বা কক্ষণাশ্রী মিত্র কে হিন্দু রাজা ভোজবর্মার বেলাব লিপিতে রয়েছে যার বিবরণ। ( এপিগ্রাফিয়া ইন্ডিকা, খণ্ড-২১, বিপুলশ্রী মিত্রের নালন্দা তাম্রশাসন, পৃ. ৯৭ এবং এপিগ্রাফিয়া ইন্ডিকা, খণ্ড-২১, বিপুলশ্রী মিত্রের নালন্দা তাম্রশাসনের দ্বিতীয় পংক্তি দ্রষ্টব্য)।
বৌদ্ধ নিপীড়নের কিছু নমুনা প্রসঙ্গে বিখ্যাত সােমপুর মহাবিহার ধ্বংসের কথা অধ্যাপক নীহাররঞ্জন রায় এভাবে উল্লেখ করেছেন। “…ভারতীয় কোনও রাজা বা রাজবংশের পক্ষে পরধর্মবিরােধী হওয়া অস্বাভাবিক। এ যুক্তি অত্যন্ত আদর্শবাদী যুক্তি, বিজ্ঞানসম্মত যুক্তি তাে নয়ই। অন্যকাল এবং ভারতবর্ষের অন্য প্রান্তের বা দেশখণ্ডের দৃষ্টান্ত আলােচনা করিয়া লাভ নাই প্রাচীনকালের বাঙলাদেশের কথাই বলি। বঙ্গাল-দেশের সৈন্য-সামন্তরা কি সােমপুর মহাবিহারে আগুন লাগায় নাই? বর্মণ রাজবংশের জনৈক প্রধান রাজকর্মচারী ভট্টভবদেব কি বৌদ্ধ পাষন্ড বৈতালিকদের উপর জাতক্রোধ ছিলেন না? সেন-রাজ বল্লাল সেন কি নাস্তিকদের (বৌদ্ধ) পদোচ্ছেদের জন্যই কলিযুগে জন্মলাভ করেন নাই?” (নীহাররঞ্জন রায়, বাঙালির ইতিহাস আদি পর্ব পৃষ্ঠা. ৫০৬ ও পৃ. ৪১৯, ৩০২)।
শশাঙ্ক (সম্ভাব্য রাজত্ব ৫৯০-৬২৫ খ্রি.) এবং হর্ষবর্ধনের (৫৯০–৬৫৭) মধ্যকার দন্ধ এতটাই তিক্ত হয়ে উঠে যে, ব্রাহ্মণরা তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। আসলে তাঁদের মধ্যকার ঐ দ্বন্দ্ব নির্দেশ করে ঐ সময়কার বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণদের মধ্যে রাজনৈতিক ও ক্ষমতার লড়াই এবং এর ফলাফল হচ্ছে উত্তর ভারত থেকে বৌদ্ধদের গন বিতারন ও গনহত্যা।যাই হোক, হর্ষবর্ধন একবার এই হত্যা প্রচেষ্টা থেকে বেঁচে গেলেও পরবর্তিতে এক ব্রাহ্মণ গুপ্ত ঘাতকের হাতে তাঁর মৃত্যু হয়।
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেওয়ার সময় ভারতের পার্লামেন্টে ২০১৪ সালে কংগ্রেস সদস্য করণ সিং ও সিপিএম সদস্য সীতারাম ইয়েচুরির মধ্যে নালন্দার ধ্বংস নিয়ে তর্ক হয়। করণ সিং জোরগলায় দাবি করেন বখতিয়ার খিলজির হাতে বিশ্ববিদ্যালয়টি ধ্বংস হয়। তারপর থেকেই এই বিষয়টি জাতীয় চর্চায় ব্যাপকভাবে আসে ও তাতে নিজেদের পছন্দ মত রং লাগাতে শুরু করে কিছু সুযোগ সন্ধানী মানুষ !
এই সূত্র ধরেই বহুল প্রচলিতএই প্রশ্নটি আবার আলোচিত ও আলোকিত হতে থাকে যে, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংস কবে ও কিভাবে হয়?? এবং এ নিয়ে বিভিন্ন পণ্ডিতরা বিভিন্ন রকম উত্তর দিয়েছেন।
আমাদের আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া বিভাগ জানাচ্ছে, ১১৯০ খ্রিষ্টাব্দের পর বখতিয়ার নালন্দা আক্রমণ করেন।
স্যার উইলসলি হেগের মতে, বখতিয়ার ওদন্তপুরী আক্রমণ করেন ১১৯৩ সালে।
স্যার যদুনাথ সরকারের (১৮৭০-১৯৫৮) মতে, ১১৯৯ সালে।
অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস হয় ১১৯৩ সালে। কিন্তু তখনো খিলজির আগমনই ঘটেনি।নালন্দা এর ধ্বংস ১১৯৩ সালে, এই মহাধ্বংস যে ১১৯৩ সালেই সংগঠিত হয় সেটি নিয়ে এখন তেমন কোন বিতর্ক নেই । এই সর্বশেষ ধ্বংসের জন্য দায়ী করা হয় বখতিয়ার খিলজি কে , তবে এখানে একটি বড় ঝামেলা আছে , আর সেটি হচ্ছে , এটি যে বখতিয়ার মূলত ভারতে জীবিকার জন্য আসেন ১১৯৫ সনে , অর্থাৎ তার সময়কাল এর দুই বছর আগেই নালন্দা কিভাবে ধ্বংস প্রাপ্ত হয় ?? এই কথার প্রমাণস্বরূপ নিচে যদুনাথ সরকারের বই এর পাতার ছবি দেওয়া হল :যদুনাথ সরকার অবশ্য খিলজির আগমনকে ১২০৪ থেকে পিছিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন। তার মতে, খিলজি এসেছিলেন ১১৯৯ সালে। কিন্তু তাতেও ১১৯৩ সালে বহুল প্রচলিত তারিখে নালন্দা ধ্বংসের দায় তার ওপর চাপে না!
নালন্দা মহাবিহার নয়, ওদন্তপুর বা উদন্তপুরি মহাবিহার ধ্বংস করেছিলেন বখতিয়ার খলজি :
ওদন্তপুর বা উদন্তপুর ছিল একটি বৌদ্ধবিহার; পাল রাজা ধর্মপাল (৭৭০-৮১০) ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা। নালন্দা মহাবিহার থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে মগধে এর অবস্থান।
১.
একটি অসম্পূর্ণ বর্ণনার সঙ্গে বখতিয়ারের নামটি জড়িয়ে গোয়েবলসীয় স্টাইলে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। আলফ্রেড টেনিসনের ভাষায়ঃ
''a lie that is half-truth is the darkest of all lies'' উক্ত অসম্পূর্ণ বর্ণনাটির নাম তবকাত-ই-নাসিরি। লেখক- মিনহাজ-ই-সিরাজ। উনি কিন্তু নালন্দা ধ্বংসের সময় (১১৯৩) বিহারে ছিলেন না, বরং সেসময় মায়ের পেট থেকে জন্মলাভ করেছেন। জন্মানোর ৩৪ বছর পর উনি ভারতে আসেন এবং তারও পরে লোকমুখে প্রচলিত কথাকে নিজের বইতে লিপিবদ্ধ করেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, মিনহাজ উনার বইতে বখতিয়ারের কথা উল্লেখ করেছেন, কিন্তু নালন্দার কথাটি মোটেও উল্লেখ করেননি।
ঐতিহাসিক মিনহাজ উদ্দীন আবু ওমর বিন সিরাজউদ্দীন জুযানির, তবাকাত-ই-নাসিরিতে রয়েছে বখতিয়ারের সৈন্যদের ওদন্তপুরীর মঠে ভুলক্রমে আক্রমণের কথা। মিনহাজের ভাষ্য মতে, ২০০ সৈন্য নিয়ে বখতিয়ার বিহার দুর্গ আক্রমণ করেন। ওদন্তপুরীকে শত্রুদের সেনাশিবির মনে করেন। হামলায় বহু খুনোখুনি হয়। মূলত এটি সেনাশিবিরের মতোই ছিল। এর চার দিকে ছিল বেষ্টনী প্রাচীর। বিখ্যাত তিব্বতি ঐতিহাসিক লামা তারানাথ (১৫৭৫-১৬৩৪) লিখেছেন, সেন আমলে তুর্কি অভিযানের ভয়ে বৌদ্ধবিহারগুলোতে সুরক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হতো।
২. অধ্যাপক ও ঐতিহাসিক, ইরফান হাবিব উল্লেখ করেছেন যে ,বখতিয়ার উদন্তপুরী তে অভিযান চালান , যেটি বৌদ্ধ অথবা হিন্দুদের দ্বারা পরিচালিত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল ২, মূলত দুর্গের ন্যায় গঠন এর কারণেই সেটিকে তিনি ভুল করে দুর্গ মনে করে ফেলেছিলেন , সেই সময় অদন্তপুরী ছিল বিহার এর রাজধানী , প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় নালন্দা অপেক্ষা সেটি ছিল অনেক অনেক দূরে অবস্থিত , আর অদন্ত পুরী একেবারেই দুর্গের মত ছিল যেখানে নালন্দা বিন্দুমাত্র এরকম ছিল না , গঠনে । নিম্নের চিত্রতে এর গঠন দেখলেই আমরা বুঝতে পারব ।
৪. তবকাতের অনুবাদক আবুল কালাম জাকারিয়ার (১৯১৮-২০১৬) মতে, লড়াই সম্ভবত একপক্ষীয় ছিল না, এখানে প্রচণ্ড প্রতিরোধ হয়েছিল, এমন সম্ভাবনা রয়েছে।
৫. পণ্ডিত ও হরপ্পা সভ্যতার উৎখনন কারী প্রত্নতত্ত্ববিদ রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ও (১৮৮৫-১৯৩০) দিয়েছেন বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং সেনাদের যৌথ প্রতিরোধের বিবরণ। সেনারা চার দিক থেকে কোণঠাসা হয়ে এখানে এসে আশ্রয় নিয়ে থাকবে।
৬. পণ্ডিত কুলাচার্য জ্ঞানানশ্রী (Kulacharya Yanansri) তার ‘ভাদ্র কল্পদ্রুম’(Bhadra Kalpadrum) গ্রন্থে কি উল্লেখ করেছেন, “সেই সময়ে বৌদ্ধ এবং ব্রাহ্মণ দের মাঝে এতই বেশী মাত্রাতে দ্বন্দ্ব বিদ্যমান ছিল ,এছাড়াও বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা নিজেরাও এতই বেশী মাত্রাতে বিভক্ত ছিলেন নিজেদের মধ্যে যে তারা কোন একক সিদ্ধান্তে আসতে পারতেন না , যখন তারা তুর্কি দের কে এখানে হামলা করে সেন দের উচ্ছেদ করার পরিকল্পনা করেন , তখন লক্ষণ সেনও নদীয়া থেকে বখতিয়ার এর নজর অন্যদিকে সরিয়ে দেবার জন্য গুপ্তচর মারফত এটাই খবর পাঠান যে সেখানে একটি দুর্গ রয়েছে বৌদ্ধদের , যাতে বখতিয়ার নিজেই অন্তঃদ্বন্দ্ব এর মাঝে পড়ে যান , বখতিয়ার এই এলাকা একদম চিনতেন না , এই কারণেই তিনি জানতেন না,উদন্তপুরী একটি বৌদ্ধ বিহার , পরে সারিবদ্ধ বই দেখে তার এই মোহভঙ্গ ঘটে !
৭. দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর DN JHA তার রচিত , How History Was Unmade in Nalanda এর কিছু অংশ DN Jha তার লেখনি তেও এটি উল্লেখ করে দিয়েছেন“The above account mentions the fortress of Bihar as the target of Bakhtiyar’s attack. The fortified monastery which Bakhtiyar captured was, “known as Audand-Bihar or Odandapura-vihara” (Odantapuri in Biharsharif then known simply as Bihar). This is the view of many historians but, most importantly, of Jadunath Sarkar, the high priest of communal historiography in India (History of Begal, vol. 2, pp.3-4)
৮. ড. সুশীলা মণ্ডলের মতে, ‘ওদন্তপুর ছিল দুর্গম, সুরক্ষিত, শিখরস্থিত আশ্রম। এখানে স্বয়ং রাজা গোবিন্দপাল নিজের সৈন্যদের নিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন। ফলে বিহার জয়ের জন্য খিলজি রাজধানীর পরে এখানে আক্রমণ করেন। ফলে সৈন্যদের পাশাপাশি বৌদ্ধভিক্ষুরাও অস্ত্র ধারণ করেন। যুদ্ধে তারা পরাজিত হন এবং গোবিন্দ পাল দেব নিহত হন।’
প্রবল যুদ্ধ শেষে অতিকষ্টে পেছনের দ্বার দিয়ে অভ্যন্তরে ঢুকে বখতিয়ারের সৈন্যরা রক্তপাত করেন। এখানে বেশির ভাগ বাসিন্দা ছিল নেড়া মাথা। বখতিয়ার যখন দেখলেন, সেখানে প্রচুর বই এবং জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারলেন এটি দুর্গ নয়, তখন নিজেদের ভুল বুঝতে পারলেন।
৯. কোনো কোনো গবেষক দাবি করেছেন, সেন রাজাদের ব্রাহ্মণ্যবাদী গুপ্তচররা তুর্কি বাহিনীকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ওদন্তপুরীতে আক্রমণ করতে প্ররোচিত করে।
ড. দীনেশচন্দ্র সরকার (১৯০৭-১৯৮৪) দেখিয়েছেন, উদন্তপুর বৌদ্ধবিহার ধ্বংস হয় ১১৯৩ সালে। বিভিন্ন গবেষকের মতে ১১৯১-৯৩ সময়কালে। বলাবাহুল্য, বখতিয়ারের বঙ্গজয় এর পরের ঘটনা। বস্তুত ওদন্তপুরী আক্রমণও সংশয়পরিকীর্ণ। তা হলেও মিনহাজের ওদন্তপুরী মহাবিহার ধ্বংস কিন্তু নালন্দা ধ্বংসকে প্রমাণ করছে না।
ভারতের ইতিহাসে বিকৃত ইতিহাস রচনার প্রেক্ষাপট চিত্রিত করার প্রকৃত প্রক্রিয়া শুরু হয় উপনিবেশ আমলে ওরিয়েন্টালিস্ট হিস্টোরি স্কলারদের হাতে । ব্রিটিশ আমলে স্যার জন হুবার্ট মার্শাল (১৮৭৬-১৯৫৮)ছিলেন ভারতীয় আর্কিওলজিকাল সার্ভের প্রধান।১৯০২-৩১ সময়ে তাঁর নেতৃত্বে ভারতীয় মহাদেশে বেশ কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান হয়। ডক্টর ডি বি স্পুনার (D.B. Spooner) নালন্দা সংশ্লিষ্ট বিহার, টিলা,কলেজ ইত্যাদি খোঁড়াখুঁড়ি করেন। মিনহাজের বর্ণনা অনুসারে বখতিয়ার খলজি কর্তৃক ১১৯৯-১২০০ সালে উদন্তিপুর বিহার আক্রমন ও হত্যাকান্ডের ঘটনা তখন প্রায় সবার জানা।তাঁদের ঐ প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান নতুন কিছু আর খুঁজে না পেয়ে এবং সেখানে আগুনে পোড়ার চিহ্ন দেখে কোন ধরণের কার্বণ টেস্ট ছাড়াই উপসংহারে পৌঁছে যান যে নালন্দা ধ্বংসের ঘটনা তাহলে মুসলিম শাসক বখতিয়ার খলজির হাতেই ঘটেছে ১১৯৩ সালে।তাঁদের ধারণা যেহেতু নালন্দা উদন্তপুর থেকে বেশী দূরে নয়,সেহেতু এটা মুসলিম অভিযানের সময়ই ঘটে থাকবে।অথচ তাঁদের কাছে তিব্বতি স্কলার-মঙক ধর্মস্বামী’র বর্ণনা জানা ছিলনা কেননা সেটা আরো অনেক পরে আলোচনায় আসে।
ইখতিয়ার বিন বখতিয়ার খলজি, নালন্দা মহাবিহার ধ্বংসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, এর স্বপক্ষে বেশ কিছু প্রমাণ ও ঐতিহাসিক পর্যালোচনা ;
১. According to a Korean inscription dedicated to the fourteenth-century Indian monk Tinabotuo (Dinavati; also known as Chanxian [Dhyanabhadra] and Zhikong [Sunyadisya] ), wrote that, The Indian master was trained and ordained at Nalanda before he travelled to Beijing, the Mongol capital, in 1254. Nalanda seems to have continued to receive support in the thirteenth century from wealthy merchants and the Magadhan king Buddhasena, who had allied with the local Muslim rulers
২. ভারতীয় পণ্ডিত শরৎ চন্দ্র দাস তাঁর “চট্টগ্রামের প্রাচীনতা” ( Antiquity of Chitagong) গ্রন্থে বলেছেন যে বিহার, ওদন্তপুরী এবং বিক্রমশীলা 1202 খ্রিস্টাব্দে ধ্বংস হয়েছিল। তবে নালন্দার কোনো উল্লেখ ছিল না। ইতিহাসবিদ মিনহাজ-ই-সিরাজের বই "তাবাকাত-ই- নাসিরি"-তে বখতিয়ার খিলজির জীবনের সম্পূর্ণ বিবরণ থাকা সত্ত্বেও, নালন্দা ধ্বংসের কোনো উল্লেখ নেই।
৩. বাংলাদেশের ইতিহাস গ্রন্থে রমেশচন্দ্র মজুমদার (১৮৮৮-১৯৮০) ঠিকই লিখেছেন, খিলজির বাংলা জয় প্রশ্নে যত কাহিনী ও মতবাদ বাজারে চাউর আছে, সবই মিনহাজের ভাষ্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত। কারণ এ সম্পর্কে অন্য কোনো সমসাময়িক ঐতিহাসিক বিবরণ পাওয়া যায় নাই।’
বখতিয়ারের বাংলা জয়ের ৪০ বছর পরে মিনহাজুস সিরাজ বাংলা সফর করেন এবং এ সম্পর্কে প্রচলিত মৌখিক বক্তব্য ব্যক্তিগতভাবে সংগ্রহ করেন। ( তিনি তো নিজের চোখে ধ্বংসকে প্রত্যক্ষন করেননি, জনগণের মুখ থেকে শুনে লেখার উপর এতটা বিশ্বাস কিভাবে আসে?? )
৪. রিচার্ড এম ইটন (১৯৬১-২০১৩) লেখেন, ১২০৪ সালে মুহাম্মাদ বখতিয়ারের সেন রাজধানী দখলের প্রায় সমসাময়িক একমাত্র বর্ণনা হচ্ছে মিনহাজের তবকাত-ই নাসিরি।
'বাংলার ইতিহাস' গ্রন্থে সুখময় মুখোপাধ্যায়, "বাংলার ইতিহাস: সুলতানি আমল "গ্রন্থে ড. আবদুল করিম (১৮৭১-১৯৫৩), "বাংলাদেশের ইতিহাস" গ্রন্থে রমেশচন্দ্র মজুমদার দেখান, তবকাত ই নাসিরি তে, নালন্দা অভিযানের কোনো বিবরণ নেই, বখতিয়ার আদৌ নালন্দায় অভিযান করেননি। বস্তুত কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানেও বখতিয়ারের নালন্দা আক্রমণের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
৫. তবকাতের পরের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসগ্রন্থ হচ্ছে, আবদুল মালিক ইসামি রচিত ফুতুহ-উস-সালাতিন ও হাসান নিজামি (১৮৭৩-১৯৫৫) রচিত তাজ-উল-মাসির। এতেও নালন্দা অভিযানের কোনো উল্লেখ নেই। পরবর্তী ঐতিহাসিক গোলাম হোসেন সলিম (মৃত্যু-১৮১৭) কিংবা চার্লস স্টুয়ার্টও (মৃত্যু-১৮৮৮) নালন্দা অভিযানের কোনো সূত্র খুঁজে পাননি।
৬. The teaching of Buddhist doctrines at Nalanda lingered on even after the invasion of Islamic forces in the twelfth century. The Tibetan monk Dharma Svamin (Chag Chosrjedpal, 1194-1264), for example, points out the declining state of the monastic institution in 1235. However, he was still able to spend several months studying Buddhist philosophy under the monk Rahulasri bhadra at the Monastery. (জি রােয়েরিখ সম্পাদিত, বায়ােগ্রাফি অফ ধর্মস্বামী, কে পি জয়সওয়াল রিসার্চ ইনস্টিটিউট, পাটনা, ১৯৫৮, পৃ. ৬৪, ৯০-৯৩ )।
৭. For instance, a valuable Tibetan book, “Paksum Yen Jang” states that aggressive Hindu Brahms were responsible for the destruction of Nalanda. (বি এন এস যাদব, সােসাইটি অ্যান্ড কালচার ইন নর্দার্ন ইন্ডিয়া ইন দ্য টুয়েলভথ সেঞ্চুরি, এলাহাবাদ, ১৯৭৩, পৃ. ৩৪৬)
৮. On another account, D.R. Patil States that,the libraries were burned by people of Shoibo community. (ডি আর পাতিল, অ্যান্টিকোয়ারিয়ান রিমেইন অফ বিহার, পাটনা, ১৯৬৩, পৃ.৩০৪) এই মতের উপর ভিত্তি করে দীর্ঘ আলােচনা করেছেন আর এস শর্মা এবং কে এম শ্রীমালি। (আর এস শর্মা ও কে এম শ্রীমালি, এ কমপ্রিহেনসিভ হিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়া, খণ্ড৪, ভাগ-২ (৯৮৫-১২০৬), অধ্যায় ২৫-খ বৌদ্ধধর্ম, টীকা, পৃ. ৭৯-৮২)।
৯.গবেষক আবদুর রহমান দেখিয়েছেন, নালন্দা ধ্বংস আসলে হিন্দু-বৌদ্ধ সঙ্ঘাতের ফসল। তিনি দেখান, হিন্দু প্রচারক ও দার্শনিক শঙ্করাচার্যের (৭৮৮-৮২০) প্রচেষ্টায় বৌদ্ধধর্মের প্রভাব ক্ষয় হয়। ১২ বছর ধরে সূর্যের তপস্যা করে যজ্ঞাগ্নি নিয়ে নালন্দার প্রসিদ্ধ গ্রন্থাগারে এবং বৌদ্ধবিহারগুলোতে অগ্নিসংযোগ করেন ব্রাহ্মণ্যবাদীরা। ফলে নালন্দা অগ্নিসাৎ হয়ে যায়। যদিও এ ঘটনায় অনেকটা অলৌকিকত্তের ছোঁয়া রয়েছে তবুও হিন্দু বৌদ্ধ সংঘাত এর আশঙ্কা কে একদম উড়িয়ে দেওয়া ও যায় না তৎকালীন সামাজিক প্রেক্ষাপটে। ( বুদ্ধগয়া গয়া-দর্শন রাজগীর নালন্দা পর্যটক সহায়ক পুস্তিকা, পৃ. ১৬-১৭, এবং আমীর হােসেন এর লেখা বাঙালীর বিভাজন, অনুষ্টুপ, বিশেষ শীতকালীন সংখ্যা ১৪০৮, কলকাতা )
১০. Surprisingly, philosopher & writer Bhupendranath Datta admit that , Brahmins were behind the attack on Nalanda. In his book ‘History of Bengal’, he claims that the libraries were destroyed not once but multiple times. ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত (১৮৮০-১৯৬১) তার বাংলার ইতিহাস গ্রন্থে নালন্দা ধ্বংসের জন্য ব্রাহ্মণ্যবাদীদের দায়ী করেন। (ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, বাঙ্গলার ইতিহাস, চিরায়ত প্রকাশন, প্রথম পরিমার্জিত সংস্করণ, কলকাতা, ২০১৪, পৃ. ৮৬।)
১১. Although the accusations made against Bakhtiyar Khilji stand strong, several prominent historical books have entire stories to tell. In the book ‘Aspects of Indian History and Civilization’, writer Buddha Prakash clearly stated that “Hindus were solely responsible for Nalanda destruction”. (বুদ্ধপ্রকাশ তার ‘আসপেক্টস অব ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি অ্যান্ড সিভিলাইজেশন’ গ্রন্থে এমন মতামতের পক্ষে জোরালো বয়ান হাজির করেন।)
১২ . বাংলাদেশের অন্যতম ইতিহাসবিদ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আব্দুল করিম মহাশয় ও নালন্দা ধ্বংসের জন্য মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজির বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং দাবি করেছেন যে , নালন্দার পতনের পেছনে খিলজির কোনো ভূমিকা ছিল না। গবেষক ডঃ আব্দুল করিম এবং শঙ্খ মুখোপাধ্যায় তাদের নিজ নিজ গবেষনা পত্র ও বই লেখার জন্য ‘(বাংলার ইতিহাস: ও সুলতানী আমল’ এবং ‘বাংলার ইতিহাস’) বক্তিয়ার খিলজির উপর ব্যাপক ও গভীর গবেষণা করেছেন। যাইহোক, এই বইগুলির কোনটিতেই নালন্দা ধ্বংসের জন্য বখতিয়ার খিলজিকে দায়ী করার বিষয়ে কিছু বলার নেই।
১৩. Altshuler University এর রিলিজিয়াস স্টাডিসের প্রফেসর Johan Elverskog তাঁর Buddhism and Islam on the Silk Road বইয়ে তিনি বৌদ্ধদের সাথে মুসলমানদের সম্পর্কের কথা তুলে ধরে বলেন; “not only did local Buddhist rulers make deals with the new Muslim overlords and thus stay in power, but Nalanda also continued as a functioning institution of buddhist education well into the thirteenth century. One Indian master, for example, was trained and ordained at Nalanda before he travelled to the court of Khubilai Khan. We also know that Chinease monks continued to travel to India and obtain Buddhist texts in the late fourteenth century” (Johan Elverskog, Buddhism and Islam on the Silk Road, Philadelphia: University of Pennsylvania Press, 2010. pp. 1-3). তাঁর মানে হচ্ছে, বখতিয়ার খলজির তথাকথিত (?) অভিজানের প্রায় ১০০ বছর পরও নালন্দা সচল ছিল।
১৪. হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর টিরহুতের রাজা অর্জুন (চীনা সোর্সে/ সাহিত্যে তাকে, A-lo-na-shun নামেও দেখা যায়)সিংহাসন দখল করে যে কিনা হর্ষবর্ধনের সাথে একটি নিরাপত্তা চুক্তিতে ছিল বা বলা হয়ে থাকে সে তাঁর প্রতিরক্ষার দায়িত্বে ছিল। ঐতিহাসিক হেন্স বাকের তাকে চিত্রিত করেছেন হর্ষবর্ধনের অধিনস্ত হিসেবে(Hans Bakker, The World of the Skandapurāṇa, BRILL, 2014, P,128)। তার সিংহাসনে আরোহন করার পর ব্রাহ্মণ্যবাদের তীব্র আক্রমণ শুরু হয় বৌদ্ধদের প্রতি। এই আক্রমণের চরম পর্যায়ে একদল ব্রাহ্মণ্যবাদী দুর্বৃত্তের নেতৃত্বে নালন্দায় আক্রমণ হয় এবং সেটা আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়।(D.D. Kosambi, The Culture and Civilisation of Ancient India in Historical Outline, Lahore 1991:180)। এটা হচ্ছে নালন্দা ধ্বংসের মূল ঘটনা। তবে এটি সে সময় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়নি। অর্জুন কর্তৃক চীনা প্রতিনিধি ওয়াং হিউয়েন টিসি (Wang Hiuen Tsee)কে আক্রমণ করা হলে তিনি নেপালে পালিয়ে যান ( (S.N. Sen, Ancient Indian History and Civilization, New Age International, 1999:261)।এরপর নেপালের রাজা অর্জুনকে আক্রমণ করে গ্রেফতার করে চীনে পাঠিয়ে দেন।
পরবর্তিতে নেপালের রাজার সহযোগিতায় নালন্দা মেরামত করা হয় এবং প্রায় ১৩০০ সাল পর্যন্ত চালু থাকে।এরপর নেপালের রাজা অর্জুনকে আক্রমণ করে গ্রেফতার করে চীনে পাঠিয়ে দেন। পরবর্তিতে নেপালের রাজার সহযোগিতায় নালন্দা মেরামত করা হয় এবং প্রায় ১৩০০ সাল পর্যন্ত চালু থাকে। ১৩০০ সালের পর কিভাবে চালু থাকা নালন্দা ধ্বংস হয়ে গেল? এর কনক্রিট উত্তর দিয়েছেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর DN JHA। তিনি লিখেন যে; ব্রাহ্মন্যবাদ ও বৌদ্ধদের মধ্যকার চলতে থাকা আঘাত-প্রতিঘাতে নালন্দা ধ্বংস হয়।এই ক্ষেত্রে প্রফেসর অনেকগুলো তিব্বতি রেফারেন্সও দিয়েছেন।
১৫.এতদ্ব্যতীত তৎকালীন বাংলার সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা করা বিভিন্ন পন্ডিত ঐতিহাসিক যেমন, মুয়াররিখ গোলাম হোসেন সলিম, চার্লস স্টুয়ার্ট, ড. এম আবদুল কাদের, ড. এম এ রহীম, ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ, সৈয়দ মাহমুদুল হাসান, আবদুল জব্বার, মোহাম্মাদ হান্নান, মোহাম্মাদ আবদুল মান্নান, সরকার শাহাবুদ্দিন আহমেদ, ড. মোহাম্মদ আবদুর রহিম, মোহর আলী, ড. মমিন চৌধুরী, ড. এ বি এম মাহমুদ, ড. সিরাজুল ইসলাম, সিরাজ উদদীন আহমদ, ড. কে এম মোহসীন, ড. আসকার ইবনে শাইখ, ড. এম এ আজিজ, এম আর আখতার মুকুল, জাতীয় অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান প্রমুখ গবেষক বা ঐতিহাসিকরাও কেউ বখতিয়ারের নালন্দা অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করেননি।
এবার, দীনেশচন্দ্র সেনের কাছে ফেরা যাক। তিনি বৌদ্ধদের প্রতি হিন্দুদের অত্যাচারের আলোচনা করেছেন বিস্তর। তার বৃহৎবঙ্গ এর প্রথম খণ্ডে রয়েছে এর মর্মান্তিক ধারাবিবরণী। তার মতে, হিন্দুরা শুধু বৌদ্ধদের অত্যাচার ও তাদের ধর্ম নষ্ট করে ক্ষান্ত হননি, তারা এতকালের সঞ্চিত বৌদ্ধ ভাণ্ডারের সর্বৈব লুণ্ঠন করে লুণ্ঠিত দ্রব্যাদির ওপর স্বীয় নামাঙ্কের ছাপ দিয়ে সামগ্রিকভাবে সর্ববিধ নিজস্ব করে নিয়েছেন। হিন্দুদের পরবর্তী ন্যায়, দর্শন, ধর্মশাস্ত্র প্রভৃতির মধ্যে এ লুণ্ঠন পরিচয় পাওয়া যায়। ভিক্ষু সুনীথানন্দের মতে, এভাবে হিন্দু কর্তৃক বৌদ্ধধর্মের ঐতিহ্যময় ইতিহাস বিলোপপ্রাপ্ত হয়েছে। ‘বাংলাদেশের বৌদ্ধবিহার ও ভিক্ষু জীবন‘ গ্রন্থে ভিক্ষু দাবি করেন, এর জন্য হিন্দুরাই একমাত্র দায়ী।
স্যার মানবেন্দ্র নাথ রায় (১৮৮৭-১৯৫৬), তিনি লিখেন, ‘ব্রাহ্মণ্য প্রতিক্রিয়ায় বৌদ্ধ-বিপ্লব যখন পর্যুদস্ত হয়ে গেল আর তাতেই হলো ভারতের সমাজে বিশঙ্খলার উৎপত্তি; তখন অগণিত জনসাধারণ তা থেকে স্বস্তি ও মুক্তির নিঃশ্বাস ফেলে বাঁচার জন্য ইসলামের বার্তাকেই জানাল সাদর সম্ভাষণ। ‘
লেখক আর্নেস্ট হ্যাভেলকেও (১৮৬১-১৯৩৪) তাই ‘দ্য হিস্ট্রি অব এরিয়ান রুল ইন ইন্ডিয়া’ গ্রন্থে স্বীকার করতে হয়েছিল, ‘মুসলমান রাজনৈতিক মতবাদ শুদ্রকে দিয়েছে মুক্ত মানুষের অধিকার, আর ব্রাহ্মণদের উপরেও প্রভুত্ব করার ক্ষমতা। ইউরোপের পুনর্জাগরণের মতো চিন্তাজগতে এ-ও তুলেছে তরঙ্গাভিঘাত, জন্ম দিয়েছে অগণিত দৃঢ় মানুষের আর অনেক অত্যদ্ভুত মৌলিক প্রতিভার। পুনর্জাগরণের মতোই এ-ও ছিল আসলে এক প্রৌঢ় আদর্শ।... এরই ফলে গড়ে উঠল বাঁচার আনন্দে পরিপূর্ণ এক বিরাট মানবতা। ‘সেই মানবতার দ্বার উন্মোচনে বখতিয়ার খিলজি র বঙ্গজয় ছিল প্রশ্নহীন এক মাইলফলক। বৌদ্ধদের জন্য সেটি ছিল অনেক বেশি গ্লানিমুক্তি। অনেকটা নবজীবন। মুসলিম বিজয় তাদের কোনো কিছু ধ্বংস করেনি, বিপন্ন করেনি তাদেরকে। বরং খুলে দিয়েছে মুক্তির সদরদরজা।
ড: দীনেশচন্দ্র সেনের ভাষায়, ‘মুসলমানগণ কর্তৃক বঙ্গবিজয়কে বৌদ্ধরা ভগবানের দানরূপে মেনে নিয়েছিল।’ নালন্দার ধ্বংস মুসলিমদের হাতে হলে মুসলিম বিজয়কে কেন বৌদ্ধরা ভগবানের দান মনে করবেন ??
তৎকালীন বাংলা সমাজ পরিস্থিতিতে ইতিহাস রচনা নিয়েব্রিটিশ ঐতিহাসিক এফ বি ব্রাডলি বার্ট বলেন, ‘প্রাচীন ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের মতো পূর্ব বাংলার প্রাথমিক যুগও রহস্যের দুর্ভেদ্য অবগুণ্ঠনে আবৃত। মুসলিম অভিযানের পূর্ববর্তী সময়ের যা কিছু জানা যায়, তা উপখ্যান ও লোককাহিনী মাত্র। মুসলমানদের আগে এ দেশে বৌদ্ধ এবং হিন্দুরা বাস করত। তারা ইতিহাস লিখতে জানত না। বংশপঞ্জি সঙ্কলনের মধ্যেই তাদের সাহিত্য-নৈপুণ্য সীমাবদ্ধ ছিল বলে মনে হয়। দেশের স্মরণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি তারা লিপিবদ্ধ করত না।— কেউ যদি তা করত (ইতিহাস রচনা), তবে নিশ্চয়ই তার লিখিত কাগজপত্রসুদ্ধ তাকে পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হতো (এফ বি ব্রাডলি বার্ট : প্রাচ্যের রহস্য নগরী, পৃ-১৭-১৮)।
এই কারণেই, আধুনিক বিদ্বানদের বৌদ্ধ বিহারগুলিতে মুসলিম আক্রমণ নিয়ে আধুনিক বিশ্বাস প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক মার্শাল হজসনের বক্তব্য পূর্ণতঃ সত্য হিসেবে প্রতিভাত হয়: “The record of the massacre of one monastery in Bengal, combined with the inherited Christian conception of Muslims as devotees of the sword, has yielded the widely repeated statement that the Muslims violently ‘destroyed’ Buddhism in India. Muslims were not friendly to it, but there is no evidence that they simply killed off all the Buddhists, or even all the Buddhist monks. It will take much active revision before such assessments of the role of Islam, based largely on unexamined preconceptions, are eliminated even from educated mentalities.
পরিশেষে নালন্দায় ধর্মীয় (?) বিজয় সফল হলেও লজ্জিত হয় মানবতা, পরাজিত হয় সভ্যতা, শৃঙ্খলিত হয় শিক্ষা। এভাবে উগ্র ধর্মীয় উন্মাদনা, আক্রোশ, বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে পৃথিবী থেকে বিলুপ্তি ঘটিয়েছিল ধর্মান্ধরা কয়েকশ বছর ধরে মানব সভ্যতাকে আলোর পথ দেখানো মানুষ গড়া্র এই কারখানাটিকে।
( বি: দ্র: - যেকোনো ধরনের গঠনমূলক সমালোচনা কে স্বাগত, এবং লিখিত ও প্রদত্ত তথ্যে কোন ভুল থাকলে তা প্রমাণসহ জানাবেন ! )
তথ্যসূত্র / রেফারেন্স:
- বাঙালির ইতিহাসঃ আদিপর্ব নীহারঞ্জন রায়।
- নালন্দার শেষ অধ্যায় – বিভ্রান্তি ও বাস্তবতা - ইতিহাস আড্ডা।
- Anant Sadashiv (1965) on Nalanda editorial.
- Education in Ancient India. Nand Kishore. ISBN 8182054923.3Ghosh, Amalananda (1965).
- গোপাল হালদার: সংস্কৃতির রূপান্তর, পুথিঘর, ২২ নং লর্ড কর্ণওয়ালিস ষ্ট্রীট, কলিকাতা, পশ্চিমবঙ্গ
- A Guide to Nalanda (5 ed.). New Delhi: The Archaeological Survey of India. Chandra, Satish (2004).
- ভারতে বৌদ্ধধর্মের উত্থান পতন -- রাহুল সাংকৃত্যায়ন।
- Volume 1 of Medieval India: From Sultanat to the Mughals. Har-Anand Publications. ISBN 8124110646.
- বখতিয়ার খলজিঃ নালন্দা কি তিনি সত্যি ধ্বংস করেছিলেন?
- Foreign Influence on Ancient India By Krishna Chandra Sagar.
- DD Kosambi The Culture and Civilisation of Ancient India in Historical Outline.
- বখতিয়ার খলজির ধ্বস্ত মহাবিহার - নালন্দা না ওদন্তপুরী? - বিশ্ব ইতিহাস।
- Chandra, Satish (2004).
- গোলাম হোসায়ন সলীম: বাংলার ইতিহাস (রিয়াজ-উস-সালাতীনের বাংলা অনুবাদ), আকবরউদ্দীন কর্তৃক অনুবাদিত, অবসর প্রকাশন, ফেব্রুয়ারি ২০০৮।
- The History of Bengal muslim period sir Jadunath Sarker.(vol2)page2-3
- বখতিয়ার খলজীর কাহিনী ও নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংসে তার সম্পৃক্ততার ব্যবচ্ছেদ - ইতিবৃত্ত।
- নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়, ইতিহাসের রাজনীতি ও বখতিয়ার খলজির বিহার অভিযান।
- How History Was Unmade At Nalanda! D N Jha
- Tabaqat-I-nasiri
- ভিক্ষু সুনীথানন্দ: বাংলাদেশের বৌদ্ধ বিহার ও ভিক্ষু জীবন, বাংলা একাডেমি ঢাকা, জুন ১৯৯৫।
- I. Habib, Medieval India 1, Delhi, 1992.
- নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় বখতিয়ার খলজি ধ্বংস করেননিঃ ঐতিহাসিক পর্যালোচনা।
- The History of Bengal muslim period sir Jadunath Sarker.(vol2)page2-3.
- বাংলার ইতিহাস , সিরাজুল ইসলাম।
- BIOGRAPHY ” f OF DHAR~[ASV AMIN (Chag 10 tsa-ba Chos-rjc-dpal)
A TIBETAN l\iONI{ PILGRIM. - বখতিয়ার খিলজি ও নালন্দার সত্য-মিথ্যা
- Journal of Varendra Research Society, 1940 cited in A. Mu’min Chowdhury, The Rise and Fall of Buddhism in South Asia, London: London Institute of South Asia, 2000.
- সুরজিৎ দাশগুপ্ত: ভারতবর্ষ ও ইসলাম, সাহিত্য প্রকাশ, ৮৭ পুরানা পল্টন লাইন, ঢাকা ১০০০, প্রথম বাংলাদেশ মুদ্রণ, ফেব্রুয়ারি ২০১৪
। - Rc Mojumdar History Of Bengal.
- আবদুল করিম: বাংলার ইতিহাস মুসলিম বিজয় থেকে সিপাহী বিপ্লব পর্যন্ত (১২০০-১৮৫৭), বড়াল প্রকাশনী, বাংলাবাজার ঢাকা ১১০০, আগস্ট ১৯৯৯
- তাবাকাত-ই-নাসিরি -- মিনহাজ-ই-সিরাজ (অনুবাদ : আবুল কালাম মোহাম্মদ জাকারিয়া)।