আমরা মুসলিম। যেহেতু আমরা মুসলিম, তাই মহান আল্লাহর নির্দেশনাও মানতে বাধ্য। কেননা তিনিই তো আমাদের স্রস্টা। আর যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, তিনি অপেক্ষা মানব জাতির প্রতিটি ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যাবলি সম্পর্কে আর কেই বা ভাল জানে। কাজেই তিনি যেখানে মানবজাতির জীবন চলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করে রেখেছেন, অনুরূপ কিভাবে এই সমস্যা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব সেই উপায় পর্যন্ত বলে দিয়েছেন। am I right? Of course.
•
বর্তমান সমাজ কি বলে, তা আমাদের দেখার বিষয় নয়, কারণ সমাজ আমাদের সৃষ্টি করে নাই, বরঞ্চ আমরাই সমাজকে সৃষ্টি করেছি। সুতরাং মহান আল্লাহ্ কিভাবে সমাধান দিয়েছেন, সেটাই আমাদের কাছে মূখ্য বিষয়। কিন্তু আমরা আল্লাহর নির্দেশকে পেছনে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে সমাজকেই বড় করে দেখি অর্থাৎ এর দ্বারা পক্ষান্তরে এটাই বোঝানো হয় যে- সমাজের কাছে আল্লাহর নির্দেশিত বাণী একেবারেই তুচ্ছ। নাউযুবিল্লাহি মিনজালিক। আর এরই ফলস্বরূপ সমাজের এত অধঃপতন, চারিত্রিক অবক্ষয় একেরপর এক হতেই থাকছে। অন্ধকারে আলো জ্বালালে সেখানে যেমন বিপদের আশঙ্কা কম কম থাকে, ঠিক অনুরূপ পরিণত বয়সে বিয়ে করলে চরিত্র হেফাজতের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
কিন্তু আমরা পরিণত বয়স হলেও বিবাহ করতে পারছি না- সমাজের বিভিন্ন ধরা-বাঁধা নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ থাকার জন্য। কারণ বর্তমান সমাজ বলে- বিবাহের আগে নিজেকে স্বাবলম্বী হতে হবে। আর প্রত্যেক পিতা-মাতাও যেন এই নিয়মটা মেনে চলছে, যেটাও কিন্তু লজিক্যালী বাস্তব কথা। তো আপনার কি মনে হয়-- আল্লাহর থেকে লজিক্যালী বাস্তব কথা আর কেই বা বেশি বলার সক্ষমতা রাখে??? বিবাহের ক্ষেত্রে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন? আপনাকে আগে স্বাবলম্বী হতে হবে। অপরদিকে আল্লাহর দৃষ্টিভঙ্গি- আপনার চরিত্রকে আগে কলঙ্কমুক্ত রাখতে হবে। অর্থাৎ সমাজের দৃষ্টি হচ্ছে অর্থ বিত্তের দিকে, আর মহান আল্লাহর দৃষ্টি হচ্ছে চরিত্র হেফাজতের দিকে। অর্থ বিত্তের তুলনায় একজন মানুষের সুন্দর চরিত্রটাই আসল। কেননা অর্থ বিত্ত সমাজে শান্তি আনতে পারে না। বরং অপরাধের মাত্রাই যেন বৃদ্ধি করে। আর সুন্দর চরিত্র, অর্থ বিত্ত আনতে না পারলেও সবচেয়ে উত্তম জিনিস- শান্তি আনতে পারে অর্থাৎ সুন্দর চরিত্র সমাজে শান্তি আনার মূল চাবিকাঠি। আর আল্লাহ্ আসল দিকেই ফোকাস করেছেন যেটা সমাজ চোখেই দেখছে না। কারণ সমাজের কাছে চরিত্র আর যাই হোক, বিবাহের ক্ষেত্রে অর্থ বিত্ত থাকতে হবে। অপরদিকে আল্লাহর কাছে অর্থ বিত্ত নয়, বরং চরিত্র হেফাজত করাটাই আসল ব্যপার। তো এই সম্পর্কে পবিত্র কুরআন কি বলে?
•
সমাজের কাছে চরিত্র আর যাই হোক, বিবাহের ক্ষেত্রে অর্থ বিত্ত থাকতে হবে। অপরদিকে আল্লাহর কাছে অর্থ বিত্ত নয়, বরং চরিত্র হেফাজত করাটাই আসল ব্যপার। তো এই সম্পর্কে পবিত্র কুরআন কি বলে? পবিত্র কুরআনের আয়াত আমাদের'কে বলে যে
وَالصَّالِحِينَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَإِمَائِكُمْ “
এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও (বিয়ে দিয়ে দাও)।”
ভাল করে খেয়াল করুন, আল্লাহ্ এইখানে কাদের বিয়ের কথা বলেছেন? দাস-দাসীদের কথা। আচ্ছা আপনার কি মনে হয়- যারা দাস/দাসী, তারা কি অর্থ-বিত্তবান স্বাবলম্বী বা সম্পদশালী হয় নাকি? কস্মিনকালেও না। এদের বলতে গেলে কোন টাকা-পয়সা, অর্থ বিত্ত ছিল না। এরপরেও আল্লাহ বলেছেন-"তাদেরকেও বিয়ে দিয়ে দাও।" তাই এই যুক্তি যে-- বিয়ে সম্পর্কে চিন্তা করার আগে কাউকে স্বাবলম্বী হতে হবে- তা এই একটি বক্তব্যের মাধ্যমে তছনছ করে দেয়া হল, সমীকরণ থেকে বাদ দিয়ে দেয়া হল। যে বিষয়গুলো বিবেচনায় আনতে হবে তা হল প্রথমত, তারা কি বিয়ের বয়সে পৌঁছেছে অর্থাৎ পরিণত বয়স হয়েছে কিনা? আর দ্বিতীয়ত, সলিহিন তথা ভাল মানুষ। ভাল মানে যাদের আল্লাহর সাথে ভাল সম্পর্ক রয়েছে, এর মানে কি- যারা আল্লাহর নির্দেশনা মেনে চলে এবং তারা পরিণত, তারা প্রস্তুত। এই হল وَالصَّالِحِينَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَإِمَائِكُمْ ۚ এর ব্যখ্যা।
•
তারপর আল্লাহ এর সাথে যোগ করে আরও বলেন – কারণ এখনও বহু মানুষ এই বিষয়টাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে, সেটা কি? অর্থের সমস্যা। কাজেই আল্লাহ্ বলেছেন - إِن يَكُونُوا فُقَرَاءَ يُغْنِهِمُ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ ۗ "তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন।" স্বাবলম্বী করে দিবেন। কাজেই ভয় পেও না।
কারণ টাকা পয়সার বিষয়টা আল্লাহর নিকট ক্ষুদ্র সমস্যা। কিন্তু ‘আইমা’… আইমা মানে সমাজের বহু মানুষ যারা অবিবাহিত রয়ে গেছে, সেটা তুলনামূলক বড় সমস্যা। অর্থ কড়ি না থাকা ছোট সমস্যা। কিন্তু মানুষের মাঝে সম্পর্ক জুড়ে না দেয়া আল্লাহর নিকট অনেক অনেক বড় সমস্যা। এই আয়াতটি পড়ার সময় আমি একটি বর্ণনার সন্ধান পাই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন সমাজ থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইতেন যেখানে প্রচুর অবিবাহিত মানুষ রয়েছে। তিনি উম্মাহর এমন অবস্থা হওয়া সম্পর্কে উদ্বিগ্ন ছিলেন যেখানে প্রচুর অবিবাহিত মানুষ থাকবে; আর তারা এটা নিয়ে সুখী থাকবে। আসলে এ অবস্থায় তারা সুখী নয় বরং তাদের পরিবার একজনকে ক্রমাগত অপছন্দনীয় পাত্রের দিকে ঠেলে দিচ্ছে আর অন্যজনের বেলায়, যে বিয়ে করতে চাচ্ছে তাকে বিয়ে করতে দিচ্ছে না। তখন সেই ছেলে বা মেয়ে বলে- যাহ! যাই ঘটুক আমি একা থাকবো।
•
যখন কেউ বলে আমি একা (single) থাকবো, তার অর্থ এই নয় যে আমি ফেরেশতার (angel) মত থাকবো। নিঃসঙ্কোচে বলতে গেলে আমরা জানি এর মানে কি? একজন ত্রিশ বছরের যুবক যে কিনা একজন প্রফেশনাল, ভাল টাকা উপার্জন করেন, অন্যদিকে আটাশ বছরের এক মেয়ে যে লেখাপড়া শেষ করেছে এখনো অবিবাহিত – তার মানে এই না যে তাদের কোন আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত হয়নি, পাপ করার সুযোগ তৈরি হয়নি বা তারা আগের দিনের মদিনার মানুষের মত ধার্মিক জীবন অতিবাহিত করে।
কৃতজ্ঞতায়: উস্তাদ নোমান আলী খান