Are you sure?

বিজ্ঞান »  ইসলাম ও বিজ্ঞান বিবিধ »  ইসলাম বিদ্বেষীদের অপনোদন কুরআন »  বিজ্ঞান বিজ্ঞান »  জীববিজ্ঞান

 রোজা, ইন্টারমিটেন্ট ফ্যাস্টিং ও অটোফেজি - কিছু প্রশ্নের জবাব ।

🔘 প্রশ্ন: 
অন্যান্য ধর্মের ফ্যাস্টিং-র সাথে ইসলামিক ফ্যাস্টিং-র কোনো পার্থক্য আছে কী?

➡️ জবাব:

image

সাধারণত একটা নির্দিষ্ট সময় না খেয়ে থাকাকে ফ্যাস্টিং বলা হয়। সেই দৃষ্টিকোণ থেকরেকে তেমন কোনো পার্থক্য নেই । 
তবে মোটাদাগে অন্য  কিছু পার্থক্য আছে। 
যেমন: 
◽ ১মত- ইসলামিক ফ্যাস্টিং বা সিয়াম সাধনা একটি ইবাদত। এখানে একটা নির্দিষ্ট সময় না খেয়ে থাকার পাশাপাশি আরো কিছু সংযম ও নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। 
◽ ২য়ত- অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা যেখানে ব্যক্তিবিশেষে ও বিচ্ছিন্নভাবে ফ্যাস্টিং করে, মুসলিমরা সেখানে সারা বিশ্ব জুড়ে একযোগে ফ্যাস্টিং করে। যার ফলে মুসলিমদের ক্ষেত্রে ফ্যাস্টিং একটি উৎসবের মতো হয়ে গেছে। তাছাড়া সকলে একসাথে ফ্যাস্টিং করার কারণে অনেকে এ থেকে অনুপ্রাণিতও হয়। 
◽ ৩য়ত- প্রতি বছর রোযা উপলক্ষ্যে অবস্থাসম্পন্ন মুসলিমরা গরীব লোকজনকে যাকাত, ফিতরা, কাপড়চোপড়, টাকা-পয়সা ও খাবার দিয়ে সাহায্য করে। এই মানবিক দিকটা অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সাধারণত দেখা যায় না।


🔘 প্রশ্ন:

ইন্টারমিটেন্ট ফ্যাস্টিং কী? ইসলামিক ফ্যাস্টিং ও ইন্টারমিটেন্ট ফ্যাস্টিং কি এক জিনিস?

➡️জবাব:

‘ইন্টারমিটেন্ট ফ্যাস্টিং’ একটি ফ্যান্সি নাম! দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় খেয়ে বাকি সময়টা না খেয়ে থাকাকে ‘ইন্টারমিটেন্ট ফ্যাস্টিং’ বলা হয় – যেটা বিভিন্ন ধর্মের ফ্যাস্টিং-এর মতোই। ইন্টারমিটেন্ট ফ্যাস্টিং-র ধারণা আসলে ধর্ম থেকেই এসেছে। ইন্টারমিটেন্ট ফ্যাস্টিং-র বিভিন্ন নিয়মের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত নিয়মটি হচ্ছে দিনে ৮ ঘণ্টা খেয়ে বাকি ১৬ ঘণ্টা না খেয়ে থাকা [১] – এইটা ইসলামিক ফ্যাস্টিং তথা রোযার মতোই। তবে পার্থক্য হচ্ছে ইসলামিক ফ্যাস্টিং-র ক্ষেত্রে  মতো করে খাওয়া/না-খাওয়ার উইন্ডো নির্ধারণের কোনো সুযোগ নেই। অন্যদিকে ইন্টারমিটেন্ট ফ্যাস্টিং-র ক্ষেত্রে ব্যক্তিবিশেষ ও ফ্যাস্টিং-র উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে উইন্ডো এদিক-সেদিক করা যেতে পারে। আরেকটা পার্থক্য হচ্ছে ইসলামিক রোযার ক্ষেত্রে পানি খাওয়াও নিষেধ। অন্যদিকে ইন্টারমিটেন্ট ফ্যাস্টিং-র ক্ষেত্রে পানি খাওয়া বা না-খাওয়াটা ঐচ্ছিক, তবে কারো কারো দাবি অনুযায়ী পানি না খাওয়াটাই বরং বেশি কার্যকর।


🔘 প্রশ্ন:
 অটোফেজি কী? অটোফেজির সাথে রোযার কোনো সম্পর্ক আছে কি?

➡️জবাব: image

আমরা প্রতিদিন যে খাবার খাই সেগুলোর অপ্রয়োজনীয় অংশ হাগু-পিপি ও ঘামের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। কিন্তু অতিরিক্ত চর্বি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরণের ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ আমাদের দেহের মধ্যে রয়ে যায়, যেগুলোর কারণে ক্যান্সার ও বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি হতে পারে। এজন্য মাঝে মধ্যে পুরো দেহকে পরিষ্কার করা উচিত। এই কাজটা বিভিন্নভাবেই করা যেতে পারে। তবে বহুল ব্যবহৃত দুটি পন্থা হচ্ছে শরীরচর্চা ও ফ্যাস্টিং। শরীরচর্চার মাধ্যমে গা থেমে ঘাম ঝড়ে – ঘামের মাধ্যমে দূষিত পদার্থ বের হয়ে যায়। অন্যদিকে কিছু নিয়ম মেনে একটা নির্দিষ্ট সময় রোযা থাকলে বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত উপকারিতার পাশাপাশি আমাদের দেহ পরিষ্কার হয়।

🔘 প্রশ্ন:

অটোফেজি তাহলে কী?

 ➡️জবাব:image

খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেওয়ার একটা সময় পর যখন শরীরের ভেতরে থাকা সব খাবার শেষ হয়ে যায়, তখন জীবদেহের ভেতরের কোষগুলোর মধ্যে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম শুরু হয়। এই অবস্থায় শক্তিশালী কোষগুলো অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও রোগাক্রান্ত কোষ এবং ময়লা-আবর্জনা খেয়ে বেঁচে থাকে। ‘অটোফেজি’ শব্দের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে নিজেই নিজেকে খাওয়া – অর্থাৎ বেঁচে থাকার জন্য জীবদেহ নিজেরই একটা অংশকে খেয়ে ফেলে!
অটোফেজি হচ্ছে জীবদেহের ভেতরে জমে থাকা বর্জ্য পদার্থ পরিষ্কার করার একটি উত্তম প্রক্রিয়া [২]। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জীবদেহ ত্রুটিপূর্ণ কোষ ধ্বংস করে এবং নিজের বর্জ্য ও ক্ষতিকর কোষগুলো (Cancerous cells) অপসারিত বা প্রক্রিয়াজাত করে নতুন ও শক্তিশালী কোষের সৃষ্টি করে। জাপানের কোষ জীবতত্ত্ববিদ বিজ্ঞানী ইয়োশিনোরি ওহশোমি অটোফেজি নিয়ে গবেষণা করে ২০১৬ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন । [৩]


🔘 প্রশ্ন:

অটোফেজির সাথে রোযার সম্পর্কটা তাহলে কি?

➡️জবাব: image

যারা অটোফেজির ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন তারা এটাও বুঝার কথা যে, অটোফেজির জন্য রোযা করতে হবে তথা না খেয়ে থাকতে হবে। অর্থাৎ অটোফেজির সাথে রোযা সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। রোযা আসলে অটোফেজি প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত বা ত্বরান্বিত বা ট্রিগার করে [৪,৫, ৬, ৭, ৮]। সেই অর্থে রোযা, ইন্টারমিটেন্ট ফ্যাস্টিং, ও অটোফেজি একে-অপরের পরিপূরক।
অটোফেজির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের রোগ-মুক্তি ঘটে, মেদ-ভুঁড়ি কমে, শরীর হালকা বা চাঙ্গা হয়, ক্যানসার হওয়া থেকে বিরত রাখে, মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগ দূর হয়, আয়ু বৃদ্ধি পায়, ইত্যাদি। অটোফেজির মাধ্যমে যেহেতু মানবদেহ থেকে মেদ-সহ দূষিত ও বর্জ্য পদার্থ অপসারিত হয়, সেহেতু মানবদেহ এক অর্থে নতুন জীবন ফিরে পায়।
অটোফেজির সুবিধা পাওয়ার জন্য ঠিক কত ঘণ্টা রোযা থাকতে হবে?

 সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। এটা ব্যক্তিবিশেষ ও উদ্দেশ্যের উপর নির্ভরশীল [৯]। তবে ন্যূনতম ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত না খেয়ে থাকতে হবে [১০]। আরো বেশিক্ষণ থাকতে পারলে সেটা অটোফেজির জন্য আরো ভালো। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অনেক লম্বা সময় (২৪ ঘণ্টার বেশি) ধারে না খেয়ে থাকলে বিপদ হতে পারে [১১]। মুসলিমরা যেহেতু ১২-২১ ঘণ্টা রোযা রাখে সেহেতু তাদের ক্ষেত্রে বিপদের কোনো সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

নোট: ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে রোযার উদ্দেশ্য ওজন কমানো কিংবা অটোফেজিকে প্রভাবিত করা নয়। কিন্তু মুসলিমরা যে নিয়মে রোযা করে, সে অনুযায়ী সামান্য সতর্কতার সাথে খাওয়া-দাওয়া করলে অতিরিক্ত ওজন তথা মেদ-ভুঁড়ি কমার কথা। সেই সাথে একটা নির্দিষ্ট সময় না খেয়ে থাকার ফলে অটোফেজিকেও কম-বেশি প্রভাবিত করার কথা। সোজা কথায় ওজন কমা ও অটোফেজিকে প্রভাবিত করার ব্যাপার দুটি রোযার বাই-প্রডাক্ট (বোনাস) হিসেবে আসা উচিত। কাজেই ওজন হ্রাস ও অটোফেজির ফলস্বরূপ দিন শেষে যারা রোযা করছে তারা রোযার কম-বেশি স্বাস্থ্যগত উপকারিতা পাওয়ার কথা।


🔘 অভিযোগ:

মুসলিমদের দাবি অনুযায়ী নাকি “অটোফেজি = রোযা”! কী হাস্যকর কথা! অথচ অটোফেজির সাথে রোযার কোনো রকম সম্পর্কই নাই!

➡️জবাব: 

‘মুসলিম’ বলতে সারা বিশ্বে প্রায় দুই বিলিয়ন মানুষ আছে। এই দুই বিলিয়ন মানুষের মধ্যে অজ্ঞ, মূর্খ, অসৎ, আবেগি, অপরাধী, ইত্যাদিও আছে। কাজেই কেউ যদি সত্যি সত্যি “অটোফেজি = রোযা” বলে থাকে তাহলে সে একজন অজ্ঞ। সে অটোফেজি ও রোযার মধ্যে পার্থক্য বা সম্পর্ক কোনোটাই হয়ত বোঝে না। তবে যাদের দাবি অনুযায়ী অটোফেজির সাথে রোযার কোনো রকম সম্পর্কই নাই, তারা অতি ধূর্ত বা মিথ্যাবাদী। কেননা অটোফেজি ও রোযা সরাসরি সম্পর্কযুক্ত এই অর্থে যে, রোযা অটোফেজিকে প্রভাবিত বা ট্রিগার করে। উদাহরণস্বরূপ, সূর্যের আলোতে ভিটামিন ডি থাকে না। কিন্তু সূর্যের আলো আমাদের দেহে ভিটামিন ডি তৈরিতে সাহায্য করে। কাজেই কেউ যদি বলে “সূর্যের আলো = ভিটামিন ডি”, সেটা যেমন ভুল; তেমনি আবার কেউ যদি বলে ভিটামিন ডি-র সাথে সূর্যের আলোর কোনো রকম সম্পর্কই নাই, সেটাও ভুল বা মিথ্যাচার।


🔘অভিযোগ: 
মুসলিমরা তাদের বিশ্বাস থেকে রোযা করছে করুক, তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু তারা রোযার সাথে বিজ্ঞানকে টেনে আনে কেন?

➡️জবাব: image

১মত- রোযা তথা ইন্টারমিটেন্ট ফ্যাস্টিং স্রেফ বিশ্বাসের বিষয় নয়, এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত একটি বিষয় [১, ২, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮]। 
২য়ত-  অনেকেই রোযা নিয়ে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। কাজেই এটা আর মুসলিমদের ব্যক্তিগত পর্যায়ে নেই। 
৩য়ত- যারা গো-মূত্রে, হোলি ওয়াটার ইত্যাদির  সাথে বিজ্ঞানকে টেনে আনে তাদের নিয়ে আপনাদের মনে হয় কোনো আপত্তি নেই! কিন্তু রোযার সাথে বিজ্ঞানকে টেনে নিয়ে এলেই যত্তসব আপত্তি! এ কেমন ‘ন্যায়বিচার’-রে বাবা!

রোজার উপকারিতা প্রতিষ্ঠিত একটি বিষয় শব্দের সুবিধার্থে কয়েকটি মেডিকেল জার্নালের লিংক দিয়ে দেয়া হলো -


🏵️ তথ্যসুত্র: 
১. https://www.healthline.com/nutrition/intermittent-fasting-guide
২. https://www.youtube.com/watch?v=-mKvLQxaTvo
৩. https://www.prothomalo.com/durporobash/article/996569
৪. https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3106288/
৫. https://draxe.com/benefits-of-autophagy/
৬. https://greatist.com/live/autophagy-fasting-exercise
৭. https://idmprogram.com/fasting-and-autophagy-fasting-25/
৮. https://www.youtube.com/watch?v=pxWY5JxkMiU
৯. https://www.youtube.com/watch?v=rDzIbkyr5QQ
১০. https://www.youtube.com/watch?v=xwTGZ27LNFQ
১১. https://www.youtube.com/watch?v=WnK1FgxfIWM&t=148s
১২. https://www.youtube.com/watch?v=dVArDzYynYc
১৩. https://www.youtube.com/watch?v=xJZrgyPRgY0
১৪. https://www.youtube.com/watch?v=SxbCkN2eDlg
১৫. https://www.youtube.com/watch?v=eoDDZnfYonw
১৬. https://www.youtube.com/watch?v=f6rSuJ2YheQ&t=564s
১৭. https://www.youtube.com/watch?v=cjNuUz1CWb0
১৮. https://www.youtube.com/watch?v=f6rSuJ2YheQ&t=564s