Are you sure?

ইতিহাস »  বিবিধ ইতিহাস বিবিধ »  ইসলাম বিদ্বেষীদের অপনোদন দর্শন »  কুযুক্তি ইতিহাস »  প্রাচীন যুগ

ইসলাম কি তরবারীর মাধ্যমে প্রতিস্ঠিত হয়েছে ?

অভিযোগঃ
ইসলাম তলোয়ারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

জবাবঃ
ইসলাম তরবারী বা শক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়নি; বরং এটি ন্যায়বিচার, সত্য ও মানবিকতাসহ আদর্শিক এবং আধ্যাত্মিক শিক্ষার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যদিও ইতিহাসে ইসলামের প্রচার ও প্রতিরক্ষার জন্য মুসলমানরা অনেক সময় যুদ্ধ করেছে, তবে ইসলামকে শুধুমাত্র যুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত বলা সঠিক নয়। ইসলাম মূলত শান্তি, ন্যায়বিচার এবং সবার জন্য কল্যাণের বার্তা প্রচার করে। ইসলামের ইতিহাসের বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, ইসলাম শান্তি, ন্যায়বিচার, সততা, সামাজিক সমতা এবং আধ্যাত্মিকতার মাধ্যমে প্রচারিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তরবারী বা সামরিক শক্তির ব্যবহার কেবলমাত্র নির্দিষ্ট প্রতিরক্ষামূলক পরিস্থিতিতে অনুমোদিত ছিল।  ইসলামের ইতিহাস, বিশেষ করে নবী মুহাম্মদ (সা.) এর জীবন ও কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রধান উপাদান ছিল আধ্যাত্মিকতা, নৈতিকতা, এবং সামাজিক ন্যায়বিচার। সামরিক শক্তি ছিল মূলত প্রতিরক্ষামূলক প্রয়াস, যা ইসলামকে রক্ষা করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে, কিন্তু তা ধর্ম চাপিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে নয়। ইসলামকে তরবারীর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলা সঠিক নয়; বরং তরবারীর ব্যবহার হয়েছিল শুধুমাত্র ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার জন্য এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে। 

এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য প্রথমে ইসলামের ইতিহাসের প্রেক্ষাপট, এরপর ইসলামের প্রতিষ্ঠা ও প্রসারের ধাপ এবং একাডেমিক রেফারেন্স সহ ইসলামের প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধনীতি নিয়ে আলোচনা করা যাক।

### প্রাথমিক ইসলাম: আদর্শ এবং নৈতিকতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা

ইসলামের সূচনা হয় ৬১০ খ্রিস্টাব্দে, যখন মহানবী মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রথম ওহী গ্রহণ করেন। নবী (সা.) প্রথমে খুবই সীমিত পরিসরে ইসলাম প্রচার করেন এবং মক্কাবাসীদের মধ্যে কেবলমাত্র নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার বার্তা পৌঁছে দেন। এই সময়ে কোনো ধরনের সামরিক অভিযান বা অস্ত্র ব্যবহারের কথা ছিল না। ইসলাম ছিল মানবতা, ন্যায়বিচার এবং আল্লাহর একত্ববাদ (তাওহিদ) এর প্রচার। ইসলামের প্রাথমিক শিক্ষায় ছিল:

1. **একেশ্বরবাদ (তাওহিদ)**: আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই।
2. **ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার**: দাসপ্রথা, নারীর অধিকার এবং দরিদ্রদের সহায়তা।
3. **নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতা**: সত্যবাদিতা, দানশীলতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার।

মুসলমানদের নির্যাতন করা হলেও, এই সময়ে নবী মুহাম্মদ (সা.) এবং তার অনুসারীরা কোনো ধরনের সামরিক প্রতিরোধ গড়ে তোলেননি। বরং, তারা নির্যাতন সহ্য করেছেন এবং শান্তি বজায় রেখেছেন। 

### মদিনা পর্ব: প্রতিরক্ষা এবং সামরিক শক্তির প্রয়োগ

মক্কা থেকে হিজরতের পর মুসলিম সম্প্রদায় মদিনায় স্থিতি লাভ করে এবং একটি স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র গঠিত হয়। তবে মদিনায় আসার পরেও মুসলমানদের ওপর কুরাইশদের আক্রমণ অব্যাহত থাকে। এই সময়ে কুরআনে প্রতিরক্ষা যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে তা আক্রমণাত্মক নয়, বরং নির্যাতনের প্রতিরোধ এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার জন্য।

#### কুরআনে যুদ্ধের নির্দেশ
যুদ্ধে অংশগ্রহণের অনুমোদন কেবল তখনই দেওয়া হয়েছিল, যখন মুসলমানদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছিল এবং তাদের ওপর আক্রমণ চালানো হচ্ছিল। উদাহরণস্বরূপ:

- **সূরা আল-বাকারা (২:১৯০)**:
   _"তোমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো, তাদের বিরুদ্ধে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। কিন্তু সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালোবাসেন না।"_

এই আয়াতটি স্পষ্টভাবে প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধের নির্দেশ দেয়, এবং কোনো আক্রমণাত্মক যুদ্ধ বা অন্যের ওপর ইসলাম চাপিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে নয়। ইসলামের এই যুদ্ধনীতি কেবল অত্যাচারের প্রতিরোধ এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার সুরক্ষার জন্য ছিল।

#### বদর যুদ্ধ এবং প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধের নীতি
ইসলামের ইতিহাসে বদর যুদ্ধ (৬২৪ খ্রিস্টাব্দ) একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধ। কুরাইশদের অব্যাহত অত্যাচারের বিরুদ্ধে মদিনার মুসলিমরা নিজেদের রক্ষার জন্য প্রথমবারের মতো অস্ত্র ধারণ করেন। বদর যুদ্ধ ছিল মুসলিমদের জন্য বেঁচে থাকার লড়াই, যেখানে তারা আল্লাহর উপর নির্ভর করে নিজেদের স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা করেন। 

### ইসলাম প্রতিষ্ঠার নৈতিক ও সামাজিক দিক
ইসলামের মূল আদর্শ ও শিক্ষা ছিল নৈতিকতা, সামাজিক সমতা এবং আধ্যাত্মিকতার মাধ্যমে সমাজকে পরিবর্তন করা। ইসলাম দাসপ্রথা এবং নারীদের অধিকার নিশ্চিত করেছে, যেমন নবী মুহাম্মদ (সা.) তার বিদায় হজের ভাষণে উল্লেখ করেছেন:

_"তোমরা তোমাদের স্ত্রীর প্রতি সদয় হও এবং তাদের অধিকারসমূহ সংরক্ষণ কর।"_ (সাহিহ বুখারি)

ইসলামের সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধ মানুষকে স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। ইসলামের প্রচার ও প্রসার এমনভাবেই হয়েছে যে, সামরিক দখলদারিত্বের পরিবর্তে মানুষের হৃদয়ে ইসলামের ন্যায়বিচার ও সমতা বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছে।

### মক্কা বিজয়: ক্ষমাশীলতার মডেল
মক্কা বিজয়ের ঘটনা (৬৩০ খ্রিস্টাব্দ) ইসলামের শান্তিপূর্ণ এবং ক্ষমাশীল চরিত্রের একটি চমৎকার উদাহরণ। নবী মুহাম্মদ (সা.) মক্কা বিজয়ের পর কুরাইশদের যেভাবে সাধারণ ক্ষমা প্রদান করেছিলেন, তা ইসলামের ন্যায়বিচার, মানবিকতা এবং শান্তির নীতির প্রতিফলন:

_“আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধ নেই। আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন।”_

মক্কা বিজয়ের পর কোনো ধরনের প্রতিশোধ গ্রহণ না করে, নবী মুহাম্মদ (সা.) সম্পূর্ণভাবে শান্তির মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন। এটি প্রমাণ করে যে, ইসলাম কোনো শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

### হুদাইবিয়ার সন্ধি: শান্তিপূর্ণ প্রচারের উদাহরণ
৬২৮ খ্রিস্টাব্দে হুদাইবিয়ার সন্ধি ছিল মুসলমানদের এবং মক্কার কুরাইশদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ শান্তিচুক্তি। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, মুসলমানরা সেই বছর মক্কায় ওমরাহ পালন করতে পারেননি। যদিও এই চুক্তিটি আপাতদৃষ্টিতে মুসলমানদের জন্য অসম ছিল, তবুও নবী মুহাম্মদ (সা.) এটিকে গ্রহণ করেন শান্তির স্বার্থে। এই চুক্তির ফলস্বরূপ, পরবর্তী দুই বছরে অনেক মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে এবং ইসলামের প্রসার ঘটে।

### ইসলামের প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধনীতি: একাডেমিক বিশ্লেষণ

#### ১. **জন এল. এস্পোসিটো (John L. Esposito)**:
জন এল. এস্পোসিটো তার বই *“Islam: The Straight Path”* এ উল্লেখ করেছেন যে, ইসলামের প্রচার এবং প্রতিষ্ঠা ছিল আদর্শিক এবং আধ্যাত্মিক শিক্ষার মাধ্যমে। সামরিক অভিযান কখনও ইসলামের মূল লক্ষ্য ছিল না। ইসলাম সামরিক শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে চাপিয়ে দেওয়া হয়নি; বরং অধিকাংশ মানুষ স্বেচ্ছায় ইসলামের ন্যায়বিচার, সমতা এবং মানবিকতায় আকৃষ্ট হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ইসলামের সামরিক অভিযানগুলোর মূল লক্ষ্য ছিল অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।

#### ২. **ক্যারেন আর্মস্ট্রং (Karen Armstrong)**:
ক্যারেন আর্মস্ট্রং তার বই *“Muhammad: A Prophet for Our Time”* এ দেখিয়েছেন যে, নবী মুহাম্মদ (সা.) কখনও কোনো জাতিকে জোরপূর্বক ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য করেননি। তার সামরিক অভিযানগুলি ছিল অত্যাচারের বিরুদ্ধে ন্যায় প্রতিষ্ঠার চেষ্টা। আর্মস্ট্রং আরও বলেন, ইসলাম একটি আধ্যাত্মিক আন্দোলন ছিল, যা শান্তিপূর্ণ প্রচার এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রসারিত হয়।

#### ৩. **উইলিয়াম মুইর (William Muir)**:
ইতিহাসবিদ উইলিয়াম মুইর তার বিখ্যাত কাজ *“The Life of Mahomet”* এ উল্লেখ করেছেন যে, নবী মুহাম্মদ (সা.) এর সামরিক কার্যক্রম মূলত প্রতিরক্ষামূলক ছিল। মুইর বলেন, নবী (সা.)'র যুদ্ধগুলি ইসলাম চাপিয়ে দেওয়ার জন্য ছিল না, বরং তার সম্প্রদায়কে রক্ষা করার জন্য।

#### ৪. **ইবন খালদুন (Ibn Khaldun)**:
ইবন খালদুন, বিখ্যাত ইতিহাসবিদ এবং দার্শনিক, তার *Muqaddimah* গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, ইসলামের সামরিক শক্তির ব্যবহার ছিল সুশৃঙ্খল ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে। তিনি বলেন, ইসলামকে কখনোই চাপিয়ে দেওয়া হয়নি এবং সামরিক শক্তির ব্যবহার ছিল কেবলমাত্র ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের আত্মরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য।

### উপসংহার
ইসলাম তরবারীর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ইসলামের প্রতিষ্ঠা ও প্রসার নৈতিকতা, সামাজিক ন্যায়বিচার, আধ্যাত্মিকতা এবং শান্তিপূর্ণ প্রচারের মাধ্যমে ঘটেছে। তরবারীর ব্যবহার ছিল প্রতিরক্ষামূলক এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার উদ্দেশ্যে। নবী মুহাম্মদ (সা.)'র জীবনের ঘটনাবলী এবং কুরআনের নির্দেশনা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, ইসলাম কোনো শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে নয়, বরং আধ্যাত্মিক ও সামাজিক ন্যায়বিচারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

ঐতিহাসিক ডি ল্যাসি ও ল্যরি তার ’ইসলাম এন্ড ক্রস রোড’ বইয়ের ৮ম পৃষ্ঠায়। ইতিহাস এটি প্রমান করেছে যে মুসলিমরা যে তলোয়ারের মাধ্যমে শক্তি প্রয়োগ করে বিভিন্ন জাতির মধ্যে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছে তা একটি ভ্রান্ত চিন্তাধারা যা কিনা বিভিন্ন ঐতিহাসিক বার বার বলে থাকে।
মুসলিম জাতির ৮০০ বছর স্পেন শাসন: মুসলিমরা ৮০০ বছর ধরে স্পেন শাসন করেছে। পরবর্তীতে খৃষ্টান ক্রুসেডাররা স্পেনে আসে এবং মুসলিমদের উচ্ছেদ করে। তারপর স্পেনে এমন কোন মুসলিম ছিল না যারা প্রকাশ্যে আযান দিতে পারত।
১৪ মিলিয়ন আরব হচ্ছে ’কোপটিক’ খৃষ্টান: মুসলিমরা প্রায় ১৪০০ বছর ধরে আরব শাসন করেছে। পরে কিছু সময়ের জন্য বৃটিশ ও কিছু সময়ের জন্য ফরাসীরা শাসন করেছে। সামগ্রীকভাবে মুসলিমরা ১৪০০ বছর শাসন করেছে। তথাপি এখনও আরবে এমন ১৪ মিলিয়ন আরব রয়েছে যারা ’কোপটিক’ খৃষ্টান অর্থাৎ খ্রীষ্টান ধর্মের শুরু থেকেই তারা খৃষ্টান হিসেবে রয়েছে। যদি মুসলিমরা তরবারীর মাধ্যমেই ইসলাম প্রচার করত তাহলে আরবে একজন খৃষ্টানও থাকত না।
ভারতের ৮০ শতাংশের অধিকাংশ লোকই অমুসলিম: মুসলিম জাতি হাজার বছরের উপর ভারত শাসন করেছে। যদি তারা চাইত তাহলে ভারতের সকল অমুসলিমকে ইসলাম ধর্মে আনতে পারত। বর্তমানে ভারতের ৮০% জনগোষ্ঠী অমুসলিম। এইসকল অমুসলিম ভারতীয়রা এটাই প্রমান করে যে ইসলাম তরবারীর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় নি।
ইন্দোনেশিয়া ও মালয়শিয়া: বিশ্বের মুসলিম জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ইন্দোনেশিয়ায় অবস্থান করছে। মালয়শিয়ার অধিকাংশ জনগন মুসলিম। আপনারা যে কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়শিয়ায় কোন মুসলিম সেনাবাহিনী গিয়েছিল?
আফ্রিকার পূর্ব উপকূল: একই ভাবে ইসলাম আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে বিস্তার লাভ করেছিল। আপনারা যে কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, ইসলাম যদি সত্যই তরবারীর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে কোন মুসলিম সেনাবহর গিয়েছিল?
টমাস কার্লাইল: বিখ্যাত ঐতিহাসিক টমাস কার্লাইল তার ’বীরও বীরের বন্দনা’ গ্রন্থে ইসলামের প্রসার সংক্রান্ত ভুল ধারণার ব্যাপারে বলেন, ”সত্যই তলোয়ার, কিন্তু কোথায় পাবে সেই তলোয়ার? প্রত্যেক নতুন চেতনাই কেবলমাত্র একজন মানুষের মননের ক্ষুদ্র পরিসরে বেড়ে উঠে – আর সেখানেই লালিত পালিত হয়। সারা পৃথিবীর সকল মানুষের বিপক্ষে সেই একজনই তখন রুখে দাঁড়ায়। একটি তরবারী নিয়ে তখন তার পক্ষে সারা পৃথিবীর বিরুদ্ধে লড়তে যাওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। তোমার নিশ্চয়ই তোমার নিজের তরবারী খুঁজে পেতে হবে! সারকথা, সেই চেতনা নিজেই তখন তাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।”
ইসলাম গ্রহনের ক্ষেত্রে কোন জবরদস্তি নেই: কোন তরবারীর মাধ্যমে ইসলাম বিস্তার লাভ করেছে? যদি মুসলিমরা তরবারীর মাধ্যমেই তা করতে চাইত তাহলেও তারা সেটা করতে পারত না। কারণ কুরানে আছে:
”দ্বীন গ্রহনের ক্ষেত্রে কোন জবরদস্তি নেই। সত্য দ্বীন ভ্রান্ত আকীদা ও বিশ্বাস থেকে পৃথক হয়ে গেছে।” [বাকারা ২:২৫৬]
জ্ঞানের তরবারী: ইসলাম যেই তরবারীর মাধ্যমে মানুষের হৃদয়-মন জয় করেছে তা হচ্ছে জ্ঞান। কুরানে এই ব্যাপারে বলা হয়েছে:
”মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বান কর জ্ঞান ও সুন্দর কথার মাধ্যমে এবং তাদের সাথে উত্তম ও বদন্যতার সাথে যৌক্তিক কথা বল।”
[১৬:১২৫]
১৯৮৬ সালের ’আলমানাক’ রিডার্স ডাইজেস্ট এর একটি নিবন্ধে ১৯৩৪ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত – এই অর্ধশতাবদ্ধীতে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রধান ধর্ম গুলোর প্রসারের উপর একটি পরিসংখ্যান দেয়া হয়। এই নিবন্ধটি ’দ্য প্লেইন ট্রুথ’ ম্যাগাজিনেও প্রকাশিত হয়। সবার উপরে ছিল ইসলাম, যার প্রসার হার ছিল ২৩৫% এবং খৃষ্টান ধর্ম, যার প্রসার হার ছিল মাত্র ৪৭%। কেউ কি বলতে পারবে যে এই শতকের কোন যুদ্ধ মানুষকে ইসলাম গ্রহনে উদ্বুদ্ধ করেছে?
ইসলাম আমেরিক এবং ইউরোপে সবচেয়ে দ্রুত প্রসার পাচ্ছে: আজ আমেরিকায় ও ইউরোপে সবচেয়ে দ্রুত প্রসার পাওয়া ধর্মের নাম ইসলাম। কোন তরবারী পশ্চিমাদের ইসলাম গ্রহনে বাধ্য করছে?


ডঃ জোসেফ এডাম পিয়ারসন বাস্তবিকই সত্য বলেছেন, ”যারা এই মনে করে ভয় পায় যে, কবে যেন আরবদের হাতে আনবিন বোমা চলে আসে!, তারা এইটুকু বোঝে না যে, ইসলামের বোমা ইতিমধ্যেই বিস্ফোরিত হয়ে গেছে। মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্মের সাথে সাথেই তা বিস্ফোরিত হয়েছে।”

একাডেমিক রেফারেন্স:


1. Esposito, John L. *Islam: The Straight Path*. Oxford University Press, 1998.

2. Armstrong, Karen. *Muhammad: A Prophet for Our Time*. HarperOne, 2006.

3. Muir, William. *The Life of Mahomet*. Smith, Elder & Co., 1861.


4. Ibn Khaldun. *Muqaddimah*. Princeton University Press, 1967.

5. ডি ল্যাসি ও ল্যরির বই "ইসলাম এন্ড ক্রস রোড" এই বইটি ১৯২৩ সালে প্রকাশিত হয়েছিল এবং ইসলামের উত্পত্তি থেকে ২০ শতকের প্রথম দশকের পর্যন্ত ইসলামের উন্নতি নিয়ে একটি বিস্তৃত বিবরণ এ বইয়ে আছে ।