Are you sure?

বিজ্ঞান »  ইসলাম ও বিজ্ঞান হাদিস »  ফিকহ হাদিস »  বিজ্ঞান হাদিস »  নৈতিকতা ও আদর্শ দর্শন »  নৈতিকতা

ইসলাম কি আসলেই নারীদের খাতনা বাধ্যতামূলক করেছে?

জবাবঃ-
আজকাল ‘নারী খৎনা’ নামক একটা টার্ম নিয়ে ইসলাম বিরোধীরা খুব লাফালাফি করে, আবার অনেকে আইএস’র উদাহরণ নিয়ে আসে। আসলে নারী খৎনা নিয়ে ইসলামে কি হুকুম তা জানার দরকার আছে।
নারী খতনা হানাফি মাহযাব মতে জায়িজ নেই (বিশ্বের অধিকাংশ মুসলমান হানাফি মাহযাব অনুসারী)। ফতোয়ায়ে শামী কিতাবে বলা হয়েছে, কোরআন-হাদীসে খতনাহ সম্পর্কিত যত কথা আছে তাহা কেবল পুরুষদের জন্য প্রযোজ্য। তবে শাফেয়ী মাহযাব মতে নারী খৎনা করা যায়, তবে সেটা সবার জন্য নয়, মাজুর বা অসুস্থ নারীদের জন্য।
এখানে মনে রাখতে হবে, অনেক মহিলা সন্তান হওয়ার সময় সিজার অপরেশন করে, এতে ঐ মহিলার অনেক কষ্ট হয়, কিন্তু মাজুরতা বা অসুস্থতার জন্য তাকে ঐ কাজটি বাধ্যই হয়ে করতে হয়। তেমনি ঐ সময়, ঐ এলাকার অনেক মহিলারা বিশেষ রোগে ভুগতো, যার কারণে ঐ সময় নারী খৎনার বিশেষ প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এবং প্রয়োজন অনুসারে মাজুর মহিলাদের জন্য এ কাজটি অনুমোদন করা হয়। অবশ্য, শাফেয়ী মাহযাবের নারী খৎনার অনুমোদন এটাই প্রমাণ করে ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনবিধান। কারণ নারীদের ঐ বিশেষ শারীরিক সমস্যা সমাধান একমাত্র ইসলাম-ই দিতে পেরেছিলো, যা অন্য ধর্ম দিতে পারেনি।
আসলে মহিলাদের খৎনা করা কোন আবশ্যকীয় বিষয় নয়। ইসলামে এর কোন বিশেষ মর্যাদাও নেই। এটি সুন্নতও নয়। বরং সর্বোচ্চ এটিকে জায়েজ বলা হয়েছে। তাই এটা নিয়ে অযথা বাড়াবাড়ি করা কিছুতেই কাম্য নয়। পুরুষদের খৎনা করা সুন্নত। কিন্তু মহিলাদের খৎনা করা সুন্নত নয়। বরং জায়েজ। বিজ্ঞজনদের মতে তৎকালিন আরবে এটি প্রচলিত ছিল। আরবের পরিবেশ শুস্ক হওয়ার কারনে সেখানকার মহিলাদের জরায়ুর উপরিভাগ হতো খুবই রুক্ষ ও মোটা। সতি পর্দা ছিন্ন না হলে সন্তান না হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তাই তৎকালিন আরবের লোকেরা সতি পর্দা ছিন্ন করার জন্য মহিলাদের খৎনা করার প্রথা চালু করে। রাসূল সাঃ যখন জানলেন যে, এটি করার দ্বারা মহিলাদের উপকার হয়, সেই সাথে পুরুষদের উপকার হয়, তাই তিনি এ বিষয়ে অতিরঞ্জন না করার আদেশ দিয়েছেন। যেমন হাদীসে এসেছে যে,
عَنْ أُمِّ عَطِيَّةَ الأَنْصَارِيَّةِ : أَنَّ امْرَأَةً كَانَتْ تَخْتِنُ بِالْمَدِينَةِ فَقَالَ لَهَا النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- :« لاَ تَنْهَكِى فَإِنَّ ذَلِكَ أَحْظَى لِلْمَرْأَةِ وَأَحَبُّ إِلَى الْبَعْلِ ».
قَالَ أَبُو دَاوُدَ : مُحَمَّدُ بْنُ حَسَّانَ مَجْهُولٌ وَهَذَا الْحَدِيثُ ضَعِيفٌ. (سنن ابى داود، كتاب الأدب، باب ما جاء في الختان، رقم الحديث-5271
হযরত উম্মে আতিয়্যাহ আনসারী রাঃ থেকে বর্ণিত। মদীনার এক মহিলা খৎনা করাতো। তখন তাকে রাসূল সাঃ বললেনঃ তুমি অতিরঞ্জন করো না। তবে এটি পুরুষের জন্য অধিক উপকারী আর মহিলাদের প্রিয় হয়ে থাকে।
ইমাম আবু দাউদ রহঃ বলেনঃ এ এ হাদীসের একজন রাবী মুহাম্মদ বিন হাসসান মাজহূল। আর এ হাদীসটি জঈফ।
{সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৫২৭১, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৭৩৩৮}
অন্য এক হাদীসে এসেছে যে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ :« الْخِتَانُ سُنَّةٌ لِلرِّجَالِ مَكْرُمَةٌ لِلنِّسَاءِ
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ খৎনা পুরুষের জন্য সুন্নত আর মহিলাদের জন্য ইজ্জত। {সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৭৩৪৪, মুসনাদে আহমাদ-৫/৭৫,কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-৪৫৩০৫}
এ সকল হাদীস একথাই প্রমাণ করে যে, প্রয়োজনে মহিলাদের খৎনা করা উত্তম। তবে এটি সুন্নত বা জরুরী কিছু নয়। এ কারণেই ফুক্বাহায়ে কেরাম এবং হাদীস ব্যাখ্যাকারগণ মহিলাদের খৎনাকে সুন্নত বা জরুরী সাব্যস্ত করেননি। তাই মহিলাদের শারিরিক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে যেমনটি প্রশ্নে উল্লেখিত করা হয়েছে, মহিলাদের খৎনা করতে বাধ্য করা জায়েজ হবে না।
وفي الفتح يجبر عليه أن تركه إلا إذا خاف الهلاك وإن تركته هي لا (طحطاوى على المراقى الفلاح- باب ما يوجب الغسل، مطبوعة مصر-78
مَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُم مِّنْ حَرَجٍ وَلَٰكِن يُرِيدُ لِيُطَهِّرَكُمْوَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ [٥:٦
আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করতে চান-যাতে তোমরা কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর। ;সূরা মায়িদা 125;
বিস্তারিত জানতে পড়ুন
১-ফাতহুল বারী লিইবনে হাজার-১০/৩৮৪-৩৮৭।
২- আলবাহরুর রায়েক১/৫৮।
৩-ফাতহুল কাদীর-১/৬৩
৪- ইনায়া আলা ফাতহিল কাদীর-১/৬৩।
৫- আল মাদখাল লিইবনুল হাজ্জ-৩/২৯৬।