সাফিয়া(রাঃ) হল ইসলামের শত্রুদের প্রধান হাতিয়ার ৷ তারা মায়া মমতার সাগর হয়ে যায় সাফিয়া রাঃ এর ব্যাপারে বর্ননা দিতে যেয়ে ৷ তিনি ছিলেন ইহুদী গোত্র বনু নাদীরের প্রধান হুয়াই বিন আখতারের কন্যা। বাবার বেশ আদরের মেয়ে ছিলেন উনি।
পিতা ও স্বামীর মৃত্যুদণ্ড দেয়ার পর তাকে আযাদ করে রাসূল সাঃ বিয়ে করেন ৷ নাস্তিকদের কথা হল জোড় করে বিয়ের নামে ধর্ষন করা হয়েছে উনাকে! (নাউজুবিল্লাহ)
আসলে কি তাই? আসুন জেনে নেই সত্য ঘটনা!
সাফিয়া(রাঃ) কে নিয়ে মিথ্যাচারের জন্য ইসলাম-বিদ্বেষীরা একটি হাদীস প্রায়ই ব্যবহার করে থাকে। হাদীসটিতে সামান্য কিছু কথা যোগ করলে আর প্রসঙ্গ বাদ দিলে রাসূল সাঃ খুব সহজেই একজন নিষ্ঠুর মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করা যায় বলে এটি ইসলাম-বিদ্বেষী মহলে খুব জনপ্রিয় একটি হাদীসঃ
. আনাস (রাঃ) বলেনঃ খায়বর যুদ্ধশেষে যখন যুদ্ধ-বন্দীদের একত্রিত করা হয়, তখন দাহিয়া-কালবী এসে বলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে বন্দীদের থেকে একটা দাসী প্রদান করুন। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যাও একজন দাসী নিয়ে যাও। তখন তিনি সাফিয়্যা বিনত হুয়াইকে নিয়ে যান। অতঃপর জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হাযির হয়ে বলেঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি সাফিয়্যাকে দাহিয়া-কালবীকে প্রদান করলেন?
রাবী ইয়াকূব বলেনঃ সাফিয়্যা বিনত হুয়াই ছিলেন কুরায়যা ও নযীর গোত্রের সর্দার কন্যা, তিনি তো আপনারই যোগ্যা। তখন তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ দাহিয়াকে তাকে (সাফিয়্যা) সহ ডেকে আন। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখে দাহিয়াকে বলেনঃ তুমি এর বদলে বন্দীদের মধ্য হতে অন্য যে কোন দাসী নিয়ে নাও। অবশেষে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আযাদ করে দেন এবং তাঁকে বিবাহ করেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)http://www.hadithbd.com/share.php?hid=35095
গ্রন্থঃ সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ৩৬/ শিষ্টাচার (كتاب الأدب)
হাদিস নম্বরঃ ৪৮৭৫
দেখুন, আমরা এখানে সুস্পষ্টভাবে দেখছি রাসূলের কাছে একজন এসে জানাল যে গোত্র প্রধানের কন্যা সাধারন লোকের জন্য দেয়া হয়েছে এবং তখন রাসূল সাঃ তাকে আনতে বললেন এবং তাকে প্রথম মুক্তি দিলেন এবং পরে বিয়ে করেন ৷
নাস্তিকরা বলে যে সাফিয়া রাঃ এর বিয়েতে রাজি হওয়া ছাড়া কোন রাস্তা ছিলনা! এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা ৷ বরং তিনি যে নিজ ইচ্ছায় বিয়েতে রাজি হয়েছিলেন এবং রাসূলের সাঃ স্ত্রী হিসেবে গর্ববোধ করতেন তা উনার পরিবর্তী জীবনের আচরনের কারনে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়৷
রাসূলের সাঃ স্ত্রীরা যখন 7ম ও 8ম হিজরীর মাঝামাঝি সময়ে ভরন পোষনের জন্য অধিক অর্থের চাপ দিতে থাকে যা রাসূলের ছিলনা তখন কোরআনের আয়াত নাজিল হয় ৷ আল্লাহ বলেন
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ إِنْ كُنْتُنَّ تُرِدْنَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا فَتَعَالَيْنَ أُمَتِّعْكُنَّ وَأُسَرِّحْكُنَّ سَرَاحًا جَمِيلًا
(২৮) হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীদের বল, ‘তোমরা যদি পার্থিব জীবনের ভোগ ও তার বিলাসিতা কামনা কর, তাহলে এস, আমি তোমাদের ভোগ-বিলাসের ব্যবস্থা করে দিই এবং সৌজন্যের সাথে তোমাদেরকে বিদায় দিই।
-
وَإِنْ كُنْتُنَّ تُرِدْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَالدَّارَ الْآخِرَةَ فَإِنَّ اللَّهَ أَعَدَّ لِلْمُحْسِنَاتِمِنْكُنَّ أَجْرًا عَظِيمًا
(২৯) পক্ষান্তরে তোমরা আল্লাহ, তাঁর রসূল এবং পরকাল কামনা করলে, তোমাদের মধ্যে যারা সৎকর্মশীলা আল্লাহ তাদের জন্য মহা প্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন।’
বিভিন্ন দেশ জয়লাভ করার পর যখন মুসলিমদের অবস্থা পূর্বের তুলনায় কিছুটা সচ্ছল হল, তখন মুহাজির ও আনসারদের স্ত্রীদের দেখাদেখি মহানবী (সাঃ)-এর স্ত্রীগণও খোরপোষের পরিমাণ বৃদ্ধির দাবী জানালেন। নবী (সাঃ) যেহেতু বিলাসহীন জীবন-যাত্রা পছন্দ করতেন, সেহেতু স্ত্রীদের এই দাবীতে বড় দুঃখিত হলেন এবং এক মাসের জন্য স্ত্রীদের নিকট থেকে আলাদা হয়ে একাকী বাস করলেন। অবশেষে আল্লাহ তাআলা এই আয়াত অবতীর্ণ করলেন। উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর সর্বপ্রথম তিনি আয়েশা (রাঃ) -কে উক্ত আয়াত শুনিয়ে তাঁকে তাঁর সংসারে থাকা ও না থাকার ব্যাপারে এখতিয়ার দিলেন এবং বললেন, নিজে সিদ্ধান্ত না নিয়ে পিতা-মাতার পরামর্শ নিয়ে যা করার করবে। আয়েশা (রাঃ) বললেন, আপনার বিষয়ে পরামর্শ করব তা কি করে হয়? বরং আমি আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে পছন্দ করি। অন্য সকল স্ত্রীগণও এই একই মত ব্যক্ত করলেন এবং কেউ নবী (সাঃ)-কে ত্যাগ করে পার্থিব প্রাচুর্য ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে প্রাধান্য দিলেন না। (সহীহ বুখারী, তাফসীর সূরা আহযাব) সেই সময় নবী (সাঃ)-এর সংসারে নয়জন স্ত্রী ছিলেন; পাঁচজন ছিলেন কুরাইশ বংশের। আয়েশা, হাফস্বা, উম্মে হাবীবা, সাওদা ও উম্মে সালামা (রাঃ) এবং এ ছাড়া বাকি চার জন হলেন; সাফিয়্যা, মাইমুনা, যায়নাব ও জুওয়াইরিয়া (রাঃ) । (বুখারীঃ ত্বালাক অধ্যায়, মুসলিম)
(সূরা আত তাহরীম এর ব্যাখ্যাও দেখতে পারেন)
দেখুন, সুস্পষ্টভাবে অন্য স্ত্রীদের সাথে সাফিয়া রাঃ কেও সুযোগ দেয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি রাসূলের সাঃ সাথেই থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নেন ৷
কেন তিনি রাসূলের সাঃ স্ত্রী হিসেবে থেকে গেলেন? রাসূলকে সাঃ অপছন্দ করলে বা ঘৃনা করলে কি তিনি তালাকের সুযোগ গ্রহন করতেন না? জোড় করে বিয়ে যদি হত তবে কি তিনি এই সুযোগ লুফে নিতেন না?
তারমানে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে সাফিয়া রাঃ সেচ্ছায় রাসূলকে সাঃ বিয়ে করেন এবং অত্যন্ত অনুগত মুসলিম হিসেবে জীবন অতিবাহিত করেন ৷ শুধু তাই নয় রাসূলের মৃত্যুর সময় সাফিয়া রাঃ এর বয়স ছিল মাত্র 21 এবং এর পর আরও 39 বছর তিনি জীবিত ছিলেন ৷ এই সময় তিনি ছিলেন অত্যন্ত পরহেজগার মুসলিম ৷ সাফিয়া রাঃ নিজে যেই বিয়েতে খুশি ছিলেন এবং গর্ব করতেন সেই বিয়ের ব্যাপারে কেন নাস্তিকরা প্রশ্ন তুলে?? কি তাদের উদ্দেশ্য?
কেমন ছিল সাফিয়া রাঃ এর প্রতি রাসূলের সাঃ আচরন??
একবার আয়েশা রাঃ সামান্য ইশারায় সাফিয়া রাঃ এর ব্যাপারে কথা বলেন কিন্তু রাসূল প্রচন্ড রাগ করেন ৷
৪৮৭৫। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম, সাফিয়্যাহ (রাঃ)-এর ব্যাপারে আপনার জন্য এতটুকুই যে, সে এরূপ অর্থাৎ তিনি খাটো। তিনি বললেনঃ তুমি এমন একটি কথা বলেছ, যা সমুদ্রে মিশিয়ে দিলে তাতে সমুদ্রের পানি রং পাল্টে যাবে। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে নকল করলাম। তিনি বললেনঃ আমাকে এতো এতো সম্পদ দেয়া হলেও আমি কারো অনুকরণ পছন্দ করবো না।
সহীহ।
[1]. তিরমিযী, আহমাদ। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)http://www.hadithbd.com/share.php?hid=62243
ভ্রমণে যাবার সময় রাসূল তাঁর হাঁটু সাফিয়া(রাঃ) এর জন্য বিছিয়ে দিতেন যাতে তিনি তাতে পা দিয়েউটের পিঠে চড়তে পারেন।[বুখারী)
গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী ’ (৩৭১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৯১)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)http://www.hadithbd.com/share.php?hid=27081
চিন্তা করুন বিশ্বজাহানের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব তাঁর স্ত্রীকে উটের পিঠে উঠানোর জন্য নিজে হাটু গেড়ে বসতেন এবং সেই হাটুতে পা রেখে সাফিয়া রাঃ উটের পিঠে উঠতেন ৷
-সাফিয়া(রাঃ) বলেন, ‘একবার ভ্রমণের সময় নবী আমার প্রতি সীমাহীন মায়া মমতা দেখিয়েছিলেন। সে সময় আমার বয়স কম ছিল তাই প্রায় সময়ই হাওদাতে বসে থাকতে থাকতে আমার তন্দ্রা এসে যেত আর আমার মাথা কাঠের হাওদাতে বাড়ি খেত। নবী অনেক ভালবাসা আর মমতার সাথে আমার মাথা ধরে রাখতেন আর বলতেন, ‘ওহে হুয়ায়ের কন্যা! নিজের দিকে খেয়াল রাখ, না হয় ঘুমিয়ে কিংবা ঝিমিয়ে পড়ে ব্যাথা পাবে।’( বুখারী)
-একবার ভ্রমণের সময় সাফিয়া(রাঃ) আর রাসূল উট থেকে পড়ে যান। আবু তালহা(রাঃ) দৌড়ে রাসূল এর কাছে গেলে তিনি তাঁকে প্রথমে সাফিয়া(রাঃ) এর খোঁজ নিতে বলেন।[বুখারী)
(৩৭১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৮৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৮৬৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)http://www.hadithbd.com/share.php?hid=27424
শুধু তাই নয় রাসূল সাঃ উনাকে অত্যন্ত উঁচু মর্যাদা দিতেন ৷
-সাফিয়া(রাঃ) বলেন, “একবার রাসূল ঘরে এসে দেখতে পান আমি কাঁদছি। রাসূল জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি হয়েছে তোমার?’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনার কিছু স্ত্রী আপনার পরিবার আর কুরাইশদের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তাঁরা বলে যে,তাঁরা কুরাইশদের সাথে সম্পর্কযুক্ত আর আমি একজন ইহুদির কন্যা। রাসূল বললেন, ‘ওহে হুয়ায়ের কন্যা! এতে কান্নার কি আছে? তোমার তাদেরকে জবাব দেয়া উচিৎ ছিল, ‘কিভাবে তোমরা আমার থেকে উত্তম হতে পারো? যখন হারুন আমার পিতা, মুসা আমার চাচা আর মুহাম্মদ আমার স্বামী!’
( এর পর হতে সাফিয়া রাঃ এই কথা বলতেন )
গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত]
হাদিস নম্বরঃ ৩৮৯২
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)http://www.hadithbd.com/share.php?hid=43841
সাফিয়াও (রাঃ) নবী পরিবারের সাথে উষ্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। তিনি ফাতেমা(রাঃ) কে তাঁর প্রতি স্নেহের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে গয়না উপহার দেন। এছাড়া তিনি খায়বার থেকে যে গয়না এনেছিলেন তা নবীপত্নীদের উপহার দেন।” কেন তিনি নবীর কন্যার সাথে ভাল সম্পর্ক রাখতেন?
-“সাফিয়া(রাঃ) খুবই দানশীল ও উদার রমণী ছিলেন। তিনি আল্লাহর জন্য তাঁর যা আছে তাঁর সবই দান করতেন, অবস্থা এমন হয়েছিল যে তিনি জীবিত থাকা অবস্থাতেই তাঁর বাড়ি দান করে যান।”
- প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ইবনে কাসির(রহ:) তাঁর সম্পর্কে বলেন, “ইবাদত, ধার্মিকতা, দুনিয়াবিমুখীতা এবং দানশীলতায় তিনি ছিলেন অন্যতম সেরা নারী।”
রাসূলের সাঃ ওফাতের পরও যিনি রাসূলের সাঃ দেখানো পথে চলেছেন তিনি কি রাসূলের সাঃ প্রতি সন্তুষ্ট ছিলেন না?
Bangla Hadith -গ্রন্থঃ সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)| অধ্যায়ঃ ১৪/ কর, খাজনা, অনুদান ও প্রশাসনিক দায়িত্ব সম্পর্কে