Are you sure?

ইতিহাস »  সিরাত বিবিধ »  ইসলাম বিদ্বেষীদের অপনোদন হাদিস »  আমল

রাসুল্লাহ সাঃ কি লিখতে পড়তে পারতেন ?

মুহাম্মদ(সাঃ) উম্মী ছিলেন এটা কারো অজানা নয়! কোরআন এবং হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায় এটি স্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত। নবী (সা.) কোন কিছু লিখতেন না বা পড়তেন না যা পবিত্র কোরআনের সূরা আনকাবুতের ৪৮ নং আয়াতে উল্লিখিত হয়েছে--
- وَمَا كُنْتَ تَتْلُو مِنْ قَبْلِهِ مِنْ كِتَابٍ وَلَا تَخُطُّهُ بِيَمِينِكَ إِذًا لَارْتَابَ الْمُبْطِلُونَ
“আপনি তো এর পূর্বে কোন কিতাব পাঠ করেন নি এবং স্বীয় দক্ষিণ হস্ত দ্বারা কোন কিতাব লিখেন নি। এরূপ হলে মিথ্যাবাদীরা অবশ্যই সন্দেহ পোষণ করত।”
তৎকালীন আরবে অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন লোকের সংখ্যা খুব কমই ছিল। তাই নবী যদি কোন শিক্ষকের কাছে লিখন ও পঠন শিক্ষা লাভ করতেন তাহলে সকলেই তা জানত। এ কারণেই এ বিষয়টি তাঁর ‘উম্মী’ হবার পক্ষে প্রমাণ।
এ আয়াতটি নবুওয়াতের পূর্বের কথা বললেও ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে,নবী (সা.) নবুওয়াতের পরও কারো নিকটেই লিখন ও পঠন শিক্ষা লাভ করেন নি।
কিন্তু ইদানীং ইয়াহুদী চক্রের দালাল মহাউম্মাদ মুফাসসিল বিভিন্ন ভাবে ভুল ও অপব্যাখ্যার মাধ্যমে প্রমাণ করতে চাইছে যে রাসুল(সাঃ) পড়া লেখা জানতেন এবং বাইবেল, তাওরাত ও গ্রীক সভ্যতার পুস্তক গুলো থেকে কপি করে কোরআন রচনা করেন। আমাদের কিছু ভাই ও না বুঝে এই মতের সাথে (লেখা পড়া জানতেন) একমত হচ্ছেন।
আজ সে বিষয়ের উপরই আলোকপাত করতে চাই---
বন্ধুগন আলোচনার শুরোতেই জানা দরকার "উম্মী" অর্থ কি!
উম্মী শব্দের অর্থ ঃ
Edward Lanes Lexicon অনুসারে ক্লাসিক আরবী শব্দ “উম্মী”- অর্থ “জেন্টাইল” অথবা যে মুসা (আঃ) এর আইন (তওরাত) সম্পর্কে অবগত নয় (Those who are not familiar with the law of Moses) অথবা যে লিখতে এবং পড়তে জানেনা অর্থাৎ অক্ষর জ্ঞানহীন। কোন ইহুদী যে তার নিজের গ্রন্থ তওরাত সম্পর্কে অবগত নয় তাকেও উম্মী বলা হয়েছে। যেমনঃ
And among them are unlettered (উম্মী) ones who do not know the Scripture except in wishful thinking, but they are only assuming (২ঃ৭৮)
(এইখানে উম্মী শব্দের অর্থ করা হয়েছে অক্ষরজ্ঞানহীন/ unlettered)
“জেন্টাইল” শব্দটা ল্যাটিন “Gentilis” থেকে এসেছে যার দ্বারা কোন গোত্রের সাথে সম্পর্ক যুক্ত বোঝায়। এইখানে এটা দ্বারা নন- ইহুদিদের বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ যারা ইহুদিদের গোত্রের অন্তর্ভুক্ত নয় তারাই জেন্টাইল।
রাসুল(সাঃ) এর ক্ষেত্রে নিরক্ষর শব্দটিই বেশি গ্রহনযোগ্য।
অনেকে লিখন ও পঠন শিক্ষা লাভ না করার সঙ্গে অশিক্ষিত হবার বিষয়টি গুলিয়ে ফেলেন ও ‘উম্মী’ শব্দটির অর্থ করে থাকেন ‘অশিক্ষিত’ বা মূর্খ বা জ্ঞানহীন। কিন্তু এ দু’য়ের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। লেখা, পড়া না জানার অর্থ এইনয় যে তিনি জ্ঞানহীন ছিলেন! বিভিন্ন বর্নণায় তাঁর জ্ঞানের প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রকৃতপক্ষে মাওলা চাননি তিনি কোন মানুষের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহন করেন। মাওলা নিজেই তাকে শিক্ষা দিয়েছিলেন, আরোহন করিয়েছিলেন জ্ঞানের সর্বোচ্চ চূড়ায়!
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক রাসুল সম্পর্কে বলেন সূরা রাহমান ৫৫:১-২ আয়াতঃ
الرَّحْمَنُ
অর্থঃ করুনাময় আল্লাহ।
عَلَّمَ الْقُرْآنَ
অর্থঃ (মুহাম্মাদ) শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন।
সূরা নিসা ৪:১১৩ আয়াতঃ
وَلَوْلاَ فَضْلُ اللّهِ عَلَيْكَ وَرَحْمَتُهُ لَهَمَّت طَّآئِفَةٌ مُّنْهُمْ أَن يُضِلُّوكَ وَمَا يُضِلُّونَ إِلاُّ أَنفُسَهُمْ وَمَا يَضُرُّونَكَ مِن شَيْءٍ وَأَنزَلَ اللّهُ عَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ وَكَانَ فَضْلُ اللّهِ عَلَيْكَ عَظِيمًا
অর্থঃ যদি আপনার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা না হত, তবে তাদের একদল আপনাকে পথভ্রষ্ট করার সংকল্প করেই ফেলেছিল। তারা পথভ্রান্ত করতে পারে না কিন্তু নিজেদেরকেই এবং আপনার কোন অনিষ্ট করতে পারে না। আল্লাহ আপনার প্রতি ঐশী গ্রন্থ ও প্রজ্ঞা অবতীর্ণ করেছেন এবং আপনাকে এমন বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন, যা আপনি জানতেন না। আপনার প্রতি আল্লাহর করুণা অসীম।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পবিত্র বাণীতে ইরশাদ করেছেন ‘ইন্নামা বুয়িসতো মুয়াললেমান’ অর্থ-আমাকে শিক্ষক করে পাঠানো হয়েছে (ইবনে মাযা আলিম ও তালবে ইলমের ফযিলত মাতান-পাতা-২০ ও ২১)।
উম্মী ছিলেন তার প্রমাণঃ
কোরআনে আল্লাহ্‌ বলেন-- সুরা -আরাফ :১৫৭
وَالۡاِنۡجِيۡلِ يَاۡمُرُهُمۡ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَيَنۡهٰٮهُمۡ عَنِ الۡمُنۡكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ الۡخَبٰۤٮِٕثَ وَيَضَعُ عَنۡهُمۡ اِصۡرَهُمۡ وَالۡاَغۡلٰلَ الَّتِىۡ كَانَتۡ عَلَيۡهِمۡ‌ؕ فَالَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا بِهٖ وَعَزَّرُوۡهُ وَنَصَرُوۡهُ وَاتَّبَعُوۡا النُّوۡرَ الَّذِىۡۤ اُنۡزِلَ مَعَهٗۤ‌ ۙ اُولٰۤٮِٕكَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ‏﴾
(আজ তারাই এ রহমতের অংশীদার) যারা এ প্রেরিত উম্মী নবীর আনুগত্য করে, ১১২ যার উল্লেখ নিকট এখানে তাওরাত ও ইনজীলে লিখিত অবস্থায় পাওয়া যায়। ১১৩ সে তাদের সৎকাজের আদেশ দেয়, অসৎকাজ থেকে বিরত রাখে, তাদের জন্য পাক পবিত্র জিনিসগুলো হালাল ও নাপাক জিনিসগুলো হারাম করে১১৪ এবং তাদের ওপর থেকে এমন সব বোঝা নামিয়ে দেয়। যা তাদের ওপর চাপানো ছিল আর এমন সব বাঁধন থেকে তাদেরকে মুক্ত করে যাতে তারা আবদ্ধ ছিল। ১১৫ কাজেই যারা তার প্রতি ঈমান আনে, তাকে সাহায্য সহায়তা দান করে এবং তার সাথে অবতীর্ণ আলোক রশ্মির অনুসরণ করে তারাই সফলতা লাভের অধিকারী।
অর্থাৎ এখানে রাসুল(সাঃ) কে উম্মী বলা হয়েছে।
উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট সর্বপ্রথম যে ওয়াহী আসে, তা ছিল নিদ্রাবস্থায় বাস্তব স্বপ্নরূপে। যে স্বপ্নই তিনি দেখতেন তা একেবারে প্রভাতের আলোর ন্যায় প্রকাশিত হতো। অতঃপর তাঁর নিকট নির্জনতা পছন্দনীয় হয়ে দাঁড়ায় এবং তিনি ‘হেরা’র গুহায় নির্জনে অবস্থান করতেন। আপন পরিবারের নিকট ফিরে এসে কিছু খাদ্যসামগ্রী সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার পূর্বে- এভাবে সেখানে তিনি এক নাগাড়ে বেশ কয়েক দিন ‘ইবাদাতে মগ্ন থাকতেন। অতঃপর খাদীজাহ (রাঃ)-এর নিকট ফিরে এসে আবার একই সময়ের জন্য কিছু খাদ্যদ্রব্য নিয়ে যেতেন। এভাবে ‘হেরা’ গুহায় অবস্থানকালে তাঁর নিকট ওয়াহী আসলো। তাঁর নিকট ফেরেশতা এসে বললো, ‘পাঠ করুন’। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ [‘‘আমি বললাম, ‘আমি পড়তে জানি না।] তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ [অতঃপর সে আমাকে জড়িয়ে ধরে এমনভাবে চাপ দিলো যে, আমার খুব কষ্ট হলো। অতঃপর সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললো, ‘পাঠ করুন’। আমি বললামঃ আমি তো পড়তে জানি না।’ সে দ্বিতীয়বার আমাকে জড়িয়ে ধরে এমনভাবে চাপ দিলো যে, আমার খুব কষ্ট হলো। অতঃপর সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললোঃ ‘পাঠ করুন’। আমি উত্তর দিলাম, ‘আমি তো পড়তে জানি না।’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অতঃপর তৃতীয়বারে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে চাপ দিলেন। তারপর ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘‘পাঠ করুন আপনার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত পিন্ড থেকে, পাঠ করুন, আর আপনার রব অতিশয় দয়ালু’’- (সূরাহ্ ‘আলাক্ব ৯৬/১-৩)।
(৩৩৯২, ৪৯৫৩, ৪৯৫৫, ৪৯৫৬, ৪৯৫৭, ৬৯৮২; মুসলিম ১/৭৩ হাঃ ১৬০, আহমাদ ২৬০১৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩)
যখন হদাইবিয়ার সন্ধি লিখিত হয় তখন মুশরিকরা রাসুল কথাটি সন্ধিপত্র থেকে বাদ দিতে বলে। রাসুল(সাঃ) আলী(রাঃ) কে তা কেটে ফেলতে বলেন। আলী(রাঃ) তা কাটতে অপারগতা প্রকাশ করলে তিনি বলেন" জায়গাটি আমাকে দেখিয়ে দাও"! অতঃপর দেখিয়ে দেয়ার পরে তিনি নিজ হাতে তা কেটে দিলেন।
প্রশ্ন হচ্ছে- যদি তিনি লিখতে পড়তে জানতেন তবেকি বলতেন" আমাকে জায়গাটি দেখিয়ে দাও? কখনোই নয়।
বন্ধুগন, একজন নিরক্ষর ব্যক্তির মুখ দিয়ে উচ্চারিত কোরআনে সৃষ্টির উৎস, পরকাল, মানুষ, নৈতিকতা, বিধি-বিধান ও আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে অসাধারণ সুন্দর ও বিশুদ্ধ ভাবে বর্ণিত হয়েছে যা কখনোই সম্ভব ছিলনা!
এটা ইসলাম বিরোধীরা বুঝে! আর এজন্যই তারা আজ উঠে পড়ে লেগেছে রাসুল(সাঃ) অক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন প্রমাণ করতে। যা তাদের ইসলাম ও রাসুল(সাঃ) বিরোধী প্রচারণারই অংশ!