স্যাটানিক ভার্সেস হল ইসলামের নামে একটা জঘন্য অপপ্রচার, হযরত মুহাম্মাদ ﷺ এর বিরুদ্ধে একটা অপবাদ ।
বাংলাতে কোন ইসলামিক বইয়ে স্যাটানিক ভার্সেস ঘটনাকে রেফার করা হয়না। প্রতিবাদ করার জন্যও না। তাই বাংলাদেশের বেশিরভাগ মুসলিমের কাছেই অজানা ১৩০০ বছর ধরে চলে আসা এই স্যাটানিক ভার্সেস অপবাদ।
যদি মনে হয়, এরকম কোন অপবাদ সম্পর্কে পড়লে নিজের ঈমান দুর্বল হয়ে যেতে পারে, তাহলে এ পোস্ট আপনার জন্য নয়। না পড়াই ভাল।
কিন্তু, যদি আপনি জানতে চান, এ অপবাদটা কী, তাহলে এ পোস্ট আপনার জন্যই। :)
আমি চেষ্টা করেছি এ নোটে, প্রমাণ করতে, যে, স্যাটানিক ভার্সেস একটা মিথ্যা অপবাদ।
তাহলে এবার আর্টিকেলে প্রবেশ করুন। :)
ইন্ডিয়া থেকে ইংল্যান্ডে উড়ে যাচ্ছে বিমান। প্লেনের সিটে বসে আছে জিবরীল ফারিস্তা আর সালাদিন চামচা। এর মধ্যে জিবরীল ফারিস্তা সেলিব্রিটি মানুষ। বলিউডের নায়ক। সালাদিন চামচাও অভিনেতা, তবে নিজ দেশ ইন্ডিয়ার প্রতি তার বীতশ্রদ্ধ অবস্থা মনের। নিজের বাবাকেও সে দেখতে পারে না।
তবে এ মুহূর্তে তাদের দুজনের কারও অবস্থাই সুবিধার মনে হচ্ছে না, কারন, প্লেন হাইজ্যাক হয়েছে সন্ত্রাসিদের দ্বারা।
ইংলিশ চ্যানেলের উপরে এসে কোন কারণে প্লেন বিস্ফোরিত হয়ে যায়। অনেক উঁচু থেকে তারা পড়তে থাকে। কিন্তু জাদুকরিভাবে বেঁচে যায় দুজনেই। কিন্তু, তাদের মধ্যে একটা পরিবর্তন হয়ে যায়। তাদের পারসোনালিটি চেঞ্জ হয়ে যায়। জিবরীল ফারিস্তা ধারণ করে ফেরেশতা জিবরাঈল এর পারসোনালিটি। আর সালাদিন চামচা ধারণ করে ইব্লিস শয়তান আজাজিলের পারসোনালিটি।
ফারিস্তা তখন নিজের (জিবরাইলের) মেমরিতে হারিয়ে ফেলে বারবার নিজেকে। হারিয়ে যায় ১৫০০ বছর আগের স্মৃতিতে। ফিরে যায় আর নিজেকে আবিস্কার করে একটা জাহিলিয়ার শহরে, মক্কায়। সেখানে তাঁর স্মৃতি আবর্তিত হয় মুহাম্মাদ নামের এক লোককে কেন্দ্র করে।
সুদর্শন মুহাম্মাদ আর সেখানের প্রভাবশালী আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দের মধ্যে গোপন প্রেমের লক্ষণ দেখে সে। কিন্তু, হিন্দার সাথে আবার অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক আছে মক্কার এক কবির। আবু সুফিয়ান সব জেনেও না জানার ভান করে থাকে।
মুহাম্মাদ এর কাছে আয়াত আনার স্মৃতি আছে তাঁর মাথায়... এক গুহায়। এরপর থেকে সে এক নতুন ধর্ম প্রচার করছে যার নাম “ইসলাম”; কিন্তু, প্রতিনিয়ত সে প্রবল বিরোধিতার সম্মুখীন হচ্ছে মক্কাবাসীদের কাছ থেকে। প্রতিনিয়ত তার মাথায় খেলা করছে কীভাবে এদেরকে কনভিন্স করা যায়? এরা আল্লাহ্কে মানছে বটে, কিন্তু সাথে সাথে লাত, উজ্জা, মানাত এসব দেবীদেরও পূজা করছে। এদেরকে কীভাবে অনুগত করা যায়? ওসব দেবীদের স্বীকৃতি দিয়ে?
এক দিন মক্কার প্রধান উপাসনালয় কাবা ঘরের সামনে সম্মিলিত প্রার্থনা করছে মুহাম্মাদ, যাকে তারা সালাত (নামাজ) ডাকে। তার উপর আসা আয়াতগুলো পাঠ করছে সে। যখন সুরা নাজামের এ আয়াত পর্যন্ত আসল, “তোমরা কি ভেবে দেখেছো লাত, উজ্জা আর মানাত সম্পর্কে?” এরপর সে না থেমেই যেন কারও (ইবলিস?) প্ররোচনায় আরও একটি আয়াত পাঠ করে গেল, “তাদের কাছে আসলেই সাহায্য চাওয়া যায়।”
এ কথা শুনেই উপস্থিত মক্কাবাসীরা, কুরাইশ নেতারা উৎফুল্ল হয়ে সম্মিলিত প্রার্থনায় যোগ দিল। আর প্রার্থনা শেষে মুহাম্মাদকে অভিনন্দিত করল। কারন, সে মক্কাবাসির সাথে তার বিরোধ মিটিয়ে ফেলেছে।
কিন্তু, অচিরেই সে তার সেই আয়াত, যেটা শয়তান (সালাদিন চামচা?) অনুপ্রবেশ করিয়েছিল তার মনে, সেটা প্রত্যাখ্যান করে নিল। কারন, জিবরাঈল (নায়ক জিবরীল ফারিস্তা নিজে?) এসে তাঁকে ধমক দিয়ে যায় শয়তানের প্ররোচনায় সাড়া দেবার জন্য।
তাই বিরোধ আবার শুরু হল। এক পর্যায়ে মক্কা থেকে পালিয়ে গেল মুহাম্মাদ।
অদূরেই এক নগরী আছে, যার নাম ইয়াস্রিব। সেখানে গিয়ে সে নিজের রাজ্য গড়ে তুলল ধীরে ধীরে। আর সে নগরির নাম হল মদিনা। এরপর যখন বিজয়ীর বেশে সেই মক্কাতেই ফিরে এলো মুহাম্মাদ, তখন সেই বিরোধী কবি পালিয়ে গেল মক্কার সুবিখ্যাত পতিতালয়ে, যেখানে যেখানের বাসিন্দাদের সাথে মুহাম্মাদের স্ত্রীদের মিল পায় সেই কবি...
এরকম আরও কিছু স্মৃতি দেখতে থাকে জিবরীল ফারিস্তা... সে ত্যাগ করে যায় সালাদিন চামচাকে। চামচাকে গ্রেফতার করে পুলিশ ইংল্যান্ডে অবৈধ অনুপ্রবেশের জন্য। দুজনই তখন মানুষ আর অতিপ্রাকৃত চরিত্রের মধ্যে আটকা পড়ে আছে। জিবরীল ফারিস্তা তখন ইংল্যান্ডে খুঁজছে তার হারানো প্রেম এলিকে। কিন্তু এলি তাকে গ্রহন করতে চায় না তার “মানসিক সমস্যা” এর কারণে। তবে এক সময় সম্ভাবনা দেখা যায় যে, এলি হয়ত তাকে মেনে নেবে।
ওদিকে এক সময়, পুরোপুরি মানুষ হয় চামচা। সে তার পুরো রাগ ঝারতে চায় জিবরীল এর উপর। কেন সে তাকে ত্যাগ করে চলে গিয়েছিল? সে এলির সাথে জিবরীলের সম্পর্ক রিপেয়ারের যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে সেটা ধ্বংস করে দেয়। এলি হারিয়ে যায় জিবরীলের জীবন থেকে। ফারিস্তা সব বুঝতে পারে, কিন্তু, সে মাফ করে দেয় চামচাকে।
দুজনেই ইন্ডিয়াতে ফিরে আসে। জিবরীল এরপর ঈর্ষা থেকে হত্যা করে বসে এলি-কে। এরপর নিজে আত্মহত্যা করে। তবে চামচা জিবরীলের কাছ থেকে ক্ষমা পেয়ে এখন ইন্ডিয়াতে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করে। আর, তার বাবার সাথেও তার সম্পর্ক ভাল হয়ে যায়। কেবল থাকে না আর জিবরীল ফারিস্তা।
এতক্ষণ যা পড়লেন এটা সালমান রুশদির কুখ্যাত “স্যাটানিক ভার্সেস” বই এর সংক্ষিপ্ত কাহিনী। {যতটুকু এ পোস্টের জন্য দরকার।} তথাকথিত যে ঘটনার উপর বেজ করে এ বই লিখা সেটাও “স্যাটানিক ভার্সেস ইন্সিডেন্ট” নামে পরিচিত। এবং ইসলামবিরোধীরা এই ঘটনাকে ব্যবহার করে ইসলাম আর মুহাম্মাদ ﷺকে হেয় করতে। DAN BROWN এর 'ভিঞ্চি কোড' যেভাবে ফিকশন এর মাধ্যমে খ্রিস্টধর্মকে আঘাত করে, সেভাবেই ইসলামের উপর আঘাত হানেন রুশদি এই বই দিয়ে।
প্রথম দিকের কিছু জীবনীতে বা তাফসিরে (যেমন, আল তাবারি, ইবনে ইসহাক, ইবনে সাদ) এ স্যাটানিক ভার্সেস ঘটনার উল্লেখ আছে। তবে, ইবনে হিশামের লিখা সিরাতে নেই। মূলত, ইবনে ইসহাক আর তাবারির মতো বিখ্যাত বইয়ে এ ঘটনা বর্ণিত আছে দেখে স্যাটানিক ভার্সেসকে সত্যি বলে দাবি করে অনেকে। আর ইসলামবিরোধীরা তো প্রমাণ হিসেবে এদের লেখাই দেখায়।
আসলেই কি তাই? স্যাটানিক ভার্সেস কি আসলেই ঘটেছিল?
মুহাম্মাদ ﷺ এর জীবনী নিয়ে যত বিতর্ক ইসলামবিরোধীরা করে থাকে, সেগুলোর মধ্যে তাঁর বহু-বিবাহ, তাঁর বনুকুরাইজার ইহুদী হত্যাকাণ্ড, তাঁর পরিচালিত যুদ্ধগুলো--- এসব পয়েন্ট তুলে ধরে তারা। এ বিষয়গুলো দিয়ে সমালোচনা করতে পারেন তারা, আর বড় জোর এক্সট্রিমিস্ট হিসেবে মুহাম্মাদ ﷺকে তারা উপস্থাপন করতে পারেন, তবে, তাঁকে ভণ্ড বলা যায় না এগুলো দিয়ে। কিন্তু... ওসব টপিক ছাপিয়ে সবচেয়ে বিতর্কিত হিসেবে বলা হয়, স্যাটানিক ভার্সেস ইন্সিডেন্ট। যদি প্রমাণ করা যায়, মুহাম্মাদ ﷺ এর মুখ থেকে শয়তানের কথা বের হয়েছে, তাহলে ইহুদী আর খ্রিস্টধর্ম মতে, তিনি ভণ্ড।
আল্লাহ্ মুহাম্মাদ ﷺকে শয়তানের হাত থেকে রক্ষা করেছেন, আর কুরআনকে হিফাযত করেছেন। মুহাম্মাদ ﷺ কোন শয়তানের বাণী প্রচার করেন নি কখনও।
একটু পরে আমি তাবারির বই থেকে স্যাটানিক ভার্সেস ঘটনা তুলে ধরব, কিন্তু সে ঘটনাটা আসলে পুরোপুরি মিথ্যা আর বানোয়াট।
তৎকালীন আরবে, বিশেষ করে মক্কায়, ৩৬০ দেবদেবীর পূজা হত। এলাকাভিত্তিক বিশেষ বিশেষ দেবীর প্রাধান্য ছিল। এর মধ্যে তিন দেবী আল্লাত, আলউজ্জাহ, আলমানাত- এ তিন জনকে তারা আল্লাহ্র তিন কন্যা হিসেবে মানত। তারা সরাসরি আল্লাহ্র পূজা করত না, তাদের ধারণা ছিল অনেকটা এরকম- আল্লাহ্ প্রধান হলেও, তাঁর কাজ কর্ম তিনি করান দেবদেবীদের দিয়ে। আর দেবদেবীদের খুশি করলেই আল্লাহ্ খুশি। তাই আসলে, তাদের জীবনে “আল্লাহ্”র ভুমিকা/গুরুত্ব কম ছিল। এজন্য অনেকটা হেয় মনভাব চলে আসে আল্লাহ্র প্রতি। জাহিলিয়ার যুগে, ছেলে সন্তান হলে তারা সৌভাগ্য মনে করত, আর মেয়ে হলে, দুর্ভাগ্য। অনেকটা উপহাসের মতো করেই যেন, তারা আল্লাহ্র কন্যা সাব্যস্ত করে, কোন পুত্র নয়।
ইসলাম প্রচার শুরু করার পর নির্যাতনের মুখে কিছু সাহাবী আবিসিনিয়াতে হিজরত করেন। এটা মনে রাখবেন। :)
যাক, এবার, তাবারির বর্ণনায় স্যাটানিক ভার্সেস এর মিথ্যা ঘটনাটা পড়া শুরু করা যাক—
“...তো, মুহাম্মাদ ﷺ তখন নিজের গোত্রের ভালর জন্য দুশ্চিন্তাগ্রস্থ ছিলেন। তিনি ভাবছিলেন, কীভাবে তাদের আকর্ষণ যায়। এরকম
বলা হয়েছে যে,
যখন তিনি দেখলেন, তাঁর নিজের গোত্র তাঁকে ত্যাগ করেছে আর নির্যাতন করছে, তখন তিনি মনে খুব কষ্ট পেলেন। তিনি আশা করতেন, আল্লাহ্ এমন কোন আয়াত পাঠাবেন যেটা শুনে তাঁর গোত্র তাঁকে বরণ করে নিবে। এই চিন্তা তাঁকে এত মগ্ন করে রাখল, যে নিজের গোত্রের প্রতি ভালোবাসা থেকে উৎপন্ন সেই বাসনা তাঁকে সারাক্ষণ তাড়া করতে লাগল। এতই চাইতেন তিনি সেটা। তখন আল্লাহ্ প্রেরণ করলেন সুরা নাজাম (THE STAR: নক্ষত্র)।
[কাবার সামনে একদিন] তিনি তিলাওয়াত করতে লাগলেন, “নক্ষত্রের কসম যখন তা অস্ত যায়, তোমাদের সংগী পথভ্রষ্ট হয়নি এবং বিপথগামীও হয়নি…” এভাবে পাঠ করতে করতে যখন তিনি এ আয়াতে আসলেন, “তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও উযযা সম্পর্কে? এবং তৃতীয় আরেক (দেবী) মানাত সম্পর্কে?” তখন শয়তান মুহাম্মাদ ﷺ এর ইচ্ছা মাফিক অন্তরে প্রবেশ করিয়ে দিল দুটো আয়াত এবং তিনি উচ্চারণ করলেন, “তাঁরা হলেন উচ্চপর্যায়ের গারানিক (এক জাতীয় পাখি); তাঁদের কাছে সাহায্য চাওয়া যায়।”
কুরাইশরা এ আয়াতদুটো শুনে খুব খুশি হয়ে গেল। এত দিনে মুহাম্মাদ ﷺ দেবতাদের ভাল বলেছেন। তাই তারা শুনতে লাগলেন। সাহাবীরাও কোন সন্দেহ করলেন না (!)। ভাবলেন, এটা বুঝি আসলেই আল্লাহ্ বলেছেন। এতদিনে আল্লাহ্ দেবদেবীদের স্বীকৃতি দিলেন। তাই সুরার শেষ পর্যন্ত মুহাম্মাদ ﷺ পাঠ করার পর যখন সিজদা দিলেন, তখন সাহাবীরাও দিল, সাথে কুরাইশরাও দিল, মোট কথা, কাবার সামনে যারা ছিল তারা সবাই সিজদা দিল। কেবল, ওয়ালিদ বিন মুগিরা নামের এক বৃদ্ধ সিজদা করতে পারলেন না। তিনি মাটি থেকে ধুলো নিয়ে কপালে দিলেন।
এরপর সবাই চলে গেল, আর কুরাইশরা খুশিমনে বলতে লাগল, “মুহাম্মাদ আমাদের দেবতাদের ভাল বলেছে। বলেছে, দেবীরা গারানিক পাখির মতো, আর তাদের সাহায্য প্রার্থনা করা যায়।”
আবিসিনিয়াতে এ খবর গেল। কুরাইশরা নাকি ইসলাম গ্রহণ করেছে। তাই, লোকেরা কেউ কেউ ফেরত আসতে লাগল। আর কেউ কেউ রয়ে গেল। তখন জিবরাঈল আসলেন
(এত দিনে!)
আর বললেন, “কী করেছ তুমি এটা, মুহাম্মাদ? তুমি এমন জিনিস তিলাওয়াত করলে যেটা আল্লাহ্ পাঠান নি। যেটা আমি আনিনি।” রাসুল ﷺ খুব দুঃখ পেলেন। আল্লাহ্র ভয় পেলেন। তখন আল্লাহ্ তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে আয়াত প্রেরণ করলেন যে, এমন ভুল আগের নবীদেরও হয়েছে এবং মুহাম্মাদও সেরকম এক নবী। তাই আল্লাহ্ ঐ আয়াতদুটো ক্যানসেল করলেন আর এই আয়াত অবতারণ করলেন, “আমি আপনার পূর্বে যে সমস্ত রাসূল ও নবী প্রেরণ করেছি, তারা যখনই কিছু কল্পনা করেছে, তখনই শয়তান তাদের কল্পনায় কিছু মিশ্রণ করে দিয়েছে। অতঃপর আল্লাহ দূর করে দেন শয়তান যা মিশ্রণ করে। এরপর আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহকে সু-প্রতিষ্ঠিত করেন এবং আল্লাহ জ্ঞানময়, প্রজ্ঞাময়।” এভাবে আল্লাহ্ শয়তান যা প্রবেশ করিয়েছিল তাঁর মনে তা দূর করলেন আর রাসুলকে দুঃখ থেকে মুক্ত করলেন। নিজের আয়াত সুপ্রতিষ্ঠিত করলেন।
যখন কুরাইশরা শুনল, আল্লাহ্র কাছ থেকে শয়তানের আয়াত বাতিলের আদেশ এসেছে, তখন তারা বলল, “মুহাম্মাদ তউবা করেছে আর অন্য কিছু আয়াত এনেছে।” কুরাইশরা তখন রাগান্নিত হয়ে অনেক অত্যাচার করা শুরু করল সাহাবীদের উপর। অন্যদিকে, যারা আবিসিনিয়াতে হিজরত করেছিলেন, তারা ফেরত আসতে লাগলেন যখন শুনলেন, কুরাইশরা নবীর সাথে সিজদা দিয়েছে ...”
এই ছিল ঘটনা। আরেকটা ভার্সন এ বলা আছে, জিবরাঈল (আ) সেই দিন সন্ধ্যাতেই এসে আয়াত ক্যানসেল করে দিয়ে যান।
এখন, যে সুরা নিয়ে এ কাহিনী সেটার কিছু অংশের অনুবাদ আগে পড়া উচিত—
(১)নক্ষত্রের কসম, যখন তা অস্ত যায়।
(২)তোমাদের সংগী পথভ্রষ্ট হয়নি এবং বিপথগামীও হয়নি।
(৩)এবং সে প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলে না।
(৪)কুরআন হল ওহী, যা প্রত্যাদেশ হয়।
(৫)তাকে শিক্ষা দান করে এক শক্তিশালী ফেরেশতা (জিবরাঈল),
(৬)যে কিনা সহজাত শক্তিসম্পন্ন, সে (জিবরাঈল) নিজ আকৃতিতে প্রকাশ পেল।
(৭)উর্ধ্ব দিগন্তে,
(৮)অতঃপর নিকটবর্তী হলো ও নেমে এলো।
(৯)তখন (তাদের মধ্যে) দুই ধনুকের সমান ব্যবধান ছিল অথবা আরও কম।
(১০)তখন আল্লাহ তাঁর দাসের প্রতি যা প্রত্যাদেশ করবার, তা প্রত্যাদেশ করলেন।
(১১)রসূলের অন্তর মিথ্যা বলেনি যা সে দেখেছে (জিবরাইলের আসল আকৃতি)।
(১২)তোমরা কি বিষয়ে বিতর্ক করবে যা সে দেখেছে?
(১৩)নিশ্চয় সে তাকে আরেকবার দেখেছিল, {মিরাজের কাহিনী}
(১৪) [৭ম আসমানের] সিদরাতুল মুন্তাহার নিকটে,
(১৫)যার কাছে অবস্থিত বসবাসের জান্নাত।
(১৬)যখন বৃক্ষটি দ্বারা আচ্ছন্ন হওয়ার, তদ্দ্বারা আচ্ছন্ন ছিল তা।
(১৭)তার (মুহাম্মাদের) দৃষ্টিবিভ্রম হয় নি এবং সীমালংঘনও করেনি।
(১৮)নিশ্চয় সে তার পালনকর্তার মহান নিদর্শনাবলী অবলোকন করেছে।
(১৯)তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও ওযযা সম্পর্কে?
(২০)এবং তৃতীয় আরেক (দেবী) মানাত সম্পর্কে?
(২১)[তাহলে কি] পুত্র-সন্তান কি তোমাদের জন্যে এবং কন্যা-সন্তান আল্লাহর জন্য?
(২২)এমতাবস্থায় এটা তো হবে খুবই অসংগত বন্টন।
(২৩)এগুলো কতগুলো নাম বৈ নয়, যা তোমরা এবং তোমাদের পূর্ব-পুরুষদের রেখেছ। এর সমর্থনে আল্লাহ কোন দলীল নাযিল করেননি। তারা অনুমান এবং প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করে। অথচ তাদের কাছে তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে পথ নির্দেশ এসেছে।
(২৪)মানুষ যা চায়, তাই কি পায়?
(২৫)অতএব, পরবর্তী ও পূর্ববর্তী সব মঙ্গলই আল্লাহর হাতে।
(২৬)আকাশে অনেক ফেরেশতা রয়েছে। তাদের কোন সুপারিশ ফলপ্রসূ হয় না যতক্ষণ আল্লাহ যার জন্যে ইচ্ছা ও যাকে পছন্দ করেন, অনুমতি না দেন।
...
...
...
(৬১)অতএব আল্লাহকে সেজদা কর এবং তাঁর ইবাদত কর।”
অনুরোধ থাকল, ১৩ থেকে ২৩ আয়াত পর্যন্ত একটু ভাল করে মনে রাখতে। পারলে আরেকবার পড়ুন।
এবার আসুন পর্যালোচনা করা যাক।
#১
ভুলে ভরা এ কাহিনীর অন্যতম একটা ভুল, কুরআনের এ আয়াত নাকি স্যাটানিক ভার্সেস কাহিনীর সময় নাজিল করা।
কুরআন 22:52
“আমি আপনার পূর্বে যে সমস্ত রাসূল ও নবী প্রেরণ করেছি, তারা যখনই কিছু বাসনা করেছে, তখনই শয়তান তাদের বাসনায় কিছু মিশ্রণ করে দিয়েছে। অতঃপর আল্লাহ দূর করে দেন শয়তান যা মিশ্রণ করে। এরপর আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহকে সু-প্রতিষ্ঠিত করেন এবং আল্লাহ জ্ঞানময়, প্রজ্ঞাময়।”
দুর্ভাগ্য তাদের, তারা ঠিকমত হোমওয়ার্ক করে নি। এ আয়াত মদিনায় নাজিল হয়, বহু বছর পরে, অন্য কোন পরিস্থিতিতে। এটা মক্কায় নাজিল করা না।
#২
সুরা নাজামের স্যাটানিক ভার্সেস ভার্সনটা হবে এরকম---
“(১৯)তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও ওযযা সম্পর্কে?
(২০)এবং তৃতীয় আরেক (দেবী) মানাত সম্পর্কে?
(২১) তাঁরা হলেন উচ্চপর্যায়ের গারানিক (এক জাতীয় পাখি);
(২২)তাঁদের কাছে সাহায্য চাওয়া যায়।
...
...
{এরপর কী তিলাওয়াত করেছেন সেটা বলা নেই কেবল শেষ আয়াত পর্যন্ত করেছেন বলা হয়েছে।}
...
...
(৬১)অতএব আল্লাহকে সেজদা কর এবং তাঁর ইবাদত কর।”
এ কাহিনী বানাতে গিয়ে একটা জায়গায় ফাঁক রয়ে গেছে তাদের। ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করলে বুঝা যায়, কাহিনীর প্রচারকরা এটা মেনেই নিয়েছে, অন্য আয়াতগুলো ছিল আল্লাহ্র, কিন্তু ঐ ২টা ছিল শয়তানের। ওকে। ভাল কথা। তাহলে তিলাওয়াত শুরুর আগ পর্যন্ত (মানে, শয়তান কুমন্ত্রণা দেয়ার আগ পর্যন্ত) “(১৯)তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও ওযযা সম্পর্কে? (২০)এবং তৃতীয় আরেক দেবী মানাত সম্পর্কে?” এ আয়াতের পরে তাঁর অন্তরে কোন আয়াত ছিল আসলে? তাঁর মেমরিতে কী ছিল? কারন, কাহিনী অনুযায়ী তিনি শেষ পর্যন্ত বর্তমানের মতই তিলাওয়াত করেন। অথচ, এরপরের আয়াতগুলোতে এক আল্লাহ্র প্রশংসা বর্ণনা করা হয়েছে। একটু আগে যিনি দেবদেবীর প্রশংসা করলেন, তিনিই আবার সুরা চালিয়ে গেলেন এক আল্লাহ্র প্রশংসা করতে করতে! আর, কারোরই কিছুই মনে হল না? সুরার একত্ববাদ থিয়োরির সাথে শিরকি আয়াত মোটেও মেলে না।
মোট কথা, কাহিনীতে বিশাল ঘাপলা আছে।
#৩
ছোট থেকেই মুহাম্মাদ ﷺ “বিশ্বস্ত” উপাধি পেয়েছিলেন। সবাই তাঁর ডিসিশন মেনে নিত। সবাই তাঁর বিচার বুদ্ধিতে বিশ্বাস রাখত। সবাই জানত, তিনি কোনদিন মিথ্যা বলেন না। কিন্তু তাহলে স্যাটানিক ভার্সেস এর মতো এত বড় একটা ঘটনা ঘটে যাবার পরেও কেন মুহাম্মাদ ﷺকে কুরাইশরা বিশ্বাস করা কন্টিনিউ করল? যে কিছু সময়ের মধ্যে নিজের বিশ্বাস পর্যন্ত চেঞ্জ করে ফেলতে পারে, তাঁর উপর মানুষ কীভাবে বিশ্বাস রাখবে?
তাহলে কি মুহাম্মাদ ﷺ কিছু সময়ের জন্য হলেও দেবদেবীদের স্বীকৃতি দিয়ে মিথ্যা বলেন নি? শত্রু কুরাইশদের তো অন্তত সেটা মনে রাখার কথা। তারপরেও মুহাম্মাদের ﷺ শত্রুদের কাছেও কেন তাঁর এ ভন্ডামি তুলে ধরে নি কুরাইশরা? খুব সহজেই তো তাঁকে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করা যেত।
রোমান সম্রাট হারকিউলিস/হিরাক্লিয়াসের দরবারে মক্কার নেতা মুহাম্মাদ ﷺ এর শত্রু আবু সুফিয়ানকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, মুহাম্মাদ ﷺ কি মিথ্যা বলতেন?
পরম শত্রু আবু সুফিয়ানও তখন স্বীকার করে, না। মুহাম্মাদ ﷺ মিথ্যা বলেননি কখনও।
স্যাটানিক ভার্সেস এর সময় জলজ্যান্ত একটা মিথ্যা বলার পরেও সুফিয়ান বলছেন, “মুহাম্মাদ সত্যবাদী”! কেন???
কারন,
স্যাটানিক ভার্সেস এর ঘটনা ঘটেনি কখনও।
#৪
মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর ৪০ বছর বয়স থেকে (অর্থাৎ নবুয়ত পাবার পর থেকে) যে বাণী প্রচার করে এসেছেন, সেটা ছিল, আল্লাহ্ এক। তাঁর কোন শরিক নেই। অন্য কোন দেব দেবী বলে কিছু নেই। শুধু এ একত্ববাদের জন্যই তাঁকে সইতে হয়েছে নির্যাতন, তাঁর সাহাবীদেরকেও ।
তায়েফে (আল্লাতের দেবীর অনুসারীদের এলাকা) পাথরের আঘাতে জর্জরিত হয়ে রক্ত গড়িয়ে গড়িয়ে পায়ের তলায় জমাত বাঁধে তাঁর। পা থেকে জুতো খুলতেও কষ্ট হচ্ছিল তাঁর। কী জন্য এ নির্যাতনের স্বীকার হন তিনি? কারন তিনি দেবদেবীদের অস্বীকার করেছিলেন।
তাঁর কোনো কোনো সাহাবী/সাহাবা মারা গিয়েছিলেন পর্যন্ত একত্ববাদ রক্ষা করতে গিয়ে। বিলাল (রা)কে উত্তপ্ত মরুভূমির বুকে আগুনের মতো বালুতে ভারি পাথর বুকে চাপা দিয়ে শাস্তি দেয়া হয়। কিন্তু তিনি মুখে একটা শব্দই বার বার বলছিলেন, “আহাদ! আহাদ!” (“এক! এক!”)
তাহলে কেন মুহাম্মাদ ﷺ মাত্র এক বেলার জন্য দেবদেবী মানতে যাবেন? এত নির্যাতনভোগ, এত নিপীড়ন অত্যাচার সহ্য করা- সব কি বৃথা কারণে? তিনি এ কথা বলতেই পারেন না। এটা একটা অপবাদ, একত্ববাদের বিরুদ্ধে।
আর, যারা মুহাম্মাদ ﷺকে ভণ্ড নবী বলে থাকেন, তারা বলেন, এটা ছিল একটা চালাকি। কুরাইশদের সাথে মিত্রতা স্থাপনের কুটিল কৌশল। তাই নাকি? তাহলে তো বলতেই হয়, তিনি সফল হয়েছিলেন। কারন, কুরাইশরা তাঁর মিত্র হয়ে গিয়েছিল তথাকথিত এ ঘটনার পর। তাহলে, বিজয় উদযাপন না করে তিনি আবার একত্ববাদে ফিরে গেলেন কেন? এটা তো বোকামি। কেউ যদি ধোঁকাই দিতে চায় মানুষকে, তাহলে better way (সুখ শান্তি) বাদ দিয়ে কেন আগের কষ্টে ফিরে যাবেন?
কারন, এরকম কোন ঘটনাই
ঘটেনি।
#৫
স্যাটানিক ভার্সেস এর কাহিনীর inventorরা একটা ভুল করে ফেলেছে। তারা কী ছড়াবে সেটা ঠিক করলেও, এক্স্যাক্ট বর্ণনা ঠিক করতে পারেনি। এজন্য খোদ সেই শয়তানের আয়াত দুটো পর্যন্ত কী ছিল সেটা নিয়ে এক একজন এক একরকম প্রচার করেছে। সেম স্টোরি, অনেক ভার্সন। {বোল্ড করা অংশে পার্থক্যগুলো খেয়াল করবেন} যেমন, একটা বর্ণনায় আছে, মুহাম্মাদ ﷺ যে “আয়াত”দুটো উচ্চারন করেন, সেগুলো হল--
“তিল্কা আল গারানিক আল উলা। ওয়া ইন্না শাফাতাহুন্না লাতুরতাজা।”
আরেক ভার্সন বলে, তিনি আসলে বলেছেন,
“তিল্কা আল গারানিকাহ আল উলা। ওয়া ইন্না শাফাতাহুম তুরতাজা।”
কিন্তু, আরেক স্টোরি বলছে, আসলে একটাই আয়াত বলেছিলেন এক্সট্রা। দুটো না। কেবল
“ওয়া ইন্না শাফাতাহুন্না তুরতাজা।”
আবার আরেক ভার্সন বলল, তিনি দুটো আয়াত বলেছেন তবে, একটু দীর্ঘ--
“ইন্নাহা লাহিয়া আল গারানিক আল উলা। ওয়া ইন্না শাফাতাহুন্না লাতুরতাজা।”
৫ম ভার্সন বলছে, আরও দীর্ঘ,
“ওয়া ইন্নাহুন্না লাহুন্না আল গারানিক আল উলা। ওয়া ইন্না শাফাতাহুন্না লাহিয়া আল্লাতি তুরতাজা।”
গুজব প্রচারকরা নিজেই ঠিক করতে পারলেন না, কী বলেছিলেন। কী আর করার তাদের? আসলে যে ঘটনা ঘটেই নি সেটা নিয়ে ঐকমত্য কীসের?
#৬
একটা ইন্টারেস্টিং পয়েন্ট, আয়াতে দেবীদেরকে গারানিক পাখির সাথে তুলনা করা হয়েছে। এটা খুবই আজব। কারন, তখনকার আরবে এটা কখনই প্রচলিত ছিল না যে, গারানিক পাখির সাথে দেবীর তুলনা করা হবে। গারানিক পাখির কথা তারা কেবল তখনই বলত যখন তারা কোন ব্লন্ড সুদর্শন ফর্শা নারী বা পুরুষকে Describe করত। কোন দেবীকে এরকম দৃষ্টিতে দেখাই হত না। আর মুখে বলা তো ছিল ভয়াবহ ধৃষ্টতা। [গারানিক হল সাদা পাখি (সারস টাইপ), যারা অনেক উঁচুতে উড়ে।] স্পষ্টত, পরবর্তী সময়ে যে বা যারা এটা প্রচার করেছে, তারা এ বিষয়টা খোঁজ নিতে ভুলে গেছে। দেবীরা অনেক উচ্চ পর্যায়ের, এটা বুঝাতে গিয়ে পাখির সাথে তুলনা করে ফেলেছে গুজব প্রচারকরা, খেয়াল ছিল না, তৎকালীন সময়ে এটা উচ্চারণ করলে কুরাইশদের হাতের একটা মারও মাটিতে পড়ত না।
#৭
স্যাটানিক ভার্সেস সমর্থকরা বলেন, কুরাইশদের সাথে স্যাটানিক ভার্সেস এর ঘটনার পর মুসলিমদের মিটমাট হয়ে গিয়েছিল বলেই তো আবিসিনিয়া/ইথিওপিয়া থেকে প্রথম হিজরতকারীরা ফিরে আসে, বা আসতে চায়। আর কী এমন কারন থাকতে পারে, এত সাহস নিয়ে ওদের ফেরার।
আসলে, উমার বিন খাত্তাব ছিলেন খুবই প্রভাবশালী কুরাইশ যাকে সবাই ভয় করতেন। সেই উমারের মতো লোক যখন ইসলাম গ্রহণ করে ফেললেন, তখন কুরাইশরা ভয় পেয়ে যায় আর আগের মতো নির্যাতন করার সাহস পায়না। নওমুসলিমরা একটু শান্তি পায়। হযরত হামজা (রা) আর উমার (রা) এর মতো powerful লোকেরা এখন ইসলামের সেবক- এ সুসংবাদ কানে আসতেই মাতৃভূমির বিরহে থাকা আবিসিনিয়ার হিজরতকারীরা কেউ কেউ ফিরে আসার চিন্তা করেন। কেউ কেউ ফিরেও আসেন হয়ত।
স্যাটানিক ভার্সেস এর কিছু নাই এখানে।
#৮
ইসলাম ছাড়া যারা অন্য ধর্মের হয়ে স্যাটানিক ভার্সেস এর পক্ষে সাফাই গায়, তারা নিজের অজান্তেই একটা জিনিস মেনে নেয়। মূলত, তারা যেটা বলে, হেরা গুহায় শয়তান জিবরাইলের বেশ ধরে এসে মুহাম্মাদ ﷺকে ধোঁকা দেয় আর নিজের বাণী তাঁর কাছে প্রচার করে। এজন্য কুরআন মূলত শয়তানের লিখা বই। আর, মুহাম্মাদ ﷺ ভণ্ড নবী। [ইহুদী আর খ্রিস্টানরা এ ধারণা পোষণ করে] নাউজুবিল্লাহ।
তারা কুরআনের কিছু আয়াত দেখিয়ে বলে, “এই যে, এখানেই তো বলে দেয়া হচ্ছে, স্যাটানিক ভার্সেস ঘটনা হয়েছিল, আর এই যে, আল্লাহ্ সতর্ক করে দিলেন মুহাম্মাদকে।”
তারা কি খেয়াল করেছে যে, এটা বলতে গিয়ে তারা নিজেরাই স্বীকার করে নিচ্ছে, ঐ আয়াতগুলো আসলেই আল্লাহ্র কাছ থেকে এসেছে?
আর, নাস্তিকরা বলেন, “মুহাম্মাদ নিজে নিজেই এসব বানিয়ে নিয়েছেন। তিনি নিজেই ঐ আয়াতদুটো বানান। আবার নিজেই পরে বাদ দেন।” Hats off to those brilliant ideas; তাহলে নিজেই নিজেকে অপদস্ত করলেন মুহাম্মাদ ﷺ? এক বিশ্বাস থেকে আরেক বিশ্বাসে ট্রান্সফার হলেন দুপুরে আবার সন্ধায়ই আবার ডিগবাজি দিয়ে আগের বিশ্বাসে ফেরত? যার সামনে বিশাল এক ভণ্ডামির ধর্ম বানানোর প্ল্যান, তিনি এরকম silly mistake করতে পারেন না। পরের ২৩ বছরে যে কেউ সেই ডিগবাজির ঘটনা নিয়ে খোঁচা দিতে পারত। কেন জানি কেউ করল না। Not a single mention!
তিনি আসলে কী কারণে নিজের সাফল্য থেকে পিছিয়ে আসলেন? “জিবরাঈল” ধমক দিয়ে বললেন, এটা “শয়তান”এর আয়াত। এজন্য?
#৯
কাহিনীতে বলা আছে, জিবরাঈল অনেক অনেক দিন পরে ঐ আয়াত রহিত করেন। এত দেরি কেন?
এর মানে, অনেকদিন ধরে মুহাম্মাদ ﷺ আর তাঁর অনুসারীরা লাত, উজ্জাহ, মানাতের প্রশংসা করে তিলাওয়াত করে গেছেন। অথচ কালিমা ছিল “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”?? সুন্দর কৌতুক। এতে অনুসারী তো বাড়তই না, বরং হু হু করে সব চলে যেত ইসলাম ত্যাগ করে।
এ অসঙ্গতি ধরা পড়ার কারণেই, পরে কোন এক ভার্সনে বলা হয়, জিব্রাইলে সেদিন সন্ধ্যাতেই এসে কারেকশন করেন।
আরেক ভার্সনে বলছে, মুহাম্মাদ ﷺ জিবরাইলের সাথে বসে কুরআন চেক করছিলেন, সুরা নাজামের ঐ পর্যন্ত তিলাওয়াত করার পর, জিবরাঈল “আঁতকে” উঠলেন, আর বললেন এটা আবার কোথা থেকে আসল??
নাউজুবিল্লাহ। এরকম একটা মৌলিক বিশ্বাসে ভুল করার পরেও কী করে ৬ বছর তো দুরের কথা, ৬ ঘণ্টা পরে আল্লাহ্ ফেরেশতা পাঠান? তাও By chance এটা আবিস্কার করেন, যে, মুহাম্মাদ ﷺ ভুল করেছেন?
কাল্পনিক ঘটনা ছাড়া কিছু না।
#১০
স্যাটানিক ভার্সেস এর প্রমাণ দেখাতে গিয়ে বিরোধীরা সবার আগে যেটা বলে মুসলিমদের সেটা হল, “এটা তো মুসলিমদের লিখা জীবনীতেই আছে। প্রসিদ্ধ স্কলারদের লেখায়। বিশ্বাস করেন না কেন?” ইবনে ইসহাক আর তাবারির কথা তারা বলেন। কিন্তু, একটা কথা জেনে বা না জেনে তারা বলেন না। সেটা হল,
ইবনে ইসহাক নিজে এ ঘটনা তাঁর বইয়ে লিখেছেন বটে, কিন্তু, লিখার পর বলেছেন, এটা ভুল। মিথ্যা। বানোয়াট। নিজেই প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তাবারি তাঁর বই নিয়ে লিখে গেছেন, “যদি আমি আমার বই এ অতীতের এমন কোন ঘটনা লিখি, যেটা আমার পাঠক বন্ধুরা পড়তে গিয়ে আপত্তিকর মনে করেন, অথবা মিথ্যা মনে হয়, তাহলে সে যেন জেনে রাখে, এটা আমার/আমাদের দোষ নয়, আমাদের কাছে যেমন বর্ণনা বলা হয়েছে, আমরা কেবল সেটাই লিখেছি।” মোট কথা, তাবারি কেবল শুনে শুনে লিখেছেন। সবচেয়ে বড় কথা, এমন কোন বর্ণনাকারী নেই, কোথাও নেই, যে কিনা নিজে সেই ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন। মুসলিম কি অমুসলিম কেউ নেই! অথচ, বর্ণনা মতে, এত মানুষ এই ঘটনার সময় উপস্থিত ছিল!
স্যাটানিক ভার্সেস মিথ্যা। আপত্তিকর।
#১১
খুব ইম্পরট্যান্ট প্রমাণ।
একটু খেয়াল করে দেখুন।
মুহাম্মাদ ﷺ নবুয়ত পান ৬১০ সালে।
উমার (রা) ইসলাম গ্রহণ করেন ৬১৬ সালে। নবুওতের পর ৬ষ্ঠ বছরে।
আবিসিনিয়াতে প্রথম হিজরত হয়, নবুওতের পর ৫ম বছরের ৭ম মাসে (রজব মাস)।
আর স্যাটানিক ভার্সেস কাহিনী হয়েছিল বলে দাবি করা হয়, ঠিক এর ২ মাস পর। অর্থাৎ, ৫ম বছরের ৯ম মাসে (রমজান)। আর তখনই কেউ কেউ ফিরে আসতে থাকে আবিসিনিয়া থেকে।
মিরাজ এর ঘটনা ঘটে নবুওতের ১০ম বছরে।
এবার, আপনার কি মনে আছে, সুরা নাজামের ১৩ নাম্বার আয়াতে কী ছিল? জিবরাঈলকে মুহাম্মাদ ﷺ আরেকবার দেখেছিলেন মিরাজে। সুরা নাজামে মিরাজের কাহিনী বলছেন আল্লাহ্।
অর্থাৎ, স্যাটানিক ভার্সেস সমর্থকদের দাবি, মিরাজের ৫ বছর আগে মুহাম্মাদ ﷺ এমন একটা সুরা তিলাওয়াত করলেন, যেটাতে কিনা নিজের “তখনও না ঘটা কিন্তু ৫ বছর পরে ঘটবে” এক অভিজ্ঞতা
বর্ণিত আছে। মিরাজের বর্ণনা ।
উর্বর মস্তিস্কের অলীক কল্পনার দৌড়ের প্রশংসা না করে পারা যায় না।
হয়ত এটার ব্যাখ্যাও তারা এ যুগে হলে দাঁড়া করিয়ে নিত, টাইম ট্র্যাভেল? মে বি? :P
যাই হোক, এতোগুলা কথার সারমর্ম-
SATANIC VERSES INCIDENT is a LIE
, a FABRICATION
ডাহা মিথ্যা।
Present Time:
স্যার উইলিয়াম মুর প্রথম 1858 সালে
"স্যাটানিক ভার্সেস"
টার্ম ব্যবহার করেন নিজের বই-এ। এর আগে এটা ব্যবহার করে নি। ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ১৮৬৭ সালে KNIGHT উপাধি দান করে।
সারা বিশ্বে আবার নতুন করে স্যাটানিক ভার্সেস জনপ্রিয় করেন ভারতীয় লেখক সালমান রুশদি। ১৯৮৮ সালে তিনি এ ঘটনার উপর ভিত্তি করে উপন্যাস লিখেন আর নাম দেন "দা স্যাটানিক ভার্সেস"; এ বইয়ে তিনি জঘন্যভাবে আক্রমণ করেন মুহাম্মাদ ﷺকে। বইটি ব্যান করা হয় ভারতে এবং আরও ১১ দেশে। মৃত্যুহুমকির মুখে আত্মগোপনে চলে যান রুশদি। প্রায় এক দশক পর আবার স্বাভাবিক জীবনে ফেরেন তিনি। তবে ভারতে আর থাকেননি তিনি। ২০০৭ সালে তাঁকে KNIGHT উপাধি দেয় ব্রিটিশ সরকার।
নিজেকে নাস্তিক ঘোষণা দেয়া রুশদি ব্যক্তিজীবনে চতুর্থ বিবাহবিচ্ছেদের পর এখন একাই নিউ ইয়র্কে বাস করছেন।
স্যাটানিক ভার্সেস তাঁর ৪র্থ উপন্যাস। সম্প্রতি নিজের জীবনী প্রকাশ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে "স্যাটানিক ভার্সেস" বই এর পাবলিকেশন নিষিদ্ধ।
শেষ কথা, আল্লাহ্ কখনও মিথ্যাকে প্রশ্রয় দেন না। সত্য বেরিয়ে আসেই।
"সত্য এসেছে। মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে; মিথ্যা তো প্রকৃতিগতভাবেই বিলুপ্ত হয়।" {কুরআন, ১৭:৮১}
অফটপিক কুইজ:
প্রশ্ন:
প্রথম হিজরত কোথায় হয়?
সদস্য ছিলেন কতজন?
উত্তর:
১ম হিজরত খ্রিস্টানঅধ্যুষিত আবিসিনিয়ায় (ইথিওপিয়া)। এটি ২ পার্টে হয়। ১ম পার্টে, ৬১৫ সালের দিকে করেন ১১ জন পুরুষ, ৪ জন নারী। এ দলে ছিলেন, সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা), উসমান (রা), আর মুহাম্মাদ ﷺ এর মেয়ে রুকাইয়া (রা)।
বলা হয়, সাদ (রা) ফেরত আসার সময় সেখান থেকে সমুদ্রপথে চলে যান বর্তমান বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে, সেখান থেকে কামরূপ-মনিপুর রুট হয়ে পৌঁছান চীনে ৬১৬ সালে। চীনে সাথের দুজন সাহাবী নিয়ে ইসলাম প্রচার করেন কিছু দিন। এরপর ফেরেন আরবে।
লেখক - Abdullah Ibn Mahmud