আমার আর খ্রিস্টানদের মধ্যে যীশু খ্রিস্টের ঈশ্বরত্ব দাবির সম্পর্কে কথোপকথন (আমি ও পিতা, আমরা এক হওয়া প্রসঙ্গে):
__ খ্রিস্টান: যীশু খ্রিস্ট স্বয়ং ঈশ্বর।
__ আমি: তিনি ঈশ্বর এটা কোথায় বলেছেন?
__ খ্রিস্টান: তিনি ঈশ্বর না এটাই বা কোথায় বলেছেন?
__ আমি: তার মানে আপনি বলতে চাইছেন তিনি নিজেকে ঈশ্বর দাবি করেছেন।
__ খ্রিস্টান: হ্যাঁ অবশ্যই। যীশু খ্রিস্ট নিজেকে ঈশ্বর দাবি করেছেন।
__ আমি: এটা তিনি কোথায় দাবি করেছেন?
__ খ্রিস্টান: নিউ টেস্টামেন্টে যোহনের ১০:৩০ এ বলা হয়েছে, "আমি ও পিতা (ঈশ্বর), আমরা এক। আর কেই বা ঈশ্বরের সাথে নিজেকেও ''এক'' বলার সাহস দেখাতে পারে? আর এক বলার অর্থ ঈশ্বরের সমকক্ষ দাবি করা। সুতরাং যিনি বলতে পারেন তিনিই ঈশ্বর। আর এভাবেই যীশু নিজেকে ঈশ্বর দাবি করেছেন।
__ আমি: আচ্ছা তাই নাকি? যদি যীশুর এক বলার কারণে তিনি ঈশ্বর হয়ে যান, তাইলে তো যীশুর শিষ্যরাও ঈশ্বর। কেননা তিনিও শিষ্যদের ক্ষেত্রে এরুপ 'এক হওয়ার' একই কথা বলেছেন যোহন ১৭:১১,২১-২৩ এ।
__ খ্রিস্টান: যীশুর শিষ্যদের ক্ষেত্রে 'এক' বলার দ্বারা তারা ঈশ্বর হয়ে যাবে না।
__ আমি: কিন্তু কেন? যেখানে ঈশ্বরের সাথে যীশুর নিজেকে 'এক' হওয়ার অর্থ আপনি তাকে ঈশ্বর বানিয়ে দিলেন, সেখানে যীশু খ্রিস্ট সেই কথামত নিজের শিষ্যদের ক্ষেত্রে 'এক' হওয়ার কথা বললে কেন তারা ঈশ্বর হতে পারবে না, যেভাবে যীশু খ্রিস্ট ঈশ্বর হয়ে গেল? তাইলে তো এটা আপনার কথা অনুযায়ী ডাবল স্ট্যান্ডার্ড নীতি হয়ে গেল। কারণ যীশুকে যে ঈশ্বরত্ব প্রদান করেছিলেন পিতা ঈশ্বর, সে ঈশ্বরত্ব আবার তিনি শিষ্যদের প্রদান করলেন। অর্থাৎ এক বলার কারণে যীশু খ্রিস্ট ঈশ্বর হয়ে গেলে, এক বলার কারণে শিষ্যরাও যদি ঈশ্বর হতে না পারে আপনার কথানুযায়ী,,,তাইলে বলব আপনার এইরুপ ব্যাখ্যা ভুল। অন্যথায় পিতা ঈশ্বর, যীশু ঈশ্বর এবং শিষ্যরা মিলে মোট ১৫ জন ঈশ্বর হয়ে যাবে। মানে আপনার বক্তব্যকে অনুসরণ করেই আমি আপনার বাইবেল থেকে প্রমাণ করে দিলাম, যদি যীশু এভাবে ঈশ্বর হয়, তাইলে সেম উপায়ে তার শিষ্যরাও ঈশ্বর, যেটা এখন আপনাকে মানতে হবে কিন্তু আপনি সেটা মানছেন না।
__ খ্রিস্টান: আপনি ভুল ব্যাখ্যা করছেন।
__ আমি: অথচ আমি আপনার ব্যাখ্যা অনুসরণ করেছি, যেভাবে আপনি এক হওয়ার কারণে যীশুকে ঈশ্বর দাবি করেছেন, সেভাবেই কিন্তু তাঁর শিষ্যরাও ঈশ্বর হয়ে যায়। কিন্তু আপনি সুবিধাবাদী বলে নিজের বক্তব্য অনুযায়ী যীশুকে ঈশ্বর মানলেও তাঁর শিষ্যদের ক্ষেত্রে তা অস্বীকার করছেন।
__ খ্রিস্টান: অথচ যীশুর শিষ্যরা মানুষ। আর মানুষের ক্ষেত্রে 'এক' বলায় যীশুর শিষ্যরা ঈশ্বর হতে পারবে না।
__ আমি: যীশুও তো মানুষ। বাইবেল অনুযায়ী যীশু খ্রিস্ট নারীর গর্ভে জন্ম নিয়েছে অথচ মানুষকে বলা হয়েছে অপবিত্র, আঙুর ফলসহ এর রস খেয়েছে, মাছ ভাজা, রুটি খেয়েছে, মৃত্যু ভয়ে ভীতু হয়েছে, দুঃখে কেঁদেছে, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছে ইত্যাদি। তাইলে যীশু মানুষ হয়েও তার ক্ষেত্রে 'এক' বলায় ঈশ্বর হয়ে গেলে শিষ্যদের ক্ষেত্রে কেন এমনটা হবে না?
__ খ্রিস্টান: আচ্ছা আপনি এইখানে 'এক' বলার দ্বারা কি বুঝেছেন যে, "যীশু ঈশ্বর নয়?"
__ আমি: হ্যাঁ অবশ্যই, যীশু খ্রিস্ট এক বলার দ্বারা নিজেকে ঈশ্বর দাবি করেনি, যদি দাবি করত- তাইলে তার শিষ্যরাও তাঁর ন্যায় ঈশ্বর হয়ে যেত। অথচ সেটাও হয়নি। আর হ্যাঁ এরুপ 'এক হওয়ার' কথা স্বামী স্ত্রীর ক্ষেত্রেও বলা হয়েছে, আদিপুস্তক ২:২৪ এ। আর এরুপ 'এক' বলায় এসব জায়গার সবখানেই গ্রিকে (ἕν উচ্চারণ: hen) একই শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যার অর্থ "এক/One"। আর আপনি যদি এসব ভার্সের ἕν শব্দের স্ট্রং নাম্বার দেখেন তাহলে সবগুলোই সেম পাবেন অর্থাৎ 1520 [e].
__ খ্রিস্টান: যদি যীশু খ্রিস্টকে ঈশ্বর নাই মানেন, তাহলে আমাকে বোঝান, তিনি 'এক বলার' দ্বারা নিজেকে ঈশ্বর দাবি করেননি।
__ আমি: ঠিক আছে বলছি। প্রথমত আপনি যেই ভার্স দিয়ে যীশুর ঈশ্বরত্ব প্রমাণে ব্যতিব্যস্ত হয়েছেন, সেই ভার্সের আগের ভার্সটা বুঝে পড়া উচিত ছিল অন্যথায় আপনার কমন সেন্সের ঘাটতি না হলে পরের ভার্স দিয়ে কস্মিনকালেও তাঁর ঈশ্বরত্ব প্রমাণে উঠেপড়ে লাগতেন না। ''আমি ও পিতা, আমরা এক" এর আগের ভার্সে যীশু খ্রিস্ট বলেছেন, "আমার পিতা (ঈশ্বর), যিনি তাদের আমাকে দিয়েছেন, তিনি সর্বাপেক্ষা মহান;...যোহন ১০:২৯।
এখন যীশু যদি নিজেকে 'এক' বলার দ্বারা ঈশ্বর দাবি করতো, তাইলে কেন তিনি বললেন, "আমার পিতা সবার চেয়েও মহান? তিনি কেন এখানে নিজেকে উল্লেখ করলেন না যে, ''আমি ও পিতা, আমরা মহান?" অর্থাৎ পিতা ঈশ্বর যীশু খ্রিস্টের থেকেও মহান। এ দ্বারা তিনি যে ঈশ্বর নন বরং ঈশ্বর থেকে পৃথক কেউ, সেটা আরো স্পষ্ট করেছেন আগে। সেখানে স্পষ্ট কথাকে ছেড়ে আপনারা খ্রিস্টানরা, অস্পষ্ট উদ্ধৃতি টেনে নানা রকম কাল্পনিক মতবাদ দাঁড় করিয়ে মারাত্মক সাংঘার্ষিক ব্যাখ্যা করে এরপর যীশুর ঈশ্বরত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন। আর এটাই আপনাদের সবচেয়ে বড় ভুল।
__ খ্রিস্টান: তাহলে ঈশ্বরের সঙ্গে যীশুর 'এক হওয়া' দ্বারা আপনি আসলে কি বোঝাতে চাচ্ছেন?
__ আমি: আগেই আপনাকে উপযুক্ত যৌক্তিক প্রমাণের আলোকে বুঝিয়ে বলেছি যে, 'এক বলার' অর্থ মানে এই নয় যে, তারা সেম বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়ে যাবে, তাদের দুইজনের সত্ত্বা মিলে এক হয়ে যাবে। যেভাবে স্বামী স্ত্রীর মিলনে তারা বৈশিষ্ট্যগতভাবে এবং সত্ত্বাগতভাবে এক হতে পারে না, এরপরও বলা হয়েছে, স্বামী স্ত্রীর মিলনে তারা এক হয়, তখন বুঝতে হবে- এটা দ্বারা তাদের একক উদ্দেশ্য ও কার্যক্রমকে বোঝানো হয়েছে। ঠিক অনুরূপ ঈশ্বর এবং যীশু খ্রিস্টের 'এক হওয়া'র অর্থ তাদের উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম যে এক, সেটা বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ পিতা ঈশ্বর যীশু খ্রিস্টকে যেই উদ্দেশ্য ও কার্যক্রমের জন্য এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, সেই একই উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম সামনে রেখে তিনি উপস্থিত হয়েছেন, তিনি এসব উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম মানুষের মধ্যে প্রচার করেন, মানুষকে আহ্বান করেন। এই উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম সামনে রেখেই তিনি বলেছেন, " আমি ও পিতা (ঈশ্বর), আমরা এক।" এভাবেই মূলত এক হওয়ার কথা বলেছেন।
__ খ্রিস্টান: তো আপনি এটা কিভাবে বুঝলেন যে, ঈশ্বর আর যীশু খ্রিস্টের 'এক হওয়া' কথার দ্বারা যীশুর ঈশ্বরত্ব না বুঝিয়ে তাদের উদ্দেশ্য ও কার্যক্রমকে বোঝানো হয়েছে?
__ আমি: আপনাকে আমি এতভাবে উপযুক্ত লজিক দিয়ে প্রমাণের মাধ্যমে যীশুর ঈশ্বরত্বের যে অসারতা বোঝাচ্ছি, এরপরও যীশু খ্রিস্ট যে ঈশ্বর নন, এটা মেনে নিতে পারছেন না বলে আমাকে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে প্রশ্নবিদ্ধ করেই যাচ্ছেন। অথচ আমি আমার নিজের ধর্মীয় গ্রন্থ পবিত্র কুরআনের থেকে কোন দলিল দেইনি কেবলমাত্র আপনার কিতাব বাইবেল ছাড়া। কারণ আপনি এটি মানেন। এরপরও বলছি কিভাবে আমি এটা বুঝতে পেরেছি সেটার একটা লজিক দেখাই।
__ খ্রিস্টান: আচ্ছা দ্রুত দেখান। কিভাবে এটা বুঝলেন?
__ আমি: আমি যদি বলি, "আমি ও বাবা, আমরা এক {অথচ আমার বাবা পেশায় একজন ডাক্তার, আবার আমিও}।" তাইলে কি এটাই ধরে নিবেন যে- আমি ও বাবা, একজন নাকি দুইজন পৃথক সত্ত্বা? অবশ্যই আপনি দুইজন পৃথক সত্ত্বা হিসেবেই মেনে নিবেন, অথচ আমি বলেছি, "আমরা এক"। তাইলে এখানে নিশ্চিত আপনি আমার আর আমার বাবাকে 'এক হওয়ার' দ্বারা একক সত্ত্বা হিসেবে গ্রহণ করে নিবেন না। কারণ এ অসম্ভব কাল্পনিক চিন্তা ভাবনা। কাজেই এইখানে এক বলার অর্থ হলো আমার এবং বাবার উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম এক, যেহেতু আমরা উভয়েই ডাক্তার। আর ডাক্তার হিসেবে অবশ্যই আমি এবং পিতা এক হতে পারি এতে কোন সন্দেহ নেই, কোন ভুলও নেই। আবার আমি ও বাবা ডাক্তার হলেও বয়স ও সম্মানের দিক থেকে অবশ্যই আমার বাবা বড়।
__ খ্রিস্টান: না ভাই, আমি আপনার কথাগুলো মানতে পারব না। কারণ এইখানে যে ঈশ্বর আর যীশুর 'এক হওয়া' বলতে তাদের 'সত্ত্বাগত এক' না বুঝিয়ে, তাদের উদ্দেশ্য ও কার্যক্রমের এক হওয়াকে বোঝানো হয়েছে, এটাই বা কিভাবে নিশ্চিত হবো আমি?
__ আমি: আচ্ছা আপনারা খ্রিস্টানরাই তো বলে থাকেন, স্বয়ং যীশু খ্রিস্টই ঈশ্বর। আবার এও বলেন যে, যীশু খ্রিস্ট ঈশ্বরের পুত্র। মানে ভাই এটা কতটাই অযৌক্তিক আর ভিত্তিহীন কথা, কেউ একই সঙ্গে ঈশ্বর হয়েও আবার ঈশ্বরের পুত্র কিভাবে হতে পারে? আপনি কি নিজেই নিজের বাবা হয়ে আবার নিজের পুত্র হতে পারবেন? অবশ্যই না। এতসব দিনের ন্যায় স্পষ্ট কথাগুলো কেন অস্বীকার করেন? নিজের কমন সেন্সকে কেন বিসর্জন দিয়ে এসব মানছেন,,,। যদি নিজের কমন সেন্সকে বিসর্জন দেন, তাইলে সত্য আর মিথ্যার পার্থক্য বুঝবেন কিভাবে? অথচ যাকে ঈশ্বর হিসেবে মানছেন, সেই যীশু খ্রিস্ট নিজেই বলেছেন, "তোমরা সত্যকে খোঁজ কর, আর সত্য তোমাদের মুক্তি দিবে" যোহন ৮:৩২। আবার লক্ষ্য করুন, বাইবেলের যোহনের ১০:৩০ নং ভার্সে এটা বলা হয়নি যে, "আমি ও পিতা, আমরা একজন।" বরং বলা হয়েছে, "এক", নট একজন"। যদি এক শব্দের সঙ্গে জন শব্দ জুড়ে দেওয়া হতো, তাহলে সত্ত্বা হিসেবে বলার ছিটেফোঁটা হলেও চান্স থাকত। কিন্তু এইখানে এক বলার মাধ্যমে উভয়ে মিলে একজন সত্ত্বা না বুঝিয়ে বরং উভয়ের উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম যে অভিন্ন, সেই অভিন্নতাকেই এক শব্দ দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে। এই যেমনটা আমরা অনেক সময় কথায় কথায় বলে ফেলি, ও আর আমি এক রকমের। এর মানে কি ও আর আমি মিলে একজন ব্যক্তি নাকি? অবশ্যই না। এইখানে 'এক' রকমের বলতে আমাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য, চিন্তা ভাবনা বা কাজকর্ম এক হওয়াকে বোঝানো হয়েছে। কিন্তু এর মানে এই না যে- আমরা দুইজন মিলে একজন ব্যক্তি। এ কেবলমাত্র অলীক কল্পনায় ভাবা যেতে পারে।
__ খ্রিস্টান: ভাইরে ভাই...আজকে আর আপনাকে প্যাঁচাতে পারলাম না। অন্য একদিন এমনভাবে প্যাঁচে ফেলব যে, পালিয়েও কুল পাবেন না।
__ আমি: আচ্ছা ভাই ঠিক আছে। ততদিন পর্যন্ত আমার কথাগুলো নিয়ে ভাবতে থাকেন। কোনরুপ ভুলভাল অযৌক্তিক কিছুই বললে, পরবর্তীতে খন্ডন করতেও পারেন। আপনার জন্য আমি অপেক্ষায় থাকব।