নাস্তিক সহ আজ-কাল কিছু বিভ্রান্ত মুসলিমও মাঝে-মাঝে প্রশ্ন তোলে আমাদের ইবাদতে আল্লাহর কী উপকার হয়?
জবাব :-
আমাদের ইবাদতের কারণে আল্লাহ তায়ালার কখনো ক্ষতি বা লাভ হয় না। আমরা আল্লাহর ইবাদত করি বা না করি তাতে আল্লাহর কিছুই যায়-আসে না৷
এটা আল্লাহ কোরআনে পরিষ্কার করে দিয়েছেন-
اللَّهُ الصَّمَدُ
আল্লাহ অমুখাপেক্ষী,
(সূরা: আল ইখলাস, আয়াত: ২)
مَّنْ عَمِلَ صَٰلِحًا فَلِنَفْسِهِۦۖ وَمَنْ أَسَآءَ فَعَلَيْهَاۗ وَمَا رَبُّكَ بِظَلَّٰمٍ لِّلْعَبِيدِ
যে সৎকর্ম করে সে তার নিজের জন্যই তা করে। আর যে অসৎকর্ম করে তা তার উপরই বর্তাবে। তোমার রব তাঁর বান্দাদের প্রতি মোটেই যালিম নন। (সূরা: ফুলসিলাত আয়াত: ৪৬)
সূরা (১১২:২) এ আল্লাহ তায়ালা পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে তার ইবাদতের কোন প্রয়োজন হয় না। কারণ কোরআনে আল্লাহ তায়ালা, সূরা ইখলাস আয়াত ২-এ বলে দিয়েছেন যে তিনি অমুখাপেক্ষী। তিনি কারো উপর নির্ভরশীল নন। বরং আমরা তার উপর নির্ভরশীল (সূূূূরা: ফাতির আয়াত: ১৫) অনুযায়ী।
সূরা (১১২:২) এর তাফসীর আবু বকর যাকারিয়া :-
‘আল্লাহ্ হচ্ছেন ‘সামাদ' [১] (তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী); [১] (আরবি) শব্দের অর্থ সম্পর্কে তাফসীরবিদগণের অনেক উক্তি আছে। আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, ইকরামা বলেছেন: সামাদ হচ্ছেন এমন এক সত্তা যাঁর কাছে সবাই তাদের প্রয়োজন পূরণের জন্য পেশ করে থাকে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ ও আবু ওয়ায়েল শাকীক ইবনে সালামাহ বলেছেন, তিনি এমন সরদার, নেতা, যাঁর নেতৃত্ব পূর্ণতা লাভ করেছে এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, যে সরদার তার নেতৃত্ব, মর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্ব, ধৈর্য, সংযম, জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতা তথা শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার সমস্ত গুণাবলিতে সম্পূর্ণ পূর্ণতার অধিকারী তিনি সামাদ। যায়েদ ইবন আসলাম বলেন, এর অর্থ, নেতা। হাসান ও কাতাদা বলেন, এর অর্থ, যিনি তার সৃষ্টি ধ্বংস হয়ে গেলেও অবশিষ্ট থাকবেন। হাসান থেকে অন্য বর্ণনায়, তিনি ঐ সত্বা, যিনি চিরঞ্জীব ও সবকিছুর ধারক, যার কোন পতন নেই। অন্য বর্ণনায় ইকরিমা বলেন, যার থেকে কোন কিছু বের হয়নি এবং যিনি খাবার গ্রহণ করেন না। রবী ইবন আনাস বলেন, যিনি জন্মগ্ৰহণ করেননি এবং জন্ম দেননি। সম্ভবত তিনি পরবর্তী আয়াতকে এ আয়াতের তাফসীর হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তবে সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব, মুজাহিদ, ইবন বুরাইদা, আতা, দাহহাক সহ আরো অনেকে এর অর্থ বলেছেন, যার কোন উদর নেই। শা‘বী বলেন, এর অর্থ যিনি খাবার খান না এবং পানীয় গ্ৰহণ করেন না। আব্দুল্লাহ ইবন বুরাইদাহ বলেন, এর অর্থ, যিনি এমন আলো যা চকচক করে। এ বর্ণনাগুলো ইমাম ইবন জারীর আত-তাবারী, ইবন আবী হাতেম, বাইহাকী, তাবারানী প্রমূখগণ সনদসহ বর্ণনা করেছেন। [দেখুন, তাবারী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] বস্তুত: উপরে বর্ণিত অর্থ গুলোর সবই নির্ভুল। এর মানে হচ্ছে, আসল ও প্রকৃত সামাদ হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ্। সৃষ্টি যদি কোন দিক দিয়ে সামাদ হয়ে থাকে তাহলে অন্য দিক দিয়ে তা সামাদ নয় কারণ তা অবিনশ্বর নয় একদিন তার বিনাশ হবে। কোন কোন সৃষ্টি তার মুখাপেক্ষী হলেও সে নিজেও আবার কারো মুখাপেক্ষী। তার নেতৃত্ব আপেক্ষিক, নিরংকুশ নয়। কারো তুলনায় সে শ্রেষ্ঠতম হলেও তার তুলনায় আবার অন্য কেউ আছে শ্রেষ্ঠতম। কিছু সৃষ্টির কিছু প্রয়োজন সে পূর্ণ করতে পারে কিন্তু সবার সমস্ত প্রয়োজন পূর্ণ করার ক্ষমতা কোন সৃষ্টির নেই। বিপরীতপক্ষে আল্লাহ্র সামাদ হবার গুণ অর্থাৎ তার মুখাপেক্ষীহীনতার গুণ সবদিক দিয়েই পরিপূর্ণ। সারা দুনিয়া তাঁর মুখাপেক্ষী তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। দুনিয়ার প্রত্যেকটি জিনিস নিজের অস্তিত্ব, স্থায়ীত্ব এবং প্রয়োজন ও অভাব পূরণের জন্য সচেতন ও অবচেতনভাবে তাঁর ই শরণাপন্ন হয়। তিনিই তাদের সবার প্রয়োজন পূর্ণ করেন। তিনি অমর, অজয়, অক্ষয়। তিনি রিযিক দেন, নেন না। সমগ্ৰ বিশ্ব জাহানের ওপর তাঁর নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ। তাই তিনি “আস-সামাদ।” অর্থাৎ তিনিই একমাত্র সত্তা যিনি অমুখাপেক্ষিতার গুণাবলীর সাথে পুরোপুরি সংযুক্ত। আবার যেহেতু তিনি “আস-সামাদ” তাই তাঁর একাকীও স্বজনবিহীন হওয়া অপরিহার্য। কারণ এ ধরনের সত্তা একজনই হতে পারেন, যিনি কারো কাছে নিজের অভাব পূরণের জন্য হাত পাতেন না, বরং সবাই নিজেদের অভাব পূরণের জন্য তাঁর মুখাপেক্ষী হয়। দুই বা তার চেয়ে বেশী সত্তা সবার প্রতি অমুখাপেক্ষী ও অনির্ভরশীল এবং সবার প্রয়োজন পূরণকারী হতে পারে না। তাছাড়া তাঁর “আস-সামাদ” হবার কারণে তাঁর একক মাবুদ হবার ব্যাপারটিও অপরিহার্য হয়ে পড়ে। কারণ মানুষ যার মুখাপেক্ষী হয় তারই ইবাদাত করে। আবার তিনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই, “আস-সামাদ” হবার কারণে এটাও অপরিহার্য হয়ে পড়ে। কারণ, যে প্রয়োজন পূরণ করার ক্ষমতা ও সামর্থই রাখে না, কোন সচেতন ব্যক্তি তার ইবাদাত করতে পারে না। এভাবে আমরা উপরোক্ত অর্থগুলোর মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করতে পারি।
◾আল্লাহ এই আয়াতে খুবই পরিষ্কার ভাবে বলে দিয়েছেন যে তার কোন সাহায্যের প্রয়োজন নেই তিনি কারো উপর নির্ভরশীল নন। যদি আপনি মনে করেন আমাদের নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর শক্তি বৃদ্ধি হয় তবে আপনার চিন্তা ভুল। তিনি সব সময় সর্বশক্তিমান। আমরা তার ইবাদত করি বা না করি এতে তার কোন ক্ষতি বা উপকার হয় না।
তাহলে আল্লাহর কেন আমাদেরকে তার ইবাদত করতে বললেন ? -
আল্লাহ বিষয়টা আমাদেরকে কোরআনে পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে তিনি অমুখাপেক্ষী তিনি কারো উপর নির্ভরশীল নন।
※ আমাদেরকে তার ইবাদত করতে বলেছেন কারণ আমরা তার মুখাপেক্ষী। আমরা আল্লাহর উপর নির্ভরশীল।
يَا أَيُّهَا النَّاسُ أَنْتُمُ الْفُقَرَاءُ إِلَى اللَّهِ ۖ وَاللَّهُ هُوَ الْغَنِيُّ الْحَمِيدُ
হে লোক সকল, তোমরা তো আল্লাহর মুখাপেক্ষী। আর আল্লাহ; তিনি অভাবমুক্ত, প্রশংসিত। (সূরা: ফাতির, আয়াত: ১৫)
> আয়াতটি আমাদেরকে পরিষ্কার করে দিয়েছে যে, আমরা আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আমরা তার মুখাপেক্ষী। কিন্তু আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন (সূরা ১১২:২)। এই ইবাদতের মাধ্যমে তিনি আমাদেরকে পরীক্ষা করবেন। আমরা তার ইবাদত করলে তিনি আমাদেরকে পুরষ্কার দিবেন। না করলে শাস্তি দিবেন।
قُلْ لَوْ كَانَ الْبَحْرُ مِدَادًا لِكَلِمَاتِ رَبِّي لَنَفِدَ الْبَحْرُ قَبْلَ أَنْ تَنْفَدَ كَلِمَاتُ رَبِّي وَلَوْ جِئْنَا بِمِثْلِهِ مَدَدًا
বলুনঃ আমার পালনকর্তার কথা, লেখার জন্যে যদি সমুদ্রের পানি কালি হয়, তবে আমার পালনকর্তার কথা, শেষ হওয়ার আগেই সে সমুদ্র নিঃশেষিত হয়ে যাবে। সাহায্যার্থে অনুরূপ আরেকটি সমুদ্র এনে দিলেও। (সূরা: কাহফ, আয়াত: ১০৯)
আয়াতটি পড়ার পর দু মিনিট চিন্তা করুন যার প্রশংসা লিখিয়েই শেষ করা যাবে না তার আমাদের ইবাদতের প্রয়োজনের তো প্রশ্নই আসে না।
◾উক্ত আলোচনা থেকে এটা পরিষ্কার যে, মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে ইবাদতের ফলে তার কোন উপকার বা ক্ষতি হয় না। তিনি সর্বশক্তিমান। উল্টো আমরা তার ইবাদত করলে আমাদের উপকার হয় যেমন ইবাদতের পুরষ্কার হলো জান্নাত। প্রত্যেক ক্ষেত্রে আমরা আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। তার আমাদের ইবাদতের প্রয়োজন হয় না।
এ ছাড়াও নামাজের বিজ্ঞান-স্বীকৃত সকল উপকারীতা সম্পর্কে এখান থেকে জানুন -