নাস্তিকসহ বর্তমান কিছু মুসলিমও আছে যাদের ইসলাম নিয়ে জ্ঞান নেই তারাও বলে থাকে যে, আদম (আ.) যদি জান্নাতের ঐ ফল না খেতেন তবে আমরা জান্নাতে থাকতাম। উনার একটা ভুলের জন্য আজ আমরা পৃথিবীতে। এই কথাটা কতটুকু যুক্তিসম্মত ? ইসলাম এ ব্যাপারে কী বলে? আমরা অনেকেই মনে করি আদম (আ.) যদি জান্নাতের ঐ নিষিদ্ধ ফল না খেতেন তবে তিনি পৃথিবীতেও আসতেন না আর আমরাও জান্নাতে থাকতাম, আমরাও এ পৃথিবীতে আসতাম না। যদি আপনি এটা ভেবে থাকুন তবে আপনার এই ধারণাটি ভুল।
জবাব:-
আদম (আ.) সৃষ্টি সম্পর্কে কিছু কুরআনের আয়াত -
وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً ۖ قَالُوا أَتَجْعَلُ فِيهَا مَنْ يُفْسِدُ فِيهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَاءَ وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ ۖ قَالَ إِنِّي أَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُونَ
আর তোমার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদিগকে বললেনঃ আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি, তখন ফেরেশতাগণ বলল, তুমি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবে যে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরা নিয়ত তোমার গুণকীর্তন করছি এবং তোমার পবিত্র সত্তাকে স্মরণ করছি। তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে আমি জানি, যা তোমরা জান না। (সূরা: আল বাকারা, আয়াত: ৩০)
> আলহামদুলিল্লাহ! কুরআনের এই আয়াতটিই সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিয়েছে। আদম (আ.) কে সৃষ্টিই করা হয়েছে পৃথিবীর জন্য। আমাদের এই পৃথিবীতে মানুষ আসার আগে জিন জাতির বসবাস ছিল। জিন জাতি আল্লাহর নাফরমানী করার জন্য আল্লাহ তাদের ধব্বংস করে দেন কিছু ঈমানদার জিন ব্যতীত। অতপর মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা বাকারা আয়াত ৩০ অনুযায়ী মানুষ সৃষ্টি করার জন্য সিদ্ধান্ত নেন। আয়াতটি লক্ষ্য করুন যে, আয়াতে সুস্পষ্ট ভাবে আল্লাহ বলেছেন আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি । উক্ত আয়াত দ্বারা এটি প্রমাণিত যে আদম (আ.)-কে সৃষ্টিই করা হয়েছিল পৃথিবীর জন্য জান্নাতের জন্য নয়।
নিচের এই হাদিসটি পড়ুন - আপনার মাথায় আসা এই প্রশ্নটি আপনার আগেই মূসা আ. আল্লাহর মাধ্যমে আদম (আ:)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন -
উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: মূসা (আ.) বললেন, হে রব! যে আদম (আ.) আমাদেরকে ও তাঁর নিজেকে জান্নাত হতে বিতাড়িত করেছেন, তাকেঁ আমি দেখতে চাই। অতঃপর মহান আল্লাহ তাকে আদম (আ.)-কে দেখালেন। তিনি বললেন, আপনিই আমাদের পিতা আদম (আ.)? আদম (আ.) তাকে বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর তিনি বললেন, আপনি সেই মহান ব্যক্তি যাঁর মধ্যে মহান আল্লাহ তাঁর পক্ষ হতে রূহ সঞ্চার করেছেন এবং আপনাকে সকল কিছুর নাম শিখিয়েছেন, আর ফেরেশতাদেরকে হুকুম দিলে তারা আপনাকে সাজদাহ্ করেছেন। তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি পুনরায় বললেন, আমাদেরকে ও আপনার নিজেকে জান্নাত হতে বহিষ্কার করার জন্য আপনাকে কোন বস্তু উদ্বুদ্ধ করেছিল? এবার আদম (আ.) বললেন, তুমি কে? তিনি বললেন, আমি মূসা (আ.)। তিনি বললেন, তুমি বনী ইসরাঈলের এমন একজন নবী যাঁর সাথে আল্লাহ পর্দার অন্তরাল হতে সরাসরি কথা বলেছেন এবং তোমার ও তাঁর মাঝে সৃষ্টি জগতের কাউকে বার্তাবাহক হিসেবে গ্রহণ করেননি। তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তুমি কি আল্লাহর কিতাবে দেখতে পাওনি যে, সেটি নির্ধারিত ছিল আমাকে সৃষ্টি কারার পূর্বেই? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, যে বিষয়ে মহান আল্লাহর সিদ্ধান্ত আমার পূর্ব হতেই লিপিবদ্ধ সে ব্যাপারে আমাকে কেন অভিযুক্ত করছো? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সুতরাং এ বিতর্কে আদম (আ.) মূসা (আ.)-এর উপর জয়ী হলেন। সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৭০২। [হাদিসটি এখান থেকে চেক করুন]
হাদিসটি পড়ার পর আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন যে, আদম (আ:)-কে সৃষ্টিই করা হয়েছিলো পৃথিবীর জন্য। জান্নাতের জন্য নয়৷ আল্লাহ এই সিদান্ত তাকে সৃষ্টি করার আগেই নিয়েছিলেন।
> আদম আ:পৃথিবীর জন্য সৃষ্টি হলে আল্লাহ তাকে কেন জান্নাতে রাখলেন ?
< ব্যক্তিগত মতামত ১ -
- আল্লাহ তায়ালা আদম আ: কে জান্নাতে রেখে শয়তান ইবলিশকে মূলত পরীক্ষা করেছেন। এমন হতে পারে।
আল্লাহ কেন আদম আ: কে পৃথিবীর জন্য সৃষ্টি করে জান্নাতে রেখেছিলেন তা আমরা জানি না তবে অবশ্যই এখানে কোন কারণ ছিলো।
যার মধ্যে একটা কারণ আমি উল্লেখ করলাম যে আদম আ: এর মাধ্যমে ইবলিশকে হয়তো পরীক্ষা করা হয়েছিলো। কারণ ইবলিশ ছিলো ঈমানদার জীন। আল্লাহ ঈমানদারদের কে বার-বার পরীক্ষা করে থাকেন।
< ব্যক্তিগত মতামত ২ -
২য় তো আদম আ:কে জান্নাতে রাখার আরেকটা কারণ হতে পারে এই যে,
- আদম আ: কে যখন সৃষ্টি করা হয় তখন কিন্তু ফেরেশতারা আল্লাহকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, আল্লাহর এই নতুন সৃষ্টিও কী জিন জাতির মতো পৃথিবীতে ধাঙ্গা-হাঙ্গামা করবে কী? তখন আল্লাহ তাদের বলেছিলেন তিনি যা জানেন ফেরেশতারা তা জানে না। কুরআনের কিছু আয়াত পড়লে আমরা দেখতে পায় যে, আদম আ: মাধ্যমে আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে তাদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন যেমন -
আর আল্লাহ তা’আলা শিখালেন আদমকে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীর নাম। তারপর সে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীকে ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন। অতঃপর বললেন, আমাকে তোমরা এগুলোর নাম বলে দাও, যদি তোমরা সত্য হয়ে থাক। (সূরা: আল বাকারা, আয়াত: ৩১)।
তারা বলল, তুমি পবিত্র! আমরা কোন কিছুই জানি না, তবে তুমি যা আমাদিগকে শিখিয়েছ (সেগুলো ব্যতীত) নিশ্চয় তুমিই প্রকৃত জ্ঞানসম্পন্ন, হেকমতওয়ালা। (সূরা: আল বাকারা, আয়াত: ৩২)।
তিনি বললেন, হে আদম, ফেরেশতাদেরকে বলে দাও এসবের নাম। তারপর যখন তিনি বলে দিলেন সে সবের নাম, তখন তিনি বললেন, আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, আমি আসমান ও যমীনের যাবতীয় গোপন বিষয় সম্পর্কে খুব ভাল করেই অবগত রয়েছি? এবং সেসব বিষয়ও জানি যা তোমরা প্রকাশ কর, আর যা তোমরা গোপন কর! (সূরা: আল বাকারা, আয়াত: ৩৩)।
এবং যখন আমি (আল্লাহ) আদম-কে সেজদা করার জন্য ফেরেশতাগণকে নির্দেশ দিলাম, তখনই ইবলীস ব্যতীত সবাই সিজদা করলো। সে (নির্দেশ) পালন করতে অস্বীকার করল এবং অহংকার প্রদর্শন করল। ফলে সে কাফেরদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল। (সূরা: আল বাকারা, আয়াত: ৩৪)।
আয়াত গুলো পড়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, মহান আল্লাহ ফেরেশতাদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।
< নিচের আয়াতটি দেখুন ⤵️
এবং আমি আদমকে হুকুম করলাম যে, তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করতে থাক এবং ওখানে যা চাও, যেখান থেকে চাও, পরিতৃপ্তিসহ খেতে থাক, কিন্তু এ গাছের নিকটবর্তী হয়ো না। অন্যথায় তোমরা যালিমদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে পড়বে। (সূরা: আল বাকারা, আয়াত: ৩৫)
- আল্লাহ আদম আ: কে জান্নাতে থাকতে বলেছেন। কিন্তু আল্লাহ তো ভবিষ্যৎ জানেন যে, আদম আ: নিষিদ্ধ ফলটি খাবেই। তিনি হয়তো আদম আ: এর এই ভুলের মাধ্যমে আমাদের জন্য একটি শিক্ষা উপস্থিত করেছেন যে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ কখনো অমান্য করা যাবে না। পরিস্থিতি যাইহোক আল্লাহর আদেশ-নিষেধ এর বিরুদ্ধে যাওয়া যাবে না। তার আদেশ-নিষেধ মানতেই হবে।
◉ আদম আ: কে সৃষ্টিই করা হয়েছিলো পৃথিবীর জন্য তা আমরা উপরেই প্রমাণ করেছি।
◉ আদম আ:-কে কেন জান্নাতে রাখা হয়েছিলো তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।