খ্রিস্টান মিশনারিরা যীশু খ্রিস্টকে ঈশ্বর দাবি করেন অথচ তিনি ছিলেন একজন মানুষ। আর বাইবেল বলছে মানুষ পাপী অপরদিকে ঈশ্বর এসবের ঊর্ধ্বে। তাহলে যীশু একজন মানুষ হয়েও কিভাবে পাপের ঊর্ধ্বে হতে পারে?
যীশু অপবিত্র:
বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে বলা হয়েছে:
4 ঈশ্বরের তুলনায় কে-ই বা অধিকতর পবিত্র? কোন মানুষই প্রকৃত অর্থে পবিত্র হতে পারে না।
5 ঈশ্বরের চোখে চাঁদ পর্যন্ত উজ্জ্বল নয়, তারারাও খাঁটি নয়।
6 মানুষ ঈশ্বরের তুলনায় কম খাঁটি।তুলনায় মানুষ উল্লু এবং কৃমিকীটের মত!(যোব ২৫:৪-৬)
বাইবেলের মধ্যে আরো বলা হয়েছে:
প্রভু বলেন,“আমিই সে-ই যে তোমাদের আরাম দেয়। তবুও তোমরা কেন লোকের ভয়ে ভীত হয়ে ওঠ? তারা তো শুধু মাত্র মানুষ যাদের জন্ম মৃত্যু আছে। তারা তো কেবলই মানুষ- ঘাসের মতোই মরে তারা।"(ইসাইয়া ৫১:১২)
তাহলে উপরের ভার্সগুলোতে পক্ষান্তরে কয়েকটি পয়েন্ট দেখা যাচ্ছে:
i) ঈশ্বরের সমতুল্য কেউই নেই
ii) কোন মানুষই প্রকৃত পবিত্র হতে পারে না
iii) মানুষ ঈশ্বরের মত নয়
iv) ঈশ্বর ভয় পায় না
v)ঈশ্বরের জন্ম মৃত্যু নেই পক্ষান্তরে মানুষের আছে।
এখানে এসব পয়েন্ট গুলো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা হলো:
i) ঈশ্বরের সমতুল্য কেউই নেই :
যীশু ঈশ্বরের সমতুল্য নয় বলেই তিনি ঈশ্বর কে নিজের থেকে পৃথক করে দেখিয়েছেন।তিনি বলেছেন:-"আমার পিতা আমার চেয়ে মহান (যোহন ১৪:২৮)। তিনি আরো বলেছেন -"আমার পিতা সবার চাইতে মহান (যোহন ১০:২৯)। আর যীশু যদি ঈশ্বরের সমতুল্য হতো তাহলে তিনি কখনোই উপরোক্ত মন্তব্য করতেন না।
ii)কোন মানুষই প্রকৃত পবিত্র হতে পারে না:
ঈশ্বর ব্যতীত কোন মানুষই প্রকৃত অর্থে পবিত্র হতে পারে না (যোব/ইয়োব ২৪:৪)। কিন্তু যীশু ছিলেন মানুষ (মথি ৯:৮) এবং মনুষ্য পুত্র (মথি ৯:৬; ১২:৮; ১৩:৩৭)। আর (ইয়োব/যোব ২৫:৪) পদে বলা হয়েছে :-"কোন মানুষই প্রকৃত অর্থে পবিত্র হতে পারে না।"আর যীশু ছিলেন মানুষ এবং মানবপুত্র।আর একমাত্র ঈশ্বর ব্যতীত কেউই প্রকৃত অর্থে পবিত্র হতে পারে না। সুতরাং যীশুও পবিত্র ব্যক্তি নয় (অর্থাৎ অপবিত্র) বাইবেলের এই আয়াত অনুযায়ী। আর সবথেকে বড় কথা হলো যীশু ঈশ্বর নয় যা এইসব আয়াত থেকেই প্রমাণিত। এরপরেও খ্রিস্টানরা যদি যীশুর ঈশ্বরত্ব দাবি করলে পক্ষান্তরে বলতে হবে এইসব আয়াত-ই মিথ্যা।
iii)মানুষ ঈশ্বরের মত নয়:
বাইবেল বলছে মানুষ ঈশ্বরের তুলনায় কম খাঁটি অর্থাৎ ঈশ্বরের তুলনায় মানুষ কৃমি কীটের মত (যোব ২৫:৬)। এই আয়াত থেকেই বোঝা যায় যীশুও ঈশ্বরের সাথে তুলনার যোগ্য নয় অর্থাৎ ঈশ্বরের কাছে তিনি একজন কীটের মত।কারণ যীশু ছিলেন একজন মানুষ। এ থেকেই বোঝা যায় যীশু ঈশ্বর নয় এবং ঈশ্বরের মত নয়। কারণ ঈশ্বর মানুষ নয় (গণনা পুস্তক ২৩:১৯/হোসেয়া ১১:৯) এবং ঈশ্বরকে পৃথিবীর সাধারণ মানুষ দেখেনি (যোহন ৬:৪৬/যোহন ১:১৮) কিন্তু যীশুকে সাধারণ মানুষ দেখেছে।এছাড়া ঈশ্বরের সাথে কারো তুলনা হয় না (ইসাইয়া ৪০:১৭-১৮)।সুতরাং যীশুর সাথেও ঈশ্বরের তুলনা করা যায়/যাবে না।
iv)ঈশ্বর ভয় পায় না:
যীশু দুর্বল মানুষ ছিলেন,এ জন্য মৃত্যু ভয়ে ভীত ছিলেন (মার্ক ১৪:৩৬)। আর ঈশ্বর ভয় পান না। কারণ তিনি ঈশ্বর ছিলেন না বরং মানুষ।
v)ঈশ্বরের জন্ম মৃত্যু নেই পক্ষান্তরে মানুষের আছে:
যীশু মানুষ ছিলেন বিধায় তিনি জন্ম নিয়েছেন।কিন্তু ঈশ্বর মানুষ নন বলেই তাঁর জন্ম নেওয়ার প্রয়োজন নেই। তিনি আদি-অন্ত অর্থাৎ চিরঞ্জীব।
যীশু পাপী:
বাইবেলে একজনের জন্ম সম্পর্কে বলা হয়েছে:-"ঈশ্বর আমার প্রভু, তোমাদের একটা চিহ্ন দেখাবেন:ঐ যুবতী মহিলাটি গর্ভবতী হবে এবং দেখ সে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেবে।তার নাম রাখা হবে ইম্মানূয়েল।"(ইসাইয়া ৭:১৪)
খ্রিস্টানরা বলে,এখানে নাকি যীশুর কথা বলা হয়েছে। যুবতীর গর্ভে জন্ম হবে এখানে হিব্রু শব্দ টা almah এর অর্থ কুমারী না বরং "(the young woman)" যার অর্থ এক যুবতী নারী।কুমারী শব্দের হিব্রু হবে Original Word: בְּתוּלָה (bethulah)
Phonetic Spelling: (beth-oo-law').Definition: a virgin.
কিন্তু "(ইসাইয়া ৭:১৪)-অনুচ্ছেদে এই শব্দ টা নেই। কারণ যিশাইয় নবী যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন তা হলো একটি যুবতী মহিলা গর্ভবতী হবে,কোনো কুমারী নারী গর্ভবতী হবে একথা বলেনি। যদিও মেনে নিই তাহলে এখানে বলা হয়েছে:-"তার নাম রাখা হবে ইম্মানূয়েল।"(ইসাইয়া ৭:১৪)।আর সমগ্র বাইবেলের কোন জায়গায় ই যীশু কে "ইমানুয়েল "-বলে ডাকা হয় নাই। অর্থাৎ বলা যায় ভবিষ্যদ্বাণী ভুল এটা। কারণ এটা খ্রিস্টানদের দাবি অনুযায়ী যদি যীশুর জন্মের সম্পর্কে পূর্ববর্তী ভবিষ্যদ্বাণীও হয় তাহলে এখানে ভবিষ্যদ্বাণীর মাধ্যমে বলে দেওয়া হয়েছিল :-"তার নাম রাখা হবে ইমানুয়েল। "কিন্তু বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্টে যীশুর জন্মের পরে দেখা যায় তার নাম ইমানুয়েল রাখা হয় নাই বরং "যীশু"-নাম রাখা হয়েছে (মথি ১:২৫)।
কিন্তু আবার বৈপরীত্য দেখেন বাইবেলের মধ্যে। যীশুর জন্মের পূর্বে মরিয়মের বাগদত্তা স্বামী যোসেফের কাছে স্বর্গদূত এসে কী বলেছিল? স্বর্গদূত যোসেফকে বলেছিল:-"
দেখ, সে এক পুত্র সন্তান প্রসব করবে, তুমি তাঁর নাম রেখো যীশু...(মথি ১:২১)।আর পরে দেখা যায় কী?যোসেফ প্রভুর দূতের কথা অনুযায়ী সেই সন্তানের নাম রাখেন "যীশু" (মথি ১:২৫)
কিন্তু বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে (যিশাইয় ৭:১৪) পদে কী বলা হয়েছিল ভবিষ্যদ্বাণীতে?সেখানে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল তার নাম হবে ইমানুয়েল। কিন্তু যীশুর জন্মের পর কী দেখা গেল? ইমানুয়েল কী রাখা হয়েছে?কখনোই নয়। বরং সেই সন্তানের নাম রাখা হয়েছে যীশু। আরেকটা মজার বিষয় দেখুন।বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টের (যিশাইয় ৭:১৪) পদের সম্পর্কে কী বলা হয়েছে নিউটেস্টামেন্টে (মথি ১:২২) পদে?এখানে বলা হয়েছে :-"এই সব ঘটেছিল যাতে ভাববাদীর মাধ্যমে প্রভু যা বলেছিলেন তা পূর্ণ হয়৷"এখানে প্রশ্ন হলো ভাববাদীর মাধ্যমে প্রভু কী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন অর্থাৎ বলেছিলেন? তাহলে দেখুন ঈশ্বর যিশাইয় ভাববাদীর মাধ্যমে ওল্ড টেস্টামেন্টের (যিশাইয় ৭:১৪) পদে কী বলেছিলেন তা নিউটেস্টামেন্টে আবারো উদ্ধৃতি করা হয়েছে। তাহলে প্রমাণ দেখুন:
23 শোন! "এক কুমারী গর্ভবতী হবে, আর সে এক পুত্র সন্তান প্রসব করবে, তারা তাঁকে ইম্মানূয়েল (যার অর্থ ‘আমাদের সঙ্গে ঈশ্বর) বলে ডাকবে৷(মথি ১:২৩) [এই উদ্ধৃতিটা বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে যিশাইয় ৭:১৪ পদে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল]
এখানে প্রশ্ন হলো (যিশাইয় ৭:১৪) পদে ঈশ্বর ভাববাদীর মাধ্যমে যা বলেছিলেন তা কী পূর্ণ হয়েছে? কখনোই পূর্ণ হয় নাই। কারণ সন্তানের নাম রাখা হয়েছে যীশু কিন্তু ইমানুয়েল নয়।এবং বাইবেলের কোথাও যীশুকে ইমানুয়েল বলে ডাকা হয় নাই। এখন আরেকটা প্রশ্ন হলো যখন ইমানুয়েল নাম রাখা হয় নাই বা এই নামে তাকে ডাকাই হয় নাই তখন মথি কিভাবে বলল :-"ঈশ্বর ভাববাদীর মাধ্যমে যা বলেছিলেন তা পূর্ণ হলো?কোন খ্রিস্টান আছেন কী যিনি এর যথার্থ উত্তর দিতে সক্ষম?
আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যৎ বাণী হলো তথাকথিত খ্রিস্টানরা বলে যীশু খ্রীষ্ট নাকি পাপ করেন নি। তাহলে এটা কার ভবিষ্যৎ বাণী যেখানে বলা হয়েছে :
যতদিন না পর্যন্ত ইম্মানূয়েল খারাপ কাজ প্রত্যাখান করে ভালো কাজ বেছে নিতে শিখবে ততদিন পর্যন্ত সে দই ও মধু খাবে (ইসাইয়া/যিশাইয় ৭:১৫)
অথচ আমরা নতুন নিয়মে দেখতে পাই যীশু খ্রীষ্ট দ্রাক্ষারস পান করেছেন,রুটি খেয়েছেন, মাংস খেয়েছেন,ঝলসানো মাছ খেয়েছেন। সুতরাং ভবিষ্যৎ বাণী থেকে প্রমান হয় যে যীশু খ্রীষ্ট পুর্বে পাপী ছিলেন এবং দই ও মধু খেতেন।তারপর ভালো কাজ বেছে নেয়ার পরে মাছ মাংস রুটি ও দ্রাক্ষা রস পান করেছেন।
এছাড়া ব্যবস্থার বিরুদ্ধে পাপ করায় প্রকাশ্যে অনুতাপের প্রতীক হিসেবে যোহন লোকেদেরকে বাপ্তিস্ম দিতেন।(লূক ৩:৩)।তাছাড়া আমরা দেখতে পাই :-"লোকেরা যখন বাপ্তিস্ম নিচ্ছিল সেই সময় একদিন যীশুও বাপ্তিস্ম নিলেন (লুক ৩:২১)।
সুতরাং এ থেকেই প্রমাণ হয় যে যীশু পাপী ছিলেন। আর একজন পাপী লোক সম্পূর্ণ পবিত্র হতে পারে না।
এখন হয়তো তারা বলবে যীশু খ্রিষ্টের বিষয়ে যিশাইয় নবী ভবিষ্যৎ বাণী করেন নি!তাহলে তিনি যোহনের নিকট বাপ্টাইজ হলেন কেনো?? যদি তিনি পাপ না করে থাকেন??
তাহলে একজন পাপী কিভাবে আপনাদের পাপ থেকে পরিত্রাণ দিবে।এছাড়া বাইবেল অনুযায়ী যীশুর চরিত্রে কলঙ্ক লক্ষ করা যায়। আর যার চরিত্রে কলঙ্ক লক্ষ করা যায় সে কিভাবে পবিত্র এবং সৎ হতে পারে?