বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু প্রিয় ভাই ও বোনেরা। অনেক মুসলিম ভাই ও বোনেরা খ্রিস্টানদের সামনে কথা বলতে গিয়ে থতমত খেয়ে যান যে,,,আসলে তাদের কাছে কি কি প্রশ্ন করব? তো তাদের উদ্দেশ্যে খ্রিস্টানদের কাছে কিছু প্রশ্ন আমরা করেছি যেটা আপনারাও করতে পারেন ইনশাআল্লাহ। আজকে আমাদের মুসলিমদের পক্ষ থেকে সমগ্র বাঙ্গালী খ্রিস্টান মিশনারি/পাদ্রী/ফাদারদের কাছে কিছু প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম। পারলে এসবের প্রমাণিক উৎস থেকে বিশ্বাসযোগ্য যুক্তি-প্রমাণ দিয়ে রেফারেন্স সহ উদ্ধৃতি সহকারে আপনাদের তা প্রমাণ করে দেখাতে হবে।যদি না পারেন তাহলে আমরা যুক্তি প্রমাণ দিয়ে যার কথা বলেছি তাঁকে [বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে] মেনে নিতে হবে। আপনাদের নিশ্চয়ই অকপট হতে হবে। আপনারা অনুগ্রহ করে অপব্যাখ্যা এর আশ্রয় নিবেন না।খোঁড়াযুক্তি দেখাবেন না,অথবা সত্যকে গোপন করার জন্য ভাষাকে পেঁচিয়ে ফেলবেন না অথবা টাল-বাহানা করবেন না। (কারণ এগুলো খ্রিস্টান পন্ডিতদের স্বভাব যা পৌলীয় স্বীকৃতি দেওয়া)।যাই হোক আশা করি যদি খ্রিস্টানদেরসৎ হিম্মত থাকে তাহলে এসবের প্রতিটি প্রশ্নোত্তর রেফারেন্স সহ উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমাণ উপস্থাপন করুন।প্রশ্নগুলো একত্রিত অবস্থায় নিম্নরুপ:
১) যীশু [হযরত ঈসা আঃ] তাঁর গ্রেফতার হওয়ার (?) আগে শেষ নৈশভোজের শেষে শিষ্যদের উদ্দেশ্যে একটি দীর্ঘ ভাষণ দিয়েছিলেন।এই ভাষণে তিনি আরেকজন নবীর আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।আর ইনিই ঈসা আঃ কতৃক বিঘোষিত ও প্রতিশ্রুতি সত্যের আত্মা-মুহাম্মদ সাঃ। ঈসা আঃ এর বিদায়ের পর- ভবিষ্যত প্রজন্মকে সেই অনাগত মুক্তিদাতার আনুগত্য করতে নির্দেশ দিয়ে গেছেন। আসলে তিনি বলে গেছেন যে-আল্লাহ্ তাঁর পরে আরেকজন সাহায্যকারী পাঠাবেন যিনি আল্লাহ্ এর বাণী শুনে তাঁর পয়গাম মানুষের সামনে পুনরাবৃত্তি করবেন।
সমগ্র মানবতার এ পথনির্দেশক গুরুত্বপূর্ণ স্বরূপ এ ভাষণটি যোহন এর সুসমাচারের ১৪-১৭ অধ্যায়ে আছে কিন্তু অন্য তিনটি ইঞ্জিলে নেই। মথি,মার্ক ও লুক লিখিত এ তিনটি ইঞ্জিলে যীশুর স্পর্শকাতর দৃশ্যটি একেবারেই নেই। প্রশ্ন উঠে এ বিরাট ফাঁকা রাখার কারণ কি? কেন? ঐ তিন ইঞ্জিলের আদি সংস্করণগুলোতে কি এ ঘটনাটি বর্ণিত ছিল? পরবর্তী কালে কি এটা মুছে ফেলা হয়েছে? কেন? এটা কি জন্য করা হয়েছে? এটা কি এজন্য করা হয়েছে যে মহানবী মুহাম্মদ সাঃ এর ভবিষ্যদ্বাণী এড়িয়ে যেতে হবে এবং যীশুকে শেষ নবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে?
২) অনেক খ্রিস্টান ভাই-বোনরা বলেন যে-আর একজন ''সাহায্যকারী" (another comforter) মুহাম্মদ সাঃ না! তিনি যদি মুহাম্মদ সাঃ না হয়ে থাকেন তাহলে তবে তিনি কে? আপনাদের প্রমাণ করে দেখাতে হবে যে অন্য কার মধ্যে উপরোল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি খুঁজে পাওয়া যায় অথবা মিলে যায় ? পাক-রুহ বা ফেরেশতা জিব্রাইল আঃ এর দ্বারা উপরোল্লিখিত একটা শর্তও পূর্ণ হয়নি। তবে তিনি কে?প্রমাণিক উৎস থেকে বিশ্বাসযোগ্য যুক্তি-প্রমাণ দিয়ে আপনাদের তা প্রমাণ করে দেখাতে হবে। যদি না পারেন তাহলে আমরা যুক্তি প্রমাণ দিয়ে যার কথা বলেছি তাঁকে মেনে নিতে হবে। আপনাদের নিশ্চয়ই অকপট হতে হবে। আপনারা অনুগ্রহ করে অপব্যাখ্যা এর আশ্রয় নিবেন না।খোঁড়াযুক্তি দেখাবেন না,অথবা সত্যকে গোপন করার জন্য ভাষাকে পেঁচিয়ে ফেলবেন না অথবা টাল-বাহানা করবেন না। (কারণ এগুলো খ্রিস্টান পন্ডিতদের স্বভাব যা পৌলীয় স্বীকৃতি দেওয়া) ।আপনারা অনুগ্রহ করে মনে রাখবেন,একদিন আমাদের সকলকেই সৃষ্টিকর্তার সামনে হাজির হতে হবে।
৩)যীশু সেই সাহায্যকারীর আগমন সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছিলেন। যার প্রমাণ দেখুন: (যোহন ১৪:১৫-১৬; ১৫:২৬; ১৬:৭-৮; ১৬:১২-১৩)।" আর এইসব উদ্ধৃতি তে কমপক্ষে "১৪ টি বৈশিষ্ট্য বা শর্ত"-সম্পর্কে জানান দিয়েছেন যীশু। অর্থাৎ যার দ্বারা এসব বৈশিষ্ট্য পূর্ণ হবে নিশ্চিত তিনিই হবে যীশুর বর্ণিত "সেই সাহায্যকারী। কেননা যার সম্পর্কে বলা হয়েছে একমাত্র তিনি ছাড়া পৃথিবীর দ্বিতীয় কেউই এসব বৈশিষ্ট্য গুলো পরিপূর্ণ করতে পারবে না। এখন যীশু যদি "পবিত্র আত্মা"র কথা বলেন তাহলে এসকল বৈশিষ্ট্যের সবগুলো একমাত্র "পবিত্র আত্মা "-দ্বারা পরিপূর্ণ হবে।আর যদি "নবী মুহাম্মদ সাঃ"- এর সম্পর্কে বলেন তাহলে নিশ্চয়ই এসকল বৈশিষ্ট্যের সবগুলো একমাত্র "নবী মুহাম্মদ সাঃ"- এর দ্বারা পরিপূর্ণ হবে। অর্থাৎ এই ভবিষ্যদ্বাণীর সকল বৈশিষ্ট্য বা শর্তগুলো সেই পরিপূর্ণ করতে পারবে যার সম্পর্কে যীশু বলেছিলেন। কিন্তু কখনোই একসাথে একজন ব্যতীত দুইজনের দ্বারা পরিপূর্ণ করা সম্ভব নয়।আর এসব বৈশিষ্ট্যের সবগুলো ই একমাত্র "নবী মুহাম্মদ সাঃ"- এর দ্বারা পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু তথাকথিত "পবিত্র আত্মা"- দ্বারা পরিপূর্ণ হয় নাই। এখন বলেন কেন এমনটি হলো?
৪)"তিনি বিশ্বাসীদের কাছে চিরকাল থাকবেন"(যোহন ১৪:১৬ )। এখানে একটি শর্ত হল"তিনি চিরকাল মানুষের মাঝে থাকবেন?"তো প্রশ্ন হলো: তিনি চিরকাল মানুষের মাঝে থাকবেন কিভাবে?
ক) দৈহিক ভাবে অর্থাৎ স্বশরীরে চিরকাল জীবিত থাকবে?
খ) নাকি এখানে চিরকাল জীবিত থাকার অর্থ মানে উক্ত সাহায্যকারীর দেওয়া পরিপূর্ণ শিক্ষা,ব্যক্তিত্ব,অবদান ও জীবনাদর্শের মাধ্যমে তিনি চিরকাল থাকবেন মানুষের মাঝে?এসবের যথার্থ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ যুক্তি প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারবেন কী কোন ত্রিত্ববাদী পৌলীয় খ্রিস্টান? জানি পারবে না। আসলে এ কথা বলতে ঈসা আঃ সেই সত্যময় আত্মার দেওয়া পরিপূর্ণ শিক্ষা ,জীবনাদর্শ ও ব্যক্তিত্বকেই বুঝিয়েছেন। অন্য কোন মানুষ বা রুহকে বোঝাননি।কারণ কোন রুহ মানুষের নিকট চিরকাল থাকতে পারে না। কোন নবীও দৈহিক ভাবে চিরকাল মানুষের সাথে থাকতে পারে না। কিন্তু নবীরা শিক্ষার মাধ্যমে তিনি চির স্বরনীয় হয়ে থাকতে পারে।এখন কথা হলো অশরীরী আত্মা দৈহিক ও মাংসিক মানুষকে কিভাবে কী শিক্ষা দিয়েছে এবং কবে কোথায় কিভাবে কী শিক্ষা দিল?
৫)যীশুর বর্ণিত উক্ত "পথ নির্দেশক" হবেন সত্যের (Spirit of Truth) আত্মা [সত্য নবী/ভাববাদী] (যোহন ১৪:১৭; ১৫:২৬; ১৬:১৩)।আপনাদের (খ্রিস্টানদের) কল্পিত "পাক-রুহ" -কিভাবে "সত্যের আত্মা "-হলো বলেন?-"পাক-রুহ"- সত্যের আত্মাও নন আবার মিথ্যার আত্মাও নন,অশরীরী। (১ যোহন ৪:১,২) এ Spirit শব্দটি নবী শব্দের সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। সত্যের আত্মাই সত্য নবী এবং মিথ্যার আত্মাই মিথ্যা নবী।এখন কথা হলো অশরীরী আত্মা কিভাবে পথ নির্দেশনা দিবেন মানুষ কে যেহেতু মানুষ অশরীরী আত্মা কে দেখতে পারে না শুনতে পারে না ইত্যাদি?
৬)সেই সত্যের আত্মা সকল বিষয়ে মানুষকে শিক্ষা দিবেন" (যোহন ১৪:২৬)।খ্রিস্টানদের তথাকথিত "কল্পিত পাক-রুহ" কি শিক্ষা দিয়েছেন?কোথায় এসে কিভাবে কোন কোন বিষয়ে কী কী শিক্ষা দিয়েছে?কোন খ্রিস্টান পাদ্রী/ফাদার কী এসব প্রমাণ করে দেখাতে পারবেন?
৭)যীশু তথা ঈসা আঃ যা কিছু বলেছিলেন ,তিনি সে সমস্ত মনে করিয়ে দিবেন"(যোহন ১৪:২৬)।
ক) এই তথাকথিত ও কল্পিত পাক-রুহই নাকি ঈসা আঃ যা যা বলেছিলেন,সেই সমস্ত কিছু খ্রিস্টানদের মনে করিয়ে দিবেন। যীশু তথা ঈসা আঃ এর কি কি শিক্ষা পাক-রুহ মনে করিয়ে দিয়েছে আমরা সবাই তা জানতে চাই।বলুন,আপনাদের কল্পিত পাক-রুহ কি কি মনে করিয়ে দিয়েছে?কিছুই না পারলে বাইবেল থেকেই রেফারেন্স সহ উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমাণ উপস্থাপন করে দেখান?চ্যালেঞ্জ করলাম খ্রিস্টানদের হিম্মতে কুলাবে না!
খ) এখানে ঈসা আঃ বিধর্মীদের বলেননি, নিজের লোক-"বনি ইসরাইল " কে বলেছেন, সব কিছুই তিনি অর্থাৎ উক্ত সাহায্যকারী তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিবেন। কারণ,তারা ভুলে যাবে। যদি তাদের মনে থাকে তাহলে তো "মনে করিয়ে দিবার"-কোনো প্রশ্নই ওঠে না।"সেই সাহায্যকারী "-এমন একটি সময়ে আসবেন,যখন ঈসা আঃ এর শিক্ষা লোকে ভুলে যাবে এবং তা "স্বরণ "করানোর প্রয়োজন হবে। প্রকৃত পক্ষে তারা তা" ভুলে গিয়েছিল। এখানে প্রশ্ন হলো খ্রিস্টানদের দাবিকৃত তথাকথিত পবিত্র আত্মা কখন কোন সময়ে এসে সেইসব ভুলে যাওয়া কথাগুলো মনে করিয়ে দিয়েছিল এবং সেসব কী কী?
৮) তিনি" যীশু তথা ঈসা আঃ এর বিষয়ে সাক্ষ্য দিবেন,তাঁর "সম্বন্ধে "বলবেন (যোহন ১৫:২৬)। বলুন,আপনাদের কল্পিত "পাক-রুহ" যীশু তথা "ঈসা আঃ এর বিষয়ে কি সাক্ষ্য দিয়েছেন?"কিছুই না।এবার দেখুন ,হযরত মুহাম্মদ সাঃ কি "সাক্ষ্য দিয়েছেন "।ইনিই সেই "সাহায্যকারী"অর্থাৎ মুহাম্মদ(সাঃ যিনি ওহীর [কোরআন] মাধ্যমে যীশু তথা ঈসা আঃ ও তাঁর মিশনের প্রকৃত রুপ সম্পর্কে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। তিনি সেই সত্যের আত্মা যিনি যীশু তথা ঈসা আঃ ,তাঁর মায়ের এবং তাঁর সঙ্গীদের উপর শত্রুদের আরোপিত সেই মিথ্যা অভিযোগ ,কলঙ্ক লেপন ও মিথ্যা বদনাম দূর করেছিলেন। কিন্তু খ্রিস্টানদের দাবিকৃত তথাকথিত পবিত্র আত্মা যীশুর সম্পর্কে কিছুই সাক্ষ্য দেয়নি? কোন খ্রিস্টান কী দেখাতে পারবেন কী তাদের পবিত্র আত্মা এসে যীশু এবং তাঁর মাতার নামে মিথ্যা অপবাদ গুলো খন্ডন করেছিলেন?কেননা ইহুদিরা যীশু কে জারজ অবৈধ সন্তান মিথ্যাবাদী পেটুক ভন্ড ইত্যাদি বলে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিল।এখন আমরা জানতে চাই খ্রিস্টানদের দাবিকৃত তথাকথিত পবিত্র আত্মা কোন গির্জায় এসে কবে কোথায় এসব মিথ্যা অপবাদ খন্ডন করে যীশুর বিষয়ে সত্য সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং তাঁর সম্পর্কে কী কী বলেছেন?
৯) আমি জিজ্ঞেস করি-যদি পাপ থেকে উদ্ধার পাওয়া অর্থাৎ বেহেশত পাওয়া যদি এতই সহজ হতো তাহলে দোযখ সৃষ্টি করার কী কোন প্রয়োজন ছিল?প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাঃ এ রকম "ধার্মিকতার সম্বন্ধে "-খ্রিস্টান জগতকে-" দোষী সাব্যস্ত "-করেছেন।কিন্তু খ্রিস্টানদের দাবিকৃত তথাকথিত পবিত্র আত্মা এরুপ ধার্মিকতার সম্পর্কে কী বলেছেন?
১০) বাইবেল বলছে:-"কে হায় হায় বলে?কে হাহাকার করে? কে বিবাদ করে? কে বিলাপ করে? কে অকারণেই আঘাত পায়?কাহার চক্ষু লাল হয়? যারা দ্রাক্ষারস (Wine)-এর নিকটে বহুকাল থাকে, যারা সুরার সন্ধানে যায়?দ্রাক্ষারসের প্রতি দৃষ্টি কর না..............যদিও তা চকচক করে, যদিও তা সহজে গলায় নেমে যায়,অবশেষে তা সর্পের ন্যায় কামড়ায়, বিষধরের ন্যায় দংশন করে।" (হিতোপদেশ ২৩:২৯-৩২)। "ব্যভিচার,মদ্য ও নতুন দ্রাক্ষারস (New Wine)-এ সকল বুদ্ধি হরণ করে। "(হোসেয়া ৪:১১)। মদ অপবিত্র বস্তুর মধ্যে একটি। চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে: মদ পানের বিষফল:অনেক কঠিন কঠিন অসুখ হয়। যা "সর্পের ন্যায় কামড়ায়,বিষধরের ন্যায় দংশন করে,বুদ্ধি হরণ করে"-এমন একটি ধ্বংসশীল পানীয় থেকে তার অনুসারীদের বাঁচানোর জন্য পাক-রুহ কী সমাধান দিল?
১১)মদ্যপায়ী তিলে তিলে ধ্বংসের দিকে যেতে থাকে,তার স্বাস্থ্য নষ্ট হয়,পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে প্রতিনিয়ত ভয়ঙ্কর অশান্তি আসে ,সমাজ ও রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। মদ্যপায়ী মদ পান করার ফলে মা,মেয়ে,স্ত্রীর কোন পার্থক্য করতে পারে না সহজে।এ সময় এই নরপশুর নিকট সবাই সমান। সম্ভবত: মদের এত ছড়াছড়ির কারণেই আমেরিকাতে ১৩% লোক এবং আফ্রিকাতে ৮%লোক নিজ মেয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্ক করে। ওদের কল্পিত পাক রুহের (?) পরিচালনায় :ঈসা (?) কান্না গ্রামে বিবাহভোজে ১৮ মন কড়া মদ তৈরী করে মদ পানে উৎসাহ দিলেন ।"(ইঞ্জিল শরিফ,ইউহান্না ২:৩-১১)।
যীশুর মতো একজন মহান নবী কিরূপে নিজের অনুসারীদেরকে এমন একটি ধ্বংসশীল পানীয় (মদ) পানে উৎসাহ দিতে পারেন? তবে কি ইঞ্জিল (সুসমাচার)-এর ঘটনা কি মিথ্যা? সুস্থ বিবেক বোধবুদ্ধি সম্পন্ন কোন ব্যক্তি কি বিশ্বাস করতে পারেন যে, যীশু তথা ঈসা আঃ (?) এর মতো মহান নবীর নবুয়তের কাজ শুরু হতে পারে সূচনারুপে এমন একটি অপবিত্র ও ধ্বংসশীল পানীয় তৈরির এই কার্যসিদ্ধি করে । অথচ তাঁরই মতো আরেকজন নবী ও রাসূল মুহাম্মদ সাঃ ১৪০০ বছর পূর্বে যখন সারা দুনিয়া মদ্যপানে লিপ্ত ছিল , তখন তিনি মদের বিভীষিকাময় অপকারীতার প্রতি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন, এর ব্যবহারের তীব্র নিন্দা করলেন এবং মদ পানকারীকে দণ্ডনীয় অপরাধ ও শাস্তির যোগ্য সাবস্ত্য করেছেন।"
১২)প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাঃ আরো বলেছেন:-"যে মাদকদ্রব্য বেশি পরিমাণে পান করলে নেশা হয়,তার অল্প মাত্রাও ব্যবহার করা হারাম।"জিমি স'গার্ড (Jemmy Swaggard) নামক আমেরিকান ধর্ম প্রচারক তাঁর -"অ্যালকোহল "- নামক পুস্তকে হিসাব দিয়েছেনঃ আমেরিকাতেই সমস্যা সৃষ্টি কারী মদ্যপায়ী মাতালের সংখ্যা "সাড়ে পাঁচ কোটি। "এই পরাশক্তি আমেরিকা সরকারের অর্থবল জাতির বুদ্ধিবল কাজে লাগিয়েও এর শক্তিশালী প্রচার মাধ্যমে -"মদ তৈরী ও বিক্রয় নিষিদ্ধকরণ "-আইন জারি করেও কৃতকার্য হতে পারল না। মদ্যপানের বিভীষিকাময় অপকারীতা সার্বজনীন। এমন ধ্বংসশীল পানীয় (মদ) আজ খ্রিস্টান জগতে পানির মতো ব্যবহৃত হচ্ছে অথচ পাক-রুহ কোন গির্জার মাধ্যমে এখন পর্যন্ত এর রায় প্রদান করেনি,মদ পান বন্ধ করতে বলেনি ,অধিকন্তু মদ পানে উৎসাহ প্রদান করেছে (১ তীমথিয় ৫:২৩ ; হিতোপদেশ ৩১:৬,৭, যোহন ২:৩-১১ ইত্যাদি দ্রষ্টব্য) কিন্তু খ্রিস্টানদের তথাকথিত পবিত্র আত্মা কেন এই মদ পানের সম্পর্কে চুড়ান্ত রায় দিতে পারল না?কী কারণ এর পেছনে লুকায়িত রয়েছে?পবিত্র আত্মা কী মদ পানের বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সম্পর্কে চুড়ান্ত ভাবে জানত না?
১৩) নবী মুহাম্মদ সাঃ এর পবিত্র মুখ নিঃসৃত একটি মাত্র পংক্তি ঘোষণা করার সাথে সাথে মদিনায় সমস্ত মদের পাত্র খালি করা হলো।অদ্যাবধিও দ্বিতীয়বার আর পূর্ণ করা হয় নাই।প্রিয় নবী-"মদ পানের বিভীষিকাময় অপকারীতা থেকে সমগ্র মানবজাতিকে রক্ষা করেছেন। কিন্তু খ্রিস্টানদের দাবিকৃত তথাকথিত পবিত্র আত্মা কিভাবে মদ থেকে মানব জাতিকে ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা করেছে?
১৪) সত্যের আত্মা মানুষকে পথ দেখিয়ে পূর্ণ সত্যে নিয়ে যাবেন"(যোহন ১৬:১৩)।যোহন (১৬:১৩-১৪) অনুচ্ছেদে যীশু তথা ঈসা আঃ এর ভবিষ্যদ্বাণী শান্তিদাতা হবেন একজন পুরুষ। কাজেই এই অনুচ্ছেদের ইংরেজি পাঠে পাঁচবার করে পুংলিঙ্গ সর্বনাম "He"-শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ হিব্রুতে -"পাক-রুহ"-হচ্ছে স্ত্রী লিঙ্গ। হিন্দুস্তানে মুসলিম পন্ডিতগণ খ্রিস্টান মিশনারিদের সঙ্গে যুক্তি-তর্কে তুলে ধরেছিলেন যে," যীশু তথা ঈসা আঃ এর বর্ণিত উক্ত সাহায্যকারী অর্থাৎ শান্তিদাতা হবেন একজন পুরুষ অর্থাৎ নবী মুহাম্মদ সাঃ।" এই শান্তিদাতা কে (পাক-রুহকে) স্ত্রী লিঙ্গ প্রমাণ করার জন্য উর্দু বাইবেলগুলোতে পুংলিঙ্গ সর্বনাম-"He"-কে স্ত্রী লিঙ্গ সর্বনাম-"She"-দ্বারা পরিবর্তন করা হয়েছে,যাতে মুসলিমগণ দাবি করতে না পারেন যে,"যীশু তথা ঈসা আঃ এর বর্ণিত উক্ত সাহায্যকারী অর্থাৎ শান্তিদাতা হবেন একজন পুরুষ অর্থাৎ নবী মুহাম্মদ সাঃ।"দেখুন তো খ্রিস্টান মিশনারিদের কারসাজি,কত বড় ধোঁকা আর ফাঁকিবাজি।
যোহন (১৬:১৩) অনুচ্ছেদে যীশু তথা ঈসা আঃ বলেছেন:-"তিনি তোমাদের পথ দেখিয়ে পূর্ণ সত্যে নিয়ে যাবেন।"সত্যময় আত্মা [মুহাম্মদ সাঃ], না পাক-রুহ "-কে মানবজাতিকে পথ দেখিয়ে -"পূর্ণ সত্যে নিয়ে যাবেন?" মানবজাতি আজ অনেক সমস্যার সম্মুখীন ,সমাধানের অনুসন্ধানে হাবুডুবু খাচ্ছেন। খ্রিস্টানদের মতে পাক-রুহ সমস্ত সমস্যার সমাধান দিয়ে মানবজাতিকে "পূর্ণ সত্যে নিয়ে যাবেন!"সমস্ত সমস্যার সমাধান চাই না। একটি মাত্র প্রমাণ দিয়ে দেখাতে হবে যে,আপনাদের কল্পিত-"পাক-রুহ"-গত দুই হাজার বছরে কোন সমস্যার সমাধান দিয়েছে?"কাকে পথ দেখিয়ে কোন সত্যের পথে নিয়ে গেছে?এর প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারবেন কী কোন খ্রিস্টান মিশনারি পাদ্রী ফাদারগুলো এবং পন্ডিতগণ সহ?পারলে পবিত্র আত্মার সাহায্যে পোপদের ও চ্যালেঞ্জ করলাম আমি?
১৫)যীশু তথা ঈসা আঃ তাঁর উত্তরাধিকারী-সত্যের আত্মা,সাহায্যকারী,শান্তিদাতা তথা উক্ত সাহায্যকারীর জন্য অনেক কথা,অনেক কাজ অসম্পূর্ণ রেখে গিয়েছিলেন।মানবজাতির সার্বিক সত্যের পথ নির্দেশকের উপর বিষয়টি ছেড়ে দিয়ে গিয়েছিলেন।এখন খ্রিস্টানদের দাবিকৃত তথাকথিত পবিত্র আত্মা নবী [ঈসা আঃ এর ] রেখে যাওয়া কোন অসম্পূর্ণ কাজগুলো কে সম্পূর্ণ করে গেছেন এবং সেগুলো কী কী?এর প্রমাণ চাই পৌলীয় খ্রিস্টধর্মের অনুসারীদের কাছে?
১৬) খ্রিস্টানদের দাবিকৃত তথাকথিত পবিত্র আত্মা কেমন অর্থনৈতিক নীতিমালা জারি করেছে এবং তা সম্পর্কে কী কোন যৌক্তিক সমাধান দিয়ে সুদকে হারাম করে ধনী কতৃক গরিবের মাল শোষণ করা বন্ধ করেছে কী?অন্যদিকে যাকাত দিয়ে বাধ্যতামূলক করে পুঁজিবাদের অভিশাপ হতে ধনীকে বাঁচিয়েছেন কী? গরীবকে রক্ষা করেছে কী এবং দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার ব্যবস্থা করেছে কী?আর করলেও সেটা কেমন? খ্রিস্টানদের দাবিকৃত তথাকথিত পবিত্র আত্মা বা পাক রুহ কখনো সম্পত্তিতে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করে নারীর মর্যাদা বাড়িয়েছে কী? অতঃপর সুদ,ঘুষ,চুরি,ডাকাতি ইত্যাদি অপকর্ম সামাজিক জীবনকে অতিষ্ঠ করে ফেলেছে। এগুলো হচ্ছে পীড়িত পরিবার,অসুস্থ সমাজ ও অশান্তি দুনিয়ার পরিচয়। এক কথায় রাজনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিক ও অর্থনৈতিক সকল ক্ষেত্রেই অসত্য ও অশান্তি বিরাজ করছে তথাকথিত পাক-রুহের জগতে যা আমরা বাস্তবে দেখতে পারছি। প্রিয় নবী আল-আমিন সাঃ সুদ, ঘুষ, চুরি, ডাকাতি, নরহত্যা ইত্যাদি খারাপ কাজের বিরুদ্ধে কঠোর আইন করে সমাজ ও দেশের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করে শান্তির ব্যবস্থা করেছেন। ভ্রুণ হত্যা, নারী-শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, ব্যাভিচারের যে বিভৎস লীলা পশ্চিমা দেশগুলোতে চলছে রেডিও-টেলিভিশন এবং খবরের কাগজের পাতা ওল্টালেই তা অহরহ চোখে পড়ে। বিবাহের খরচের ভয়ে ভ্রুণ হত্যার হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। তো পবিত্র আত্মা এ সম্পর্কে কোন সমাধান দিয়েছে কী?আর দিয়ে থাকলে তা কী কী?বাইবেল থেকেই রেফারেন্স সহ উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমাণ উপস্থাপন করেন যদি পারেন?
১৭) আল-আমীন সাঃ পর্দা-প্রথা চালু করে যুবক যুবতীকে মানসিক রোগ এবং নানা অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা থেকে শুরু করে ব্যভিচার করা হতে রক্ষা করেছেন ।এভাবে তিনি মানুষের চরিত্র কে করেছেন মাধুর্যপূর্ণ ও মানবতাকে করেছেন।কিন্তু খ্রিস্টানদের পাক রুহ কিভাবে মানবজাতিকে মানসিক রোগ এবং নানা অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা থেকে শুরু করে ব্যভিচার করা হতে রক্ষা করেছেন?কিছুই না বরং আমরা এর উল্টো দিকই দেখেছি পাক রুহে বিশ্বাসী দেশগুলো তে!
১৮) পাক-রুহে বিশ্বাসী দেশগুলো তে গর্ভপাতে হত্যা করা শিশুর পরিসংখ্যানে ৯/২/২০১৩ তাং পর্যন্ত এক বছরে হত্যা করা শিশুর সংখ্যা ৫৭২৮৬১২। সুত্রঃ Abortions statistics. com Googles Health Statistics. Abortions (most recent) by country.
ক্রমিক সংখ্যা---দেশের নাম----পরিমাণ
১ রাশিয়া- ২৭৬৬৩৬০
২ আমেরিকা ১২১০৮৮০
৩ ভারত ৫৯৬৩৪৫
৪ জাপান ৩৪৩০২৪
৫ ফ্রান্স ১৬১১২৯
৬ ইতালি ১৩৪১৩৭
৭ জার্মানি ৯৭৯৩৬
৮ বুলগেরিয়া ৯৭০২৩
৯ কিউবা ৮৩৯৬৩
১০ হাঙ্গেরি ৭৬৯৫৭
১১ কানাডা ৭০৫৪৯
১২ সুইডেন ৩৭৪৮৯
১৩ ইজরায়েল ১৫৫০৯
১৪ নরওয়ে ১৩৬৭২
১৫ নিউজিল্যান্ড ১১১৭৩
১৬ ফিনল্যান্ড ৯৮৮৪
১৭ গ্রিস ১২১৬
১৮ আয়ারল্যান্ড ৮০৭
১৯ পোল্যান্ড ৫৫৯
সর্বমোটঃ ৫৭২৮৬১২
প্রতি দেশেঃ ৩০১,৫০৫.৯
কত নিষ্ঠুর পৌলীয় ধর্মে বিশ্বাসী লোকগুলো সহ অমুসলিমরা!নিজেদের সন্তানদের কে জীবন্ত হত্যা করে ফেলে আর বলে-তাদের কোন দোষ নেই:-"খোদা তাদের নির্দোষ বলে গ্রহণ করেন .............যীশু তাদেরকে পাপের হাত থেকে মুক্ত করেছেন। "(রোমীয় ৩:২২,২৪)। মহান আল্লাহ্ কোরআনে বলেছেন:-"পার্থিব জীবন তাদেরকে ধোঁকায় ফেলেছে। "(কোরআন ৬:৭০,১৩০; ৭:৫১; ৪৫:৩৫)
১৯) বাড়তি নারী কতৃক সমাজকে কলুষিত করা প্রভৃতি অপরাধে সমাজের মানুষ অধঃপতনে যাচ্ছে। প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাঃ কোরআনের আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে এ সকল সমস্যার সমাধান দিয়ে গেছেন। দেখুন তো,আপনাদের তথাকথিত পাক রুহ পথ দেখিয়ে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?পাক-রুহে বিশ্বাসী পাশ্চাত্যের দেশগুলো তে অপরাধের হার কেমন? পাশ্চাত্যের খ্রিস্টান অধ্যুষিত দেশগুলোতে পরিসংখ্যান সংক্রান্ত তথ্যে চুরি ডাকাতি হত্যা ধর্ষণ ব্যভিচার ইত্যাদি খারাপ অপকর্মের সংখ্যা মারাত্মক আকারে ধারণ করেছে। তো কোন পবিত্র আত্মা এসে কেন এসবের সমস্যার সমাধান দিচ্ছে না?পবিত্র আত্মা কী তাহলে ঝিমিয়ে পড়েছে নাকি এতসব অপরাধের হার দেখে?
২০) মুহাম্মদ সাঃ এর মানবাধিকার সম্পর্কে ঘোষণাকৃত বক্তব্যগুলো দুনিয়ার সমস্ত মানুষের মধ্যে সকল বৈষম্য,জাতিগত ভেদাভেদ ও হানাহানি মিটিয়ে সকলে ভাই ভাই হিসেবে একই তাবুর নিচে শান্তিতে বসবাস করার জন্য।অপরদিকে "খ্রিস্টানদের দাবিকৃত তথাকথিত পবিত্র আত্মা বা কথিত পাক রুহ" কোন গির্জার মাধ্যমে এখনও পর্যন্ত তার রায় পেশ করেনি। অথচ সত্যময় আত্মা আল আমীন সাঃ ১৪৫০ বছরের পূর্বে বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের ঘোষণা দিয়ে গিয়েছেন। মানবতার প্রতি তাঁর সবচেয়ে বড় দান হলো ভৌগলিক সীমারেখা উপেক্ষা করে সামাজিক বর্ণবৈষম্য ও জাতিগত ভেদাভেদের বিলোপ সাধন করা।তো খ্রিস্টানদের পবিত্র আত্মা কী এখানে ব্যর্থ?
২১)খ্রিস্টানগণ মিথ্যা দাবি করে যে,পাক রুহ পথ দেখিয়ে পূর্ণ সত্যে নিয়ে যাবেন মানবজাতিকে। "পূর্ণ সত্যের "-কথাটা না হয় বাদই দিলাম,গত দুই হাজার বছরে আমরা একটি মাত্র সত্য দেখতে চাই যা কিনা যীশু খ্রিস্ট তথা ঈসা আঃ বলে যাননি কিন্তু পাক-রুহ তা বলেছেন বা প্রতিষ্ঠা করেছেন?একটিও দেখাতে পারবেন না?চ্যালেঞ্জ করলাম সমগ্র খ্রিস্টানদের।
২২)যীশু তথা ঈসা আঃ কতৃক বিঘোষিত সত্যময় (আল আমীন) আত্মা হযরত মুহাম্মদ সাঃ কতৃক -"পূর্ণ সত্যে "- এত প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তাঁকে বাদ দিয়ে খ্রিস্টানগণ তাদের ঐ কল্পিত-"পাক-রুহের"- বিশ্বাসই অন্তরে বদ্ধমূল করে রেখেছে যে -"পাক-রুহের "-কোন প্রমাণ গত দুই হাজার বছরেও দেখাতে পারেনি।পাক-রুহ কতৃক পথ দেখিয়ে মানবজাতিকে-"পূর্ণ সত্যে নিয়ে যাওয়ার "-এই দাবি যে কত ভ্রান্ত ও অযৌক্তিক তা আশা করি নিরপেক্ষ, চিন্তাশীল ও বিবেক সম্পন্ন সকল খ্রিস্টানই অনুধাবন করবেন। যীশু তথা ঈসা আঃ কতৃক বিঘোষিত সাহায্যকারী,সত্যময় আত্মা মুহাম্মদ সাঃ কতৃক -"পূর্ণ সত্যে নিয়ে "-যাওয়ার এত প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তাঁকে ভন্ড, প্রতারক, মিথ্যাবাদী ইত্যাদি বলে (নাঊযুবিল্লাহ মিনযালিক) অপবাদ দেয় ,অথচ অমুসলিম পন্ডিত ও মনিষীরাই নবী মুহাম্মদ সাঃ এর সম্পর্কে ও তাঁর ব্যক্তিগত জীবনী পাঠ করে তাঁর প্রশংসা করেছেন যে,তাঁর মত মহান ব্যক্তি দুনিয়াতে আর দ্বিতীয়টিও খুঁজে পাওয়া যায় নাই।এখন বলেন খ্রিস্টানদের পাক রুহ সম্পর্কে কোন কোন মুসলিম-অমুসলিম মহান মনীষীগণ প্রশংসা করেছেন?প্রমাণ দেখান?
২৩)"তিনি নিজ থেকে কথা বলবেন না,যা কিছু শুনবেন তাই বলবেন"(যোহন ১৬:১৩)।আপনাদের [খ্রিস্টানদের] দাবিকৃত তথাকথিত কল্পিত "পাক-রুহ"-কবে কার কাছ থেকে কি শুনে কি বলেছেন?কিছুই না অথচ ত্রিত্ববাদী খ্রিস্টানদের দাবি পবিত্র আত্মা বলে ঈশ্বর।তাহলে খ্রিস্টানদের তিন ঈশ্বরের এক ঈশ্বর পাক রুহ কী নিজের থেকে কথা বলতে পারে না?যে নিজের থেকে কথা বলতে পারে না সে কিভাবে ঈশ্বর হলো? কিন্তু খ্রিস্টানদের এখানে শিখানো ধর্মমতে -"পাক-রুহ"-নিজেই তিন ঈশ্বরের একজন। তাঁর তো শুনে বলার প্রয়োজন হয় না। যোহনের সুসমাচার লেখা হয়েছিল গ্রিক ভাষায়।ঐ ভাষায় "শোনা "বোঝাতে "আকুও "-ক্রিয়াপদ ব্যবহৃত হয়।এ শব্দের আরেকটি অর্থ হলো "আওয়াজ"-অনুভব করা। একই ভাবে "বলা "এই ক্রিয়াপদের গ্রিক তর্জমা হলো- "ল্যালিও "-এর অর্থ হলো বিশেষ কাজ যা মানুষের শোনা বা বলা অঙ্গের কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট।পবিত্র আত্মার কথা বলার বা কথা শোনার মতো এমন কোন অঙ্গ নেই।সুতরাং তার উপর -"বলা"-ও -"শোনা"-র দায়িত্ব প্রদান করা অদ্ভুত এবং অসম্ভব।সুতরাং এটাই যুক্তি সংগত যে,যোহনের (Paracletos) প্যারাক্লীতের দর্শন বা শ্রাবনাঙ্গ আছে এমন এক মানবসত্তা।
২৪)"তিনি আগামী ঘটনা [ভবিষ্যতের কথা] মানুষকে জানাবেন"(যোহন ১৬:১৩)। আমরা জানতে চাই গত দুই হাজার বছরে কি কি ঘটনা ঘটেছে যা যীশু বলেনি অথচ আপনাদের [খ্রিস্টানদের] দাবিকৃত তথাকথিত কল্পিত-"পাক-রুহ"-মানব জাতিকে কোন বিষয়ে কী সম্পর্কে জানিয়েছে? বাইবেলে "পবিত্র আত্মা বা পাক-রুহ"- যে "ভবিষ্যত বিষয় "-বলছে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।যেমন:
ক) "প্রভু খোদা তাঁর [যীশুর] পূর্বপুরুষ রাজা দাউদের সিংহাসন তাঁকে দিবেন" (প্রচলিত ইঞ্জিল শরিফ,লুক ১:৩২,৩৩ এবং প্রেরিত ২:৩০)। কোথায় যীশুর "সিংহাসন?
খ) পৌল বলেছিল:-"আমরা জীবিত থাকতেই প্রভু [যীশু] ফিরে আসবেন.................বেহেশত থেকে নেমে আসবেন (১ থিসলনীকিয় ৪:১৫-১৬)।
পৌল কে পবিত্র আত্মা বাঁচাতে আসল না কিন্তু কেন?অথচ পৌল ই পবিত্র আত্মার জনক?
২৫) বিশ্ব মানবতার নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ পবিত্র আল কোরআন মাজীদের আয়াত দ্বারা সারা বিশ্ববাসীকে চ্যালেঞ্জ করলেন সূরা আল বাকারা (البقرة), আয়াত: ২৩-২৪ এ বলা হয়েছে:-
وَإِن كُنتُمْ فِى رَيْبٍ مِّمَّا نَزَّلْنَا عَلَىٰ عَبْدِنَا فَأْتُوا۟ بِسُورَةٍ مِّن مِّثْلِهِۦ وَٱدْعُوا۟ فَإِن لَّمْ تَفْعَلُوا۟ وَلَن تَفْعَلُوا۟ فَٱتَّقُوا۟ ٱلنَّارَ ٱلَّتِى وَقُودُهَا ٱلنَّاسُ وَٱلْحِجَارَةُ أُعِدَّتْ لِلْكَٰفِرِينَ
شُهَدَآءَكُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ إِن كُنتُمْ صَٰدِقِين
অর্থঃ এতদসম্পর্কে যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে যা আমি আমার বান্দার [মুহাম্মদ সাঃ]- প্রতি অবতীর্ণ করেছি, তাহলে এর মত একটি সূরা রচনা করে নিয়ে এস। তোমাদের সেসব সাহায্যকারীদেরকে সঙ্গে নাও-এক আল্লাহকে ছাড়া, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো।আর যদি তা না পার-অবশ্য তা তোমরা কখনও পারবে না, তাহলে সে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা কর, যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর। যা প্রস্তুত করা হয়েছে কাফেরদের জন্য।"
সত্যময় আত্মা আল আমীন সাঃ এর এই ভবিষ্যদ্বাণী আজ অক্ষরে অক্ষরে সত্যে পরিণত হয়েছে। তিন ছত্র বিশিষ্ট সূরা আল কাওসার পবিত্র কোরআনের সবচেয়ে ছোট সূরা। চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করার পর থেকে আজ ১৪০০+ বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্বের সকল অসাধারণ ভাষা জ্ঞান সম্পন্ন বিরুদ্ধবাদী পন্ডিতদের কেউই কোরআনের অনুরূপ (সৃরা কাওসারের মত) ছোট একটি সূরাও রচনা করে এই সামান্য চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার সাহস করল না।"এছাড়া তৎকালীন যুগের লবিদ নামক একজন শ্রেষ্ঠ কবি ও সাহিত্যিক ছিল।তিনিও পর্যন্ত সূরা কাওসারের মত ছোট্ট একটি সূরা দেখে বলেছিলেন,"এটা মুহাম্মদ সাঃ এর নিজের বানানো কোন কবিতা নয় অর্থাৎ মুহাম্মদ সাঃ এর পক্ষে এমন কবিতা রচনা করা সম্ভব নয়।এটা একমাত্র আল্লাহর পক্ষে সম্ভব। আর তিনিও অবশেষে ইসলাম গ্রহণ করে ধন্য হয়েছিলেন।
এখন কথা হলো:-পাক-রুহের পরিচালনায় নাকি সুসমাচার রচিত হয়েছিল অথচ এই সামান্য চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে পাক রুহ আজ নিরব কেন?আপনাদের কথিত পাক-রুহের নীরবতাই প্রমাণ করে যে, "পাক-রুহ সম্পর্কে খ্রিস্টানদের সমস্ত দাবি মিথ্যা।"
২৬) প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাঃ কোরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন সূরা মারইয়াম (مريم), আয়াত: ৩৭
فَٱخْتَلَفَ ٱلْأَحْزَابُ مِنۢ بَيْنِهِمْ فَوَيْلٌ لِّلَّذِينَ كَفَرُوا۟ مِن مَّشْهَدِ يَوْمٍ عَظِيمٍ
"অতঃপর তারা [খ্রিস্টানগণ] বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়ল; সুতরাং তারা পরস্পর মতভেদ সৃষ্টি করে রইলো।"
এখানে الأَحزَاب (দলগুলি) বলতে খ্রিষ্টান ও ইয়াহুদীদের দলকে বুঝানো হয়েছে; যারা ঈসা আঃ এর ব্যাপারে বিভিন্ন বিষয়ে মতভেদ করেছিল। ইয়াহুদীরা বলেছিল, তিনি জাদুকর ও জারজ সন্তান অর্থাৎ ইউসুফ (যোসেফ] নাজ্জারের অবৈধ সন্তান (নাঊযুবিল্লাহ মিনযালিক)। খ্রিষ্টানদের মধ্যে প্রোটেষ্ট্যান্টদের বক্তব্য ঈসা আঃ আল্লাহর পুত্র। ক্যাথলিকরা বলে, তিনি তিন আল্লাহর তৃতীয়জন। অর্থোডক্সরা বলে তিনি স্বয়ং আল্লাহ। এভাবে ইয়াহুদীরা তাঁকে হীন জ্ঞান করে, আর খ্রিষ্টানরা তাঁর ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে। (আইসারুত তাফাসীর, ফাতহুল কাদীর)।ঐ সমস্ত কাফেরদের জন্য ভীষণ দুর্দশা রয়েছে, যারা ঈসা (আঃ)-এর ব্যাপারে মতভেদ এবং অতিরঞ্জন ও অবজ্ঞা প্রদর্শন করেছে। কিয়ামতের দিন যখন উপস্থিত হবে, তখন তারা ধ্বংস হবে।"(পবিত্র কোরআন ১৯:৩৭ এর তাফসীরে আহসানুল বয়ান দ্রষ্টব্য। এছাড়া উক্ত আয়াতের তাফসীরে আবু বকর যাকারিয়া,তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ এবং তাফসীরে ইবনে কাসীর বিস্তারিত পড়তে পারেন।)
[নোট:যীশু তথা ঈসা আঃ এর ক্রুশবিদ্ধ হয়ে ইন্তেকাল করা বাইবেল থেকেই প্রমাণ করা যায়। আবার ঠিক এর বিপরীতেও প্রমাণ করা যায় যে যীশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেননি। অর্থাৎ বাইবেল থেকেই দুই ধরনের তথ্য প্রমাণ করা সম্ভব যীশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেছেন ≠ যীশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেননি। তাহলে সুস্পষ্ট ভাবে যৌক্তিকতার সাথে বলা যায় যে স্বয়ং বাইবেল থেকেই যীশুর ক্রুশবিদ্ধ হয়ে ইন্তেকাল করাটা ১০০% বিশুদ্ধ নয় অর্থাৎ প্রমাণিত নয় এবং কী অনেক ঐতিহাসিক ভাবেও স্বীকৃতি যে যীশু তথা ঈসা আঃ ক্রুশবিদ্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেননি। অর্থাৎ বাইবেল নিজেই যীশু তথা ঈসা আঃ এর ক্রুশবিদ্ধ হয়ে ইন্তেকাল করার ১০০% বিশুদ্ধ প্রমাণ দিতে ব্যর্থ।আর এই জন্য পবিত্র কোরআনে এরশাদ করা হয়েছে:-"তারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন মতভেদ সৃষ্টি করল।"পবিত্র কোরআন ও বাইবেল অনুযায়ী যীশু তথা ঈসা আঃ ক্রুশবিদ্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেননি। হাদিসে হযরত আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে:-"রাসূল সাঃ বলেছেন: খ্রিস্টানগণ বাহাত্তর ধর্মীয় সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে পড়বে"(তিরমিজী,ইবনে মাজাহ ও আবু দাউদ শরিফ দ্রষ্টব্য)।
এসব ভবিষ্যদ্বাণী আজ অক্ষরে অক্ষরে সত্যে পরিণত হয়েছে খ্রিস্টানগণ বিভিন্ন ধর্মীয় দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। যেমন: রোমান ক্যাথলিক (Roman catholic), প্রোটেস্ট্যান (Protestant), বর্ন অ্যাগেন, অ্যাংগ্লিক্যান (Anglicans), Jehovah's Witness, Seventh Days Adventists, Church of Christ Orthodox, মর্মনস (Mormons), ক্যারিস ম্যাটিক, Iglesia ni kriston Baptists, Methodists, Presbyterian, Bahai ইত্যাদি। আর প্রত্যেক দলই "পাক রুহের" দানকে দাবি করে। একই "পাক-রুহ"- সকল বিষয়ে তাদের শিক্ষা দিচ্ছে অথচ প্রত্যেক দলই ভিন্ন ভিন্ন দিকে যাচ্ছে। কি আশ্চর্য!!!