ইব্রাহিম আঃ এর ধর্মের মূল বিশ্বাস ছিল নিম্নরুপ:
১] মহান সৃষ্টিকর্তা একজন;
২] তাঁর জন্ম- মৃত্যু নেই;
৩] তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কারো থেকে জন্ম নেননি;
৪] তাঁর সমতুল্য দ্বিতীয় কেউই নেই;
৫] তিনি অতি মহান এবং পবিত্র;
৬] তিনি মানুষ নন;
৭] তিনি ইচ্ছা করলেই সমস্ত পাপের ক্ষমা করতে পারেন কোন বিনিময় ছাড়াই;
৮] কেউই জন্মগত পাপী নয় অর্থাৎ সবাই নিষ্পাপ হয়ে জন্মগ্রহণ করে;
৯] তিনি কারো উপরে নির্ভরশীল নন বরং তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ।
তাহলে এখন দেখব আব্রাহামিক ধর্মের কোনগুলো ইসলাম, খ্রিস্টান এবং ইহুদিদের মধ্যে আছে?
ইসলাম ধর্ম
উপরোল্লিখিত সকল কথাই হলো ইসলাম ধর্মের মূল বিশ্বাস।
খ্রিস্টান ধর্ম
১] খ্রিস্টানরা ৩ জন ঈশ্বরে মানে অর্থাৎ পিতা + পুত্র + পবিত্র আত্মা। কিন্তু মুখে দাবি করে ১ জন ঈশ্বরের। যোগের সমন্বয়ে ৩ কিভাবে ১ হতে পারে? আবার খ্রিস্টানরা যীশু যাঁকে ইসলাম ধর্মে একজন নবী বলা হয় তিনি হলেন হযরত ঈসা আঃ, তাঁকে খ্রিস্টানরা সৃষ্টিকর্তা মানে অথচ সমগ্র বাইবেল জুড়ে এর বিপরীত কথাই আছে।
২] খ্রিস্টানদের বিশ্বাস বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্ট অনুযায়ী ঈশ্বরের জন্ম মৃত্যু আছে। আর ঈশ্বর কে নাকি ইহুদিরা ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করেছে। অথচ ওল্ড টেস্টামেন্ট অনুযায়ী ঈশ্বরের জন্ম মৃত্যু নেই।
৩] ঈশ্বরের কাউকে জন্ম দেননি ঠিকই কিন্তু তিনি নারীর গর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছেন। অর্থাৎ ঈশ্বরের জন্মদাত্রী মা আছে কিন্তু বাবা নেই। আর তিনি হলেন হযরত মারিয়ম আঃ। আবার ঈশ্বরেরও ঈশ্বর আছে।
৪] ওল্ড টেস্টামেন্টে অনুযায়ী ঈশ্বরের সমতুল্য দ্বিতীয় কেউই নেই। অথচ নিউ টেস্টামেন্ট অনুযায়ী ঈশ্বরের সমতুল্য অসংখ্য মানুষ আছে যেহেতু ঈশ্বর নিজেই একজন মানুষ।
৫] নিউ টেস্টামেন্ট অনুযায়ী ঈশ্বর যেহেতু মানুষ সেহেতু তিনি অতি মহান এবং পবিত্র নন। কেননা বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে বলা হয়েছে কোন মানুষ ই পবিত্র না। বরং সবাই কীটের মত।
৬] ওল্ড টেস্টামেন্ট অনুযায়ী ঈশ্বর মানুষ না। অপরদিকে নিউ টেস্টামেন্ট অনুযায়ী ঈশ্বর মানুষ। আর খ্রিস্টানরাও মানুষ ঈশ্বরে বিশ্বাস করে।
৭] তিনি ইচ্ছা করলেও ক্ষমা করতে পারেন না। এর জলন্ত উদাহরণ আদম আঃ এর পাপের জন্য নাকি সারা বিশ্বব্যাপী জন্মগত পাপী। আর এই পাপ ক্ষমা করার জন্য একজন নিষ্পাপ কে বলি দেওয়া হয়েছে।
৮] সবাই জন্মগত পাপী। এটা খ্রিস্টানদের জন্য উপহার নাকি?
৯] খ্রিস্টানদের ত্রিত্ববাদ থিওরি অনুযায়ী ঈশ্বর সব কিছুর উপরে নির্ভরশীল। যেমন ঈশ্বরে খাবার খায়, কান্না করে, অনুশোচনায় ভুগে অর্থাৎ আমরা মানুষেরা যেমন সব কিছুর উপরে নির্ভরশীল ঠিক তেমনি ঈশ্বর ও সবকিছুর উপর নির্ভরশীল।
ইহুদি ধর্ম
অপরদিকে মুসলমানদের বিশ্বাস এবং ইহুদিদের বিশ্বাস বলতে গেলে সম্পূর্ণ একই। শুধুমাত্র পার্থক্য হলো ইহুদিরা মসিহ ইবনে মারিয়ম [মারিয়ম আঃ এর পুত্র হযরত ঈসা আঃ] এবং আমাদের বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে ইহুদিরা অস্বীকার করে।
[নোট: বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টের পাঁচটি বই ইহুদিদের পবিত্র কিতাব। আবার এই একই বই খ্রিস্টানদেরও পবিত্র কিতাব। অথচ ইহুদিরা তিন জন ঈশ্বরে অর্থাৎ ত্রিত্ববাদে বিশ্বাস করে না; অপরদিকে খ্রিস্টানরা করে; ইহুদিরা মানুষ ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না অপরদিকে খ্রিস্টানরা করে। অথচ ইহুদিদের বিশ্বাস ই হলো খ্রিস্টানদের জন্য মৌলিক বিশ্বাস। অন্যথায় প্যাগানিজম। ]
তাহলে বলা যায় ইহুদি এবং মুসলিমদের মূল বিশ্বাস প্রায় ই একই। অপরদিকে খ্রিস্টানদের বিশ্বাসের মূল ভিত্তি হলো পৌত্তলিকতা যাকে প্যাগানিজম বলে। তাহলে বলা যায় ইব্রাহিম আঃ এর ধর্মে আমরা একমাত্র মুসলিমরাই আছি। অপরদিকে ইহুদি এবং খ্রিস্টানরা তাঁর ধর্ম থেকে ছিটকে দূরে গেছে। ইব্রাহিম আঃ ই হলেন সকল নবীদের পিতা।
ইনশাআল্লাহু তাআ'লা আমি এসব বিষয়ে রেফারেন্স সহ বিস্তারিত লিখব তুলনামূলক ভাবে। আর যাচাই করে প্রমাণ দেখাব কোন ধর্মটা ইব্রাহিম আঃ এর মৌলিক বিশ্বাস গুলো পালন করে।