Are you sure?

তুলনামূলক ধর্মতত্ব »  বিবিধ

যীশুর সমর্পণ বিষয়ক বাইবেলের বৈপরীত্য

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম 

বাইবেলের বৈপরীত্য সিরিজ পর্ব:০১

\_____________________________/

যীশুর ১২ জন শিষ্যের মধ্যে একজন একজন জুদাস ইস্কারিয়োৎ (Judas Iscariot).!বাংলা বাইবেলে "ইস্করিতিয়ো যিহুদা " বা "ইস্করিতিয়ো এহুদা" বা "যিহুদা/এহুদা ইস্কারিয়োত "।তিনিই বিশ্বাসঘাতকতা করে যীশুকে ইহুদি যাজক ও প্রধানদের হাতে সমর্পণ করে। চারটা প্রচলিত ইঞ্জিলের মধ্যে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। যিহুদি নেতা ও যাজকরা যীশুকে চিনতেন না। যিহুদা তাদেরকে বলে আমি যাঁকে চুম্বন করব তিনিই যীশু। তাকে আপনারা ধরবেন। যীহুদা এসে তাঁর হাতে চুমু দেন এবং সঙ্গে সঙ্গে ইহুদিরা এসে যীশুকে ধরে ফেলে গ্রেফতার করে। লুক কিছু ব্যতিক্রম লিখেছেন এবং যোহন একেবারেই ভিন্ন তথ্য দিয়েছেন।বাইবেল বিশেষজ্ঞরা ও খ্রিস্টান পাঠকগণ সহজেই এ ব্যতিক্রম বুঝতে পারবেন। কিন্তু সাধারণ বাঙালি পাঠকের জন্য পুরো বক্তব্য উদ্ধৃতি দেওয়া প্রয়োজন যেন খুব সহজেই বুঝতে পারেন।

মথি লিখেছেন:-
"47. তিনি যখন কথা বলছিলেন, দেখ, যিহূদা, সেই বারো জনের একজন, এল এবং তার সঙ্গে অনেক লোক, তরোয়াল ও লাঠি নিয়ে প্রধান যাজকদের ও প্রাচীনদের কাছ থেকে এলো।
48. যে তাঁকে সমর্পণ করছিল, সে তাদের এই সংকেত বলেছিল, “আমি যাকে চুমু দেব, তিনিই সেই ব্যক্তি, তোমরা তাকে ধরবে।”
49. সে তখনই যীশুর কাছে গিয়ে বলল, “গুরু, নমস্কার, আর সে তাঁকে চুমু দিল।”
50. যীশু তাকে বললেন, “বন্ধু, যা করতে এসেছ, তা কর।” তখন তারা কাছে এসে যীশুর উপরে হস্তক্ষেপ করল ও তাঁকে ধরল।(গ্রেফতার করল)
51. আর দেখ, যীশুর সঙ্গীদের মধ্যে এক ব্যক্তি হাত বাড়িয়ে তরোয়াল বার করলেন এবং মহাযাজকের দাসকে আঘাত করে তার একটা কান কেটে ফেললেন।"(মথি ২৬:৪৭-৫১)

মার্ক লিখেছেন:-
43. আর তিনি যখন কথা বলছিলেন, সেই দিন যিহূদা, সেই বারো জনের একজন এল এবং তার সঙ্গে অনেক লোক তরোয়াল ও লাঠি নিয়ে প্রধান যাজকদের, ব্যবস্থার শিক্ষকদের ও প্রাচীনদের কাছ থেকে এল।
44. যে যীশুকে ধরিয়ে দিচ্ছিল, সে আগে থেকে তাদের এই চিহ্ন এর কথা বলেছিল, আমি যাকে চুম্বন করব, সেই ঐ লোক, তোমরা তাকে ধরে সাবধানে নিয়ে যাবে।
45. সে তখনি তাঁর কাছে গিয়ে বলল, গুরু; এই বলে তাঁকে উত্সাহের সঙ্গে চুম্বন করলো।
46. তখন তারা যীশুকে বেঁধে ধরে ফেলল।(গ্রেফতার করল)
47. কিন্তু যারা পাশে দাঁড়িয়েছিল, তাদের ভেতরে এক ব্যক্তি হাত বাড়িয়ে তরোয়াল বার করলেন এবং মহাযাজকের দাসকে আঘাত করে তার একটা কান কেটে ফেললেন।"(মার্ক ১৪:৪৩-৪৭)

পাঠক বন্ধুগণ দেখেছেন মথি ও মার্কের মধ্যে কয়েকটি শব্দের পার্থক্য ছাড়া সকল তথ্য একই।

কিন্তু লুক লিখেছেন:-
47. তিনি কথা বলছেন, এমন দিন দেখ, অনেক লোক এবং যার নাম যিহূদা সেই বারো জনের মধ্যে একজন সে তাদের আগে আগে আসছে; সে যীশুকে চুম্বন করবার জন্য তাঁর কাছে আসল।
48. কিন্তু যীশু তাকে বললেন, যিহূদা, চুম্বনের মাধ্যমে কি মনুষ্যপুত্রকে সমর্পণ করছ?
49. তখন কি কি ঘটবে, তা দেখে যারা তাঁর কাছে ছিলেন, তারা বললেন, প্রভু আমরা কি তলোয়ারের আঘাত করব?
50. আর তাদের মধ্যে এক ব্যক্তি মহাযাজকের দাসকে আঘাত করে তার ডান কান কেটে ফেললেন.....!
54. পরে তারা তাঁকে ধরে নিয়ে গেল....।"(লুক ২২:৪৭-৫৪)

উপরোল্লিখিত উদ্ধৃতিতে মথি ও মার্কের সাথে লুকের শব্দের পার্থক্য ছাড়াও তথ্যের ভিন্নতা পাঠকের নিকট সুস্পষ্ট।অর্থাৎ মথি এবং মার্কের সাথে লুকের তথ্য মিলে না অর্থাৎ পরস্পর বিপরীত/বিরোধী। প্রথম দুজনের (মথি ও মার্ক) বর্ণনায় "যিহুদা কিছু কথা বলে চুম্বন করেন।"আর লুকের বর্ণনাতে "যিহুদা কোন কথা না বলে যীশুকে চুম্বন করতে আসেন কিন্তু তিনি চুম্বন করেননি বরং চুম্বনের আগেই যীশু তার সাথে কথা বলেন।"এছাড়া প্রথম দুজনের বর্ণায় গ্রেফতারের পরে খড়গ বের করা ও কান কাঁটা নিয়ে ঘটনা ঘটে।পক্ষান্তরে লুকের বর্ণনায় গ্রেফতারের আগেই তা ঘটে।এরপরেও (যদিও মেনে নিলাম) আমরা মথি ও মার্কের বর্ণনার সাথে লুকের বর্ণনাকে সাংঘর্ষিক বলে গণ্য করছি না।আমরা ধরে নিচ্ছি যে তিনি চুম্বনের জন্য আগমন করার কথা বলে চুম্বন করা বুঝিয়েছেন এবং একই ঘটনা বর্ণনায় তিনি কিছু আগে পিছে করেছেন।
কিন্তু যোহনের বর্ণনাকে সাংঘর্ষিক বলা ছাড়া কোন উপায় নেই।

যোহন লিখেছেন:-
2. এখন যিহূদা, যে তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, সেও জায়গাটা চিনত, কারণ যীশু প্রায়ই তাঁর শিষ্যদের নিয়ে সেখানে যেতেন।
3. তারপর যিহূদা একদল সৈন্য এবং প্রধান যাজকদের কাছ থেকে আধিকারিক গ্রহণ করেছিল এবং ফরীশীরা লন্ঠন, মশাল এবং তরোয়াল নিয়ে সেখানে এসেছিল।
4. তারপর যীশু, যিনি সব কিছু জানতেন যে তাঁর উপর কি ঘটবে, সামনের দিকে গেলেন এবং তাদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তোমরা কাকে খুঁজছো?
5. তারা তাঁকে উত্তর দিল, “নাসরতের যীশুর।” যীশু তাদের উত্তর দিল, “আমি সে।” যিহূদা, যে তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, সেও সৈন্যদের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিল।
6. সুতরাং যখন তিনি তাদের বললেন, “আমি হই,” তারা পিছিয়ে গেল এবং মাটিতে পড়ে গেল।
7. তারপরে তিনি তাদের আবার জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা কার খোঁজ করছ?” তারা আবার বলল, “নাসরতের যীশুর।”
8. যীশু উত্তর করলেন, “আমি তোমাদের বললাম যে, আমিই তিনি; সুতরাং তোমরা যদি আমাকে খোঁজ, তবে অন্যদের (শিষ্যদের) যেতে দাও....!
9...........................
10. তখন শিমোন পিতর, যার একটা তরোয়াল ছিল, সেটা আনলেন এবং মহাযাজকদের দাসকে আঘাত করেছিলেন এবং তার ডান কান কেটে ফেললেন। সেই দাসের নাম ছিল মল্ক।
11. যীশু পিতরকে বললেন, “তরোয়ালটা খাপের মধ্যে রাখ। আমার পিতা আমাকে যে দুঃখের পানপাত্র দিয়েছেন, আমি কি এটাতে পান করব না?”
যীশুকে হাননের কাছে আনা হলো।
12. সুতরাং একদল সৈন্য এবং দলপতি ও ইহূদিদের আধিকারিকরা যীশুকে ধরল এবং তাঁকে বাঁধলো।"(ইউহান্না/যোহন ১৮:২-১২)

পাঠক বন্ধুগণ দেখেছেন যে,লুকের সাথে মথি ও মার্কের সমন্বয়ের মত যোহনের সাথে সমন্বয়ের কোন পথই নেই। যোহন সম্পূর্ণ বিপরীত বর্ণনা দিয়েছেন।এখানে "যিহুদা যীশুকে চেনাতে আসেননি বরং স্থান চেনাতে এসেছেন"যীশুকে চুম্বন দেওয়া তো দূরের কথা তিনি যীশুর সাথে কোন কথাও বলেননি,নিকটবর্তীও হননি। স্বয়ং যীশু নিজেই সৈন্যদের দিকে এগিয়ে গিয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে কথা বলেছেন। "এজন্য আমরা বৈপরীত্যের মধ্যে যোহনের সাথে মথি ও মার্কের বৈপরীত্য আলোচনা করেছি আর লুকের বিষয়টা সমন্বয়যোগ্য ধরে এগিয়ে গিয়েছি।

লেখক:শাইখ ড.খন্দকার আব্দুল্লাহ্ জাহাঙ্গীর (রহঃ) স্যার
সংগৃহীত:পবিত্র বাইবেল পরিচিতি ও পর্যালোচনা
লেখক:বনি আমিন খান
ঠিকানা:গোপালগঞ্জ,ঢাকা-বাংলাদেশ

https://www.facebook.com/104106391067326/posts/233488028129161/